

এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment