Friday, September 27, 2013

মেঘ পাহাড়ের ছোট্ট দেশে

মেঘালয়। “শেষের কবিতা”র শিলং, অমিত-লাবন্যের শিলং, ঘুরে এলাম আমরা ক’জন। আর এই আমাদের গল্প। image003

 ঢাকা থেকে সিলেট, সিলেট থেকে তামাবিল। তারপর ডাওকি হয়ে শিলং। পথের বর্ণনায় কালি আর বিশেষণ দুইই ফুরিয়ে যাবে।

মানুষ কিন্ত কম বিচিত্র না। আমাদের তিনটা ট্যাক্সি’র চালকের মাঝে একজন সিনেমার “গুণ্ডা” চরিত্রে অভিনয় করেন। তাই বোধহয় কখনো মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে, কখনো খেয়ালখুশিতে গাড়ি চালাছিলেন। তবে নিরাপদে পৌছে দিয়েছিলেন অবশেষে শিলং শহর।

পুলিশ বাজার, হোটেল “Blue Mount”। চারদিনের আস্তানা।

“মেঘ পাহাড়ের ছোট্ট দেশে
থাকত যে এক দাদীবুড়ী
মেঘের সাথে কইত কথা
মেঘের ভিতর বসতবাড়ী”।

একবার পুলিশ বাজারে পৌছাতে পারলে হোটেল খুজে পাওয়া কঠিন হবে না। কাছেই “Delhi Mistanno bhandar”, সকালের খাওয়াটা হয়ে যাবে এখানে। দুপুর যখন যেখানে তেমন হবে। ডলার ভাঙ্গাতে হলে “HDFC” bank পাশেই আছে। সন্ধ্যাটা নাহয় কাটতে পারে নতুন কোন সিনেমা দেখে অথবা ধোসা পরখ করে।

image005

শিলং এ প্রকৃতি যেন অভীমানিনী কিশোরী। এই মেঘ, এই বৃষ্টি।

আমাদের ছোট্ট পদ্ম’র কবিতার বই এর মেঘের দেশ। “শিলং পিকে” এসে দাড়ালে দেখা যায় পুরো শহর। মেঘ এসে ঢেকে দি্যেছিল চারপাশ। পদ্ম আর বুলান, সাথে আমরাও চোখে, মুখে মেখে নিই সাদা মেঘ। বলে, “আমি মেঘ খাই মা”। খাসিয়াদের পোশাকে সেজে নিল জোতি, জুরা, তানিয়া আর পদ্ম। শহর থাকে অদেখা। থাক। তবু শিলং পিকে’র আর এক আকর্ষণ কিন্ত সেখানকার “চা”।

image008

যদিও তুমুল তোড়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে ইংরেজদের দেয়া নাম নিয়ে “Elephant Fall”, তবু তাকে কেমন পোষ মানা মনে হল; বৃষ্টি মাথায়, ছাতা আর মেয়ের হাত ধরে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে কাছে যেতে যেতে।

image011

image013

আমাদের সাথে ছিল চার শিশু। দুজন নয় মাস আর চার মাস। আর দুজন সাড়ে ছয়। “Lady Hydriat park” এ ছোটাছুটি তাই ওরা দুজন বেশ আনন্দে করল বিকেল বেলা। যদিও সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। তাই মায়েদের বকাও দিল তারা, “আগে কেন আনলে না এখানে?”। বিকেলে পাচটা, সাড়ে পাচটার ভিতর আসলে সব বন্ধ হয়ে যায় এখানে ।

image016

Umiam-1
"ধরা যাক আজ রোববার
কোন তাড়া নেই”

নেই তাড়া নেই। তাই “উমিয়াম লেকে”র পাড়ে কাটিয়ে দিলাম সারাবেলা।















Umiam-2























Umiam-3

কখন কি এমন হয় না যখন গন্তব্যের চেয়ে পথটাই একটু বেশি ভাল লেগে যায়? কথা ছিল প্রাকৃতিক গুহা দেখতে যাব। সর্বকনিষ্ঠ দুজনের ঠান্ডা।তারা তাদের বাবা মার সাথে থাকবে। বুলান ও। তাই এবার, আমরা পাচজন বেরিয়ে পড়ি। পদ্ম ও আছে তার মাঝে। আর পথের ধারে নাম না জানা জলপ্রপাত অথবা দুই পাহাড়ের অতল থেকে উঠে আসা মেঘ ভালবেসে ফেলি।
Shillong-col

image028

“খুজব সবুজ বুনো ফুলে

খুজে না পাই যাহারে, আহারে…”

এমনি করে পথে পথে সেই ফুলটিকে খুজতে খুজতে পৌছে গেলাম “Nohkalikai Fall”। আকাশে মেলে দেই দু হাত, সবুজ প্রান্তরে বিছিয়ে দেই শরীর। নগর জীবনের সমস্ত ক্লান্তি যেন শুষে নিল প্রকৃতি।
image036


image038

সোনাই তার মাকে দেখিয়ে বলছিল, “আম্মি, দেখিয়ে উও বাংলাদেশ, ম্যাপমে ইতনা ছোটা হ্যায়”। সোনাই’র মত, এই নামেই তাকে ডাকছিল তার মা, আমরা ও তাকিয়ে দেখি, “প্রিয় জন্মভুমি”। “Eco Park”। দেখি রংধনু। ছোট্ট পদ্ম মেতে থাকে খেলায়।

“Ka Khoh Ramhah”  এমনি অদ্ভুত নাম নিয়ে থাকা এক অদ্ভুত দর্শন পাহাড় দেখতে গেলাম এরপর। অদ্ভুত সুন্দর বটে।
shil-col-5

image050

এবার বিশ্রাম। “Sai I Mika” resort। পাকোড়া আর চা খেয়ে কটেজের বারান্দায় বসে থাকলাম নীরব নীথর অন্ধকারে। I-phone টায় বাজছিল
“ফাগুনের ও মোহনায়
মন মাতানো মহুয়ায়
রঙ্গিন এই বিহুর নেশায় ...মন হারিয়ে যায় গো………”।
রাতভর বৃষ্টি যেন সঙ্গত করছিল তার সাথে।

image054
image056

image059

পরিমল হাসতে হাসতে বলল, “দিদি, নামতে আধা ঘন্টা আর উঠতে লাগবে আরো এক ঘন্টা”। যেটা পরিমল বলেনি, সব কিছু ম্লান হয়ে যাবে প্রকৃতির অপুর্ব বিস্ময়ের কাছে। “Living root”, ঠিক যেন সমুদ্ররের তলদেশ থেকে উঠে আসা Pirates of the Caribbean’র জাহাজ।

image060
image064



এবার ফেরার পালা। “Mawalang Village” দেখে ডাওকি হয়ে ফের তামাবিল, সিলেট তারপর ঢাকা।
image066



সবশেষে বাজেটঃ














































































DateOrigin _ DestinationTransportCostFoodLodgingNote
15.08.13Dhaka-Sylhet-Tamabil BorderTrain, Microbus
Dawki border - ShilongTaxi

(4 persons)
2200 Rs1501800 Rs
16.08.13Shilong Peak

Elephant Fall

Lady Hydriat Park
Jeep

(11 persons)
350 Rs1800 Rs
17.08.13Umium Lake350 Rs1800 Rs
18.08.13Mawasanmi Cave

Hot spring
Jeep

(11 persons)
350 Rs1800 Rs
19.08.13Cherrapunji

View points

Nohkalkai Fall

Eco Park

Ka Khoh Ramhah

Sai I Mika
Jeep

(11 persons)
350 Rs2600 Rs

(cottage)
20.08.13Living Root

Mawalang village

Dawki border

350 Rs
Tamabil to Sylhet

Sylhet - Dhaka
Microbus

Train



Photo Credit: Taniya, kamrul, Jura, Joyti, Lipu, Sadia, Dyuti, Farzana

Wednesday, September 25, 2013

সি এন জি বিলাস

কোথাও যাওয়া আসার জন্য ৫০০-৬০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দেয়া আর বিলাসিতার মাঝে পার্থক্য আসলেই কম,যদিও আমরা এখন এটাতে বাধ্য হয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি । কেউ চাইলেই বলতে পারেন এই বিলাসিতা ত্যাগ করে পাবলিক বাসে ট্রাই করুন। সে চেস্টাও করেছিলাম, নিজে একা যেতে হলে তাই করি, কিন্তু বউ বাচ্চা নিয়ে একদিন করতে গিয়ে করুন পরিস্হিতির মুখোমহুখি হতে হয়েছিল, মানুষ জন মোটামুটি গায়ের উপর এসে পড়ছে,গরমে ছেলে কেঁদে কেটে অস্হির ! তারপর থেকে পরিবার সহ সে চেস্টা বাদ ।
ঢাকা শহরের সব চেয়ে বিলাসী সেবার তালিকায় এই সিএনজি শুরুতেই থাকবে। টাকা দিলেই যে এই সেবা পাওয়া যায় তাও না, সেবাদাতার ইচ্ছার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল আপনি সেবা পাবেন কিনা ।মাঝে মাঝেত হাতে পায়ে ধরাটাই বাকি থাকে । পৃথিবীর আর কোন দেশে ট্রান্সপোর্ট সেবার জন্য এমন করতে হয় কিনা আমার জানা নেই ।

মিটারে যে ভাড়া ৭০ টাকা আসবে সেটাতে ১৫০ টাকা দিলেও অনেক ড্রাইভারই যেতে রাজি হয়না, নানা অনুনয় বিনয় করতে হয় তাদের সাথে, সিএনিজি ওয়ালাদের কে যত তোয়াজ আমরা করি তা এই দেশে আর কারো সাথে করা হয় বলে মনে হয়না, তাদের মত এত ভাব নিয়ে আর কেউ থাকে বলেও মনে হয়না । মোটামুটি ডাবল ভাড়া গুনতে হয় প্রায় সব গন্তব্যের জন্যই ।

কোথাও যাওয়ার জন্য কেউ রাজি হলে সাথে একটা শর্ত জুড়ে দেয় , পুলিশ ধরলে বলতে হবে মিটারে যাচ্ছি । ভাড়াও বেশী দিব আমি, আবার মিথ্যা কথাও বলব আমি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য অগত্যা এই মিথ্যা বলার আব্দার মেনে নেয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই ।
কয়েকদিন আগের ঘটনা, নতুন বাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য, ট্রাফিক পুলিশকে দেখলাম একটা একটা সিএনজি থামিয়ে জানতে চাচ্ছে মিটারে যাচ্ছে কিনা, যাত্রী যদি বলে না তবে ড্রাইভারকে নামিয়ে মামলা দেয়া হচ্ছে, আর যাত্রীকে অন্য সিএনজি মিটারে ঠিক করে দিচ্ছেন। এগিয়ে গিয়ে বললাম, এখন না হয় আপনারা আছেন বলে যাত্রীরা মিটারে যেতে পারছে কিন্তু অন্য সময় হলে কি হবে ? সার্জেন্ট বলল আমাদেরকে কেউ বললে আমরা চেস্টা করি মিটারে সিএনজি ঠিক করে দেয়ার জন্য এর বেশী আর কি করতে পারি বলুন। তিনি দেখলাম বেশ কয়েকজনকে সিএনজি ঠিক ও করে দিচ্ছেন।

যাত্রী হিসেবে আমি নিজেও বেশ কয়েকবার মিথ্যা কথা বলেছি যে মিটারে যাচ্ছি, তাড়া ছিল তাই ঝামেলা এড়ানোর জন্য অন্য উপায় ছিলনা !!!

অদ্ভুত এক সিস্টেমের মাঝ দিয়ে যাচ্ছি আমরা, সিএনজি ড্রাইভারদের কথা হচ্ছে মালিকরা নির্ধারিত জমার চেয়ে বেশী টাকা নেয়, তাই আমরা বাধ্য হয়ে ডাবল ভাড়া নিচ্ছি, মালিকরা বলেন খরচ বেশী, লাইসেন্স নিতে গিয়ে আমাদের অনেক খরচ হয়ে গেছে, তাই বেশী নেয়া ছাড়া উপায় নেই । এই চক্র ভাংগার কোন লক্ষন ও নেই। যার পুরোমাত্রার ভুক্তোভুগী আমরা সাধারন যাত্রীরা ।আমাদের কথা শোনার জন্য কেউ নেই। মাঝে মাঝে ভাবি ধরিয়ে দেই , যা ভাড়া চায় রাজি হয়ে যাব, তারপর পথে সার্জেন্ট দেখলে ধরিয়ে দিব। পরে ভাবি, এটা কোন সমাধান না, মাঝখান দিয়ে পুলিশ কিছু টাকা কামাবে হয়ত, পুলিশের উপর যে আস্হা নেই আমাদের, কিংবা না থাকার হাজারো কারন আছে।

পরিবার পরিজন সহ কোথাও যাওয়ার জন্য বের হওয়া রীতিমত আতংকের, সিএনজি পাব কিনা, বাজেটের মাঝে যাবে কিনা । আমাদের মুক্তি নেই, আমরা খালি ভুক্তভুগী হবো এটাই নিয়তি.............মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ইট দিয়ে সামনের গ্লাসটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিই, গ্রীল না থাকলে কয়েকটা ড্রাইভারকে যে পিটাতাম এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ।

আমাদের ফলে -মাছে ফরমালিন, আমাদের ঔষধে ভেজাল, বাড়ীওয়ালার কাছে নতজানু জীবন, সিএনজি ওয়ালার মুখাপেক্ষী পথচলা, পাবলিক পরিবহনে অস্বাভাবিক অবস্হা, কালোবাজারির হাতে ট্রেনের টিকিট, হাসপাতালে বিশ্বাসহীনতা, সর্বোপরি এক অজানা ভেলায় আমাদের প্রতিদিনের পথ চলা । বসবাসের অযোগ্য নগরীতে আমরা সুখের চাদর জড়িয়ে বেঁচে আছি ।

সুখী দেশের তালিকায় নাম দেখে আমরা ভাবি, আরে আমি ছাড়া সবাই মনে হয় সুখে আছে। নিজের চাওয়ার কথা বলতে তাই কুন্ঠা যাগে, কে আবার কখন কি ভাবে, আমি সুখী না পথ চলায়- এটা বলতেও লজ্জায় বাঁধে আমাদের । বিচিত্র- সেলুকাস এগুলো সেকেলে হয়ে গেছে - বিশেষনহীন জীবনের পথ চলা আমাদের, কিংবা বলা যায় একমাত্র বিশেষন হচ্ছে সুখ , আমরা সবাই সুখী ।

সুখ কি এটা মনে হয় আমরা বুঝিইনা, আমরা চাইতেই পারিনা, তাই পাবার আশা করা আমাদের মানায় না । নিত্য মিথ্যার মাঝে আমাদের বসবাস, আমরা মুখ ফুটে বলিনা, তাই যারা দায়িত্বে থাকেন তারা আমাদের নিয়ে চিন্তাও করেননা। চাইতে না পারলে পাবার আশা করবো কিভাবে । পথ চলায় সুখের কোন পরশ নেই আমাদের, এই কথা বলতে না পারলে আমরা সুখ পাব কি করে । চাওয়ার কথা বলতে আমরা লজ্জা পাই, তাই আমাদের চাওয়াগুলো পূরন করার দায়িত্ব আমরা যাদের দিয়েছি তারাই সব থেকে সুখে থাকে এই দেশে।

যে দেশে বার বছরে তিনটা সরকার বার হাজার সিএনজি অটোরিক্সা কে কোন নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে পারেনা সে দেশে কোন সরকার যখন নিজেকে সফল দাবী করে তখন আমার হাসি পায়, তাদের সফলতার জন্য কোন কিছু বরাদ্দ করার খুজে পাইনা ..........নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে বলার ও কোন জায়গা নেই আমাদের।

‘’সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে ‘’ - এই গান শুনতে শুনতে কেবল আমরাই বলতে পারি আমরা সুখী । । ।

http://www.youtube.com/watch?v=n2w4r2SFJjs&feature=player_embedded

Tuesday, September 24, 2013

স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় যে কারণে

[caption id="attachment_418" align="alignright" width="173"]Memory Loss, Photo Courtesy: dailyhealthpost.com Memory Loss, Photo Courtesy: dailyhealthpost.com[/caption]

কোর্টে সাক্ষ্য দিতে গেলেন, উকিল বাবাজী প্রশ্ন করলঃ গত পরশু রাত ৯টায় আপনি কি করছিলেন? আপনি হেসে খেলে এই সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেখলেন মুখের হাসি মুখেই আছে, জবাব মুখে নেই। হঠাৎ মনে করতে পারছেন না গত একদিনের আগে আপনি কি করছিলেন। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে উলটো ফেসে যাবেন না তো?

এটাতো কঠিন এক পরিস্থিতি, চাপের মুখে অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই মানুষের নাম, টেলিফোন নাম্বার, কবে কি করেছেন, কবে কি করবেন ভাবছেন এমনকি আপনি এই মুহূর্তে এখানে কেন? এই ধরণের প্রশ্নের জবাবও স্মৃতি হাতড়ে বের করতে পারেন না প্রায়ই। দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্য পরিবার বা বন্ধুদের পাশাপাশি নিজেই নিজেকে দুষে হীনমন্যতায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু  কেন আপনি এসব বিষয় মনে রাখতে পারছেন না? কে বা কারা আপনার স্মৃতিগুলোর পিছনে এভাবে উঠে পড়ে লেগেছে?

 

১। অনিদ্রা এবং ঘুমের স্বল্পতাঃ

[caption id="attachment_410" align="aligncenter" width="306"]Sleepless, Photo Courtesy: norulesjustwords_wordpress.com Sleepless, Photo Courtesy: norulesjustwords_wordpress.com[/caption]

ঘুম কম হওয়া আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল করার একটি বিশেষ কারন, এমনটাই দেখা গেছে এক গবেষনায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বারকলে এর এই গবেষনণায় দেখা যায় ঘুমের সময় মানুষের মগজে বিভিন্ন জরুরী উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় যেগুলো স্মৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করে। এ সকল উদ্দীপনা তরঙ্গ আকারে মগজের হিপ্পক্যাম্পাস (Hyppocampus) নামক জায়গা থেকে প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) এ পৌছায়। ঘুমের স্বল্পতার কারনে পূর্ণবয়স্ক মানুষের এই তরঙ্গগুলো হিপ্পক্যাম্পাসেই আটকে থাকে, তা আর প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স এ পৌছাতে পারে না। কম ঘুম শুধু স্মৃতিশক্তি দুর্বল করার পিছনেই নয়, বরং মগজের ক্ষয়েরও একটি কারন।

২। মানসিক চাপঃ

[caption id="attachment_411" align="aligncenter" width="384"]Work Pressure, Photo Courtesy: weeclicks.com.my Work Pressure, Photo Courtesy: weeclicks.com.my[/caption]

অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কারনে ক্রমাগত মানসিক চাপ স্মৃতিশক্তির অন্যতম প্রধান শত্রু। আমাদের মগজ যদি ক্রমাগত মানসিক চাপে থাকে তখন তা জরুরী কাজের জন্যে সদা প্রস্তুত থাকার চেষ্টা করে। এটা কেবল কিছু ক্ষেত্রেই ভালো, যেমন  যদি সুন্দরবনের ভিতরে বাঘ আপনাকে তাড়া করে, অথবা জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ব্যাট করছেন আপনি আর জিততে হলে শেষ বলে দরকার ৪ রান। কিন্তু সবসময়েই মস্তিষ্কের এই সদা প্রস্তুত ভঙ্গি তার স্বাভাবিক কাজকে ব্যহত করে। এজন্য মস্তিষ্ক তার নিউরণ হারায় এবং নতুন কোষ তৈরীতে ব্যর্থ হয়। যার কারনে মস্তিষ্ক স্মৃতি সংরক্ষণে অপারগ হয়ে পড়ে, এমনকি নতুন স্মৃতি ধারনেও তা বিরুপ আচরণ করে।

৩। বিষন্নতাঃ

[caption id="attachment_412" align="aligncenter" width="337"]Depression, Photo Courtesy: wakeup-world.com Depression, Photo Courtesy: wakeup-world.com[/caption]

বিষন্নতা মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক পদার্থের অভাবের পিছনে দায়ী। এই রাসায়নিক পদার্থগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি কোষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হয় এবং মস্তিষ্ক স্মৃতি ধারণ করে। তাই বিষন্ন মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটারের অভাবে স্মৃতিধারনে দুর্বল হয়ে পড়ে। বিষাদগ্রস্থ/বিষন্ন মন দীর্ঘকালীন স্মৃতিধারনেও বাঁধা প্রদান করে। Brain Imaging প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা দেখতে পারি শারীরিক ভাবে বিষন্নতা এবং মস্তিষ্কের সম্পর্কটা আসলে কোথায় দৃশ্যমান। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় যে বিষন্ন মানুষের কপালের ঠিক পিছনে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবগুলো কম কাজ করে।

৪। ঔষধের  সেবন/প্রয়োগঃ

[caption id="attachment_413" align="aligncenter" width="378"]Medication, Photo Courtesy: sg.news.yahoo.com Medication, Photo Courtesy: sg.news.yahoo.com[/caption]

ঔষধ শরীরের প্রতিটি অংশেই প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে কিছু ঔষধ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলে, যার কারনে মস্তিষ্কের কোষগুলোর নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যহত হয়। আবার দুই-তিন ধরনের ঔষধের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায়ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। দুনিয়াজুড়ে রোগশোক যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে ঔষধ গ্রহণ। এক পরিসংখানে দেখা যায় প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের জন্য গড়ে ১২.৬ টি ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন লাগে, আর ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন মানেই এক গাদা ঔষধ। ভাতের বদলে ঔষধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো থাকবেই।

৫। পরিপাকে সমস্যাঃ হাইপোথায়রোডিজম (hypothyroidism) একটি বিশেষ অবস্থা যখন শরীরের থাইরয়েড গ্রন্থিগুলো থেকে এনজাইম স্বাভাবিকভাবে নিঃসরিত হয় না। এর ফলে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হয়, আর পরিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিলে শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কেও এর প্রভাব পড়ে। স্মৃতিশক্তির দূর্বলতা আজকাল থাইরয়েডজনিত সমস্যাগুলোর একটি সাধারন লক্ষন হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে যাচ্ছে মস্তিষ্কের ভয়াবহ রোগ আলজেইমার্স এর সাথে

[caption id="attachment_414" align="alignright" width="192"]Pregnancy, Photo Courtesy: topnewz.net.nz Pregnancy, Photo Courtesy: topnewz.net.nz[/caption]

হাইপোথাইরয়েডের সম্পর্ক আছে কিনা।

৬। গর্ভাবস্থা এবং ঋতুজরাঃ একজন নারীর প্রজনন সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণে তারতম্য হয়, এস্ট্রোজেনের সাথে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বেডফোর্ডের এক গবেষণায় দেখা যায় গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রিমাসিক সময় থেকে এমনকি জন্ম দানের পরের তিন মাস পর্যন্ত স্মৃতিশক্তির এ নাজুক অবস্থা পরিলক্ষিত হতে পারে, তবে সব নারীই যে এই সমস্যার সম্মুখীন হবে এমনটি নয়।

৭। অতিরিক্ত এলকোহল পানঃ অতিরিক্ত মদ পান শুধু যকৃৎ আর কিডনীই নষ্ট করে না, পাশাপাশি স্মৃতিভ্রংশের কারন। অতিরিক্ত এলকোহল পানে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবএ প্রচুন্ড সংকোচন দেখা যায় যা স্মৃতিসংরক্ষণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত মদ পান কর্সাকফ সিন্ড্রমের (korsakoff syndrome) জন্ম দেয় যা এলকোহল গ্রহণের কারনে স্মৃতিভ্রংশ রোগ। তাই মদে আসক্ত যারা, এবার সময় হয়েছে পানি-শরবত-দুধ জাতীয় পানীয়তে অভ্যাস করার।

[caption id="attachment_415" align="aligncenter" width="345"]Drinking Alcohol, Photo Courtesy: www.livescience.com Drinking Alcohol, Photo Courtesy: www.livescience.com[/caption]

৮। মাথায় ও মস্তিষ্কে আঘাতঃ মাথায় ও মস্তিষ্কে আঘাতের কারনে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। প্রচুন্ড ধাক্কা, শোক ইত্যাদিও এ ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে। যদিও মস্তিষ্ক একটি মোটা অস্থি দ্বারা আবৃত থাকে তবুও মস্তিষ্কে আঘাত খুবই সহজে হতে পারে, মাঝে মাঝে বাজেভাবে পড়লে অথবা ঝাকুনিতে মাথার খুলির সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংঘর্ষের ফলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। উপরন্ত মস্তিষ্কে রক্তপাতসহ আরো অনেক বড় ঝামেলাও হতে পারে। তাই সাবধান!!!

৯। বয়স বাড়লেঃ

[caption id="attachment_416" align="aligncenter" width="275"]Old Age, Photo Courtesy: omgtoptens.com Old Age, Photo Courtesy: omgtoptens.com[/caption]

স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা সব সময়ে অস্বাভাবিকভাবেই হয় তা নয়, বরং বয়স বাড়ার সাথে সাথেও হতে পারে যা একটি স্বাভাবিক বিষয়। সাধারনত বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছর হলে মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্মৃতি কম মনে রাখতে পারে।

১০। ডায়াবেটিসঃ অন্যান্য অনেক পুষ্টি গুনের মত গ্লুকোজও আমাদের মস্তিষ্কের খাদ্য। রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বাড়লে বা কমলে তার একটি প্রভাব পড়ে আমাদের মস্তিষ্কে। রক্ত ও মস্তিষ্কের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কে কতটুকু গ্লুকোজ পৌছাবে রক্ত থেকে। রক্ত থেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি গ্লুকোজ  পৌছালে তা মস্তিষ্ককে দুর্বল করে দেয়, আর ডায়াবেটিসের সময় এ ধরণের গ্লুকোজের তারতম্য দেখা যায় বলে ডায়াবেটিসও স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার অন্যতম কারন।

১১। গাজা সেবনঃ

[caption id="attachment_417" align="aligncenter" width="288"]Marijuana, Photo Courtesy: weedlist.com Marijuana, Photo Courtesy: weedlist.com[/caption]

চিকিৎসা শাস্ত্রে মারিজুয়ানা বা গাজার ব্যবহার নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও নিয়মিত গাজা সেবন করলে মস্তিষ্ক ত্রা প্রয়োজনীয় সংকেত প্রদানে বাঁধা পায় যা থেকে স্মৃতিধারণে অক্ষমতা দেখা যায়। মস্তিষ্ক তার নিউরন থেকে এস্ট্রোসাইটিস (astrocytes) নামক কোষে সংকেত পাঠায় যা গাজা সেবনে ব্যহত হয়। এ ছাড়া মারিজুয়ানার টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল  (Tetrahydrocannabinol – THC)  নামক উপাদান যা নেশার উদ্রেক করে তা মস্তিষ্কের নিউরনের আন্তঃযোগাযোগ দুর্বল করে দেয়। এসব কারনে প্রায়শই গাজা সেবনকারীরা Short Term Memory loss এ ভুগতে পারে।

১২। আমি কিছু একটা মনে করতে পারছি নাঃ হ্যা, এই ধরনের দ্বিধায় ভুগলে বা নিজেই নিজেকে বুঝালে যে আপনি কিছু একটা মনে করতে পারবেন না তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

১৩। মস্তিষ্কের ব্যবহার কম হলেঃ মস্তিষ্কের ব্যবহার কম হলে, চিন্তাশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি উভয়েরই কম ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে যার কারনে আমরা ছোটখাটো অনেক বিষয়ই ভুলে যাই। আজকালকার প্রজন্মের যারা সারাদিন বাসায় টিভি দেখে বা ঘুমিয়ে-আড্ডা মেরে দিন পার করে দেন বলে মস্তিষ্ক ব্যবহারের সুযোগ পান না, তারা অনেকেই হয়ত ধরতে পেরেছেন বিষয়টা।

১৪। পানি ও পুষ্টি স্বল্পতাঃ প্রতিদিন একজন পুরুষের গড়ে ৩ লিটার এবং নারীর ২.২ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। পানির অভাব এবং পুষ্টির অভাব স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার জন্য অনেক সময়ই দায়ী। চেষ্টা করুন কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে। তবে খাবারের সাথে পানি খাবেন না, পানি পান করবেন।

এবার এসব কারন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে দেখুন তো নিত্য প্রয়োজনীয় মনে রাখার মত জিনিসগুলো মনে রাখতে পারছেন কিনা। তবে কিছু দুঃসহ স্মৃতি মনে না রেখে ভুলে যাওয়াই ভালো।

Saturday, September 21, 2013

টংবাজদের আড্ডা ও “জল ও জঙ্গলের কাব্য”

উপক্রমণিকা:

একদা টংবাজ নামে একটা গ্রুপ 'ছিল" যাদের কাজ ছিল প্রতি বৃহস্পতিবার অফিসের পরে মহাখালী ডিওএইচএস এ ঢোকার মুখে চায়ের টং এ বসে সন্ধ্যা ৬-৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আড্ডা দেয়া।  এহেন কোন বিষয় নাই যে বিষয়ে কথা হতো না । একদম অপরিচিত মেয়ের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হওয়া সাজ্জাদের হয়ে ওই মেয়েকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে কথা বলার সিস্টেম করা, লুমন-লুমিত জুটির কার্যক্রম, শামসের খেলাধুলা (:P), তারেকের পাগলামি, দেশ (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) ও দশের সমস্যা সব কিছু। সদস্য সংখ্যারও কমতি ছিলোনা। দশের অধিক চায়ের অর্ডার ছিল নরমাল বিষয়। লেখার শুরুতে সেই 'ছিল" কারন আজ কালে ভদ্রে কারো সাথে দেখা হয় মাস কয় পেরুলে, কেউবা অন্য মহাদেশে। আবার কবে দেখা হবে, আদৌ হবে কিনা খোদা তায়ালাই জানে!

কফি হাউজের মত টংবাজদের আড্ডাটাও আজ নেই । Rumonঅস্ট্রেলিয়া, Rabby কানাডা, Shams বেচারা প্রেম করার ফাঁকেফাঁকে অফিস করেই ক্লান্ত। Shamseer টাই আজ সেতো সবচেয়ে সুখে আছে (সে লাখপতি না বা গাড়ি-বাড়িও নাই তবে সে সুশীল :-P), Tauhidul ওরফে টারজান (টারজান নামকরনের কাহিনী নিয়ে আরেকটা লিখা লেখা যাবে) অফিস আর শ্বশুরবাড়ি নিয়েই আছে, Shafiul কোড এর কবিতা লিখায় ব্যস্ত, Khayer মোল্লা এখন নতুন বিবাহিত, Amit বরাবরই বেঈমানী করে আর খালি এক্সকিউজ (নতুন বিবাহিত), Sazzad বেচারা ঢাকা শহরে ৬ তালা বাড়ির মালিক (তাই তার নাকি অনেক পেইন), Rossi ভাই সবাইকে ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত, আজরাইল আসলেও Himel বলবে একটু বিজি আছি, পরে আসেন, Saikat কেমনে কি বুঝিনা, Rakib কাদের সাথে ঘুরে সেটা আর না বলি।।  সবকিছুর পরেও সবার শত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় করে প্রিয় মানুষগুলির সাথে সময় কাটানোর সুযোগটা আমি কখনই মিস করতে চাইনা তাই আবারো একসাথে। আর ভ্যেনু পূবাইলের "জল ও জঙ্গলের কাব্য"। 

ভ্রমনঃ

নাম শুনে বোধকরি যে কারোরই অনুমেয় হবে যে এখানে 'জল' ও 'জঙ্গল' কাব্য করে। আদতেও তাই! নেই কোন ইট পাথরের জঞ্জাল, নেই কোন শব্দ দূষণ । পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ কেমন, কোন পাখি কিভাবে ডাকে, জলে বৃষ্টির শব্দ কি আসলেই রিনিঝিনি, টিনের চালেই বা বৃষ্টি কেমন খেলা করে এই ব্যাপারগুলি খুব কাছ বুঝতে পারবেন এখানে এলে। লাগোয়া বিলে মন জুড়ানো বিভিন্ন রঙের কলমি, শাপলা, শালুক । ইচ্ছে হলেই নিজের মত করে নৌকা বেয়ে চলে যাওয়া যায় বিলের উপর বাঁশের বাঁধানো মাচায়, মাছ ধরার ইচ্ছা থাকলে বসে যেতে পারেন পুকুর বা বিলে। গান গাইতে চান? বসে যেতে পারেন সেখানে থাকা বাউল দলের সাথে।

 


 






[caption id="" align="aligncenter" width="512"] অতীত সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] হাসন-লালনের গান[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি[/caption]

পৌছলাম বিকেলে। যাওয়ার সাথে সাথেই যা পাবেন তা হলো মন জুড়ানো এক গ্লাস লেবুর শরবত। এরপর তালের পিঠা, আলুর চপ আর গুড়া মাছ ভাজা চিবুতে চিবুতেই দেখলাম সূর্যি মামা বাড়ি ফিরে গেছে। গল্পে গল্পে নৌকা ভাসিয়ে দিলাম বিলে। মাঝ নদীতে শুনশান নিরবতায় আকাশের পানে তাকিয়ে আসলেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এত তারা আকাশে!!! শেষ করে এত তারা দেখেছি মনে নেই। প্রিয় কারো জন্যে না হয় গাইলেনই দুটো লাইন

আজ ফিরে না গেলেই কি নয়
সন্ধ্যা নামুক না জোনাকি জ্বলুক না
নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময়।।

পেটে টান পরায় ফিরে এলাম ডাঙ্গায় :) যথারীতি রাতের ভুড়িভোজ। স্পেশাল আইটেম ইয়া বড় ২টা রুই-কাতল মাছের বারবিকিউ।

আড্ডা, তাস, চা'য়েই রাত ৪টা বাজিয়ে ফেললাম। ঝুম বৃষ্টির ছটায় ভোরের ঘুম জড়ানো চোখ যখন খুলি তখন ভোর ৫.৩০টা ।  শুয়ে থাকার কি আর মানে হয়? বেরিয়ে পরলাম সবাই 'বৃষ্টিস্নানে' নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে গলা ছেড়ে গান গাইতে! বইয়ের পড়া, অফিসের কাজ সব কিছু দিব্বি মনে করতে পারলেও শেষ কবে এমন বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই মনে করতে পারলাম না !! এটাই কি জীবন ভুলে অসীমের পানে ছুটে চলার ফল?

এখন শরত কাল এটা বুঝাতেই মনেহয় ঝুম একটা বৃষ্টির পরে পুব আকাশ ঝলমল করে গতকালের বিদায় নেয়া সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। লাল আভা মাখানো ধরনী তখন আসলেই অপার্থিব। আর আকাশ জুড়ে  শ্বেতশুভ্র, পেজো তুলার অসীম রকম নীলের সাথে অন্তরঙ্গ মাখামাখি। লিলুয়া বাতাসে আপনি গাইতেই পারেন "লিলুয়া বাতাসে প্রান না জুড়ায়... না জুড়ায় রে..."

ঢেঁকির শব্দ জানান দিলো নাস্তা তৈরির পথে :) চালের রুটি, বুটের ডাল, সবজী, মুরগির কারি, লুচি ভাজা... আহ!! (ক্ষুদা পেয়ে যাচ্ছে) নাস্তার শেষে চিতই পিঠা-সরিষা বাঁটা দিয়ে মুখটা ঝাঁঝিয়ে নিতে পারেন। সকাল দুপুর বিকাল রাত যখন ইচ্ছে তখন চা পাবেন ইচ্ছে মত। নাস্তার পরে অলস সময়ে পেয়ে যাবেন জাম্বুরা ভর্তা, কাঁচা পেঁপে বা আমড়া বা কামরাঙ্গা ভর্তা। বা কাসুন্দি মাখানো কাচা-পাকা আম। জল এসে যাচ্ছে জিভে? না আসলে ডাক্তারের কাছে যান।  দুপুরের খাবারের মেন্যুটা না বলাই থাক। কখনো গেলে জেনে নিয়েন।

 

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] প্রিয় মুখ[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="336"] সেদিন দুজনে। ছবির মডেলঃ ভাই, ভাবী[/caption]

যে বিষয়গুলি না উল্লেখ করলেই নয়ঃ

আথিতেয়তা । কেউ কখনও আমাদের দেখেও নি বা চিনেও না । কিন্তু বিদায় বেলায় সবাই মিলে সামনের সড়কে এসে বিদায় জানাচ্ছে - ব্যাপারটা আমাকে অভিভূত করেছে। একবার দুইবার না; চার- চার বার!

খাবার-দাবার। বিশদ বলতে গেলেই জিভে জল এসে যাচ্ছে সো নো ডিটেইলস।

ছিমছাম সরলতা - গেলেই বুঝতে পারবেন

সজীব-স্নিগ্ধতা।

ভূতের রাজা ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ কারন উনি না থাকলে এই জায়গার সন্ধান পাওয়া ও যাওয়া-আসা  আসলেই সম্ভব হত না কখনও।

Friday, September 20, 2013

কোড-সাইফারের খেলা

নাহ, কথাটা সবার সামনে বলা যাচ্ছে না, একটা গোপন সংকেত বা ভাষা জানা থাকলে ভাল হত – এরকম আমাদের সকলেরই কোন না কোন সময় মনে হয়। সব কথা সবার সামনে বলা যায় না, সবাই সব কথা এক ভাবে নেয় না। সামনা সামনি হলে, যদি নিতান্তই গোপন কিছু বলার থাকে, তাহলে সঙ্কেত ব্যবহার করা, বা আশপাশের কেউ জানে না এমন ভাষা ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। আর আশপাশের মানুষকে বিরক্ত করতে চাইলে অন্য ভাষা ব্যবহারের চেয়ে উত্তম কিছু নাই :D।

অনুরূপ, লেখা গোপন করার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। আগেকার যুগে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গোপন বার্তা পাঠানোর জন্য এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে লেখাকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হত যেন অবাঞ্ছিত কারো হাতে পড়লেও তা অর্থহীন মনে হয়। অর্থাৎ, কোড পাঠান হত, যা ডিকোড করে বার্তার আসল অর্থ উদ্ধার করা হত। বর্তমান কম্পিউটারের যুগে যদিও এগুলোর প্রচলন উঠে গেছে। ছোট প্রোগ্রাম লিখেই যেকোনো লেখাকে encrypt করা যায়, যেন কেউ বুঝতে না পারে। এরকম encryption algorythm এরও অভাব নেই।

তারপরেও, দেখে রাখেন। জিনিসটা বেশ মজার, অফিসে ম্যানেজারের নামে চিট লিখতে হলেও কাজে দিবে, নিরাপদ থাকবেন।

প্রথমেই কিছু মৌলিক জিনিস –

  • মূল বা key message – আসল বার্তা।

  • কোড (Code) – লেখা encrypt বা উল্টাপাল্টা করার পর যা দাঁড়ায়, অর্থাৎ যা লেখা হয়।

  • সাইফার (Cipher) – লেখা উল্টাপাল্টা করার পদ্ধতি।

  • ডিকোড (Decode) – কোড থেকে বার্তা উদ্ধার করা।


অর্থাৎ, মূলকে সাইফার করে কোড লেখা হয়, যা ডিকোড করে বার্তা উদ্ধার করা হয়।

অনেক সাইফার আছে কোড লেখার। অল্প কয়েকটা উল্লেখ করা হল –

  • Reverse Alphabet– A এর স্থানে Z এবং Z এর স্থানে A বসিয়ে, অর্থাৎ,





























































ABCDEFGHIJKLMNOPQRSTUVWXYZ
ZYXWVUTSRQPONMLKJIHGFEDCBA

 

মূল – shop at iferi.com


কোড – hslk zg ruvir.xln




  • Caesar’s Method – এই পদ্ধতিটা রোমান সম্রাট Julius Caesar প্রায়ই ব্যবহার করত বলে এটা Caesar’s Method নামে পরিচিত। ব্যাপারটা বেশ সোজা, ইংরেজি বর্ণমালা A থেকে শুরু না করে যত ঘর খুশি সরিয়ে দিয়ে A এর জায়গায় আরেকটি বর্ণ দিয়ে শুরু করেন। B হবে তার পরের বর্ণ, C হবে তার পরেরটা, অর্থাৎ,





























































ABCDEFGHIJKLMNOPQRSTUVWXYZ
KLMNOPQRSTUVWXYZABCDEFGHIJ

 

মূল – this country is hungry for greatness!

কোড – drsc myexdbi sc rexqbi pyb qbokdxocc!

  • Key Word – অনেকটা আগেরটার মতই, খালি বর্ণের পরিবর্তে একটি গোপন শব্দ লিখে বাকি বর্ণগুলো ক্রমানুসারে বসিয়ে দেন। অর্থাৎ, গোপন শব্দ যদি আমার নাম হয় তাহলে,





























































ABCDEFGHIJKLMNOPQRSTUVWXYZ
SHUAIBCDEFGJKLMNOPQRTVWXYZ

 

মূল – be emergency ready.


কোড – hi ikipciluy pisay.




  • Column Method – আপনার বার্তাতে কয়টি বর্ণ আছে তা হিসাব করেন। এদের সারি ও কলামে সাজাতে কয়টি সারি ও কলাম লাগবে তা হিসাব করে নেন। তারপর উপর থেকে নিচে বার্তাটি সারি-কলাম অনুযায়ী লিখে ফেলেন। Joker এর বিখ্যাত উক্তিটি নেই,


মূল – why so serious?



























W



O



I



H



S



O



Y



E



U



S



R



S



 

কোড – woi hso yeu srs?




  • এই পদ্ধতির নাম আমি নিজেও জানি না, কিন্তু পদ্ধতিটা জানি :P। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি বর্ণের জন্য কোডে দুইটি করে বর্ণ লেখা হয়। একটি গোপন শব্দ ঠিক করেন, ও ৫ টি সারি ও ৫ টি কলাম বিশিষ্ট একটি ছক তৈরি করেন। এই ছকে গোপন শব্দটি লিখে বাকি বর্ণগুলো লিখে ফেলেন। আবার গোপন শব্দটি আমার নামই ধরি,






















































A



B



C



D



E



A



S



H



U



A



I



B



B



C



D



E



F



C



G



J/K



L



M



N



D



O



P



Q



R



T



E



V



W



X



Y



Z



 

মূল – in god we trust.


কোড – aece cadabc ebbd deddacaade.




  • এই পদ্ধতিটা সবচেয়ে জটিল। দুটি ধাপে কাজটি করা হয়।

    • একটি গোপন শব্দ ঠিক করে বর্ণের ক্রম অনুযায়ী যেটা আগে আসে সেটা ১, তার পরেরটা ২, এভাবে নাম্বার দিয়ে যান। আমার নাম নিয়ে (বাপে আকিকা দিয়ে নাম রেখেছে, যত খুশি ব্যবহার করব :P) ব্যাপারটা দাঁড়ায়, shuaib (536142).

    • এরপর নিচের মত করে সাজায়ে ফেলেন –
























































5



3



6



1



4



2



S



H



U



A



I



B



C



D



E



F



G



J



K



L



M



N



O



P



Q



R



T



V



W



X



Y



Z



 


    • এবার সংখ্যার ক্রম অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে সাজিয়ে ফেলেন (1- AFNV 2-BJPX ….)






























































ABCDEFGHIJKLMNOPQRSTUVWXYZ
AFNVBJPXHDLRZIGOWSCKQYUEMT

 


    • মনের সুখে কোড লিখেন।



মূল – love thy neighbours.


কোড – rgyb kxm ibhpxfgqsc.




  • Pigpen Cipher/Freemason’s Cipher - এটা সবচেয়ে সহজ ও মজার। নিচের ছক অনুযায়ী বর্ণমালাগুলোকে সাজানো হয়।


[caption id="attachment_308" align="aligncenter" width="230"]Pigpen Cipher Chart, Photo Courtesy: www.wikipedia.org Pigpen Cipher Chart, Photo Courtesy: www.wikipedia.org[/caption]

wikipedia.org থেকেই উদাহরণটি দিলাম।

মূল – x marks the spot.


কোড -
A-pigpen-message


 

এছাড়া আরও কিছু সহজ বুদ্ধি আছে, যেমন - শব্দগুলো উল্টে দেন (i can see the sea: i nac ees eht aes), অথবা প্রতিটা বর্ণের মাঝখানে মনমত বর্ণ বসিয়ে দেন (the lost island: trhyej lkojsytq igsnlmahntde)। অথবা নিজেই বের করেন না একটা পদ্ধতি, আর শেয়র করেন, মজাটা একা নিবেন কেন?

Tuesday, September 17, 2013

আমার Google সব জানে, শুধু প্রশ্ন করতে জানতে হয়

google_searchGoogle.com বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত Search Engine. কোন ধারণা আছে বেশি ব্যবহৃত দিয়ে কতটা বেশি বোঝান হচ্ছে? শুধু জুন-২০১৩ তে গুগল সার্চের সংখ্যা ১২.৮ বিলিয়ন (১২৮ কোটি)। একে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে দৈনিক গড় (৪.২৬৬ কোটি), তাকে ২৪ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি ঘণ্টার গড় (১৭.৭৭৮ লাখ), তাকে আবার ৬০ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি মিনিটের গড় (২৯.৬৩ হাজার), আবার ৬০ দিয়ে ভাগ করলে সেকেন্ডের গড় (৪৯৩.৮৩)। অর্থাৎ শুধু জুন মাসে ১৮১ টি দেশ থেকে ১৪৬ টি ভাষায় সম্মিলিতভাবে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪৯৪ টি সার্চ দেয়া হয়েছে। আনুমানিক প্রতি ২ মাইক্রসেকেন্ডে একটি সার্চ (মজা নিচ্ছি না)। এটা শুধু জুন মাসের কথা বলছি, সারা বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে একটু চিন্তা করেন। আর গুগলের অন্যান্য সেবা নিয়ে আপাতত কথা নাই বললাম।

সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে সবচেয়ে ভাল ফলাফল কিভাবে পাওয়া যায় তা জানতে হলে সার্চ ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়া দরকার। সার্চ ইঞ্জিনের কার্যপ্রণালী বলতে গেলে, অনেক কথা চলে আসে। সার্চ ইঞ্জিনের একটা নিজস্ব intelligence বা বুদ্ধিমত্তা আছে। এতে সার্চের সংখ্যা (search query) যত বেশি হবে, এর বুদ্ধিমত্তা তত উন্নত হবে। এর মূল কারণ সার্চ ইঞ্জিনের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস হিসেবে অসংখ্য অ্যালগোরিদম চলতে থাকে, যা প্রতিনিয়ত প্রতিটি সার্চের অসংখ্য parameter এর হিসাব রাখে এবং indexing করতে থাকে। যত বেশি ব্যবহৃত হয়, এর সার্ভারের ইন্ডেক্সিং তত সমৃদ্ধ হয়। যার দরুন গুগল আপনার search pattern এর প্রোফাইল তৈরি করতে পারে। সহজ ভাষায়, আপনি গুগলে Lion সার্চ দিলে আপনার রেজাল্ট পেজে আগে সিংহ দেখাবে না লায়ন সাইকেল দেখাবে না লায়ন এয়ার এর ওয়েবসাইট দেখাবে তা নির্ভর করবে আপনার search history এর উপর। আপনি আগে গুগল সার্চে লায়ন লিখে সিংহের লিংকে কতবার ক্লিক করেছেন আর লায়ন এয়ারের লিংকে কতবার ক্লিক করেছেন তার ভিত্তিতে আপনাকে customized search result দিবে। এটা আরও নির্ভর করবে আপনার ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, গুগল প্লাস অ্যাকাউন্ট, সার্চ প্যাটার্ন ও আরও অনেক কিছুর উপর। ব্যাপারটা কিছুটা আতঙ্কিত হওয়ার মতই।

যাই হোক, আসল কথা, গুগলের সার্চ ইঞ্জিন বর্তমানে সবচেয়ে সমৃদ্ধ হওয়ায় কোন কিছু ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চেই। বরং গুগল সার্চ এতটাই ব্যবহৃত হয় যে ইংরেজি ভাষায় “Google (verb)” একটি নতুন শব্দের সংযোজন হয়েছে, যার অর্থ গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কিছু খোঁজা। কোন কিছু ইন্টারনেটে থাকলে তা অবশ্যই গুগল সার্চ ইঞ্জিন জানে (অর্থাৎ গুগলের সার্ভারে তার সম্পর্কে তথ্য আছে), আপনি হয় পাতার পর পাতা সার্চ রেজাল্টে তা খুঁজে পান নাই, নতুবা গুগলকে বোঝাতে পারেন নাই আপনি ঠিক কি খুঁজছেন যার কারণে গুগল তা প্রথম কয়েক পাতায় দেখায় নাই। অর্থাৎ গুগলকে প্রশ্ন করতে জানতে হবে, উত্তর আপনি অবশ্যই পাবেন।

গুগলে সার্চ করার বেশ কিছু কৌশল আছে, যা আপনার search experience কে আরও সহজ করে আর ঠিক তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তার অল্প কয়টা নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

  • Search keyword: গুগল সার্চের ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রতিদিন যেসকল কিওয়ার্ড সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলো ব্যবহার করলে সার্চ ফলাফল অনেক দ্রুত ও নিখুঁত হয়। সার্চ দেয়ার আগে একবার চিন্তা করে নেন, আপনি যা খুঁজছেন তা সবচেয়ে সহজে কি লিখে প্রকাশ করা যায়? সম্ভবনা বেশি যে ওই শব্দগুলো ব্যবহার করেই অধিকাংশ মানুষ একই জিনিস খোঁজে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সার্চ কিওয়ার্ডগুলো গুগল সার্চ ইঞ্জিন নিজেই suggest করে। ফলে সাধারণত সার্চে খুব বেশি কিওয়ার্ড সংক্রান্ত অসুবিধায় পড়তে হয় না।

  • Search Operator ব্যবহার করেনঃ

    • “ ” এর ভিতর যা লিখবেন সার্চ ইঞ্জিন ঠিক তাই খুঁজবে।




উদাহরণঃ “iferi rocks” লিখলে যত জায়গায় এই শব্দ দুটি এই sequence বা ক্রমে খুঁজে পাবে ওগুলো সার্চ ফলাফলে রাখবে।





    • কোন শব্দের আগে ব্যবহার করলে ওই শব্দ বাদ দিয়ে খুঁজবে।



উদাহরণঃ iferi -rocks লিখে সার্চ দিলে যত জায়গায় rocks ব্যতিত iferi খুঁজে পাবে ওগুলো সার্চ ফলাফলে রাখবে।





    • related: ব্যবহার করে কোন ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করে দিলে ওই ওয়েবসাইটের সদৃশ অন্যান্য ওয়েবসাইট খুঁজে বের করবে।



উদাহরণঃ related: iferi.com/blog লিখে সার্চ দিলে অন্যান্য ব্লগিং ওয়েবসাইট গুলো সার্চ ফলাফলে দেখাবে।





    • filetype: ব্যবহার করে বিশেষ টাইপের ফাইল খোঁজা যায়।



উদাহরণঃ cycling tips filetype:pdf লিখে সার্চ দিলে সাইক্লিং টিপস সংক্রান্ত যত ডাউনলোডযোগ্য pdf ফাইল আছে শুধু সেই ফাইলগুলো সার্চ ফলাফলে দেখাবে।




[caption id="attachment_226" align="aligncenter" width="475"]filetype search filetype search[/caption]


    • site:  লিখে বিশেষ কোন ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করে দিলে শুধু ওই ওয়েবসাইটে খুঁজবে।



উদাহরণঃ cycle accessories site:iferi.com লিখলে শুধু iferi.com এ cycle accessories সার্চের সকল ফলাফল দেখাবে।





    • * এবং “ ” এর সমন্বিত ব্যবহার কোন বিশেষ কিওয়ার্ডের মাঝখানে কোন শব্দ ভুলে থাকলে তা বের করে আনতে সাহায্য করে।



উদাহরণঃ “to be or * to * that is the *” লিখে সার্চ দিলে শেক্সপেয়ারের বিখ্যাত উক্তিটি বের হয়ে আসবে।





    • ~ ব্যবহার করে কোন কিওয়ার্ডের সমার্থক শব্দগুলো সার্চ করেতে পারেন।



উদাহরণঃ ~car লিখে সার্চ দিলে car এবং car এর সমার্থক শব্দগুলর সার্চ ফলাফল দেখাবে।





    • OR ব্যবহার করে কিওয়ার্ডের কম্বিনেশন করে সার্চ করা যায় ( | চিহ্নও OR এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়)।



উদাহরণঃ jessica william OR williams OR wiliam লিখে সার্চ দিলে এই তিনটি last name এর jessica সংক্রান্ত সকল সার্চ ফলাফল দেখাবে।





    • #...# ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট দামের ভিতর পণ্য খোঁজা যায়।



উদাহরণঃ wrist watch ৳ 2000…৳ 5000 লিখে সার্চ দিলে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে যত wrist watch পাবে সব সার্চ ফলাফলে দেখাবে।





    • daterange: ব্যবহার করে নির্দিষ্ট তারিখের ভিত্তিতে সার্চ করা যায়।



উদাহরণঃ iferi.com daterange:201203 লিখে সার্চ দিলে মার্চ ২০১২ এর iferi.com সংক্রান্ত সার্চ ফলাফল দেখাবে।




  • Search tools ব্যবহার করে আপনার সার্চ আরও সুনির্দিষ্ট করেন। আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী স্থান বা সময় ভিত্তিক narrow down করলে সার্চ করেতে আপনারই অনেক সুবিধা হবে। এছাড়া প্রয়োজনে ব্লগ, ভিডিও, ছবি, বই, খবর ও আরও অনেক category নির্দিষ্ট করে সার্চ অনেক সহজ করা যায়।

  • কোন কিছু খুঁজে পাওয়া নিতান্তই দুঃসাধ্য হলে Advanced search ব্যবহার করেন (ডান কোণায় উপরে চাকার মত বাটনে ক্লিক করলেই দেখা যাবে), জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া বিশেষ documents খোঁজার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা তো আছেই (google scholar, google patent etc).


[caption id="attachment_227" align="aligncenter" width="492"]Advanced Search Advanced Search[/caption]

এছাড়া কিছু সাধারণ ব্যাপার – গুগল সার্চ punctuation (@#%^ etc) ignore বা অগ্রাহ্য করে, case insensitive (বড়/ছোট হাতের লেখায় কোন পার্থক্য নেই), বানান ভুল হলে গুগল নিজেই তা ঠিক করে ফেলে। আরও মৌলিক গাণিতিক হিসাব করা, এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করা, মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী currency convert করা, সংজ্ঞা এবং dictionary বা অভিধান সার্চ, মানচিত্র ভিত্তিক সার্চ, ফ্লাইটের সময়সূচী, ছবি থেকে সার্চ (android ফোন ব্যবহার করে), এমনকি কথা বলেও (voice command) সার্চ করার সুব্যবস্থা আছে।

সত্য, google.com সার্চ ইঞ্জিন জগতের superhero.

Sunday, September 15, 2013

সুখী মানুষের দেশে - ভূটানের টানে

অপ্রয়োজনীয় ভুমিকা

“তোমার কোথায় ঘুরতে যেতে বেশি ভালো লাগে?” কেউ যখন আমাকে এই প্রশ্ন করে আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন কর্তার দিকে একটা অবাক প্রশ্নবোধক চাহনী দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গীতে হাতটা নাড়ি। ইশারার ট্রান্সলেশন হইতেছে, এইটা কি প্রশ্ন করলা ভাই? এই ব্যস্ত লাইফে ঘুরতে যাইতেইতো আনন্দ। কই যাইতেছি এইটা কোনো ঘটনা নাকি? এইটা আসলে ভাব। সত্যি কথাটা হইল, অনেকদিন পর পর যখন ঘুরতে যাই, তখন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে প্রবল ভাবে টানে। টানে মানে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। তাই খুব কৌশলে আমিও পাহাড় কিংবা সমুদ্রে যাওয়ার জন্য নানা কলা কৌশল করে প্ল্যান করি। আমার বন্ধুরা টের পায় না। নাচতে নাচতে আমার সাথে চলে যায়। ঠিক এই রকম একটা ট্যুর হইল কয়দিন আগে। সময়টা ঘোরাঘুরির জন্য নাকি একেবারেই ভালো না। জুন মাস, ভরা বর্ষা। ওরে পাগলা, ঘোরাঘুরির আবার মৌসুম আছে নাকি? আর ভরা বর্ষায় পাহাড়ে যে কি মধু, একবার ঘুরে না এলে তোকে বোঝায় সাধ্য কার?

image033

হেন তেন আজাইড়া কথন

পাহাড় আছে, কিন্তু রঙ তুলি দিয়ে আকা চিলতে সাদা মেঘ নেই। এই রকম বিচ্ছিরি ছবি আকছেন জীবনে? আমার কাছে পাহাড়ের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যটা ভরা বর্ষাতেই। তাই পাহাড়ের দেশ ভুটান যাবার জন্য জুন মাসটা বেছে নিতে ২ মিনিট ভাবতে হয়েছে শুধু। আমি আর আমার ৩ বন্ধু, এর মধ্যে একজন সম্পর্কে আমার কাজিন হয়, আর বাকি দুই বন্ধু আবার নিজেরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ। (প্ল্যানের সময় চার বন্ধু ছিল, কিন্ত দুঃখজনক ভাবে একজন মিসিং হয়ে যায় পরে)।

নিজেরা ম্যানেজ করে যাব? নাকি ট্যুর অপারেটর ম্যানেজ করে যাব? এই সিদ্ধান্ত নিতে শুধু মাত্র দুইটা বিষয় ভাবলাম।  প্রথমঃ আমরা ঐ দেশে আগে যাই নাই, আর ঘুরতে গিয়ে কোনো রকম ঝামেলা অথবা অনিশ্চয়তা চাই না,  দ্বিতীয়ঃ নিজেরা ম্যানেজ করে গেলেও ট্যুর অপারেটরের চেয়ে কম খরচে ঘুরে আসার তেমন একটা বেশি সুবিধা নাই। এয়ার টিকেট আপ ডাউন ২৩,০০০ টাকা। আর বাকি সব (৩ রাত থাকা, খাওয়া, ফুলটাইম একটা গাড়ি, একজন গাইড) মিলিয়ে সর্বমোট ৩৫,১০০ টাকা জন প্রতি।

ভুটানের ভিসা পোর্ট এন্ট্রি। তাই তেমন একটা ঝামেলা নাই। তবে ওদের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল পারো এয়ারপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে একটা। এয়ার পোর্টের রানওয়ের আসে পাসে দুই দিকেই পাহাড়। খুব অল্প স্পেইস। কে কে ভয় পাইছেন হাত তোলেন? গুড। আপনাদের কোথাও ঘুরতে যাওয়ার দরকার নাই। আপনারা বাসায় বসে থাকেন সবচেয়ে সেইফ থাকবেন। বাকিরা এখনি প্ল্যান করতে বসে যান। এর চেয়ে বেশি যেই সব তথ্য দরকার হবে কমেন্টে প্রশ্ন দিয়ে যান। সময় করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। আরে ভুটান নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম অথচ এতক্ষনেও আপনাদের ভুটানে নিয়ে যাইতে পারি নাই। এই হইল আমার সমস্যা। শুধু কথা আর কথা। তাও আজাইড়া সব কথা। আসেন অল্প কথায় ভুটানের গল্প শেষ করি।

অল্প একটু ভুটান

ভুটান, দেশটা সুন্দর, শান্ত, ছিম ছাম। মানুষ গুলো সরল, শান্তিপ্রিয়, হাসি খুশি। প্রকৃতির কোল ঘেষে বেড়ে ঊঠা শহরের মানুষগুলো ধর্মের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। উপরে বুদ্ধ, নিচে রাজা, ওদের সবচেয়ে সন্মানীয় ব্যক্তি। ওদের আর্কিটেকচার অনবদ্য। এই জ্ঞানটা ওদের ট্রেডিশনাল। তবে চোখ ধাঁধানো। পুরো দেশের যেই দিকেই তাকানো হোকনা কেন, শুধু ল্যান্ড স্কেপ আর ল্যান্ড স্কেপ। ওদের বিশেষ সব স্থাপনা করার সময় খুব সুচারূ ভাবে এই ল্যান্ডস্কেপের দিকে নজর দিয়েছে ওরা। দেশটার মানুষ গুলো ধর্মের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল এবং একি সাথে নিয়ম কানুনের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। অবিশ্বাস্য রকমের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা দেশ।

গাড়ি গুলো রাস্তায় চলে খুব সাবধানে ধীরে। তিনদিনে মাত্র তিনবার গাড়ির হর্ন শুনেছি। ধরেন আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন, হাত দেখালেন রাস্তা পার হবেন বলে, দেখবেন সব গাড়ি দাঁড়িয়ে গেছে। ভুটানে পাবলিক প্লেসে ধুমপান নিষিদ্ধ। ওরা এটা কঠিন ভাবে মেনে চলে। এই সময়টা ছিল সামার। অবাক হয়ে দেখি হোটেলে ফ্যান নেই, এসি নেই। রিসিপশনে গিয়ে বললাম গরম লাগলে কি করব। ওরা সুন্দর করে হেসে বললো, স্যার জানালা খুলে দেবেন, খুব সুন্দর বাতাস আসবে। ভোর বেলায় টের পেলাম, কেন ওরা কম্বল গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল।  কোন ফাজিল যাওয়ার আগে বলেছিল খাওয়া দাওয়া নিয়ে নাকি সমস্যা হয়। ওখানে গিয়ে খেতে বসে মনে হয়েছিল, আমার দেশেরই আগে কখনো খাওয়া হয় নাই এমন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছি। রুই মাছ সুন্দর করে টমেটো, ধনে পাতা, দিয়ে ভুনা করা, সব্জী, দারুন সুস্বাদু ডাল দিয়ে চিকন চালের সাদা ভাত। আহা!!।

চায়ে লিকারটা কম খায়। তবে একটা দেশ, যেখানে প্রচুর পর্যটক আসে, সেই হিসেবে অবিশ্বাস্য রকমের কম রেস্টুরেন্ট। ওদের নাম গুলা অনেক কঠিন মনে হইছে আমার। আমাদের গাইডের নামটা আমরা কিছুতেই মনে রাখতে পারতেছিলাম না। তাই শেষ পর্যন্ত তার নাম দিলাম “চারো” মানে বন্ধু। আমাদের জন্য বরাদ্দ গাড়িটা বেশ আরামদায়ক ছিল। ড্রাইভারটা নেপালে জন্ম নেয়া, তাই তার নামটা মনে রাখা যাচ্ছিল “সান্তোস”।

image003image005

কি কি যেন করলাম ভুটানে?

তিন রাতের প্রথম রাত আমরা ছিলাম থিম্পুতে। ভুটানের রাজধানী। পারো এয়ারপোর্ট থেকে এক থেকে দেড় ঘন্টার ড্রাইভ। শহরের একেবারে মাঝখানেই একটা থ্রীস্টার হোটেলে আমরা ছিলাম। থ্রী স্টার শুনে কার কার চোখ বড় হয়ে গেল? ভুটানে হোটেলের টাইপ দুইটা। থ্রী স্টার আর ফাইভ স্টার। ফাইভ স্টার হোটেল হলো আসলেই ফাইভ স্টার, বিশাল, ঝকমকা, চকচকা। আর ফাইভ স্টার বাদ দিয়ে বাকি সব হোটেলই থ্রী স্টার। J থিম্পু স্টেডিয়ামের ঠিক পেছনেই গালভরা থ্রী স্টার একটা হোটেলে আমরা ছিলাম।

পারো থেকে থিম্পু যাবার পথে এক জায়গায় গাড়ি দাড় করানো হলো। এখানে আমরা নাকি পাহাড়ী নদীর একটা সুন্দর অবয়ব দেখতে পাবো। হাটতে হাটতে ব্রীজের উপরে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে যা দেখা গেল সেটা শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই।

image007

থিম্পু পৌছাতে পৌছাতে লাঞ্চের সময় হয়ে গেল। হঠাৎ উচ্চতায় উঠে যাওয়া আর আকাবাকা পাহাড়ী রাস্তায় ড্রাইভের কারনে আমাদের মাথা কিছুটা টালমাতাল। একটা গোসল দিয়ে এক কাপ চা খেয়ে ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ করে আমরা চলে গেলাম একটা ধর্মীয় উপসনালয়ে। ওদের উপসনার সিস্টেমটা দারুন। একটা প্রেয়ার হুইল আছে। সেই হুইলে নানা ধরনের ধর্মীয় কথা লেখা আছে। ওদের কাজ হচ্ছে হুইলটা ধরে ঘোরানো। হুইল ঘুরবে, আর প্রেয়ার হবে। কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি পানির স্রোতের মাধ্যমে হুইল ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে প্রেয়ার এক মুহুর্তের জন্যও না থামে।

image009

image011

image013

পাহাডের চুড়ায় বুদ্ধের একটা মুর্তি বানাচ্ছে ওরা। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে দেখা যায়। দেখতে চান?

image015

image017

এর পরে আমরা চিড়িয়াখানার মতন একটা জায়গায় গেলাম ওদের জাতীয় পশু “টাকিন” দেখতে। জিজ্ঞেস করেন টাকিন কি জিনিষ। টাকিন হইল, মাথাটা ছাগলের মতন আর শরীর গরুর মতন, মিক্সড একটা প্রাণী। এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই এটাকে এই চিড়িয়া খানায় সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। কি? শুনেই দেখতে ইচ্ছে করছেতো? এই জন্যই ছবি দিলাম না। গিয়ে দেখে আসেন। শুধু ফাও খেতে চান।

পরদিন আমরা গেলাম একটা অদ্ভুত স্কুলে। যেখানে আর্ট সেখানো হয় বাচ্চাদের। আর্ট মানে? আর্ট মানে আর্ট। ছবি আকা, কাঠের কারুকাজ, সেলাই, নকশা, মুর্তি বানানো, ইত্যাদি। স্কুলটাতে গেলেই এক ধরনের প্রশান্তি এসে যায় মনে। মনে হয় কিছুদিন থেকে যাই এই স্কুলে। স্কুল জুড়ে মহা আনন্দে সবাই আর্ট শিখছে। দেখেন এই ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে না কি সুখে আছে সে?

image019

এর পরে গেলাম সব্জী মার্কেট। এটাও দেখার জিনিষ। জ্বী আমাদের জন্য অবশ্যই দেখার জিনিষ।

image021

তারপর চলে গেলাম পারো। থিম্পুর পূর্বে ভুটানের রাজধানী। খুব শান্ত শহর। আমাদের দেশের সাথে কোনো তুলনা চলে না ভুটানের। তারপরেও যদি বলি শান্ত থিম্পু কিছুটা জমজমাট, পারো সেদিক থেকে শুনশান বলা যায়। কোনো কোলাহল নেই। অপূর্ব নৈসর্গিক শহর।

image041

এখানে বেশ কিছু স্থাপনা আছে, মাথা নষ্ট করে দেয়ার মতন। ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর পুরাতন ভার্সনটাই আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।

image025

আর একটা ধর্মীয় উপাশনালয়। এটার ভেতরে তোলা ছবি গুলা এই মুহুর্তে আমার হাতের কাছে নেই।

image027

হঠাৎ মনে জাগা দুই লাইন ভাবনা

ভুটানের কথা মোটামুটি শেষ। এখন দুই একটা কথা বলি, যেই কথা গুলি আসলে বলে বোঝানোর মতন শব্দ ব্যবহার আমার জানা নাই। ধরেন, খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা ছেড়ে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিই। আর অবাক ব্যাপার, কিছুতেই জানালার সামনে থেকে সরতে পারছিনা। হাত বাড়ানো দুরত্বে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। দল বেধে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে। রুমের চার ধার ঘেরা মুর্তিমান পাহাড়েরা। তাদের ঘিরে জড়িয়ে আছে মেঘেদের দল। জানালা খুলে দিলেই হিম হিম ঠান্ডা বাতাস। আবেগে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। বুক ভরে শ্বাস নিতে থাকি। দ্রুত ঘুমের পোষাকটা ছেড়ে বাসি মুখেই বেড়িয়ে পড়ি। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও পাতলা টি শার্ট পড়ে। দুই হাত বুকে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তায় নেমে আসি। এতক্ষন জানালা দিয়ে দেখা আমার পৃথিবীটা যেন চর্তুদিকে। হাতে গরম কফি, আমি হাটতে থাকি আপন মনে, ঠিক কতক্ষন কে জানে।

image029

image031

দিন এগোতে থাকে। এক দিকে মেঘ কালো হয়ে আসে আকাশ। অন্য দিকে রোদ ঝিল মিল। সব খেক শিয়ালের বোধহয় আজই বিয়ে নেমেছে। হুট করে রোদ মিলিয়ে যায়। এবার ঘন কালো মেঘে হারিয়ে যায় সূয্যি মামা। মেঘেদের ভিড় ঠেলে ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আবার উকি দেয়। মেঘেদের ভিড়ে ঝিল মিল আলোর রশ্মি আকাশ ফুঁড়ে বের হয়ে পাহাড়ি নদীতে। মন চায় দৌড়ে গিয়ে মুঠোয় নিয়ে কপ করে গিলে ফেলি।

image039

image0375

পাহাড়ী নদীর পাড় ধরে হাটতে থাকি বিকেলে আমরা। বাতাস আর পানির শব্দ আলাদা করার চেষ্টা করি। নদীর পাড় থেকে ঠিক কত দূর পর্যন্ত শব্দ শোনা যায় সেটা খুজে বের করার শিশুতোষ খেলাটা কেন এতটা মজার ছিল এখন কিছুতেই মনে করতে পারছি না। নদী এক পাশ থেকে অন্য পাশে বয়ে যায়। এই বিকেলে সূয্যি ডুবি ডুবি ভাব ধরে বসে আছে। সুয্যির দিকে মুখ করে নদীর দিকে তাকালে দেখা যায় দুই ধার পাহাড় ঘেরা নদীতে পড়ন্ত সূর্যালোক। আর উল্টো দিকে তাকালে অদ্ভুত সুন্দর আলোর খেলা। পাহাড়ে আলো ছায়ার মেলা। মন চায় একি সময় দুই দিকেই তাকিয়ে থাকি।

image023

আর রাত? শুনশান, নিরিবিলি প্রাকৃতিক, নৈসর্গিক। আমরা হাটতে থাকি। মনে ক্ষানিকটা পথ হারানোর ভয়, তবে জানি এই শহরে হারিয়ে যাওয়াটাই অনেক কঠিন হবে।

9

22

অনেকতো বুঝাইলাম, গেলে যান না গেলে নাই

সব মিলিয়ে, নিরিবিলি ছিমছাম একটা ছুটি কাটাতে গেলে, আমি বলবো ঘুরে আসেন ভুটান। যদি আপনি পাহাড় পছন্দ করেন, মেঘ পছন্দ করেন, বৃষ্টি পছন্দ করেন, পাহাড়ি নদীর ঝির ঝির শব্দ পছন্দ করেন, আকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা পছন্দ করেন, বিশাল বড় বড় অদ্ভুত সুন্দর সব আর্কিটেকচার দেখতে চান, রাত নটায় শুনশান হয়ে যাওয়া শহর পছন্দ করেন, কোলাহোল মুক্ত নিজের মতন একটু সময় কাটাতে চান, ভুটান দারুন জায়গা।

সব গুলা ছবিই আমার তোলা। গ্রুপ ছবি গুলোর জন্য আমার ট্রাইপডকে একটা কঠিন ধন্যবাদ।