Friday, July 4, 2014

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-২

বেনাপোল সীমান্ত এক মাছের বাজার। প্রথমে বাস নিয়ে নামালো এক কাউন্টারে। সেখানে এক ছ্যামড়া এসে আমাদের টিকেট দেখতে চাইলো। টিকেট দেখানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের গেঞ্জিতে ধাম ধাম করে গ্রীণ লাইন স্ক্যানিয়া লেখা স্টিকার লাগিয়ে দিলো। অতঃপর আরেকটা ছোট বাসে করে আমরা গ্রীণ লাইনের আরেক কাউন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে গ্রীণ লাইনের লোকজন আমাদের ডিএম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো। সেই সাথে পাসপোর্ট এবং ৩০০ করে টাকা নিলো ট্রাভেল ট্যাক্সের। সত্যি কথা বলতে সীমান্ত পার হতে তারা খুবই উপকার করলো। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের জায়গাটাতে প্রবেশ করতেই কাস্টমসের লোকজন খুব ব্যাগ খুলতে চাইলো। কিন্তু আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক একজন গ্রীণ লাইনের লোক ছিল। সে গ্রীণ লাইন বলতেই সব ক্লিয়ার। এর মধ্যে আরেকজন এসে ট্যাক্সের রশিদ এবং পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন ক্রস করে গ্রীণ লাইনের লোকের সাথেই হেঁটে সীমান্ত পার হলাম আমরা। এই সময়টা একটু বিপদজনক। দালালরা ছোঁক ছোঁক করতে থাকে টাকা খাওয়ার জন্য। অপরপ্রান্তে যাওয়ার পর আমাদের পাসপোর্ট দেখে দেখে ভারত সরকারের এম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো ভারতীয় গ্রীণ লাইনের এক চাচা। অতঃপর আমরা ভারতের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে ‘দাদা’, ‘দাদা’ শুনতে পাচ্ছি প্রচুর। প্রকৃতি পুরোই বাংলাদেশের কিন্তু যেখানে যেখানে মানুষ হাত লাগিয়েছে সেখানেই বাংলাদেশের চেয়ে পার্থক্য চোখে পড়ছে। লেখার ফন্ট, বাংলা বাক্য গঠনের ধরণ সবই আলাদা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন শেষ হলো। বের হয়ে টং দোকান দেখলাম কতগুলো। পুরোই বাংলাদেশি টং কিন্তু প্রতিটা পণ্য আলাদা। সেটাই স্বাভাবিক। ভাবতেই পারছিলাম না ভারতে প্রবেশ করে ফেলেছি। এবারে ভারতীয় গ্রীণ লাইনে করে কোলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের চেয়ে ওদের বাসের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। যশোর রোড ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, পথ আর ফুরোয় না। মাঝে একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাস থামলো। হোটেলগুলো অদ্ভুত। হোটেল ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা দূরে তার বাথরুম। খেতে বসে কী খাবো তা চিন্তা করছিলাম। ওয়েটার দাদা দেখলাম বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন। শুনেছিলাম ভারতে খাবার সস্তা। তিনজন ভাত, মাছ, মাংস নেয়ার পর বিল আসলো ৪০০ রুপির মতো। তখনই জানতাম না, হোটেল নয়, সস্তা স্ট্রিট ফুড। অত্যন্ত বাজে স্বাদ। রান্নার ধরণই আলাদা। এ ধরণের রান্না খেয়ে আমরা অভ্যস্ত না। ক্ষুদার্ত ছিলাম তাই খেয়ে নিলাম। এরপর বাসে চেপে কোলকাতা যাত্রা। রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায়ই নেউ বাংলাদেশের বাইরে কোনো স্থান এটি। তবে কোলকাতা শহরে প্রবেশ করে পার্থক্য বোঝা গেল। রাস্তাঘাটে দোকানপাটের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড দেখে খুব মজা লাগলো। কেমন অদ্ভুতভাবে বাংলা লেখা। বিকেল ৫ টার কিছু পরে আমরা কোলকাতার মার্ক্যুইজ স্ট্রিটের গ্রীণ লাইনের কাউন্টারে নামলাম। অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘ যাত্রা।

street-in-front-of-the

DSC_1683[1]--621x414

গাট্টি-বোঁচকা পিঠে ঝুলিয়ে শুরু হলো আরেক কঠিন কাজ। হোটেল খোঁজা। বাসে সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দু’জন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনাদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের পরে। আমরা এক সাথেই হোটেল খুঁজতে বের হই। ২-৩ টি হোটেলে রুম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গী লেনের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে রুম খালি পাওয়া যায়। আমরা ৩ জন ডাবল বেড রুমে ৮৯০ রুপি ভাড়ার বিনিময়ে উঠি। আর উনারা ২ জন ডাবল বেড রুমে ৮০০ রুপিতে ওঠেন। রুমের অবস্থা মোটামুটি কিন্তু টয়লেটের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এ নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কিছুটা বিতণ্ডাও হয়। সবকিছু রফা হলে উঠে যাই রুমে। গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে সন্ধ্যা। এবারে আমরা ৩ বন্ধ বের হই নিউ মার্কেটের উদ্দেশে। হাতে তখন বেশ কিছু কাজ। দেশে কথা বলার জন্য সিম কার্ড কিনতে হবে। খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। বাস থেকে নামার পর কিছু সিম বিক্রেতা আমাদের যে অফার দিচ্ছিলো সে অফার পরে নিউ মার্কেটের আশেপাশে খুঁজে আমরা আর পাচ্ছিলাম না। অফারটি ছিল এরকম যে সিমের দাম ২০০ রুপি। সাথে ২০০ রুপি টক টাইম। অর্থাৎ, সিমটি ফ্রি। এ অফার খুঁজে না পেয়ে অবশেষে মাথাপিছু প্রায় ৩০০ রুপি খরচ করে সিম কিনি আমরা। এবারে আমার বন্ধুদের নিউ মার্কেটের দোকান ঘোরা আর আমার খাবার সন্ধানের পালা শুরু হয়।

(চলবে)

Tuesday, July 1, 2014

আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-১

কোলকাতা আর দার্জিলিং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গত ২ জুন রাত ১১ টায় গ্রীনলাইন বাসে করে রওনা দিয়েছিলাম বেনাপোলের উদ্দেশে। পুরো ব্যাচ থেকে কোলকাতা, আগ্রা, দিল্লি ও কাশ্মীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। সে লক্ষ্যেই ভারতের ভিসা করানো হয়। কিন্তু শেষ মূহুর্তে উত্তর ভারত থেকে রেলের ফিরতি টিকেট না পাওয়া যাওয়া পিছিয়ে যায় ট্যুর। তাই আপাতত হাতের কাছের কোলকাতা ও দার্জিলিং এই সাধ মেটানোর পরিকল্পনা করি আমরা তিন বন্ধু। আমি, শ্রাবণ ও মিশু। ৭-১০ দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। আমি যেখানে জীবনেও কোনো কাজের জন্য কোনো প্রকার প্রস্তুতি নিই না, সেই আমি এ যাত্রা ছোটখাটো এক মহাপ্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললাম। দার্জিলিং এ নাকি তখন বৃষ্টির মৌসুম। দেরি না করে জুতার বাক্সে পড়ে থাকার রাবারের ছেঁড়া স্যান্ডেলটা সেলাই করে নিয়ে আসলাম। প্যান্ট সংকটে ভুগছিল ক’দিন ধরেই। বিদেশ-বিভূঁইয়ে গিয়ে প্যান্ট সংক্রান্ত আপদ থেকে মুক্তি পেতে দু’খানা প্যান্ট খরিদ করলাম ধানমন্ডির বিগ বস থেকে। আমি যেহেতু ঘাড়ে-গর্দানে বিগ বস সেহেতু সহজে নিউ মার্কেট এলাকায় আমার প্যান্ট পাওয়া যায় না আজকাল। বিগ বসেই ধরনা দিতে হয়। একটা গ্যাবার্ডিন আর একটা জিন্স। সবকিছু রেডি করে খেয়াল করলাম যাত্রাপথে কান খোঁচানো অতি জরুরি একটা কাজ। সেজন্য ফুটপাত থেকে দু’ প্যাকেট কটন বাড কিনে ফেললাম। কান খোঁচানোর সময়ে যে জাগতিক সুখ লাভ করা যায় তা যারা কান খোঁচাতে অভ্যস্ত তারা ভালোই জানেন।

বাসের টিকেট কাটা হয়েছিল যাত্রার দু’দিন আগে। ঢাকা থেকে বেনাপোল ১২০০ টাকা আর সীমান্ত পার হয়ে ওদিকে হরিদাসপুর থেকে কোলকাতা যাওয়ার জন্য গুনতে হবে আরো ২৮০ রুপি। টিকেট হাতে পাওয়ার পর আমার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মিশু উত্তেজনায় প্রত্যহ ৩-৪ বার ফোন দেয়া শুরু করে দিয়েছিল। ট্যুর উপলক্ষে সে একখানা বিরাট সাইজের লুঙ্গি খরিদ করেছে। বন্ধু-বান্ধবের সামনে কাপড় বদলানোর এর চেয়ে ভালো উপার আর কী আছে? আমি নিয়মিত লুঙ্গি পরি বিধায় লুঙ্গির সংকট আমার কখনই হয় না। আরেক বন্ধু শ্রাবণ বর্ষাতি কেনার জন্য চাংখারপুল ও বঙ্গবাজার এলাকায় টহল দেয়া শুরু করলো। ঐ এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো হোটেল আল-রাজ্জাকে দুপুরের খানা খাওয়া।

যাই হোক, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে পান্থপথের বাস কাউন্টারে হাজির হলাম। কিন্তু বাসের আর দেখা নেই। রাত ১১ টার বাস কাউন্টারে হাজির হলো ১ টায়। শুরুতেই ২ ঘন্টা দেরি। অতঃপর আমাদের সাধের ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। চলছি তো চলছিই। ভোর হওয়ার আগে আগে পৌঁছালাম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। আস্তে আস্তে বাস এগোচ্ছে। বিশাল লাইন। বাস থেকে হাঁটাহাঁটিও করলাম কিছুক্ষণ। এক সময় ফেরিতে উঠলাম। বেশ খিদে পেয়েছে ততক্ষণে। ফেরিতে কিছু খেয়ে পেট খারাপ হবে এ ভয়ে আর কিছু খাওয়া হলো না। ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটতে শুরু করলো। থাকতে না পেরে ১০ টাকার একটা জাম্বো ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আয়েশ করে খেতে খেতে ঘাটে নামলাম আমরা। এরপর আবারো যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। পথ আর ফুরোয় না। ফরিদপুর শেষ করে যশোরের কোনো এক বন্ধ পেট্রোল পাম্পের সামনে বাস গেল নষ্ট হয়ে। এসি বন্ধ। গরমে ঘামছি। কিছুক্ষণ পর ঘামের সাথে যোগ দিল বৃষ্টির পানি। এসি বাসের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে বাসে। বাসভর্তি যাত্রী গ্রীন লাইনকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। সুপারভাইজার সাহেব আশ্বাস দিলেন আরেকটি বাস আমাদের উদ্ধার করতে রওনা হয়েছে। সে বাসেরও দেখা নেই। ঘন্টাখানেক রাস্তার মাঝখানে বসে থেকে উদ্ধারকারী বাস হাজির হলো। আমরা ভিজে ভিজে বাস বদলালাম। নতুন বাসে যেতে যেতে যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে দু’টো দল তৈরি হলো। এক দল চায় খাওয়ার জন্য হোটেলে বাস থামাতে, আরেক দল বাস থামাতে নারাজ। অনেক দেরি হয়েছে, আর দেরি মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, তাদের সাথে গাট্টি-বোঁচকা ভর্তি খাবার। অবশেষে অনেক হৈ চৈ করে বাস একটা হোটেলের সামনে থামানো হলো। সে হোটেলে ঢুকে দেখা গেল তাদের চুলা বন্ধ। কোনো খাবার নেই। তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার অপর পাশে আরেকটু ছোট্ট গ্রামীণ হোটেলে রাবার গরুর মাংস দিয়ে আটা রুটি কোনোমতে নাকেমুখে গোঁজা হলো। এরপর বাসে চেপে একবারে বেনাপোল সীমান্তে।

Benapole-Port-

(চলবে)

Wednesday, June 25, 2014

অগতানুগতিক কিছু বিষয় যেগুলোর ওপর রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়া সম্ভব-২

পড়াশুনার জন্য রয়েছে অদ্ভুত থেকে অদ্ভুতুরে সব বিষয়। এ পর্বে তেমনই আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে হাজির হলাম।

ঘাসযুক্ত লনের বিজ্ঞান: টার্ফগ্রাস সায়েন্স। পড়ানো হয় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। গলফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলার জন্য সুন্দর সুষম ঘাসযুক্ত মাঠের প্রয়োজন হয়। এ সকল মাঠ কীভাবে তৈরি করতে হয় তা নিয়ে পড়াই এ বিষয়ের মূল লক্ষ্য। রীতিমতো জীববিজ্ঞান, রসায়ন, প্ল্যান্ট সায়েন্স, আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয় ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন টার্ফগ্রাস সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের।

115773361

বিনোদন প্রকৌশল: ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা অ্যাট লাস ভেগাসে বিনোদন প্রকৌশলের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। ইউনিভার্সিটির অবস্থান শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এ বিষয়ে আসলে কী পড়ানো হয়। পড়ানো হয় মূলত ক্যাসিনোর বিভিন্ন গেইম তৈরি, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্য ও বাণিজ্যিক উপস্থাপন বিষয়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের বায়োমেকানিক্স থেকে শুরু করে অ্যানিমেট্রনিক্স পর্যন্ত পড়তে হয়।

ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজ: অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলো একই পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করেন। যেমন- ওয়ালমার্ট, ফোর্ড, গ্যাপ, মোটোরালা ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় তা নিয়ে পড়াশুনা করায় ফ্লোরিডার স্টেটসন ইউনিভার্সিটি।

কানাডিয়ান স্টাডিজ: আফ্রিকান, ওরিয়েন্টাল কিংবা আমেরিকান স্টাডিজ রয়েছে। কিন্তু কানাডিয়ান স্টাডিজ? হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রদের জন্য কানাডিয়ান স্টাডিজ খুলে রেখেছে। মার্কিন নাগরিকরা যেন তাদের উত্তর অবস্থিত বিশাল কানাডার মানুষ সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানতে পারে সেজন্য। কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি সব বিষয়েই এখানে পড়ানো হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটি, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক প্ল্যাটসবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্টে কানাডিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়ানো হয়।

জ্যাজ স্টাডিজ:সঙ্গীত ঘরানার অন্যতম এক শাখা জ্যাজ। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। তবে বিশ্বব্যাপী এর বহু ভক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র জ্যাজ মিউজিক শেখা এবং তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ভূমিকা, বিগত দশকগুলোতে জ্যাজ সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে পড়ানো হয় জ্যাজ স্টাডিজে। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ও ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় এ বিষয়টি।

ইকোগ্যাস্ট্রনোমি: ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ানো হয়। মাঠ থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত খাবার কীভাবে পৌঁছায় তাই নিয়েই এদের পড়াশুনা। কতগুলো ধাপ পেরিয়ে কোনো জিনিস মানুষের খাবারে পরিণত হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাস ইকোলজিতে কী প্রভাব বিস্তার করে এসব তাদের পাঠ্য। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি আছে গ্র্যাজুয়েটদের। কৃষি থেকে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সবই পড়তে হয় তাদের। মনে হচ্ছে, এ বিষয়টা নিয়ে আমার পড়া উচিৎ ছিল।

অশ্ববিদ্যা: ঘোড়া নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকে। ওয়েস্টার্ন মুভিতে ঘোড়া নিয়ে খুব ভাবসাবের দৃশ্য থাকে। অশ্বচালনা, অশ্বপালন এবং অশ্বকে বিভিন্ন খেলার জন্য প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো হয় এ অশ্ববিদ্যা বা ইকোয়াইন স্টাডিজে। ম্যাসাচুসেটসের বেকার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অভ মেরিল্যান্ডে এ বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া হয়।

117951204

ন্যানিইং: পাশ্চাত্যে ন্যানি খুব পরিচিত একটা বিষয়। বিশেষ করে ধনী পরিবারে ন্যানিদের দেখা যায়। ধনী পরিবারের শিশুদের দেখাশুনা করে থাকেন তারা। বাংলাদেশের বুয়া আর কি। তো এই ন্যানিইং এর ওপর ১২ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয় কেনটাকির সুলিভান বিশ্ববিদ্যালয়। সিপিআর, প্রাথমিক চিকিৎসা, বাচ্চার সুরক্ষাজনিত বিষয়, বাচ্চাকাচ্চাকে আনন্দ দেয়ার কৌশল থেকে শুরু করে বাচ্চা ও বাচ্চার মা-বাপের সাথে “ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন” পর্যন্ত শেখানো হয় এ কোর্সে।

কমিক আর্ট:  কমিক বইয়ের মতো অসাধারণ জিনিস আর কয়টা আছে? এই তো টিভি, কম্পিউটার যখন ছিল না তখন ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গল্প বলার জাদুকরী ভূমিকা পালন করেছে কমিক্স। যত আধুনিক প্রযুক্তিই আসুক না কেন টিনটিন, আর্চি, চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টের আবেদন কী কমেছে আমাদের কাছে? বড় বড় কমিক আর্টিস্টরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীতই জন্ম দিয়েছেন অসাধারণ সব কমিক্স বইয়ের। এই কমিক আর্টের ওপর ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস ডিগ্রি প্রদান করে মিনিয়াপোলিস কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন।

বন্দুক বানানো (গানস্মিথিং), ঘড়ি বানানো (ওয়াচস্মিথিং), আউটার ওয়ার্ল্ডের বায়োলজি নিয়েও পড়াশুনার অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে রয়েছে। আছে সার্কাসে পারফর্ম করার বিদ্যা নিয়েও ডিগ্রি। সেগুলো হয়তো হাজির হবো অন্য কোনোদিন।

তথ্যসূত্র: স্টাডি ইন আনইউজুয়াল সাবজেক্টস লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব

Tuesday, June 24, 2014

অগতানুগতিক কিছু বিষয় যেগুলোর ওপর রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়া সম্ভব

বহু আগে অদ্ভুত কিছু পেশা নিয়ে লিখেছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে অদ্ভুত বা গতানুগতিক নয় এমন কিছু বিষয় পেয়ে গেলাম যার ওপর রীতিমতো উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার, পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে কেউ শিক্ষা কিংবা শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করলে আমরা অবাক হয়ে যাই, এইটা আবার কোন বিষয়? অথচ সারা পৃথিবীর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো পড়ানো হয়। কিন্তু যে বিষয়গুলো সত্যিই অপ্রচলিত এবং কিছু ক্ষেত্রে অদ্ভুত সেগুলো নিয়েই আজকের লেখা।

2636215

দ্য বিটলস: হ্যাঁ, ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের ওপরে রীতিমতো ডিগ্রি প্রদান করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ডিগ্রির নাম এম.এ ইন দ্য বিটলস, পপুলার মিউজিক অ্যান্ড সোসাইটি। এখানে গত ৫০ বছরে কী ধরণের পপ সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে, সে সঙ্গীতের ওপর বিটলসের প্রভাব এসব বিষয়ে পড়ানো হয়।

মারিজুয়ানা চাষ: ক্যালিফোর্নিয়ার ওকস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় রীতিমতো মারিজুয়ানা চাষের ওপর ছাত্রদের পড়াশুনা করায়। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসার কাজে মারিজুয়ানার গুণাবলীর বিষয়ে। মারিজুয়ানা চাষ পদ্ধতি, তার ইতিহাস, আইনি দিক নিয়ে পড়ানো হয়। ড্রাগ ডিলিং হচ্ছে এমন সন্দেহে তবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ক্লাস চলতে চলতে সেখানে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিইএ, ইউ মার্শাল আর আইআরএস প্রভৃতি ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  সদস্যরা।

বিয়ার বানানো: পোশাকী নাম ফারমেন্টেশন সায়েন্স। পড়ানো হয় অ্যাপালাচান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এ বিষয়ে ব্যাচেলর করতে হলে রীতিমতো রসায়ন ও জীববিদ্যার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। পড়তে বিয়ার ব্যবসা ও পরিবেশনার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে। কঠিন অবস্থা।

যৌনতা: সান ফ্রান্সিস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যৌনতা বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। মানুষের যৌন আচরণ, কলা, শিল্প ও সাহিত্যে মানব যৌনতার বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয় এ সাবজেক্টে। ডিগ্রির মূল উদ্দেশ্য সমাজে যৌন হয়রানী বন্ধ করা।

মদ মেকিং: কেতাবী নাম ভিটিকালচার অ্যান্ড এনোলজি। পারফেক্ট মদ বানানো নিয়ে পড়াশুনা। আঙ্গুর চাষের জন্য মাটি পরীক্ষা, আবহাওয়া নির্বাচন থেকে শুরু করে উন্নত মানের মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর বাছাই করে মদ বানানোর সকল প্রক্রিয়া শেখানো হয় এখানে। মদ বাজারজাতকরণের দিকও পড়ানো হয়। নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ের গর্বিত ডিগ্রিদাতা।

সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান: ডিসিশন সায়েন্স। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না?? কেন পারেন না? কীভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এসব কিছুর ওপর পড়াশুনা করে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিশন সায়েন্সের পন্ডিত শিক্ষার্থীরা। ডিসিশন সায়েন্সের ওপর রীতিমতো পিএইচডি ডিগ্রি দেয় তারা। এই পিএইচডিধারী পন্ডিতরা অংক কষে আপনার কোম্পানীর জন্য প্রয়োজনীয় ডিসিশনও নিয়ে দিতে পারে।

জনপ্রিয় সংস্কৃতি: এ বিষয়ের ওপর বিএ ডিগ্রি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাওলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি। সাম্প্রতিক সময়ের টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, গাড়ি, বাড়ি, সঙ্গীত, ম্যাগাজিন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড, সেলিব্রেটিদের জীবনযাপন ভালোমতো খিয়াল করে তা নিয়ে গবেষণা করাই এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ। কীভাবে আগের চেয়ে এখনকার সংস্কৃতি পরিবির্তন হলো তাও তারা খুঁজে বের করে। চমৎকার কিন্তু!

ফুলের দোকানদারি: ফ্লোরাল ম্যানেজমেন্ট। আমাদের শাহবাগের ফুলের দোকানদাররা এই বিষয়ে না পড়েই কঠিন ব্যবসায় করে ফেলছে। কিন্তু মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উৎপাদকের কাছ থেকে ফুল কিনে বাজারজাত করা এবং দোকানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার ওপরে পড়ানো হয়। ফুলের দোকানকে আনন্দদায়ক বাগানের আদলে সাজিয়ে ফুল বিক্রিও যে একটা শিল্প তাও শেখানো হয়। আর ফুল ব্যবসার বাণিজ্যিক দিক (সহজ কথায় বিবিএ) তো অবশ্যই পড়ানো হয়।

নিলামওয়ালা: অকশনিয়ারিং। নিলামে মাল তুলে কীভাবে তা বেচতে হবে এ বিষয়ে ২০ ক্রেডিটের কোর্স করায় পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গ এরিয়া কমিউনিটি কলেজ। রীতিমতো লাইসেন্সড নিলামওয়ালা হওয়া যায় এ কোর্স শেষে পরীক্ষায় পাশ করে।

51892778

প্যাকেজিং: প্যাকেজিং বা বাক্স-প্যাটরা বিষয়ে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি ব্যাচেলর, মাস্টার এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। তা কী শেখানো হয় এখানে? পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। দুনিয়া লাখ লাখ ধরণের প্রোডাক্ট প্রতিদিন বিক্রি হয়। এসবই কিন্তু বাজারে আসে কোনো না কোনোরকম প্যাকেটের ভেতরে। এই প্যাকেজিং পরিবেশকে যথাসম্ভব কম ক্ষতি করে কীভাবে করা যায় তাই নিয়ে পড়াশুনা। এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এমন স্বপ্ন দেখেন যে অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো সিস্টেম তারা দাঁড় করাবেন যখন প্যাকেট ছাড়াই পণ্য বিক্রি হবে। (আমার প্রশ্ন- তখন এই পন্ডিতরা করবে কী?)

 

তথ্যসূত্র: গুগলে স্টাডি ইন আনইউজুয়াল / উইয়ারড সাবজেক্ট লিখে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব

রমজানের প্রস্তুতি

moshla
রোজা তো প্রায় এসেই গেল তাই যারা অনেক বিজি থাকেন তাদের জন্য আমার কিছু টিপস রইল। রোজায় যেহেতু সবারই কিছুটা ক্লান্ত লাগে তাই কিছুটা কাজের চাপ যেন কম থাকে তার জন্য চাইলে এইগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন।

১। রোজায় আমরা যে সমস্ত রান্না সচরাচর করে থাকি সেগুলোতে বাটা মশলা লাগে এজন্য তুলনামুলক রোজার মাঝে বাটা মশলা বেশি লাগে। তাই রোজার আগেই বেশি করে আদা, রসুন, পিঁয়াজ সহ সব মশলা বেটে বা ব্লেন্ড করে ফ্রিজের ডিপে তুলে রাখুন। আমি ইতিমধ্যেই করে রেখেছি।

২। ডালের বড়ার জন্য ডাল বেটে ডিপে রাখুন। প্রতিদিন ডাল বাটার ঝামেলা থেকে মুক্ত।
৩। রোজার আগের দিন ছোলা বেশি করে (আমি অন্তত সাত দিনের জন্য রাখি) সিদ্ধ করে প্লাস্টিকের ঢাকনা দেয়া বক্সে তুলে ফ্রিজে রাখুন, ডিপে না রাখলেও চলবে। ওগুলো শেষ হলে আবার বেশি করে একদিন সিদ্ধ করে রাখুন। তাহলে চটপট ছোলা তৈরি করা যাবে।
৪। আগেই কাঁচাবাজার করে ফেলুন এবং কাটা ধোয়া করে ফ্রিজে রাখুন তাহলে আর রোজা থেকে বাজার করা বা তা গোছানো নিয়ে ঝামেলা করতে হবে না।
৫। মাছ, মাংস তো বটেই শাক বাদে অন্যান্য সবজির গায়ে লেগে থাকা পানি ময়লা এগুলো পরিষ্কার করে মুছে রাখলে ১০- ১৫ দিন পর্যন্ত ভাল থাকে।
৬। চাইলে কিছু মাংস ভুনা করে ডিপে রাখতে পারেন, মাছও রাখা যায়। একদিন যতটুকু লাগে এই পরিমান নিয়ে একেকটা বক্সে রেখে দিলে মোটেই স্বাদ নষ্ট হয়না।
৭। খেজুর আগেই বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে ফ্রিজে (ডিপে না) রেখে দিন এরপর ইফতারের প্লেট সাজানোর সময় সরাসরি দিতে পারবেন ধুতে হবে না।
৮। যারা নিজেরাই শিঙ্গাড়া, পুরি বানাতে পারেন, বেশি করে বানিয়ে সংরক্ষন করুন ফ্রিজে।
৯। চাদর, পর্দার মত ভারি কাপড় গুলো ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে গুছিয়ে রাখলে কম পরিশ্রমে আর কম সময়ের মাঝেই কাজ শেষ করতে পারবেন বাইরের ভেজাল খাবার খেতে হবে না। যেটুকু সময় বেঁচে গেল সে সময় ব্যবহার করে নিজের ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা করা যায়, কারন নিজে যদি জানেন আসলে আপনার ধর্ম আপনার কাছে কি চায় তাহলে কেউ আপনাকে অন্তত ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রতারনা করতে পারবে না বা ধোকা দিতে পারবে না।
সবাইকে রমজানের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

Sunday, May 25, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৫ম ও শেষ পর্ব

মার্কেটে রাখাইনদের দোকান বলতে গেলে আর নেই। সব বাঙালিদের দখলে। আমরা খুঁজে খুঁজে রাখাইনদের দোকান খুঁজে বের করলাম। বড্ড ভালো লাগে তাদের দোকানে গেলে। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি বুঝে গিয়েছেন, খুলে বলতে হবে না। মার্কেট ঘোরা আমার খুব অপছন্দের কাজ। কিন্তু ভালোই লাগছিল সেখানে। রাখাইন দোকানীদের কথাবার্তা এতো সুন্দর। মন ভালো হয়ে যায়। জিনিসপত্র কিনে সোজা হোটেলে চলে গেলাম। সব কিছু রেখে পুনরায় চলে আসলাম লাবণী পয়েন্টে। সেখান কড়ি-টড়ি কেনা হবে। ঘুরে ঘুরে তাও কেনা হলো। এরপর অটোতে করে যাওয়া হলো মারমেইড ক্যাফেতে। তাদের অন্দরসজ্জা সুন্দর বিধায় যাওয়া হয়েছিল। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী। তিনটা লেমোনেড অর্ডার করা হলো। বসতে অসাধারণ লাগে। মেনুতে লেখা সব খাবারের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ এবং ৬ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। ভালো কথা। আমরা হিসাব করে ফেললাম কত টাকা বিল আসবে। লেমোনেড আসলো। বিল দিতে বললাম কেননা একটু তাড়াহুড়ো ছিল আমাদের। রাতের খাবার খেতে যেতে হবে। দেখলাম বিল এসেছে কাঙ্ক্ষিত টাকার চেয়ে ২ টাকা বেশি। পরে আমি আবিষ্কার করলাম তারা খাবারের দামের ওপর সার্ভিজ চার্জ আরোপ করেছে। এরপর সার্ভিস চার্জসহ মোট দামের ওপর আরোপ করেছে ভ্যাট। পুরা বাটপার। এখানেই শেষ নয়। ২৯৮ টাকা বিল এসেছে। ৫০০ টাকা দেয়ার পর ফেরত এনেছে ২০০ টাকা। ২ টাকা গায়েব। আমি তো অত সহজে ছাড়ার পাত্র নই। ওয়েটারকে ডেকে ২ টাকার কথা বললাম। আমার বন্ধুরা খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু ২ টাকা কম দিবে কেন? ২ টাকা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। রাতে খেলাম পউষীতেই। এবারে আমার বন্ধুরা নিলো একটা করে লইট্টা ফ্রাই আর একটা করে রূপচাঁদা। আমি লইট্টা ফ্রাইয়ের সাথে নিলাম গরুর ভুনা। সবগুলো খাবার স্বাদই অসাধারণ। ভরপেট খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় বিআরটিসি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

3577517

জিইসি মোড়

১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।

handi-restaurant orig_218bab8ebde8a5d8b90a00a8d5638a5082d25dfe

পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।

ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।

Saturday, May 24, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৪র্থ পর্ব

হিমছড়িতে পৌঁছেই ঝর্ণা খোঁজা শুরু করে দিলাম। দেখলাম ১৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢোকার গেইট হয়েছে। ঝর্ণা দেখার কম্পাউন্ডে ঢুকতে ২৩ টাকার টিকেট কিনতে হয়। ১৫ টাকা টিকেটের দাম আর বাকিটা ভ্যাট (ভ্যাট আর শান্তি দিলো না)। গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলাম তীর চিহ্ন দিয়ে বড় ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথ। ঝর্ণা সামনে গিয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে ঝর্ণা। চেনার কোনো উপায় নেই। ঝর্ণার উচ্চতা আমার চেয়ে একটু বেশি হবে। পাহাড় ভেঙে ঝর্ণা ছোট হয়ে গিয়েছে। ঝর্ণার উৎসের দিকে যাওয়াও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মিনি ঝর্ণায় একটু হাত-পা ভেজালাম। ক্যামেরা নেই, ছবি তোলা হলো না। স্থানীয় ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে মেমরি কার্ডে দিতে চাইলো, কিন্তু সে বস্তুও আমাদের সাথে নেই। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম। উঠছি তো উঠছি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। হাঁসফাঁস অবস্থা আমার! আর পারি না। মানুষজনও দেখি সব হাঁপাচ্ছে। প্রায় শেষ পর্যন্ত ওঠার পর একটা সমতল জায়গায় আমার বন্ধুরা ডাবের পানি পান করলো। খালি হাতে উঠতেই যেখানে খবর হয়ে যায় সেখানে ডাবওয়ালা কীভাবে প্রতিদিন একগাদা ডাব নিয়ে উঠে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আর পারছিলাম না উঠতে। আমার বন্ধুরা চূঁড়ায় উঠলো। আমি নেমে এসে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বালির বস্তার ওপর শুয়ে পড়লাম। বুক ভরে বাতাস নিলাম। হানিমুনে আসা নবদম্পতিদের আড়চোখে লক্ষ্য করলাম। তাদের আনন্দে আমিই যেন আনন্দিত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট একা একা খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম সাগড় পাড়ে। আকাশে তখন ঘন মেঘ। রোদের জন্যে তাকানোও যায় না ভালো করে। রোদ চশমাই ভরসা। এরমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে অটো স্ট্যান্ডে যেতে বললো। ইচ্ছে ছিল সাগর পাড়ে বসে এক গেলাস জুস পান করবো। সে সুযোগ না দিয়ে তারা ১২০ টাকায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ঠিক করে ফেললো। মনোরম পথ ধরে লাবণীতে পৌঁছালাম।

index

cms.somewhereinblog.net

এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।

(চলবে)