মার্কেটে রাখাইনদের দোকান বলতে গেলে আর নেই। সব বাঙালিদের দখলে। আমরা খুঁজে খুঁজে রাখাইনদের দোকান খুঁজে বের করলাম। বড্ড ভালো লাগে তাদের দোকানে গেলে। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি বুঝে গিয়েছেন, খুলে বলতে হবে না। মার্কেট ঘোরা আমার খুব অপছন্দের কাজ। কিন্তু ভালোই লাগছিল সেখানে। রাখাইন দোকানীদের কথাবার্তা এতো সুন্দর। মন ভালো হয়ে যায়। জিনিসপত্র কিনে সোজা হোটেলে চলে গেলাম। সব কিছু রেখে পুনরায় চলে আসলাম লাবণী পয়েন্টে। সেখান কড়ি-টড়ি কেনা হবে। ঘুরে ঘুরে তাও কেনা হলো। এরপর অটোতে করে যাওয়া হলো মারমেইড ক্যাফেতে। তাদের অন্দরসজ্জা সুন্দর বিধায় যাওয়া হয়েছিল। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী। তিনটা লেমোনেড অর্ডার করা হলো। বসতে অসাধারণ লাগে। মেনুতে লেখা সব খাবারের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ এবং ৬ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। ভালো কথা। আমরা হিসাব করে ফেললাম কত টাকা বিল আসবে। লেমোনেড আসলো। বিল দিতে বললাম কেননা একটু তাড়াহুড়ো ছিল আমাদের। রাতের খাবার খেতে যেতে হবে। দেখলাম বিল এসেছে কাঙ্ক্ষিত টাকার চেয়ে ২ টাকা বেশি। পরে আমি আবিষ্কার করলাম তারা খাবারের দামের ওপর সার্ভিজ চার্জ আরোপ করেছে। এরপর সার্ভিস চার্জসহ মোট দামের ওপর আরোপ করেছে ভ্যাট। পুরা বাটপার। এখানেই শেষ নয়। ২৯৮ টাকা বিল এসেছে। ৫০০ টাকা দেয়ার পর ফেরত এনেছে ২০০ টাকা। ২ টাকা গায়েব। আমি তো অত সহজে ছাড়ার পাত্র নই। ওয়েটারকে ডেকে ২ টাকার কথা বললাম। আমার বন্ধুরা খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু ২ টাকা কম দিবে কেন? ২ টাকা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। রাতে খেলাম পউষীতেই। এবারে আমার বন্ধুরা নিলো একটা করে লইট্টা ফ্রাই আর একটা করে রূপচাঁদা। আমি লইট্টা ফ্রাইয়ের সাথে নিলাম গরুর ভুনা। সবগুলো খাবার স্বাদই অসাধারণ। ভরপেট খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় বিআরটিসি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে হবে।
জিইসি মোড়
১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।
পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।
ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।
Sunday, May 25, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৫ম ও শেষ পর্ব
Saturday, May 24, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৪র্থ পর্ব
হিমছড়িতে পৌঁছেই ঝর্ণা খোঁজা শুরু করে দিলাম। দেখলাম ১৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢোকার গেইট হয়েছে। ঝর্ণা দেখার কম্পাউন্ডে ঢুকতে ২৩ টাকার টিকেট কিনতে হয়। ১৫ টাকা টিকেটের দাম আর বাকিটা ভ্যাট (ভ্যাট আর শান্তি দিলো না)। গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলাম তীর চিহ্ন দিয়ে বড় ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথ। ঝর্ণা সামনে গিয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে ঝর্ণা। চেনার কোনো উপায় নেই। ঝর্ণার উচ্চতা আমার চেয়ে একটু বেশি হবে। পাহাড় ভেঙে ঝর্ণা ছোট হয়ে গিয়েছে। ঝর্ণার উৎসের দিকে যাওয়াও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মিনি ঝর্ণায় একটু হাত-পা ভেজালাম। ক্যামেরা নেই, ছবি তোলা হলো না। স্থানীয় ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে মেমরি কার্ডে দিতে চাইলো, কিন্তু সে বস্তুও আমাদের সাথে নেই। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম। উঠছি তো উঠছি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। হাঁসফাঁস অবস্থা আমার! আর পারি না। মানুষজনও দেখি সব হাঁপাচ্ছে। প্রায় শেষ পর্যন্ত ওঠার পর একটা সমতল জায়গায় আমার বন্ধুরা ডাবের পানি পান করলো। খালি হাতে উঠতেই যেখানে খবর হয়ে যায় সেখানে ডাবওয়ালা কীভাবে প্রতিদিন একগাদা ডাব নিয়ে উঠে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আর পারছিলাম না উঠতে। আমার বন্ধুরা চূঁড়ায় উঠলো। আমি নেমে এসে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বালির বস্তার ওপর শুয়ে পড়লাম। বুক ভরে বাতাস নিলাম। হানিমুনে আসা নবদম্পতিদের আড়চোখে লক্ষ্য করলাম। তাদের আনন্দে আমিই যেন আনন্দিত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট একা একা খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম সাগড় পাড়ে। আকাশে তখন ঘন মেঘ। রোদের জন্যে তাকানোও যায় না ভালো করে। রোদ চশমাই ভরসা। এরমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে অটো স্ট্যান্ডে যেতে বললো। ইচ্ছে ছিল সাগর পাড়ে বসে এক গেলাস জুস পান করবো। সে সুযোগ না দিয়ে তারা ১২০ টাকায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ঠিক করে ফেললো। মনোরম পথ ধরে লাবণীতে পৌঁছালাম।
এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।
(চলবে)
এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।
(চলবে)
Labels:
Travel,
কক্সবাজার,
ঝর্ণা,
বার্মিজ মার্কেট,
বুদ্ধ মূর্তি,
বৌদ্ধ মন্দির,
ভ্রমণ,
রাখাইন,
সমুদ্র,
সৈকত,
হিমছড়ি
Wednesday, May 21, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৩য় পর্ব
কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনটা ছিল খুব কার্যকর। আগের পর্ব শেষ করেছিলাম সকালের নাস্তায়। সেখান থেকেই আজকের গল্প শুরু করছি। আমাদের ধারণা ছিল নাস্তা সেরে বাসায় গিয়ে দেখবো আমাদের ঘুমন্ত বন্ধু জেগে গোসল করে রেডি হয়ে থাকবে। কিন্তু না! সে তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে পাঠালাম। নিজেরাও আঁটতে থাকলাম পরবর্তী পরিকল্পনা। ঠিক হলো দুপুরে পউষী রেঁস্তোরায় খাবো। এটা নাকি কক্সবাজারের সেরা বাংলা খাবার রেঁস্তোরা। তিন বন্ধু ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে রিক্সা ঠিক করলাম। এক রিক্সায় তিনজন এবং সে তিনজনের ভেতরে আমিও আছি। যেখানে আমি একাই দু’ জনের সমান সেখানে রিক্সাওয়ালা কতটা সাহসী হলে আমাদের তিনজনকে নিতে রাজি হয়? ২০ টাকার বিনিময়ে সে শুধু আমাকেই না, আমার দু’ বন্ধুকেও বহন করতে রাজি হলো। রিক্সা চলছে তো চলছেই, আর পৌঁছাই না আমরা। আমাদের ধারণা ছিল না যে পউষী শহরের ভেতরে। ভেবেছিলাম যথারীতি সব রেঁস্তোরাই সৈকতের সাথে সমান্তরালে। পৌঁছাচ্ছি না দেখে এক সময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রিক্সাওয়ালা আমাদের অন্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না তো?? বেশ একটা সাসপেন্স। আমার চাঁটগাইয়া ফাজিল বন্ধু এরপর চাপাবাজি শুরু করলো। রিক্সায়ালাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো “আমরা যে কক্সবাজারে আসছি ওসি সাহেবকে জানানো হইসে তো”? আমি বললাম “হ্যাঁ সে-ই তো সব ব্যবস্থা করলো”। এরপর তার প্রশ্ন “এসপি সাহেব”। আমি দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম “স্যার সব জানেন”। এবার তিনগুণ ভাব নিয়ে আমার বন্ধুর প্রশ্ন “ম্যাগজির আর রিভলবার কি একসাথেই আছে?” আমার ততক্ষণে ফিচলা হাসি বের হয়ে গিয়েছে। যা হোক, ওসি সাহেবের ভয়েই কিনা জানি না আমরা খুব দ্রুত পউষীর সামনে এসে পৌঁছালাম। ঠিক তখনই আবিষ্কার হলো আমাদের আরেক বন্ধুর এক পায়ের স্যান্ডেল গায়েব। তিনজন ওঠায় এক পায়ের স্যান্ডেল খুলে সে পা উপরে রেখেছিল। পথিমধ্যে স্যান্ডেলখানা পড়ে গিয়েছে। এবার সে রিক্সা ঘুড়িয়ে স্যান্ডেল উদ্ধারে রওনা হলো। ওসি সাহেবের বিশেষ অতিথিরা অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলেও স্যান্ডেল উদ্ধার করতে সক্ষম। কেননা আমার বন্ধু আধা ঘন্টা পর মহানন্দে দাঁত বের করে স্যান্ডেল নিয়ে হাজির হলো। তদন্ত করে আবিষ্কার করা হলো যাত্রাপথের এক স্পিড ব্রেকারের ঝাঁকুনিই স্যান্ডেল ভাইয়াকে গুম করে দিয়েছিলেন।
পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে
পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।
হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড
১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম
পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে
পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।
হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড
১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম
Labels:
Travel,
অটো,
কক্সবাজার,
খাওয়া-দাওয়া,
পউষী,
মেরিন ড্রাইভ রোড,
রেঁস্তোরা,
হিমছড়ি
Thursday, May 15, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ২য় পর্ব
সঙ্গীত চর্চা করতে করতে একেবারে কলাতলী পয়েন্টে চলে আসলাম আমরা। সেখান থেকে রিক্সা নেব না অটো নেব সে সিদ্ধান্থীনতায় কাটলো অনেকটা ক্ষণ। অতঃপর দু’টা রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের খাবারের সন্ধানে। কিছুটা দূরে বিধায় ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায় না গিয়ে হাঁটাপথে খাওয়ার হোটেল খুঁজতে লাগলাম। লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তি স্থানীয় জান্নাত হোটেলের কার্ড ধরিয়ে দিলেন। এতো ক্লান্ত বোধ করছিলাম যে ভালোমন্দ যাচাই না করে ঢুকে পড়লাম সেখানে। ওয়েটার বাবাজি অনেকক্ষণ পর হোটেলের বাইরে থেকে প্রবেশ করলেন। আমরা ছাড়া কোনো কাস্টমার নেই সেখানে। হিসাব-নিকাশ করে ডাল আর ভাতের সাথে অর্ডার করলাম ভর্তা-ভাজি। কক্সবাজার যখন এসেছি রূপচান্দা ফ্রাই যত দামই হোক, একটু চেখে দেখা দরকার সে আশায় অর্ডার করলাম। আকাশচুম্বী দাম। ৩০০ টাকা। ওয়েটার সাহেব বললেন রূপচান্দা আসতে দেরি হবে। কতক্ষণের জবাবে বললেন ১০ মিনিট। আমার চাটগাঁইয়া বন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, “১০ মিনিট মানে কি ১০ মিনিট?” এবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়েটার বললেন ইয়ে মানে ১৫ মিনিট। আমরা ভর্তা ভাজি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। টমেটো ভর্তাটা এখনও মুখে লেগে আছে। অন্যান্য আইটেম ততটা ভালো লাগে নি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর আসলো রূপচাঁদা। তিন জন মিলে সেটাকে নিমিষে সাবাড় করলাম। দাম মিটিয়ে হোটেলের পথে হাঁটা দিলাম।
ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।
বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।
(চলবে)
ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।
বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।
(চলবে)
Labels:
Travel,
কক্সবাজার,
খাওয়া-দাওয়া,
ভ্রমণ,
রূপচাঁদা,
রেঁস্তোরা,
সমুদ্র সৈকত,
হোটেল
Monday, May 12, 2014
একটি চিরাচরিত 'ঘুরে এলাম অমুক জায়গা' টাইপ লেখা- ১ম পর্ব
পড়াশুনা শেষ। বেকার বন্ধুদের তালিকায় নাম লেখায় ফেললাম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। নো পরীক্ষা, নো ক্লাস, নো অ্যাসাইনমেন্ট। কই যাবো কই যাবো করতে করতে পান্থপথ এলাকার কোনো এক টং দোকানে চা (আসলে শরবত) খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কক্সবাজারেই যাবো। ইচ্ছা ছিল বান্দরবান বা সিলেট যাওয়ার। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার গাড়ি ভাড়া করে এখানে সেখানে যাওয়া সম্ভব না। অত টাকা মা-বাবার কাছ থেকে নেয়া সম্ভব না। বন্ধুর বাড়ি আবার চট্টগ্রাম। কক্সবাজার গেলে হোটেলে ট্যাকা দেয়া লাগবে না। “বন্ধুর মামার বন্ধুর” হোটেল। আর কী লাগে! বুধবার টিকেট কাইটা ফেললাম। বৃহস্পতিবার রাতে বাস।
বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে। সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।
কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!
(চলবে)
বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে। সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।
কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!
(চলবে)
Wednesday, May 7, 2014
অনলাইনেই সেরে ফেলুন কাজ, সফটওয়্যার ডাউনলোডের দিন শেষ
দিন কে দিন সব কাজ চলে আসছে কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের ভেতরে। সিডি-ডিভিডির দিনও ফুরোতে চললো বলে। মুভিও আজকাল চালাচালি হয় পেন ড্রাইভ বা শেয়ারিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় প্রায়ই ছোটখাটো কাজ করতে হয় যার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু সফটওয়্যারের। কিন্তু কষ্ট করে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার কিন্তু প্রয়োজন নেই। অনলাইনেই অনেক কাজ করে ফেলা যায়। কাজের এরকম কিছু ওয়েবসাইট নিয়ে আজকের আয়োজন।
১। বিজয় দিয়ে আমরা অনেকেই টাইপ করতে পারি না। অভ্র বা ইউনিকোডে বেশ চলে যায় দিন। কিন্তু অভ্রের মতো এত অসাধারণ এই ফ্রিওয়্যারটি দিয়ে ছাপাখানার কাজ করা যায় না। ছাপাখানার মেশিন অভ্রতে লেখা শব্দ পড়তে পারে না। ইউনিকোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ল্যাংগুয়েজ এখনো আমাদের ছাপাখানাগুলোতে আসে নি। কিন্তু ছাপানোর জন্য এখন বিজয়ে টাইপ করা শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অভ্রতে লিখে অনলাইনে বিজয়ে কনভার্ট করে নিলেই কেল্লা ফতে। ইউনিকোড বা অভ্র থেকে বিজয় এবং বিজয় থেকে অভ্র বা ইউনিকোডে লেখা রূপান্তরের খুবই কাজের একটা ওয়েবপেইজ হলো http://www.banglaconverter.com
২। এক সময় কম্পিউটার কিনে আনলে অ্যাডোবির সবকিছু সেখানে দেয়া থাকতো। এখন অনেকেই ল্যাপটপে আসল উইন্ডোজ চালাচ্ছেন। তাই সেখানে পাইরেটেড সফটওয়্যার দেয়া থাকে না। ফলে ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনলাইনে অনেক ছবি সম্পাদনার সাইট রয়েছে। কিন্তু আমার মতো যারা ছোটবেলা থেকে অ্যাডোবির ফটোশপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত তারা http://www.photoshoponlinefree.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে ছবি সম্পাদনার সব কাজ করতে পারবেন। সাইটটি অ্যাডোবির না হলেও অ্যাডোবি ফটোশপের আদলে তৈরি করা।
৩। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজের জন্যে পিডিএফে ফরম পূরণ করতে হতে পারে আমাদের। কিন্তু আমাদের অধিকাংশেরই কম্পিউটারে পিডিএফ পড়ার অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট রিডার আছে, কিন্তু রাইটার বা এডিটর নেই। অ্যাডোবি রাইটার আবার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পাইরেটেড ভার্সন খুঁজে পাওয়াও কঠিন, তা ব্যবহার করাও অনৈতিক। তাই পিডিএফ ফাইলে লেখা বা সম্পাদনার জন্য একটি চমৎকার অনলাইন পিডিএফ এডিটিং সাইট হলো www.pdfescape.com . এখানে গিয়ে পিডিএফ ফরম পূরণ, চেক/টিক মার্ক দেয়া, আগে থেকে থাকা কোনো অংশ মোছাসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা যাবে।
৪। হঠাৎ করে doc বা docx ফাইলকে pdf এ কনভার্ট করার প্রয়োজন হতে পারে কিংবা উল্টোটা। আবার jpg কে pdf এ. অনেক ধরণের ফাইলকেই অন্য ধরণের ফাইলে রূপান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে কাজের প্রয়োজনে। আর অনলাইনে এ কনভারসনের কাজগুলো বিনামূল্যে করে দেবে convertonlinefree.com সাইটটি। কোনো রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। কনভার্ট করে সরাসরি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
convertonlinefree এর ওয়েবপেইজ
৫। একাধিক পিডিএফ ফাইল জয়েন করতে চলে যেতে পারেন pdfjoin.com এ।
৬। অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য বা রিংটোন বানানোর জন্য এমপিথ্রি ফরমেটের গান কাটতে হতে পারে। হয়তো গানের পছন্দের অংশটুকু কেটে আলাদা করতে চান সেক্ষেত্রে কাজটি খুব সহজে করা যাবে mp3cut.net এ।
৭। ছবি এবং ভিডিও সম্পাদনের চমৎকার একটি সাইট হলো www134.lunapic.com. খুব সহজেই ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়া যায়। হটাৎ করে কোনো ছবিতে ওয়াটার মার্ক বসাতে, সাদাকালো করতে কিংবা স্কেচ ইফেক্ট দিতে এ সাইটটি আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি।
সবশেষে আসি একটি মজার জিনিসে। অনলাইনে নক্ষত্রের অবস্থান আর মহাকাশ সম্পর্কে জানার চমৎকার একটি সাইট হচ্ছে neave.com/planetarium. সাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পিসির স্ক্রিন এক উন্মুক্ত আকাশে পরিণত হবে। আপনি যে অবস্থানে আছে ঠিক সে অবস্থান থেকে আকাশের দিকে তাকালে কোন তারাটি কোথায় অবস্থান করবে তাও দেখা যাবে এখানে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে গিয়েও আকাশ দেখা যাবে।
কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই টুকটাক কাজ অনলাইনে করে ফেলতে পারলে আসলেই ভালো লাগে। হার্ডড্রাইভের জায়গাও বাঁচে, কাজও হয়। তবে এসব কাজের জন্য একটু দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ভালো হয়। নইলে কাজ করতে করতে বিরক্তি চলে আসে।
১। বিজয় দিয়ে আমরা অনেকেই টাইপ করতে পারি না। অভ্র বা ইউনিকোডে বেশ চলে যায় দিন। কিন্তু অভ্রের মতো এত অসাধারণ এই ফ্রিওয়্যারটি দিয়ে ছাপাখানার কাজ করা যায় না। ছাপাখানার মেশিন অভ্রতে লেখা শব্দ পড়তে পারে না। ইউনিকোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ল্যাংগুয়েজ এখনো আমাদের ছাপাখানাগুলোতে আসে নি। কিন্তু ছাপানোর জন্য এখন বিজয়ে টাইপ করা শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অভ্রতে লিখে অনলাইনে বিজয়ে কনভার্ট করে নিলেই কেল্লা ফতে। ইউনিকোড বা অভ্র থেকে বিজয় এবং বিজয় থেকে অভ্র বা ইউনিকোডে লেখা রূপান্তরের খুবই কাজের একটা ওয়েবপেইজ হলো http://www.banglaconverter.com
২। এক সময় কম্পিউটার কিনে আনলে অ্যাডোবির সবকিছু সেখানে দেয়া থাকতো। এখন অনেকেই ল্যাপটপে আসল উইন্ডোজ চালাচ্ছেন। তাই সেখানে পাইরেটেড সফটওয়্যার দেয়া থাকে না। ফলে ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনলাইনে অনেক ছবি সম্পাদনার সাইট রয়েছে। কিন্তু আমার মতো যারা ছোটবেলা থেকে অ্যাডোবির ফটোশপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত তারা http://www.photoshoponlinefree.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে ছবি সম্পাদনার সব কাজ করতে পারবেন। সাইটটি অ্যাডোবির না হলেও অ্যাডোবি ফটোশপের আদলে তৈরি করা।
৩। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজের জন্যে পিডিএফে ফরম পূরণ করতে হতে পারে আমাদের। কিন্তু আমাদের অধিকাংশেরই কম্পিউটারে পিডিএফ পড়ার অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট রিডার আছে, কিন্তু রাইটার বা এডিটর নেই। অ্যাডোবি রাইটার আবার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পাইরেটেড ভার্সন খুঁজে পাওয়াও কঠিন, তা ব্যবহার করাও অনৈতিক। তাই পিডিএফ ফাইলে লেখা বা সম্পাদনার জন্য একটি চমৎকার অনলাইন পিডিএফ এডিটিং সাইট হলো www.pdfescape.com . এখানে গিয়ে পিডিএফ ফরম পূরণ, চেক/টিক মার্ক দেয়া, আগে থেকে থাকা কোনো অংশ মোছাসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা যাবে।
৪। হঠাৎ করে doc বা docx ফাইলকে pdf এ কনভার্ট করার প্রয়োজন হতে পারে কিংবা উল্টোটা। আবার jpg কে pdf এ. অনেক ধরণের ফাইলকেই অন্য ধরণের ফাইলে রূপান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে কাজের প্রয়োজনে। আর অনলাইনে এ কনভারসনের কাজগুলো বিনামূল্যে করে দেবে convertonlinefree.com সাইটটি। কোনো রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। কনভার্ট করে সরাসরি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
convertonlinefree এর ওয়েবপেইজ
৫। একাধিক পিডিএফ ফাইল জয়েন করতে চলে যেতে পারেন pdfjoin.com এ।
৬। অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য বা রিংটোন বানানোর জন্য এমপিথ্রি ফরমেটের গান কাটতে হতে পারে। হয়তো গানের পছন্দের অংশটুকু কেটে আলাদা করতে চান সেক্ষেত্রে কাজটি খুব সহজে করা যাবে mp3cut.net এ।
৭। ছবি এবং ভিডিও সম্পাদনের চমৎকার একটি সাইট হলো www134.lunapic.com. খুব সহজেই ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়া যায়। হটাৎ করে কোনো ছবিতে ওয়াটার মার্ক বসাতে, সাদাকালো করতে কিংবা স্কেচ ইফেক্ট দিতে এ সাইটটি আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি।
সবশেষে আসি একটি মজার জিনিসে। অনলাইনে নক্ষত্রের অবস্থান আর মহাকাশ সম্পর্কে জানার চমৎকার একটি সাইট হচ্ছে neave.com/planetarium. সাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পিসির স্ক্রিন এক উন্মুক্ত আকাশে পরিণত হবে। আপনি যে অবস্থানে আছে ঠিক সে অবস্থান থেকে আকাশের দিকে তাকালে কোন তারাটি কোথায় অবস্থান করবে তাও দেখা যাবে এখানে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে গিয়েও আকাশ দেখা যাবে।
কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই টুকটাক কাজ অনলাইনে করে ফেলতে পারলে আসলেই ভালো লাগে। হার্ডড্রাইভের জায়গাও বাঁচে, কাজও হয়। তবে এসব কাজের জন্য একটু দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ভালো হয়। নইলে কাজ করতে করতে বিরক্তি চলে আসে।
Labels:
How To,
Informative,
Technology,
অনলাইন,
অনলাইনেই সেরে ফেলুন,
অভ্র,
এমপিথ্রি কাট,
কনভার্ট,
কীভাবে করবেন,
ছবি এডিট,
ডক থেকে পিডিএফ,
পিডিএফ,
পিডিএফ এডিট,
প্ল্যানেটোরিয়াম,
বিজয়
Monday, May 5, 2014
বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু ভুল-ত্রুটি শুধরে নিই - ২য় পর্ব
১ম পর্বের পর থেকে...
৭। কোন নাকি কোনো: বহু জায়গায় ‘কোনো’র স্থলে ‘কোন’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করতে গিয়ে শিখেছিলাম ‘কোন’ এবং ‘কোনো’র পার্থক্য। যেমন- কোনো মানুষ কি না ঘুমিয়ে বাঁচতে পারে?” আবার “কোন কোন জায়গায় যাবো তা এখনও জানি না”।
৮। মত না মতো: মত হলো opinion. মতো হলো alike. কিন্তু প্রায়শ ‘মতো’র পরিবর্তে আমরা ‘মত’ লিখে ফেলি। মতো যখন অনুসারে বোঝায় তখন তা অবশ্যই শব্দের সাথে বসে। যেমন- ইচ্ছেমতো, প্রয়োজনমতো।
৯। উদ্দেশ, উদ্দেশ্য: “কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হলো?” এ বাক্যে কিন্তু ভুল আছে। কথাটি হবে “কার উদ্দেশে এ কথা বলা হলো?”। উদ্দেশ অর্থ নিমিত্ত, জন্য। আর উদ্দেশ্য হলো অভিপ্রায় বা লক্ষ্য বা মতলব। বানান কাছাকাছি হওয়াতে এ ভুল হয়ে থাকে আমাদের এবং ভুল হতে হতে তা প্রায় প্রতিষ্ঠিত হবার পথে।
১০। হল নাকি হলো: “কাজটি কি করা হলো?” এ ধরণের বাক্যে অনেকেই ‘হল’ লিখে ফেলেন। কিন্তু সঠিক বানান হলো, ‘হলো’।
১১। কর, করো: একইভাবে তুমি সম্বোধনের বাক্যে হবে করো, আর তুই সম্বোধনের বাক্যে হবে কর। কিন্তু ভুলবশত আমরা তুমি সম্বোধন করেও ‘কর’ লিখে ফেলি অনেক সময়ে।
১২। পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ: পূর্ব এবং অপরের পর অবশ্যই মূর্ধণ্য ন হয়। সে কারণেই পূর্বাহ্ণ এবং অপরাহ্ণ বানানে মূর্ধণ্য ন কিন্তু মধ্যাহ্ন এবং সায়াহ্ন বানানে দন্ত্য ন।
১৩। নিচ এবং নীচ: নিচ অর্থ নিম্ন আর নীচ অর্থ হীন। “নিচে উদাহরণসহ সংজ্ঞা দেয়া হলো”- এ বাক্যে নীচে লিখলে ভুল হবে।
১৪। বোধহয় এবং বোধ হয়: বোধহয় অর্থ সম্ভবত আর বোধ হয় অর্থ মনে হয়। যেমন- “তার বোধহয় এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে”। আর “আমার বোধ হয় সে ভালো ফল করবে”।
১৫। মিথ্যা এবং ভুল: মিথ্যা এবং ভুল কিন্তু এক নয়। একটিকে অন্যেটির সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা ভুল। মিথ্যা হলো False আর ভুল হলো Wrong। কেউ তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিতে পারে। কিন্তু না জেনে ভুল তথ্য দিতে পারে। মিথ্যা ইচ্ছাকৃত, ভুল সাধারণত অনিচ্ছাকৃত।
১৬। স্ব এবং স: স্ব অর্থ নিজের আর স অর্থ সহ। যেমন- স্বহস্তে ফরমটি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ, নিজের হাতে পূরণ করতে হবে। আবার সশস্ত্র বাহিনী অর্থাৎ শস্ত্র (অস্ত্র) সহ যে বাহিনী।
১৭। উল্লেখিত, উল্লিখিত: উল্লেখিত এবং উল্লিখিত ভিন্ন শব্দ। উল্লেখিত অর্থ specified বা নির্দিষ্ট। আর উল্লিখিত অর্থ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। আবার অনেক সময়ে আমরা কোনো রচনার উপসংহারে লিখি, “উপরে উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই...”। এখানে উল্লিখিত লিখলে উপরে লেখার প্রয়োজন নেই। উল্লিখিত অর্থই ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। উপরে লিখলে তা হবে বাহুল্য। আর উল্লেখিত লেখাই যাবে না এ ক্ষেত্রে। উল্লেখিত শব্দ দিয়ে বাক্য হতে পারে এমন- “সামাজিক বিজ্ঞানের উল্লেখিত বিষয়সমূহের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, পৌরনীতি অন্যতম”।
প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আমার বন্ধু জিন্নাহ একটি প্রচলিত বাহুল্য দোষে দুষ্ট বাক্য ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে। সেটি হলো “আকাশে মেঘের ঘনঘটা”। ঘটা অর্থ মেঘ। ঘনঘটা অর্থ মেঘের আড়ম্বর বা মেঘের সমারোহ। সে হিসেবে মেঘের ঘনঘটা বাহুল্য দোষে দুষ্ট। তবে “আজ বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা” বললে ভুল হবে না। এখানে বলে রাখি, দুষ্ট হলো দোষের বিশেষণ। আবার দুষ্ট অর্থ অনিষ্টকারি বা অমঙ্গলজনক। আর দুষ্টু হলো চঞ্চল।
বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে অনেক আলাপ হলো। আশা করি, আবার কখনো এ বিষয়ে আলাপ করতে হাজির হয়ে যাবো। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: jugamtor.com, mmmainul.wordpress.com
৭। কোন নাকি কোনো: বহু জায়গায় ‘কোনো’র স্থলে ‘কোন’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করতে গিয়ে শিখেছিলাম ‘কোন’ এবং ‘কোনো’র পার্থক্য। যেমন- কোনো মানুষ কি না ঘুমিয়ে বাঁচতে পারে?” আবার “কোন কোন জায়গায় যাবো তা এখনও জানি না”।
৮। মত না মতো: মত হলো opinion. মতো হলো alike. কিন্তু প্রায়শ ‘মতো’র পরিবর্তে আমরা ‘মত’ লিখে ফেলি। মতো যখন অনুসারে বোঝায় তখন তা অবশ্যই শব্দের সাথে বসে। যেমন- ইচ্ছেমতো, প্রয়োজনমতো।
৯। উদ্দেশ, উদ্দেশ্য: “কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হলো?” এ বাক্যে কিন্তু ভুল আছে। কথাটি হবে “কার উদ্দেশে এ কথা বলা হলো?”। উদ্দেশ অর্থ নিমিত্ত, জন্য। আর উদ্দেশ্য হলো অভিপ্রায় বা লক্ষ্য বা মতলব। বানান কাছাকাছি হওয়াতে এ ভুল হয়ে থাকে আমাদের এবং ভুল হতে হতে তা প্রায় প্রতিষ্ঠিত হবার পথে।
১০। হল নাকি হলো: “কাজটি কি করা হলো?” এ ধরণের বাক্যে অনেকেই ‘হল’ লিখে ফেলেন। কিন্তু সঠিক বানান হলো, ‘হলো’।
১১। কর, করো: একইভাবে তুমি সম্বোধনের বাক্যে হবে করো, আর তুই সম্বোধনের বাক্যে হবে কর। কিন্তু ভুলবশত আমরা তুমি সম্বোধন করেও ‘কর’ লিখে ফেলি অনেক সময়ে।
১২। পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ: পূর্ব এবং অপরের পর অবশ্যই মূর্ধণ্য ন হয়। সে কারণেই পূর্বাহ্ণ এবং অপরাহ্ণ বানানে মূর্ধণ্য ন কিন্তু মধ্যাহ্ন এবং সায়াহ্ন বানানে দন্ত্য ন।
১৩। নিচ এবং নীচ: নিচ অর্থ নিম্ন আর নীচ অর্থ হীন। “নিচে উদাহরণসহ সংজ্ঞা দেয়া হলো”- এ বাক্যে নীচে লিখলে ভুল হবে।
১৪। বোধহয় এবং বোধ হয়: বোধহয় অর্থ সম্ভবত আর বোধ হয় অর্থ মনে হয়। যেমন- “তার বোধহয় এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে”। আর “আমার বোধ হয় সে ভালো ফল করবে”।
১৫। মিথ্যা এবং ভুল: মিথ্যা এবং ভুল কিন্তু এক নয়। একটিকে অন্যেটির সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা ভুল। মিথ্যা হলো False আর ভুল হলো Wrong। কেউ তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিতে পারে। কিন্তু না জেনে ভুল তথ্য দিতে পারে। মিথ্যা ইচ্ছাকৃত, ভুল সাধারণত অনিচ্ছাকৃত।
১৬। স্ব এবং স: স্ব অর্থ নিজের আর স অর্থ সহ। যেমন- স্বহস্তে ফরমটি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ, নিজের হাতে পূরণ করতে হবে। আবার সশস্ত্র বাহিনী অর্থাৎ শস্ত্র (অস্ত্র) সহ যে বাহিনী।
১৭। উল্লেখিত, উল্লিখিত: উল্লেখিত এবং উল্লিখিত ভিন্ন শব্দ। উল্লেখিত অর্থ specified বা নির্দিষ্ট। আর উল্লিখিত অর্থ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। আবার অনেক সময়ে আমরা কোনো রচনার উপসংহারে লিখি, “উপরে উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই...”। এখানে উল্লিখিত লিখলে উপরে লেখার প্রয়োজন নেই। উল্লিখিত অর্থই ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। উপরে লিখলে তা হবে বাহুল্য। আর উল্লেখিত লেখাই যাবে না এ ক্ষেত্রে। উল্লেখিত শব্দ দিয়ে বাক্য হতে পারে এমন- “সামাজিক বিজ্ঞানের উল্লেখিত বিষয়সমূহের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, পৌরনীতি অন্যতম”।
প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আমার বন্ধু জিন্নাহ একটি প্রচলিত বাহুল্য দোষে দুষ্ট বাক্য ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে। সেটি হলো “আকাশে মেঘের ঘনঘটা”। ঘটা অর্থ মেঘ। ঘনঘটা অর্থ মেঘের আড়ম্বর বা মেঘের সমারোহ। সে হিসেবে মেঘের ঘনঘটা বাহুল্য দোষে দুষ্ট। তবে “আজ বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা” বললে ভুল হবে না। এখানে বলে রাখি, দুষ্ট হলো দোষের বিশেষণ। আবার দুষ্ট অর্থ অনিষ্টকারি বা অমঙ্গলজনক। আর দুষ্টু হলো চঞ্চল।
বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে অনেক আলাপ হলো। আশা করি, আবার কখনো এ বিষয়ে আলাপ করতে হাজির হয়ে যাবো। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: jugamtor.com, mmmainul.wordpress.com
Labels:
Informative,
বানান,
বাংলা,
ব্যাকরণ,
ভাষা,
ভাষা প্রয়োগ,
ভাষার নিয়ম,
ভাষারীতি
Friday, May 2, 2014
বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু ভুল-ত্রুটি শুধরে নিই -১ম পর্ব
ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ তো কম পড়তে হয় নি। কারক, সমাস, ধ্বনিতত্ত্ব, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান আরো কত কি! তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দীর্ঘ ব্যাকরণ জীবন আমাদের। এই ব্যাকরণ মানেই বাংলা ২য় পত্র। বেচারা ব্যাকরণ কোনোদিন ১ম পত্রে আসতে পারলো না। যা হোক, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষা অবলীলায় আমরা ব্যবহার করি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। অত ব্যাকরণ মেনে আমাদের কথা বলতে হয় না বা কিছু লিখতে হয় না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে কিছু ভুল আমরা করে ফেলি। অনেক মানুষ এ ভুলগুলো করতে করতে এমন অবস্থা করে ফেলেছে যে মাঝে মাঝে ভুলগুলোকেই সত্য বলে মনে হয়। সে ধরণের কিছু ভুল নিয়েই আজকে কথা বলবো।
১। অত্র: অত্র অর্থ এখানে বা এ স্থানে। রাস্তাঘাটে আমরা অনেক সময় লেখা দেখি, “অত্র এলাকার কাজি অফিসের ঠিকানা ...”। এটি কিন্তু ভুল। অত্র শব্দটি নিজেই এই এলাকা বোঝাচ্ছে। এর পরে আবার এলাকা শব্দটি জুড়ে দিলে তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। সে হিসেবে সঠিক বাক্যটি হলো, “অত্র কাজি অফিসের ঠিকানা ...”।
২। কী এবং কি: আধুনিক বাংলায় 'কি' এবং 'কী' এর মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। সাধারণত যেকোনো স্থানে একটি ব্যবহার করলেই হয়। কিন্তু দু’টোর মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দিয়ে দেয়া যায় সে সকল বাক্যে যে ‘কি’ বসে সেটি হলো ‘কি’। যেমন- আপনি চা খাবেন কি? আর যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেয়া যায় না সে সকল বাক্যে হয় ‘কী’। যেমন- আপনি কী খাবেন? অর্থাৎ, ‘কি’ হলো এক ধরণের অব্যয়। আর ‘কী’ হলো এক ধরণের সর্বনাম। প্রথম উদাহরণের ‘কি’ বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়তা করছে। কোনো বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না। কিন্তু পরের উদাহরণের ‘কী’ একটি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। উত্তরের সময়ে ‘কী’ এর স্থানে বসছে কোনো খাবারের নাম।
ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে আমি একটি ভুল করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান বলার পর ‘স্যার’ শব্দটি বসিয়েছি। এটি বাহুল্য। কিন্তু স্যারের নামের পরে স্যার না বলে থাকতে পারি নি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসিয়েছি।
৩।ওপর এবং উপর: আমরা প্রায়শ ইচ্ছেমতো বাক্যে ‘উপরে’ কিংবা ‘ওপরে’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শব্দগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন ওপর হলো On আর উপর হলো Up. অর্থাৎ, “টেবিলের ওপর গ্লাসটি রাখা আছে”। কিন্তু “আমার মাথার উপর ফ্যানটি ঘুরছে”। ‘উপর’ এবং ‘ওপরে’র যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।
৪। লক্ষ্য এবং লক্ষ: আমরা সবাই জানি, লক্ষ্য হলো খেয়াল করা। আর লক্ষ হলো শূন্য ব্যতীত কোনো অংকের পর ৫ শূন্য থাকলে যা হয় তা অর্থাৎ লাখ। কিন্তু আমরা যদি ‘লক্ষ্য’ শব্দটির পর কোনো ক্রিয়া ব্যবহার করি তাহলে ‘লক্ষ্যে’র পর আর য-ফলা না দিলেও চলে। যেমন- লক্ষ করুন। তবে য-ফলা দিলেও ভুল হবে, তা নয়। যথারীতি শ্রদ্ধেয় আবদুস সোবহান স্যারের কাছ থেকেই শেখা।
৫। বাহুল্য দোষ: বাক্যে অনেক সময় আমাদের বাহুল্য দোষ হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লিখে ফেলি এরকম- “সভায় সব শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন”। ‘সব’ বলার পর ‘শিক্ষকগণ’ বলার প্রয়োজন ছিল না। অথবা ‘শিক্ষকগণ’ বললে আর ‘সব’ বলার প্রয়োজন ছিল না। এখানে দু’ বার বহুবচন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে যা বাহুল্য।
৬। সত্য এবং সত্যি: সত্য হলো বিশেষ্য আর সত্যি হলো বিশেষণ। আমরা একটিকে অপরটির সমার্থক হিসেবে বাক্যে ব্যবহার করে ফেলি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত ভুল হয় না। উদাহরণ দেই। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। এটা কী?” উত্তর হবে, “এটা চিরন্তন সত্য”। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে- “এটা কেমন কথা?” উত্তর হবে- “সত্যি কথা”। দেখা যাচ্ছে, বিশেষণের পর বসছে ‘সত্য’। আর বিশেষ্যের আগে বসছে ‘সত্যি’। ঠিক যেভাবে বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে এখানেও সেভাবেই বসছে।
(চলবে)
১। অত্র: অত্র অর্থ এখানে বা এ স্থানে। রাস্তাঘাটে আমরা অনেক সময় লেখা দেখি, “অত্র এলাকার কাজি অফিসের ঠিকানা ...”। এটি কিন্তু ভুল। অত্র শব্দটি নিজেই এই এলাকা বোঝাচ্ছে। এর পরে আবার এলাকা শব্দটি জুড়ে দিলে তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। সে হিসেবে সঠিক বাক্যটি হলো, “অত্র কাজি অফিসের ঠিকানা ...”।
২। কী এবং কি: আধুনিক বাংলায় 'কি' এবং 'কী' এর মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। সাধারণত যেকোনো স্থানে একটি ব্যবহার করলেই হয়। কিন্তু দু’টোর মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দিয়ে দেয়া যায় সে সকল বাক্যে যে ‘কি’ বসে সেটি হলো ‘কি’। যেমন- আপনি চা খাবেন কি? আর যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেয়া যায় না সে সকল বাক্যে হয় ‘কী’। যেমন- আপনি কী খাবেন? অর্থাৎ, ‘কি’ হলো এক ধরণের অব্যয়। আর ‘কী’ হলো এক ধরণের সর্বনাম। প্রথম উদাহরণের ‘কি’ বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়তা করছে। কোনো বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না। কিন্তু পরের উদাহরণের ‘কী’ একটি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। উত্তরের সময়ে ‘কী’ এর স্থানে বসছে কোনো খাবারের নাম।
ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে আমি একটি ভুল করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান বলার পর ‘স্যার’ শব্দটি বসিয়েছি। এটি বাহুল্য। কিন্তু স্যারের নামের পরে স্যার না বলে থাকতে পারি নি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসিয়েছি।
৩।ওপর এবং উপর: আমরা প্রায়শ ইচ্ছেমতো বাক্যে ‘উপরে’ কিংবা ‘ওপরে’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শব্দগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন ওপর হলো On আর উপর হলো Up. অর্থাৎ, “টেবিলের ওপর গ্লাসটি রাখা আছে”। কিন্তু “আমার মাথার উপর ফ্যানটি ঘুরছে”। ‘উপর’ এবং ‘ওপরে’র যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।
৪। লক্ষ্য এবং লক্ষ: আমরা সবাই জানি, লক্ষ্য হলো খেয়াল করা। আর লক্ষ হলো শূন্য ব্যতীত কোনো অংকের পর ৫ শূন্য থাকলে যা হয় তা অর্থাৎ লাখ। কিন্তু আমরা যদি ‘লক্ষ্য’ শব্দটির পর কোনো ক্রিয়া ব্যবহার করি তাহলে ‘লক্ষ্যে’র পর আর য-ফলা না দিলেও চলে। যেমন- লক্ষ করুন। তবে য-ফলা দিলেও ভুল হবে, তা নয়। যথারীতি শ্রদ্ধেয় আবদুস সোবহান স্যারের কাছ থেকেই শেখা।
৫। বাহুল্য দোষ: বাক্যে অনেক সময় আমাদের বাহুল্য দোষ হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লিখে ফেলি এরকম- “সভায় সব শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন”। ‘সব’ বলার পর ‘শিক্ষকগণ’ বলার প্রয়োজন ছিল না। অথবা ‘শিক্ষকগণ’ বললে আর ‘সব’ বলার প্রয়োজন ছিল না। এখানে দু’ বার বহুবচন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে যা বাহুল্য।
৬। সত্য এবং সত্যি: সত্য হলো বিশেষ্য আর সত্যি হলো বিশেষণ। আমরা একটিকে অপরটির সমার্থক হিসেবে বাক্যে ব্যবহার করে ফেলি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত ভুল হয় না। উদাহরণ দেই। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। এটা কী?” উত্তর হবে, “এটা চিরন্তন সত্য”। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে- “এটা কেমন কথা?” উত্তর হবে- “সত্যি কথা”। দেখা যাচ্ছে, বিশেষণের পর বসছে ‘সত্য’। আর বিশেষ্যের আগে বসছে ‘সত্যি’। ঠিক যেভাবে বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে এখানেও সেভাবেই বসছে।
(চলবে)
Labels:
Informative,
অব্যয়,
বাংলা ভাষা,
বাহুল্য দোষ,
ব্যাকরণ,
শুদ্ধ,
সঠিক প্রয়োগ,
সর্বনাম
Thursday, May 1, 2014
মিষ্টির দোকান
আমি বড় হয়েছি আজিমপুর এলাকায়। ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। দেখতাম হাতে করে, মাথায় করে কিছু বৃদ্ধ ব্যক্তি মিষ্টি আর বাকরখানি বিক্রি করেন। পথিক তাদের থামিয়ে তৃপ্তি নিয়ে বাকরখানি দিয়ে মিষ্টি খেয়ে তেলের ক্যান থেকে পানি ঢেলে ঢক ঢক পান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। আজিমপুরের বটতলায় দেখেছি হরিপদের মিষ্টির দোকান সকালে নাস্তার দোকানে পরিণত হতো। পরোটা, ভাজি, মিষ্টির শিরা দিয়ে তৈরি অসাধারণ সুজি। চাইলে পরোটা নিয়ে হরেক রকম মিষ্টি, জিলাপি সব খাওয়া যাবে। মনে পড়ে, আব্বা ঢাকা কলেজের উল্টা দিকের যাদব ঘোষ থেকে দই-মিষ্টি আনতেন। ইচ্ছা হলেও যাদব ঘোষে বসে এক পিস কালোজাম আর এক প্লেট দই খাওয়া যেত। আমাদের মিষ্টির দোকানগুলোতে সকাল বেলা অবধারিতভাবে পরোটা আর সুজি পাওয়া যেত। আমাদের মিষ্টির দোকানগুলোর নাম ছিল যাদব ঘোষ এন্ড গ্র্যান্ড সন্স, মরণ চাঁদ, মোহন চাঁদ, বিক্রমপুর, আলাউদ্দিন, বোম্বে সুইটস, মুসলিম, বনফুল কিংবা ভাগ্যকুল। এই নামগুলো যেন মিষ্টির দোকানের জন্যেই তৈরি। কিন্তু কোথায় গেল সেই দিনগুলো? আমাদের মিষ্টির দোকানগুলো করপোরেট হয়ে গেল। সকালে সেখানে পরোটা ভাজা হয় না। দোকানে এসি লেগে গেল। প্রাচীন আমলের ফোম দেখা যাওয়া সোফায় বসে তৃপ্তি নিয়ে নিমকি দিয়ে এক পিস মিষ্টি আর ছোট্ট স্টেইনলেস স্টিলের বাটিতে একটু খানি দই খাওয়া যায় না। মিনিমাম হাফ কেজি মিষ্টি নিতে হবে, মিনিমাম এক পাতিল দই নিতে হবে। আমরা ইংরেজ হয়ে গিয়েছি। আমাদের আর আধা কেজি নাই, আমাদের সব ‘হাফ’ হয়ে গিয়েছে। আমাদের নূন্যতম এখন মিনিমাম। এখন আর পাতিলের ওজন বেড়েছে, সমানুপাতিক হারে দইয়ের জন্য কমেছে। বাইরে থেকে পাতিলের অনেক ঘোপ, কিন্তু তলায় অনেকটাই পুরু সে পাতিল। সব যেন ছদ্মবেশ! ইংরেজদের ভাষায় ক্যামোফ্লজ।
মিষ্টির দোকানের সহকারীরা আর কম দামী সাফারি স্যুট টাইপের পোশাক পরেন না। তারা এখন শার্ট-প্যান্ট শু পরা ফর্মাল। যেন সব এমবিএ। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে “স্যার, সুইটস লাগবে?”। মিষ্টি এখন সুইটস। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে রিসিট হাতে চলে আসে তাদের। দোকানে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু তা বসে এক পিছ মিষ্টি খাওয়ার জন্য না। অনেক অর্ডার করলে বসে অপেক্ষা করার জন্য। দোকানের নাম আর যাদব ঘোষ, বিক্রমপুর, মুসলিম না, সব ইংরেজ নাম। প্রিমিয়াম, প্রিমিয়ার, প্রমিনেন্ট। ইংরেজি মানেই ইশট্যান্ডার্ড। কোথায় আমার সেই রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো বাকরখানি আর মিষ্টি আলা? কোথায় আমার সেই তেলের ক্যান? সব তো ফিল্টারের জার! সব কর্পোরেট। সবখানে ফর্মালিটিজ।
কয়েকদিন আগে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে বসেই একটু স্টেইনলেস স্টিলের ছোট্ট থালায় দই খাবো। এক পাতিল নিতে হবে। ভালো কথা। নিলাম। নিমকি দিয়ে কালোজাম আমার খুব পছন্দের। বাসায় কালোজাম ছিল। ভাবলাম ‘হাফ’ কেজি নিমকি নিয়ে যাই। এরপরই বাধলো গলদ। দোকানে ঠোঙ্গা নাই। এদিকে মিষ্টির প্যাকেটে নিমকি দিতেও তাদের খুব আপত্তি। ৫০ টাকার নিমকির জন্য একটা প্যাকেট চলে যাবে??? জান যাবে তো প্যাকেট যাবে না। প্যাকেটের দাম নাকি ৮ টাকা। সব কথা আমার সামনেই হলো। কোনো লাজ-লজ্জার বালাই-ই নেই। অতঃপর বুদ্ধিমান কর্মচারী একখানা তরিকা বের করতে সক্ষম হলেন। দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসে থাকা ফলের দোকানদারের থেকে একটা ঠোঙ্গা চেয়ে আনলেন। আমাকে সেই ঠোঙ্গায় নিমকি দেয়া হলো। মনে আছে, বাল্যকালে মিষ্টির দোকানে রস চুয়ায় যাতে না পড়ে সেজন্য ডবল প্যাকেটে মিষ্টি দিতেও আপত্তি করতো না দোকানীরা। যা হোক, এখন আধুনিক যুগ বলে কথা। এখন তরমুজ, পেঁপে, বাঙি সব গুঁড়ের মতো থুক্কু স্যাকারিনের মতো মিষ্টি।
‘সুইটস’ এর প্যাকেটের দামও বাড়তি, আআআআট টাকা। আগের মতো সাদা প্যাকেটের ওপর রং-বেরঙের ঢাকনা নাই। ঢাকনা আর তলা একসাথে। মিষ্টির চেয়ে প্যাকেট ভারী। মিষ্টি উঠায় রাখার পর প্যাকেটের ওজনও আড়াইশো গ্রামের মতো অনুভূত হয়। একবিংশ শতক বলে কথা। আচ্ছা, চিনির দাম বাড়লে মিষ্টির দাম বাড়ে কিন্তু চিনির দাম কমলে মিষ্টির দাম কমে না কেন?
মিষ্টির দোকানের সহকারীরা আর কম দামী সাফারি স্যুট টাইপের পোশাক পরেন না। তারা এখন শার্ট-প্যান্ট শু পরা ফর্মাল। যেন সব এমবিএ। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে “স্যার, সুইটস লাগবে?”। মিষ্টি এখন সুইটস। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে রিসিট হাতে চলে আসে তাদের। দোকানে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু তা বসে এক পিছ মিষ্টি খাওয়ার জন্য না। অনেক অর্ডার করলে বসে অপেক্ষা করার জন্য। দোকানের নাম আর যাদব ঘোষ, বিক্রমপুর, মুসলিম না, সব ইংরেজ নাম। প্রিমিয়াম, প্রিমিয়ার, প্রমিনেন্ট। ইংরেজি মানেই ইশট্যান্ডার্ড। কোথায় আমার সেই রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো বাকরখানি আর মিষ্টি আলা? কোথায় আমার সেই তেলের ক্যান? সব তো ফিল্টারের জার! সব কর্পোরেট। সবখানে ফর্মালিটিজ।
কয়েকদিন আগে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে বসেই একটু স্টেইনলেস স্টিলের ছোট্ট থালায় দই খাবো। এক পাতিল নিতে হবে। ভালো কথা। নিলাম। নিমকি দিয়ে কালোজাম আমার খুব পছন্দের। বাসায় কালোজাম ছিল। ভাবলাম ‘হাফ’ কেজি নিমকি নিয়ে যাই। এরপরই বাধলো গলদ। দোকানে ঠোঙ্গা নাই। এদিকে মিষ্টির প্যাকেটে নিমকি দিতেও তাদের খুব আপত্তি। ৫০ টাকার নিমকির জন্য একটা প্যাকেট চলে যাবে??? জান যাবে তো প্যাকেট যাবে না। প্যাকেটের দাম নাকি ৮ টাকা। সব কথা আমার সামনেই হলো। কোনো লাজ-লজ্জার বালাই-ই নেই। অতঃপর বুদ্ধিমান কর্মচারী একখানা তরিকা বের করতে সক্ষম হলেন। দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসে থাকা ফলের দোকানদারের থেকে একটা ঠোঙ্গা চেয়ে আনলেন। আমাকে সেই ঠোঙ্গায় নিমকি দেয়া হলো। মনে আছে, বাল্যকালে মিষ্টির দোকানে রস চুয়ায় যাতে না পড়ে সেজন্য ডবল প্যাকেটে মিষ্টি দিতেও আপত্তি করতো না দোকানীরা। যা হোক, এখন আধুনিক যুগ বলে কথা। এখন তরমুজ, পেঁপে, বাঙি সব গুঁড়ের মতো থুক্কু স্যাকারিনের মতো মিষ্টি।
‘সুইটস’ এর প্যাকেটের দামও বাড়তি, আআআআট টাকা। আগের মতো সাদা প্যাকেটের ওপর রং-বেরঙের ঢাকনা নাই। ঢাকনা আর তলা একসাথে। মিষ্টির চেয়ে প্যাকেট ভারী। মিষ্টি উঠায় রাখার পর প্যাকেটের ওজনও আড়াইশো গ্রামের মতো অনুভূত হয়। একবিংশ শতক বলে কথা। আচ্ছা, চিনির দাম বাড়লে মিষ্টির দাম বাড়ে কিন্তু চিনির দাম কমলে মিষ্টির দাম কমে না কেন?
Subscribe to:
Posts (Atom)