Thursday, January 9, 2014

চাপের কাপে বাঙালী- ১ম কিস্তি

চা নাকি চীনাদের আবিষ্কার। আবিষ্কার যাদেরই হোক, বিশ্বব্যাপী চায়ের সমঝদার কিন্তু অনেক। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই চা একটি জনপ্রিয় পানীয়। ভারতীয় উপমহাদেশে চা জনপ্রিয়করণে ব্রিটিশ বেনিয়াদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছুদিন আগে দৈনিক প্রথম আলোর এক ফিচারে দেখেছিলাম দুর্বল বাংলায় তৎকালীন বঙ্গাঞ্চলে ব্রিটিশদের চায়ের বিজ্ঞাপনের কিছু নমুনা। আজকের গুলিস্তানের কলিকাতা বা জার্মান হার্বাল স্টাইলে চায়ের বিজ্ঞাপন করতো তারা। চায়ের উপকারিতা নিয়ে ব্যাপক বয়ান লক্ষ্য করা যায় সে সকল বিজ্ঞাপনে। তবে ধীরে ধীরে উপমহাদেশে যা অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়তে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে চা-ই একমাত্র পানীয় যা অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন এক বা একাধিকবার পান করে থাকেন।

চায়ের বহু রকমফের রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের চায়ের সাথে চীন দেশের চায়ের সম্পর্ক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের মতো। চীনারা ভাবতেই পারে না দুধ মেশানো চায়ের কথা। সম্প্রতি বাসায় এক চীনা অতিথি এসেছিলেন। বাংলাদেশের দুধ চা সম্পর্কে তার মতামত হচ্ছে, “দুধ মেশালে চা তো আর চা থাকলো না”। চীন দেশে দেখেছি চায়ের নামে তাদেরকে এক প্রকার বিস্বাদ গরম পানীয় পান করতে। দুধ নেই, চিনি নেই, কি এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! বিভিন্ন ধরণের চা পাতা থেকে বিভিন্ন ধরণের চা হয়। আবার চা পাতাকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করেও ভ্যারাইটি বাড়ানো হয়। সে ভ্যারাইটি নিয়ে অন্য কোনো পোস্টে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু আজকে বলবো আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত ইস্পাহানী মির্জাপুর বা তাজা চা-কেই কীভাবে ঘরে বসে বিভিন্ন ফ্লেভারে পান করা হয় তা নিয়ে।

দুধ চা

url_4

বাঙালীর প্রথম পছন্দ দুধ চা। সকালে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে এক কাপ দুধ চা না হলে বাঙালীর দিনটাই মাটি। আর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দেয়ার অন্যতম উপসঙ্গ এই দুধ চা। নগরের ব্যস্ত জীবনে সবাই দৌড়ের উপর থাকে। তাই চায়ের সাথে গুঁড়ো দুধ আর চিনি মিশিয়ে কোনোমতে তৈরি হয় দুধ চা। কিন্তু দুধ চায়ের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় কিছু হোটেলে বা কারো কারো বাসায় যেখানে তরল দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে দুধ চা তৈরি করা হয়। তরল দুধে পানি মিশিয়ে কতক্ষণ ধরে জ্বাল দিতে হবে, কখন সেখানে চা পাতা মিশিয়ে কতক্ষণ চুলোয় রাখতে হবে এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে চায়ের স্বাদ। অনেকে গুঁড়ো দুধ দিয়েও চমৎকার চা বানাতে পারেন কিন্তু কীভাবে পারেন তা জানা নেই। মাঝে মাঝে স্টার বা অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে শুধুমাত্র চা খেয়ে আসার বদঅভ্যাস আমার আছে। আশেপাশে সবাই যখন হাপুস-হুপুস করে মাংসের ঝোলে নান ডুবিয়ে খাদ্যবিলাস করে তখন আমি আয়েশ করে চুমুকে চুমুকে পান করি ঘন দুধের অমৃত পানীয়-চা।

লেবু চা

lebu

দুধ চায়ের পরে বাঙালীর পছন্দ লেবু চা। লেবু চা মানেই পাতলা লিকার অর্থাৎ দুধ চায়ের তুলনায় এ চায়ে পানিতে চা পাতার পরিমাণ হবে কম এবং জ্বালও দিতে হবে কম। চা হয়ে গেলে সেখানে লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় লেবু চা। লেবু চায়ে মেশানোর জন্য প্রথম পছন্দ কাগজী লেবু বা শরবতী লেবু। এসব লেবুর সুঘ্রাণ মনকে চনমনে তো করেই, শরীরকেও করে সতেজ। শীতকালে লেবু চা’র কদর বাড়ে। প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে গায়ে চাদর পেঁচিয়ে এক কাপ আগুন গরম লেবু চা খেতে কার না ভালো লাগে?

আদা চা

Arecipephotoherbaltea1-600x283

আদা চা অত্যন্ত সুস্বাদু। তবে হাঁপানী রোগী বা আমার মতো যাদের সর্দি-কাশি সারা বছর লেগে থাকে তারা এ চায়ের খুব কদর করে। এ চায়ের লিকার হয় লেবু চা’র মতো। কিন্তু চুলোয় জ্বাল দেয়ার সময় আদা কুঁচি কুঁচি করে কেটে একটু ছেঁচে নিয়ে চায়ের পানিতে যোগ করতে হয়। পানি জ্বাল হতে হতে আস্তে আস্তে আদার উপকারি রস চায়ে মিশতে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে কাপে ঢেলে চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় আদা চা। রাস্তায় হাতে করে যারা চা বহন করে বিক্রি করেন তাদের কাছে সাধারণত আদা চা-ই থাকে। তবে তারা ফ্লাস্কে রং চা রাখে। পরিবেশন করার আগে ছেঁচে রাখা আদা, চায়ে মিশিয়ে দেয়। অনেকে আবার আদা চা’র সাথে লেবুর রস মিশিয়েও পান করতে পছন্দ করেন। তখন ঐ চা’কে আদা-লেবু চা বলা হয়।

রং চা

nakhat_1311317360_7-Black-Tea

রং চা’র নামটা খুব ইন্টারেস্টিং। ইংরেজি শব্দ raw থেকে এর নাম হয়েছে রং। Raw অর্থ কাঁচা বা অমিশ্রিত, খাঁটি অর্থাৎ যেখানে অন্য কিছু মেশানো হয় নি। শুধু চা পাতা পানিতে জ্বাল দিলে যে চা তা-ই হলো রং চা বা র’ চা। সত্যি কথা বলতে কি রং চা-ই হলো আসল চা। চায়ের প্রকৃত স্বাদ ঐ রং চা-তেই। কিন্তু কী দরকার বাপু আমার চায়ের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের? যেটা ভালো লাগবে সেটাই খাবো। সাদা চামড়ার সুটেড-বুটেড সাহেবরা অফিসের ডেস্কে বসে যেমন ব্ল্যাক কফি খেতে ভালোবাসেন তেমনি দেশের বয়স্ক বুদ্ধিজীবি ব্যক্তিদেরও পছন্দ এই রং চা :p । তবে ডায়াবেটিসের রোগীরাও রং চা খেয়ে থাকেন। চিনি মেশানো রং চা অবশ্য মন্দ না। আগুন গরম হলে শীতের সন্ধ্যায় ফুটপাতের ধারে দাঁড়িয়ে রং চা খেতেও বেশ লাগে।

(চলবে)

ছবি কৃতজ্ঞতা: বিভিন্ন ওয়েবপেইজ

No comments:

Post a Comment