Friday, January 18, 2013

ট্রাভেল গাইড [খাগড়াছড়ি]

 

[caption id="attachment_130" align="alignnone" width="300"]সবুজ খাগড়াছড়ি সবুজ খাগড়াছড়ি[/caption]

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে পর্যটনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশী পিছিয়ে আছে আমার মতে খাগড়াছড়ি। কোন এক অজানা কারনে ট্রাভেলিং কমিউনিটি গুলোর মধ্যেও খাগড়াছড়ি কে এক্সপ্লোর করার প্রবনতা কম। খাগড়াছড়ির সবুজ পাহাড়, দূরন্ত ঝরনা আর দূর্গমতা কোন অংশেই কম না। শুধুমাত্র যথাযথ তথ্যের অপ্রতূলতা আর ব্র্যান্ডিং ( প্রমোটিং) এর অভাবে খাগড়াছড়ি বঞ্চিত হচ্ছে। যেই হারে মানুষ আজকাল বান্দরবান যায়, তার কিছু অংশ যদি খাগড়াছড়ি ঘুরে আসে তাহলে বান্দরবান ও পদপিষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে আবার খাগড়াছড়ি ও হট ডেস্টিনেশন হিসেবে ট্রাভেলার্সদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

 এখন খাগড়াছড়ি নিয়ে কিছু প্ল্যান করা যাকঃ

 ১. রিসাং ফলসঃ

[caption id="attachment_132" align="alignnone" width="225"]রিসাং ফলস রিসাং ফলস[/caption]

খাগড়াছড়ি শহরের খুব কাছেই রিসাং ফলস এর অবস্থান। শহর থেকে প্রায় ১০-১১ কিলোমিটার। বাসে করে শহরে প্রবেশ করার মুখেই পরবে রিসাং ফলস এ যাওয়ার রাস্তা। বাসের হেল্পার কে বলে রাখলেই ফলস এ যাওয়ার মাটির রাস্তায় আপনাকে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে ফলস এ যাওয়ার রাস্তা প্রায় দুই কিলোমিটার। কয়েক মিনিট হাঁটলেই ঝর্নায় নামার জন্য কংক্রিটের সিঁড়ি পেয়ে যাবেন। প্রথম দেখায় রিসাং ফলস আপনাকে থকমে দাঁড়াতে বাধ্য করবেই। এই ফলস এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে ওয়াটার স্লাইড। প্রায় ৩৫ ডিগ্রি ঢাল বেয়ে ঝর্না টা নীচে নেমে এসেছে। একটু সাহস থাকলে ওয়াটার স্লাইড এর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। তবে সাবধান পাথুরে দেয়ালে ধাক্কা লেগে কিন্তু মারাত্বক আঘাত পেতে পারেন।

 ২. আলু টিলা কেইভঃ

[caption id="attachment_131" align="alignnone" width="300"]রহস্যময় আলুটিলার গুহা রহস্যময় আলুটিলার গুহা[/caption]

পাহাড়ের খাঁজে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন গুহা আমাকে চুম্বকের মত আকর্ষন করে। গুহার অন্ধকার জগতের ভিতরে প্রবেশ করতে কেমন গা ছমছম করে উঠে। রহস্যে ভরা গুহা যাদের প্রিয় তাদের আলু টিলা কেইভ রোমাঞ্চিত করবেই। রিসাং ফলস থেকে ঘুরে এসে আপনি সহজেই আলু টিলা কেইচ এক্সপ্লোর করতে পারেন। রিসাং থেকে মেইন রোড ধরে শহরের দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার হেঁটে গেলেই আলু টিলার পর্যটন কমপ্লেক্সে পৌঁছে যাবেন। পর্যটকদের সুবিধার(!) জন্য এখানেও কংক্রিটের সিঁড়ি বানানো হয়েছে। প্রথম দিকে এইসব কংক্রিটের রাস্তা ও সিঁড়ি দেখে কৃত্রিম কৃত্রিম লাগলেও গুহার কাছে পৌছানোর পর মন আসলেই ভালও হয়ে যাবে। গুহার মুখ দিয়ে প্রবেশ করার সময় বুক এর দুরুদুরু আওয়াজ শুনতে পাবেন। মাঝে মাঝেই গুহায় বাসা বাঁধা বাদুর গুলো আপনাকে চমকে দিবে।

৩. তদুই ছড়ি ফলসঃ

ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি যাওয়া যায় দীঘিনালা উপজেলায় (ষ্টার লাইন, ভাড়া ৫০০-৫৫০টাকা) । তদুই ছড়ি ফলস এক্সপ্লোর করার জন্য খাগড়াছড়িতে না থেকে সরাসরি দীঘনালায় থাকাই বেটার। এখানে থাকার জন্য একটি ভাল মানের রেষ্টহাউজ আছে। চান্দের গাড়ী নিয়ে দীঘিনালা হতে সামনে এগিয়ে চাপ্পাপাড়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। এর পর বাকী পথটুকু ট্রেক করে যেতে হবে। দীঘিনালায় পৌঁছেই বিজিবি থেকে পারমিশন নিইয়ে একটা গাইড ঠিক করে নিবেন। দীঘিনালা হতে সব মিলিয়ে ফলস পর্যন্ত পৌছতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগবে। সুতরাং সকাল সকাল ট্রেক শুরু করলে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা যাবে।

উঁচু-নীচু পাহাড়ী পথ আর দূর্গম পাহাড়ি ঝিড়ি পথের কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও বুক সমান পানি আর বুনো জঙ্গল পাড়ি দিয়ে অবশেষে প্রায় ৩ ঘন্টা ট্রেক করার পর আপনি পৌছবেন প্রথম ফলস এ। এটি প্রায় ৬০ ফুট উচু। ঝর্নামুখ হতে পানি পাহাড়ের গাঁয়ে পরে তা পাহাড় বেয়ে নিচে এসে ছোট একটি ক্যাসকেড তৈরী করেছে।

প্রথম ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে উঠে গেলেই দেখা পেয়ে যাবেন তদুই ছড়ি ফলস টু এর । এখানে প্রায় ৮০-৮৫ ডিগ্রী  ঢাল বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঝর্না মুখ যেখান হতে প্রথম ঝর্নার পানি পরছে। দ্বিতীয় ঝর্না থেকে ঝিড়ি পথে পানি আসছে এখানে। ঝিড়ি পথ ধরে প্রায় ঘন্টা খানেক ট্রেক করলে পৌঁছে যাবেন দ্বিতীয় ঝর্নাটিতে।

 ৪. হাজাছড়া ফলসঃ

[caption id="attachment_134" align="alignnone" width="300"]হাজাছড়া ফলস [www.banglatrek.org] হাজাছড়া ফলস
[www.banglatrek.org][/caption]এই সুন্দর ফলস টি দীঘিনালা-মারিশ্যা রোডে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এটি ১০ নাম্বার ফলস নামেই বেশী পরিচিত। ঢাকা থেকে সরাসরি দীঘিনালা আসা যায়। অথবা আপনি খাগড়াছড়ি থেকেও আসতে পারেন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালার রেগুলার বাস সার্ভিস আছে। ভাড়া নিবে প্রায় ১৫০ টাকার মত। দীঘিনালায় পৌঁছে আবার আপনাকে বাসে চড়ে মারিশ্যা রোডে যেতে হবে। স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞেস করে সঠিক বাসে উঠে বসবেন। ভাড়া নিবে প্রায় ২০ টার মত। দশ নামাওর পুলিশ পোষ্টের কাছে নেমে পরবেন। এখানেই টং এর চায়ের দোকান আছে। পাশ দিয়েই একটি ঝিড়ি পথ শুরু হয়েছে। এখান থেকে ১০-১৫ মিনিট ট্রেক করলেই আপনি পৌঁছে যাবেন হাজাছড়া বা দশ নাম্বার ওয়াটার ফলস এ।

৫. সিজুক ফলসঃ

[caption id="attachment_133" align="alignnone" width="300"]সিজুক ফলস [www.banglatrek.org] সিজুক ফলস
[www.banglatrek.org][/caption]সিজুক ফলস নন্দগ্রাম, সাজেক ইউনিয়ন এ অবস্থিত। এখানে আপনাকে দীঘিনালা হয়েই যেতে হবে। দীঘিনালায় পৌঁছে নন্দগ্রাম যাওয়ার জন্য আপনাকে জীপ বা বাইক রিজার্ভ করতে হবে। বাইক এ আপ-ডাউন ভাড়া নিবে প্রায় ৬০০-৭০০ টাকা। সিজুকে দুইটি ফলস আছে। ফলস দুটি এক্সপ্লোর করতে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা লাগবে। সকাল সকাল রওনা দিলে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে পারবেন। বা চাইলে ঝিড়ি পাশেই ক্যাম্পিং করতে পারেন। সিজুক যাওয়ার পথেই আপনি হাজাছড়া ফলস দেখে যেতে পারেন, পথেই পরবে।

বাইকের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনঃ বিপ্লব- ০১৮২৯৫৩০৬৭

আর গাইডের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনঃ স্থানীয় স্কুল টিচার; সত্য- ০১৫৫৩১০৯২৪১

 ৬. সাজেক ভ্যালিঃ

বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় জায়গা বোধ হয় সাজেক ভ্যালী। এখান কার অনেক রোমাঞ্চকর গল্প বেশ কয়েক বছর থেকে শুনে আসছি। অনেক সুন্দর আর ভিন্ন এক জগৎ নাকি লুকিয়ে আছে এই উপত্যকায়। ভারতের মিজোরাম রাজ্য খুব কাছে বলেই নাকি ভিন্ন কোন কারনে এখানে সাধারন মানুষদের ঘুরতে যাওয়ার নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আছে। বাংলাদেশ আর্মির অনুমতি ছাড়া এখানে যাওয়া যায় না। এত দূর গিয়ে আর্মির বাঁধায় ফিরে আসার চেয়ে তাই ভাল উপায় হচ্ছে আগে থেকেই আর্মির পারমিশন নিয়ে যাওয়া। সাজেক যাওয়ার পথে প্রায় পাঁচটির মত চেক পোস্ট পার হতে হয়।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার রুট প্ল্যান হচ্ছেঃ

খাগড়াছড়ি>দীঘিনালা>বাঘাই হাট>টাইগার টিলা> মাসালং> রুইলুই পাড়া>সাজেক।

আরও কিছু দর্শনীয় স্থানঃ

দেবতার পুকুর

মহালছড়ি হ্রদ

শতায়ুবর্ষী বটগাছ

পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

ভগবান টিলা

দুই টিলা ও তিন টিলা

মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি

বন ভান্তের প্রথম সাধনাস্থল

রামগড় লেক ও চা বাগান

কোথায় থাকবেন:

খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা মনে হয় পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। ৩০০ একরের এই খামারের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে বিমোহিত করবেই। নানান জাতের ফলের গাছ, পাখির মেলা আর বাহারি অর্কিড এর সমারোহের মাঝে কিছু সুন্দর সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

এছাড়াও শহরের প্রবেশ পথেই আছে পর্যটন এর মোটেল। নেট ঘেটে আরও কিছু হোটেল এর নাম ধাম পাওয়া গেলঃ

পর্যটন মোটেলঃ ০৩৭১-৬২০৮৪ ও ৬২০৮৫

হোটেল শৌল্য সুবর্ণঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬

থ্রি ষ্টার: ০৩৭১-৬২০৫৭

ফোর ষ্টারঃ ০৩৭১-৬২২৪০

উপহারঃ ০৩৭১-৬১৯৮০

হোটেল নিলয়ঃ ০১৫৫৬-৭৭২২০৬

জিরান হোটেলঃ ০৩৭১-৬১০৭১

হোটেল লিবয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০

চৌধুরী বাডিং: ০৩৭১-৬১১৭৬

যোগাযোগঃ

ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া টাই বুদ্ধিমানের কাজ। রাতের বাসে রওনা দিলে সকালেই আপনি খাগড়াছড়ি পৌঁছে যাবেন। ঢাকা থেকে বেশ কিছু বাস সার্ভিস আছেঃ

শান্তি পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, এস. আলম, সাউদিয়া। ভাড়া প্রায় ৫০০-৫৫০ টাকা।

এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে আপনাকে অক্সিজেন মোড় থেকে শান্তি পরিবহন বা লোকাল বাস এ চড়ে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ভাড়া প্রায় ১৪০টাকা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

পাহাড়ী-বাঙালী সংঘাত এর কারনে মাঝে মাঝে খাগড়াছড়ির নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক নাজুক হয়ে যায়। তা ছাড়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য হিসেবে খাগড়াছড়ি এমনিতেই একটু কুখ্যাত। মাঝে মাঝেই সেখানে খুন-অপহরন-ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চত হয়েই আপনার প্ল্যানিং টা করবেন। 

এই পোস্ট টি প্রতিনিয়ত আপডেট করা হবে। আপনার অন্যান্য কোন জিজ্ঞাসা থাকলে পোস্টে কমেন্ট করুন। আমি উত্তর দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেঃ ফেসবুক প্রফাইল

উপরের হাজাছড়া ও সিজুক ফলস এর  তথ্য ও ছবি  প্রজেক্ট বাংলা ট্রেক www.banglatrek.org থেকে নেয়া হয়েছে।

Friday, January 11, 2013

শীতকালে সুস্থতা

শীতকালে যেসব রোগ কিংবা দুর্ঘটনা বেশী হয়ঃ

১) সর্দি-কাশি, শ্বাস-তন্ত্রের রোগ ।
২) কিছু চর্মরোগ ।
৩) অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা ।

images

সর্দি-কাশি ও শ্বাস-তন্ত্রের রোগঃ

এ বিষয়ে আমরা সবাই মোটামুটি কিছু ধারনা রাখি। তারপরেও কিছুটা আলোচনা করতে যাচ্ছি, কারো কারো জন্য হয়তো উপকারী কোন তথ্য থাকতে পারে।

ঠান্ডা একটি এলার্জিক উপদান হিসেবে কাজ করে। ফলে মাস্ট সেল নামের কোষ ভেঙ্গে হিস্টামিন বের হয়ে আসে, যার প্রভাবে আমাদের নাক দিয়ে সর্দি পড়ে, হাঁচি আসে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, কাশিও হতে পারে। এটা তাৎক্ষণিক এবং সাময়িক। অর্থাৎ ঠান্ডা বাতাসে বেশীক্ষণ চলাফেরা করলে, কিংবা মোটর সাইকেলে চড়লে কিছুক্ষণের মধ্যেই হবে এবং স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে এলে ঠিক হয়ে যাবে।

অন্যদিকে শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এই শুষ্ক আবহাওয়ায় আমাদের নাক এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘ সময় ঠান্ডা অবহাওয়ায় থাকলে শীতের কারণেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের সিলিয়ারি মুভমেন্ট কমে গেলে চামড়ায় থাকা জীবাণুরা সহজেই নাক বেয়ে ভিতরে চলে যাবে এবং ইনফেকশন করবে।

শীতকাল শেষে অনেক দেশেই বাতাসে পরাগরেণু উড়ে বেড়ায়। এই পরাগরেণুর কারণে এলার্জিক জ্বর (Hay Fever) হতে পারে। এসময় এজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আবার কিছু কিছু ভাইরাস রোগের প্রকোপ শীতকালে কিংবা শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে দেখা দেয় (পক্স রোগের বাংলা নাম বসন্ত মনে হয় একারণেই হয়েছে) । ফুসফুসে ব্যাক্টেরিয়া জনিত ইনফেকশন হয়ে নিউমোনিয়া হতে পারে এবং আরো মারাত্মক কিছুও ।  যাইহোক, বেশ কয়েকটি জানা এবং অজানা কারণে শীতকালে আমাদের শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন বেড়ে যায় ।

শীতকালে করনীয়ঃ

১) করনীয় মোটামুটি আমরা সবাই জানি, যেমনঃ ঠান্ডা অবহাওয়ায় বেশীক্ষণ বাইরে থাকতে হলে প্রয়োজনীয় পোষাক নিয়ে বের হওয়া; বাথরুম এবং অন্যান্য ব্যাবহার্য পানি গরম করে ব্যাবহার করা।

২) শীতকালে আগুন জ্বেলে কিংবা চুলার আগুনে হাত-পা গরম করতে গিয়ে কিংবা গরম পানি নাড়া-চাড়া করতে গিয়ে দূর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৩) ধূলা-বালি, ধোয়াঁ পরিহারঃ ঢাকা শহরের নাকাল করা যানজটে এটা বেশ কঠিন একটা কাজ। বেশ কিছু রোগের জীবাণু সরাসরি ধূলায় ভর করে ফুসফুসে ঢুকে; ধূলাবালি-ধোঁয়া থেকে সরাসরিও অনেক রোগ হয়। যারা ধূলা কিংবা ধোঁয়ায় ভরা রাস্তা দিয়ে বেশীক্ষণ চলাচল করেন, তারা মাস্ক ব্যাবহার করে সুফল পেতে পারেন। ঢাকায় কাপড়ের যেসব মাস্ক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যাবহার করলে একসাথে কয়েকটা কিনে বাসায় রাখতে হবে। একটা মাস্ক একদিন ব্যাবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। মাস্কটাই যদি নোংরা থাকে তাহলে সুরক্ষার চেয়ে ঝুকি আরো বেশী।
নিজের সর্দি-কাশি হলে, কিংবা আশে-পাশে কেউ ঘনঘন হাঁচি-কাশি দিলে মাস্ক ব্যাবহার করা যেতে পারে।
Disposable mask ব্যাবহার করলে অবশ্য ধুয়া-ধুয়ি করতে হবে না। তবে মোট খরচ একটু বেশী পরে যাবে।

৪) বেশী শুস্ক দেশে বাসায়/অফিসে Humidifier ব্যাবহার করে বাতাসের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা তৈরী করা হয়। আমাদের দেশে এটার খুব একটা প্রচলন নেই। থাকলে মনে হয় ভালোই হত। (iFeri এধরনের প্রডাক্ট বাজারজাত করার কথা চিন্তা করতে পারে।)

৫) চিকিৎসাঃ সাধারণ সর্দি-কাশিতে চিকিৎসকের চিকিৎসার চেয়ে পরিচর্যার গুরুত্ব বেশী। আমরা নিজেরাই যেগুলো করতে পারিঃ
- অল্প গরম পানি (সাথে লবণ বা আদা মিশানো যেতে পারে) দিয়ে গড়গড়া (কুলি) করা।
- গরম পানির বাষ্পে শ্বাস নেয়া।
- আদা, তুলশী পাতার রস পান করা।
-গরম পানি কিংবা গরম পানীয় (লেবু চা, আদা-চিনি মিশিয়ে গরম পানি) পান করা।
-সর্দির জন্য আমরা নিজেরাই এন্টি-হিস্টামিন কিনে খেয়ে থাকি। সাধারণত (অজানা বড় কোন রোগ না থাকলে) এইসব ঔষধে বড় কোন সমস্যা নেই। কোন এন্টি-হিস্টামিন কার জন্য ভালো/প্রযোজ্য, সেটা অন্তত একবার কোন চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে নিলে ভালো।
-এন্টি-বায়োটিকঃ ডাক্তারের কাছে যাবার সময়ের অভাব কিংবা এ জাতীয় ঝামেলার কথা ভেবে আমরা নিজেরা অনেকে এন্টিবায়টিক কিনে খেয়ে ফেলি। ঔষধের দোকানীরা, গ্রাম চিকিৎসকেরাও এন্টি-বায়োটিকের অত্যধিক এবং অপ্র্যোজনীয় ব্যাবহার করে থাকেন। সাধারণ সর্দি-কাশিতে এন্টি-বায়োটিক কোন সুফল দেয় না, বরং দামী এইসব ঔষধ কিছুক্ষেত্রে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে। অল্প সর্দি-কাশি সাধারণতঃ ১ সপ্তাহের কম থাকলে এন্টি-বায়োটিক দেয়া হয় না। কেউ যদি মনে করেন এন্টি-বায়োটিক খাবার মত কিছু হইয়েছে, ডাক্তার দেখিয়ে খাওয়াটাই ভালো। অন্ততপক্ষে বন্ধুবান্ধব কেউ ডাক্তার থাকলে ফোনে হলেও জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। (ডাক্তারি মতে অবশ্য ফোনকলে চিকিৎসা উৎসাহিত করা হয় না।)।
-ভিটামিন-সিঃ সর্দি-কাশি সহ আরো কিছু রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঔষধছাড়াও কমলা-জাতীয় ফলে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। তবে অল্প খেলেই চলবে। ভিটামিন-সি বেশী খেলে বড় কোন বিপদ নেই; তবে মাত্রাতিরিক্ত খেতে থাকলে দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। এসিড-জাতীয় সব খাবারই (আমাদের পানীয় কোলাগুলো বেশী ক্ষতিকারক) বেশী খেলে দাঁত ক্ষয় হয়।

ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকাঃ কয়েক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য টীকা পাওয়া যায়। অনেক দেশের হাসপাতালে কাজ করতে গেলে এগুলো নেয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া ঝুকিপূর্ণ মানুষের জন্যও এটা নেয়া উচিৎ। সাধারণ মানুষও এটা নিতে পারেন। (দেশের নামী-দামী হাসপাতালগুলোতে এটা পাওয়া যাবার কথা।)

চিকেন পক্সের টিকাঃ শিশু কিংবা যাদের এখনো চিকেন পক্স হয়নি, কিংবা কোন কারণে যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এই টিকা নিতে পারেন।

৬) হাঁচি-কাশি আসলে (মাস্ক না থাকলে) রুমাল ব্যাবহার করা উচিৎ। রুমাল বের করার সময় না পেলে হাতের কনুই-এর ভাঁজে হাঁচি দিলে সেটা আশে-পাশের লোকদের মধ্যে ছড়াবে না। (হাতের তালুতে হাঁচি দেয়া উচিৎ নয়। কারণ একটু পরেই এই হাত দিয়ে কারো সাথে হাত মিলাবেন, কিংবা বাচ্চাকে আদর করবেন।)

সর্বরোগের মহৌষধঃ
-খাদ্যাভ্যাসঃ এটা মেনে চলা কঠিন। তবুও, আমাদের দৈন্যন্দিন খাবারে কিছু ফম-ফলাদি কিংবা সালাদ জাতীয় খাবার রাখলে শরীর অনেক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট পায়; এগুলো রোগপ্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

-হাত ধোয়াঃ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে শুধু খাবার আগে এবং টয়লেটের পর হাত ধোয়া। কিন্তু বাইরে থেকে ঘরে ফিরে হাত ধুয়ে নিলে হাত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মত জীবাণুও পরিস্কার করে ফেলা সম্ভব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচা যায়।

- ধুমপান পরিহারঃ এটা করা আরো একটি কঠিন কাজ। ধুমপানে শুধু শ্বাসতন্ত্রেরই নয়, ক্যান্সারসহ আরো অনেক রোগের হার বেড়ে যায়।

যেসব লক্ষণ দেখলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিতঃ

১) সর্দি-কাশির সাথে উচ্চজ্বর।
২) কফ (sputum)-এর মধ্যে বাজে গন্ধ পাওয়া গেলে।
৩) কফের সাথে রক্ত আসলে।
৪) শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা হলে।
৫) মাথা ব্যথা থাকলে।
৬) ৭ দিনের বেশী সর্দি-কাশি থাকলে।

—————-

যারা ধৈর্য্য ধরে এতটুকু পড়ে ফেলেছেন, তাদেরকে একটা অনুরোধ।
এবার বাংলাদেশে খুবই শীত পড়েছে। যাদের পক্ষে সম্ভব, আশেপাশের (কিংবা সম্ভব হলে উত্তরাঞ্চলের) গরীব মানুষদেরকে কিছু শীতের কাপড় দিয়ে সাহায্য করা উচিৎ। আমাদের এক-একজনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই হয়তো কয়েকটি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পারে, কিংবা হয়ত বাঁচাতে পারে দু-একটি মানব জীবন।

-সাদ হাবিব । এমবিবিএস, পিএইচডি।
ভিজিটিং প্রফেসর, নিউরোসার্জারী, টোকিও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি।