Friday, February 14, 2014

উৎসবমুখর ফেব্রুয়ারী আর উৎসবপ্রিয় আমরা

আসলেই উৎসবের মাস ফেব্রুয়ারী। সহনীয় শীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভাষার এ মাসটি। পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকেই একুশে বইমেলার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বইমেলাকে ঘিরে চারিদিকে সাজ সাজ রব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রাণের আড্ডা জমে ওঠে টিএসসিতে। দিন যত যেতে থাকে, উৎসবের আমেজ যেন ততই বৃদ্ধি পায়। ১৩ই ফেব্রুয়ারীতে থাকে বসন্তের উদ্বোধন। প্রতি বছরই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পহেলা বসন্ত উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে বসন্ত বরণের উৎসব প্রায় পহেলা বৈশাখের মতো। পার্থক্য একটাই। এদিন সরকারি ছুটি থাকে না। বইমেলা আর বসন্ত বরণ একাকার হয়ে মহোৎসবে পরিণত হয়। পহেলা ফাল্গুনের পরের দিন আবার ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসের কোনো বঙ্গীয় সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ভিত্তি না থাকলেও এর কলেবরই সর্বাধিক। হাজারো তরুণ-তরুণী অপেক্ষা করে থাকে দিনটির জন্য। আর ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিনটি একই সাথে শোক ও আনন্দের। শোক শহীদদের জন্যে, আর আনন্দ নিজের ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে।

মানুষের জীবন এখনে ব্যস্ততার কোনো শেষ নেই। এর মাঝে রয়েছে হাজারো নাগরিক দুর্ভোগ। তাই উৎসবের কোনো উপলক্ষই বাঙালী ছাড়তে রাজি নয়। উৎসব মানেই প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো। বসন্ত, ভ্যালেনটাইন, শহীদ দিবস- প্রেমের জন্য বাদ পড়ে না কোনোদিনই। ১৩ ফেব্রুয়ারী হলুদ পোশাকে, ১৪ ফেব্রুয়ারী লাল পোশাকে আর ২১ ফেব্রুয়ারীতে সাদা কালো পোশাকে প্রেমলীলা অনুষ্ঠিত হয়। গান-বাজনা, প্রাণ-মোজো-এয়ারটেল, ফুল-লতা-পাতা আর সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া দেয়ার ব্যবসাটা বেশ ভালোই চলে এ মাসে। সাথে বাঁশ আর প্যান্ডেল তো রয়েছেই। নগরের উৎসবের ছোঁয়া নগরের চেয়ে ফেসবুকে কম পড়ে না। হোম পেইজের নিউজ ফিডে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত উৎসব। লাল-হলুদের ছবিতে ভরপুর। নানান ঢঙে, নানান পোজে, নানান ভঙ্গিমায় ছবি। বন্ধুদের সাথে, বিশেষজনের সাথে, আত্মীয়ের সাথে। লাইক-কমেন্টের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সব। বাস্তব আর ডিজিটাল জীবনে উৎসবের ঢেউ বয়ে চলছে।

pohela_falgun04-12

বাঙালী আমোদপ্রিয় জাতি। যেকোনো ছুঁতোয় চমৎকারভাবে সাজিয়ে ফেলতে পারে চারপাশ। বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে আনন্দ, হৈচৈ শুরু করে দিতে পারে। কোনো কাল বা সময়ে তারা আটকা পড়ে না। লালন, হাসন থেকে শুরু করে মুন্নি-শীলা সবই তারা শ্রবণ করে। মীলা নাচলেও তারা আমোদ পায়, আবদুল কুদ্দুস বয়াতীকেও তারা ভালো পায়। নগরে উৎসবের হাওয়া লাগে। রঙিন পোশাকে ফেব্রুয়ারী জুড়ে চলে রিকশায় চড়ে নগর ভ্রমণ। যানজট কিংবা যানবাহনের অপ্রতুলতা তাদের আনন্দকে বিন্দুমাত্র ম্লান করতে পারে না। পাঞ্জাবী পরা পুরুষ আর শাড়ি পরা নারী হাতে নোকিয়া ১৬০০ কিংবা গ্যালাক্সি এস থ্রি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মহানগরীর বুকে। ঘুরে বেড়ায় রাজপথ দিয়ে, বিশ্রাম নেয় ছায়াঘেরা সুশীতল ধানমন্ডি লেক বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে। মোজো-ফ্রুটো-এয়ারটেলের ভালোবাসা বিক্রির কনসার্টে মাইলস, সোলসের সাথে চলে নীলা-শীলাদের নর্তন-কুর্দন। আনন্দে মাতে যুবক-যুবতী। সঙ্গীতের তালে তালে চলে বসন্ত আর ভালোবাসাকে বরণ করা। মাসজুড়ে চলা বইমেলাকে কেন্দ্র করে চলে সুশীল ভালোবাসা। লম্বা চুল আর জট ধরা দাঁড়িতে পাঞ্জাবী পরা সুশীল পুরুষ আটসাঁট শাড়ির সুশীল নারীর সাথে গদ্য সমালোচনায় মেতে ওঠে। একুশ ও বাঙালী চেতনা নিয়ে বয়সের ভারে নুহ্য বুদ্ধজীবী “কল-রেডী” লেখা মাইক্রোফোনের সামনে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে ফেলেন। চারুকলাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছেলেমেয়েরা রাস্তা আর দেয়ালজুড়ে তৈরি করে মনোরম সব নকশা। ফেব্রুয়ারী যেন প্রস্তুতি আর পরিণতি ১৪ এপ্রিল। মাঝে রয়েছে স্বাধীনতার মার্চ। পিঠাময় শীতল জানুয়ারী শেষে ফেব্রুয়ারী উৎসব মার্চ হয়ে এপ্রিলে গড়ায়। ১২ মাসে ১৩ পার্বণের আমরা নাভিশ্বাস ওঠা জীবনে এক চিলতে আনন্দের খোঁজে ছুটে চলি বছরজুড়ে। কখনো গুম হই, কখনো খুন, তবুও আনন্দ-উল্লাস থেমে থাকে না। আনন্দ-উৎসব ছাড়া যে বাঁচা দুষ্কর।

2 comments:

  1. বইমেলার ফুডু কই ?

    ReplyDelete
  2. আই আনামMarch 14, 2014 at 10:09 AM

    ফটো যোগ করতে ভুলে গিয়েছিলাম ভাইয়া :(

    ReplyDelete