বেনাপোল সীমান্ত এক মাছের বাজার। প্রথমে বাস নিয়ে নামালো এক কাউন্টারে। সেখানে এক ছ্যামড়া এসে আমাদের টিকেট দেখতে চাইলো। টিকেট দেখানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের গেঞ্জিতে ধাম ধাম করে গ্রীণ লাইন স্ক্যানিয়া লেখা স্টিকার লাগিয়ে দিলো। অতঃপর আরেকটা ছোট বাসে করে আমরা গ্রীণ লাইনের আরেক কাউন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে গ্রীণ লাইনের লোকজন আমাদের ডিএম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো। সেই সাথে পাসপোর্ট এবং ৩০০ করে টাকা নিলো ট্রাভেল ট্যাক্সের। সত্যি কথা বলতে সীমান্ত পার হতে তারা খুবই উপকার করলো। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের জায়গাটাতে প্রবেশ করতেই কাস্টমসের লোকজন খুব ব্যাগ খুলতে চাইলো। কিন্তু আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক একজন গ্রীণ লাইনের লোক ছিল। সে গ্রীণ লাইন বলতেই সব ক্লিয়ার। এর মধ্যে আরেকজন এসে ট্যাক্সের রশিদ এবং পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন ক্রস করে গ্রীণ লাইনের লোকের সাথেই হেঁটে সীমান্ত পার হলাম আমরা। এই সময়টা একটু বিপদজনক। দালালরা ছোঁক ছোঁক করতে থাকে টাকা খাওয়ার জন্য। অপরপ্রান্তে যাওয়ার পর আমাদের পাসপোর্ট দেখে দেখে ভারত সরকারের এম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো ভারতীয় গ্রীণ লাইনের এক চাচা। অতঃপর আমরা ভারতের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে ‘দাদা’, ‘দাদা’ শুনতে পাচ্ছি প্রচুর। প্রকৃতি পুরোই বাংলাদেশের কিন্তু যেখানে যেখানে মানুষ হাত লাগিয়েছে সেখানেই বাংলাদেশের চেয়ে পার্থক্য চোখে পড়ছে। লেখার ফন্ট, বাংলা বাক্য গঠনের ধরণ সবই আলাদা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন শেষ হলো। বের হয়ে টং দোকান দেখলাম কতগুলো। পুরোই বাংলাদেশি টং কিন্তু প্রতিটা পণ্য আলাদা। সেটাই স্বাভাবিক। ভাবতেই পারছিলাম না ভারতে প্রবেশ করে ফেলেছি। এবারে ভারতীয় গ্রীণ লাইনে করে কোলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের চেয়ে ওদের বাসের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। যশোর রোড ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, পথ আর ফুরোয় না। মাঝে একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাস থামলো। হোটেলগুলো অদ্ভুত। হোটেল ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা দূরে তার বাথরুম। খেতে বসে কী খাবো তা চিন্তা করছিলাম। ওয়েটার দাদা দেখলাম বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন। শুনেছিলাম ভারতে খাবার সস্তা। তিনজন ভাত, মাছ, মাংস নেয়ার পর বিল আসলো ৪০০ রুপির মতো। তখনই জানতাম না, হোটেল নয়, সস্তা স্ট্রিট ফুড। অত্যন্ত বাজে স্বাদ। রান্নার ধরণই আলাদা। এ ধরণের রান্না খেয়ে আমরা অভ্যস্ত না। ক্ষুদার্ত ছিলাম তাই খেয়ে নিলাম। এরপর বাসে চেপে কোলকাতা যাত্রা। রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায়ই নেউ বাংলাদেশের বাইরে কোনো স্থান এটি। তবে কোলকাতা শহরে প্রবেশ করে পার্থক্য বোঝা গেল। রাস্তাঘাটে দোকানপাটের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড দেখে খুব মজা লাগলো। কেমন অদ্ভুতভাবে বাংলা লেখা। বিকেল ৫ টার কিছু পরে আমরা কোলকাতার মার্ক্যুইজ স্ট্রিটের গ্রীণ লাইনের কাউন্টারে নামলাম। অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘ যাত্রা।
গাট্টি-বোঁচকা পিঠে ঝুলিয়ে শুরু হলো আরেক কঠিন কাজ। হোটেল খোঁজা। বাসে সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দু’জন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনাদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের পরে। আমরা এক সাথেই হোটেল খুঁজতে বের হই। ২-৩ টি হোটেলে রুম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গী লেনের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে রুম খালি পাওয়া যায়। আমরা ৩ জন ডাবল বেড রুমে ৮৯০ রুপি ভাড়ার বিনিময়ে উঠি। আর উনারা ২ জন ডাবল বেড রুমে ৮০০ রুপিতে ওঠেন। রুমের অবস্থা মোটামুটি কিন্তু টয়লেটের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এ নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কিছুটা বিতণ্ডাও হয়। সবকিছু রফা হলে উঠে যাই রুমে। গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে সন্ধ্যা। এবারে আমরা ৩ বন্ধ বের হই নিউ মার্কেটের উদ্দেশে। হাতে তখন বেশ কিছু কাজ। দেশে কথা বলার জন্য সিম কার্ড কিনতে হবে। খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। বাস থেকে নামার পর কিছু সিম বিক্রেতা আমাদের যে অফার দিচ্ছিলো সে অফার পরে নিউ মার্কেটের আশেপাশে খুঁজে আমরা আর পাচ্ছিলাম না। অফারটি ছিল এরকম যে সিমের দাম ২০০ রুপি। সাথে ২০০ রুপি টক টাইম। অর্থাৎ, সিমটি ফ্রি। এ অফার খুঁজে না পেয়ে অবশেষে মাথাপিছু প্রায় ৩০০ রুপি খরচ করে সিম কিনি আমরা। এবারে আমার বন্ধুদের নিউ মার্কেটের দোকান ঘোরা আর আমার খাবার সন্ধানের পালা শুরু হয়।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment