দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন কাজে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে আজকাল জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ লাগছে। আমাদের কারো কারো হয়তো শুধু পাসপোর্ট বা শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ বা শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। আবার কারো এ তিনটি মহামূল্যবান বস্তুই রয়েছে। অনেক কাজ করতে গেলে এ তিনটি কাগজই প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে বা বিদেশে ভিসার জন্য লাগতে পারে জন্ম নিবন্ধন সনদ। জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ সারা বছর হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে পাসপোর্ট করতে হলে জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। আজকে আলোচনা করবো কীভাবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হয়।
প্রথমে নিজ এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়টি খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেখানে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন ফরম বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। অনলাইনেও এ ফরম পাওয়া যায়। অনলাইনে ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার ব্যবস্থাও আছে কিন্তু আমি নিজে সে চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। সম্ভবত ওদের সার্ভারে কোনো সমস্যা ছিল। সে কারণে ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। জিজ্ঞেস করতে পারেন যে জমা দেয়ার সময় কী কী কাগজের ফটোকপি সাথে দিতে হবে। তাও বলে রাখি, প্রাপ্তবয়স্ক বা যার পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের সনদ রয়েছে তাকে এসব কাগজের যেকোনো একটি বা দু’টির ফটোকপি জমা দিতে হবে। যারা একদম বাচ্চা বা নবজাতক তাদের জন্য জমা দিতে হবে তার মা এবং বাবা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি। ফটোকপি সত্যায়িত না করলেও কাজ হয় কিন্তু করে রাখাই ভালো।
ইচ্ছে করলে কমিশনার অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে কেউ সরাসরি সিটি করপোরেশনে গিয়েও কাজ করাতে পারেন। কিন্তু সেটি অসম্ভব পরিশ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। একটা পুরো দিন সেখানে চলে যেতে পারে। তাই ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ের কর্মরত ব্যক্তিদের কিছু টাকাপয়সা দিয়ে এ কাজটি করানো সুবিধাজনক। টাকাপয়সার প্রসঙ্গে বলি। দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারিভাবে কোনো টাকা লাগে না। আর দুই বছরের ওপরে যেকোনো বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়সের প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা করে দিতে হয়। তবে কমিশনার অফিসের লোকদের দিয়ে কাজ করাতে তাদের চা-নাশতা-যাতায়াতের জন্য কিছু খরচ দিতে হয়। সেটা আবার এলাকার ওপর ভিত্তি করে। অভিজাত এলাকায় একটু বেশি টাকা দাবি করা হয়। যেদিন ফরম জমা দেবেন সেদিন তাদেরকে ন্যায্য টাকা অর্থাৎ বয়সের প্রতি বছরের জন্য যত টাকা আসে তত টাকা দিয়ে দিতে হবে আর সাথে হয়তো আরো ১০০-২০০ টাকা দিতে হতে পারে যাতায়াতের জন্য। তবে তারা আরো টাকা দাবি করতে থাকে নানান কারণ দেখিয়ে। তাদের ভাষ্য হলো সিটি করপোরেশনে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য কম্পিউটারে ইংরেজিতে টাইপ যে করে সে ১০০ টাকা নেয়। আবার যে চিকিৎসক নিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর করেন তিনিও ১০০ টাকা নেন। সনদের কার্ডের মূল্য ২০ টাকা, কেউ বলে ৩০ টাকা। এসব কথার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। মোট কথা ন্যায্য টাকার পাশাপাশি তারা যেভাবেই হোক আরো ২০০-৩০০ টাকা নিতে চাইবে। আরো কারণ দেখিয়ে তারা হাজার টাকাও চেয়ে বসতে পারে। বিশেষ করে কমিশনার অফিসে কিছু দালাল থাকে। তাদের দেখে আপনি মনে করবেন যে অফিসেরই লোক। তারা টাকা আরো বেশি নেয়। এ কারণে অফিসে গিয়ে ভালো করে যাচাই করে নেবেন যে কারা আসলেই সেখানকার কর্মচারি। খরচ নিয়ে মূলামূলি করতে হবে। কখনোই মনে করবেন না ফরম জমা দেয়ার সময় যা টাকা দিয়েছেন সেটিই সব। কারণ সনদ নেয়ার সময় আবার ১০০ টাকা দিতেই হবে। তাই ন্যায্য টাকার বাইরে আগে ১০০ টাকার মতো দিয়ে রাখবেন। আর নেয়ার সময় বাকিটা দিবেন। তবে সিটি করপোরেশনেও তাদেরকে কিছু খরচাপাতি করতে হয়। কিন্তু সব সময়েই চেষ্টা করতে হবে দামাদামি করে যথাসম্ভব কম টাকা দেয়ার। সাধারণত ফরম জমা দেয়ার ২ থেকে ৩ কর্ম দিবসের মধ্যেই তারা জন্ম নিবন্ধন সনদ এনে দেয়। তখন কমিশনার অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। ফরম জমা দেয়ার সময় অবশ্যই তাদের মোবাইল নম্বর রেখে দেবেন। সাধারণত এ অফিসগুলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে আরো জানতে যেতে পারেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্য নিবন্ধন প্রকল্পের সাইটে।
Monday, March 17, 2014
Saturday, March 15, 2014
কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্টের কপি সত্যায়িত করে বিদেশে পাঠাবেন
আগের লেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেছিলাম। আজকের লেখায় এই ট্রান্সক্রিপ্টের ফটোকপি সত্যায়ন করে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাবো। বলে রাখা ভালো, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানোর নিয়ম। ট্রান্সক্রিপ্টের মূল কপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে ভরে সিলগালা করে নিতে হয়। এরপর নিজ দায়িত্বে ডিএইচএল, ফেডএক্স বা অন্য নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। কিন্তু পঠিত কোর্স বা অর্জিত ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য করার জন্য মূল ট্রান্সকক্রিপ্ট পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে না। উত্তর আমেরিকাতে পড়াশুনা বা কাজের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ইকুইভ্যালেন্স এজেন্সির মাধ্যমে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরণের ইকুইভ্যালেন্স সংস্থায় মূল ট্রান্সক্রিপ্ট না পাঠিয়ে ফটোকপি ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন থেকে সত্যায়ন করে পাঠাতে হয় যথারীতি সিলগালা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে। উল্লেখ্য, বিদেশে ইকুইভ্যালেন্ট সংস্থার কাছে ট্রান্সক্রিপ্টের কপির পাশাপাশি সার্টিফিকেটের ফটোকপিও সত্যায়ন করে পাঠাতে হয়।
ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর পর তা ফটোকপি করে সেই কপি সত্যায়নের জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে বিনামূল্যে সত্যায়নের আবেদনপত্র বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পূরণ শেষে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের মোট যে কয়টি পাতা রয়েছে অর্থাৎ যে কয়টা পাতা আপনি সত্যায়ন করাতে চান তার সংখ্যা ৩০৫ এর কর্মকর্তাকে জানাবেন। তখন তিনি ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় টাকার অংক লিখে দেবেন। প্রতি পাতা সত্যায়নের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ধরা যাক, আপনার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ৫ টি পাতা। মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ২ টি পাতা। আর এ দু’টি ডিগ্রির জন্য রয়েছে ২টি সার্টিফিকেট। অর্থাৎ, এসবগুলো কাগজ ফটোকপি করলে মোট কাগজ হচ্ছে ৯ পাতা। এখন এই ৯ পাতা সত্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪৫০ টাকা। ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর সময়েই যদি খাম উঠিয়ে রাখেন তাহলে আর খামের প্রয়োজন হবে না। যদি খাম না ওঠান তাহলে খামের জন্য আরো ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করার জন্য আরেকটু তথ্য প্রয়োজন হয়। সেটি হলো ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখ। যদি আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কশিট/গ্রেডশিটে সে তারিখের উল্লেখ থাকে তাহলে আর সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেখানে এ তথ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। ৩০৯ কক্ষ থেকে আপনি যে ক’টি ডিগ্রির ফলাফলের তারিখ জানতে চান সে ক’টি আবেদনপত্র প্রতিটি ১৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে। সে আবেদনপত্র পূরণ করে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা প্রবেশপত্র না থাকলে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে ৩০৮ নম্বর কক্ষে জমা দিতে হবে। তখন তারা আবেদনপত্রের ওপর টাকার অংক লিখে দেবে। প্রতিটি ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হয়।
এবার আপনার কাছে রইলো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট সত্যায়নের আবেদনপত্র এবং আপনার পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র। নিশ্চয়ই মনে আছে যে সকল আবেদনপত্রের ওপরেই কত টাকা জমা দিতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। এবার আপনাকে চলে যেতে হবে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে। সেখানে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। যে ক’টি আবেদনপত্র সে ক’টি ডিপোজিট স্লিপ নিতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে আবেদনপত্র ক্যাশিয়ারকে প্রদর্শন করে টাকা জমা দিতে হবে। স্লিপে ব্যাংকের সিল এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিলে স্লিপ ও আবেদনপত্র নিয়ে আপনি পুনরায় ফিরে আসবেন রেজিস্ট্রার ভবনে। ৩০৫ নম্বর কক্ষে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তখন তখনই তারা সবগুলো কপি সত্যায়িত করে দেয়। কখনো কখনো পরে আসতে বলে। আর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র জমা দিলে তারা টাকা জমা দেয়ার স্লিপের পেছনে কবে এসে সনদ সংগ্রহ করতে হবে তা লিখে দেবে। নির্দিষ্ট দিনে সত্যায়িত সনদ এবং ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ যথাক্রমে ৩০৫ ও ৩০৮ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। এবার যে ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থায় আপনার কাগজপত্র পাঠাবেন তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে হবে। ফরম আগে থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে রাখতে হবে। আর সেই ফরমের একটা অংশ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট শাখাকে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। এরপর সেই ফরমটিসহ সকল সত্যায়িত কাগজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিলেই হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানোর আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঐ সংস্থার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে রাখতে হবে।
ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর পর তা ফটোকপি করে সেই কপি সত্যায়নের জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে বিনামূল্যে সত্যায়নের আবেদনপত্র বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পূরণ শেষে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের মোট যে কয়টি পাতা রয়েছে অর্থাৎ যে কয়টা পাতা আপনি সত্যায়ন করাতে চান তার সংখ্যা ৩০৫ এর কর্মকর্তাকে জানাবেন। তখন তিনি ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় টাকার অংক লিখে দেবেন। প্রতি পাতা সত্যায়নের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ধরা যাক, আপনার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ৫ টি পাতা। মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ২ টি পাতা। আর এ দু’টি ডিগ্রির জন্য রয়েছে ২টি সার্টিফিকেট। অর্থাৎ, এসবগুলো কাগজ ফটোকপি করলে মোট কাগজ হচ্ছে ৯ পাতা। এখন এই ৯ পাতা সত্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪৫০ টাকা। ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর সময়েই যদি খাম উঠিয়ে রাখেন তাহলে আর খামের প্রয়োজন হবে না। যদি খাম না ওঠান তাহলে খামের জন্য আরো ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করার জন্য আরেকটু তথ্য প্রয়োজন হয়। সেটি হলো ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখ। যদি আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কশিট/গ্রেডশিটে সে তারিখের উল্লেখ থাকে তাহলে আর সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেখানে এ তথ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। ৩০৯ কক্ষ থেকে আপনি যে ক’টি ডিগ্রির ফলাফলের তারিখ জানতে চান সে ক’টি আবেদনপত্র প্রতিটি ১৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে। সে আবেদনপত্র পূরণ করে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা প্রবেশপত্র না থাকলে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে ৩০৮ নম্বর কক্ষে জমা দিতে হবে। তখন তারা আবেদনপত্রের ওপর টাকার অংক লিখে দেবে। প্রতিটি ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হয়।
এবার আপনার কাছে রইলো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট সত্যায়নের আবেদনপত্র এবং আপনার পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র। নিশ্চয়ই মনে আছে যে সকল আবেদনপত্রের ওপরেই কত টাকা জমা দিতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। এবার আপনাকে চলে যেতে হবে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে। সেখানে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। যে ক’টি আবেদনপত্র সে ক’টি ডিপোজিট স্লিপ নিতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে আবেদনপত্র ক্যাশিয়ারকে প্রদর্শন করে টাকা জমা দিতে হবে। স্লিপে ব্যাংকের সিল এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিলে স্লিপ ও আবেদনপত্র নিয়ে আপনি পুনরায় ফিরে আসবেন রেজিস্ট্রার ভবনে। ৩০৫ নম্বর কক্ষে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তখন তখনই তারা সবগুলো কপি সত্যায়িত করে দেয়। কখনো কখনো পরে আসতে বলে। আর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র জমা দিলে তারা টাকা জমা দেয়ার স্লিপের পেছনে কবে এসে সনদ সংগ্রহ করতে হবে তা লিখে দেবে। নির্দিষ্ট দিনে সত্যায়িত সনদ এবং ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ যথাক্রমে ৩০৫ ও ৩০৮ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। এবার যে ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থায় আপনার কাগজপত্র পাঠাবেন তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে হবে। ফরম আগে থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে রাখতে হবে। আর সেই ফরমের একটা অংশ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট শাখাকে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। এরপর সেই ফরমটিসহ সকল সত্যায়িত কাগজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিলেই হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানোর আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঐ সংস্থার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে রাখতে হবে।
Friday, March 14, 2014
কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠাবেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এর অধিভুক্ত কলেজ/প্রতিষ্ঠানে যারা পড়াশুনা করেছেন বা করছেন তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠাতে হতে পারে। একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের সাথে মার্কশিট বা গ্রেডশিটের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বলতে বোঝায় ডিগ্রির বিস্তারিত নম্বরপত্র যেখানে শুধু আপনি কত মার্ক বা গ্রেড পেয়েছেন তাই নয় বরং কোর্সের নাম, ক্রেডিট ঘন্টা, প্রতি বছরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ, পরীক্ষা রোল নম্বর, শ্রেণিতে মোট কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল, ভর্তি শিক্ষাবর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন নম্বর- এসব কিছুই থাকবে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো অত্যাবশ্যক। আবার অনেক সময় বিদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে মূল ট্রান্সক্রিপ্ট না পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন দ্বারা সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়। আজকের লেখায় ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর বিস্তারিত পদ্ধতি ও পরবর্তী লেখায় তা সত্যায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন
ট্রান্সপ্রিপ্ট ওঠানোর জন্য যে কাগজপত্রগুলো আগে থেকেই জোগাড় করে ফটোকপি করে সত্যায়িত করে রাখতে হবেঃ
১। বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র
২। পরিচয় এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
৩। কলেজ/ ইনস্টিটিউট/বিভাগ বা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে প্রাপ্ত প্রতি বছরের নম্বরপত্র বা গ্রেডশিট। চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার নম্বরপত্র/গ্রেডশিট রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর নম্বরপত্রী শাখা প্রদান করে থাকে।
৪। সম্পূর্ণ ডিগ্রির সিলেবাসের কপি
উল্লেখ্য, এসএসসির সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের দিয়ে সত্যায়িত করাতে পারেন। প্রতি বছরের নম্বরপত্র এবং সিলেবাসের কপি সত্যায়িত না করালেও চলে কিন্তু হঠাৎ করে সত্যায়িত করা কপিও চেয়ে বসতে পারে। তাই নম্বরপত্র বা সিলেবাস নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষক/ কলেজের অধ্যাপক/বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত করিয়ে রাখা শ্রেয়।
এবার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ দৌড়াদৌড়ি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ হলো ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন। এই কক্ষ থেকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে ট্রান্সক্রিট উত্তোলনের ফরম নিতে হবে। কক্ষের দরজায় উপরে বর্ণিত নিয়মাবলী দেয়া রয়েছে। ফরমটির কয়েকটি পৃষ্ঠা রয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম পৃষ্ঠাটি পূরণ করতে হবে। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলো পূরণ করার প্রয়োজন নেই। উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সাথে থাকলে তখনই ফরমটি পূরণ করে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে দিতে পারবেন। তখন সংযুক্ত কাগজপত্র নিরীক্ষা করে তিনি কত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে তা ফরমের ওপরে লিখে দেবেন। প্রতি কপি ট্রান্সক্রিপ্টের মূল্য ৪০০ টাকা। ইম্প্রুভমেন্ট অথবা রেফার্ড থাকলে প্রতিটি ইম্প্রুভমেন্ট বা রেফার্ডের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট একত্রে তুলতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স বা অন্য ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট আলাদা তুলতে চাইলে শুরুতেই একাধিক ফরম নিতে হবে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত মেডিকেল কলেজের/ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস, এমফিল, এমএস, এফসিপিএস ডিগ্রির আলাদা ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে হবে। সেজন্য প্রতিটি ডিগ্রির জন্য আলাদা ফরম নিতে হবে। বিদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত খামও নিতে হয়। সেটির মূল্য ৪০০ টাকা।
ফরমের ওপর খামসহ মোট টাকার পরিমাণ লিখে দিলে তা নিয়ে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার সময় টাকার অংক লেখা ফরম অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। ডিপোজিট স্লিপে নাম, ঠিকানা, কি বাবদ টাকা জমা দিতে হচ্ছে (এক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপ্ট) তা লিখতে হবে। টাকা জমা দেয়ার পর ব্যাংকের স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে দিলে এই পে-স্লিপ নিয়ে আবারো রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ৩০৫ নম্বর কক্ষে যেতে হবে। সেখানে ফরম ও পে স্লিপ প্রদর্শন করলে তারা স্লিপের পেছনে ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের একটি তারিখ লিখে দেবে (সাধারণত ২০ দিন থেকে ৩০ দিন পর)। এরপর ফরমটি একটি বাক্সে রেখে দিয়ে হলুদ রঙের স্লিপটি সাথে নিয়ে আসতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ছবি: টিএসসি
স্লিপে লেখা তারিখে সকাল সকাল ৩০৫ নম্বর কক্ষে চলে যেতে হবে। স্লিপ দেখালে তারা খসড়া ট্রান্সক্রিপ্ট বের করে দিবে। এরপর বসে বসে চেক করে দেখতে হবে কোনো ভুল আছে কিনা। ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। চেক করা শেষ হলে কম্পিউটার অপারেটরের পাশে বসে তা কম্পিউটারে অবস্থিত সফট কপিতে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। সংশোধন সম্পন্ন হলে তারা ট্রান্সক্রিপ্টের সংশোধিত কপি ওখানেই প্রিন্ট দিয়ে বের করে দিবে। এরপর তারা বিকেল ৪ টার দিকে আসতে বলবে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের জন্য। ৪ টার দিকে গিয়ে প্রতি পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর আছে কিনা তা চেক করে ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করার সময় একটি রেজিস্ট্রার খাতায় তারা আপনার স্বাক্ষর নেবে এবং রেজিস্ট্রার খাতার একটি সিরিয়াল নম্বর ট্রান্সক্রিপ্টের প্রথম পৃষ্টার নিচে বাম দিকে DUTN এর পাশে লিখে দেবে।
উল্লেখ্য, জরুরি ভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে চাইলে প্রথম ফরম গ্রহণের সময়েই তা বলতে হবে এবং প্রতি কপির জন্য অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে জমা দিতে হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: dutimz এবং somewhereinblog
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন
ট্রান্সপ্রিপ্ট ওঠানোর জন্য যে কাগজপত্রগুলো আগে থেকেই জোগাড় করে ফটোকপি করে সত্যায়িত করে রাখতে হবেঃ
১। বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র
২। পরিচয় এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
৩। কলেজ/ ইনস্টিটিউট/বিভাগ বা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে প্রাপ্ত প্রতি বছরের নম্বরপত্র বা গ্রেডশিট। চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার নম্বরপত্র/গ্রেডশিট রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর নম্বরপত্রী শাখা প্রদান করে থাকে।
৪। সম্পূর্ণ ডিগ্রির সিলেবাসের কপি
উল্লেখ্য, এসএসসির সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের দিয়ে সত্যায়িত করাতে পারেন। প্রতি বছরের নম্বরপত্র এবং সিলেবাসের কপি সত্যায়িত না করালেও চলে কিন্তু হঠাৎ করে সত্যায়িত করা কপিও চেয়ে বসতে পারে। তাই নম্বরপত্র বা সিলেবাস নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষক/ কলেজের অধ্যাপক/বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত করিয়ে রাখা শ্রেয়।
এবার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ দৌড়াদৌড়ি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ হলো ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন। এই কক্ষ থেকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে ট্রান্সক্রিট উত্তোলনের ফরম নিতে হবে। কক্ষের দরজায় উপরে বর্ণিত নিয়মাবলী দেয়া রয়েছে। ফরমটির কয়েকটি পৃষ্ঠা রয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম পৃষ্ঠাটি পূরণ করতে হবে। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলো পূরণ করার প্রয়োজন নেই। উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সাথে থাকলে তখনই ফরমটি পূরণ করে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে দিতে পারবেন। তখন সংযুক্ত কাগজপত্র নিরীক্ষা করে তিনি কত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে তা ফরমের ওপরে লিখে দেবেন। প্রতি কপি ট্রান্সক্রিপ্টের মূল্য ৪০০ টাকা। ইম্প্রুভমেন্ট অথবা রেফার্ড থাকলে প্রতিটি ইম্প্রুভমেন্ট বা রেফার্ডের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট একত্রে তুলতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স বা অন্য ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট আলাদা তুলতে চাইলে শুরুতেই একাধিক ফরম নিতে হবে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত মেডিকেল কলেজের/ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস, এমফিল, এমএস, এফসিপিএস ডিগ্রির আলাদা ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে হবে। সেজন্য প্রতিটি ডিগ্রির জন্য আলাদা ফরম নিতে হবে। বিদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত খামও নিতে হয়। সেটির মূল্য ৪০০ টাকা।
ফরমের ওপর খামসহ মোট টাকার পরিমাণ লিখে দিলে তা নিয়ে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার সময় টাকার অংক লেখা ফরম অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। ডিপোজিট স্লিপে নাম, ঠিকানা, কি বাবদ টাকা জমা দিতে হচ্ছে (এক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপ্ট) তা লিখতে হবে। টাকা জমা দেয়ার পর ব্যাংকের স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে দিলে এই পে-স্লিপ নিয়ে আবারো রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ৩০৫ নম্বর কক্ষে যেতে হবে। সেখানে ফরম ও পে স্লিপ প্রদর্শন করলে তারা স্লিপের পেছনে ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের একটি তারিখ লিখে দেবে (সাধারণত ২০ দিন থেকে ৩০ দিন পর)। এরপর ফরমটি একটি বাক্সে রেখে দিয়ে হলুদ রঙের স্লিপটি সাথে নিয়ে আসতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ছবি: টিএসসি
স্লিপে লেখা তারিখে সকাল সকাল ৩০৫ নম্বর কক্ষে চলে যেতে হবে। স্লিপ দেখালে তারা খসড়া ট্রান্সক্রিপ্ট বের করে দিবে। এরপর বসে বসে চেক করে দেখতে হবে কোনো ভুল আছে কিনা। ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। চেক করা শেষ হলে কম্পিউটার অপারেটরের পাশে বসে তা কম্পিউটারে অবস্থিত সফট কপিতে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। সংশোধন সম্পন্ন হলে তারা ট্রান্সক্রিপ্টের সংশোধিত কপি ওখানেই প্রিন্ট দিয়ে বের করে দিবে। এরপর তারা বিকেল ৪ টার দিকে আসতে বলবে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের জন্য। ৪ টার দিকে গিয়ে প্রতি পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর আছে কিনা তা চেক করে ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করার সময় একটি রেজিস্ট্রার খাতায় তারা আপনার স্বাক্ষর নেবে এবং রেজিস্ট্রার খাতার একটি সিরিয়াল নম্বর ট্রান্সক্রিপ্টের প্রথম পৃষ্টার নিচে বাম দিকে DUTN এর পাশে লিখে দেবে।
উল্লেখ্য, জরুরি ভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে চাইলে প্রথম ফরম গ্রহণের সময়েই তা বলতে হবে এবং প্রতি কপির জন্য অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে জমা দিতে হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: dutimz এবং somewhereinblog
Labels:
How To,
Informative,
কীভাবে করবেন,
ট্রান্সক্রিপ্ট,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
মার্কশিট,
রেজিস্ট্রার বিল্ডিং,
সত্যায়ন
Monday, March 10, 2014
আমার শহুরে ছেলেবেলা-২
আমাদের ঢাকা শহরে কাকডাকা ভোর নামতো। এখনো গাড়িডাকা ভোর নামে। যাই হোক, কাকডাকা ভোরে কাকের ডাকে প্রথম উঠতাম। আলসেমি করে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে দিতে মা চূড়ান্তভাবে ওঠাতেন। গ্রামের বালক বা কিশোরের মতো ঠান্ডা পানিতে হাতমুখ ধুতে হতো না। মা পানি গরম করে রাখতেন। পান্তা ভাত খাওয়ার সুযোগ ছিল না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার সন্তান হিসেবে আটা রুটি, আলুভাজি অথবা ডিমভাজি খেতে হতো নাস্তায়। ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবারে হতো ‘ইম্প্রুভ ডায়েট’। পরোটা, আলুভাজি বা ডিমভাজি আর ডেজার্ট হিসেবে সুজি। নাস্তা খুব আয়েশ করে খাওয়ার অবকাশ ছিল না। স্পাইডারম্যান, মোগলী অথবা জনি কোয়েস্ট দেখতে দেখতে নাকেমুখে কোনোক্রমে নাস্তা গোঁজা হতো।
দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফিরে গ্রামীণ কিশোরের মতো পুকুরে ঝাঁপ দিতাম না। ঢাকা ওয়াসার বালতি অথবা ড্রামভরা পানি দিয়ে গোসল সারতাম। খেয়ে দেয়ে অপেক্ষা করতাম আসরের আযানের জন্যে। আসরের আযান দিলে নিউ মার্কেট থেকে ৬০ টাকা দিয়ে কেনা ক্যাপটা মাথায় চাপিয়ে খেলতে নামতাম। খেলার বর্ণনা আগেই দিয়ে ফেলেছি অবশ্য। আমার খেলার সাথীরা ছিল অদ্ভুত। কেউ আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় আবার কেউ হয়তো ৪ বছরের ছোট। সবাই সবাইকে অবলীলায় তুমি তুমি করে নাম ধরে ডাকতো। আমাদের টিমে কখনো কখনো ‘অতিথি খেলোয়াড়’ হিসেবে স্থানীয় বস্তি থেকে ছেলেরা আসতো। কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ছিল না কোনো কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন। ডিশের সংযোগ বিহীন টিভিতে বিটিভিই ছিল ভরসা। রবিবারে হতো ধারাবাহিক নাটক আর সোমবারে হতো প্যাকেজ নাটক। মঙ্গলবারে হয়তো প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদের কোনো ধারাবাহিক নাটক থাকতো। তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করে রাত নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত নাটক দেখা চাই। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে হতো না তখনকার নাটক। মনে আছে, হূমায়ুন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক যেদিন হতো সেদিন পাড়ায় চুরি হতো সবচেয়ে বেশি। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তখনকার গায়ে সইষ্যার তেলমাখা থ্রি কোয়ার্টারস প্যান্ট পরা চোরেরা বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের জামাকাপড় চুরি করতো। রাত সাড়ে দশটার পড়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হতাম সপরিবারে। সপরিবারে রাতে হাঁটতে বের হওয়ার একটা ঐতিহ্য তখন ছিল। আর লোডশেডিং মানে অবধারিতভাবে রাস্তায় হাওয়া খেতে বের হওয়া থুক্কু বন্ধুদের সাথে আরেক দফা হৈ চৈ আড্ডা।
আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে এভাবে আমাদের শহুরে শৈশব এবং কৈশোরের দিনগুলো পার হতে লাগলো। হরতালে রাস্তায় ইট গেঁড়ে আর কোনো কোনো মৌসুমে পাড়ার বড় ছাদওয়ালা বাড়ির ছেলেটার ছাদে ক্রিকেট খেলার ধুম পড়তো। শীতের ছুটিতে হতো টেস্ট ম্যাচ। সকালে এক ইনিংস আর বিকেলে আরেক ইনিংস। যথারীতি ফলো অন এবং এলবিডব্লিউ বলে কিছু ছিল না সেই খেলাগুলোতে। ছাদের বাইরে বল গেলে সবচেয়ে বড় আউট। আমার কৈশোরের এই খেলাময় দিনগুলোতে ভাঁটা পড়ে যখন আজিমপুর ছেড়ে ধানমন্ডিতে চলে আসি। হঠাৎ করে খেলার সাথীদের হারিয়ে ফেলে একা হয়ে যাই। বেশ বড়সড় একটা নিঃসঙ্গ সময় পার করে অবশেষে আবারো রাস্তায় আমাদের খেলাধুলা শুরু হয়। এলাকার স্থানীয় ছেলেপেলে এবং ড্রাইভাররা একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হরতালের দিনগুলোতে ক্রিকেট খেলতো তখন ধানমন্ডিতে। মাঝে মাঝে এই গলির সাথে ঐ গলির সাকিব আল হাসানদের ‘চ্যালেঞ্জ ম্যাচ’ হতো।
সন্ধ্যার পরে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে পড়তাম তিন গোয়েন্দা। তিন গোয়েন্দা পড়তে পড়তে এক সময় ধরলাম হূমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল। মনে পড়ে, অর্ধ-বার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষা কিছুই আমার তিন গোয়েন্দা বা হূমায়ুন আহমেদ পড়ায় ছেদ ঘটাতে পারতো না। রাত জেগে টর্চের আলোতে তিন গোয়েন্দা শেষ করেছি কত। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়োও চলেছে বেশ। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ তখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল ফোন আর প্রযুক্তির হাবিজাবি এসব ছিল না। আমার শৈশব আর কৈশোরটা হয়তো গ্রামীণ শিশু বা কিশোরের মতো খুব দাপুটে যায় নি কিন্তু ঢাকা শহরের বুকে যতটা দস্যিগিরি করা যায় ততটাই করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রাণের শহরের সমস্যা-সুবিধা সবগুলোকেই আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে খুব অভাববোধ করি সহজ-সরল, প্রযুক্তিহীন অথচা আবেগে ভরপুর সেদিনগুলোর। আর তাই তো প্রায়ই হারিয়ে যাই আজিমপুরের ছেলেবেলার সেই দিনগুলোতে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: beauty-places.com
দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফিরে গ্রামীণ কিশোরের মতো পুকুরে ঝাঁপ দিতাম না। ঢাকা ওয়াসার বালতি অথবা ড্রামভরা পানি দিয়ে গোসল সারতাম। খেয়ে দেয়ে অপেক্ষা করতাম আসরের আযানের জন্যে। আসরের আযান দিলে নিউ মার্কেট থেকে ৬০ টাকা দিয়ে কেনা ক্যাপটা মাথায় চাপিয়ে খেলতে নামতাম। খেলার বর্ণনা আগেই দিয়ে ফেলেছি অবশ্য। আমার খেলার সাথীরা ছিল অদ্ভুত। কেউ আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় আবার কেউ হয়তো ৪ বছরের ছোট। সবাই সবাইকে অবলীলায় তুমি তুমি করে নাম ধরে ডাকতো। আমাদের টিমে কখনো কখনো ‘অতিথি খেলোয়াড়’ হিসেবে স্থানীয় বস্তি থেকে ছেলেরা আসতো। কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ছিল না কোনো কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন। ডিশের সংযোগ বিহীন টিভিতে বিটিভিই ছিল ভরসা। রবিবারে হতো ধারাবাহিক নাটক আর সোমবারে হতো প্যাকেজ নাটক। মঙ্গলবারে হয়তো প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদের কোনো ধারাবাহিক নাটক থাকতো। তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করে রাত নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত নাটক দেখা চাই। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে হতো না তখনকার নাটক। মনে আছে, হূমায়ুন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক যেদিন হতো সেদিন পাড়ায় চুরি হতো সবচেয়ে বেশি। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তখনকার গায়ে সইষ্যার তেলমাখা থ্রি কোয়ার্টারস প্যান্ট পরা চোরেরা বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের জামাকাপড় চুরি করতো। রাত সাড়ে দশটার পড়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হতাম সপরিবারে। সপরিবারে রাতে হাঁটতে বের হওয়ার একটা ঐতিহ্য তখন ছিল। আর লোডশেডিং মানে অবধারিতভাবে রাস্তায় হাওয়া খেতে বের হওয়া থুক্কু বন্ধুদের সাথে আরেক দফা হৈ চৈ আড্ডা।
আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে এভাবে আমাদের শহুরে শৈশব এবং কৈশোরের দিনগুলো পার হতে লাগলো। হরতালে রাস্তায় ইট গেঁড়ে আর কোনো কোনো মৌসুমে পাড়ার বড় ছাদওয়ালা বাড়ির ছেলেটার ছাদে ক্রিকেট খেলার ধুম পড়তো। শীতের ছুটিতে হতো টেস্ট ম্যাচ। সকালে এক ইনিংস আর বিকেলে আরেক ইনিংস। যথারীতি ফলো অন এবং এলবিডব্লিউ বলে কিছু ছিল না সেই খেলাগুলোতে। ছাদের বাইরে বল গেলে সবচেয়ে বড় আউট। আমার কৈশোরের এই খেলাময় দিনগুলোতে ভাঁটা পড়ে যখন আজিমপুর ছেড়ে ধানমন্ডিতে চলে আসি। হঠাৎ করে খেলার সাথীদের হারিয়ে ফেলে একা হয়ে যাই। বেশ বড়সড় একটা নিঃসঙ্গ সময় পার করে অবশেষে আবারো রাস্তায় আমাদের খেলাধুলা শুরু হয়। এলাকার স্থানীয় ছেলেপেলে এবং ড্রাইভাররা একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হরতালের দিনগুলোতে ক্রিকেট খেলতো তখন ধানমন্ডিতে। মাঝে মাঝে এই গলির সাথে ঐ গলির সাকিব আল হাসানদের ‘চ্যালেঞ্জ ম্যাচ’ হতো।
সন্ধ্যার পরে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে পড়তাম তিন গোয়েন্দা। তিন গোয়েন্দা পড়তে পড়তে এক সময় ধরলাম হূমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল। মনে পড়ে, অর্ধ-বার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষা কিছুই আমার তিন গোয়েন্দা বা হূমায়ুন আহমেদ পড়ায় ছেদ ঘটাতে পারতো না। রাত জেগে টর্চের আলোতে তিন গোয়েন্দা শেষ করেছি কত। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়োও চলেছে বেশ। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ তখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল ফোন আর প্রযুক্তির হাবিজাবি এসব ছিল না। আমার শৈশব আর কৈশোরটা হয়তো গ্রামীণ শিশু বা কিশোরের মতো খুব দাপুটে যায় নি কিন্তু ঢাকা শহরের বুকে যতটা দস্যিগিরি করা যায় ততটাই করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রাণের শহরের সমস্যা-সুবিধা সবগুলোকেই আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে খুব অভাববোধ করি সহজ-সরল, প্রযুক্তিহীন অথচা আবেগে ভরপুর সেদিনগুলোর। আর তাই তো প্রায়ই হারিয়ে যাই আজিমপুরের ছেলেবেলার সেই দিনগুলোতে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: beauty-places.com
Saturday, March 8, 2014
আমার শহুরে ছেলেবেলা
আমার জীবনে কোনো গ্রাম ছিল না। আমার বিদ্যালয়ের পেছন দিয়ে কোনো নদী কুলু কুলু ধ্বণি তুলে বয়ে যেত না। আমি আপাদমস্তক শহুরে লোক। শহুরে মানে একদম মেট্রোপলিটন সিটির বাসিন্দা। গ্রামের পথ ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া, গ্রীষ্মের দুপুরে পুকুরে দাপাদাপি করা, আম-কাঁঠালের ছুটিতে মামাবাড়ি যাওয়ার সুযোগ আমার জীবনে ছিল না। “ছায়া সুবিবিড়, শান্তির নীড়, আমাদের গ্রামগুলি”- এটি বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের রচনা অংশের ‘পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক রচনাতেই দেখে এসেছি। বাস্তবে অবলোকন করার খুব বেশি সুযোগ হয় নি। নিজের দাদা বাড়িতে গিয়েছি মাত্র একবার। গ্রামের ঠিকানা আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে একটু ঘাবড়ে যেতে হয়। ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারি না। ঐ যে বললাম, আমি আপাদমস্তক ঢাকা শরের বাসিন্দা। আমার বাল্যকাল কেটেছে আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে। খালি পায়ে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে বিদ্যালয়ে গমন করিনি। এলাকার বিদ্যালয়ের বেলি কেডস পরে গিয়েছি। যাত্রাপথে শালিক-চড়ুই, বাঁশঝাড় পার হতে হয় নি। বরং রিকশা, টেম্পু, বেবি ট্যাক্সির ভেঁপুর শব্দ শুনতে শুনতে নর্দমার ধার দিয়ে ফুটপাত দিয়ে চলতে হয়েছে। ধানক্ষেতের আইল ধরে পথ চলতে পারি নি কিন্তু মেট্রোপলিটন সিটির সুসজ্জিত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ধানক্ষেতের সেই চালের বস্তা আমি দেখেছি। আমার শরীরে তাই মাটির গন্ধ নেই। ধোঁয়ার গন্ধে ভরপুর। এই ধোঁয়া গাড়ির ধোঁয়া, এই ধোঁয়া কল-কারখানার ধোঁয়া।
[caption id="attachment_2242" align="aligncenter" width="600"] Dhaka. Source: http://internsanonymous.co.uk/category/charity/[/caption]
বিশাল মাঠে জাম্বুরা দিয়ে গ্রাম্য বালকের মতো কাঁদায় হুটোপুটি খেয়ে ফুটবল খেলার সৌভাগ্য ছিল না। চিকন গলিতে টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল। প্রতি দুই পর পর সেই বলখানা ড্রেনে গিয়ে পড়তো। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না। মাটিতে জোরে আছাড় মারলেই ড্রেনের কালোপানিসিক্ত ওসাকা টেপমারা বলখানা সুন্দর লাল হয়ে যেত। গ্রামের বালকের মতো লুঙ্গি পরে আমরা খেলতাম না। আমাদের পরণে থাকতে ঢাকা কলেজের উল্টাদিকের ফুটপাতের হাফপ্যান্ট। পায়ে থাকতো লাইটিং কেডস। গলিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতে এক সময় আবিষ্কার করলাম আমরা কেউ ডানে-বাঁয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারি না। ছক্কা-চার সব সামনের দিকেই মারতে পারি। কারণ, আমাদের গলিতে যে ডানে-বাঁয়ে কোনো জায়গা ছিল না, ছিল শুধু ড্রেন। যেদিন ক্রিকেট খেলা হতো না সেদিন হয়তো লুকোচুরি খেলা হতো। বনে-বাঁদাড়ে লুকোবার সুযোগ ছিল না। আমরা লুকাতাম উচ্চতল ভবনের সানশেডে, গ্যারেজে বা বাড়ির দারোয়ানের ঘরের চিপাতে। এভাবে লুকোচুরি আর ক্রিকেট খেলতে খেলতে আবিষ্কার করলাম আমরা হাডুডু, কাবাডি, সাতচারা খেলি না। আমরা খেলি বোম বাস্টিং। যেদিন ব্যাটয়ালা ছেলেটা আসে না সেদিন আমরা ব্যাটের অভাবে খেলা বন্ধ রাখি না। টেপ টেনিস দিয়ে বোম বাস্টিং খেলি। যার হাতে বল থাকে সে গায়ের জোরে অন্যের দিকে তা ছুঁড়ে মারে। হাতে-পায়ে-পিঠে বল লেগে গা জ্বলে যায়, লাল হয়ে যায় শরীর। নৃশংস, নিষ্ঠুর এই খেলা চলতে থাকে ঠিক মাগরিবের আযান পর্যন্ত। মাগরিবের আযান আমাদের সূর্যাস্ত আইনের কথা মনে করিয়ে দিত। বাসায় ফিরে চাপকলের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে আমরা হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতাম না। আমাদের ছিল প্লাস্টিকের কল আর পড়ার জন্য ছিল টিউবলাইট। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে গ্রাম্য কিশোরের মতো মাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হতো না। বৈদ্যুতিক পাখাটা মাথার ওপর ঘটাং ঘটাং করে ঘুরতো। বেশি গরম পড়লে স্ট্যান্ড ফ্যানটাও ছাড়া হতো। বইখাতা সব উড়ে যেত তখন। একটু পরে শুরু হতো লোডশেডিং। না, হারিকেন লাগতো না তখনো। মোমবাতির দিনও ফুরিয়ে এসেছিল তখন। স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কেনা ন্যাশনাল চার্জার লাইটে চলতো পড়াশুনা। না, গ্রামীণ বালকের মতো ৮ টায় আমাদের জীবনে নিশুতি রাত নামতো না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তাম না আমরা। মেট্রোপলিটন শহরের খাস বাসিন্দা হিসেবে ভাত খাওয়া হতো রাত ১১ টায়। ৯টা থেকে শুরু হতো ম্যাকগাইভার, রোবোকপ বা রবিনহুড দেখা। শুতে শুতে বাজতো সেই সাড়ে ১১ টা। ভোরবেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙত না আমার। আমার ঘুম ভাঙাতো ঢাকা শহরের কাকেরা।
(চলবে)
ছবি কৃতজ্ঞতা: risingbd
[caption id="attachment_2242" align="aligncenter" width="600"] Dhaka. Source: http://internsanonymous.co.uk/category/charity/[/caption]
বিশাল মাঠে জাম্বুরা দিয়ে গ্রাম্য বালকের মতো কাঁদায় হুটোপুটি খেয়ে ফুটবল খেলার সৌভাগ্য ছিল না। চিকন গলিতে টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল। প্রতি দুই পর পর সেই বলখানা ড্রেনে গিয়ে পড়তো। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না। মাটিতে জোরে আছাড় মারলেই ড্রেনের কালোপানিসিক্ত ওসাকা টেপমারা বলখানা সুন্দর লাল হয়ে যেত। গ্রামের বালকের মতো লুঙ্গি পরে আমরা খেলতাম না। আমাদের পরণে থাকতে ঢাকা কলেজের উল্টাদিকের ফুটপাতের হাফপ্যান্ট। পায়ে থাকতো লাইটিং কেডস। গলিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতে এক সময় আবিষ্কার করলাম আমরা কেউ ডানে-বাঁয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারি না। ছক্কা-চার সব সামনের দিকেই মারতে পারি। কারণ, আমাদের গলিতে যে ডানে-বাঁয়ে কোনো জায়গা ছিল না, ছিল শুধু ড্রেন। যেদিন ক্রিকেট খেলা হতো না সেদিন হয়তো লুকোচুরি খেলা হতো। বনে-বাঁদাড়ে লুকোবার সুযোগ ছিল না। আমরা লুকাতাম উচ্চতল ভবনের সানশেডে, গ্যারেজে বা বাড়ির দারোয়ানের ঘরের চিপাতে। এভাবে লুকোচুরি আর ক্রিকেট খেলতে খেলতে আবিষ্কার করলাম আমরা হাডুডু, কাবাডি, সাতচারা খেলি না। আমরা খেলি বোম বাস্টিং। যেদিন ব্যাটয়ালা ছেলেটা আসে না সেদিন আমরা ব্যাটের অভাবে খেলা বন্ধ রাখি না। টেপ টেনিস দিয়ে বোম বাস্টিং খেলি। যার হাতে বল থাকে সে গায়ের জোরে অন্যের দিকে তা ছুঁড়ে মারে। হাতে-পায়ে-পিঠে বল লেগে গা জ্বলে যায়, লাল হয়ে যায় শরীর। নৃশংস, নিষ্ঠুর এই খেলা চলতে থাকে ঠিক মাগরিবের আযান পর্যন্ত। মাগরিবের আযান আমাদের সূর্যাস্ত আইনের কথা মনে করিয়ে দিত। বাসায় ফিরে চাপকলের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে আমরা হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতাম না। আমাদের ছিল প্লাস্টিকের কল আর পড়ার জন্য ছিল টিউবলাইট। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে গ্রাম্য কিশোরের মতো মাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হতো না। বৈদ্যুতিক পাখাটা মাথার ওপর ঘটাং ঘটাং করে ঘুরতো। বেশি গরম পড়লে স্ট্যান্ড ফ্যানটাও ছাড়া হতো। বইখাতা সব উড়ে যেত তখন। একটু পরে শুরু হতো লোডশেডিং। না, হারিকেন লাগতো না তখনো। মোমবাতির দিনও ফুরিয়ে এসেছিল তখন। স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কেনা ন্যাশনাল চার্জার লাইটে চলতো পড়াশুনা। না, গ্রামীণ বালকের মতো ৮ টায় আমাদের জীবনে নিশুতি রাত নামতো না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তাম না আমরা। মেট্রোপলিটন শহরের খাস বাসিন্দা হিসেবে ভাত খাওয়া হতো রাত ১১ টায়। ৯টা থেকে শুরু হতো ম্যাকগাইভার, রোবোকপ বা রবিনহুড দেখা। শুতে শুতে বাজতো সেই সাড়ে ১১ টা। ভোরবেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙত না আমার। আমার ঘুম ভাঙাতো ঢাকা শহরের কাকেরা।
(চলবে)
ছবি কৃতজ্ঞতা: risingbd
Subscribe to:
Posts (Atom)