Showing posts with label Travel. Show all posts
Showing posts with label Travel. Show all posts

Friday, July 4, 2014

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-২

বেনাপোল সীমান্ত এক মাছের বাজার। প্রথমে বাস নিয়ে নামালো এক কাউন্টারে। সেখানে এক ছ্যামড়া এসে আমাদের টিকেট দেখতে চাইলো। টিকেট দেখানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের গেঞ্জিতে ধাম ধাম করে গ্রীণ লাইন স্ক্যানিয়া লেখা স্টিকার লাগিয়ে দিলো। অতঃপর আরেকটা ছোট বাসে করে আমরা গ্রীণ লাইনের আরেক কাউন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে গ্রীণ লাইনের লোকজন আমাদের ডিএম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো। সেই সাথে পাসপোর্ট এবং ৩০০ করে টাকা নিলো ট্রাভেল ট্যাক্সের। সত্যি কথা বলতে সীমান্ত পার হতে তারা খুবই উপকার করলো। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের জায়গাটাতে প্রবেশ করতেই কাস্টমসের লোকজন খুব ব্যাগ খুলতে চাইলো। কিন্তু আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক একজন গ্রীণ লাইনের লোক ছিল। সে গ্রীণ লাইন বলতেই সব ক্লিয়ার। এর মধ্যে আরেকজন এসে ট্যাক্সের রশিদ এবং পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন ক্রস করে গ্রীণ লাইনের লোকের সাথেই হেঁটে সীমান্ত পার হলাম আমরা। এই সময়টা একটু বিপদজনক। দালালরা ছোঁক ছোঁক করতে থাকে টাকা খাওয়ার জন্য। অপরপ্রান্তে যাওয়ার পর আমাদের পাসপোর্ট দেখে দেখে ভারত সরকারের এম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো ভারতীয় গ্রীণ লাইনের এক চাচা। অতঃপর আমরা ভারতের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে ‘দাদা’, ‘দাদা’ শুনতে পাচ্ছি প্রচুর। প্রকৃতি পুরোই বাংলাদেশের কিন্তু যেখানে যেখানে মানুষ হাত লাগিয়েছে সেখানেই বাংলাদেশের চেয়ে পার্থক্য চোখে পড়ছে। লেখার ফন্ট, বাংলা বাক্য গঠনের ধরণ সবই আলাদা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন শেষ হলো। বের হয়ে টং দোকান দেখলাম কতগুলো। পুরোই বাংলাদেশি টং কিন্তু প্রতিটা পণ্য আলাদা। সেটাই স্বাভাবিক। ভাবতেই পারছিলাম না ভারতে প্রবেশ করে ফেলেছি। এবারে ভারতীয় গ্রীণ লাইনে করে কোলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের চেয়ে ওদের বাসের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। যশোর রোড ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, পথ আর ফুরোয় না। মাঝে একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাস থামলো। হোটেলগুলো অদ্ভুত। হোটেল ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা দূরে তার বাথরুম। খেতে বসে কী খাবো তা চিন্তা করছিলাম। ওয়েটার দাদা দেখলাম বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন। শুনেছিলাম ভারতে খাবার সস্তা। তিনজন ভাত, মাছ, মাংস নেয়ার পর বিল আসলো ৪০০ রুপির মতো। তখনই জানতাম না, হোটেল নয়, সস্তা স্ট্রিট ফুড। অত্যন্ত বাজে স্বাদ। রান্নার ধরণই আলাদা। এ ধরণের রান্না খেয়ে আমরা অভ্যস্ত না। ক্ষুদার্ত ছিলাম তাই খেয়ে নিলাম। এরপর বাসে চেপে কোলকাতা যাত্রা। রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায়ই নেউ বাংলাদেশের বাইরে কোনো স্থান এটি। তবে কোলকাতা শহরে প্রবেশ করে পার্থক্য বোঝা গেল। রাস্তাঘাটে দোকানপাটের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড দেখে খুব মজা লাগলো। কেমন অদ্ভুতভাবে বাংলা লেখা। বিকেল ৫ টার কিছু পরে আমরা কোলকাতার মার্ক্যুইজ স্ট্রিটের গ্রীণ লাইনের কাউন্টারে নামলাম। অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘ যাত্রা।

street-in-front-of-the

DSC_1683[1]--621x414

গাট্টি-বোঁচকা পিঠে ঝুলিয়ে শুরু হলো আরেক কঠিন কাজ। হোটেল খোঁজা। বাসে সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দু’জন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনাদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের পরে। আমরা এক সাথেই হোটেল খুঁজতে বের হই। ২-৩ টি হোটেলে রুম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গী লেনের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে রুম খালি পাওয়া যায়। আমরা ৩ জন ডাবল বেড রুমে ৮৯০ রুপি ভাড়ার বিনিময়ে উঠি। আর উনারা ২ জন ডাবল বেড রুমে ৮০০ রুপিতে ওঠেন। রুমের অবস্থা মোটামুটি কিন্তু টয়লেটের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এ নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কিছুটা বিতণ্ডাও হয়। সবকিছু রফা হলে উঠে যাই রুমে। গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে সন্ধ্যা। এবারে আমরা ৩ বন্ধ বের হই নিউ মার্কেটের উদ্দেশে। হাতে তখন বেশ কিছু কাজ। দেশে কথা বলার জন্য সিম কার্ড কিনতে হবে। খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। বাস থেকে নামার পর কিছু সিম বিক্রেতা আমাদের যে অফার দিচ্ছিলো সে অফার পরে নিউ মার্কেটের আশেপাশে খুঁজে আমরা আর পাচ্ছিলাম না। অফারটি ছিল এরকম যে সিমের দাম ২০০ রুপি। সাথে ২০০ রুপি টক টাইম। অর্থাৎ, সিমটি ফ্রি। এ অফার খুঁজে না পেয়ে অবশেষে মাথাপিছু প্রায় ৩০০ রুপি খরচ করে সিম কিনি আমরা। এবারে আমার বন্ধুদের নিউ মার্কেটের দোকান ঘোরা আর আমার খাবার সন্ধানের পালা শুরু হয়।

(চলবে)

Tuesday, July 1, 2014

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-১

কোলকাতা আর দার্জিলিং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গত ২ জুন রাত ১১ টায় গ্রীনলাইন বাসে করে রওনা দিয়েছিলাম বেনাপোলের উদ্দেশে। পুরো ব্যাচ থেকে কোলকাতা, আগ্রা, দিল্লি ও কাশ্মীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। সে লক্ষ্যেই ভারতের ভিসা করানো হয়। কিন্তু শেষ মূহুর্তে উত্তর ভারত থেকে রেলের ফিরতি টিকেট না পাওয়া যাওয়া পিছিয়ে যায় ট্যুর। তাই আপাতত হাতের কাছের কোলকাতা ও দার্জিলিং এই সাধ মেটানোর পরিকল্পনা করি আমরা তিন বন্ধু। আমি, শ্রাবণ ও মিশু। ৭-১০ দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। আমি যেখানে জীবনেও কোনো কাজের জন্য কোনো প্রকার প্রস্তুতি নিই না, সেই আমি এ যাত্রা ছোটখাটো এক মহাপ্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললাম। দার্জিলিং এ নাকি তখন বৃষ্টির মৌসুম। দেরি না করে জুতার বাক্সে পড়ে থাকার রাবারের ছেঁড়া স্যান্ডেলটা সেলাই করে নিয়ে আসলাম। প্যান্ট সংকটে ভুগছিল ক’দিন ধরেই। বিদেশ-বিভূঁইয়ে গিয়ে প্যান্ট সংক্রান্ত আপদ থেকে মুক্তি পেতে দু’খানা প্যান্ট খরিদ করলাম ধানমন্ডির বিগ বস থেকে। আমি যেহেতু ঘাড়ে-গর্দানে বিগ বস সেহেতু সহজে নিউ মার্কেট এলাকায় আমার প্যান্ট পাওয়া যায় না আজকাল। বিগ বসেই ধরনা দিতে হয়। একটা গ্যাবার্ডিন আর একটা জিন্স। সবকিছু রেডি করে খেয়াল করলাম যাত্রাপথে কান খোঁচানো অতি জরুরি একটা কাজ। সেজন্য ফুটপাত থেকে দু’ প্যাকেট কটন বাড কিনে ফেললাম। কান খোঁচানোর সময়ে যে জাগতিক সুখ লাভ করা যায় তা যারা কান খোঁচাতে অভ্যস্ত তারা ভালোই জানেন।

বাসের টিকেট কাটা হয়েছিল যাত্রার দু’দিন আগে। ঢাকা থেকে বেনাপোল ১২০০ টাকা আর সীমান্ত পার হয়ে ওদিকে হরিদাসপুর থেকে কোলকাতা যাওয়ার জন্য গুনতে হবে আরো ২৮০ রুপি। টিকেট হাতে পাওয়ার পর আমার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মিশু উত্তেজনায় প্রত্যহ ৩-৪ বার ফোন দেয়া শুরু করে দিয়েছিল। ট্যুর উপলক্ষে সে একখানা বিরাট সাইজের লুঙ্গি খরিদ করেছে। বন্ধু-বান্ধবের সামনে কাপড় বদলানোর এর চেয়ে ভালো উপার আর কী আছে? আমি নিয়মিত লুঙ্গি পরি বিধায় লুঙ্গির সংকট আমার কখনই হয় না। আরেক বন্ধু শ্রাবণ বর্ষাতি কেনার জন্য চাংখারপুল ও বঙ্গবাজার এলাকায় টহল দেয়া শুরু করলো। ঐ এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো হোটেল আল-রাজ্জাকে দুপুরের খানা খাওয়া।

যাই হোক, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে পান্থপথের বাস কাউন্টারে হাজির হলাম। কিন্তু বাসের আর দেখা নেই। রাত ১১ টার বাস কাউন্টারে হাজির হলো ১ টায়। শুরুতেই ২ ঘন্টা দেরি। অতঃপর আমাদের সাধের ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। চলছি তো চলছিই। ভোর হওয়ার আগে আগে পৌঁছালাম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। আস্তে আস্তে বাস এগোচ্ছে। বিশাল লাইন। বাস থেকে হাঁটাহাঁটিও করলাম কিছুক্ষণ। এক সময় ফেরিতে উঠলাম। বেশ খিদে পেয়েছে ততক্ষণে। ফেরিতে কিছু খেয়ে পেট খারাপ হবে এ ভয়ে আর কিছু খাওয়া হলো না। ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটতে শুরু করলো। থাকতে না পেরে ১০ টাকার একটা জাম্বো ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আয়েশ করে খেতে খেতে ঘাটে নামলাম আমরা। এরপর আবারো যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। পথ আর ফুরোয় না। ফরিদপুর শেষ করে যশোরের কোনো এক বন্ধ পেট্রোল পাম্পের সামনে বাস গেল নষ্ট হয়ে। এসি বন্ধ। গরমে ঘামছি। কিছুক্ষণ পর ঘামের সাথে যোগ দিল বৃষ্টির পানি। এসি বাসের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে বাসে। বাসভর্তি যাত্রী গ্রীন লাইনকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। সুপারভাইজার সাহেব আশ্বাস দিলেন আরেকটি বাস আমাদের উদ্ধার করতে রওনা হয়েছে। সে বাসেরও দেখা নেই। ঘন্টাখানেক রাস্তার মাঝখানে বসে থেকে উদ্ধারকারী বাস হাজির হলো। আমরা ভিজে ভিজে বাস বদলালাম। নতুন বাসে যেতে যেতে যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে দু’টো দল তৈরি হলো। এক দল চায় খাওয়ার জন্য হোটেলে বাস থামাতে, আরেক দল বাস থামাতে নারাজ। অনেক দেরি হয়েছে, আর দেরি মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, তাদের সাথে গাট্টি-বোঁচকা ভর্তি খাবার। অবশেষে অনেক হৈ চৈ করে বাস একটা হোটেলের সামনে থামানো হলো। সে হোটেলে ঢুকে দেখা গেল তাদের চুলা বন্ধ। কোনো খাবার নেই। তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার অপর পাশে আরেকটু ছোট্ট গ্রামীণ হোটেলে রাবার গরুর মাংস দিয়ে আটা রুটি কোনোমতে নাকেমুখে গোঁজা হলো। এরপর বাসে চেপে একবারে বেনাপোল সীমান্তে।

Benapole-Port-

(চলবে)

Sunday, May 25, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৫ম ও শেষ পর্ব

মার্কেটে রাখাইনদের দোকান বলতে গেলে আর নেই। সব বাঙালিদের দখলে। আমরা খুঁজে খুঁজে রাখাইনদের দোকান খুঁজে বের করলাম। বড্ড ভালো লাগে তাদের দোকানে গেলে। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি বুঝে গিয়েছেন, খুলে বলতে হবে না। মার্কেট ঘোরা আমার খুব অপছন্দের কাজ। কিন্তু ভালোই লাগছিল সেখানে। রাখাইন দোকানীদের কথাবার্তা এতো সুন্দর। মন ভালো হয়ে যায়। জিনিসপত্র কিনে সোজা হোটেলে চলে গেলাম। সব কিছু রেখে পুনরায় চলে আসলাম লাবণী পয়েন্টে। সেখান কড়ি-টড়ি কেনা হবে। ঘুরে ঘুরে তাও কেনা হলো। এরপর অটোতে করে যাওয়া হলো মারমেইড ক্যাফেতে। তাদের অন্দরসজ্জা সুন্দর বিধায় যাওয়া হয়েছিল। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী। তিনটা লেমোনেড অর্ডার করা হলো। বসতে অসাধারণ লাগে। মেনুতে লেখা সব খাবারের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ এবং ৬ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। ভালো কথা। আমরা হিসাব করে ফেললাম কত টাকা বিল আসবে। লেমোনেড আসলো। বিল দিতে বললাম কেননা একটু তাড়াহুড়ো ছিল আমাদের। রাতের খাবার খেতে যেতে হবে। দেখলাম বিল এসেছে কাঙ্ক্ষিত টাকার চেয়ে ২ টাকা বেশি। পরে আমি আবিষ্কার করলাম তারা খাবারের দামের ওপর সার্ভিজ চার্জ আরোপ করেছে। এরপর সার্ভিস চার্জসহ মোট দামের ওপর আরোপ করেছে ভ্যাট। পুরা বাটপার। এখানেই শেষ নয়। ২৯৮ টাকা বিল এসেছে। ৫০০ টাকা দেয়ার পর ফেরত এনেছে ২০০ টাকা। ২ টাকা গায়েব। আমি তো অত সহজে ছাড়ার পাত্র নই। ওয়েটারকে ডেকে ২ টাকার কথা বললাম। আমার বন্ধুরা খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু ২ টাকা কম দিবে কেন? ২ টাকা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। রাতে খেলাম পউষীতেই। এবারে আমার বন্ধুরা নিলো একটা করে লইট্টা ফ্রাই আর একটা করে রূপচাঁদা। আমি লইট্টা ফ্রাইয়ের সাথে নিলাম গরুর ভুনা। সবগুলো খাবার স্বাদই অসাধারণ। ভরপেট খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় বিআরটিসি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

3577517

জিইসি মোড়

১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।

handi-restaurant orig_218bab8ebde8a5d8b90a00a8d5638a5082d25dfe

পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।

ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।

Saturday, May 24, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৪র্থ পর্ব

হিমছড়িতে পৌঁছেই ঝর্ণা খোঁজা শুরু করে দিলাম। দেখলাম ১৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢোকার গেইট হয়েছে। ঝর্ণা দেখার কম্পাউন্ডে ঢুকতে ২৩ টাকার টিকেট কিনতে হয়। ১৫ টাকা টিকেটের দাম আর বাকিটা ভ্যাট (ভ্যাট আর শান্তি দিলো না)। গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলাম তীর চিহ্ন দিয়ে বড় ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথ। ঝর্ণা সামনে গিয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে ঝর্ণা। চেনার কোনো উপায় নেই। ঝর্ণার উচ্চতা আমার চেয়ে একটু বেশি হবে। পাহাড় ভেঙে ঝর্ণা ছোট হয়ে গিয়েছে। ঝর্ণার উৎসের দিকে যাওয়াও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মিনি ঝর্ণায় একটু হাত-পা ভেজালাম। ক্যামেরা নেই, ছবি তোলা হলো না। স্থানীয় ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে মেমরি কার্ডে দিতে চাইলো, কিন্তু সে বস্তুও আমাদের সাথে নেই। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম। উঠছি তো উঠছি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। হাঁসফাঁস অবস্থা আমার! আর পারি না। মানুষজনও দেখি সব হাঁপাচ্ছে। প্রায় শেষ পর্যন্ত ওঠার পর একটা সমতল জায়গায় আমার বন্ধুরা ডাবের পানি পান করলো। খালি হাতে উঠতেই যেখানে খবর হয়ে যায় সেখানে ডাবওয়ালা কীভাবে প্রতিদিন একগাদা ডাব নিয়ে উঠে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আর পারছিলাম না উঠতে। আমার বন্ধুরা চূঁড়ায় উঠলো। আমি নেমে এসে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বালির বস্তার ওপর শুয়ে পড়লাম। বুক ভরে বাতাস নিলাম। হানিমুনে আসা নবদম্পতিদের আড়চোখে লক্ষ্য করলাম। তাদের আনন্দে আমিই যেন আনন্দিত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট একা একা খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম সাগড় পাড়ে। আকাশে তখন ঘন মেঘ। রোদের জন্যে তাকানোও যায় না ভালো করে। রোদ চশমাই ভরসা। এরমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে অটো স্ট্যান্ডে যেতে বললো। ইচ্ছে ছিল সাগর পাড়ে বসে এক গেলাস জুস পান করবো। সে সুযোগ না দিয়ে তারা ১২০ টাকায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ঠিক করে ফেললো। মনোরম পথ ধরে লাবণীতে পৌঁছালাম।

index

cms.somewhereinblog.net

এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।

(চলবে)

Wednesday, May 21, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৩য় পর্ব

কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনটা ছিল খুব কার্যকর। আগের পর্ব শেষ করেছিলাম সকালের নাস্তায়। সেখান থেকেই আজকের গল্প শুরু করছি। আমাদের ধারণা ছিল নাস্তা সেরে বাসায় গিয়ে দেখবো আমাদের ঘুমন্ত বন্ধু জেগে গোসল করে রেডি হয়ে থাকবে। কিন্তু না! সে তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে পাঠালাম। নিজেরাও আঁটতে থাকলাম পরবর্তী পরিকল্পনা। ঠিক হলো দুপুরে পউষী রেঁস্তোরায় খাবো। এটা নাকি কক্সবাজারের সেরা বাংলা খাবার রেঁস্তোরা। তিন বন্ধু ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে রিক্সা ঠিক করলাম। এক রিক্সায় তিনজন এবং সে তিনজনের ভেতরে আমিও আছি। যেখানে আমি একাই দু’ জনের সমান সেখানে রিক্সাওয়ালা কতটা সাহসী হলে আমাদের তিনজনকে নিতে রাজি হয়? ২০ টাকার বিনিময়ে সে শুধু আমাকেই না, আমার দু’ বন্ধুকেও বহন করতে রাজি হলো। রিক্সা চলছে তো চলছেই, আর পৌঁছাই না আমরা। আমাদের ধারণা ছিল না যে পউষী শহরের ভেতরে। ভেবেছিলাম যথারীতি সব রেঁস্তোরাই সৈকতের সাথে সমান্তরালে। পৌঁছাচ্ছি না দেখে এক সময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রিক্সাওয়ালা আমাদের অন্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না তো?? বেশ একটা সাসপেন্স। আমার চাঁটগাইয়া ফাজিল বন্ধু এরপর চাপাবাজি শুরু করলো। রিক্সায়ালাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো “আমরা যে কক্সবাজারে আসছি ওসি সাহেবকে জানানো হইসে তো”? আমি বললাম “হ্যাঁ সে-ই তো সব ব্যবস্থা করলো”। এরপর তার প্রশ্ন “এসপি সাহেব”। আমি দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম “স্যার সব জানেন”। এবার তিনগুণ ভাব নিয়ে আমার বন্ধুর প্রশ্ন “ম্যাগজির আর রিভলবার কি একসাথেই আছে?” আমার ততক্ষণে ফিচলা হাসি বের হয়ে গিয়েছে। যা হোক, ওসি সাহেবের ভয়েই কিনা জানি না আমরা খুব দ্রুত পউষীর সামনে এসে পৌঁছালাম। ঠিক তখনই আবিষ্কার হলো আমাদের আরেক বন্ধুর এক পায়ের স্যান্ডেল গায়েব। তিনজন ওঠায় এক পায়ের স্যান্ডেল খুলে সে পা উপরে রেখেছিল। পথিমধ্যে স্যান্ডেলখানা পড়ে গিয়েছে। এবার সে রিক্সা ঘুড়িয়ে স্যান্ডেল উদ্ধারে রওনা হলো। ওসি সাহেবের বিশেষ অতিথিরা অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলেও স্যান্ডেল উদ্ধার করতে সক্ষম। কেননা আমার বন্ধু আধা ঘন্টা পর মহানন্দে দাঁত বের করে স্যান্ডেল নিয়ে হাজির হলো। তদন্ত করে আবিষ্কার করা হলো যাত্রাপথের এক স্পিড ব্রেকারের ঝাঁকুনিই স্যান্ডেল ভাইয়াকে গুম করে দিয়েছিলেন।

old-front-of-the-restaurant

simple-layout-but-busy

পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে

পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।

31100961

হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড

১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম

Thursday, May 15, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ২য় পর্ব

সঙ্গীত চর্চা করতে করতে একেবারে কলাতলী পয়েন্টে চলে আসলাম আমরা। সেখান থেকে রিক্সা নেব না অটো নেব সে সিদ্ধান্থীনতায় কাটলো অনেকটা ক্ষণ। অতঃপর দু’টা রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের খাবারের সন্ধানে। কিছুটা দূরে বিধায় ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায় না গিয়ে হাঁটাপথে খাওয়ার হোটেল খুঁজতে লাগলাম। লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তি স্থানীয় জান্নাত হোটেলের কার্ড ধরিয়ে দিলেন। এতো ক্লান্ত বোধ করছিলাম যে ভালোমন্দ যাচাই না করে ঢুকে পড়লাম সেখানে। ওয়েটার বাবাজি অনেকক্ষণ পর হোটেলের বাইরে থেকে প্রবেশ করলেন। আমরা ছাড়া কোনো কাস্টমার নেই সেখানে। হিসাব-নিকাশ করে ডাল আর ভাতের সাথে অর্ডার করলাম ভর্তা-ভাজি। কক্সবাজার যখন এসেছি রূপচান্দা ফ্রাই যত দামই হোক, একটু চেখে দেখা দরকার সে আশায় অর্ডার করলাম। আকাশচুম্বী দাম। ৩০০ টাকা। ওয়েটার সাহেব বললেন রূপচান্দা আসতে দেরি হবে। কতক্ষণের জবাবে বললেন ১০ মিনিট। আমার চাটগাঁইয়া বন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, “১০ মিনিট মানে কি ১০ মিনিট?” এবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়েটার বললেন ইয়ে মানে ১৫ মিনিট। আমরা ভর্তা ভাজি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। টমেটো ভর্তাটা এখনও মুখে লেগে আছে। অন্যান্য আইটেম ততটা ভালো লাগে নি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর আসলো রূপচাঁদা। তিন জন মিলে সেটাকে নিমিষে সাবাড় করলাম। দাম মিটিয়ে হোটেলের পথে হাঁটা দিলাম।

cox-bazer-24

ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।

coxs-bazar-sunset-dhaka-city

আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।

বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।

(চলবে)

Monday, May 12, 2014

একটি চিরাচরিত 'ঘুরে এলাম অমুক জায়গা' টাইপ লেখা- ১ম পর্ব

পড়াশুনা শেষ। বেকার বন্ধুদের তালিকায় নাম লেখায় ফেললাম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। নো পরীক্ষা, নো ক্লাস, নো অ্যাসাইনমেন্ট। কই যাবো কই যাবো করতে করতে পান্থপথ এলাকার কোনো এক টং দোকানে চা (আসলে শরবত) খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কক্সবাজারেই যাবো। ইচ্ছা ছিল বান্দরবান বা সিলেট যাওয়ার। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার গাড়ি ভাড়া করে এখানে সেখানে যাওয়া সম্ভব না। অত টাকা মা-বাবার কাছ থেকে নেয়া সম্ভব না। বন্ধুর বাড়ি আবার চট্টগ্রাম। কক্সবাজার গেলে হোটেলে ট্যাকা দেয়া লাগবে না। “বন্ধুর মামার বন্ধুর” হোটেল। আর কী লাগে! বুধবার টিকেট কাইটা ফেললাম। বৃহস্পতিবার রাতে বাস।

বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে।  সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।

Coxs-bazar-the-worlds-Longest-Beach-22

Cox's Bazar, Beach

কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!

(চলবে)

Saturday, April 5, 2014

কীভাবে অনলাইনে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করবেন- ১ম পর্ব

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ভারত যেতে হতে পারে। চিকিৎসা, ভ্রমণ হলো সাধারণ কিছু কারণ। আর অনেকের তো বিয়ের কেনাকাটা কোলকাতা থেকে করতে না পারলে জীবনই বৃথা। এছাড়া অনেকের আত্মীয়-স্বজন আছে সে দেশে। আমাদের দেশের তিনদিকে ভারত হওয়ায় স্থলপথে নেপাল কিংবা ভুটান যেতে হলেও ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়। যেকোনো দেশের ভিসা পাওয়ার চেয়ে এখন ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যাওয়ার জন্য আবেদন করে থাকেন। এক সময় ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল নিতে হতো। এখন অনলাইনে আবেদন করে সাক্ষাতের তারিখ নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে ভারতের হাইকমিশনে হাজির হতে হয়। আজকে আলোচনা করবো কীভাবে অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় তা নিয়ে।

প্রথমেই http://indianvisaonline.gov.in/visa/ এই পেইজে গিয়ে Online Visa Application Registration বাটনে ক্লিক করলেই ফরম চলে আসবে। ফরমের উপরের দিকে Temporary Application ID বলে একটা নাম্বার দেয়া থাকবে। ফরম পূরণের আগেই নাম্বারটি লিখে রাখুন। কেননা ফরমের কিছু অংশ পূরণ করে পরে বাকিটা পূরণ করতে চাইলে ঐ আইডি ব্যবহার করে যতটুকু আগেই করে রেখেছেন তার পর থেকে বাকিটা পূরণ করা যাবে।  বিভিন্ন ঘর পূরণ করতে গিয়ে আমাদেরকে বেশকিছু সংশয়ের মধ্যে পড়তে হয়। সেজন্য খুব মনোযোগ দিয়ে ফরম পূরণ করা জরুরি। প্রথম পৃষ্ঠার সবগুলো আবশ্যিক ঘর পূরণ না করে আপনি পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতে পারবেন না। একদম প্রথম ঘরে আপনি বাংলাদেশে ভারতের কোন মিশন অফিসে থেকে আবেদন করছেন তা নির্বাচন করবেন। ওখানে অপশনের মধ্যে ঢাকা, চিটাগাং এবং রাজশাহী রয়েছে। আপনি আপনার নিকটস্থ মিশন নির্বাচন করবেন। এরপর আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান (জেলার নাম) এগুলো পূরণ করে citizenship/national id নম্বরের ঘরে যাবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের Personal Identification Number টি দিবেন। অর্থাৎ, পাসপোর্টে ব্যক্তিগত নম্বরের ঘরে যে সংখ্যাটি থাকে সেটিই দিতে হবে। কেননা পাসপোর্টের ঐ সংখ্যাটি আসলে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আর তা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকেই নেয়া হয়। Visible Identification Mark এর ঘরে আপনাকে দেখেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন কোনো চিহ্নের উল্লেখ করবেন যেমন- মুখের কোনো কাটা দাগ, তিল, জন্মদাগ বা হাত কিংবা পায়ের নিচের দিকের কোনো দাগ যা সহজেই দেখা যায়। এরপর আপনাকে পাসপোর্টে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, আপনার পাসপোর্ট যদি মেশিন রিডেবল হয়, তাহলে আপনি বাংলাদেশের যে অঞ্চল থেকেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন না কেন Place of Issue হবে ঢাকা।

Online_Indian_Visa_Form_-_2014-04-05_16.03.4822222

প্রথম পৃষ্ঠা পূরণ শেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করে ২য় পৃষ্ঠায় যেতে হবে। সেখানে রয়েছে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লেখার ঘর। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এক হলে বর্তমান ঠিকানা লিখে একটা জায়গায় রয়েছে টিক চিহ্ন দেয়ার সেখানে ক্লিক করলেই স্থায়ী ঠিকানার ঘর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আপনার মা-বাবার নাম ও বিস্তারিত লেখার ঘর আসবে। তারপর একটা অপশনে রয়েছে যে আপনার নানা-নানী, দাদা-দাদী কি পাকিস্তান বা পাকিস্তানের দখলকৃত অঞ্চলের নাগরিক বা সেখানে বাস করতেন কিনা। এখানে No দেয়াই শ্রেয়। এখানে পাকিস্তান বলতে পাকিস্তানই বোঝানো হয়েছে। ৭১ এর আগের পূর্ব পাকিস্তানকে নির্দেশ করা হয় নি। মা-বাবার জন্মস্থান বলতে জন্মের জেলাকে বোঝানো হয়েছে। Occupation Detail of Applicant অংশে আপনার পেশার বিস্তারিত দিতে হবে। তবে আপনি ছাত্র হলে যখন Student নির্বাচন করবেন তখন আরেকটি অপশন আসবে আপনার বাবা অথবা স্বামী/স্ত্রী’র পেশার বিস্তারিত দেয়ার জন্য বলা হবে। বাবা মৃত হলে এবং আপনি অবিবাহিত হলে বাবার শেষ পেশা, চাকরি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা দিতে হবে। আর Designation অংশে Retired লিখে এরপর পদের নাম লিখতে হবে। বাবা অবসরে থাকলেও একই কথা প্রযোজ্য। তৃতীয় পৃষ্ঠায় আপনার ভিসার ধরণ, ভিসার মেয়াদ, ভ্রমণের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত অপশন নির্বাচন করতে হবে। কোন পথে ভারতে প্রবেশ করবেন এবং কোন পথে বের হবেন তাও আপনাকে নির্বাচন করে দিতে হবে। আকাশপথ হলে by air দিতে হবে। যেমন- বেনাপোল দিয়ে যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে বের হন তাহলে port of entry দিতে হবে By road Haridaspur. ওদিক দিয়ে বের হলেও একই। আর বুড়িমারী দিয়ে বাংলাদেশ দিয়ে বের হলে দিতে হবে by road Changrabandha.     (চলবে)

Tuesday, December 10, 2013

হারপিং !!

নামটা শুনে অনেকের কোন খেলার কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু এটা কোন খেলা নয়। উভচর ও সরীসৃপ প্রানি অনুসন্ধান করাকে হারপিং বলা হয়ে থাকে সাধারনত। আমার কথাটা অনেক কঠিন শুনালেও কাজটা ভীষণ মজার এবং রোমাঞ্চকর। আমার ক্ষুদ্র জীবনে হারপিং করার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটার আলোকে আজকের এই লিখা।

কল্পনা করুন তো, অন্ধকারের মাঝে আপনি একা, হাতে একটা টর্চ, চারদিকে ঘনগভীর বন। মাঝে মাঝে ব্যাঙ্গের ডাক অথবা ঝি ঝি পোকার শব্দ। আপনার উদ্দেশ্য খুঁজা, ব্যাং আর সাপ জাতিয় প্রানি খুঁজা। কি ভয় লাগছে? ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক অনেক কিন্তু ব্যাপারটার মাঝে যে পরিমান রোমাঞ্চ লুকিয়ে রয়েছে সেটা না করা পর্যন্ত কোন ভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন না।

আমাদের সাস্ট ক্যাম্পাসে কদিন আগে গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটি র সাথে কিছু হারপিং এর সুযোগ পেয়ে যাই। আমাদের ক্যাম্পাসে কোন বিষাক্ত সাপ না থাকার পরও ভয় লেগেছিলো হারপিং এ যেয়ে। লাইট ছিল সাথে, কিন্তু লাইট থাকার সব থেকে বড় সমস্যা হল যে টুকু জায়গা লাইট কভার করতে পারবে তার আসে পাসের অন্ধকারকে আরও গভীর আর রহস্যময় করে তুলে। আমরা যেহেতু ভাগ ভাগ হয়ে কাজ করেছিলাম সেহেতু রোমাঞ্চকর অনুভুতি ছিল বেশি। রাতের বেলায় হারপিং কয়েক দিনে পুরো ক্যাম্পাসে আমাদের অভিযান সম্পূর্ণ করি। সব থেকে মজা ( সাথে একটু ভয় ও) লেগেছিল টিলার পেছনে গাছগুলোর মাঝে। লজ্জাবতির কাটা সাথে জোঁক তো আছেই, এরেই মাঝে সাপ ব্যাং খুঁজা। ব্যাপারটা যতটা কঠিন শুনায় ততটা না কারন প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির রহস্য খুঁজে কখনও নিরাশ হতে হবেনা। আমাদের চারপাশের প্রকৃতির মাঝে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। রহস্য বের করার জন্য আমাদের প্রকৃতির কাছে যেতে হবে, আমিও যাবার চেষ্টা করেছিলাম এবং প্রকৃতিও আমাকে নিরাশ করেনি।

কেন করবেন হারপিং?

আপনি যদি ফটোগ্রাফার হন তাহলে হারপিং আপনার জন্য। কারন রাতের অন্ধকারের প্রকৃতিতে আপনি প্রকৃতির কিছু আথিতিকে পাবেন যেটিকে অন্য সময় পাবেননা।  আপনার যদি ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে, হারপিং আপনার জন্য। অথবা আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন এটা আপনার জন্য। বাস্তব অভিজ্ঞতা একাডেমিক জীবনেও অনেক সাহায্য করতে বাধ্য। হারপিং এর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আপনাকে এটার পেছনে আগ্রহী করে তুলবে, অনেক ক্ষেত্রে এটা নেসায় পরিনত হয়ে যায়। ভয়ের মাঝের মজা কি জিনিস সেটা অভিজ্ঞতা ছাড়া জানতে পারা কখনই সম্ভব না।

সতর্কতা-

যেহেতু রাতের বেলায় হারপিং করবেন তাই আগে থেকে কিছু সতর্কতা পালন করা আবশ্যক। যে জায়গাতে করতে চাচ্ছেন হারপিং জায়গাটা সম্পর্কে ধারনা নিন প্রথমে। বিষাক্ত সাপ থাকলে সেটার জন্য গাম বুট থাকা ভালো যদিও সাপ আপনাকে কিছুই বলবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে ওকে জালাতে যাবেন। জোঁকের কামড় খাবার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা ভালো যদি আপনার ফিল্ড এ কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে। যথেষ্ট পরিমানে আলোর জন্য টর্চ লাইট সাথে নিন মনে রাখবেন রাতের আঁধারে আপনি এই উপকরণটি ছাড়া একেবারে অসহায়। কোন সাপ দেখলে তাকে চিনার চেষ্টা করুন ভয় না পেয়ে। সে আপনার কোন ক্ষতি করবেনা বরং আপনি যে ভয়টা পাবেন সেটাই আপনার ক্ষতি করতে পারে। এবং সব শেষে মাথায় রাখবেন কোন সংরক্ষিত জায়গায় হারপিং করার আগে প্রসাসনের অনুমতি নিয়ে নিবেন, যেমন ক্যাম্পাসের কোথাও হারপিং করতে চাইলে অনুমতি নিয়ে নিবেন।

নতুন কিছু জানার আগ্রহ থেকেই মানবজাতির এগিয়ে চলা। এই অজানাকে জানার জন্য আমাদের প্রতিদিনের ছুটে চলা। রুটিন বাধা জীবনের মাঝে আটকে থেকে লাইফে কি পেলাম না পেলামের হিসেবে কেটে যায় জীবনের বড় কিছু অংশ। কিছু সময় থাকুন প্রকৃতির মাঝে, প্রকৃতি আপনাকে নিরাশ করবেনা। নতুন কে জানুন।

Saturday, December 7, 2013

আকাশে ওড়ার গল্প

আমরা পাঁচ জন বসে আছি ছোট্ট দোকান ঘরে। খুব সাদামাটা দোকানে দুটো বেঞ্চে বসে আছি। ভুল বললাম। আমরা চারজন বসে আছি, একজন অস্থির ভাব পায়চারী করছে এদিক ওদিক। দোকানটার দেয়ালের চারদিক জুড়েই নানা রকম ছবি দিয়ে ভরা। একটা টেবিল, টেবিলের উপরে একটা কম্পিউটার। তার পাশেই টুলে বসে আছে একটি মেয়ে। কি সব কাগজ নিয়ে কাজ করছে। পাশেই একটা ছোট্ট রুম আছে। সেটার দরজা ভেজানো, তাই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। আমি সবসময় একটু বেশি কৌতুহলী। দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। ছবি দেখার পাশাপাশি ছবিতে লেখাগুলো পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি। ছবি দেখতে দেখতেই হাল্কা একটু মানসিক চাপ বোধ করতে শুরু করলাম। ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে দেখি সে ঝিম মেরে বসে আছে বেঞ্চে। কিছুটা কান্ত দেখাচ্ছে ওকে। ও অবশ্য এমনিতেই একটু ঐ রকম, যতক্ষন একটিভ থাকে বেশ থাকে। আর একটু ক্লান্ত কিংবা অলস হয়ে বসে থাকলেই ঝিম মেরে যায়। আশেককে খুজতে গিয়ে দেখি ও নেই আসে পাশে। জিনু আর পিঙ্কির অবশ্য খুব তাড়া নেই, টেনশন নেই। আগে থেকেই ওরা দুই হাত উচিয়ে মাফ চেয়ে নিয়েছে। দোকান থেকে একটু বের হয়ে আশেককে খোজার চেষ্টা করলাম। বেচারা বোধহয় আবারো এটিএম বুথের খোজে বের হয়েছে। তার ক্রেডিট কার্ডটা কাজ করছে না। প্রচন্ড রোদ্রজ্জ্বল অথচ মিষ্ঠি ঠান্ডা একটা আবহাওয়া। মিনিট দুয়েক রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি আবার হেটে ভেতরে এসে বসলাম ফুয়াদের পাশে।

[caption id="attachment_1193" align="aligncenter" width="922"]1421206_10152146538063140_949041258_o অন্তরীক্ষ
(বাকি ছবিগুলো নিচে)[/caption]

অপেক্ষা ব্যাপারটা সবসময়ই বিরক্তিকর। মাঝে মাঝে একটু ভিতিকরও বটে। কিছুটা বিমর্ষ মুখে ঠিক তখনি আশেক এসে ঢুকলো। চেহারা দেখে আর কোনো প্রশ্ন করলাম না আমরা কেউ। দোকানের মেয়েটি কিছু কাগজ এগিয়ে দিল আমাদের দিকে। নাম ঠিকানা পূরন করে একটা স্বীকারত্তি ফর্মে সই করতে হবে। জেনে বুঝে সজ্ঞানে সম্মতি দিয়েছি। সই করার সময় মাথাটাকে ভাবনার উর্ধে নিয়ে গেলাম। যাতে টেনশন কাজ না করে। যতই ভাবার চেষ্টা করছি টেনশনের কিছু নেই, ততই মনে হচ্ছে টেনশন জেকে বসছে। কাগজে সই করতে করতেই একটা গাড়ি এসে থামলো দোকানের সামনে। মেয়েটি বললো তোমাদের গাড়ি এসে গেছে গেট রেডি। গাড়ি থেকেখুবই ষন্ডা গুন্ডা মার্কা রাফ এন্ড টাফ কিছু লোক নামলো। তাদের দেখে কেমন যেন অস্থিরতা অনুভব করলাম। সব কিছু ঝেড়ে ফেলে গাড়ির পেছনে উঠে বসলাম। ছাদ বিহীন জিপের পেছনে খোলা আকাশ, এক পাশে অপরূপ প্রকৃতি আর হিমেল ঠান্ডা বাতাসের সাথে ঝড়ের বেগে গাড়ি চলতে শুরু করলো।


গাড়ি চলছে দুরন্ত গতিতে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে। যতই এগিয়ে যাচ্ছি ততই সময় ঘনিয়ে আসছে। সেই মুহুর্তটি ভাবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্ত ভাবনায় ঠিক ঠাক মতন আসছিল না। উলটো গাড়ির ড্রাইভারটা কি খায় সেটাই ভাবছিলাম আমরা। আকা বাকা রাস্তা ধরে এত দ্রুত গাড়ি চালাতে আর কাউকে দেখিনি। খুব কাছাকাছি গতিতে গাড়ি চালিয়েছিল বান্দরবনের রুমাবাজার থেকে ১১ কিলো রাস্তার জীপের ড্রাইভার। তবে এই বেটা ভয়াবহ। একটা শার্প ইউটার্নে সে গতিতে কোনো লাগাম দিলো না। একদিক থেকে এটাই ভালো ছিল। গাড়ির গতির টেনশনে এতক্ষন মাথায় ঘুরতে থাকা চিন্তাটা হারিয়ে গেল। পাহাড়ী রাস্তার দুই দিক জুড়ে অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি। সবকিছু ভুলে ক্ষনিকের জন্য সেইদিকেই যেন ডুবে গেলাম। হুশ হলো হা করে প্রকৃতি দেখতে গিয়ে দ্রুত গতিতে চলা জিপে অসাবধানতার কারনে ধুম করে মাথায় একটা ধাক্কা খেয়ে। ঠান্ডার সময়, কিছুটা লাগলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই গাড়ি থামলো। ষন্ডা মার্কা লোকগুলো কোনো কথা না বলে ব্যাগ প্যাক নিয়ে হাটতে শুরু করলো। আমরাও দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। আমরা মানে আমি, ফুয়াদ, আশেক। হাত নেড়ে জিনু পিঙ্কিকবিদায় দিলাম। চান্সে আশেক মাফও চেয়ে নিল যদি কিছু হয়ে যায়।

পাহাড় থেকে লাফ দেয়া। চাট্টি খানি কথা না। ছোট খাট পাহাড় নয় মোটেও। নেপালের বিখ্যাত বিশাল উঁচু উঁচু সব পাহাড়। খেলাটার নাম প্যারাগ্লাইডিং। রঙ বেরঙ্গের ঘুড়ির মতন রঙ বেরঙ্গের প্যারাস্যুট, একজন পাইলটও থাকে সাথে। তারপরেও ১০০ ডলার খরচ করে আপনি উঁচু পাহাড় থেকে লাফ দেবেন, অপরিচিত কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে, তার চেয়ে সামান্য বেশি (পাচ মিনিট) পরিচিত একজন মানুষের সাথে। মানুষগুলো দেখতেও কেমন যেন। মনে হয় একটার বেশি দুটো প্রশ্ন করলেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। টেক অফ প্লেসে এসে দেখি মানুষের মেলা। একদল মানুষ অপেক্ষা করছে যেকোনো মুহুর্তে লাফ দেওয়ার। আর ঠিক সামনেই আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ানো মানুষের মেলা। দেখতেই মন ভালো হয়ে যায়। আর ঠিক উলটো পাশেই প্রকৃতির অভাবনীয় রূপ। এখান থেকে হিমালয়টা দেখা যায় সবচেয়ে ভালো মতন। একদম খোলা, টান টান দাঁড়িয়ে আছে, মাথা উঁচু করে। কি ভীষন ভয়ানক সুন্দর। ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে গেলাম।

আমার পাইলটের নাম ইসকা। ফুয়াদের জনের নাম রাম, আর আশেক আছে ডিলানের সাথে। যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত হচ্ছি আমরা। আমাদের কি করনীয় আছে, এবং কোন কাজ কোনো ভাবেই করা যাবে না সেটা শুনছি খুব মনোযোগ দিয়ে। ইসকা যখন থামলো সব কিছু বলে, আমি প্রশ্ন করলাম, যদি আমি পড়ে যাই সেক্ষেত্রে ব্যাকআপ প্ল্যান কি?
সে খুব নির্বিকার ভঙিতে বললো “ব্যাকআপ তোমার সাথে নেই। ব্যাকআপ আমার সাথে।”
তখন আমি পালটা জিজ্ঞস করলাম “তার মানে তোমার আর আমার ইন্সট্রুমেন্টের যেই কানেকশন আছে সেটা সহজে খুলে যাবার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।”
“যদিনা তুমি এই বাটনে চাপ দাও। এছাড়া তোমার কপাল খারাপ না হলে এরকম কিছু হবার কথা না।”
আমি বুঝলাম অন্য সব কিছু ঠিক আছে, আমার সবচেয়ে ভালো ভাবে চিনে রাখতে হবে এই বাটনটাকে। টেক অফ প্লেসে একটু সিরিয়াল আছে। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের সিরিয়াল আসার। তাকিয়ে দেখি আশেক আর ফুয়াদেরও একি অবস্থা। দূর থেকে আমরা একে অপরকে সাহশ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। টেক অফ প্লেসে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলে হার্টবিট বেড়ে না যাওয়াটাই অস্বাভাবিক।

আমার পাইলট ইসকা দারুন। ফুয়াদের রাম খুবই প্রফেশনাল। আর আশেকের ডিলান বদ্ধ উন্মাদ। টেক অফ প্লেসে দাঁড়িয়ে আমাদের টেনসড চেহারা দেখে হয়তো রসিকতার ছলে হুট করেই সে শুরু করে দিল লুঙ্গি ড্যান্স। সেই লুঙ্গি ড্যান্স আর থামেই না। একবার মনে হলো শালাকে ধাক্কা মেরে পাহাড় থেকে ফেলে দিই। আশেককে দেখলাম করুন মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো মনে মনে ভাবছে এই শালা আকাশে উঠে যদি লুঙ্গি ড্যান্স দেয়া শুরু করে ওর কি হবে? ওর থেকে মনোযোগ সরিয়ে যারা লাফ দিচ্ছে ওদের কে দেখে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করতে থাকলাম। ভারতীয় এক ভদ্রলোক, স্বাস্থ্য বেশ ভালো। তার পাইলট বরং তার চেয়ে অনেক ছোট খাট পড়ে গেছে। টেক অফের অন্যতম প্রধান রুল ছিল যখনি বলা হবে দৌড় কিছুতেই বসে পড়া কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না, দৌড়াতে হবে। স্বাস্থ্য ভালো ভারতীয় ভদ্রলোককে দৌড়াতে বলার সাথে সাথেই সে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে গেল। পাইলট পেছন থেকে জোরে একটা ধাক্কা দিল তাকে। ঘটনা যা ঘটল সেটা লিখে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। বিশাল বড় সড় দেহের ভদ্রলোক পুরো এলোমেলো হয়ে উলটে গেল। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। আমাদের মনে হচ্ছিল এখনি সে ছিটকে পড়ে যাবে। কিন্ত আমাদেরকে ভুল প্রমান করে দিয়ে ধীরে ধীরে ওরা উড়ে চলে গেল। আমাদের মনে হলো, এর চেয়ে খারাপ কিছু করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন। মনে একটু সাহস পেলাম। তাকিয়ে দেখি আশেক উড়ে গেল, ক্ষানিক বাদেই ফুয়াদ।
ইসকা বললো “ইউ রেডি”।
আমি বললাম “ইয়েস”।
“ওকে দ্যান। রান”
হাল্কা একটু দৌড় দিয়ে একটা ছোট লাফ দিতেই দেখি আমি আকাশে ভাসছি।
ইসকাকে জিজ্ঞেস করলাম “হাউ ওয়াজ দ্যাট?”
“ইট ওয়াজ অলমোস্ট পারফেক্ট। ওয়েলডান।”

আকাশে উড়ে বেড়ানোর আনন্দে আর নতুনত্বের ছোয়ার ক্ষানিকটা অস্বস্তি নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছি। ইসকা বললো “ফিল লাইক ইউ আর সিটিং এট ইউর হোম এন্ড ওয়াচিং মুভিজ সিটিং ইন আ কফোর্ট্যাবল চেয়ার।” আমিও হাত পা ছেড়ে দিয়ে আয়েস করে বসলাম, কারন ওর উপর ভরসা রেখে এই দারুন ভ্রমন উপভোগ না করে টেনশন করাটা সব কিছুরই অপচয় হবে। একটা ছোট ডিভাইস থেকে বিপ বিপ শব্দ আসছিল। যতক্ষন বিপ বিপ শব্দ হবে ধরে নিতে হবে আমরা উপরে উঠছি। আমি শব্দ ফলো না করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম যেখান থেকে লাফ দিয়েছি সেটাকে ফেলে কত উপরে উঠে গেছি। চর্তুদিক ঘুরে ঘুরে উপড়ে উঠছি। ইসকা আমাকে চারদিকের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যে জেনে গেছই অন্নপূর্ণা – ফিসটেলদের পরিচয়। ইসকা এবার এমন জায়গা থেকে এদেরকে পরিচয় করিয়ে দিল যেখান থেকে হিমালয় দেখা স্বপ্নের মতন ব্যাপার। আমি বাতাসে ভাসছি, মাটি থেকে না জানি কত উপরে, সামনে চারদিক খোলা, শুধু হিমালয় রত্ন ভান্ডার। ইসকার সাথে অনেক কথোপকথন হয়েছে, কিন্ত ঐ সময়ের মিনিট পাচেক আমি কোনো কথা বলিনি। বাতাসের শো শো শব্দ তখন হারিয়ে গেছে। ঠান্ডা বাতসে কেপে উঠেছি কিনা সেটাও মনে করতে পারছি না। শুধু মনে আছে যখন টার্ন নেয়ার জন্য হিমালয়কে পেছনে ফেলে ঘুরে আসতে হতো, অটোমেটিক্যালি আমার ঘাড় ঘুরে যেত।

অনেকক্ষন হলো আমরা উপরেই উঠছি শুধু, এক সময় দেখলাম অন্য সবাইকে পেছনে ফেলে সবার উপরে আমরা। এখান থেকেই ধীরে ধীরে নামার কথা আমাদের। কিন্ত বাতাসের গতি চক্রের সাথে মিলিয়ে নামতে হয় নিচের দিকে। সেই গতি চক্র মিলছিল না। তাই উপরেই চক্কর কাটতে থাকলাম আমরা। এখানেও আমাদের অপেক্ষা। ইসকা বললো আমি নাকি লাকি। গতি চক্র পেলে আরো আগেই নিচে নামা শুরু করে দিত সে। এখন একটু বেশি সময় উড়ে বেড়ানো হবে আমাদের। আমিও একটুক্ষন চোখ বন্ধ করে অনুভূতি নেয়ার চেষ্টা করলাম। নিচে তাকিয়ে দেখি আমার মতন শ দেড়েক মানব পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। উড়ে বেড়ানোর অনুভূতির কোনো বর্ণনা হয় না। এটা শুধু অনুভব করার মতন ব্যাপার। অনেকের কাছে এটা নেশার মতন। গ্রাফিক ডিজাইনার ইসকা, একসময় তার পার্ট টাইম পেশা ছিল প্যারাগ্লাইডিং। আর এখন ঠিক উলটো। প্যারাগ্লাডিং ওর প্রধান পেশা আর গ্রাফিক ডিজাইনিং পার্ট টাইম পেশা। প্রতিদিন তিনবার করে লাফ দেয় সে। পোখারার প্যারাগ্লাইডিং পৃথিবীর অন্যতম সেরা শুধু মাত্র এর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারনে। এই কারনে স্পেনের অধিবাসী ইসকা দুই বছর ধরে পোখারায় থাকে। কি এক অদ্ভুত প্রফেশন আর নেশা। আকাশে উড়ে বেড়ানো, বাতাসের সাথে গতির খেলা। আহা!! সে এক মধুর অনুভূতি। ইতিমধ্যে গতি চক্র পেয়ে গেল ইসকা। ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করলাম আমরা।

ল্যান্ডিং এর ঠিক আগে আগে ইসকা ক্ষানিকটা এক্রোব্যাটিক শো দেখালো আমাকে। আমরা বাতাসে দুটো ডিগবাজী দিলাম। তারপর আস্তে আস্তে ফেওয়া লেকের ধারে ল্যান্ডিং স্পটের কাছে চলে এলাম। এখানের রুল একদম সহজ। ল্যান্ডিং এর আগে পা সোজা করে রাখতে হয়, আর স্টপ বললেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। একদম স্মুথ ছিল। এবার আর অলমোস্ট পারফেক্ট না, পুরোপুরি পারফেক্ট। এন্ড অফ আ ভেরি এক্সাইটিং গেইম অফ ফ্লাইং।

[gallery ids="1194,1195,1196,1197,1198,1199,1200,1201,1202,1203,1204,1205,1206,1207,1208"]

Sunday, November 3, 2013

শীত এলো বলে

আসি আসি করে আরেকটা শীত চলেই এলো বোধহয়। কিছুদিন ধরেই ভোর রাতে গায়ে একটা চাদর বা কাঁথা না নিলে একদম চলছেই না। সিলিং ফ্যানটার গতিও কমাতে হচ্ছে প্রতিদিন একটু একটু করে। আর ক'দিন বাদে ফ্যানটা হয়তো আর চালানোই যাবে না। বাংলাদেশে শীত এক পা দিয়ে দিয়েছে, এবার সবার অপেক্ষা তার আরেক পায়ের জন্য। শীত আমরা সবাই ভালোবাসি। আমাদের দেশে শীতকাল অতিথির মতো। অল্প কয়েকটা দিনের জন্যই সোয়েটার পরা, লেপের তলায় যাওয়া আর চুলায় পানি গরম করে হাতমুখ ধোয়া। এরপর সারা বছর তো ঘামতেই থাকা। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বাতাসে শীতের ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছিল। শীতকে পাকাপোক্ত রূপ দেয়ার জন্য পিঠা বিক্রেতারা রাস্তায় শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলা শুরু করলো। এদিকে টং দোকানেও চায়ের বেচা-বিক্রি বেড়েছে। শীতবিলাসীরা ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে কিন্তু। আরেকটু শীত পড়লেই শুরু হবে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি কিংবা সিলেট, শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে বাস বা ট্রেনে চড়ে বসা।

2011-11-21-17-25-41-4eca8995038fc-2

শীত নিয়ে উত্তেজনা কিন্তু সকল পর্যায়েই। শীঘ্রই বাজারে আসতে শুরু করবে শীতের পোশাক, প্রসাধনী। জমে উঠবে শীতের বাজার। ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে হরেক রকম সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার আর বাঁদুড়ে টুপির সমাহার শীতের আগমনীকে করবে আরো শোভামণ্ডিত। শীত কিন্তু সাইকেলপ্রেমীদের জন্যেও সুসংবাদ নিয়ে হাজির হচ্ছে। ঢাকা শহরের সচেতন সাইকেলপ্রেমীরা শীতে সাইক্লিং করা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছে। শীতে জ্যাকেট চাপিয়ে সকল গিয়ার সেট করে দ্বিচক্রযান ভ্রমণের মজা কি আর কড়া রোদে ঢাকার রাজপথে পাওয়া যায়? যায় না। শহরের কেন্দ্র থেকে সাইকেলে করে যাওয়া হবে মাওয়া ঘাট, জাহাঙ্গীরনগর, কুর্মিটোলা বিমানবন্দর কিংবা প্রাচীন শহর পানাম নগরে। সেই সাথে চলবে ফটোগ্রাফী। আর ক্রীড়াপ্রেমীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই মাঠে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দে ক্রিকেট অনুশীলনটা পাড়া-মহল্লায় যেন একটু বেশিই হচ্ছে। আর ফুটবলপ্রেমীরা থেমে নেই। দৌড়োচ্ছে বল নিয়ে। সব মিলিয়ে শীত নিয়ে এসেছে উৎসবের আমেজ। শীতে নগর জীবনের সময়সূচী অনেকটাই পাল্টে যায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয় দেরিতে। অফিসের বাসটা আরেকটু দেরিতে নিতে আসে। একঘেয়ে জীবনে এ পরিবর্তন কিন্তু সকলে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। কাঁপতে কাঁপতে ঘুম থেকে উঠে কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে কাজে বের হয়ে যাওয়া। কাজ সেরে ফেরার পথে রাস্তার ধারে পিঠাপুলির দোকানে খাদ্যবিলাস। এই তো শহুরে বাঙালির শীত রুটিন।

যে দেশে যেই ঋতু ক্ষণস্থায়ী সে দেশে সেই ঋতু নিয়ে মাতামাতি। পশ্চিমারা ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্মে বড় দেখে ছুটি কাটায়। সমুদ্র সৈকতে রৌদ্রস্নান, মাছ ধরা, সামার ক্যাম্প কত কি! আমরাও কিন্তু আমাদের ক্ষণস্থায়ী অতিথি শীতকে উপভোগ করতে শিখে গিয়েছি। শীত মানেই বনভোজন, বিয়েশাদি, ভ্রমন আর পিঠাপুলির উৎসব। কিংবা শীত মানে স্রেফ পথের ধারে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ আগুন গরম চা ধীরে ধীরে উপভোগ। মনে পড়ে বাল্যকালে শীতের ছুটিতে লেপমুড়ি দিয়ে তিন গোয়েন্দা, শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুরে সিরিজ কিংবা টিনটিন পড়ার দিনগুলিকে। এখন হয়তো সন্ধ্যা রাতে লেপমুড়ি দিয়ে এক কাপ চা হাতে খুব জমবে টান টান উত্তেজনার কোনো থ্রিলার মুভি। রাতের ঘুমটাও হবে সেই রকম। আর সকালে আটা রুটির বদলে থাকবে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাপা পিঠা। বিকেলে মগভর্তি কফিও কিন্তু চলবে। সব মিলিয়ে জীবনটা খারাপ হবে না। হাঁড়ে কাঁপন ধরানো শীত কিন্তু কাজেকর্মে কিছুটা হলেও স্থবিরতা আনবে আর বাড়িয়ে দেবে অবসরের আনন্দ। শীত মানেই আনন্দ, ফুর্তি আর অলিখিত উৎসব।  আর হ্যাঁ, শীতে উনুনের ধারে বসে ধোঁয়া ওঠা কাবাব খেতেও কিন্তু মন্দ লাগবে না। মোট কথা, গরম খাবারের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।

দেরি না করে শীতের প্রস্তুতি তাহলে নিয়ে নিই আমরা। আলমারির ভেতর থেকে বের হোক কম্বল আর সোয়েটার। রোদ পোহাক তারা। প্রস্তুত হোক আমাদের গায়ে চাপার জন্যে। ঠোঁট ফাটা রোধে চ্যাপস্টিকটা পকেটে ভরে ফেলি। সাইকেলটার চাকায় তেল দিই। লাইট আর হর্ন লাগিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমনের উপযোগী করি তাকে। কেডসের ধুলাও উড়ে যাক তবে। কানটুপিটাও আলোর মুখ দেখুক। খেঁজুড়ের গুড় আর চালের আটা চলে আসুক স্টকে। এবারের প্রস্তুতি শীত মোকাবিলার, প্রস্তুতি শীত উপভোগ করার। আসুন, জীবনটাকে উপভোগ করি, সুস্থভাবে।

ছবি কৃতজ্ঞতা:ফটোনিউজ২৪

Thursday, October 31, 2013

গিট্টু কেরামতি - এসো গিট্টু লাগাই

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দড়ির কাজের কোন বিকল্প নেই। সকালে জুতার ফিতা বাঁধা থেকে শুরু করে রাতে মশারির টাঙ্গানো পর্যন্ত প্রতিদিন অসংখ্যবার আমাদের “গিট্টু” বা গেরো মারতে হয়। আর outdoor কর্মকাণ্ড বা ক্যাম্পিং হলে তো কোন কথাই নেই। তাঁবু খাটাতে, কাপড় শুকানোর দড়ি টানাতে, সেলাই করতে, দুইটা দড়ি জোড়া দিয়ে লম্বা করতে, কোন কার্টুন প্যাকিং করতে, এরকম অসংখ্য প্রয়োজনে প্রতিদিন আমাদের গিট্টু কাজে লাগে।

গেরোর প্রকারভেদের কোন অভাব নেই। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের গেরো ব্যবহার করা হয়। তাও মৌলিক কিছু গেরো জানলে প্রতিদিনের অনেক কাজ সহজে করা যায়।

Thumb Knot – দড়ির কাজের শুরু এটা দিয়েই। খুবই সহজ।

[caption id="attachment_389" align="aligncenter" width="361"]Thumb Knot, Photo Courtesy: 66thlondon.org Thumb Knot, Photo Courtesy: 66thlondon.org[/caption]

ব্যবহার - দড়ির দুই মাথায় থাম্ব নট দিয়ে রাখা একটা ভাল অভ্যাস। এটা দড়ির দুই মাথার সুতা বের হওয়া রোধ করে।

Square Knot/Reef Knot – মূলত দুইটা সমান মোটা বা পুরুত্বের দড়ি জোড়া দেয়ার জন্য এই গেরো ব্যবহার করা হয়।

[caption id="attachment_390" align="aligncenter" width="212"]Square Knot/Reef Knot, Photo Courtesy: coustructionmanuals.tpub.com Square Knot/Reef Knot, Photo Courtesy: coustructionmanuals.tpub.com[/caption]

ব্যবহার – কিছু প্যাঁচানো শেষে দড়ির দুই মাথা জোড়া দিতে এই গেরো ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দুইটা দড়ি জোড়া দিতেও এই গেরো কাজে লাগে। দাক্তারিতেও এর ব্যবহার আছে। সাধারণত ব্যান্ডেজ বা স্লিং শেষে এই গেরো মারা হয়।

Shoelace Bow – ছোটবেলা থেকেই অনেকের জুতার ফিতা বাঁধতে সমস্যা হয়। আমার পরিচিত অনেকের এখনও এই সমস্যা রয়ে গেছে।

[caption id="attachment_391" align="alignleft" width="346"]Shoelace knot, Photo Courtesy: sites.google.com/site/laurabrarian Shoelace knot, Photo Courtesy: sites.google.com/site/laurabrarian[/caption]

 

[caption id="attachment_393" align="alignright" width="396"]Shoelace Bow, Photo Courtesy: animatedknots.com Shoelace Bow, Photo Courtesy: animatedknots.com[/caption]

 

 

 

 

 

 

 

ব্যবহার – অবশ্যই জুতার ফিতা বাঁধতে। এছাড়া ফসকা প্রকৃতির হওয়ায় (এক মাথা ধরে তান দিলেই খুলে যায়) এর বিবিধ ব্যবহার রয়েছে।

Clove Hitch – দড়ির এক প্রান্ত কোন খুঁটিতে শক্ত করে বাঁধতে এটা ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হল যত টানা হয় এই গেরো তত মজবুত হয়, শিথিল করলেই ঢিলা হয়ে যায়।

[caption id="attachment_394" align="aligncenter" width="288"]Photo Courtesy: familythorton.wordpress.com Photo Courtesy: familythorton.wordpress.com[/caption]

ব্যবহার – সুতার সাথে বড়শি বাঁধতে ব্যবহার করা হয়।

Sheet Bend – দুইটা অসমান পুরুত্বের দড়ি জোড়া দিতে এই গেরো ব্যবহৃত হয়।

[caption id="attachment_395" align="aligncenter" width="360"]Sheetbend, Photo Courtesy: animatedknots.com Sheetbend, Photo Courtesy: animatedknots.com[/caption]

ব্যবহার – পাল টানাতে। এছাড়া একটা মোটা আর একটা চিকন দড়ি জোড়া দিতে এর জুড়ি নেই, বাঁধন অনেক শক্ত হয়।

Bow Line – এই গেরোর বৈশিষ্ট্য হল, লুপ যতটুকু রেখে গেরো বাঁধা হবে ততটুকুতেই আটকে যায়, টানাটানি করলেও বড় বা ছোট হয় না।

[caption id="attachment_396" align="aligncenter" width="237"]Bowline, Phhoto Courtesy: menshealth.com Bowline, Phhoto Courtesy: menshealth.com[/caption]

ব্যবহার – টানাটানি করলে ছোট বা বড় হয় না দেখে অনেক উদ্ধার কাজে এর ব্যবহার আছে। বিপদগ্রস্থ মানুষকে গর্ত থেকে তুলতে বা উঁচা জায়গা থেকে নামাতে কোমরে বা বুকের কাছে এই গেরো মারা হয়। ওজনে টান খেয়ে লুপ ছোট হয়ে গেলে দড়ির চাপেই মানুষের বারটা বাজবে।

Fisherman’s Knot – দুইটি ভিজা দড়ি জোড়া দিতে এর জুড়ি নেই। এবং খুবই সহজ, Thumb Knot দিতে পারলেই চলে। অনেক সময় জোড়া আরও মজবুত করার জন্য একেক প্রান্তে দুটি লুপ করে Thumb Knot দেয়া হয়। ওটাকে Double Fisherman’s Knot বলে।

[caption id="attachment_397" align="aligncenter" width="203"]Fisherman's Knot, Photo Courtesy: wilderness-survival.net Fisherman's Knot, Photo Courtesy: wilderness-survival.net[/caption]

ব্যবহার – ভেজা দড়ি জোড়া দিতে ব্যবহার করা হয় বলে জেলেদের মধ্যে এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি।

Marline Spike Hitch – দড়ির মাঝখানে এক বা একাধিক লাঠি বাঁধতে এর তুলনা নেই।

[caption id="attachment_398" align="aligncenter" width="191"]Marlin Spike Hitch, Photo Courtesy: pioneeringmadeeasy.co.uk Marlin Spike Hitch, Photo Courtesy: pioneeringmadeeasy.co.uk[/caption]

ব্যবহার – দড়ি ও লাঠি বা বাঁশ দিয়ে মই বানাতে কাজে লাগে।

Square Lashing – ল্যাশিং সাধারণত দুই বা তার বেশি লাঠি দড়ি দিয়ে জোড়া দিতে ব্যবহার করা হয়। লাঠি বা বাঁশের কাঠামো তৈরি করতে লাশিং এর বিকল্প নেই। যেকোনো কাঠামোতে স্কয়ার ল্যাশিং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ল্যাশিং। এছাড়া প্রয়োজন ভেদে আরও অনেক প্রকারের ল্যাশিং এর ব্যবহার আছে।

স্কয়ার ল্যাশিং ব্যবহার করা হয় দুইটি লাঠিকে পরস্পরের লম্বভাবে (+ চিহ্নের মত) জোড়া দিতে। এর শুরু এবং শেষ হয় Clove Hitch দিয়ে।

[caption id="attachment_399" align="aligncenter" width="313"]Square Lashing, Photo Courtesy: tinhkhiet.org Square Lashing, Photo Courtesy: tinhkhiet.org[/caption]

এছাড়া আরও অসংখ্য গেরো ও ল্যাশিং আছে। একেকটা একেক কাজের জন্য। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সবগুলোর প্রয়োজন না থাকলেও মৌলিক কিছু শিখে রাখলে প্রতিদিন অনেক কাজে দিবে। পরের বার নিজের জুতার ফিতা নিজেই বাঁধবেন, নিজের বস্তা নিজেই পেঁচাবেন, নিজের কাপড় শুকানোর দড়ি নিজেই টাঙাবেন।

Friday, September 27, 2013

মেঘ পাহাড়ের ছোট্ট দেশে

মেঘালয়। “শেষের কবিতা”র শিলং, অমিত-লাবন্যের শিলং, ঘুরে এলাম আমরা ক’জন। আর এই আমাদের গল্প। image003

 ঢাকা থেকে সিলেট, সিলেট থেকে তামাবিল। তারপর ডাওকি হয়ে শিলং। পথের বর্ণনায় কালি আর বিশেষণ দুইই ফুরিয়ে যাবে।

মানুষ কিন্ত কম বিচিত্র না। আমাদের তিনটা ট্যাক্সি’র চালকের মাঝে একজন সিনেমার “গুণ্ডা” চরিত্রে অভিনয় করেন। তাই বোধহয় কখনো মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে, কখনো খেয়ালখুশিতে গাড়ি চালাছিলেন। তবে নিরাপদে পৌছে দিয়েছিলেন অবশেষে শিলং শহর।

পুলিশ বাজার, হোটেল “Blue Mount”। চারদিনের আস্তানা।

“মেঘ পাহাড়ের ছোট্ট দেশে
থাকত যে এক দাদীবুড়ী
মেঘের সাথে কইত কথা
মেঘের ভিতর বসতবাড়ী”।

একবার পুলিশ বাজারে পৌছাতে পারলে হোটেল খুজে পাওয়া কঠিন হবে না। কাছেই “Delhi Mistanno bhandar”, সকালের খাওয়াটা হয়ে যাবে এখানে। দুপুর যখন যেখানে তেমন হবে। ডলার ভাঙ্গাতে হলে “HDFC” bank পাশেই আছে। সন্ধ্যাটা নাহয় কাটতে পারে নতুন কোন সিনেমা দেখে অথবা ধোসা পরখ করে।

image005

শিলং এ প্রকৃতি যেন অভীমানিনী কিশোরী। এই মেঘ, এই বৃষ্টি।

আমাদের ছোট্ট পদ্ম’র কবিতার বই এর মেঘের দেশ। “শিলং পিকে” এসে দাড়ালে দেখা যায় পুরো শহর। মেঘ এসে ঢেকে দি্যেছিল চারপাশ। পদ্ম আর বুলান, সাথে আমরাও চোখে, মুখে মেখে নিই সাদা মেঘ। বলে, “আমি মেঘ খাই মা”। খাসিয়াদের পোশাকে সেজে নিল জোতি, জুরা, তানিয়া আর পদ্ম। শহর থাকে অদেখা। থাক। তবু শিলং পিকে’র আর এক আকর্ষণ কিন্ত সেখানকার “চা”।

image008

যদিও তুমুল তোড়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে ইংরেজদের দেয়া নাম নিয়ে “Elephant Fall”, তবু তাকে কেমন পোষ মানা মনে হল; বৃষ্টি মাথায়, ছাতা আর মেয়ের হাত ধরে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে কাছে যেতে যেতে।

image011

image013

আমাদের সাথে ছিল চার শিশু। দুজন নয় মাস আর চার মাস। আর দুজন সাড়ে ছয়। “Lady Hydriat park” এ ছোটাছুটি তাই ওরা দুজন বেশ আনন্দে করল বিকেল বেলা। যদিও সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। তাই মায়েদের বকাও দিল তারা, “আগে কেন আনলে না এখানে?”। বিকেলে পাচটা, সাড়ে পাচটার ভিতর আসলে সব বন্ধ হয়ে যায় এখানে ।

image016

Umiam-1
"ধরা যাক আজ রোববার
কোন তাড়া নেই”

নেই তাড়া নেই। তাই “উমিয়াম লেকে”র পাড়ে কাটিয়ে দিলাম সারাবেলা।















Umiam-2























Umiam-3

কখন কি এমন হয় না যখন গন্তব্যের চেয়ে পথটাই একটু বেশি ভাল লেগে যায়? কথা ছিল প্রাকৃতিক গুহা দেখতে যাব। সর্বকনিষ্ঠ দুজনের ঠান্ডা।তারা তাদের বাবা মার সাথে থাকবে। বুলান ও। তাই এবার, আমরা পাচজন বেরিয়ে পড়ি। পদ্ম ও আছে তার মাঝে। আর পথের ধারে নাম না জানা জলপ্রপাত অথবা দুই পাহাড়ের অতল থেকে উঠে আসা মেঘ ভালবেসে ফেলি।
Shillong-col

image028

“খুজব সবুজ বুনো ফুলে

খুজে না পাই যাহারে, আহারে…”

এমনি করে পথে পথে সেই ফুলটিকে খুজতে খুজতে পৌছে গেলাম “Nohkalikai Fall”। আকাশে মেলে দেই দু হাত, সবুজ প্রান্তরে বিছিয়ে দেই শরীর। নগর জীবনের সমস্ত ক্লান্তি যেন শুষে নিল প্রকৃতি।
image036


image038

সোনাই তার মাকে দেখিয়ে বলছিল, “আম্মি, দেখিয়ে উও বাংলাদেশ, ম্যাপমে ইতনা ছোটা হ্যায়”। সোনাই’র মত, এই নামেই তাকে ডাকছিল তার মা, আমরা ও তাকিয়ে দেখি, “প্রিয় জন্মভুমি”। “Eco Park”। দেখি রংধনু। ছোট্ট পদ্ম মেতে থাকে খেলায়।

“Ka Khoh Ramhah”  এমনি অদ্ভুত নাম নিয়ে থাকা এক অদ্ভুত দর্শন পাহাড় দেখতে গেলাম এরপর। অদ্ভুত সুন্দর বটে।
shil-col-5

image050

এবার বিশ্রাম। “Sai I Mika” resort। পাকোড়া আর চা খেয়ে কটেজের বারান্দায় বসে থাকলাম নীরব নীথর অন্ধকারে। I-phone টায় বাজছিল
“ফাগুনের ও মোহনায়
মন মাতানো মহুয়ায়
রঙ্গিন এই বিহুর নেশায় ...মন হারিয়ে যায় গো………”।
রাতভর বৃষ্টি যেন সঙ্গত করছিল তার সাথে।

image054
image056

image059

পরিমল হাসতে হাসতে বলল, “দিদি, নামতে আধা ঘন্টা আর উঠতে লাগবে আরো এক ঘন্টা”। যেটা পরিমল বলেনি, সব কিছু ম্লান হয়ে যাবে প্রকৃতির অপুর্ব বিস্ময়ের কাছে। “Living root”, ঠিক যেন সমুদ্ররের তলদেশ থেকে উঠে আসা Pirates of the Caribbean’র জাহাজ।

image060
image064



এবার ফেরার পালা। “Mawalang Village” দেখে ডাওকি হয়ে ফের তামাবিল, সিলেট তারপর ঢাকা।
image066



সবশেষে বাজেটঃ














































































DateOrigin _ DestinationTransportCostFoodLodgingNote
15.08.13Dhaka-Sylhet-Tamabil BorderTrain, Microbus
Dawki border - ShilongTaxi

(4 persons)
2200 Rs1501800 Rs
16.08.13Shilong Peak

Elephant Fall

Lady Hydriat Park
Jeep

(11 persons)
350 Rs1800 Rs
17.08.13Umium Lake350 Rs1800 Rs
18.08.13Mawasanmi Cave

Hot spring
Jeep

(11 persons)
350 Rs1800 Rs
19.08.13Cherrapunji

View points

Nohkalkai Fall

Eco Park

Ka Khoh Ramhah

Sai I Mika
Jeep

(11 persons)
350 Rs2600 Rs

(cottage)
20.08.13Living Root

Mawalang village

Dawki border

350 Rs
Tamabil to Sylhet

Sylhet - Dhaka
Microbus

Train



Photo Credit: Taniya, kamrul, Jura, Joyti, Lipu, Sadia, Dyuti, Farzana

Saturday, September 21, 2013

টংবাজদের আড্ডা ও “জল ও জঙ্গলের কাব্য”

উপক্রমণিকা:

একদা টংবাজ নামে একটা গ্রুপ 'ছিল" যাদের কাজ ছিল প্রতি বৃহস্পতিবার অফিসের পরে মহাখালী ডিওএইচএস এ ঢোকার মুখে চায়ের টং এ বসে সন্ধ্যা ৬-৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আড্ডা দেয়া।  এহেন কোন বিষয় নাই যে বিষয়ে কথা হতো না । একদম অপরিচিত মেয়ের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হওয়া সাজ্জাদের হয়ে ওই মেয়েকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে কথা বলার সিস্টেম করা, লুমন-লুমিত জুটির কার্যক্রম, শামসের খেলাধুলা (:P), তারেকের পাগলামি, দেশ (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) ও দশের সমস্যা সব কিছু। সদস্য সংখ্যারও কমতি ছিলোনা। দশের অধিক চায়ের অর্ডার ছিল নরমাল বিষয়। লেখার শুরুতে সেই 'ছিল" কারন আজ কালে ভদ্রে কারো সাথে দেখা হয় মাস কয় পেরুলে, কেউবা অন্য মহাদেশে। আবার কবে দেখা হবে, আদৌ হবে কিনা খোদা তায়ালাই জানে!

কফি হাউজের মত টংবাজদের আড্ডাটাও আজ নেই । Rumonঅস্ট্রেলিয়া, Rabby কানাডা, Shams বেচারা প্রেম করার ফাঁকেফাঁকে অফিস করেই ক্লান্ত। Shamseer টাই আজ সেতো সবচেয়ে সুখে আছে (সে লাখপতি না বা গাড়ি-বাড়িও নাই তবে সে সুশীল :-P), Tauhidul ওরফে টারজান (টারজান নামকরনের কাহিনী নিয়ে আরেকটা লিখা লেখা যাবে) অফিস আর শ্বশুরবাড়ি নিয়েই আছে, Shafiul কোড এর কবিতা লিখায় ব্যস্ত, Khayer মোল্লা এখন নতুন বিবাহিত, Amit বরাবরই বেঈমানী করে আর খালি এক্সকিউজ (নতুন বিবাহিত), Sazzad বেচারা ঢাকা শহরে ৬ তালা বাড়ির মালিক (তাই তার নাকি অনেক পেইন), Rossi ভাই সবাইকে ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত, আজরাইল আসলেও Himel বলবে একটু বিজি আছি, পরে আসেন, Saikat কেমনে কি বুঝিনা, Rakib কাদের সাথে ঘুরে সেটা আর না বলি।।  সবকিছুর পরেও সবার শত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় করে প্রিয় মানুষগুলির সাথে সময় কাটানোর সুযোগটা আমি কখনই মিস করতে চাইনা তাই আবারো একসাথে। আর ভ্যেনু পূবাইলের "জল ও জঙ্গলের কাব্য"। 

ভ্রমনঃ

নাম শুনে বোধকরি যে কারোরই অনুমেয় হবে যে এখানে 'জল' ও 'জঙ্গল' কাব্য করে। আদতেও তাই! নেই কোন ইট পাথরের জঞ্জাল, নেই কোন শব্দ দূষণ । পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ কেমন, কোন পাখি কিভাবে ডাকে, জলে বৃষ্টির শব্দ কি আসলেই রিনিঝিনি, টিনের চালেই বা বৃষ্টি কেমন খেলা করে এই ব্যাপারগুলি খুব কাছ বুঝতে পারবেন এখানে এলে। লাগোয়া বিলে মন জুড়ানো বিভিন্ন রঙের কলমি, শাপলা, শালুক । ইচ্ছে হলেই নিজের মত করে নৌকা বেয়ে চলে যাওয়া যায় বিলের উপর বাঁশের বাঁধানো মাচায়, মাছ ধরার ইচ্ছা থাকলে বসে যেতে পারেন পুকুর বা বিলে। গান গাইতে চান? বসে যেতে পারেন সেখানে থাকা বাউল দলের সাথে।

 


 






[caption id="" align="aligncenter" width="512"] অতীত সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] হাসন-লালনের গান[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি[/caption]

পৌছলাম বিকেলে। যাওয়ার সাথে সাথেই যা পাবেন তা হলো মন জুড়ানো এক গ্লাস লেবুর শরবত। এরপর তালের পিঠা, আলুর চপ আর গুড়া মাছ ভাজা চিবুতে চিবুতেই দেখলাম সূর্যি মামা বাড়ি ফিরে গেছে। গল্পে গল্পে নৌকা ভাসিয়ে দিলাম বিলে। মাঝ নদীতে শুনশান নিরবতায় আকাশের পানে তাকিয়ে আসলেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এত তারা আকাশে!!! শেষ করে এত তারা দেখেছি মনে নেই। প্রিয় কারো জন্যে না হয় গাইলেনই দুটো লাইন

আজ ফিরে না গেলেই কি নয়
সন্ধ্যা নামুক না জোনাকি জ্বলুক না
নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময়।।

পেটে টান পরায় ফিরে এলাম ডাঙ্গায় :) যথারীতি রাতের ভুড়িভোজ। স্পেশাল আইটেম ইয়া বড় ২টা রুই-কাতল মাছের বারবিকিউ।

আড্ডা, তাস, চা'য়েই রাত ৪টা বাজিয়ে ফেললাম। ঝুম বৃষ্টির ছটায় ভোরের ঘুম জড়ানো চোখ যখন খুলি তখন ভোর ৫.৩০টা ।  শুয়ে থাকার কি আর মানে হয়? বেরিয়ে পরলাম সবাই 'বৃষ্টিস্নানে' নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে গলা ছেড়ে গান গাইতে! বইয়ের পড়া, অফিসের কাজ সব কিছু দিব্বি মনে করতে পারলেও শেষ কবে এমন বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই মনে করতে পারলাম না !! এটাই কি জীবন ভুলে অসীমের পানে ছুটে চলার ফল?

এখন শরত কাল এটা বুঝাতেই মনেহয় ঝুম একটা বৃষ্টির পরে পুব আকাশ ঝলমল করে গতকালের বিদায় নেয়া সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। লাল আভা মাখানো ধরনী তখন আসলেই অপার্থিব। আর আকাশ জুড়ে  শ্বেতশুভ্র, পেজো তুলার অসীম রকম নীলের সাথে অন্তরঙ্গ মাখামাখি। লিলুয়া বাতাসে আপনি গাইতেই পারেন "লিলুয়া বাতাসে প্রান না জুড়ায়... না জুড়ায় রে..."

ঢেঁকির শব্দ জানান দিলো নাস্তা তৈরির পথে :) চালের রুটি, বুটের ডাল, সবজী, মুরগির কারি, লুচি ভাজা... আহ!! (ক্ষুদা পেয়ে যাচ্ছে) নাস্তার শেষে চিতই পিঠা-সরিষা বাঁটা দিয়ে মুখটা ঝাঁঝিয়ে নিতে পারেন। সকাল দুপুর বিকাল রাত যখন ইচ্ছে তখন চা পাবেন ইচ্ছে মত। নাস্তার পরে অলস সময়ে পেয়ে যাবেন জাম্বুরা ভর্তা, কাঁচা পেঁপে বা আমড়া বা কামরাঙ্গা ভর্তা। বা কাসুন্দি মাখানো কাচা-পাকা আম। জল এসে যাচ্ছে জিভে? না আসলে ডাক্তারের কাছে যান।  দুপুরের খাবারের মেন্যুটা না বলাই থাক। কখনো গেলে জেনে নিয়েন।

 

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] প্রিয় মুখ[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="336"] সেদিন দুজনে। ছবির মডেলঃ ভাই, ভাবী[/caption]

যে বিষয়গুলি না উল্লেখ করলেই নয়ঃ

আথিতেয়তা । কেউ কখনও আমাদের দেখেও নি বা চিনেও না । কিন্তু বিদায় বেলায় সবাই মিলে সামনের সড়কে এসে বিদায় জানাচ্ছে - ব্যাপারটা আমাকে অভিভূত করেছে। একবার দুইবার না; চার- চার বার!

খাবার-দাবার। বিশদ বলতে গেলেই জিভে জল এসে যাচ্ছে সো নো ডিটেইলস।

ছিমছাম সরলতা - গেলেই বুঝতে পারবেন

সজীব-স্নিগ্ধতা।

ভূতের রাজা ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ কারন উনি না থাকলে এই জায়গার সন্ধান পাওয়া ও যাওয়া-আসা  আসলেই সম্ভব হত না কখনও।