Thursday, October 31, 2013

প্রতিদিনের পাথেয় – ৪

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

মুমিনের প্রতিটি পদক্ষেপই কি চমৎকার ! কেননা, তার যেকোন কাজের মাঝেই কল্যাণ নিহিত এবং এটা শুধু একজন মুমিনের জন্যই প্রযোজ্য। যখন তার জন্য ভালো কিছু হয় তখন সে (আল্লাহর কাছে) কৃতজ্ঞতা জানায়, যা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, আবার যখন সে কোন বিপদে পড়ে তখন সে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এবং সেটাও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

tumblr_mocnwazyHL1s4shrvo1_500

(এই হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার যৎসামান্য ইংরেজি এবং অগভীর ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)

গিট্টু কেরামতি - এসো গিট্টু লাগাই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দড়ির কাজের কোন বিকল্প নেই। সকালে জুতার ফিতা বাঁধা থেকে শুরু করে রাতে মশারির টাঙ্গানো পর্যন্ত প্রতিদিন অসংখ্যবার আমাদের “গিট্টু” বা গেরো মারতে হয়। আর outdoor কর্মকাণ্ড বা ক্যাম্পিং হলে তো কোন কথাই নেই। তাঁবু খাটাতে, কাপড় শুকানোর দড়ি টানাতে, সেলাই করতে, দুইটা দড়ি জোড়া দিয়ে লম্বা করতে, কোন কার্টুন প্যাকিং করতে, এরকম অসংখ্য প্রয়োজনে প্রতিদিন আমাদের গিট্টু কাজে লাগে।

গেরোর প্রকারভেদের কোন অভাব নেই। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের গেরো ব্যবহার করা হয়। তাও মৌলিক কিছু গেরো জানলে প্রতিদিনের অনেক কাজ সহজে করা যায়।

Thumb Knot – দড়ির কাজের শুরু এটা দিয়েই। খুবই সহজ।

[caption id="attachment_389" align="aligncenter" width="361"]Thumb Knot, Photo Courtesy: 66thlondon.org Thumb Knot, Photo Courtesy: 66thlondon.org[/caption]

ব্যবহার - দড়ির দুই মাথায় থাম্ব নট দিয়ে রাখা একটা ভাল অভ্যাস। এটা দড়ির দুই মাথার সুতা বের হওয়া রোধ করে।

Square Knot/Reef Knot – মূলত দুইটা সমান মোটা বা পুরুত্বের দড়ি জোড়া দেয়ার জন্য এই গেরো ব্যবহার করা হয়।

[caption id="attachment_390" align="aligncenter" width="212"]Square Knot/Reef Knot, Photo Courtesy: coustructionmanuals.tpub.com Square Knot/Reef Knot, Photo Courtesy: coustructionmanuals.tpub.com[/caption]

ব্যবহার – কিছু প্যাঁচানো শেষে দড়ির দুই মাথা জোড়া দিতে এই গেরো ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দুইটা দড়ি জোড়া দিতেও এই গেরো কাজে লাগে। দাক্তারিতেও এর ব্যবহার আছে। সাধারণত ব্যান্ডেজ বা স্লিং শেষে এই গেরো মারা হয়।

Shoelace Bow – ছোটবেলা থেকেই অনেকের জুতার ফিতা বাঁধতে সমস্যা হয়। আমার পরিচিত অনেকের এখনও এই সমস্যা রয়ে গেছে।

[caption id="attachment_391" align="alignleft" width="346"]Shoelace knot, Photo Courtesy: sites.google.com/site/laurabrarian Shoelace knot, Photo Courtesy: sites.google.com/site/laurabrarian[/caption]

 

[caption id="attachment_393" align="alignright" width="396"]Shoelace Bow, Photo Courtesy: animatedknots.com Shoelace Bow, Photo Courtesy: animatedknots.com[/caption]

 

 

 

 

 

 

 

ব্যবহার – অবশ্যই জুতার ফিতা বাঁধতে। এছাড়া ফসকা প্রকৃতির হওয়ায় (এক মাথা ধরে তান দিলেই খুলে যায়) এর বিবিধ ব্যবহার রয়েছে।

Clove Hitch – দড়ির এক প্রান্ত কোন খুঁটিতে শক্ত করে বাঁধতে এটা ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হল যত টানা হয় এই গেরো তত মজবুত হয়, শিথিল করলেই ঢিলা হয়ে যায়।

[caption id="attachment_394" align="aligncenter" width="288"]Photo Courtesy: familythorton.wordpress.com Photo Courtesy: familythorton.wordpress.com[/caption]

ব্যবহার – সুতার সাথে বড়শি বাঁধতে ব্যবহার করা হয়।

Sheet Bend – দুইটা অসমান পুরুত্বের দড়ি জোড়া দিতে এই গেরো ব্যবহৃত হয়।

[caption id="attachment_395" align="aligncenter" width="360"]Sheetbend, Photo Courtesy: animatedknots.com Sheetbend, Photo Courtesy: animatedknots.com[/caption]

ব্যবহার – পাল টানাতে। এছাড়া একটা মোটা আর একটা চিকন দড়ি জোড়া দিতে এর জুড়ি নেই, বাঁধন অনেক শক্ত হয়।

Bow Line – এই গেরোর বৈশিষ্ট্য হল, লুপ যতটুকু রেখে গেরো বাঁধা হবে ততটুকুতেই আটকে যায়, টানাটানি করলেও বড় বা ছোট হয় না।

[caption id="attachment_396" align="aligncenter" width="237"]Bowline, Phhoto Courtesy: menshealth.com Bowline, Phhoto Courtesy: menshealth.com[/caption]

ব্যবহার – টানাটানি করলে ছোট বা বড় হয় না দেখে অনেক উদ্ধার কাজে এর ব্যবহার আছে। বিপদগ্রস্থ মানুষকে গর্ত থেকে তুলতে বা উঁচা জায়গা থেকে নামাতে কোমরে বা বুকের কাছে এই গেরো মারা হয়। ওজনে টান খেয়ে লুপ ছোট হয়ে গেলে দড়ির চাপেই মানুষের বারটা বাজবে।

Fisherman’s Knot – দুইটি ভিজা দড়ি জোড়া দিতে এর জুড়ি নেই। এবং খুবই সহজ, Thumb Knot দিতে পারলেই চলে। অনেক সময় জোড়া আরও মজবুত করার জন্য একেক প্রান্তে দুটি লুপ করে Thumb Knot দেয়া হয়। ওটাকে Double Fisherman’s Knot বলে।

[caption id="attachment_397" align="aligncenter" width="203"]Fisherman's Knot, Photo Courtesy: wilderness-survival.net Fisherman's Knot, Photo Courtesy: wilderness-survival.net[/caption]

ব্যবহার – ভেজা দড়ি জোড়া দিতে ব্যবহার করা হয় বলে জেলেদের মধ্যে এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি।

Marline Spike Hitch – দড়ির মাঝখানে এক বা একাধিক লাঠি বাঁধতে এর তুলনা নেই।

[caption id="attachment_398" align="aligncenter" width="191"]Marlin Spike Hitch, Photo Courtesy: pioneeringmadeeasy.co.uk Marlin Spike Hitch, Photo Courtesy: pioneeringmadeeasy.co.uk[/caption]

ব্যবহার – দড়ি ও লাঠি বা বাঁশ দিয়ে মই বানাতে কাজে লাগে।

Square Lashing – ল্যাশিং সাধারণত দুই বা তার বেশি লাঠি দড়ি দিয়ে জোড়া দিতে ব্যবহার করা হয়। লাঠি বা বাঁশের কাঠামো তৈরি করতে লাশিং এর বিকল্প নেই। যেকোনো কাঠামোতে স্কয়ার ল্যাশিং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ল্যাশিং। এছাড়া প্রয়োজন ভেদে আরও অনেক প্রকারের ল্যাশিং এর ব্যবহার আছে।

স্কয়ার ল্যাশিং ব্যবহার করা হয় দুইটি লাঠিকে পরস্পরের লম্বভাবে (+ চিহ্নের মত) জোড়া দিতে। এর শুরু এবং শেষ হয় Clove Hitch দিয়ে।

[caption id="attachment_399" align="aligncenter" width="313"]Square Lashing, Photo Courtesy: tinhkhiet.org Square Lashing, Photo Courtesy: tinhkhiet.org[/caption]

এছাড়া আরও অসংখ্য গেরো ও ল্যাশিং আছে। একেকটা একেক কাজের জন্য। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সবগুলোর প্রয়োজন না থাকলেও মৌলিক কিছু শিখে রাখলে প্রতিদিন অনেক কাজে দিবে। পরের বার নিজের জুতার ফিতা নিজেই বাঁধবেন, নিজের বস্তা নিজেই পেঁচাবেন, নিজের কাপড় শুকানোর দড়ি নিজেই টাঙাবেন।

Wednesday, October 30, 2013

প্রতিদিনের পাথেয় – ৩

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

১. তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ এবং শেষ দিনের উপর ঈমান এনেছে সে যেন হয় ভালো কথা বলে, নয়তো চুপ থাকে। -সহিহ বুখারি, ৬১৩৮

২. দুর্ভোগ বা দুর্যোগের প্রথম আঘাতের মোকাবিলায় ধৈর্যধারণ করাই প্রকৃত ধৈর্যের পরিচয়। -সহিহ বুখারি, ১২৮৩ [হাদিসে যে ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথাটি বলেছেন, তা আমাদের জীবনেও খুবই সাধারণ ঘটনা। আকস্মিক কোন দুর্ঘটনা বা প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় আমরা প্রথমেই আবেগাক্রান্ত হয়ে এমন কথা বা কাজ করি বা প্রতিক্রিয়া দেখাই যেটা ইসলামে পছন্দনীয় নয়, কিন্তু কিছু সময় পার হওয়ার পর আমরা বুঝতে পারি যে সব কিছুই হয় আল্লাহর তরফ থেকেই এবং তখন চেষ্টা করি আবেগ সংবরন করতে। আমাদের এরকম পরিস্থিতির কথা ভেবেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।]

patience

(এই হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হবে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার ভাসাভাসা ইংরেজি এবং ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)

Tuesday, October 29, 2013

প্রতিদিনের পাথেয় – ২

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

১. হে মানবসকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করতে থাকো (অর্থাৎ, তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা কর)। আমি তো দিনে ১০০ বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৭০২

২. নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ বান্দার তওবা কবুল করতে থাকেন যতক্ষণ না তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় (অর্থাৎ, ঠিক জান কবজ করার মুহূর্ত উপস্থিত হয়) ! সহিহ বুখারী, হাদিস ১

 tumblr_mrujjsro1q1s4shrvo1_500


(এই হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হবে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার ভাসাভাসা ইংরেজি এবং ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)

Monday, October 28, 2013

প্রতিদিনের পাথেয় - ১

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

(ভুমিকাঃ নিচের হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হবে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষার জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার ভাসাভাসা ইংরেজি এবং ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)

১. যেকোন কাজেরই মূল বিবেচ্য হল তার উদ্দেশ্য (নিয়ত) এবং ফলাফল হিসেবে প্রত্যেকে তাই পাবে যে উদ্দেশ্যে সে কাজটি করেছে। - সহিহ আল-বুখারী, নং-১

২. নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমার বাহ্যিক আকৃতি বা ধন-সম্পদকে নয় বরং তোমার অন্তরে যা রয়েছে এবং যা তুমি করো তাকেই বিবেচনা করেন।  সহিহ মুসলিম, নং-২৫৬৪

 

Friday, October 18, 2013

রক্ত দেন, জীবন বাঁচান

[caption id="attachment_602" align="alignleft" width="197"]Photo Courtesy: dailymail.co.uk Photo Courtesy: dailymail.co.uk[/caption]

কথাটা হয়ত অনেক জায়গায়েই পড়েছেন আর চিন্তা করেছেন রক্ত যাকে দিচ্ছেন তার জীবন বাঁচাবেন। আমি কিন্তু শিরোনামে ওই কথা বুঝাই নাই।

ভুল বুঝেন না, আমি সম্পূর্ণরূপে একমত যে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে আপনার রক্তের কোন বিকল্প নেই। যদিও ২০০৮ সালেই প্রথম লোহিত রক্তকণিকা পরীক্ষাগারে বানানো সম্ভব হয়েছে, এবং ২০১১ সালে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রক্ত মানুষের শরীরেও প্রবেশ করানো হয়েছে, সেই দিন আসতে এখনও অনেক দেরি যেদিন রক্ত দাতার পরিবর্তে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রক্ত মানুষকে দেয়া হবে। আর উন্নত বিশ্বে সেটা যেদিন শুরু হবে, তারও অনেক পরে তা আমাদের দেশে চালু হবে, তাও ভেজাল মেশানো রক্ত। তাতে অবশ্য আমাদের কিছু হবে না, ফরমালিন ও কার্বাইড যদি হজম করে ফেলি, ভেজাল যুক্ত রক্তও হজম করতে পারব, অতটুকু আত্মবিশ্বাস আছে।

যাই হোক, আমি মূলত শিরোনামে আপনার নিজের জীবনের কথা বলেছি। ব্যাপারটা মোটেও অদ্ভুত না, ডাক্তারি বিদ্যা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। রক্তের ৮৩% থাকে পানি, ১৭% থাকে অন্যান্য উপাদান। অর্থাৎ রক্ত দিলে আপনার শরীর থেকে মূলত পানি-ই বের হয়। খুব ছোট করে দেইখেন না, এই “পানি” বের করা যে আপনার নিজের শরীরে কতটা ভাল প্রভাব ফেলে তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

রক্তদান আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়। American Medical Association এর গবেষণা অনুযায়ী, ৪৩-৬১ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা ৬ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিয়েছে তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক অনেক কমে গেছে। এমনকি ক্যান্সারের সম্ভবনাও নিয়মিত রক্ত দাতাদের মধ্যে কম। Medical Daily এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়মিত রক্ত দাতাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভবনা ৮৮% কমে যায়। অন্যান্য হৃদরোগের সম্ভবনা কমে যায় ৩৩%।

রক্তদান এই অলৌকিক কাজ কিভাবে করে? রক্তে Iron এর পরিমাণ কমিয়ে। প্রতিবার রক্তদানে আপনার শরীর থেকে ২২৫-২৫০ মিলিগ্রাম Iron বের হয়ে যায়। রক্ত কতটা ঘন ও আঠালো হবে তা অনেকটা Iron এর পরিমাণের উপর নির্ভর করে। Iron রক্তে Cholesterol এর Oxidation ও বাড়িয়ে দেয়। অধিক Iron যুক্ত রক্ত আপনার ধমনীতে প্রয়াহিত হলে অধিক ঘর্ষণ ও চাপের সৃষ্টি করে। বাংলা কথা, আপনার হৃদরোগের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত রক্তদান আপনার রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, যা আপনার হৃদরোগ অনেকাংশেই প্রতিহত করে। হার্টের রোগীরা যে Aspirin খেয়ে থাকে তাও মূলত রক্তের ঘনত্ব কমানোর জন্যই।

এছাড়া আপনার ক্যালোরি পোড়াতে রক্তদান একটি ভাল পদ্ধতি। University of California, San Diego এর গবেষণা অনুযায়ী প্রতি Pint (৪৭৩.১৭৬৪৭৩ cc) রক্তদান ৬৫০ ক্যালোরি পোড়ায়। এর কারণ হল আপনার শরীর হারানো রক্তের সমপরিমাণ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উৎপাদন করে, তবে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি পূরণ করতে ৪-৮ সপ্তাহ লেগে যায়।

[caption id="attachment_601" align="aligncenter" width="371"]Photo Courtesy: 123coimbatore.com Photo Courtesy: 123coimbatore.com[/caption]

[caption id="attachment_603" align="alignright" width="305"]Photo Courtesy: medicaldaily.com Photo Courtesy: medicaldaily.com[/caption]

অধিকাংশ সুস্থ মানুষের শরীরেই দেয়ার মত রক্ত থাকে। প্রতি ৩-৬ মাস পর পর রক্ত দিলে রক্তদানের কারণে আপনার শরীরে রক্ত ঘাটতি পড়ার কোন সম্ভবনা নেই। যারা নিয়মিত দেন না তাদের জন্য বলছি, দিয়ে দেখেন না একটু, আমি লিখে দিচ্ছি, ভাল লাগবে (ভাল না লাগলে আমার নামে কেস করতে পারেন, আমি মাইন্ড করব না :p)। নিজের শরীর ভাল থাকবে ওটা পরে, আরেকটা জীবন আপনি বাঁচাচ্ছেন। আপনার শরীরে অতিরিক্ত আছে এমন একটি জিনিস, যার ৮৩% পানি, আরেকজনের জন্য যে কতটা মূল্যবান তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সামান্য একটা সুঁই এর ফুটার বিনিময়ে আপনি যে মানসিক শান্তি পাবেন তার অনুভূতি আপনি অন্য কিছুতে পাবেন না। শুধু একবার দিয়ে দেখেন, ভাল না লাগলে আর দিয়েন না।

এবার আরেক শ্রেণীর কথা বলি, যারা রক্তদানের নেশায় আক্রান্ত, overenthusiastic! পারে না তো প্রতি

[caption id="attachment_605" align="alignleft" width="200"]Photo Courtesy: ncpresby.pbworks.com Photo Courtesy: ncpresby.pbworks.com[/caption]

দেড়-দুই মাস অন্তর অন্তর রক্ত দেয়। ভাই, এই অভ্যাস ত্যাগ করেন। এভাবে চালিয়ে গেলে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবেন, ১ বছর আর দিতে পারবেন না। শরীর তো, রক্ত উৎপাদনের মেশিন তো আর না। বিশ্বাস করেন, ভালর চেয়ে মন্দই বেশি। আমার পরিচিত অনেকেরি এই সমস্যা আছে। ভাই, দুর্বল হয়ে গেলে পরে নিজেরি রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হবে। দরকার কি? যতক্ষণ সুস্থ আছেন দিয়ে যেতে পারবেন, মানুষের মঙ্গল হবে। সুস্থ থাকেন, এটা অনেক জরুরি।

এছাড়া অনেক জায়গাতেই রক্ত দান করলে ফ্রি কিছু টেস্ট করে দেয়। এই সুযোগ কেন ছাড়বেন? বিনা খরচে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনে নেন, কিছু রোগমুক্তির নিশ্চয়তা উপভোগ করেন :)

শেষ কথা, কখনো খালি পেটে রক্ত দিবেন না। কয়েক মিনিটের মধ্যে শরীর থেকে এত রক্ত ও পানি বের হয়ে যাওয়ায় ধকল শরীরকে সামলাতে হয়। রক্ত দেয়ার আগে বেশি করে পানি পান করেন, রক্ত দেয়া শেষ হলে আবার বেশি করে পানি পান করেন। যত পানি পান করতে পারেন তত ভাল। রক্তদান শেষ হলেই লাফ দিয়ে ফুটবল খেলতে দৌড়ায়েন না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেন, শরীরকে অভ্যস্ত হতে সময় দেন।

Wednesday, October 9, 2013

জানা-অজানায় চে

বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে এমন তরুণ প্রজন্মের কাছে চে গুয়েভারা এক প্রবাদপ্রতীম চরিত্র। শুধু বামপন্থার রাজনীতি করে এমন তরুণরা নয়, পরিবর্তন ও ন্যায়ের স্বপ্ন দেখা যেকোনো তরুণই চে’র ভক্ত। আর সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আশেপাশে আমরা দেখতে পাই চে’র মাথার ক্যাপ, চে’র ছবিযুক্ত টি-শার্ট কিংবা ব্যাগ। তরুণরা চে’কে শরীরে মেখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। আর সে কারণেই তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে চে গুয়েভারার আদর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চে গুয়েভারার নাম শোনেন নি, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চে সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। তার সম্পর্কে আরেকটু জানার কিংবা জানাবার ধৃষ্টতা দেখিয়েছি এখানে। চে গুয়েভারার প্রকৃত নাম ‘আর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না’। তবে তিনি ‘চে গেভারা’ নামেই অধিক পরিচিতি পেয়েছেন। স্প্যানিশে চে অর্থ প্রিয়। ‘চে গেভারা’ অর্থ ‘প্রিয় গেভারা”। ভালোবেসে মানুষ তাকে এ নামে ডাকতো। তার নাম ইংরেজিতে উচ্চারণ করলে গুয়েভারা হয়, স্প্যানিশে কিন্তু গেভারাই। চে’র জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায়। পেশায় তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তিনি সমগ্র লাতিন আমেরিকায় ঘুরতে বের হন। সে সময় লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দারিদ্র্যের সামগ্রিক রূপ দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং এ অঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। জন্মসূত্রে বা জাতিগতভাবে চে আর্জেন্টিনার নাগরিক হলেও মানসিকভাবে তিনি আসলে গোটা লাতিন আমেরিকারই নাগরিক ছিলেন। অবশ্য পরে দেখা যায় তিনি আসলে একজন বিশ্ব নাগরিক ছিলেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বৈষম্যের শিকার মানুষ ছিল সে প্রান্তেই তিনি ছুটে গিয়েছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

CheG1951

পারিবারিক প্রভাব বা কবিতার প্রতি অনুরক্ততাই হয়তো বাল্যকাল থেকে তার মাঝে বিপ্লবী চেতনার জন্ম দেয়। আর সে কারণেই ১৯৫১ সালে বুয়েস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালীন তিনি এক বছরের জন্য শিক্ষাবিরতি দিয়ে মোটর সাইকেলে করে বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোর সাথে পেরুর দিকে রওনা দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পেরুর সান পাবলো লেপার কলোনীতে (কুষ্ঠ রোগীদের বিশেষ কলোনী) স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে কাজ করা। যাত্রা পথে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের দরিদ্র জীবনযাত্রা দেখে চরম ব্যথিত হন। তিনি দেখতে পান কীভাবে দরিদ্র কৃষকেরা মহাজনদের দ্বারা অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একই সাথে লেপার কলোনীতে কুষ্ঠ রোগীদের পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ দেখে অভিভূত হন। এ ভ্রমন অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি যে ডায়েরী লেখেন তা ‘দ্য মোটরসাইকেল ডায়েরীজ’ নামে সুপরিচিতি লাভ করে। লাতিন আমেরিকায় এ সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য তিনি গুয়েতেমালার রাষ্ট্রপতি জাকাবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বে গুয়েতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে সিআইএ’র ষড়যন্ত্রে গুজমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে চে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার পক্ষে আরো সংকল্পবদ্ধ হয়ে পড়েন।

চে’র আনুষ্ঠানিক বিপ্লবী জীবন শুরু হয় কাস্ত্রো ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে সাক্ষাতের পর থেকে। ১৯৫৪ সালে গেভারা মেক্সিকো শহরে গিয়ে একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তার সাথে দেশান্তরী রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর পরিচয় ঘটে। রাউল ও ফিদেল তখন কিউবার মার্কিন-মদদপুষ্ট একনায়ক ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছিলেন। কিউবায় বাতিস্তা সরকার পতন আন্দোলন চালানোর জন্য যে বিপ্লবী দল পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ফিদেল সে দলে একজন চিকিৎসক রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনি। চে গেভারা সানন্দে বিপ্লবী দলের সাথে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে রাজি হন। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্বর বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশ্য একটি বিপ্লবী দল মেক্সিকো থেকে কিউবার দিকে গ্রানমা নামক এক ছোট্ট কেবিন ক্রুজারে রওনা হয়। কিউবার লাস কালোরাডাস উপকূলে বাতিস্তার সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সেখানে চে’ তার ৮২ জন সহযোদ্ধাকে হারান। মাত্র ২১ জন বিপ্লবীকে নিয়ে চে সিয়েরা মস্ত্রা পর্বতমালার দিকে রওনা হন। চে যোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলেন দলের চিকিৎসক। তার কাছে ছিল ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রীর একটি বাক্স। কিন্তু ৮২ জন কমরেড নিহত কিংবা ধরা পড়ার পর চে’র দল যখন পালিয়ে যাচ্ছিল তখন একজন সহযোদ্ধার ফেলে যাওয়া গোলাবারুদের বাক্স তুলে নেন চে। ওষুধ ও গোলাবারুদের বাক্স একত্রে বহন করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। এক পর্যায়ে তিনি ওষুধের বাক্স ফেলে দিয়ে শুধু গুলির বাক্স নিয়ে পথচলা শুরু করেন। আর ঠিক সেই মূহুর্তেই চিকিৎসক চে গেভারা পরিণত হন একজন যোদ্ধায়।

Che Guevara

সিয়েরা মস্ত্রা পর্বতমালায় আশ্রয় নেয়া বিপ্লবী দল পুনরায় সংঘবদ্ধ হতে পেরেছিল। চে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে শুরু করলেন। আস্তে আস্তে বিপ্লবীদের দল বড় হতে লাগল। চিকিৎসক কাস্ত্রো হয়ে উঠলেন যোদ্ধা। তিনি বিপ্লবীদের সামরিক প্রশিক্ষণও প্রদান করতেন। এক সময় স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেন। রণকৌশল এবং কূটনৈতিক নানা বিষয়ে ফিদেল কাস্ত্রোকে গেভারা পরামর্শ দিতেন। টাইম ম্যাগাজিন চে’কে ‘কাস্ত্রোর মস্তিষ্ক’ উপাধি দেয়। চে’ বিপ্লবী দলের একজন কমান্ডার হিসেবে কাজ করতে থাকেন। কর্তব্যে অবহেলাকারীদের নির্দ্বিধিয়া গুলি করতেন তিনি। এভাবে এক ভয়ংকর যোদ্ধা হয়ে ওঠেন তিনি এক সময়। দীর্ঘ দিন বিপ্লব চলার পর উপায় না পেয়ে ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারি একনায়ক বাতিস্তা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেল। বিপ্লবীদের কমান্ডার চে কিউবার রাজধানী হাভানায় বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করলেন। আমজনতা তাদের সাদরে বরণ করে নিল। কিউবা বিপ্লবে সফল নেতৃত্ব দানই চে গেভারার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।

একনায়ক বাতিস্তাকে অপসরণ করে বিপ্লবী কাস্ত্রো সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর গেভারা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি কিউবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একদিন বিপ্লবীদের অধিবেশনে ফিদেল কাস্ত্রো জিজ্ঞেস করেন তাদের মাঝে কোনো ‘ইকোনমিস্ট’ আছেন কিনা। কিন্তু চে ভুলে শুনতে পান “কোনো কমিউনিস্ট আছে কিনা”। ফলে তিনি নির্দ্বিধায় হাত তোলেন এবং কাস্ত্রো তাকে ব্যাংক অব ন্যাশনাল বা কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান করে দেন। এসময় কিউবার নোটে তাঁর স্বাক্ষর হিসেবে শুধু ‘চে’ লেখা থাকত।

১৯৬৫ সালে কিউবার শুভেচ্ছাদূত এবং বিশ্ব বিপ্লবীদের কূটনীতিক হিসেবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকা সফরে যান। সফর থেকে কিউবায় ফিরে ফিদেলের সাথে ৪০ ঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন চে’। এ বৈঠকের পর চে’ একেবারে গায়েব হয়ে পড়েন। তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না। আসলে চে’ গেভারা নতুন মিশনে নেমেছিলেন। কিউবায় তার কাজ শেষ। এবার তাকে নতুন কোনো বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে হবে। সে লক্ষেই ১৯৬৫-৬৬ সালে আফ্রিকায় বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আফ্রিকার মানুষ তাকে নাম দিয়েছিল ‘মুগান্দা’ যার অর্থ ‘ত্রাণকর্তা’। আর গেরিলারা তাঁকে সম্বোধন করতো কমান্ডার ‘তাঁতু’ নামে। তিনি তখন কঙ্গোবাসীর স্বাধীনতা নিয়ে বিপ্লব করছিলেন। কিন্তু বিপ্লবীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে তার সে বিপ্লব সফল হয় নি। পরে তিনি কিউবায় ফিরে আসেন।

Che-Guevara-che-guevara-30524289-384-321

হাভানায় থাকাকালীন চেয়ে চিন্তা করেন বলিভিয়ায় মার্কিন মদদপুষ্ট সরকার পতনের। বলিভিয়ার জনগণের মুক্তির জন্য তিনি কিউবার সিক্রেট সার্ভিসের সহযোগিতায় উরুগুয়ের নাগরিকের ছদ্মবেশে বলিভিয়ায় প্রবেশ করেন। ১৮ জন বিশ্বস্ত কিউবাঙ্কে নিয়ে মোট ৫০ জনের একটি গেরিলা দল গঠন করেন চে। কিন্তু বলিভিয়ার কমিনুনিস্ট পার্টির কাছ থেকে তারা কোনো সহায়তা পায় নি। এমনকি রাশিয়ার সাথে মার্কিনিদের সদ্য সুসম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় রাশিয়াও সেভাবে বিপ্লবীদের সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। বিপ্লবীদের মনোবল আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে পালিয়েও যায়।  বলিভিয়ার সামরিক বাহিনীর সাথে পেরে উঠতে ব্যর্থ হয় চে’র বিপ্লবী দল। এক সময় তিনি ধরা পড়েন। বন্দী অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বিপ্লবের রাজপুত্র চে গেভারাকে হত্যা করে সেনাবাহিনী।

Che_on_Mule_in_Las_Villas_Nov_1958

আজ ৪৬ বছর পরে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর। ৪৬ বছর ধরে চে’ আমাদের সাথে নেই। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘গুয়েভারার প্রতি’ কবিতার প্রথম লাইনেই লিখেছেন, “চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়”। শুধু সুনীলকে না, চে’র মৃত্যু পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী সকল মানুষকেই অপরাধী করে দেয়। যুগে যুগে বিপ্লবের দিশারী, পরিবর্তনের দিশারী, মুক্তিকামী মানুষের নেতাদের প্রাণ হারাতে হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে। কিন্তু তবুও বিপ্লব থেমে থাকে নি। চে’র জীবন আরো হাজারো বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে, দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে। চে’কে হত্যা করার আগের একটি ঘটনা বলেই লেখা শেষ করবো। বন্দী অবস্থায় চে’কে এক তরুণ সেনা কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করে, “আপনি কী ভাবছেন?” চে’ উত্তর দেন, “আমি বিপ্লবের অমরত্বের কথা ভাবছি”। হ্যাঁ, সত্যিই তো। চে মারা গিয়েছেন, কিন্তু বিপ্লব তো মারা যায় নি। বিপ্লব তো অমর।

Monday, October 7, 2013

দীর্ঘসময় বসে কাজ করা কি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর?

বর্তমানে অফিসে বা বাসায় কম্পিউটার এর সামনে বসে কাজ করা, টেলিভিশন দেখা, গাড়ি চালানো ইত্যাদি নানা কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার প্রবণতা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও। গবেষণায় দেখা গেছে চেয়ারে বসে কাজ করার সময় কমাতে পারলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকাংশে। কিন্তু একটি নতুন গবেষণা যা বসে থাকার সাথে কর্মক্ষমতা এবং বিষণ্ণতার সম্পর্ক পরীক্ষা করেছে দাবি করছে বসে কাজ করার সময় কমাতে পারলে তা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস করে।


Sitting at Deskঅস্ট্রেলিয়ার গবেষকগণ ৮৯৫০ জন মহিলার উপর একটি জরিপ করেন যাদের বয়স ২০০১ সালে ৫০-৫৫ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের শারীরিক কর্মকাণ্ড, একটানা বসে থাকার সময় এবং মনোভাব সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। সবাই জরিপটি শেষ করেন তিন বছর বিরতির পর পর মোট চার বারে, ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, এবং ২০১০ সালে। গবেষকগণ তাদের দেয়া তিন ধরনের তথ্যের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেন। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল দৈনিক শারীরিক কর্মকাণ্ড এবং একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার সাথে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা।


গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মহিলারা সবচেয়ে বেশি সময় বসে কাটান (দিনে সাত ঘন্টার বেশি) তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যারা অপেক্ষাকৃত কম সময় বসে কাটান (দিনে চার ঘন্টার কম) তাদের চেয়ে ৪৭% বেশি। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যেসব মহিলারা কোন রকম শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তাদের চেয়ে ৯৯% বেশি যারা নিয়মিতভাবে শরীরচর্চা করেন। এবং যেসব মহিলারা একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় বসে কাটান এবং কোন রকম শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তাদের চেয়ে তিন গুন বেশি যারা অপেক্ষাকৃত কম সময় বসে কাটান এবং নিয়মিতভাবে শরীরচর্চা করেন।


তবে এই গবেষণা থেকে লক্ষ্য করা যায় যে বেশি সময় বসে কাটানোর সাথে ভবিষ্যতে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার মানে হচ্ছে যেসব মহিলারা বেশি সময় বসে কাটান তাদের বর্তমানে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও ভবিষ্যতে এর কোন প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায় নি।


দিনের বেশিরভাগ সময় বসে কাটালে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণে। এক্ষেত্রে শরীরচর্চা করা বসে থাকার অপকারিতাগুলোর উপর কোন প্রভাব ফেলে না, তাই ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে কাজ না করে ২০ মিনিট পর পর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। এ ব্যাপারে একটু সচেতনতা আপনাকে অনেক দৈহিক এবং মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত রাখবে।


সুত্রঃ  American Journal of Preventive Medicine

Sunday, October 6, 2013

যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ফযিলত

Labbaik


আরবি বছরের যিলহজ মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতময় একটি মাস, বিশেষ করে এর প্রথম দশদিন । এই মাসের প্রথম দশদিন আমাদের জন্য পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের এক সুবর্ণ সময় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘এমন কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭]

যিলহজের এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন (৯ যিলহজ) বা বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত।

কোরবানির দিনও যিলহজের এই দশদিনের অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন আলেমের মতানুসারে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে কোরবানির দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]

এই দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল ছাড়াও এই মাসের প্রথম দশদিন আরও কয়েকটি সহজ কিন্তু ফযিলতময় কিছু আমলের কথা আমরা বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে জানতে পারি।

  • সিয়াম পালন করা : মুসলমানের জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন করা। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’ [মুসলিম : ১১৬৩]


যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে পারে। তিরমিযি শরিফে আছে এই মাসের প্রথম দশদিনের যেকোন দিনের সাওম পুরো বছরের সাওমের সমান এবং এই রাতগুলোর ইবাদত লায়লাতুল কদরের ইবাদতের সমান।

  • তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’[বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]


আরেকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তাকবির হলঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ ।  যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত (৯ তারিখ ফজর সালাতের পর থেকে ১৩ তারিখ আসর সালাতের পর পর্যন্ত) প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

  • আল্লাহর কাছে এই মাসের একটি পছন্দনীয় আমল (মুস্তাহাব) হচ্ছে যিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে যারা কুরবানির নিয়ত করেছেন তাদের নখ বা চুলজাতীয় কিছু কাটা থেকে বিরত থাকা। [ইবনে মাযাহ]


এই দশদিনের পুরো ফযিলত অর্জন করার জন্য উপরের এই আমলগুলোর পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত আমলগুলো যেমন, দোয়া, জিকর, সালাত সহ যাবতীয় ভালো কাজও আরও বেশি বেশি করা প্রয়োজন।

মহান আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, গ্রহণযোগ্য আমল  এবং উত্তম রিজিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ লেখক আলী হাসান তৈয়বের যিলহজের প্রথম দশক : ফযীলত ও আমল

Saturday, October 5, 2013

হাড়-ভাঙ্গার First Aid

[caption id="attachment_582" align="alignleft" width="225"]Photo Courtesy: adoseofdebate.wordpress.com Photo Courtesy: adoseofdebate.wordpress.com[/caption]

প্রাথমিক প্রতিবিধানের (First Aid) উপর এটা তৃতীয় পোস্ট। কি, কেন- তে যাব না (প্রয়োজনে আগের পোস্টগুলো দেখে নেন - http://iferi.com/blog/2013/08/first-aid-1/http://iferi.com/blog/2013/09/first-aid-2/)। সরাসরি কিভাবে-তে চলে যাই, অস্থি বা হাড় ভাঙলে কি প্রতিবিধান দিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

প্রকারভেদ – হাড় প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ আঘাতে ভাঙতে পারে। আঘাতের ফলে হাড়ের সাথে সাথে শরীরের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তার ভিত্তিতে হাড় ভাঙ্গার প্রকারভেদ নির্ণয় করা হয়।

  • শুধু হাড় ভাঙ্গা, শরীরের অন্য কোন অংশে কোন ক্ষতি নেই।

  • হাড় ভাঙ্গার সাথে সাথে শরীরে বাহ্যিক ক্ষতি হওয়া। অনেক সময় হাড় ভেঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে বাহ্যিক ক্ষতের সৃষ্টি করে।

  • হাড় ভেঙ্গে আভ্যন্তরীণ কোন যন্ত্রের, যেমন ফুসফুস, মেরুদণ্ড বা মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন।

  • একটি হাড়ের একাধিক জায়গায় ভাঙ্গন।

  • হাড় ভেঙ্গে এর এক অংশ অন্য অংশের ভিতর প্রবেশ।

  • হাড় সম্পূর্ণ না ভেঙ্গে বেঁকে এবং সামান্য ফেটে যাওয়া। একে Greenstick Fracture বলা হয়। শিশুদের হাড় নরম হয় বলে কেবল শিশুদের ক্ষেত্রেই এরূপ ঘটে।

  • মাথার খুলি ভেঙ্গে নিচে বসে যাওয়া। একে Depressed Skull Fracture বলে।


লক্ষণ

  • ভাঙ্গা জায়গায় ভীষণ ব্যথা হবে। রোগী ভাঙ্গা জায়গা স্পর্শ করতে পারবে না।

  • ভাঙ্গা জায়গা ফুলে যাবে এবং অস্বাভাবিক আকার ধারন করবে। অনেক সময় এক হাড় আরেকটার উপর উঠে গেলে জায়গাটা ফুলে যায় এবং অঙ্গের আকৃতি ছোট দেখা যায়।

  • যে জায়গা ভাঙ্গে সে জায়গা স্বাভাবিক সঞ্চালন ক্ষমতা হারায়। ভাঙ্গা অঙ্গের স্বাভাবিক শক্তি লোপ পায়।


[caption id="attachment_612" align="aligncenter" width="849"]Road accident. Car and bicycle Source: www.handleylaw.co.uk[/caption]

 

কিছু সাধারণ প্রতিবিধান ও সাবধানতা –

  • যেকোনো প্রকার নাড়াচাড়ার আগে ভাঙ্গা জায়গা যেন না নাড়াতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে লাঠি বা শক্ত কিছু দিয়ে বাঁধার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন নাড়াচাড়া না হয়। অবশ্য ঘটনাস্থল বিপদমুক্ত না হলে সবার আগে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

  • বাহ্যিক ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হলে তা বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • বাঁধার উদ্দেশ্য হল যেন ভাঙ্গা জায়গা নাড়াচাড়া করতে না পারে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই শক্ত করে বাঁধতে হবে। তবে অবশ্যয়ই খেয়াল রাখতে হবে যেন রক্ত সঞ্চালন বন্ধ না হয়ে যায়।

  • সকল অবস্থায় অচেতন থাকলে ABC পরীক্ষা করেন। প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস ও CPR দেন। সচেতন থাকলে কি করতে হবে তাও আপনি জানেন।

  • বমি হলে যতটা সম্ভব কম নাড়াচাড়া করে কাত করে বমি করার ব্যবস্থা করেন। বমি করতে না পেরে ফুসফুসে চলে গেলে অবস্থা আরও জটিল হতে পারে।

  • খেয়াল রাখতে হবে যেন রোগী আরামদায়ক অবস্থায় থাকে, ব্যথার মধ্যে যতটা স্বস্তি দেয়া যায়। সম্ভব হলে ভাঙ্গা জায়গায় বরফ দেয়া যেতে পারে, তাতে ক্ষতস্থান অবশ হয়ে ব্যথা কমতে পারে।

  • মানসিক আঘাতের ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগী সচেতন থাকলে প্রচণ্ড ব্যথার মধ্যে থাকবে।Photo Courtesy: surgery.arizona.edu


মাথার খুলি ভাঙলে –

  • মাথা ও কাঁধ সামান্য উঁচু করে শোওয়ায়ে রাখেন।

  • রোগীকে নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকেন। যদি স্থানান্তর করতে হয় তবে অনেক সাবধানে দুই হাত দিয়ে মাথা স্থির রেখে স্থানান্তর করেন। শরীরের কাপড় আলগা করে দেন, প্রয়োজনে কিছু দিয়ে কেটে ফেলেন।

  • রোগীকে গরম রাখার চেষ্টা করেন। হাতের ও পায়ের তলায় শেক দিতে পারলে ভাল হয়।

  • মাথায় কিছু প্রবেশ করে থাকলে কোনক্রমেই তা বের করার চেষ্টা করবেন না। সামান্য এদিক সেদিক হলে রোগীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

  • কোন অবস্থাতেই রোগীকে পানি পান করতে দিবেন না।


[caption id="attachment_585" align="alignleft" width="349"]Photo Courtesy: surviveoutdoors.com Photo Courtesy: surviveoutdoors.com[/caption]

মেরুদণ্ড ভাঙলে –

  • মেরুদণ্ড ভাঙলে রোগী জ্ঞান হারাবে। এই অবস্থায় শ্বাস নিতে যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

  • স্থানান্তর করতে হলে অবশ্যই চিত করে শোওয়ায়ে করতে হবে। স্ট্রেচার আবশ্যক। না পাওয়া গেলে বড় শক্ত কাঠের তক্তা বা এই জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন অবস্থাতেই বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না।

  • মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে পিঠের নিচে কিছু অংশে বালিশ জাতীয় নরম কিছু দিয়ে ঠেশ দিয়ে রাখতে হবে।

  • কোন অবস্থাতেই মেরুদণ্ডে যেন টান না লাগে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাথা ও ঘাড় যেন কোন ভাবে না নড়ে যায় তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

  • কৃত্রিম শ্বাস দিতে হলে মাথা ও ঘাড় নাড়াচাড়া করা যাবে না। আঙ্গুল দিয়ে হাল্কা করে নিচের চোয়াল আলগা করে কৃত্রিম শ্বাস এর ব্যবস্থা করতে হবে। বমির কারণে কাত করতে হলে একাধিক জন মিলে একশাথে রোগীকে সামান্য কাত করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথা, ঘাড় আর মেরুদণ্ড যেন এক সারিতে থাকে।


 

Collarbone ভাঙলে –

[caption id="attachment_586" align="alignleft" width="249"]Photo Courtesy: collarbone.kidshealth.org Photo Courtesy: collarbone.kidshealth.org[/caption]

[caption id="attachment_588" align="alignright" width="271"]Photo Courtesy: shouldersolutions.com Photo Courtesy: shouldersolutions.com[/caption]

আমাদের কাঁধের কাছে এর অবস্থান।

  • ভাঙ্গা হাড়ের দিকের বগলে নরম কাপড় বা প্যাড দিয়ে ঊর্ধ্ববাহুকে স্বাভাবিক অবস্থায় এনে মোটা ব্যান্ডেজের সাহায্যে বেঁধে দিতে হবে। তারপর নিম্নবাহু বুকের উপর রেখে আরেকটি কাপড়ের সাহায্যে সুস্থ হাতের দিকে কাঁধের উপর বেঁধে দিতে হবে, যেন নাড়াচাড়া না করতে পারে। এতে ভাঙ্গা স্থানও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।


 

ঊর্ধ্ববাহু ভাঙলে –

[caption id="attachment_595" align="alignright" width="260"]Photo Courtesy: 911emg.com Photo Courtesy: 911emg.com[/caption]

  • আহত হাতের নিম্নবাহু ভাঁজ করে এমনভাবে রাখেন যেন আঙ্গুল কাঁধ স্পর্শ করে। পারলে হাত ও বুকের মাঝখানে একটা নরম কাপড় বা প্যাড দিয়ে দেন।

  • এবার হাতটি গলার সাথে মোটা ব্যান্ডেজের সাহায্যে ঝুলিয়ে দেন।

  • একটি ঊর্ধ্ববাহুর সমান সোজা লাঠির সাথে ভাঙ্গা হাত ও শরীর ব্যান্ডেজ এর সাহায্যে পেঁচিয়ে দেন, একটি কাঁধের নিচ দিয়ে, আরেকটি কনুই এর উপর দিয়ে। ভুল করে ভাল হাতটি পেঁচিয়ে দিয়েন না।

  • যদি একাধিক স্থানে হাড় ভাঙ্গা থাকে এবং হাত ভাঁজ না করা যায় তবে হাত সোজা করে শরীরের পাশে নিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে নিম্নলিখিতভাবে বাঁধতে হবে –

    • শরীর ও বাহু জড়িয়ে।

    • শরীর ও কনুই জুড়িয়ে।

    • কব্জি ও উরু জড়িয়ে।




প্রয়োজনমত প্যাড ব্যবহার করেন।

নিম্নবাহু ভাঙলে –

[caption id="attachment_590" align="alignright" width="105"]Photo Courtesy: scouts.lamb-thielen.com Photo Courtesy: scouts.lamb-thielen.com[/caption]

[caption id="attachment_589" align="alignleft" width="137"]Photo Courtesy: bcadventure.com Photo Courtesy: bcadventure.com[/caption]

  • কনুই ভাঁজ করে ঊর্ধ্ববাহুর সাথে সমকোণ করে রোগীর নিম্নবাহু এমনভাবে রাখেন যেন হাতের তালু শরীরের দিকে আর বুড়া আঙ্গুল উপরের দিকে থাকে।

  • দুটি শক্ত কাঠি ব্যবহার করে ব্যান্ডেজের সাহায্যে রোগীর নিম্নবাহু পেঁচিয়ে ফেলেন, যেন হাড় ঠিক স্থানে সোজা হয়ে থাকে।

  • এরপর রোগীর হাত একটি কাপড়ের সাহায্যে গলার সাথে ঝুলিয়ে দেন।


 

 

হাঁটু বা পায়ের অন্য কথাও ভাঙলে –

[caption id="attachment_591" align="alignleft" width="227"] Photo Courtesy: aofoundation.org[/caption]

  • রোগীকে চিত করে শোওয়ায়ে দেন।

  • ভাঙ্গা পায়ের নিচে বা দুই পাশে, পায়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি লম্বা কাঠের তক্তা বা সোজা লাঠি রেখে ব্যান্ডেজের সাহায্যে তা নিম্নলিখিতভাবে বেঁধে ফেলেন –

    • উরুতে একটি বাঁধ।

    • গোড়ালি ও পায়ের পাতা জুড়িয়ে একটি বাঁধ।

    • পা স্থির রাখার জন্য যতটা প্রয়োজন পায়ের বাকি অংশে ততটা বাঁধ দেন। ভাঙ্গা স্থানের কাছে বাঁধ দেয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন।

    • হাঁটু ভাংলে হাঁটুর ঠিক উপরে একটি ব্যান্ডেজের মধ্যভাগ রেখে তা পেঁচিয়ে হাঁটুর ঠিক নিচে এসে গিঁট মেরে দেন।

    • তক্তা ও পায়ের মাঝে যত সম্ভব প্যাড বা নরম কাপড় ব্যবহার করেন।

    • সকল অবস্থায় সবসময় যেন রোগীর ভাঙ্গা পা উঁচু করে রাখা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।




[caption id="attachment_592" align="alignright" width="168"]Photo Courtesy: health.howstuffworks.com Photo Courtesy: health.howstuffworks.com[/caption]

 

পায়ের পাতা ভাঙলে –

  • গোড়ালি থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত দীর্ঘের একটি কাঠের তক্তা নেন।

  • ব্যান্ডেজের সাহায্যে তক্তাতিকে পায়ের সাথে যত ভাল ভাবে বাঁধা যায় বাধেন।

  • এবার আরেকটি ব্যান্ডেজের সাহায্যে পেঁচিয়ে পায়ের গোড়ালি সহ পাতা পেঁচিয়ে ফেলেন।

  • পা সবসময় একটু উঁচুতে রাখতে হবে।


সন্ধিচ্যুতি –

একটি হাড় আরেকটি হাড়ের সাথে যেখানে মিলেছে তাকে সন্ধি বলে। অনেক সময় আঘাত পেলে বা টান খেলে হাড় তার সন্ধি থেকে ছুটে যেতে পারে। এ অবস্থায় টানাটানি করে হাড়কে জায়গায় বসানোর চেষ্টা না করে যেভাবে রোগী আরাম পায় সেভাবে তাকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

[caption id="attachment_596" align="alignright" width="156"]Photo Courtesy: wikibooks.com Photo Courtesy: wikibooks.com[/caption]

মচকানো –

এটা আমাদের প্রায় প্রতিদিনেরি ঘটনা।

  • মচকানো জায়গা নাড়াচাড়া করা যাবে না। যতটা সম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।

  • মচকানো জায়গায় বরফ দেন, রোগী আরাম পাবে।

  • সম্ভব হলে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দেন, এতে নাড়াচাড়া কম হয়।

  • আহত জায়গা সামান্য উঁচুতে রাখার ব্যবস্থা করেন।


সব ধরনের হাড় ভাঙ্গনের প্রতিবিধান একবারে ব্যাখা করা সম্ভব না, এর বেশিরভাগ আমি নিজেও জানি না। আমরা শুধু চেষ্টাই করে যেতে পারি। চেষ্টা করে যেতে হবে, শিখে যেতে হবে; শেখার কোন শেষ নেই। কোন পরিস্থিতি কখন এসে হাজির হয় তা কেউ বলতে পারে না। একজন প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী হিসেবে আপনার উপস্থিত বুদ্ধি রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে অনেক সাহায্য করবে। তৎপর থাকেন, দ্রুত চিন্তা করেন, হাতের কাছে যা আছে ব্যবহার করতে শিখেন, বিপদে মানুষের অনেক উপকার করতে পারবেন। এর বিনিময় আপনি কি পাবেন? যা কোটি টাকা দিয়েও কেনা যায় না, মানসিক প্রশান্তি!

Thursday, October 3, 2013

আপনার জীবনবৃত্তান্ত কিভাবে লিখবেন (How to write your Resume)

[caption id="attachment_570" align="alignleft" width="348"]Source: aerobicka.ru Source: aerobicka.ru[/caption]

শব্দটা বাংলার চেয়ে ইংরেজিতেই ভাল শোনায়। অনেকে জীবনপঞ্জিকা বা জীবনবৃত্তান্ত বললে এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে। থাক ভাই, Resume বা Curriculum Vitae (CV) ই বলি, তাই ভাল।

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে Resume এর ব্যবহার বিবিধ। যেকোন formal জায়গায় কারো কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্যই মূলত এই ছোট সাহিত্য সমৃদ্ধ কাগজটির ব্যবহার। যার দরুন চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে পাত্র/পাত্রি খোঁজা পর্যন্ত এর বিকল্প নেই। অপরিচিত কারো কাছে এই কাগজের টুকরাই আপনার প্রতিনিধি, পছন্দ না হলে আপনি বাদ ! বলার বাকি রাখে না এর গুরুত্ব কতটুকু। আপনার Resume লেখার দক্ষতা অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করে। তাই যত যত্ন নিয়ে সুন্দর করে লিখবেন, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি।

 

মজার কথা হল Resume লেখার কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই, বাংলাদেশের সংবিধানে এই সংক্রান্ত কোন ধারা নেই, প্রচলিত নিয়ম মেনে না লিখলে কেউ গ্রেপ্তার করতে আসবে না। যতটা সৃজনশীল হতে পারেন তত ভাল, অপরিচিত ব্যক্তির কাছে এটা আপনার সৃজনশীলতার পরিচয় দিবে। তাও কিছু মূলনীতি অনুসরণ করা ভাল, যে পড়ছে তার স্বাচ্ছন্দ আর অভ্যাসের কথা মাথায় রাখতে হবে। সবাই তো আর নতুনকে এত সহজে বরণ করে না। প্রথমেই কিছু মুলনিতি -


    • যতটা সম্ভব সহজ করে এবং গুছিয়ে লিখবেন। আপনার জীবন এতটাও কঠিন হয় নাই যে কঠিন ভাষা ছাড়া লেখা যাবে না।

    • দেখতে যেন ভাল লাগে সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এর জন্য গুছিয়ে লেখাটা অত্যন্ত জরুরি, যেন কোন অংশে কি তথ্য দেয়া হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। আপনি যা জানাতে চান তা bold বা italic করে দেন, যেন আলাদা ভাবে চোখে পড়ে। একাধিক ফন্ট ব্যবহার না করাই ভাল, দেখতে অগোছালো মনে হয়।

    • অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিবেন না। আপনি স্কুলে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলেন কিনা বা আপনার ওজন কত তা কেউ জানতে চাওয়ার সম্ভবনা লাখে একটাও হবে না।

    • কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন বাদ না পড়ে যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ কিছুতে আপনার দক্ষতা, আপনার প্রাপ্তি ও অর্জন, আপনার ভাল গুণাগুণ, এগুলো আপনাকে বাকিদের থেকে আলাদা করবে। লেখাপড়ার বাইরের অভিজ্ঞতাকে ছোট করে দেখবেন না।

    • বেশি বড় Resume না লেখাই ভাল। মোটা কাগজের স্তুপ দেখলে কেউই তা পড়তে চাইবে না। এছাড়া কেউই পাতার পর পাতা ব্যক্তিগত তথ্য পড়বে না (যদি না তা ঠেকার কাজ হয়)। short and simple. তবে তাই বলে ছোট করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিবেন না।

    • স্থান কাল পাত্র বিবেচনা করে লিখবেন, মাথায় রাখতে হবে কে এটা পড়তে যাচ্ছে। শুধু প্রাসঙ্গিক তথ্য রাখবেন। একজন Business Graduate আর একজন Engineer এর Resume এক হবে না; ঠিক তেমনি একজনের ১০ বছরের চাকরি অভিজ্ঞতার কাগজের ভার আর একজন নব্য স্নাতকের জীবনের অভিজ্ঞতার লিপিবদ্ধকৃত নথি কখনো এক হতে পারে না।

    • বানান নিয়ে সাবধান, ভুলেও বানান ভুল করবেন না।

    • ভুল তথ্য লেখা থকে বিরত থাকেন।

    • Reference এর জায়গায় এমন কারো নাম দিবেন যারা আসলেও আপনাকে চিনে। অনেকেই Reference এর সাথে যোগাযোগ করে আপনার সম্পর্কে জানতে চায়।

    • ছবি যদি দিতে হয় তবে ১৯৪২ সালে তোলা ছবি দিয়েন না। চেষ্টা করেন আপনার সাথে বর্তমানে মিল আছে এমন ছবি দিতে।



এবার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত কিছু জেনে নেয়া যাক –

আপনার Resume আপনার সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে বলবে। কি কি তথ্য দিবেন তা সম্পর্কে কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। চিন্তা করেন যেখানে Resume জমা দিবেন সেখানে আপনার সম্পর্কে কি কি জানতে চাইতে পারে।


    • আপনার সম্পর্কে – আপনার নাম, ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, বয়স, যোগাযোগের জন্য ফোন বা ইমেইল ইত্যাদি।

    • আপনার শিক্ষা সম্পর্কে – কোথা থেকে কি বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, কবে করেছেন, আপনার specialization, রেজাল্ট ইত্যাদি।

    • আপনার অর্জন সম্পর্কে – আপনি জীবনে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করেছেন কিনা, কোন কাজে বিশেষ অর্জন বা সম্মাননা পেয়েছেন কিনা ইত্যাদি।

    • আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে (চাকরির ক্ষেত্রে) – আপনি কোন চাকরি করছেন কিনা, করলে কত বছর থেকে করছেন, কি কি কাজ করেছেন, কি কি কাজের দক্ষতা অর্জন করেছেন ইত্যাদি।



Resume লিখতে অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কোন পদ্ধতি অনুসরণ না করে লিখলেও কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে চাকরির জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে ক্রমে তথ্য দেয়া হয় তা হল –

[caption id="attachment_566" align="aligncenter" width="275"]Photo Courtesy: bestcareerresumewebsite.blogspot.com Photo Courtesy: bestcareerresumewebsite.blogspot.com[/caption]


    • আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কাগজের এক কোণায় দিয়ে দেন, যেন যোগাযোগের প্রয়োজন হলে পাতা উল্টায়ে ফোন নাম্বার বা ইমেইল/ঠিকানা না খুঁজতে হয়।

    • আপনার লেখাপড়ার ইতিহাস, সর্বশেষ থেকে শুরু করে সবার শুরুতে শেষ করেন, অর্থাৎ সর্বশেষ যে ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন তা সবার আগে উল্লেখ করেন (তারিখ, রেজাল্ট, প্রতিষ্ঠান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সহ), তারপর তার আগেরটা, তারপর তার আগেরটা। এতে আপনার বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝতে সুবিধা হয়। একইভাবে সর্বশেষ থেকে শুরু, শুরু সর্বশেষে।

    • কোন চাকরি অভিজ্ঞতা, তা সর্বশেষ থেকে শুরু, শুরু সর্বশেষে।

    • চাকরিতে কিংবা কাজকর্মে সহায়ক আপনার বিশেষ কিছু দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ।

    • লেখাপড়ার বাইরে আপনার অন্যান্য অভিজ্ঞতা ও অর্জন।

    • আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। খেয়াল রাখবেন, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েন না।

    • References. এক্ষেত্রে অনেকের মতে, নির্দিষ্ট কারো নাম ও যোগাযোগের বিস্তারিত না দিয়ে শুধু উল্লেখ করে রাখা ভাল যে প্রয়োজনে reference দেয়া যাবে। অনেকে আবার ভিন্নমত পোষণ করেন।



ব্যপারটা খুব কঠিন না। সাহায্যের দরকার হলে ইন্টারনেট হাজার হাজার টেম্পলেট পাবেন। তবে পুরাপুরি টেম্পলেট অনুসরণ না করাই আমার মতে ভাল। সবাই তো টেম্পলেট "মারতে" পারে, আপনার স্বকীয়তার পরিচয় দিতে হবে না? শত হলেও ভিড় থেকে আলাদা আপনাকেই হতে হবে।