গত পর্বে কিছু অদ্ভুত অদ্ভুত কাজের কথা বলেছিলাম। বিভিন্ন দেশে এ কাজগুলো করে অনেকেই সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। কাজগুলো শুধু অদ্ভুতই নয়, কখনো কখনো সৃজনশীলও বটে। এ পর্বে সে ধরণের আরো কিছু কাজ নিয়ে কথা বলবো। এখানে বলে রাখা ভালো যে কিছু কাজ কেউই করতে চায় না, কিন্তু কেউ না কেউ কাজগুলো না করলে পৃথিবী টিকে থাকতো না। জমাদারের কথাই ধরা যাক। যাদের আমরা অচ্ছুত হিসেবে দেখি সব সময়। অথচ একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে কোনো অংশে অগুরুত্বপূর্ণ নয় তাদের কাজ।
৯। গন্ধ শুঁকনেওয়ালা (odor tester): ভয়ানক এক চাকরি। মানুষের শরীরের দুর্গন্ধ শুঁকতে হবে। গন্ধ শুঁকে তা পার্থক্য করার গুণাবলী থাকতে হবে। রসায়ন বিষয়ে মৌলিক ধারণা রাখতে হবে। ডিওডোরেন্ট এবং বডি স্প্রে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরণের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরণের স্প্রে তৈরি করে। এরপর বাজারে ছাড়ার আগে তাদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে হয় যে কী ধরণের গন্ধের বিপরীতে তাদের বিভিন্ন ঘ্রাণের স্প্রে কেমন কাজ করে। আর এই কাজটিই করে থাকে গন্ধ শুঁকনেওয়ালারা। রীতিমতো অ্যাপ্রোন, গ্লাস পরিধান করে তারা এই কাজ করে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট দেয়। বছরে আয় শুরু হয় ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে।
১০। মুরগির বাচ্চা আলাদাকরণেওয়ালা: না, কাকের বাচ্চা থেকে মুরগির বাচ্চা আলাদা করতে হয় না। ডিম ফুঁটে বেরোনো একগাদা ক্যাঁচরম্যাঁচর করা মুরগির বাচ্চাকে ছেলে ও মেয়ে বাচ্চা হিসেবে আলাদা করতে হয়। মেয়ে বাচ্চাগুলোকে ভবিষ্যতে ডিম পাড়ার উপযোগী হিসেবে তৈরি করতে খাতির-যত্ন করার উদ্দেশ্যে আলাদা কাস্টোডিতে নেয়া হয়। আর ছেলে বাচ্চাগুলার কপাল খারাপ। সেগুলাকে বিক্রি করে দেয়া হয় বড় হয়ে ফ্রাইড চিকেন হওয়ার জন্য। লিঙ্গভেদে বাচ্চা আলাদাকরণে কাজে একজন কর্মী বছরে ১৫ হাজার ডলারের কিছু বেশি আয় করেন।
১১। ডগ ফুড টেস্টার: খাবার টেস্ট করলে এক কথা আর কুকুরের খাবার টেস্ট করা আরেক কথা। সাদা চামড়াদের কুকুরপ্রীতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ধনী দেশগুলোতে কুকুরের জন্য আলাদা খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, কুকুরের জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল এমনকি অ্যামিউজমেন্ট পার্কও রয়েছে। কুকুরের খাবার কেমন তা তো খেয়ে কুকুর বুঝবে ঠিকই কিন্তু মানুষকে তো বোঝাতে পারবে না। এই কাজ কোনো না কোনো মানুষকেই করতে হবে। ডগ ফুড টেস্টাররা এ কম্ম সাধন করে থাকেন। খাবারের মান, টেস্ট সব যাচাই করতে হয় তাদের।
১২। উটপাখির বেবিসিটার: মানুষের বাচ্চার বেবিসিটার থাকলে পশুপাখির কী দোষ? তাদেরও তো বেবিসিটার দরকার আছে। অস্ট্রিচ বেবিসিটাররা অস্ট্রিচের বাচ্চা সমৃদ্ধ বিশাল এক ময়দানে পায়চারী করে আর লক্ষ্য রাখে তারা পরস্পর মারামারি করে একজন আরেকজনকে মেরে ফেলছে কিনা কিংবা তাদেরকে কেউ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কিনা। খুব ইন্টারেস্টিং কাজ, তাই না?
১৩। চুইং গাম রিমুভার বা গাম বাস্টার: চুইং গাম বস্তুটা কাঁঠালের আঠার চেয়ে ভয়াবহ। একবারে কোথাও আটকে গেলে আর ছুটতে চায় না। স্কুলে বাচ্চারা শত্রুতা করে বেঞ্চের ওপর চুইং গাম চিবিয়ে রেখে দেয় আর শত্রু সেখানে বসা মাত্র প্যান্ট বাবাজীর ১২ টা বাজে। চুলে লাগলে তো খবরই আছে। পাবলিক প্লেস বা প্রতিষ্ঠানের চেয়ার টেবিল বা কোনোখানে চুইং গাম আটকে গেলে বিশেষ সব সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয় চুইং গাম রিমুভাররা। রীতিমতো পেশাদার কর্মী তারা।
১৪। ফার্নিচার টেস্টার: এদের কাজটা বেশ আরামেরই মনে হয়। আরামদায়ক সোফা, খাট, কাউচ ইত্যাদি তৈরির পর তা কতটা আরামদায় হয়েছে, কোন জায়গায় কী পরিমাণে ফোম বাড়ালে বা কমালে আরাম বাড়বে তা টেস্ট করে দেখে এরা। শুয়ে-বসেই এদের কাজ। তবে সারাদিন অনবরত শুয়ে-বসে উঠে আবারো শুতে বসতে হলে খবরই হয়ে যাওয়ার কথা।
১৫। ফরচুন কুকি রাইটার: বেশ সৃজনশীল কাজ। আমাদের দেশে চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে খাওয়ার পর ফরচুন কুকি দেয় না। তবে হালে গুলশান-বনানীর কিছু পশ রেস্টুরেন্টে ফরচুন কুকি দেয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে। চায়না এবং আমেরিকা ও ইউরোপের যেখানে চাইনিজ আইটেম আছে এমন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর অবশ্যই ফরচুন কুকি থাকে। কুকির ভেতর থেকে একটা ছোট্ট চিরকুট বের হয়। সেখানে ইন্সপিরেশনাল কোট বা ভবিষ্যদ্বানী করা মন্তব্য লেখা থাকে। কাউকে না কাউকে তো তা লিখতে হয়। ফরচুন কুকি রাইটাররা বসে বসে এই লেখাগুলো তৈরি করে।
১৬। অদ্ভুত কাজের লেখক: ইংরেজিতে একটা কথা আছে Last but not the least. অদ্ভুত সব কাজ খুঁজে খুঁজে বের করে তা নিয়ে যারা লেখে তাদের কথা শেষে আসলেও মোটেই কিন্তু অগুরুত্বপূর্ণ নয় তাদের কাজ। যেমন বর্তমানে এরকম একটি কাজই করে ফেললাম আমি। সরেজমিনে গিয়ে বা নেট ঘেঁটে এসব কাজ নিয়ে লিখে থাকেন তারা।
অফ ট্র্যাক কাজ নিয়ে বেশ আলোচনা হলো। এ ধরণের আরো বহু কাজ আছে। গরুর পেডিকিউর করার জন্যও লোক আছে। সুতরাং জগতে কাজের অভাব নেই। পছন্দে কাজটি খুঁজে বের করার চোখ থাকতে হবে। প্রয়াত স্টিভ জবসও বলেছেন এমনটিই।
তথ্যসূত্র: জবপ্রোফাইলস, ফোর্বস, অডজবনেশন, ক্যারিয়ার সার্চ
No comments:
Post a Comment