
বিকেলে অকুস্থলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের আগমন। জনপ্রতিনিধিরা ঘর্মাক্ত অবস্থায় হাত-মাইকে জওয়ানদের অস্ত্র সমর্পন করার আহ্বান জানাচ্ছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জরুরি ভাষণ তখন চ্যানেলে চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানালেন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। মাইকিং হলো। সকলে আশঙ্কা করতে লাগলো সেনা কমান্ডোরা হয়তো পিলখানায় আক্রমণ চালাবে। এভাবে রাত পার হয়ে গেল। পরদিন একই পরিস্থিতি। মিডিয়ার মাধ্যমে বিডিআর জওয়ানরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার আহ্বান জানালো। তাদের একটি প্রতিনিধি দল অবশেষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠক করলো। কিছু শর্ত মানলেই কেবল তারা অস্ত্র সমর্পন করবে। শর্তগুলো মধ্যে ছিল বিদ্রোহের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে হবে, অস্ত্র তারা সমর্পন করবে পুলিশের কাছে কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী সেখানে থাকতে পারবে না ইত্যাদি। এরপর ধাপে ধাপে বিডিআর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের ছাড়া হলো। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সৈনিকরা উল্লেখ করেনি যে ৫৭ জন কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছে নির্মমভাবে। তখন পর্যন্ত তাদের প্রতিই জনসমর্থন ছিল। অস্ত্র সমর্পণ করার পর যখন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ভেতরে প্রবেশ করলো তখন থলের বেড়াল বের হলো। প্রতিদিন উদ্ধার হতে থাকলো নিহত কর্মকর্তাদের লাশ। বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক ও তার স্ত্রীর মৃতদেহ পাওয়া গেল ক’দিন পরে। বিদ্রোহের নামে সেখানে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাকাণ্ড ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো।


দিনটি ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। আজও ২৫ ফেব্রুয়ারি। তবে ২০১৪ সাল। আমাদের রাইফেলস বাহিনীর ওপর কালিমা লেপনের ৫ম বার্ষিকী। আমাদের গর্বের বাহিনীটিকে ধ্বংস প্রচেষ্টার ৫ম বার্ষিকী। আমাদের রাইফেলস কর্মকর্তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার ৫ম বার্ষিকী। তাদের পরিবারগুলোর স্বামীহারা, পিতাহারা হবার ৫ম বার্ষিকী। দীর্ঘদিন এ ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচার পরিচালিত হয়েছে। রায়ও হয়েছে। এখনো বিচার প্রক্রিয়া উচ্চ আদালতে চলমান। শুধুমাত্র অসন্তোষের কারণে বিডিআর জওয়ানরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা বিশ্বাস করা অসম্ভব। কর্মকর্তারা তাদের অধীনস্ত সদস্যদের পরিশ্রম করায় কিন্তু তাদের মাঝে অদ্ভুত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্কও থাকে সমান্তরালভাবে। কোনো সৈনিক তার অফিসারকে এভাবে হত্যা করতে পারে না। আমরা দেখেছি সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যুর পর সাধারণ সৈনিকদের চোখের জল ফেলতে। একজন কর্মকর্তা প্রথমে সৈনিক পরে কর্মকর্তা। আমাদের রাইফেলস বাহিনী, আমাদের আমাদের গর্ব ছিল। বাহিনীটি ধ্বংস হয়ে গেল। তার নাম বদলে গেল। পরিবর্তন ঘটলো তার পোশাকের। ধারণা করা হয় এ ঘটনার পেছনে বহির্বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে। নিজ বাহিনীর একজন সিপাহি তার কর্মকর্তার বুকে নিছক অসন্তোষের বশে ছুরি ধরতে পারে না। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেই শোনা যায়। এর সত্যতা হয়তো মিলবে কিয়ামতের সময়, হাশরের ময়দানে। ইতিহাসে এরকম ঘটনা আর যেন না ঘটে সে কামনাই রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: আমারব্লগ