Thursday, January 30, 2014
আরো কিছু অদ্ভুত কাজ যার কয়েকটি সত্যিই ভয়াবহ
৯। গন্ধ শুঁকনেওয়ালা (odor tester): ভয়ানক এক চাকরি। মানুষের শরীরের দুর্গন্ধ শুঁকতে হবে। গন্ধ শুঁকে তা পার্থক্য করার গুণাবলী থাকতে হবে। রসায়ন বিষয়ে মৌলিক ধারণা রাখতে হবে। ডিওডোরেন্ট এবং বডি স্প্রে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরণের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরণের স্প্রে তৈরি করে। এরপর বাজারে ছাড়ার আগে তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে হয় যে কী ধরণের গন্ধের বিপরীতে তাদের বিভিন্ন ঘ্রাণের স্প্রে কেমন কাজ করে। আর এই কাজটিই করে থাকে গন্ধ শুঁকনেওয়ালারা। রীতিমতো অ্যাপ্রোন, গ্লাস পরিধান করে তারা এই কাজ করে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট দেয়। বছরে আয় শুরু হয় ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে।
১০। মুরগির বাচ্চা আলাদাকরণেওয়ালা: না, কাকের বাচ্চা থেকে মুরগির বাচ্চা আলাদা করতে হয় না। ডিম ফুঁটে বেরোনো একগাদা ক্যাঁচরম্যাঁচর করা মুরগির বাচ্চাকে ছেলে ও মেয়ে বাচ্চা হিসেবে আলাদা করতে হয়। মেয়ে বাচ্চাগুলোকে ভবিষ্যতে ডিম পাড়ার উপযোগী হিসেবে তৈরি করতে খাতির-যত্ন করার উদ্দেশ্যে আলাদা কাস্টোডিতে নেয়া হয়। আর ছেলে বাচ্চাগুলার কপাল খারাপ। সেগুলাকে বিক্রি করে দেয়া হয় বড় হয়ে ফ্রাইড চিকেন হওয়ার জন্য। লিঙ্গভেদে বাচ্চা আলাদাকরণে কাজে একজন কর্মী বছরে ১৫ হাজার ডলারের কিছু বেশি আয় করেন।
১১। ডগ ফুড টেস্টার: খাবার টেস্ট করলে এক কথা আর কুকুরের খাবার টেস্ট করা আরেক কথা। সাদা চামড়াদের কুকুরপ্রীতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ধনী দেশগুলোতে কুকুরের জন্য আলাদা খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, কুকুরের জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল এমনকি অ্যামিউজমেন্ট পার্কও রয়েছে। কুকুরের খাবার কেমন তা তো খেয়ে কুকুর বুঝবে ঠিকই কিন্তু মানুষকে তো বোঝাতে পারবে না। এই কাজ কোনো না কোনো মানুষকেই করতে হবে। ডগ ফুড টেস্টাররা এ কম্ম সাধন করে থাকেন। খাবারের মান, টেস্ট সব যাচাই করতে হয় তাদের।
১২। উটপাখির বেবিসিটার: মানুষের বাচ্চার বেবিসিটার থাকলে পশুপাখির কী দোষ? তাদেরও তো বেবিসিটার দরকার আছে। অস্ট্রিচ বেবিসিটাররা অস্ট্রিচের বাচ্চা সমৃদ্ধ বিশাল এক ময়দানে পায়চারী করে আর লক্ষ্য রাখে তারা পরস্পর মারামারি করে একজন আরেকজনকে মেরে ফেলছে কিনা কিংবা তাদেরকে কেউ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কিনা। খুব ইন্টারেস্টিং কাজ, তাই না?
১৩। চুইং গাম রিমুভার বা গাম বাস্টার: চুইং গাম বস্তুটা কাঁঠালের আঠার চেয়ে ভয়াবহ। একবারে কোথাও আটকে গেলে আর ছুটতে চায় না। স্কুলে বাচ্চারা শত্রুতা করে বেঞ্চের ওপর চুইং গাম চিবিয়ে রেখে দেয় আর শত্রু সেখানে বসা মাত্র প্যান্ট বাবাজীর ১২ টা বাজে। চুলে লাগলে তো খবরই আছে। পাবলিক প্লেস বা প্রতিষ্ঠানের চেয়ার টেবিল বা কোনোখানে চুইং গাম আটকে গেলে বিশেষ সব সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয় চুইং গাম রিমুভাররা। রীতিমতো পেশাদার কর্মী তারা।
১৪। ফার্নিচার টেস্টার: এদের কাজটা বেশ আরামেরই মনে হয়। আরামদায়ক সোফা, খাট, কাউচ ইত্যাদি তৈরির পর তা কতটা আরামদায় হয়েছে, কোন জায়গায় কী পরিমাণে ফোম বাড়ালে বা কমালে আরাম বাড়বে তা টেস্ট করে দেখে এরা। শুয়ে-বসেই এদের কাজ। তবে সারাদিন অনবরত শুয়ে-বসে উঠে আবারো শুতে বসতে হলে খবরই হয়ে যাওয়ার কথা।
১৫। ফরচুন কুকি রাইটার: বেশ সৃজনশীল কাজ। আমাদের দেশে চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে খাওয়ার পর ফরচুন কুকি দেয় না। তবে হালে গুলশান-বনানীর কিছু পশ রেস্টুরেন্টে ফরচুন কুকি দেয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে। চায়না এবং আমেরিকা ও ইউরোপের যেখানে চাইনিজ আইটেম আছে এমন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর অবশ্যই ফরচুন কুকি থাকে। কুকির ভেতর থেকে একটা ছোট্ট চিরকুট বের হয়। সেখানে ইন্সপিরেশনাল কোট বা ভবিষ্যদ্বানী করা মন্তব্য লেখা থাকে। কাউকে না কাউকে তো তা লিখতে হয়। ফরচুন কুকি রাইটাররা বসে বসে এই লেখাগুলো তৈরি করে।
১৬। অদ্ভুত কাজের লেখক: ইংরেজিতে একটা কথা আছে Last but not the least. অদ্ভুত সব কাজ খুঁজে খুঁজে বের করে তা নিয়ে যারা লেখে তাদের কথা শেষে আসলেও মোটেই কিন্তু অগুরুত্বপূর্ণ নয় তাদের কাজ। যেমন বর্তমানে এরকম একটি কাজই করে ফেললাম আমি। সরেজমিনে গিয়ে বা নেট ঘেঁটে এসব কাজ নিয়ে লিখে থাকেন তারা।
অফ ট্র্যাক কাজ নিয়ে বেশ আলোচনা হলো। এ ধরণের আরো বহু কাজ আছে। গরুর পেডিকিউর করার জন্যও লোক আছে। সুতরাং জগতে কাজের অভাব নেই। পছন্দে কাজটি খুঁজে বের করার চোখ থাকতে হবে। প্রয়াত স্টিভ জবসও বলেছেন এমনটিই।
তথ্যসূত্র: জবপ্রোফাইলস, ফোর্বস, অডজবনেশন, ক্যারিয়ার সার্চ
Wednesday, January 29, 2014
বিশ্বের অদ্ভুত ৮টি চাকরি, তাও আবার মোটা বেতনে
১। অপরাধস্থল পরিষ্কার করা: খুন-খারাপি, হত্যাসহ নৃশংস সব অপরাধ যেখানে সংঘটিত হয় সে স্থানে স্বাভাবিকভাবেই হাঁড়-মাংস-রক্তে একাকার হয়ে যায়। তদন্তের স্বার্থে তৎক্ষণাত পরিষ্কার করাও যায় না। ফলে পোকামাকড় আর জীবাণুর আস্তানা ঘটে সেখানে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এক সময় জায়গাটি পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ে। আমাদের দেশে অপরাধস্থল পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ কোনো পেশাদার কর্মী নেই। কিন্তু উন্নত দেশে রীতিমতো সার্টিফিকেট এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে যারা শুরু এ কাজটিই সম্পাদন করেন। প্রাপ্তিও মন্দ নয়। বছরে ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে শুরু। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে ৬ অংকের ঘরেও পৌঁছে যায় এক সময়।
২। মানব বিলবোর্ড: ঢাকা শহরে বিলবোর্ডের চোটে আকাশ দেখাই দায়। একসময় রাস্তার ধারে বিলবোর্ড থাকলেও তা এখন রাস্তার উপরে চলে এসেছে। বিজ্ঞাপনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এটি। আমাদের দেশে চালু না থাকলেও উন্নত দেশে পাগলের অভাব নেই। পাগল বলাও ঠিক না। কারণ নিজের দেহ বিজ্ঞাপনচিত্র বা লেখার জন্য ভাড়া দিয়ে টু পাইস কামালে ক্ষতি কি? যে ব্যাটা নিজের শরীরের স্পেস ভাড়া দেয় সেই ব্যাটা সাধারণত খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায়। বুকে বা পিঠে পণ্যের বিজ্ঞাপন আঁকা বা লেখা থাকে।
৩। মৃতদেহ পরিষ্কারক: সাদা চামড়ার দেশগুলোতে মৃতের সৎকারের জন্য পেশদার এজেন্সি থাকে। স্যুটেড বুটেড আন্ডারটেকাররা মৃতদেহ বহন করে আর মৃতের আত্মীয়-স্বজন শোক পালন করে। মৃতদেহের গোসলের কাজটি যারা করে থাকে তাদের বেতন কিন্তু অনেক। কারণ এ কাজটি সবাই করতে চায় না। মৃতদেহ পরিষ্কার করার জন্য পেশাদার একজন ব্যক্তি বছরে প্রায় ৪৪ হাজার ডলার আয় করেন।
৪। জীবন্ত কাকতাড়ুয়া: ইউরোপ-আমেরিকাতে মানুষ অর্থের বিনিময়ে ক্ষেতে কাক তাড়ানোর কাজ করে থাকে। এজন্য ঘন্টায় তারা ১০ থেকে ১৫ ডলার লাভ করে থাকেন।
৫। রহস্য ক্রেতা: অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি দোকানে তাদের পণ্য কেমন বিক্রি হচ্ছে, বিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে কেমন আচরণ করছে, দোকানের পরিবেশ যাচাই প্রভৃতি কাজের জন্য লোক নিয়োগ করে। এদের রহস্য ক্রেতা বলে। ক্রেতা সেজে তারা দোকানে যায় এবং কেনাকাটাও করে। পরস্থিতি যাচাই করে রিপোর্ট করে দেয়। দোকানের কর্মী বুঝতেও পারে না ক্রেতা কি আসলেই ক্রেতা নাকি কোম্পানির এজেন্ট।
৬। আইসক্রিম টেস্টার: শুনে খুব লোভনীয় লাগে। সারাদিন বসে বসে বিনামূল্যে আইসক্রিম খাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে খুব কঠিন কাজ। কারণ, দিনের পর দিন বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রিম খেয়ে তাদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করে ইভ্যালুয়েট করে বলতে হয় যে কোনটির স্বাদ ভালো, কোনটি বাজারে চলবে বেশি। টেস্টাররা আসলে আইসক্রিম খান না। তারা জিহ্বায় নিয়ে স্বাদ গ্রহণ করেই আইসক্রিম ফেলে দেন। সবাই এ কাজ করতে পারেন না। স্বাদের পার্থক্য করার তীক্ষ্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন জিহ্বা থাকতে হয়। বছরে আয় ৫৬ হাজার ডলার।
৭। জীবন্ত ম্যানিকুইন: দোকানে কাপড়-চোপড় পরা ম্যানিকুইন বা পুতুল থাকে। মানুষও এই কাজ করতে পারে। জামা-কাপড় পরে তাকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কষ্টের কাজ। ঘন্টায় প্রায় ৫০ ডলার আয় করা সম্ভব।
৮। টিভি দর্শক: বসে বসে টিভি দেখবেন। আর এর জন্য টাকা থুক্কু ডলার পাবেন। টিভির বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখে ভিউয়ার রেটিং দিতে হবে বা জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের সাবটাইটেল তৈরি করতে হবে। বার্ষিক ২৫ হাজার ডলারে শুরু করা যাবে এ কাজ।
৯ টা ৫টা চাকরির বাইরেও করার মতো অনেক কাজ আছে। সেজন্য খুব পড়াশুনারও দরকার নেই। অনেকে এ ধরণের অদ্ভুত কাজ করে আনন্দ লাভ করেন। তবে এসব কাজ যে খুব আরামের তা কিন্তু নয়। সুযোগও খুব বেশি নয়। যথেষ্ঠ প্রতিযোগিতা রয়েছে। পরিশ্রম বা একঘেয়েমির সুযোগ অত্যন্ত বেশি। তবে আমার ইচ্ছে এমন কিছু করার যেখানে আরাম-আয়েশে জীবন পার করা যাবে আর ফোন করলেই বাসায় টাকা পৌঁছে যাবে।
তথ্যসূত্র: অডজবনেশন ও ফোর্বস
Sunday, January 26, 2014
ভালোবাসা কারে কয়, দুই বেড, ড্রয়িং-ডাইনিংয়েই কি তা হয়?
চিত্র: ভালোবাসার অপরাধে অপপ্রচারকারী শিহাব উদ্দিন কর্তৃক তৈরিকৃত ট্রোল
শ্রদ্ধেয় আশীফ এন্তাজ রবি ভাই একবার বলেছিলেন মানুষ ঘুষ খেলে তাকে দুর্নীতিবাজ বলা হয়, গুন্ডামী করলে সন্ত্রাসী বলা হয়, মদ খেলে মদারু বলা হয় কিন্তু নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে চরিত্রহীন আখ্যা দেয়া হয়। চরিত্র সবচেয়ে বড় সম্পদ অথচ ঘুষ খেলে, খুন করলে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কেউ চরিত্রহীন হয় না। এক বা একাধিক নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই তার চরিত্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়। সেলুকাসের নাম একবার বলেছি আর বলতে পারছি না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সেলুকাসের ছোট ভাইটাইয়ের নাম না জানলে বার বার “সত্যিই সেলুকাস” বলতে বলতে একঘেয়েমি চলে আসবে। যা বলছিলাম। রবি ভাইয়ের কথার সূত্র ধরেই বলি, কারো যদি প্রেম ভালোবাসার অনুভূতি বেশি থাকে তাহলে তা কি অপরাধ? তিনি বলেছিলেন তার নারীর প্রতি ভালোবাসা একটু বেশিই। কিন্তু সমাজের চরিত্রহীন আখ্যার ভয়ে বেশি দূর এগোতে পারছেন না। তার হৃদয়ের বেদনা অক্ষরে অক্ষতে বুঝতে সক্ষম এই আমি।
ওমর সানী একদা নীলাকে বলেছিলেন, “বলো নীলা বলো, ভালোবাসা কি পাপ?” আমাকেই আজ ওমর সানী ভাইয়ের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে হয়, “বলো, সকিনা বলো, ভালোবাসা কি পাপ?” সানী ভাই আরো বলেছিলেন,” ভালোবাসা যদি একটি অপরাধ হয় তাহলে সে অপরাধে আমি অপরাধে।” খুব চমৎকার কথা। নিউটন, আইনস্টাইনরা কি সব জীবনবিমুখী সূত্র দিয়ে অস্কার পেয়ে গেল আর আমাদের সানী ভাই সামান্য নোবেল পুরস্কার পেলেন না। সত্যি সেলুকাস!
চিত্র: বহু কোমলমতি নারীর ছবিতে যে ফটো কমেন্টটি করে আমি লুচ্চা আখ্যায়িত হলাম
জেমস বন্ড একেক সিনেমায় একেক নারীর সাথে প্রেমে মশগুল হয়ে হলো হিরো আর আমি একেক নারীর ছবিতে একেকভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে হলাম চরিত্রহীন। আফসোস। কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আমি করলে দোষ! জমিনে জাস্টিসের বড্ড অভাববোধ করছি। কাজীদা বলেছেন মাসুদ রানা নাকি সবাইকে (পড়ুন শুধু নারীদের) টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। আমি তো ভালবাসতে বাসতে গিট্টু লাগাইতে চাই, কিন্তু সমাজ আমার নিষ্পাপ অভিপ্রায় বুঝলো না। যে সকল নারীর প্রতি আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রকাশিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে ইতিমধ্যে লেখা হয়ে গিয়েছে আরেকটি কুচক্রী মহল সেই সকল নারীদের “আমি কর্তৃক নির্যাতিত কোমলমতি” আখ্যা দিয়েছে। সংবিধানে ভালোবাসাকে কোনো অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয় নি। তবে আমি কেন চরিত্রহীনের অপরাধে অপরাধী হবো? শরৎচন্দ্র চরিত্রহীন লিখলেন, দেবদাসকে পারু-চন্দ্রমুখীর সাথে জড়ালেন আর আমি সামান্য অর্ধশত নারীর প্রেমে মশগুল হয়ে লুচ্চা হয়ে গেলাম? একজন প্রেমিকের কি মন থাকতে নেই? আমার মতো দিয়াশলাইয়ের ন্যায় যারা জন্ম থেকেই জ্বলছি তাদের নিয়ে একটি সংঘ তৈরি করে অতি শীঘ্র প্রেসিডেন্ট পার্ক অভিমুখে আমরা যাত্রা শুরু করবো। পথিমধ্যে যদি পুলিশ আমাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা নেয় তাহলে আমাদের অনুরোধ থাকবে যেন শুধুমাত্র মহিলা পুলিশদেরই মোতায়েন করা হয়।
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু এটুকুই বলবো, “ভালোবাসা দিবি কিনা বল”
Tuesday, January 21, 2014
সুচিত্রা সেন: বাঙালি নারীর চিরায়ত রূপ
মা-বাবার কাছেই শুনেছি উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু এরপরে শুধুমাত্র একবারই জনসম্মুখে এসেছেন সুচিত্রা, সেটিও ১৯৮৯ সালে তার গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর সময়। এরপর আর কখনোই তিনি ক্যামেরার সামনে আসেন নি। কেন আসেন নি তাও রহস্যজনক। হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাকে ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হলেও জনসম্মুখে আসতে হবে বিধায় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এ পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানান। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে যেতে পারেন নি।
সুচিত্রা সেনের আসল নাম রমা দাশগুপ্ত। তার জন্ম ১৯৩২ (মতান্তরে ১৯২৯) তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির পাবনা জেলা সদরে যা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত। চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেছিলেন ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে কিন্তু পরবর্তীতে ছবিটি মুক্তি পায় নি। উত্তম কুমারের (আসল নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়) সাথে ১৯৫৩ সালে সাড়ে চুয়াত্তর চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করে ভারত ও বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সুচিত্রা। এরপরে কাহিনী তো ইতিহাস। ৬০ ও ৭০ দশকে উত্তম-সুচিত্রা জুটির অনেকগুলো ছবি মুক্তি পায়। প্রায় সবগুলোই সুপারহিট। এপার ও ওপার বাংলায় রূপালী পর্দায় সেই সময়ের সেরা জুটি ছিলেন তারা। অদ্ভুত কেমিস্ট্রি ছিল তাদের রোমান্টিসিজমে। পর্দায় তাদের অসাধারণ অভিনয় গুণ ও প্রেমময়তা লাখো দর্শকের হৃদয় জুড়িয়েছিল। বাস্তব জীবনেও চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছিল এই চলচ্চিত্র জুটির। আজকাল দেখা যায় ক্যারিয়ারের কারণে অভিনয়শিল্পীরা অনেক বয়স পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন না, কিংবা বিয়ে করলেই ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন। কিন্তু সুচিত্রা সেনের ক্যারিয়ার শুরু তার বিয়ের বছর চারেক পরে। ১৯৪৭ সালে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আর চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৫২ তে। স্বামীর মৃত্যুর পরেও অভিনয় করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্র জগত থেকে বিদায় নেন ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকেই মোটামুটি অন্তরীন জীবন শুরু করেন সুচিত্রা সেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে সেবামূলক কাজে যুক্ত হন।
উত্তম কুমারের মৃত্যর বেশ অনেক পরে একবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একবার সুচিত্রা সেন বলেছিলেন “উত্তম ফিরলে আবারো অভিনয় করতাম”। তার এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় টানা ২০ বছর একত্রে অভিনয় করা সাবেক সহশিল্পীকে কতটা সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন তিনি। বয়সে উত্তম কুমারের চেয়ে ৫ বছরের ছোট ছিলেন সুচিত্রা। কিছুটা জেদি প্রকৃতির নারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চলচ্চিত্রের সাইনিং পেপারে উত্তম কুমারের আগে নিজের নাম লেখাতে প্রযোজকদের বাধ্য করেছিলেন এরকমও শোনা যায়। ১৯৭৮ সালে প্রিয় বান্ধবী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই অবসর নেন।
১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিলভার প্রাইভ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ লাভ করেন। ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের এ গৌরব অর্জন করেন। বাংলা ছবির পাশাপাশি কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে ক্যারিয়ার শুরুর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস এর জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। আর ’৬৬ সালে হিন্দি ছবি মমতার’র জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেন। আর ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পদক বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে গান স্যালুট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কিংবদন্তিদের মৃত্যুর পর তাদের নিয়ে লেখালেখি হবে, আলোচনা হবে, মিডিয়া সরগরম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এরপর সময়ের স্রোতে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়বে সবাই, নতুন নতুন ঘটনা ঘটবে। কিন্তু যাই ঘটুক, বাঙালির হৃদয়ে রমা দাশগুপ্ত ওরফে সুচিত্রা সেন বেঁচে রইবেন হাজার বছর ধরে।
তথ্য ও ছবি কৃতজ্ঞতা: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট
পুণঃপ্রচারিত
একটু আগে বাবা এসে বলে গেলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি গোসল করে তৈরি হয়ে নে। বারোটা বাজতে খুব বেশী দেরি নেই।’’ আমিও ভাবছি, এখন যদি ফারিহা থাকত,তবে সে কিভাবে দেখত বিষয়টা। মাত্র বছর দেড়েক আগেও ওকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল দুচোখে। আজ সবই অতীত। আমাদের সেগুনবাগিচার ছোট্ট ফ্ল্যাটটাতে বেশ সুখের একটা সংসার পেতেছিলাম। সময়মত ঘুম থেকে সকালে উঠা, নিয়ম করে বাজার করা, অফিস শেষে বিকেলে দুজনের একসাথে বাড়ি ফেরা- এটাই ছিল নিত্যদিনের রুটিন। কখনো কখনো সন্ধ্যায় নাট্যশালায় নাটক দেখতে যাওয়া আর নাটক শেষে দুজনের বাইরে খেয়ে বাসায় আসা- এযেন নবদাম্পত্য জীবনের যান্ত্রিক কর্পোরেট ভালবাসা। নিজেদের মধ্যে হওয়া খুনসুটিগুলোই যেন দাম্পত্য কলহের একমাত্র উপলক্ষ্য। তারপর একদিন আমাদের এজীবনে ঘটল ছন্দপতন।
সেদিন ছিল বুধবার, আমি অফিসের কাজে গাজীপুরে গিয়ে ফিরতে দেরি হওয়ায় বাইক নিয়ে ফারিহাকে তার অফিস থেকে পিক করতে যেতে পারিনি। তাই সে সেদিন নিজের মত করেই বাসে করে বাসায় ফিরছিল। মোহাম্মদপুর থেকে সুপার সার্ভিস বাসে করেই ফিরছিল সে। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে শেষ বিকেলে অনেক যুদ্ধ করেই হয়তো সে সেই বাসে উঠতে পেরেছিল। আমি রাত ৯টায় বাসায় কোনমতে বাসায় ফিরে দরজায় কলিং বেল দেই। কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজের কাছে থাকা চাবিটা দিয়েই দরজা খুলি, মনে করি যে সে বাথরুমে। কিন্তু একি! ফারিহা, ফারিহা, ফারিহা।।। সারা ঘর খুঁজেও যখন ওর কোন চিহ্ন পাই না,তখন হাত-পা শীতল হয়ে যায়। মোবাইল কল দিচ্ছি, কিন্তু বারবার একই কথা, ‘সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়’; ওর কলিগ, বন্ধু-বান্ধব, আমাদের রিলেটিভস সবার সাথে কথা বললাম। কোন সংবাদ না পেয়ে মনে করলাম আমার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে আশেপাশে কোন ভাবির বাসায় গেল কি না, তাই ছুটে গেলাম পরিচিত ফ্ল্যাটগুলোতে। এদিকে ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই করছে, আমার তখন ভয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার যোগাড়।
ওর সাথে তো আমার তেমন কোন বড় ঝগড়ার কথাও মনে পড়ে না গত দু’সপ্তাহে। কি হল ওর? প্রচণ্ড টেনশনেই খোঁজ নিতে শুরু করি সবার সাথে আবার। আমার এই অবস্থা শুনে ছোট ভাই আবির রাত এগারটায় ছুটে আসে আমার ফ্ল্যাটে। এসেই জিজ্ঞেস করে, ‘‘দাদা, কোন খবর পেলি? কাল তো আবার হরতাল, ভাবিকে এর মাঝে যে কোথায় খুঁজি? তুই কি কোন খারাপ ব্যবহার করেছিলি ভাবির সাথে?’’
কোনভাবেই ওর খোঁজ না পেয়ে একপ্রকার নিরুপায় হয়েই রাত বারোটায় বাইকে করে মতিঝিল থানার দিকে ছুটি। সেখানে থানার সেকেণ্ড অফিসার সব শোনার পর জিডি করতে বলেন আর ছবি দিয়ে যেতে বলেন। তার কাছেই শুনতে পাই, কাকরাইলের মোড়ে সন্ধ্যায় বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তার পরামর্শতেই অজানা আশংকা নিয়ে হাজির হই ডিএমসিতে।
পরদিনের পত্রিকার শিরোনামঃ কাকরাইল মোড়ে বাসে আগুন, নারীসহ ২ জন অগ্নিদগ্ধ – ফারিহা বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। বাঁচার জন্য সে জানালা দিয়ে বের হবার শেষ সুযোগটুকুও নিয়েছিল। কিন্তু পারে নি, শরীরের ৮০ ভাগই পুড়ে গিয়েছিল। হসপিটালে আনার আধঘন্টার মধ্যেই মারা যায় সে। তাকে শনাক্ত করতে হয়েছে পা আর চোখ দুটো দেখে, দুই চোখের মাঝে ছোট্ট একটা কালো টিপ। বিয়ের এক বছরের মাথায় সে হারিয়ে যায় আমার কাছ থেকে, সাথে নিয়ে যায় আমাদের ভালবাসার স্পন্দনটাও(যে ফুল কুঁড়ি না হতেই হারিয়ে গেল এই পৃথিবী থেকে)।
তারপর থেকে আমি একা, শুরু হয় আবার দুর্ভাগ্যের ব্যাচেলর লাইফ। যান্ত্রিক অফিসজীবন, বাসায় ফিরে মুভি দেখা আর ফেসবুকে টাইম পাসিং। খাবার-দাবার নিজের মতো কোনমতে চালিয়ে নেয়া। ছুটির দিনগুলো হঠাৎ করেই খুব অসহ্য হয়ে উঠতে লাগল। নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হত। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কেমন যেন অসামাজিক হয়ে উঠছিলাম। পরিচিত কারো সাথে দেখা করতে ভাল লাগত না; সবার এক কথা, ‘তুই বিয়ে কর।’ ভাল্লাগে না আর সং সাজতে।
ফারিহার মৃত্যুর পর এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমার সময়, ক্যালেন্ডারের পাতায় কখন যে ছটা মাস পার হয়ে গেল? টেরই পাই নি। এক শুক্রবারে বিকেলে সিনেমা দেখে স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে বের হয়ে ফুডকোর্টে বসে আছি। এমন সময় হঠাৎ দেখা হয় নিশার সাথে অনেকদিন পর।
নিশা আমার কলেজ লাইফের বন্ধু, খুব ভাল বন্ধু ছিলাম আমরা। ডিজুসের তখন প্রথম মিনিট পরে ফ্রি টকটাইমের মৌসুম। আমরা সারারাত ধরে কথা বলতাম, disconnect হলে আবার কল দিয়ে কথা বলতাম। জীবনে প্রথম যে মেয়েটার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়েছিল, সে হল নিশা। পড়াশোনায় সবধরণের হেল্পই সে করত। অনার্সে ফাইনাল ইয়ারে থাকতে তার বিয়ে হয়ে যায় এক ডাক্তারের সাথে। ওকে দেখে এইসব ভাবছি যখন সে এসে বলল, ‘‘তুমি রায়ান না?’’ ‘‘আরে,চিনতে পারলি তাহলে? তোমার খবর কি, নিশা? ভাই কেমন আছেন? ভাগ্না-ভাগ্নি কিছু হল? কোন খবর রাখলি না?’’ একসাথে একগাদা প্রশ্ন শুনে নিশার তখন ভিরমি খাওয়ার অবস্থা, ‘আগে বসতে বল, এখনো আগের মতো অস্থিরই আছিস।’
তারপর কথায় কথায় জানা হল, সাজ্জাদ ভাই চিকিৎসক হলেও নিজের শরীরকে ফাঁকি দিতে পারলেন না। ২০১২র মে মাসের মাঝামাঝি খুব বেশি জ্বর, টানা দুসপ্তাহ ছিল। তারপর থেকে থেকে প্রতিরাতেই জ্বর আসত। কোন diagnosisএই কাজ হচ্ছে না। হাজারটা টেস্ট বিভিন্ন প্যাথলজি সেন্টারে অর্ধশতবার করার পর জানা গেল, লিম্ফোসাইপটেমিয়া, একদম ফাইনাল স্টেইজ। ব্লাড ট্রান্সফিউশন করেও খুব একটা সুবিধা হবে না। তবুও আরো মাস পাঁচেক বেঁচে ছিলেন তিনি। তারপর থেকেই নিশা ঢাকা শহরের এক নিঃসঙ্গচারিণী। হাজবেন্ড মারা যাওয়ার পর সে এখন ইস্কাটনে খালার সাথেই থাকে আর তার চাকরিটাতো ছিলই আগে থেকে।
দীর্ঘবিরতির পর বন্ধুত্ব ঝালাই করতে দুজনেই ফেসবুকে ফ্রেন্ড হলাম, অনেকদিন পর সেই কলেজ লাইফের আড্ডাও দিলাম বসুন্ধরা সিটির আভিজাত্যের মাঝে। কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, টেরই পাই নি দুজনের কেউ। বিদায়বেলায় ফোন নাম্বার নিয়ে বেরিয়ে বাসায় ফিরব, তখন তার বাসে যাওয়ার কথা শুনে আমার বাইকে এগিয়ে দেবার প্রস্তাব দিই।
সেদিন বাসায় ফিরে আবার যান্ত্রিকতায় ডুবে যাই। নতুন সংযোজন শুধু ওর সাথে ফেসবুকে চ্যাট, স্ট্যাটাসে কমেন্ট আর লাইক দেয়া। মাঝে মাঝে আশুলিয়াতে বাইকে করে ঘুরতে যাওয়া, জাবি ক্যাম্পাসে ঘুরে ফেরা। কখন যে আবার নতুন করে সং সেজে সংসার সাজাবার ভূত চাপল দুজনের জানি না।
এই, বারোটা বুঝি বেজেই গেল, যাই বরের নওশা সাজ নিয়েই আসি।
ইন্টারভিউ
আজব অনুভুতি !! চিন্তা করতে করতে কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি খেয়াল নেই । রিকশা থেকে নামার আগে মনে হচ্ছিলো , আসার আগে মানিব্যাগ বাসায় ফেলে আসার দরকার ছিলো !! কি আজব! পকেটে হাত দিয়ে দেখি ঠিক ঠিক মানিব্যাগটা ফেলে এসেছি ! একটুও রাগ হল না! মনের মধ্যে কেনো জানি একটা আজব ভালোলাগা ! কি হচ্ছে এসব ! আমি পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার সামনে , এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক আমার কাছে আসলেন , আমি জানি উনি আমার ভাড়াটুকু দিয়ে দেবেন , এবং দিলেন এরপর কাঁধে হাত দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন । কেনো জানি আমার আশপাশ খুব নীরব ! একদম শান্ত ! কেউ কোনো কথা বলছে না, সবাই শান্ত । যা হচ্ছে সব কিছুই যেন পূর্বনির্ধারিত ! আমি আগে থেকেই টের পেয়ে যাচ্ছি !
আরো বেশ কজন প্রার্থীর সাথে বসে অপেক্ষা করছি ভাবছি, কথা বলা শুরু করি । সবাই বিরক্তিকর রকমের গম্ভীর । গলা খাঁকড়ি দিলাম ! আমার পাশের ছেলেটা আমার দিকে তাকালো । বললঃ
" আপনার কাঁধে কি ? "
- "আর বলবেন না ! আসার সময় কাক ইয়ে করে দিয়েছে ।"
"পরিস্কার করছেন না কেনো ?"
- "না মানে , কাক ইয়ে করার পর থেকে আমি একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছি , কিভাবে জানি আমি আগে থেকেই সব টের পেয়ে যাচ্ছি , এই যেমন ধরুন আপনার নাম নীলয় , ফিজিক্স এ অনার্স করেছেন ঢাবি থেকে , এখন মাস্টার্সে আছেন । মজার বিষয় কি জানেন ?এই চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডের সবাই খুব ভালো , কেউ দুর্নীতিবাজ নন । খুবই নিরপেক্ষ ইন্টারভিউ হচ্ছে, এই ইন্টারভিউ এ সব চেয় যোগ্য প্রার্থী আমি , আমার ইন্টারভিউ সবার থেকে ভালো হবে, আমার চেয় সামান্য খারাপ কিন্তু বাকি সবার চেয় ভালো ইন্টারভিউ দিবেন আপনি , বিশেষ কারনে চাকরিটা আমি না পেয়ে আপনি পাবেন । এখানে কোনো দুর্নীতি হবে না , কিন্তু খুব অদ্ভুত কিন্তু যুক্তিযুক্ত কারনে আপনিই নিয়োগ পাবেন । "
"আপনার মাথা ঠিক আছে তো ?? পানি খাবেন ? ".....
পানি খাবার সময় পেলাম না, ভেতর থেকে আমার ডাক এলো । ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনজন ভদ্রলোক , এবং খুব সঙ্গত কারনেই ওই মধ্যবয়স্ক লোক এখানে উপস্থিত ।
"বসুন !" সেই ভদ্রলোক বললেন
-"ধন্যবাদ"
"আপনি মানিব্যাগ আনেন নি কেনো ?"
-" কারন আমি জানতাম আপনি আমাকে সাহাজ্য করবেন "
"তাই নাকি ?"
-" জী , ব্যাপারটা এভাবেই ঘটার কথা ছিলো"
"ও আচ্ছা , আচ্ছা বলুন তো মানুষের মস্তিষ্ক কয়টি অবস্থায় থাকে ? কি কি ??"
-"জী চারটি , বেটা ,আলফা , থেটা ও ডেল্টা । বেটা অবস্থা হলো সবচেয় সক্রিয় , আলফা অবস্থায় মস্তিষ্ক শান্ত থাকে এবং সৃষ্টিশীল বিষয়ের জন্ম দেয় ,থেটা অবস্থা হলো ধ্যান মগ্ন অবস্থা , নামাজ বা মেডিটেশন ইত্যাদি আর স্মৃতিচারণ ।ডেল্টা অবস্থা হলো অচেতন, ঘুম, বিচ্ছিন্ন সংবেদনশীল অবস্থা । "
"চমৎকার ! সাইকোলজি পড়েছেন নাকি ? খুব গুছিয়ে উত্তর দিয়েছেন ... আচ্ছা বলুনতো, আপনি এখন কোন অবস্থায় আছেন ? "
-"শিউর না! আমি সম্ভবত পঞ্চম কোন অবস্থায় আছি , ঠিক সচেতনও নই আবার একটা ধ্যান মগ্ন ভাবও আছে ... তাছাড়া আরেকটা অদ্ভুত জিনিষ ঘটছে, সেটা হলো আমি আগে থেকেই সব টের পেয়ে যাচ্ছি ! এই ইন্টারভিউয়ে আপনারা আমাকে সবচেয়ে যোগ্য হিসাবে নির্ধারণ করবেন , কিন্তু আপনাদের উচিত হবে নীলয় সাহেব কে চাকরিটা দেয়া । এবং আপনারা এটাই করবেন ! সুতরাং আপনারা সেটাই করুন যেটা করলে সবচেয় ভালো হয় ।"
-----------------------------------------------------------------------------------------------
কাল নীলয়ের চাকরী হয়েছে , আজ অফিসে যাচ্ছে প্রথম বারের মতো ... খুব উৎফুল্ল একটা ভাব, সকালে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে , একটা খবরে চোখ আটকে গেলো !
আজিমপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু
গতকাল সকালে দ্রুতগামী বাস আর রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবক নিহত ।রিকশা চালক আহত । যুবকের কাঁধের উপর থেকে মাথা সম্পূর্ণ বাসের চাকায়পিষ্ট হওয়ার কারণে তাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি । ............
এটুকু পড়েই নীলয় থমকে গেলো , পত্রিকায় ছেলেটির একটি ছবি ছাপা হয়েছে , ছবির ছেলেটির পোশাক অবিকল কালকের অদ্ভুত ছেলেটির মত ! নীল শার্ট , অফ হোয়াইট প্যান্ট , কাঁধের উপর রক্তের ছোপ !!!!!
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
তৌহিদ- আন- নূর
প্রথম প্রকাশঃ ৬ কার্তিক ১৪১৯ (October 21, 2012)
মতিন সাহেবের একদিন
খবরটা শুনে মতিন সাহেবের মনটা ভরে উঠলো আনন্দে আর খুশিতে। এ যে গর্বিত বাবা হয়ার খুশি। নানা ভুল বুঝবেন না আবার । মতিন সাহেব অনেক আগেই বাবা হয়েছেন। তিন কন্যা সন্তানের জনক তিনি। কিন্তু আজ তিনি বড় মেয়ে আনিকার জে এস সি এর রিজাল্ট পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত অনুভব করছেন। আনিকা জে এস সি তে জিপিএ ৫ পেয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই খুশিতে মতিন সাহেব পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হবেন ঠিক করলেন। ঠিক করলেন সবাই কে নিয়ে নিজের ল্যাব থেকে ঘুরে আসবেন। ও আচ্ছা, মতিন সাহেবের পরিচয় দেয়া যাক এবার। মতিন সাহেব মানুষ হিসেবে খুবি বিনয়ী। ধর্মের উপর বিশ্বাসটা উনার প্রগাঢ়। আলসেমি অথবা অবহেলা করে এক বেলার নামাজ পড়তে পারেন নি এমন উদাহরন পাওয়া যাবে না একটাও। প্রকৃতির প্রতি টানটাও উনার একদম খাঁটি। সুযোগ পেলেই তার শিষ্যদের দিয়ে বৃক্ষ রোপনে নেমে পড়েন। আবার দারিদ্রের প্রতি দরদও কম না। এইতো এই শীতেও তিনি প্রায় শতাধিক মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করেন। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে মতিন সাহেব একজন বিজ্ঞানী। ইতোমধ্যে তাঁর নাম দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
মতিন সাহেবের ছোট মেয়েটা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। ওকে খেয়াল রাখতে গিয়ে কুদ্দুস প্রায় কাহিল। কুদ্দুস আবার পিচ্চি পুলাপাইন একদন সহ্য করতে পারে না। কি থেকে কি, আজ কিনা এক পিচ্চিকে দেখে রাখার দায়িত্ব এসে পড়লো তাঁর কাঁদে। গুনিজনেরা সত্যিই বলেন "যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।" । মতিন সাহেব ল্যাব থেকে বের হয়ে মেয়েকে ডেকে বললেন, "মা, কুদ্দুস চাচ্চুকে টাটা বলো। আমরা এখন ফিরব।"
ল্যাব থেকে বের হয়ে মতিন সাহেব ভাবলেন, এবার বঊ আর মেয়েদের নিয়ে বাইরে কোথাও খাবেন। শত ব্যস্ততার মাঝেই দিন কখন কেটে যায় মাঝে মাঝে মতিন সাহেব টেরই পান না। মেয়ে আর বউকে নিয়ে বাকি দিনটা কাটিয়ে দিবেন ভাবছেন তাই। একটা সি এন জি রিজার্ভ করে সবাইকে নিয়ে উঠে বসলেন। মতিন সাহেবের পকেটে বেতনের পঞ্চাশ হাজার টাকা। এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত মতিন সাহেবের স্ত্রী নাদিরা । “মতিন আজকে চলো বাসায় যাই।“ নাদিরা বললো মতিন সাহেব কে।
“না” –অন্যমনস্ক ভাবে জাবাব দেন মতিন সাহেব।
“তোমার মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।“
“হু।“
“মিষ্টি কিনতে হবে।“
“বাসায় ফেরার পথে কিনে নিব।“
“মানুষ জনকে দিতে হবে না? জানাতে হবে ?”
“জানাব। সময়তোহ আর উড়ে চলে যাচ্ছে না।“
“মতিন, তোমার সাথে এতগুলো টাকা, যদি ছিনতাইকারি ধরে?”
“ধুর ভয় পেয়ো না। আমি আছি না ?” –এই বলে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এমন এক হাসি দিলেন, নাদিরা বুঝতে পারলেন, এই মানুষকে বুঝানো যাবে না। নাদিরা তাঁর সহজ সরল ভালো মানুষ জামাইকে নিয়ে মাঝে মাঝে বিপদেই পরে যায়। এইতো সেদিন ইয়া বড় এক বোয়াল মাছ কিনে নিয়ে এসে বলে, “দেখো নাদিরা বাজারের সব চেয়ে বড় মাছটা তুমার জন্য নিয়ে এসেছি।“ এত্তবড় মাছ দেখে নাদিরার মাথা খারাপ হওয়ার দশা। কাজের বুয়া নাই। এখন এই মাছ কাটতে তাঁর খবর আছে। অবশ্য নাদিরা তাঁর জামাইকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। বিজ্ঞানী মানুষ, দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু প্রতি বারি দেশে আসার সময় কিছু না কিছু নিয়ে আসেন নাদিরার জন্য। নাদিরা যখন তন্ময় হয়ে এসব ভাবছিলেন, হঠাৎ দেখলেন মতিন সাহেব ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। নাদিরা অবাক হলেন এত উত্তেজিত হয়ে কথা বলার কি আছে? কার ফোন? কান পেতে শুনার চেষ্টা করলেন তিনি জামাই আর অপর প্রান্তের কথপোকথন। যদিও অপর প্রান্তের কথা শুনা সম্ভব না, তিনি বুজার চেষ্টা করলেন কি নিয়ে কথা বার্তা চলছে।
মতিন সাহেব ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে একজন লোক হরহর করে একটানা কিছু কথা বলে গেলো,
“গুড আফটারনুন স্যার, আমি এয়ারটেল অফিস থেকে আসিফ বলছি। আপনি বর্ষসমাপনী লটারীতে ৬২ হাজার টাকা পুরষ্কার পেয়েছেন।“
“হ্যালো! আমি ঠিক বুঝলাম না।“
“স্যার আজ ৩০ ডিসেম্বর, আপনি এয়ারটেল লটারি জিতেছেন।“
“এয়ারটেল লটারি মানে ?”
“স্যার আমরা আমাদের গ্রাহকদের আমাদের সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তাই এই লটারির আয়োজন। প্রতি বছর আমরা আমাদের সম্মানীত গ্রাহকদের মাঝে ইলেক্ট্রনিক লটারির মাধ্যমে কিছু ভাগ্যবান গ্রাহক বাছাই করে পুরস্কৃত করে থাকি। এ বছর পাঁচ জন গ্রাহক এই লটারি জিতেছেন। আপনি তাঁর মাঝে একজন।“
“উহ” মতিন সাহেব ভিতরে ভিতরে এক ধরনের উত্তেজনা আর অস্থিরতা অনুভব করলেন। আসিফ নামক লোকটার কথা যদি সত্য হয় তবে তিনি ৬২ হাজার টাকা জিতেছেন। সবি কপাল, ভাবলেন তিনি। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই তিনি শুধু আজ ভালো সংবাদ পাচ্ছেন।
“৬২ হাজার টাকা ?” বললেন মতিন সাহেব।
“জি স্যার। “
“তো আমাকে এখন কি করতে হবে ?”
“স্যার আমিতোহ ঢাকা অফিস থেকে বলছি, আপনি এখন কোথায় ?”
“আমি সিলেটে।“
“স্যার আমি আপনাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি, এই নাম্বারে আপনি ১২ হাজার টাকা বিকাশ করে দিন। আমরা আপনার নাম্বারে ৬২ হাজার টাকা বিকাশ করে দিব।“
মতিন সাহেব মাথা চুলকে ভাবলেন, তারমানে পুরস্কার ৬২ হাজার টাকার পুরোটা পাচ্ছেন না তিনি। ৬২ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার বাদ দিলে থাকে ৫০ হাজার টাকা। বিষয়টা তাঁর কাছে কেমন জানি লাগলো। কোথায় যেন একটা খুঁত আছে। যাই হোক ৫০ হাজার টাকাই বা কম কিসের ? তাঁর এক মাসের বেতনের সমান।
“বিকাশ করতে হবে?” মতিন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন কিছুটা অন্যমনষ্কভাবেই।
“জি স্যার।“
“দেখুন আসিফ, আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে একটা জায়গায় যাচ্ছি, আমি আপনাকে পরে কল ব্যাক করি ?”
“স্যার আপনি না হয় পথে নেমেই কোথাও বিকাশ করে দেন, আমাকে অন্যদের সাথেও যোগাযোগ করতে হবে।“
মতিন সাহেব ভাবলেন তাইতো। “ঠিক আছে আসিফ আমি আমার ফ্যামিলিকে বাসায় রেখে আপনাকে বিকাশ করব।“
“ঠিক আছে স্যার, ততক্ষন আপনি লাইনেই থাকুন।“
“কেনো?”
“স্যার আমরা আপনাকে কিছু রুটিন প্রশ্ন করব।“
নাদিরা তাঁর জামাইয়ের কথপোকথন থেকে যা বুঝলেন তাতে টাকা বিষটা জরিত সেটাই শুধু ধরতে পারলেন। হটাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়াতে নাদিরা খানিকটা অবাকও হলেন। মতিন সাহেব সবার উদ্দেশ্যে বললেন, “আমরা আরেকদিন খেতে যাব। আজ জরুরি একটা কাজ পরে গেছে। “ মেয়েদের মাঝে কেমন একটা অসন্তোষের আওয়াজ পেলেন মতিন সাহেব। সবাইকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজ গলি ধরে হাটা শুরু করলেন তিনি। এখনও কানে মোবাইল ধরে আছেন। আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। সামনে মসজিদ দেখতে পেয়ে উনি অপর প্রান্তে থাকা আসিফ কে বললেন,
“আসিফ আমি আসরের নামাজ পড়ে নেই?”
“ঠিক আছে স্যার । কিন্তু লাইন কাটবেন না প্লিজ। আমরা এই প্রান্ত থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।“ মতিন সাহেব ভাবলেন এ কেমন ধরনের কথা ! মনে হচ্ছে এয়ারটেল কম্পানি আমাকে লটারির টাকা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ছে। আজব দুনিয়া! মতিন সাহেব নামাজ শেষে মোবাইল দুটি হাতে নিয়ে দেখলেন, এখনও কল চালু আছে আর স্ক্রীনে কল টাইম দেখাচ্ছে ১:০২:১২. তারমানে এক ঘন্টার উপর কথা বলেছেন তিনি। অবশ্য এয়ারটেলের মত এত বড় কম্পানির জন্য ১ ঘন্টা তেমন বড় কোন বিষয়ই না। অন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলেন ২২ টা মিস কল। এর মাঝে ১৫ তা এসেছে তাঁর স্ত্রী নাদিরার কাছ থেকে। নাদিরাকে কল ব্যাক করে অল্প কথায় খুলে বললেন সব। সব শুনে নাদিরা বললো, “শোন মতিন, কাউকে টাকা পাঠানোর দরকার নাই। তুমি মিষ্টি কিনে বাসায় আসো। প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে।“
“একটু অপেক্ষা করো, আমি পুরস্কারের টাকা টা নিয়ে আসি।“ এই বলে লাইন কেটে দেন মতিন সাহেব। অপর প্রান্তে নাদিরা ক্ষেপে আগুন। আসল কথাটাই বলা হল না। আসিফ লোকটা ফ্রড। মিথ্যা বলে, মানুষকে লোভ দেখিয়ে এরা টাকা নিয়ে নেয়। কখনও পুরস্কার বা লটারির টাকা দেয় না। আবার কল করলেন নাদিরা, এবার দুইটা মোবাইল নাম্বারি ব্যস্ত পেলেন তিনি। কি করবেন নাদিরা ভেবে কিছু কুল কিনারা পাচ্ছেন না। মতিন নিজে যা বুঝে তাই করে। কখনও অন্যের কথার ধার ধারে না। একমাত্র মতিনের ছোট বোন ছাড়া। বয়সে ছোট হলে কি হবে ভাইকে বুঝানোর ক্ষমতা শুধু তারই আছে। আশার আলো দেখতে পেয়ে নাদিরা কল করলেন মতিনের ছোট বোন ফাহমিদাকে। মতিন সাহেবের পকেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা। উনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন একটা বিকাশ পয়েন্ট। একটা বিকাশ পয়েন্ট পেয়ে, উনি ১২ হাজার টাকা বিকাশ করতে চাইলে বললো, আজকে নাকি তাঁর পক্ষে বিকাশ করা সম্ভব না। এ কথা শুনে মতিন সাহেব খুবি বিরক্ত হলেন। বিকাশ সম্ভব না হলে বিকাশ পয়েন্ট বানালো কেন। যত্ত সব ঝামেলা। মতিন সাহেব রিক্সা নিলেন অন্য একটা বিকাশ পয়েন্টে যাবেন। এ সময় অন্য মোবাইলটা বেজে উঠতেই আরেক বার বিরক্ত হলেন। আজকে এত কল আসছে কেনো। মানুষজন কি আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে না নাকি। চরম বিরক্তি নিয়ে মতিন সাহেব চোখ রাখলেন মোবাইল স্ক্রীনে। ফাহমিদা নামটা দেখে তার সব ধরনের বিরক্তি গায়েব।
“হ্যালো, ফাহমিদা?” কথা শেষে মতিন সাহেব যা বুঝলেন তা হলো, আসিফ নামক লোক যা বলছে তাঁর সবই ভুয়া। মতিন সাহেব প্রথমে বিশ্বাস করতে চান নি। কিন্তু ফাহমিদা যখন বলল, তাদের এলাকার ইমাম সাহেবের নাকি এমন হয়েছে। তখন মতিন সাহেব বিশ্বাস করলেন। শুধু তাই না, ফাহমিদা তাঁর সহজ সরল দাদাটিকে একটা চমৎকার উপায়ও বাতলে দিলেন। মতিন সাহেব ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না যে কেউ তাকে ধোঁকা দিয়ে টাকা নিতে চাচ্ছে। এবার অন্য মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন এখনও আসিফের কল চালু আছে।
“হ্যালো আসিফ, আই এম র্যালি সো-সরি টু মেক ইউ ওয়েট।“
“ইটস ওকে স্যার।“
“আসিফ আপনি আমাকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন, আর আমার লটারির ১২ হাজার টাকা রেখে দেন।“
“কিন্তু স্যার আপনি আমাদের ১২ হাজার টাকা বিকাশ করার পরই আমরা আপনাকে আপনার পুরস্কারের টাকা পাঠাতে পারব।“
“আচ্ছা ঠিক আছে আসিফ, আপনি আমার সাথে দুই ঘন্টা ধরে মোবাইলে কল ধরে আছেন এত ধৈর্য্য ধরে, আরেকটু কষ্ট করুন প্লিজ। আপনি আপনার কাছ থেকে আমার হয়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে আমার লটারির প্রাইজ মানি তুলে ফেলুন।“
“ঠিক আছে স্যার আমরা আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি একটু অপেক্ষা করুন।“-অপর প্রান্তে ঠুক করে লাইনটি কেটে গেল। মতিন সাহেব তাঁর ছোট বোনের কথা মত আসিফের সাথে কথা বলার পরপরই আসিফ লাইন কেটে দিলো। মতিন সাহেবের হঠাৎ খুব রাগল। উনি ঠিক করলেন আসিফ নামক ব্যাক্তি বা গ্রুপের নামে পুলিশকে ইনফর্ম করবেন। তিনি সরাসরি র্যাবকেই জানাবেন ঠিক করলেন। নানা! এরকম চলতে দেয়া যায় না। এরা পেয়েছে কি? রাগে মতিন সাহেবের শরীর কাঁপতে শুরু করলো। এই কনকনে শীতেও মতিন সাহেবের চোয়ালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো। মতিন সাহেবের মোবাইলে র্যাবের নাম্বার সেভ করা ছিলো। তিনি সরাসরি ডায়াল করলেন,
“আমি র্যাব তথ্য কেন্দ্র থেকে বলছি ?”
“হ্যালো আমি মতিন চৌধুরী। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি এর হেড।“
“জী স্যার আপনাকে আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“আমি আজ এক জালিয়াত চক্রের ক্ষপ্পরে পড়ছিলাম। আমি কমপ্লেন করতে চাই।“ এরপর মতিন সাহেব সংক্ষেপে সব খুলে বললেন। সব শুনে র্যাব কর্মকর্তা বললেন,
“আপনি কি এই ধরনের লটারির কথা কোন বিজ্ঞাপনে দেখেছেন? মোবাইল কম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনের জ্বালায়তোহ টিভি দেখাই দায়। আপনি টিভি দেখেন না?”
মতিন সাহেব একটু ভেবে বললেন,
“না, আমি এরকম কোন বিজ্ঞাপন দেখি নাই।“
“একটা গরুও বুঝবে যে এটা কোন ফ্রডের কাজ, আপনি বুঝলেন না ?” মতিন সাহেব র্যাব কর্মকর্তার কথা শুনে কেমন জানি হকচকিয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন,
“মানে ?”
“দেখুন মতিন সাহেব আপনি শিক্ষিত মানুষ। অনেক বড় একটা পদে আছেন। আপনি যদি এই ধরনের ফালতু ফ্রড লোকের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে পরেন, তাহলে অন্যরা কি করবে ?”
“আমি আসলে......” মতিন সাহেব কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
“শুনুন মতিন সাহেব আমরা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকি, আপনি ঐ লোকের ফোন নাম্বার দেন। আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখব।“
ফোন রাখার পর মতিন সাহেব পানির তৃষ্ণা অনুভব করলেন। আজ দিনটা মেয়ের রিজাল্ট পেয়ে ভালো শুরু হয়ে-ছিলো, এখন মনে হচ্ছে শেষটা তেমন ভালো হবে না। মতিন সাহেব রিক্সা ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। মাঝে মাঝে নাদিরা তাকে বোকা বলে, মতিন সাহেব সেটা পাত্তা দিতেন না। এখন মনে হচ্ছে নাদিরার কথা এভাবে আর উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। ছোটবোন ফাহমিদা তাকে বলেছিল, “ভাইয়া লোভ করো না।“ তাহলে কি আমি সত্যি লোভী? লোভী যদি নাই হব, আমারতো এখন মেয়ে-বউওকে নিয়ে খুশিতে থাকার কথা ছিলো। লোভের কারনেই দুনিয়ায় যত সমস্যা। মতিন সাহেব নিজের সাথে পণ করলেন আর কক্ষনও লোভ করবেন না।
Sunday, January 12, 2014
চায়ের কাপে বাঙালী- ২য় কিস্তি
মাসালা চা
নাম শুনেই নাকে এসে লাগে হরেক রকম মসলার সুঘ্রাণ। মাসালা চা দুই রকম হতে পারে। দুধসহ এবং দুধ ছাড়া। মাসালা দুধচা তৈরির সময় তরল দুধে প্রথমে গরম মসলা তথা দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ প্রভৃতি যোগ করে ভালো করে জ্বাল দিয়ে পানি কমিয়ে আনতে হয়। মশলা সুঘ্রাণ ও নির্যাস ভালো করে মিশে গেলে চা পাতা যোগ করে ফুটাতে হয়। পানির সাথে গরম মশলা ও চা পাতা যোগ করে জ্বাল দিয়ে পরে গুঁড়ো দুধ মিলিয়ে এ চা তৈরি করা সম্ভব।
আর দুধবিহীন মাসালা চায়ে দুধ ব্যতীত ওপরেr সবই থাকে। লেবু চায়ের মতো লিকার পাতলা হয় না, অনেকটা দুধ চায়ের মতো গাঢ়ই হয়।
অরেঞ্জ টি
অরেঞ্জ চা-ই বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম অরেঞ্জের পর চা না বলে টি বললেই মানায় ভালো। বাংলায় কমলা চা বললেও কেন যেন ভালো লাগে না অত। অরেঞ্জ টি একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন বলা চলে। নরওয়েতে একটি চায়ের দোকানে ৯৯ রকম চায়ের মধ্যে অরেঞ্জ টি অন্যতম। চা পাতার সাথে সেখানে কমলার নির্যাস মেশানো থাকে। তবে ঘরেও এই চা তৈরি করা সম্ভব। একদমই সহজ। লেবু চা’র মতো লিকার করে সেখানে ট্যাং যোগ করে দিলেই চলবে। চিনি না মেশালেও চলে তবে চিনি যোগে স্বাদ বাড়ে কিছুটা। ট্যাং যোগ করতে হবে চা কাপে ঢালার পর। আর হ্যাঁ, অরেঞ্জ টিতে দুধ যোগ করলে মোটেই ভালো লাগে না।
মাল্টা চা
বাঙালি খুবই রসিক। চায়ে লেবু না মিশিয়ে মাল্টা দিলে কি হয় এই করতে গিয়ে মাল্টা চা আবিষ্কার করে ফেলেছে। এই চায়ের সাথে প্রথম পরিচয় বুয়েট এলাকায়। তবে এখন টিএসসিতেও হরদম চলছে মাল্টা চা। মাল্টার রস চিপে দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি করে কাটা মাল্টা চায়ের কাপে ডুবিয়ে দিলে মনোরম এক দৃশ্য সৃষ্টি হয়। আর কাপে চুমুক দেয়ার পর ‘বুকে সুখের মতন ব্যথা’ও জাগ্রত হয়।
গুড়ের চা
এ এক অভাবনীয় জিনিস। প্রথম পান করেছিলাম ছোটবেলায় নাটোরে। ঢাকার বাইরে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলে এই চায়ের প্রচলন বেশি হলেও আজকাল ঢাকাতেও বেশ পাওয়া যাচ্ছে গুড়ের চা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার উল্টাদিকে ছবির হাট এলাকায় গুড়ের চা পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি স্টলেই। দুধ চায়ে চিনির পরিবর্তে গুড় যোগ করলেই গুড় চা। স্বাদ শুধু ভিন্ন না, এক কথায় অসাধারণ।
হানি টি
মধু এমন একটি জিনিস যা এমনি খেতে অসহ্য লাগে কিন্তু কোথাও মিশিয়ে দিলে চমৎকার। পাউরুটিতে মধু আর মাখন লাগিয়ে খেলে বাতাসে ভাসার অনুভূতি হয় আমার। আর চায়ে মধু মেশালে তো কথাই নেই। সাধারণত আদা চায়ে চিনির পরিবর্তে মধু মেশালে তা সর্দি-কাশির জন্য খুব উপকারি। শখ করেও খাওয়া যায়। আদা না মিশিয়ে শুধু মধু মেশালেও ভালো লাগে। তবে মধুর পরিমাণ বোঝার ব্যাপার আছে। কম-বেশি হলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আইস টি
চা মূলত গরম পানীয় হলেও তা ঠান্ডা করে পান করার প্রচলনও রয়েছে। লেবু চা বানিয়ে তা ফ্রিজে রেখে বরফ মিশিয়ে ঠান্ডা করে পান করলে কিন্তু মন্দ লাগে না। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে আইস লেমন টি’র স্যাশে কিনে তা বরফকুচিয়ালা পানিতে মিশিয়ে খেতে। অপূর্ব বলে যাকে এক কথায়। আজকাল নেসক্যাফের ভেন্ডিং মেশিনে আইস নেসটিও পাওয়া যায়।
একটা গাছের পাতা। সেটাকে প্রসেস করে গুঁড়া বানিয়ে হাজাররকম জিনিস মিলিয়ে কত কিই না করা যায়। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখলে মাঝে মাঝে মানুষ হিসেবে নিজেরই অবাক লাগে। বিভিন্ন ফ্লেভারের চা তো বাজারে পাওয়াই যায়। আর বাসার রান্নাঘরের নিষ্পাপ চা পাতাকেও কতকিছুর সাথে মিলিয়ে কত পদের চা বানানো যায় তা তো জানাই আছে আমাদের। চাপ্রেমীরা সব ধরণের চা-ই বাসায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে যত যাই বলি মালাই চায়ের উপরে কোনো চা নেই। যাই এক কাপ মালাই চা খেয়ে আসি। :D
ছবি কৃতজ্ঞতা: বিভিন্ন ওয়েবসাইট
Thursday, January 9, 2014
চাপের কাপে বাঙালী- ১ম কিস্তি
চায়ের বহু রকমফের রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের চায়ের সাথে চীন দেশের চায়ের সম্পর্ক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের মতো। চীনারা ভাবতেই পারে না দুধ মেশানো চায়ের কথা। সম্প্রতি বাসায় এক চীনা অতিথি এসেছিলেন। বাংলাদেশের দুধ চা সম্পর্কে তার মতামত হচ্ছে, “দুধ মেশালে চা তো আর চা থাকলো না”। চীন দেশে দেখেছি চায়ের নামে তাদেরকে এক প্রকার বিস্বাদ গরম পানীয় পান করতে। দুধ নেই, চিনি নেই, কি এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! বিভিন্ন ধরণের চা পাতা থেকে বিভিন্ন ধরণের চা হয়। আবার চা পাতাকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করেও ভ্যারাইটি বাড়ানো হয়। সে ভ্যারাইটি নিয়ে অন্য কোনো পোস্টে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু আজকে বলবো আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত ইস্পাহানী মির্জাপুর বা তাজা চা-কেই কীভাবে ঘরে বসে বিভিন্ন ফ্লেভারে পান করা হয় তা নিয়ে।
দুধ চা
বাঙালীর প্রথম পছন্দ দুধ চা। সকালে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে এক কাপ দুধ চা না হলে বাঙালীর দিনটাই মাটি। আর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দেয়ার অন্যতম উপসঙ্গ এই দুধ চা। নগরের ব্যস্ত জীবনে সবাই দৌড়ের উপর থাকে। তাই চায়ের সাথে গুঁড়ো দুধ আর চিনি মিশিয়ে কোনোমতে তৈরি হয় দুধ চা। কিন্তু দুধ চায়ের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় কিছু হোটেলে বা কারো কারো বাসায় যেখানে তরল দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে দুধ চা তৈরি করা হয়। তরল দুধে পানি মিশিয়ে কতক্ষণ ধরে জ্বাল দিতে হবে, কখন সেখানে চা পাতা মিশিয়ে কতক্ষণ চুলোয় রাখতে হবে এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে চায়ের স্বাদ। অনেকে গুঁড়ো দুধ দিয়েও চমৎকার চা বানাতে পারেন কিন্তু কীভাবে পারেন তা জানা নেই। মাঝে মাঝে স্টার বা অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে শুধুমাত্র চা খেয়ে আসার বদঅভ্যাস আমার আছে। আশেপাশে সবাই যখন হাপুস-হুপুস করে মাংসের ঝোলে নান ডুবিয়ে খাদ্যবিলাস করে তখন আমি আয়েশ করে চুমুকে চুমুকে পান করি ঘন দুধের অমৃত পানীয়-চা।
লেবু চা
দুধ চায়ের পরে বাঙালীর পছন্দ লেবু চা। লেবু চা মানেই পাতলা লিকার অর্থাৎ দুধ চায়ের তুলনায় এ চায়ে পানিতে চা পাতার পরিমাণ হবে কম এবং জ্বালও দিতে হবে কম। চা হয়ে গেলে সেখানে লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় লেবু চা। লেবু চায়ে মেশানোর জন্য প্রথম পছন্দ কাগজী লেবু বা শরবতী লেবু। এসব লেবুর সুঘ্রাণ মনকে চনমনে তো করেই, শরীরকেও করে সতেজ। শীতকালে লেবু চা’র কদর বাড়ে। প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে গায়ে চাদর পেঁচিয়ে এক কাপ আগুন গরম লেবু চা খেতে কার না ভালো লাগে?
আদা চা
আদা চা অত্যন্ত সুস্বাদু। তবে হাঁপানী রোগী বা আমার মতো যাদের সর্দি-কাশি সারা বছর লেগে থাকে তারা এ চায়ের খুব কদর করে। এ চায়ের লিকার হয় লেবু চা’র মতো। কিন্তু চুলোয় জ্বাল দেয়ার সময় আদা কুঁচি কুঁচি করে কেটে একটু ছেঁচে নিয়ে চায়ের পানিতে যোগ করতে হয়। পানি জ্বাল হতে হতে আস্তে আস্তে আদার উপকারি রস চায়ে মিশতে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে কাপে ঢেলে চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় আদা চা। রাস্তায় হাতে করে যারা চা বহন করে বিক্রি করেন তাদের কাছে সাধারণত আদা চা-ই থাকে। তবে তারা ফ্লাস্কে রং চা রাখে। পরিবেশন করার আগে ছেঁচে রাখা আদা, চায়ে মিশিয়ে দেয়। অনেকে আবার আদা চা’র সাথে লেবুর রস মিশিয়েও পান করতে পছন্দ করেন। তখন ঐ চা’কে আদা-লেবু চা বলা হয়।
রং চা
রং চা’র নামটা খুব ইন্টারেস্টিং। ইংরেজি শব্দ raw থেকে এর নাম হয়েছে রং। Raw অর্থ কাঁচা বা অমিশ্রিত, খাঁটি অর্থাৎ যেখানে অন্য কিছু মেশানো হয় নি। শুধু চা পাতা পানিতে জ্বাল দিলে যে চা তা-ই হলো রং চা বা র’ চা। সত্যি কথা বলতে কি রং চা-ই হলো আসল চা। চায়ের প্রকৃত স্বাদ ঐ রং চা-তেই। কিন্তু কী দরকার বাপু আমার চায়ের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের? যেটা ভালো লাগবে সেটাই খাবো। সাদা চামড়ার সুটেড-বুটেড সাহেবরা অফিসের ডেস্কে বসে যেমন ব্ল্যাক কফি খেতে ভালোবাসেন তেমনি দেশের বয়স্ক বুদ্ধিজীবি ব্যক্তিদেরও পছন্দ এই রং চা :p । তবে ডায়াবেটিসের রোগীরাও রং চা খেয়ে থাকেন। চিনি মেশানো রং চা অবশ্য মন্দ না। আগুন গরম হলে শীতের সন্ধ্যায় ফুটপাতের ধারে দাঁড়িয়ে রং চা খেতেও বেশ লাগে।
(চলবে)
ছবি কৃতজ্ঞতা: বিভিন্ন ওয়েবপেইজ
Wednesday, January 1, 2014
খাবার খাওয়ার মহাকাব্য !
মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বাঁচার জন্য খায়।কিন্তু ঠিকমত বাঁচার জন্য কত টুকু খাবো আর কি খাবো এটা নিয়ে সম্ভবত আমার মতো অনেকেরই ঝামেলায় পড়তে হয়। ডাক্তারগণ তো জিজ্ঞেস করলে বলে দেন, যা ভালো লাগে খান আর সব খান। কিন্তু ঝামেলা হল কারো কারো তো কিছু ভালো নাও লাগতে পারে!সেক্ষেত্রে যদি জানা যায় যে এটা এটা খেতেই হবে বা ঐটা কম খেলেই হয় তাহলে আমার মতো যারা খাওয়া নিয়ে সমস্যায় পরে তাদের সুবিধা হয়।কারন আমাদের তো অনেক কিছুই করতে ইচ্ছা হয় না তবু তো করা প্রয়োজন বলে করি।তাই যাদের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ খুঁজে বের করতে অলসতা আসে বা বই পত্র/ নেট ঘাটাঘাটি করার সময় নাই কিন্তু কি খাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা আছে তাদের জন্য হয়তো কিছুটা হলেও এই লেখাটা কাজে লাগতে পারে।
খাবার খাওয়ার সবচে সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় হচ্ছে ১ পরিবেশন পরিমান হিসেব করে দিনে মোট কত পরিবেশন খাওয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে খাওয়া।কিন্তু আমরা তো আর দাড়িপাল্লা নিয়ে খেতে বসে যেতে পারব না তাই সহজে বোঝা যায় বা মাপা যায় এরকম কিছু দিয়ে পরিমান নির্ধারণ করা যায় এরকম মাপ দেয়া হল।এখানে প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক ওজনের মানুষের জন্য মোটামুটি কত টুকু খাওয়া যায় তাই দেয়া হয়েছে। কেউ যদি কিলোক্যালরি হিসেব করে খায় তাহলে তাদের হয়তো আরো সূক্ষ্ম হিসাব প্রয়োজন হতে পারে আমি এখানে যারা মোটামুটি গড় হিসেবে খেতে চায় তাদের জন্য কাজে লাগতে পারে এই লেখা, এই ভেবে লিখেছি। ১ পরিবেশন কিভাবে নির্ধারণ করা যায় তার মাপের সাথে প্রতিদিন কয় পরিবেশন খাওয়া প্রয়োজন তাও দিলাম।
দুধ বা দুধজাত খাবার (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। টাটকা দুধ ১ গ্লাস (৮ আউন্স) বা ২। দই ১ কাপ (৮ আউন্স) বা
৩। ছানা ১/৩ কাপ বা ৪। পনির ২৫ গ্রাম বা
৫। রসগোল্লা ১ টি (৫০ গ্রাম) বা ৬।আইসক্রিম ১/২ কাপ বা দুই স্কুপ
দুধ বা দুধজাত খাদ্য আদর্শ প্রোটিন । এটি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, রিবোফ্লাবিনের ভালো উৎস।
বয়স্কদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ১ পরিবেশন দরকার। শিশুদের দৈনিক ১-২ পরিবেশন প্রয়োজন।
প্রোটিন (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। কাঁটাছাড়া মাছ ৩০ গ্রাম বা ২। হাড়ছাড়া মাংস ৩০ গ্রাম বা
৩। ডিম ১ টি বা ৪। ডাল ২৫ গ্রাম রান্না ছাড়া বা ঘনডাল ১/২ কাপ বা
৫। কলিজা ৩০ গ্রাম বা ৬। বাদাম ২৫ গ্রাম
আদর্শ প্রোটিন গুলো হলঃ দুধ, ডিম, মাছ, মাংস।
অন্যান্য যেসব খাদ্যে প্রোটিন রয়েছেঃ মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মাষকলাইয়ের ডাল, অন্যান্য ডাল, শিমের বিচি, নারকেল, সয়াবিন, চিনাবাদাম, অন্যান্য বাদাম।
এসব খাদ্যে প্রোটিন ছাড়াও ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, থিয়ামিন, ফসফরাস ও স্নেহ উপাদান পর্যাপ্ত পরিমানে আছে।এগুলো দেহ গঠন ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজন।
দৈনিক ২-৩ পরিবেশন প্রোটিনজাত খাদ্য প্রয়োজন।
শাক-সবজি (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। ফল মাঝারি ১টি বা ২। টুকরা ফল ১ কাপ বা
৩। ফলের রস ১ গ্লাস(৮ আউন্স) বা ৪। কালজাম ১ কাপ বা
৫। সব্জি ভাজি ১/২ কাপ বা ৬। রান্না করা শাক ১/২ কাপ বা
৭। সব্জি সালাদ ১ কাপ
ভিটামিনের প্রাচুর্যের জন্য শাক-সব্জি ও ফল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ভিটামিন এ, সি, রিবোফ্লাবিনের ভাল উৎস। এছাড়া লোহা, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদিও পাওয়া যায়।
দৈনিক ৪-৬ পরিবেশন শাকসবজি বা ফল খাওয়া প্রয়োজন।প্রতিদিনের মেনুতে ১ পরিবেশন ভিটামিন সি ও ১ পরিবেশন ভিটামিন এ জাতীয় ফল এবং ৩-৪ পরিবেশন সবজি ও ফল থাকা উচিত।
শস্য জাতীয় খাদ্য(১ পরিবেশনের পরিমান):
১। ভাত(চাল ২৫ গ্রাম) ১ কাপ বা ২। আটার রুটি (২৫ গ্রাম আটা)২টি বা
৩। পাউরুটি (ময়দা ২৫ গ্রাম)২ টুকরা বা ৪। চিড়া (১৫ গ্রাম) ১/৩ কাপ বা
৫। মুড়ি (১৫ গ্রাম) ১ কাপ বা ৬। আলু ১৮০ গ্রাম
শস্য জাতীয় খাদ্যের বেশির ভাগ অংশ হচ্ছে শ্বেতসার। যেটি মূলত শরীরে তাপ উৎপাদন করে।অর্থাৎ কাজ করার জন্য শক্তি যোগায়।ঢেঁকি ছাঁটা চাল এবং আটায় রিবোফ্লাবিন, থিয়ামিন পর্যাপ্ত পরিমানে আছে।তবে মেশিনে ছাঁটা চাল এবং ময়দায় অধিকাংশ রিবোফ্লাবিন, থিয়ামিন নষ্ট হয়ে যায়। তবু চালে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তা আমরা পরিচ্ছন্নতার(!) দোহাই দিয়ে বারবার ধুয়ে ফেলে দেই।
দৈনিক ৪-৬ পরিবেশন শস্য জাতীয় খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। তবে বাড়ন্ত কিশোরের এবং পরিশ্রমী পুরুষের এর দ্বিগুণ শস্য জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন হতে পারে।
স্নেহ উপাদানঃ মাছ ও মাংসের তেল, সয়াবিন, সরিষার তেল, বাদাম, তিলের তেল, ঘি, মাখন, নারকেলের তেল, জলপাই, মারজারিন। এটি অল্প পরিমানে প্রয়োজন মোটামুটি ২০-৪০ গ্রাম যথেষ্ট।
স্নেহ পদার্থ দেহে তাপ উৎপন্ন করে কাজ করার শক্তি যোগায়। ভিটামিন এ এবং ডি কে দ্রবীভূত করে দেহে এটিকে কাজের উপযোগী করে তোলে। তেল ও চর্বির ফ্যাটি এসিড দেহত্বক সুস্থ রাখে।
কাপ ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় মাপঃ
১ কাপ= ২০০ গ্রাম বা ৮ আউন্সের সমান
ময়দার ১ কাপের ক্ষেত্রে আবার ১০০ গ্রাম ময়দা ধরে এমন কাপ বোঝায়
তরল মাপার জন্য কিছু সহজ মাপঃ
১ কাপ = ১৪০ মিলি, ১৬ টেবিল চামচ = ১ কাপ, ১ কাপ = ৮ আউন্স
১ চা চামচ =৫ মিলি, ৩ চা চামচ= ১ টেবিল চামচ, ১ টেবিল চামচ = ১৫ মিলি
একদিনের স্বাভাবিক একটি খাবার মেনু এভাবে করা যেতে পারেঃ
সময় দুধ/দুধজাত খাবার প্রোটিন শাকসবজি শস্য জাতীয় খাবার/(ভাত/রুটি/অন্যান্য)
সকাল - ১ ২ ২
দুপুর - ১ ২ ২
রাত ১ - ১ ২
মোট পরিবেশন = ১ ২ ৫ ৬
বিভিন্ন ধরনের মিনারেল ও ভিটামিনের উৎসঃ
ভিটামিন এঃ কলিজা, দুধ, ডিমের কুসুম, মাছ ও মাংসের তেল, মাখন, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, কচুশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, ডাঁটাশাক, লালশাক, পুদিনা, ধনেপাতা ও বিলেতি ধনেপাতা এবং অন্যান্য রঙিনশাক, পাকা আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল, আলুবোখারা তাজাটা, পেয়ারা, তরমুজ।
ভিটামিন সিঃ আমলকী,লেবু, পেয়ারা, কমলা, জাম্বুরা, আমড়া, কামরাঙ্গা,আঙ্গুর,আলু বোখারা তাজাটা, লিচু, আম, আনারস, বরই, বেদানা, টমেটো, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কাঁচামরিচ।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সঃ ঢেঁকি ছাঁটা চাল, কলিজা, মাংস, ডাল, বাদাম, তিল, শিমের বিচি।
রিবোফ্ল্যাবিনঃ সবুজ শাক, দুধ, চাল, কলিজা, ডিম , আটা।
ভিটামিন ডিঃ মাছের তেল, দুধ।
ভিটামিন ইঃ পালংশাক, বিভিন্ন রকম বাদাম, টমেটো।
ক্যালসিয়ামঃ দুধ, মাংস, পালংশাক, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লালশাক, ফুলকপি, শিম, বরবটি, ছোট মাছ কাঁটাসহ, নরম ছানা, ঘন ডাল, পনির।
পটাশিয়ামঃ দুধ, দই, মিষ্টি আলু, কলা, ডাব, দুধ, পনির, ছানা ও ছানার তৈরি মিষ্টান্ন, গুড়, বাদাম, রসুন, কিসমিস, টমেটো, লাউ, তেঁতুল, বেদানা, আনারস, পেঁপে, কমলা, পেয়ারা, আলুবোখারা তাজাটা, বিভিন্ন রকম বিন।
ম্যাগনেসিয়ামঃ পালংশাক, সয়াবিন, কাজু বাদাম ও বিভিন্ন রকমের বাদাম।
আয়রনঃ গরুর কলিজা ও মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, পালংশাক, পুঁইশাক, গুড়, কাঁচাকলা।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।