বহু আগে অদ্ভুত কিছু পেশা নিয়ে লিখেছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে অদ্ভুত বা গতানুগতিক নয় এমন কিছু বিষয় পেয়ে গেলাম যার ওপর রীতিমতো উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার, পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে কেউ শিক্ষা কিংবা শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করলে আমরা অবাক হয়ে যাই, এইটা আবার কোন বিষয়? অথচ সারা পৃথিবীর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো পড়ানো হয়। কিন্তু যে বিষয়গুলো সত্যিই অপ্রচলিত এবং কিছু ক্ষেত্রে অদ্ভুত সেগুলো নিয়েই আজকের লেখা।
দ্য বিটলস: হ্যাঁ, ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের ওপরে রীতিমতো ডিগ্রি প্রদান করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ডিগ্রির নাম এম.এ ইন দ্য বিটলস, পপুলার মিউজিক অ্যান্ড সোসাইটি। এখানে গত ৫০ বছরে কী ধরণের পপ সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে, সে সঙ্গীতের ওপর বিটলসের প্রভাব এসব বিষয়ে পড়ানো হয়।
মারিজুয়ানা চাষ: ক্যালিফোর্নিয়ার ওকস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় রীতিমতো মারিজুয়ানা চাষের ওপর ছাত্রদের পড়াশুনা করায়। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসার কাজে মারিজুয়ানার গুণাবলীর বিষয়ে। মারিজুয়ানা চাষ পদ্ধতি, তার ইতিহাস, আইনি দিক নিয়ে পড়ানো হয়। ড্রাগ ডিলিং হচ্ছে এমন সন্দেহে তবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ক্লাস চলতে চলতে সেখানে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিইএ, ইউ মার্শাল আর আইআরএস প্রভৃতি ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিয়ার বানানো: পোশাকী নাম ফারমেন্টেশন সায়েন্স। পড়ানো হয় অ্যাপালাচান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এ বিষয়ে ব্যাচেলর করতে হলে রীতিমতো রসায়ন ও জীববিদ্যার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। পড়তে বিয়ার ব্যবসা ও পরিবেশনার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে। কঠিন অবস্থা।
যৌনতা: সান ফ্রান্সিস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যৌনতা বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। মানুষের যৌন আচরণ, কলা, শিল্প ও সাহিত্যে মানব যৌনতার বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয় এ সাবজেক্টে। ডিগ্রির মূল উদ্দেশ্য সমাজে যৌন হয়রানী বন্ধ করা।
মদ মেকিং: কেতাবী নাম ভিটিকালচার অ্যান্ড এনোলজি। পারফেক্ট মদ বানানো নিয়ে পড়াশুনা। আঙ্গুর চাষের জন্য মাটি পরীক্ষা, আবহাওয়া নির্বাচন থেকে শুরু করে উন্নত মানের মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর বাছাই করে মদ বানানোর সকল প্রক্রিয়া শেখানো হয় এখানে। মদ বাজারজাতকরণের দিকও পড়ানো হয়। নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ের গর্বিত ডিগ্রিদাতা।
সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান: ডিসিশন সায়েন্স। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না?? কেন পারেন না? কীভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এসব কিছুর ওপর পড়াশুনা করে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিশন সায়েন্সের পন্ডিত শিক্ষার্থীরা। ডিসিশন সায়েন্সের ওপর রীতিমতো পিএইচডি ডিগ্রি দেয় তারা। এই পিএইচডিধারী পন্ডিতরা অংক কষে আপনার কোম্পানীর জন্য প্রয়োজনীয় ডিসিশনও নিয়ে দিতে পারে।
জনপ্রিয় সংস্কৃতি: এ বিষয়ের ওপর বিএ ডিগ্রি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাওলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি। সাম্প্রতিক সময়ের টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, গাড়ি, বাড়ি, সঙ্গীত, ম্যাগাজিন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড, সেলিব্রেটিদের জীবনযাপন ভালোমতো খিয়াল করে তা নিয়ে গবেষণা করাই এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ। কীভাবে আগের চেয়ে এখনকার সংস্কৃতি পরিবির্তন হলো তাও তারা খুঁজে বের করে। চমৎকার কিন্তু!
ফুলের দোকানদারি: ফ্লোরাল ম্যানেজমেন্ট। আমাদের শাহবাগের ফুলের দোকানদাররা এই বিষয়ে না পড়েই কঠিন ব্যবসায় করে ফেলছে। কিন্তু মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উৎপাদকের কাছ থেকে ফুল কিনে বাজারজাত করা এবং দোকানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার ওপরে পড়ানো হয়। ফুলের দোকানকে আনন্দদায়ক বাগানের আদলে সাজিয়ে ফুল বিক্রিও যে একটা শিল্প তাও শেখানো হয়। আর ফুল ব্যবসার বাণিজ্যিক দিক (সহজ কথায় বিবিএ) তো অবশ্যই পড়ানো হয়।
নিলামওয়ালা: অকশনিয়ারিং। নিলামে মাল তুলে কীভাবে তা বেচতে হবে এ বিষয়ে ২০ ক্রেডিটের কোর্স করায় পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গ এরিয়া কমিউনিটি কলেজ। রীতিমতো লাইসেন্সড নিলামওয়ালা হওয়া যায় এ কোর্স শেষে পরীক্ষায় পাশ করে।
প্যাকেজিং: প্যাকেজিং বা বাক্স-প্যাটরা বিষয়ে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি ব্যাচেলর, মাস্টার এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। তা কী শেখানো হয় এখানে? পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। দুনিয়া লাখ লাখ ধরণের প্রোডাক্ট প্রতিদিন বিক্রি হয়। এসবই কিন্তু বাজারে আসে কোনো না কোনোরকম প্যাকেটের ভেতরে। এই প্যাকেজিং পরিবেশকে যথাসম্ভব কম ক্ষতি করে কীভাবে করা যায় তাই নিয়ে পড়াশুনা। এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এমন স্বপ্ন দেখেন যে অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো সিস্টেম তারা দাঁড় করাবেন যখন প্যাকেট ছাড়াই পণ্য বিক্রি হবে। (আমার প্রশ্ন- তখন এই পন্ডিতরা করবে কী?)
তথ্যসূত্র: গুগলে স্টাডি ইন আনইউজুয়াল / উইয়ারড সাবজেক্ট লিখে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
No comments:
Post a Comment