Saturday, May 24, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৪র্থ পর্ব

হিমছড়িতে পৌঁছেই ঝর্ণা খোঁজা শুরু করে দিলাম। দেখলাম ১৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢোকার গেইট হয়েছে। ঝর্ণা দেখার কম্পাউন্ডে ঢুকতে ২৩ টাকার টিকেট কিনতে হয়। ১৫ টাকা টিকেটের দাম আর বাকিটা ভ্যাট (ভ্যাট আর শান্তি দিলো না)। গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলাম তীর চিহ্ন দিয়ে বড় ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথ। ঝর্ণা সামনে গিয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে ঝর্ণা। চেনার কোনো উপায় নেই। ঝর্ণার উচ্চতা আমার চেয়ে একটু বেশি হবে। পাহাড় ভেঙে ঝর্ণা ছোট হয়ে গিয়েছে। ঝর্ণার উৎসের দিকে যাওয়াও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মিনি ঝর্ণায় একটু হাত-পা ভেজালাম। ক্যামেরা নেই, ছবি তোলা হলো না। স্থানীয় ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে মেমরি কার্ডে দিতে চাইলো, কিন্তু সে বস্তুও আমাদের সাথে নেই। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম। উঠছি তো উঠছি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। হাঁসফাঁস অবস্থা আমার! আর পারি না। মানুষজনও দেখি সব হাঁপাচ্ছে। প্রায় শেষ পর্যন্ত ওঠার পর একটা সমতল জায়গায় আমার বন্ধুরা ডাবের পানি পান করলো। খালি হাতে উঠতেই যেখানে খবর হয়ে যায় সেখানে ডাবওয়ালা কীভাবে প্রতিদিন একগাদা ডাব নিয়ে উঠে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আর পারছিলাম না উঠতে। আমার বন্ধুরা চূঁড়ায় উঠলো। আমি নেমে এসে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বালির বস্তার ওপর শুয়ে পড়লাম। বুক ভরে বাতাস নিলাম। হানিমুনে আসা নবদম্পতিদের আড়চোখে লক্ষ্য করলাম। তাদের আনন্দে আমিই যেন আনন্দিত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট একা একা খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম সাগড় পাড়ে। আকাশে তখন ঘন মেঘ। রোদের জন্যে তাকানোও যায় না ভালো করে। রোদ চশমাই ভরসা। এরমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে অটো স্ট্যান্ডে যেতে বললো। ইচ্ছে ছিল সাগর পাড়ে বসে এক গেলাস জুস পান করবো। সে সুযোগ না দিয়ে তারা ১২০ টাকায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ঠিক করে ফেললো। মনোরম পথ ধরে লাবণীতে পৌঁছালাম।

index

cms.somewhereinblog.net

এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।

(চলবে)

1 comment:

  1. Casinos Near Mahakala Casino and Agen Judi Bola Terbaik
    ai ganapati bola 전라남도 출장안마 terbaik, aa bola ganapathi bola, akan dengan daftar bandar game terbaru anda 의정부 출장샵 lagi permainan 경기도 출장마사지 yang 문경 출장샵 dikarenakan judi 김해 출장샵

    ReplyDelete