শিক্ষা জীবন মাঝে মাঝে সহ্য হয় না। ৩-৪ বছর বয়সে এলাকার কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে অনার্স, মাস্টার্স, কেউ কেউ আবার পিএইচডি। মনে হয়, কবে শেষ হবে লেখাপড়ার ঝক্কি, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বানিজ্য করে ইনকাম না করলে কি হয় নাকি? কিন্তু ৯-৫টা চাকরি যারা করেন তারাই জানেন শিক্ষা জীবন কত মধুর ছিল। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, হৈচৈ, আনন্দ-উল্লাস, মাঝে মধ্যে ক্লাস বাং দেয়া। চাকরিতে সে সুযোগ নেই। ইচ্ছা করুক আর না করুক, অফিসে যেতেই হবে। নো ছাড়াছাড়ি। বসের চোখ রাঙানি সহ্য করাও এক মহা কঠিন কর্ম। চাকরি বলতে আমরা কী বুঝি? অফিসে বসে ফাইলপত্র দেখা? বিটিভি নাটকে চাকরি মানেই ছিল ফাইল ঘাঁটা আর সাইন করা। এখন চাকরির বলতে মনে হয় স্যুট-টাই পরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং তো আছেই। আর উচ্চশিক্ষায় না গেলে চাকরি বলতে আমাদের দেশে ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হতে হয়। অথচ উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ না করে মোটা বেতনে চাকরি করা সম্ভব। সে সকল চাকরির মাঝে রয়েছে অদ্ভুত কিছু কাজ যার অনেকগুলোর কথা হয়তো আমরা কখনো শুনিই নি। এরকম উদ্ভট ১০টি চাকরির কথা আমরা জানবো আজ।
১। অপরাধস্থল পরিষ্কার করা: খুন-খারাপি, হত্যাসহ নৃশংস সব অপরাধ যেখানে সংঘটিত হয় সে স্থানে স্বাভাবিকভাবেই হাঁড়-মাংস-রক্তে একাকার হয়ে যায়। তদন্তের স্বার্থে তৎক্ষণাত পরিষ্কার করাও যায় না। ফলে পোকামাকড় আর জীবাণুর আস্তানা ঘটে সেখানে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এক সময় জায়গাটি পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ে। আমাদের দেশে অপরাধস্থল পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ কোনো পেশাদার কর্মী নেই। কিন্তু উন্নত দেশে রীতিমতো সার্টিফিকেট এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে যারা শুরু এ কাজটিই সম্পাদন করেন। প্রাপ্তিও মন্দ নয়। বছরে ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে শুরু। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে ৬ অংকের ঘরেও পৌঁছে যায় এক সময়।
২। মানব বিলবোর্ড: ঢাকা শহরে বিলবোর্ডের চোটে আকাশ দেখাই দায়। একসময় রাস্তার ধারে বিলবোর্ড থাকলেও তা এখন রাস্তার উপরে চলে এসেছে। বিজ্ঞাপনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এটি। আমাদের দেশে চালু না থাকলেও উন্নত দেশে পাগলের অভাব নেই। পাগল বলাও ঠিক না। কারণ নিজের দেহ বিজ্ঞাপনচিত্র বা লেখার জন্য ভাড়া দিয়ে টু পাইস কামালে ক্ষতি কি? যে ব্যাটা নিজের শরীরের স্পেস ভাড়া দেয় সেই ব্যাটা সাধারণত খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায়। বুকে বা পিঠে পণ্যের বিজ্ঞাপন আঁকা বা লেখা থাকে।
৩। মৃতদেহ পরিষ্কারক: সাদা চামড়ার দেশগুলোতে মৃতের সৎকারের জন্য পেশদার এজেন্সি থাকে। স্যুটেড বুটেড আন্ডারটেকাররা মৃতদেহ বহন করে আর মৃতের আত্মীয়-স্বজন শোক পালন করে। মৃতদেহের গোসলের কাজটি যারা করে থাকে তাদের বেতন কিন্তু অনেক। কারণ এ কাজটি সবাই করতে চায় না। মৃতদেহ পরিষ্কার করার জন্য পেশাদার একজন ব্যক্তি বছরে প্রায় ৪৪ হাজার ডলার আয় করেন।
৪। জীবন্ত কাকতাড়ুয়া: ইউরোপ-আমেরিকাতে মানুষ অর্থের বিনিময়ে ক্ষেতে কাক তাড়ানোর কাজ করে থাকে। এজন্য ঘন্টায় তারা ১০ থেকে ১৫ ডলার লাভ করে থাকেন।
৫। রহস্য ক্রেতা: অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি দোকানে তাদের পণ্য কেমন বিক্রি হচ্ছে, বিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে কেমন আচরণ করছে, দোকানের পরিবেশ যাচাই প্রভৃতি কাজের জন্য লোক নিয়োগ করে। এদের রহস্য ক্রেতা বলে। ক্রেতা সেজে তারা দোকানে যায় এবং কেনাকাটাও করে। পরস্থিতি যাচাই করে রিপোর্ট করে দেয়। দোকানের কর্মী বুঝতেও পারে না ক্রেতা কি আসলেই ক্রেতা নাকি কোম্পানির এজেন্ট।
৬। আইসক্রিম টেস্টার: শুনে খুব লোভনীয় লাগে। সারাদিন বসে বসে বিনামূল্যে আইসক্রিম খাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে খুব কঠিন কাজ। কারণ, দিনের পর দিন বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রিম খেয়ে তাদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করে ইভ্যালুয়েট করে বলতে হয় যে কোনটির স্বাদ ভালো, কোনটি বাজারে চলবে বেশি। টেস্টাররা আসলে আইসক্রিম খান না। তারা জিহ্বায় নিয়ে স্বাদ গ্রহণ করেই আইসক্রিম ফেলে দেন। সবাই এ কাজ করতে পারেন না। স্বাদের পার্থক্য করার তীক্ষ্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন জিহ্বা থাকতে হয়। বছরে আয় ৫৬ হাজার ডলার।
৭। জীবন্ত ম্যানিকুইন: দোকানে কাপড়-চোপড় পরা ম্যানিকুইন বা পুতুল থাকে। মানুষও এই কাজ করতে পারে। জামা-কাপড় পরে তাকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কষ্টের কাজ। ঘন্টায় প্রায় ৫০ ডলার আয় করা সম্ভব।
৮। টিভি দর্শক: বসে বসে টিভি দেখবেন। আর এর জন্য টাকা থুক্কু ডলার পাবেন। টিভির বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখে ভিউয়ার রেটিং দিতে হবে বা জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের সাবটাইটেল তৈরি করতে হবে। বার্ষিক ২৫ হাজার ডলারে শুরু করা যাবে এ কাজ।
৯ টা ৫টা চাকরির বাইরেও করার মতো অনেক কাজ আছে। সেজন্য খুব পড়াশুনারও দরকার নেই। অনেকে এ ধরণের অদ্ভুত কাজ করে আনন্দ লাভ করেন। তবে এসব কাজ যে খুব আরামের তা কিন্তু নয়। সুযোগও খুব বেশি নয়। যথেষ্ঠ প্রতিযোগিতা রয়েছে। পরিশ্রম বা একঘেয়েমির সুযোগ অত্যন্ত বেশি। তবে আমার ইচ্ছে এমন কিছু করার যেখানে আরাম-আয়েশে জীবন পার করা যাবে আর ফোন করলেই বাসায় টাকা পৌঁছে যাবে।
তথ্যসূত্র: অডজবনেশন ও ফোর্বস
No comments:
Post a Comment