Sunday, January 12, 2014

চায়ের কাপে বাঙালী- ২য় কিস্তি

চা নিয়ে লেখা কঠিন আছে। কেন? লিখতে গেলেই লেখা বাদ দিয়ে চা খেতে মন চায়। ঘন দুধের মালাই চা। গত পর্বে বেসিক চা নিয়ে বলেছিলাম, এ পর্বে একটু কারিগরি করা চায়ের কথা বলবো। এই যে মালাই চায়ের কথা বললাম। এই চা কিন্তু দুধ চায়েরই একটি প্রকার মাত্র। ঘন দুধের চা’কে সাধারণত মালাই চা বলা হলেও অনেকে সত্যি সত্যি মালাই মিশিয়ে চা তৈরি করেন। বলা বাহুল্য যে সে চায়ের স্বাদ হয় তুলনাবিহীন। সেই মালাই ঘরেও তৈরি করে নেয়া যায় কিংবা মিষ্টির দোকানে কিনতেও পাওয়া যায়। একটু খরচ পড়ে আর কি। যা হোক, শুরু করে দিই বিভিন্ন প্রকার চায়ের আলাপ।

মাসালা চা

12_078_eat-drink_pour-chai

নাম শুনেই নাকে এসে লাগে হরেক রকম মসলার সুঘ্রাণ। মাসালা চা দুই রকম হতে পারে। দুধসহ এবং দুধ ছাড়া। মাসালা দুধচা তৈরির সময় তরল দুধে প্রথমে গরম মসলা তথা দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ প্রভৃতি যোগ করে ভালো করে জ্বাল দিয়ে পানি কমিয়ে আনতে হয়। মশলা সুঘ্রাণ ও নির্যাস ভালো করে মিশে গেলে চা পাতা যোগ করে ফুটাতে হয়। পানির সাথে গরম মশলা ও চা পাতা যোগ করে জ্বাল দিয়ে পরে গুঁড়ো দুধ মিলিয়ে এ চা তৈরি করা সম্ভব।

আর দুধবিহীন মাসালা চায়ে দুধ ব্যতীত ওপরেr সবই থাকে। লেবু চায়ের মতো লিকার পাতলা হয় না, অনেকটা দুধ চায়ের মতো গাঢ়ই হয়।

অরেঞ্জ টি

orange-tea-detail

অরেঞ্জ চা-ই বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম অরেঞ্জের পর চা না বলে টি বললেই মানায় ভালো। বাংলায় কমলা চা বললেও কেন যেন ভালো লাগে না অত। অরেঞ্জ টি একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন বলা চলে। নরওয়েতে একটি চায়ের দোকানে ৯৯ রকম চায়ের মধ্যে অরেঞ্জ টি অন্যতম। চা পাতার সাথে সেখানে কমলার নির্যাস মেশানো থাকে। তবে ঘরেও এই চা তৈরি করা সম্ভব। একদমই সহজ। লেবু চা’র মতো লিকার করে সেখানে ট্যাং যোগ করে দিলেই চলবে। চিনি না মেশালেও চলে তবে চিনি যোগে স্বাদ বাড়ে কিছুটা। ট্যাং যোগ করতে হবে চা কাপে ঢালার পর। আর হ্যাঁ, অরেঞ্জ টিতে দুধ যোগ করলে মোটেই ভালো লাগে না।

মাল্টা চা

বাঙালি খুবই রসিক। চায়ে লেবু না মিশিয়ে মাল্টা দিলে কি হয় এই করতে গিয়ে মাল্টা চা আবিষ্কার করে ফেলেছে। এই চায়ের সাথে প্রথম পরিচয় বুয়েট এলাকায়। তবে এখন টিএসসিতেও হরদম চলছে মাল্টা চা। মাল্টার রস চিপে দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি করে কাটা মাল্টা চায়ের কাপে ডুবিয়ে দিলে মনোরম এক দৃশ্য সৃষ্টি হয়। আর কাপে চুমুক দেয়ার পর ‘বুকে সুখের মতন ব্যথা’ও জাগ্রত হয়।

গুড়ের চা

এ এক অভাবনীয় জিনিস। প্রথম পান করেছিলাম ছোটবেলায় নাটোরে। ঢাকার বাইরে গ্রাম ও মফস্বল অঞ্চলে এই চায়ের প্রচলন বেশি হলেও আজকাল ঢাকাতেও বেশ পাওয়া যাচ্ছে গুড়ের চা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার উল্টাদিকে ছবির হাট এলাকায় গুড়ের চা পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি স্টলেই। দুধ চায়ে চিনির পরিবর্তে গুড় যোগ করলেই গুড় চা। স্বাদ শুধু ভিন্ন না, এক কথায় অসাধারণ।

হানি টি

মধু এমন একটি জিনিস যা এমনি খেতে অসহ্য লাগে কিন্তু কোথাও মিশিয়ে দিলে চমৎকার। পাউরুটিতে মধু আর মাখন লাগিয়ে খেলে বাতাসে ভাসার অনুভূতি হয় আমার। আর চায়ে মধু মেশালে তো কথাই নেই। সাধারণত আদা চায়ে চিনির পরিবর্তে মধু মেশালে তা সর্দি-কাশির জন্য খুব উপকারি। শখ করেও খাওয়া যায়। আদা না মিশিয়ে শুধু মধু মেশালেও ভালো লাগে। তবে মধুর পরিমাণ বোঝার ব্যাপার আছে। কম-বেশি হলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আইস টি

Iced-tea-with-lemon

চা মূলত গরম পানীয় হলেও তা ঠান্ডা করে পান করার প্রচলনও রয়েছে। লেবু চা বানিয়ে তা ফ্রিজে রেখে বরফ মিশিয়ে ঠান্ডা করে পান করলে কিন্তু মন্দ লাগে না। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে আইস লেমন টি’র স্যাশে কিনে তা বরফকুচিয়ালা পানিতে মিশিয়ে খেতে। অপূর্ব বলে যাকে এক কথায়। আজকাল নেসক্যাফের ভেন্ডিং মেশিনে আইস নেসটিও পাওয়া যায়।

একটা গাছের পাতা। সেটাকে প্রসেস করে গুঁড়া বানিয়ে হাজাররকম জিনিস মিলিয়ে কত কিই না করা যায়। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখলে মাঝে মাঝে মানুষ হিসেবে নিজেরই অবাক লাগে। বিভিন্ন ফ্লেভারের চা তো বাজারে পাওয়াই যায়। আর বাসার রান্নাঘরের নিষ্পাপ চা পাতাকেও কতকিছুর সাথে মিলিয়ে কত পদের চা বানানো যায় তা তো জানাই আছে আমাদের। চাপ্রেমীরা সব ধরণের চা-ই বাসায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে যত যাই বলি মালাই চায়ের উপরে কোনো চা নেই। যাই এক কাপ মালাই চা খেয়ে আসি। :D

ছবি কৃতজ্ঞতা: বিভিন্ন ওয়েবসাইট

2 comments:

  1. ঢাকা শহরের খাবার দোকান, স্পেশালি 'নন-ব্র্যান্ড' যেসব অরিজিনাল ইটারিগুলো আছে সেগুলো নিয়ে একটা লেখা তৈরি করা যায় না ? একেবারে Wikipedia type!

    ReplyDelete
  2. নাসির ভাই, অতি উত্তম প্রস্তাব রেখেছেন। এরকম একটা কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে এখানে সীমাবদ্ধতা আছে আমার। ধানমন্ডি, কলাবাগান, গ্রিন রোড, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে আমার পদচারণা নেই বললেই চলে। ঢাকা শহরের পূর্বাঞ্চল তথা খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল তথা মতিঝিল, গুলিস্তান, কমলাপুর প্রভৃতি এলাকায় এ ধরণের বহু নন-ব্র্যান্ড অসাধারণ খাবারের দোকানের কথা শুনেছি। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ হয় নি। একই সাথে পুরানো ঢাকার বহু জিনিস ট্রাই করা বাকি। সম্প্রতি শুনলাম এক জুসের দোকানের কথা। সেখানে নাকি হেন কোনো ফল নেই যেটার জুস হয় না। ওটা ঘুরে এসে একটা লেখা তৈরি করার ইচ্ছা আছে।

    ReplyDelete