Sunday, May 25, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৫ম ও শেষ পর্ব

মার্কেটে রাখাইনদের দোকান বলতে গেলে আর নেই। সব বাঙালিদের দখলে। আমরা খুঁজে খুঁজে রাখাইনদের দোকান খুঁজে বের করলাম। বড্ড ভালো লাগে তাদের দোকানে গেলে। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি বুঝে গিয়েছেন, খুলে বলতে হবে না। মার্কেট ঘোরা আমার খুব অপছন্দের কাজ। কিন্তু ভালোই লাগছিল সেখানে। রাখাইন দোকানীদের কথাবার্তা এতো সুন্দর। মন ভালো হয়ে যায়। জিনিসপত্র কিনে সোজা হোটেলে চলে গেলাম। সব কিছু রেখে পুনরায় চলে আসলাম লাবণী পয়েন্টে। সেখান কড়ি-টড়ি কেনা হবে। ঘুরে ঘুরে তাও কেনা হলো। এরপর অটোতে করে যাওয়া হলো মারমেইড ক্যাফেতে। তাদের অন্দরসজ্জা সুন্দর বিধায় যাওয়া হয়েছিল। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী। তিনটা লেমোনেড অর্ডার করা হলো। বসতে অসাধারণ লাগে। মেনুতে লেখা সব খাবারের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ এবং ৬ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। ভালো কথা। আমরা হিসাব করে ফেললাম কত টাকা বিল আসবে। লেমোনেড আসলো। বিল দিতে বললাম কেননা একটু তাড়াহুড়ো ছিল আমাদের। রাতের খাবার খেতে যেতে হবে। দেখলাম বিল এসেছে কাঙ্ক্ষিত টাকার চেয়ে ২ টাকা বেশি। পরে আমি আবিষ্কার করলাম তারা খাবারের দামের ওপর সার্ভিজ চার্জ আরোপ করেছে। এরপর সার্ভিস চার্জসহ মোট দামের ওপর আরোপ করেছে ভ্যাট। পুরা বাটপার। এখানেই শেষ নয়। ২৯৮ টাকা বিল এসেছে। ৫০০ টাকা দেয়ার পর ফেরত এনেছে ২০০ টাকা। ২ টাকা গায়েব। আমি তো অত সহজে ছাড়ার পাত্র নই। ওয়েটারকে ডেকে ২ টাকার কথা বললাম। আমার বন্ধুরা খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু ২ টাকা কম দিবে কেন? ২ টাকা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। রাতে খেলাম পউষীতেই। এবারে আমার বন্ধুরা নিলো একটা করে লইট্টা ফ্রাই আর একটা করে রূপচাঁদা। আমি লইট্টা ফ্রাইয়ের সাথে নিলাম গরুর ভুনা। সবগুলো খাবার স্বাদই অসাধারণ। ভরপেট খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় বিআরটিসি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

3577517

জিইসি মোড়

১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।

handi-restaurant orig_218bab8ebde8a5d8b90a00a8d5638a5082d25dfe

পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।

ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।

No comments:

Post a Comment