ফেসবুকে লুচ্চা হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছি। অভিযোগ রয়েছে, আমি কোমলমতি জুনিয়র নারীদের ছবিতে প্রেমময় ফটো কমেন্ট করে থাকি। স্ট্যাটাসে তাদের প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসা ব্যক্ত করি। এক নারীকে ভালোবাসলে তা সম্রাট শাহজাহানের রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক তাজমহল মার্কা প্রেম, আর বহু নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে শাহজাহান ডিমোশন পেয়ে হয়ে যায় লুচ্চা। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই ধারণা! শুধু ব্যাটিং পারলে ব্যাটসম্যান, বোলিং পারলে বোলার আর ব্যাটিং, বোলিং দু’টো পারলে অলরাউন্ডার। অথচ প্রেমের ক্ষেত্রে ‘ব্যাটিং’, ‘বোলিং’ উভয়কে ভালোবাসলে কোথায় অলরাউন্ডার উপাধি পাবো তা না, উপাধি পেতে হচ্ছে লুইচ্চা হিসেবে। সত্যি নির্মম! একটি কুচক্রী মহল আমার প্ল্যাটোনিক ভালোবাসাকে এরশাদের রসময় ভালোবাসার সাথে গুলিয়ে ফেলে আমার সাথে কাকুর ছবি ফটোশপ করে ট্রোল তৈরি করছে। তরুণ প্রজন্ম ফটোশপে মন না দিয়ে লেখাপড়ায় মন দিলে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতো। যাই হোক, দুঃখের কথা যখন বলতে এসেছি একটু বলেই যাই। পরে সময় হয় কি না হয় তার নাই ঠিক।
চিত্র: ভালোবাসার অপরাধে অপপ্রচারকারী শিহাব উদ্দিন কর্তৃক তৈরিকৃত ট্রোল
শ্রদ্ধেয় আশীফ এন্তাজ রবি ভাই একবার বলেছিলেন মানুষ ঘুষ খেলে তাকে দুর্নীতিবাজ বলা হয়, গুন্ডামী করলে সন্ত্রাসী বলা হয়, মদ খেলে মদারু বলা হয় কিন্তু নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে চরিত্রহীন আখ্যা দেয়া হয়। চরিত্র সবচেয়ে বড় সম্পদ অথচ ঘুষ খেলে, খুন করলে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কেউ চরিত্রহীন হয় না। এক বা একাধিক নারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেই তার চরিত্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়। সেলুকাসের নাম একবার বলেছি আর বলতে পারছি না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সেলুকাসের ছোট ভাইটাইয়ের নাম না জানলে বার বার “সত্যিই সেলুকাস” বলতে বলতে একঘেয়েমি চলে আসবে। যা বলছিলাম। রবি ভাইয়ের কথার সূত্র ধরেই বলি, কারো যদি প্রেম ভালোবাসার অনুভূতি বেশি থাকে তাহলে তা কি অপরাধ? তিনি বলেছিলেন তার নারীর প্রতি ভালোবাসা একটু বেশিই। কিন্তু সমাজের চরিত্রহীন আখ্যার ভয়ে বেশি দূর এগোতে পারছেন না। তার হৃদয়ের বেদনা অক্ষরে অক্ষতে বুঝতে সক্ষম এই আমি।
ওমর সানী একদা নীলাকে বলেছিলেন, “বলো নীলা বলো, ভালোবাসা কি পাপ?” আমাকেই আজ ওমর সানী ভাইয়ের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে হয়, “বলো, সকিনা বলো, ভালোবাসা কি পাপ?” সানী ভাই আরো বলেছিলেন,” ভালোবাসা যদি একটি অপরাধ হয় তাহলে সে অপরাধে আমি অপরাধে।” খুব চমৎকার কথা। নিউটন, আইনস্টাইনরা কি সব জীবনবিমুখী সূত্র দিয়ে অস্কার পেয়ে গেল আর আমাদের সানী ভাই সামান্য নোবেল পুরস্কার পেলেন না। সত্যি সেলুকাস!
চিত্র: বহু কোমলমতি নারীর ছবিতে যে ফটো কমেন্টটি করে আমি লুচ্চা আখ্যায়িত হলাম
জেমস বন্ড একেক সিনেমায় একেক নারীর সাথে প্রেমে মশগুল হয়ে হলো হিরো আর আমি একেক নারীর ছবিতে একেকভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে হলাম চরিত্রহীন। আফসোস। কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আমি করলে দোষ! জমিনে জাস্টিসের বড্ড অভাববোধ করছি। কাজীদা বলেছেন মাসুদ রানা নাকি সবাইকে (পড়ুন শুধু নারীদের) টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। আমি তো ভালবাসতে বাসতে গিট্টু লাগাইতে চাই, কিন্তু সমাজ আমার নিষ্পাপ অভিপ্রায় বুঝলো না। যে সকল নারীর প্রতি আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রকাশিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে ইতিমধ্যে লেখা হয়ে গিয়েছে আরেকটি কুচক্রী মহল সেই সকল নারীদের “আমি কর্তৃক নির্যাতিত কোমলমতি” আখ্যা দিয়েছে। সংবিধানে ভালোবাসাকে কোনো অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয় নি। তবে আমি কেন চরিত্রহীনের অপরাধে অপরাধী হবো? শরৎচন্দ্র চরিত্রহীন লিখলেন, দেবদাসকে পারু-চন্দ্রমুখীর সাথে জড়ালেন আর আমি সামান্য অর্ধশত নারীর প্রেমে মশগুল হয়ে লুচ্চা হয়ে গেলাম? একজন প্রেমিকের কি মন থাকতে নেই? আমার মতো দিয়াশলাইয়ের ন্যায় যারা জন্ম থেকেই জ্বলছি তাদের নিয়ে একটি সংঘ তৈরি করে অতি শীঘ্র প্রেসিডেন্ট পার্ক অভিমুখে আমরা যাত্রা শুরু করবো। পথিমধ্যে যদি পুলিশ আমাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা নেয় তাহলে আমাদের অনুরোধ থাকবে যেন শুধুমাত্র মহিলা পুলিশদেরই মোতায়েন করা হয়।
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু এটুকুই বলবো, “ভালোবাসা দিবি কিনা বল”
No comments:
Post a Comment