বাসের টিকেট কাটা হয়েছিল যাত্রার দু’দিন আগে। ঢাকা থেকে বেনাপোল ১২০০ টাকা আর সীমান্ত পার হয়ে ওদিকে হরিদাসপুর থেকে কোলকাতা যাওয়ার জন্য গুনতে হবে আরো ২৮০ রুপি। টিকেট হাতে পাওয়ার পর আমার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মিশু উত্তেজনায় প্রত্যহ ৩-৪ বার ফোন দেয়া শুরু করে দিয়েছিল। ট্যুর উপলক্ষে সে একখানা বিরাট সাইজের লুঙ্গি খরিদ করেছে। বন্ধু-বান্ধবের সামনে কাপড় বদলানোর এর চেয়ে ভালো উপার আর কী আছে? আমি নিয়মিত লুঙ্গি পরি বিধায় লুঙ্গির সংকট আমার কখনই হয় না। আরেক বন্ধু শ্রাবণ বর্ষাতি কেনার জন্য চাংখারপুল ও বঙ্গবাজার এলাকায় টহল দেয়া শুরু করলো। ঐ এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো হোটেল আল-রাজ্জাকে দুপুরের খানা খাওয়া।
যাই হোক, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে পান্থপথের বাস কাউন্টারে হাজির হলাম। কিন্তু বাসের আর দেখা নেই। রাত ১১ টার বাস কাউন্টারে হাজির হলো ১ টায়। শুরুতেই ২ ঘন্টা দেরি। অতঃপর আমাদের সাধের ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। চলছি তো চলছিই। ভোর হওয়ার আগে আগে পৌঁছালাম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। আস্তে আস্তে বাস এগোচ্ছে। বিশাল লাইন। বাস থেকে হাঁটাহাঁটিও করলাম কিছুক্ষণ। এক সময় ফেরিতে উঠলাম। বেশ খিদে পেয়েছে ততক্ষণে। ফেরিতে কিছু খেয়ে পেট খারাপ হবে এ ভয়ে আর কিছু খাওয়া হলো না। ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটতে শুরু করলো। থাকতে না পেরে ১০ টাকার একটা জাম্বো ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আয়েশ করে খেতে খেতে ঘাটে নামলাম আমরা। এরপর আবারো যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। পথ আর ফুরোয় না। ফরিদপুর শেষ করে যশোরের কোনো এক বন্ধ পেট্রোল পাম্পের সামনে বাস গেল নষ্ট হয়ে। এসি বন্ধ। গরমে ঘামছি। কিছুক্ষণ পর ঘামের সাথে যোগ দিল বৃষ্টির পানি। এসি বাসের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে বাসে। বাসভর্তি যাত্রী গ্রীন লাইনকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। সুপারভাইজার সাহেব আশ্বাস দিলেন আরেকটি বাস আমাদের উদ্ধার করতে রওনা হয়েছে। সে বাসেরও দেখা নেই। ঘন্টাখানেক রাস্তার মাঝখানে বসে থেকে উদ্ধারকারী বাস হাজির হলো। আমরা ভিজে ভিজে বাস বদলালাম। নতুন বাসে যেতে যেতে যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে দু’টো দল তৈরি হলো। এক দল চায় খাওয়ার জন্য হোটেলে বাস থামাতে, আরেক দল বাস থামাতে নারাজ। অনেক দেরি হয়েছে, আর দেরি মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, তাদের সাথে গাট্টি-বোঁচকা ভর্তি খাবার। অবশেষে অনেক হৈ চৈ করে বাস একটা হোটেলের সামনে থামানো হলো। সে হোটেলে ঢুকে দেখা গেল তাদের চুলা বন্ধ। কোনো খাবার নেই। তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার অপর পাশে আরেকটু ছোট্ট গ্রামীণ হোটেলে রাবার গরুর মাংস দিয়ে আটা রুটি কোনোমতে নাকেমুখে গোঁজা হলো। এরপর বাসে চেপে একবারে বেনাপোল সীমান্তে।

(চলবে)
ছলুক।
ReplyDeleteচলবে নাসির ভাই :)
ReplyDeleteNice And Informative Article For Tourism
ReplyDeleteVisit https://lifeshoppers.com for Baby Products