পড়াশুনার জন্য রয়েছে অদ্ভুত থেকে অদ্ভুতুরে সব বিষয়। এ পর্বে তেমনই আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে হাজির হলাম।
ঘাসযুক্ত লনের বিজ্ঞান: টার্ফগ্রাস সায়েন্স। পড়ানো হয় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। গলফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলার জন্য সুন্দর সুষম ঘাসযুক্ত মাঠের প্রয়োজন হয়। এ সকল মাঠ কীভাবে তৈরি করতে হয় তা নিয়ে পড়াই এ বিষয়ের মূল লক্ষ্য। রীতিমতো জীববিজ্ঞান, রসায়ন, প্ল্যান্ট সায়েন্স, আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয় ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন টার্ফগ্রাস সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের।
বিনোদন প্রকৌশল: ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা অ্যাট লাস ভেগাসে বিনোদন প্রকৌশলের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। ইউনিভার্সিটির অবস্থান শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এ বিষয়ে আসলে কী পড়ানো হয়। পড়ানো হয় মূলত ক্যাসিনোর বিভিন্ন গেইম তৈরি, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্য ও বাণিজ্যিক উপস্থাপন বিষয়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের বায়োমেকানিক্স থেকে শুরু করে অ্যানিমেট্রনিক্স পর্যন্ত পড়তে হয়।
ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজ: অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলো একই পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করেন। যেমন- ওয়ালমার্ট, ফোর্ড, গ্যাপ, মোটোরালা ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় তা নিয়ে পড়াশুনা করায় ফ্লোরিডার স্টেটসন ইউনিভার্সিটি।
কানাডিয়ান স্টাডিজ: আফ্রিকান, ওরিয়েন্টাল কিংবা আমেরিকান স্টাডিজ রয়েছে। কিন্তু কানাডিয়ান স্টাডিজ? হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রদের জন্য কানাডিয়ান স্টাডিজ খুলে রেখেছে। মার্কিন নাগরিকরা যেন তাদের উত্তর অবস্থিত বিশাল কানাডার মানুষ সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানতে পারে সেজন্য। কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি সব বিষয়েই এখানে পড়ানো হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটি, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক প্ল্যাটসবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্টে কানাডিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়ানো হয়।
জ্যাজ স্টাডিজ:সঙ্গীত ঘরানার অন্যতম এক শাখা জ্যাজ। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। তবে বিশ্বব্যাপী এর বহু ভক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র জ্যাজ মিউজিক শেখা এবং তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ভূমিকা, বিগত দশকগুলোতে জ্যাজ সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে পড়ানো হয় জ্যাজ স্টাডিজে। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ও ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় এ বিষয়টি।
ইকোগ্যাস্ট্রনোমি: ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ানো হয়। মাঠ থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত খাবার কীভাবে পৌঁছায় তাই নিয়েই এদের পড়াশুনা। কতগুলো ধাপ পেরিয়ে কোনো জিনিস মানুষের খাবারে পরিণত হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাস ইকোলজিতে কী প্রভাব বিস্তার করে এসব তাদের পাঠ্য। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি আছে গ্র্যাজুয়েটদের। কৃষি থেকে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সবই পড়তে হয় তাদের। মনে হচ্ছে, এ বিষয়টা নিয়ে আমার পড়া উচিৎ ছিল।
অশ্ববিদ্যা: ঘোড়া নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকে। ওয়েস্টার্ন মুভিতে ঘোড়া নিয়ে খুব ভাবসাবের দৃশ্য থাকে। অশ্বচালনা, অশ্বপালন এবং অশ্বকে বিভিন্ন খেলার জন্য প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো হয় এ অশ্ববিদ্যা বা ইকোয়াইন স্টাডিজে। ম্যাসাচুসেটসের বেকার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অভ মেরিল্যান্ডে এ বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া হয়।
ন্যানিইং: পাশ্চাত্যে ন্যানি খুব পরিচিত একটা বিষয়। বিশেষ করে ধনী পরিবারে ন্যানিদের দেখা যায়। ধনী পরিবারের শিশুদের দেখাশুনা করে থাকেন তারা। বাংলাদেশের বুয়া আর কি। তো এই ন্যানিইং এর ওপর ১২ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয় কেনটাকির সুলিভান বিশ্ববিদ্যালয়। সিপিআর, প্রাথমিক চিকিৎসা, বাচ্চার সুরক্ষাজনিত বিষয়, বাচ্চাকাচ্চাকে আনন্দ দেয়ার কৌশল থেকে শুরু করে বাচ্চা ও বাচ্চার মা-বাপের সাথে “ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন” পর্যন্ত শেখানো হয় এ কোর্সে।
কমিক আর্ট: কমিক বইয়ের মতো অসাধারণ জিনিস আর কয়টা আছে? এই তো টিভি, কম্পিউটার যখন ছিল না তখন ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গল্প বলার জাদুকরী ভূমিকা পালন করেছে কমিক্স। যত আধুনিক প্রযুক্তিই আসুক না কেন টিনটিন, আর্চি, চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টের আবেদন কী কমেছে আমাদের কাছে? বড় বড় কমিক আর্টিস্টরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীতই জন্ম দিয়েছেন অসাধারণ সব কমিক্স বইয়ের। এই কমিক আর্টের ওপর ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস ডিগ্রি প্রদান করে মিনিয়াপোলিস কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন।
বন্দুক বানানো (গানস্মিথিং), ঘড়ি বানানো (ওয়াচস্মিথিং), আউটার ওয়ার্ল্ডের বায়োলজি নিয়েও পড়াশুনার অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে রয়েছে। আছে সার্কাসে পারফর্ম করার বিদ্যা নিয়েও ডিগ্রি। সেগুলো হয়তো হাজির হবো অন্য কোনোদিন।
তথ্যসূত্র: স্টাডি ইন আনইউজুয়াল সাবজেক্টস লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
No comments:
Post a Comment