মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বাঁচার জন্য খায়।কিন্তু ঠিকমত বাঁচার জন্য কত টুকু খাবো আর কি খাবো এটা নিয়ে সম্ভবত আমার মতো অনেকেরই ঝামেলায় পড়তে হয়। ডাক্তারগণ তো জিজ্ঞেস করলে বলে দেন, যা ভালো লাগে খান আর সব খান। কিন্তু ঝামেলা হল কারো কারো তো কিছু ভালো নাও লাগতে পারে!সেক্ষেত্রে যদি জানা যায় যে এটা এটা খেতেই হবে বা ঐটা কম খেলেই হয় তাহলে আমার মতো যারা খাওয়া নিয়ে সমস্যায় পরে তাদের সুবিধা হয়।কারন আমাদের তো অনেক কিছুই করতে ইচ্ছা হয় না তবু তো করা প্রয়োজন বলে করি।তাই যাদের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ খুঁজে বের করতে অলসতা আসে বা বই পত্র/ নেট ঘাটাঘাটি করার সময় নাই কিন্তু কি খাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা আছে তাদের জন্য হয়তো কিছুটা হলেও এই লেখাটা কাজে লাগতে পারে।
খাবার খাওয়ার সবচে সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় হচ্ছে ১ পরিবেশন পরিমান হিসেব করে দিনে মোট কত পরিবেশন খাওয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে খাওয়া।কিন্তু আমরা তো আর দাড়িপাল্লা নিয়ে খেতে বসে যেতে পারব না তাই সহজে বোঝা যায় বা মাপা যায় এরকম কিছু দিয়ে পরিমান নির্ধারণ করা যায় এরকম মাপ দেয়া হল।এখানে প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক ওজনের মানুষের জন্য মোটামুটি কত টুকু খাওয়া যায় তাই দেয়া হয়েছে। কেউ যদি কিলোক্যালরি হিসেব করে খায় তাহলে তাদের হয়তো আরো সূক্ষ্ম হিসাব প্রয়োজন হতে পারে আমি এখানে যারা মোটামুটি গড় হিসেবে খেতে চায় তাদের জন্য কাজে লাগতে পারে এই লেখা, এই ভেবে লিখেছি। ১ পরিবেশন কিভাবে নির্ধারণ করা যায় তার মাপের সাথে প্রতিদিন কয় পরিবেশন খাওয়া প্রয়োজন তাও দিলাম।
দুধ বা দুধজাত খাবার (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। টাটকা দুধ ১ গ্লাস (৮ আউন্স) বা ২। দই ১ কাপ (৮ আউন্স) বা
৩। ছানা ১/৩ কাপ বা ৪। পনির ২৫ গ্রাম বা
৫। রসগোল্লা ১ টি (৫০ গ্রাম) বা ৬।আইসক্রিম ১/২ কাপ বা দুই স্কুপ
দুধ বা দুধজাত খাদ্য আদর্শ প্রোটিন । এটি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, রিবোফ্লাবিনের ভালো উৎস।
বয়স্কদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে ১ পরিবেশন দরকার। শিশুদের দৈনিক ১-২ পরিবেশন প্রয়োজন।
প্রোটিন (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। কাঁটাছাড়া মাছ ৩০ গ্রাম বা ২। হাড়ছাড়া মাংস ৩০ গ্রাম বা
৩। ডিম ১ টি বা ৪। ডাল ২৫ গ্রাম রান্না ছাড়া বা ঘনডাল ১/২ কাপ বা
৫। কলিজা ৩০ গ্রাম বা ৬। বাদাম ২৫ গ্রাম
আদর্শ প্রোটিন গুলো হলঃ দুধ, ডিম, মাছ, মাংস।
অন্যান্য যেসব খাদ্যে প্রোটিন রয়েছেঃ মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মাষকলাইয়ের ডাল, অন্যান্য ডাল, শিমের বিচি, নারকেল, সয়াবিন, চিনাবাদাম, অন্যান্য বাদাম।
এসব খাদ্যে প্রোটিন ছাড়াও ভিটামিন এ, ডি, ক্যালসিয়াম, থিয়ামিন, ফসফরাস ও স্নেহ উপাদান পর্যাপ্ত পরিমানে আছে।এগুলো দেহ গঠন ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজন।
দৈনিক ২-৩ পরিবেশন প্রোটিনজাত খাদ্য প্রয়োজন।
শাক-সবজি (১ পরিবেশনের পরিমান):
১। ফল মাঝারি ১টি বা ২। টুকরা ফল ১ কাপ বা
৩। ফলের রস ১ গ্লাস(৮ আউন্স) বা ৪। কালজাম ১ কাপ বা
৫। সব্জি ভাজি ১/২ কাপ বা ৬। রান্না করা শাক ১/২ কাপ বা
৭। সব্জি সালাদ ১ কাপ
ভিটামিনের প্রাচুর্যের জন্য শাক-সব্জি ও ফল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ভিটামিন এ, সি, রিবোফ্লাবিনের ভাল উৎস। এছাড়া লোহা, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদিও পাওয়া যায়।
দৈনিক ৪-৬ পরিবেশন শাকসবজি বা ফল খাওয়া প্রয়োজন।প্রতিদিনের মেনুতে ১ পরিবেশন ভিটামিন সি ও ১ পরিবেশন ভিটামিন এ জাতীয় ফল এবং ৩-৪ পরিবেশন সবজি ও ফল থাকা উচিত।
শস্য জাতীয় খাদ্য(১ পরিবেশনের পরিমান):
১। ভাত(চাল ২৫ গ্রাম) ১ কাপ বা ২। আটার রুটি (২৫ গ্রাম আটা)২টি বা
৩। পাউরুটি (ময়দা ২৫ গ্রাম)২ টুকরা বা ৪। চিড়া (১৫ গ্রাম) ১/৩ কাপ বা
৫। মুড়ি (১৫ গ্রাম) ১ কাপ বা ৬। আলু ১৮০ গ্রাম
শস্য জাতীয় খাদ্যের বেশির ভাগ অংশ হচ্ছে শ্বেতসার। যেটি মূলত শরীরে তাপ উৎপাদন করে।অর্থাৎ কাজ করার জন্য শক্তি যোগায়।ঢেঁকি ছাঁটা চাল এবং আটায় রিবোফ্লাবিন, থিয়ামিন পর্যাপ্ত পরিমানে আছে।তবে মেশিনে ছাঁটা চাল এবং ময়দায় অধিকাংশ রিবোফ্লাবিন, থিয়ামিন নষ্ট হয়ে যায়। তবু চালে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তা আমরা পরিচ্ছন্নতার(!) দোহাই দিয়ে বারবার ধুয়ে ফেলে দেই।
দৈনিক ৪-৬ পরিবেশন শস্য জাতীয় খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। তবে বাড়ন্ত কিশোরের এবং পরিশ্রমী পুরুষের এর দ্বিগুণ শস্য জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন হতে পারে।
স্নেহ উপাদানঃ মাছ ও মাংসের তেল, সয়াবিন, সরিষার তেল, বাদাম, তিলের তেল, ঘি, মাখন, নারকেলের তেল, জলপাই, মারজারিন। এটি অল্প পরিমানে প্রয়োজন মোটামুটি ২০-৪০ গ্রাম যথেষ্ট।
স্নেহ পদার্থ দেহে তাপ উৎপন্ন করে কাজ করার শক্তি যোগায়। ভিটামিন এ এবং ডি কে দ্রবীভূত করে দেহে এটিকে কাজের উপযোগী করে তোলে। তেল ও চর্বির ফ্যাটি এসিড দেহত্বক সুস্থ রাখে।
কাপ ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় মাপঃ
১ কাপ= ২০০ গ্রাম বা ৮ আউন্সের সমান
ময়দার ১ কাপের ক্ষেত্রে আবার ১০০ গ্রাম ময়দা ধরে এমন কাপ বোঝায়
তরল মাপার জন্য কিছু সহজ মাপঃ
১ কাপ = ১৪০ মিলি, ১৬ টেবিল চামচ = ১ কাপ, ১ কাপ = ৮ আউন্স
১ চা চামচ =৫ মিলি, ৩ চা চামচ= ১ টেবিল চামচ, ১ টেবিল চামচ = ১৫ মিলি
একদিনের স্বাভাবিক একটি খাবার মেনু এভাবে করা যেতে পারেঃ
সময় দুধ/দুধজাত খাবার প্রোটিন শাকসবজি শস্য জাতীয় খাবার/(ভাত/রুটি/অন্যান্য)
সকাল - ১ ২ ২
দুপুর - ১ ২ ২
রাত ১ - ১ ২
মোট পরিবেশন = ১ ২ ৫ ৬
বিভিন্ন ধরনের মিনারেল ও ভিটামিনের উৎসঃ
ভিটামিন এঃ কলিজা, দুধ, ডিমের কুসুম, মাছ ও মাংসের তেল, মাখন, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, কচুশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, ডাঁটাশাক, লালশাক, পুদিনা, ধনেপাতা ও বিলেতি ধনেপাতা এবং অন্যান্য রঙিনশাক, পাকা আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল, আলুবোখারা তাজাটা, পেয়ারা, তরমুজ।
ভিটামিন সিঃ আমলকী,লেবু, পেয়ারা, কমলা, জাম্বুরা, আমড়া, কামরাঙ্গা,আঙ্গুর,আলু বোখারা তাজাটা, লিচু, আম, আনারস, বরই, বেদানা, টমেটো, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কাঁচামরিচ।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সঃ ঢেঁকি ছাঁটা চাল, কলিজা, মাংস, ডাল, বাদাম, তিল, শিমের বিচি।
রিবোফ্ল্যাবিনঃ সবুজ শাক, দুধ, চাল, কলিজা, ডিম , আটা।
ভিটামিন ডিঃ মাছের তেল, দুধ।
ভিটামিন ইঃ পালংশাক, বিভিন্ন রকম বাদাম, টমেটো।
ক্যালসিয়ামঃ দুধ, মাংস, পালংশাক, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লালশাক, ফুলকপি, শিম, বরবটি, ছোট মাছ কাঁটাসহ, নরম ছানা, ঘন ডাল, পনির।
পটাশিয়ামঃ দুধ, দই, মিষ্টি আলু, কলা, ডাব, দুধ, পনির, ছানা ও ছানার তৈরি মিষ্টান্ন, গুড়, বাদাম, রসুন, কিসমিস, টমেটো, লাউ, তেঁতুল, বেদানা, আনারস, পেঁপে, কমলা, পেয়ারা, আলুবোখারা তাজাটা, বিভিন্ন রকম বিন।
ম্যাগনেসিয়ামঃ পালংশাক, সয়াবিন, কাজু বাদাম ও বিভিন্ন রকমের বাদাম।
আয়রনঃ গরুর কলিজা ও মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, পালংশাক, পুঁইশাক, গুড়, কাঁচাকলা।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
ছবি কোথায় ? এই যুগের পাঠকেরা সব শিশুদের মত, ছবি ছাড়া বই পড়তে চায়না !
ReplyDeleteঅনেক সুন্দরএকটা পোস্ট
ReplyDelete