আগের লেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেছিলাম। আজকের লেখায় এই ট্রান্সক্রিপ্টের ফটোকপি সত্যায়ন করে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাবো। বলে রাখা ভালো, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানোর নিয়ম। ট্রান্সক্রিপ্টের মূল কপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে ভরে সিলগালা করে নিতে হয়। এরপর নিজ দায়িত্বে ডিএইচএল, ফেডএক্স বা অন্য নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। কিন্তু পঠিত কোর্স বা অর্জিত ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য করার জন্য মূল ট্রান্সকক্রিপ্ট পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে না। উত্তর আমেরিকাতে পড়াশুনা বা কাজের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ইকুইভ্যালেন্স এজেন্সির মাধ্যমে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরণের ইকুইভ্যালেন্স সংস্থায় মূল ট্রান্সক্রিপ্ট না পাঠিয়ে ফটোকপি ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন থেকে সত্যায়ন করে পাঠাতে হয় যথারীতি সিলগালা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে। উল্লেখ্য, বিদেশে ইকুইভ্যালেন্ট সংস্থার কাছে ট্রান্সক্রিপ্টের কপির পাশাপাশি সার্টিফিকেটের ফটোকপিও সত্যায়ন করে পাঠাতে হয়।
ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর পর তা ফটোকপি করে সেই কপি সত্যায়নের জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে বিনামূল্যে সত্যায়নের আবেদনপত্র বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পূরণ শেষে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের মোট যে কয়টি পাতা রয়েছে অর্থাৎ যে কয়টা পাতা আপনি সত্যায়ন করাতে চান তার সংখ্যা ৩০৫ এর কর্মকর্তাকে জানাবেন। তখন তিনি ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় টাকার অংক লিখে দেবেন। প্রতি পাতা সত্যায়নের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ধরা যাক, আপনার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ৫ টি পাতা। মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ২ টি পাতা। আর এ দু’টি ডিগ্রির জন্য রয়েছে ২টি সার্টিফিকেট। অর্থাৎ, এসবগুলো কাগজ ফটোকপি করলে মোট কাগজ হচ্ছে ৯ পাতা। এখন এই ৯ পাতা সত্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪৫০ টাকা। ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর সময়েই যদি খাম উঠিয়ে রাখেন তাহলে আর খামের প্রয়োজন হবে না। যদি খাম না ওঠান তাহলে খামের জন্য আরো ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করার জন্য আরেকটু তথ্য প্রয়োজন হয়। সেটি হলো ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখ। যদি আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কশিট/গ্রেডশিটে সে তারিখের উল্লেখ থাকে তাহলে আর সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেখানে এ তথ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। ৩০৯ কক্ষ থেকে আপনি যে ক’টি ডিগ্রির ফলাফলের তারিখ জানতে চান সে ক’টি আবেদনপত্র প্রতিটি ১৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে। সে আবেদনপত্র পূরণ করে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা প্রবেশপত্র না থাকলে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে ৩০৮ নম্বর কক্ষে জমা দিতে হবে। তখন তারা আবেদনপত্রের ওপর টাকার অংক লিখে দেবে। প্রতিটি ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হয়।
এবার আপনার কাছে রইলো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট সত্যায়নের আবেদনপত্র এবং আপনার পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র। নিশ্চয়ই মনে আছে যে সকল আবেদনপত্রের ওপরেই কত টাকা জমা দিতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। এবার আপনাকে চলে যেতে হবে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে। সেখানে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। যে ক’টি আবেদনপত্র সে ক’টি ডিপোজিট স্লিপ নিতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে আবেদনপত্র ক্যাশিয়ারকে প্রদর্শন করে টাকা জমা দিতে হবে। স্লিপে ব্যাংকের সিল এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিলে স্লিপ ও আবেদনপত্র নিয়ে আপনি পুনরায় ফিরে আসবেন রেজিস্ট্রার ভবনে। ৩০৫ নম্বর কক্ষে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তখন তখনই তারা সবগুলো কপি সত্যায়িত করে দেয়। কখনো কখনো পরে আসতে বলে। আর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র জমা দিলে তারা টাকা জমা দেয়ার স্লিপের পেছনে কবে এসে সনদ সংগ্রহ করতে হবে তা লিখে দেবে। নির্দিষ্ট দিনে সত্যায়িত সনদ এবং ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ যথাক্রমে ৩০৫ ও ৩০৮ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। এবার যে ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থায় আপনার কাগজপত্র পাঠাবেন তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে হবে। ফরম আগে থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে রাখতে হবে। আর সেই ফরমের একটা অংশ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট শাখাকে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। এরপর সেই ফরমটিসহ সকল সত্যায়িত কাগজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিলেই হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানোর আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঐ সংস্থার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment