Tuesday, January 21, 2014

মতিন সাহেবের একদিন

খবরটা শুনে মতিন সাহেবের মনটা ভরে উঠলো আনন্দে আর খুশিতে। এ যে গর্বিত বাবা হয়ার খুশি। নানা ভুল বুঝবেন না আবার । মতিন সাহেব অনেক আগেই বাবা হয়েছেন। তিন কন্যা সন্তানের জনক তিনি। কিন্তু আজ তিনি বড় মেয়ে আনিকার জে এস সি এর রিজাল্ট পেয়ে অত্যন্ত গর্বিত অনুভব করছেন। আনিকা জে এস সি তে জিপিএ ৫ পেয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই খুশিতে মতিন সাহেব পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হবেন ঠিক করলেন। ঠিক করলেন সবাই কে নিয়ে নিজের ল্যাব থেকে ঘুরে আসবেন। ও আচ্ছা, মতিন সাহেবের পরিচয় দেয়া যাক এবার। মতিন সাহেব মানুষ হিসেবে খুবি বিনয়ী। ধর্মের উপর বিশ্বাসটা উনার প্রগাঢ়। আলসেমি অথবা অবহেলা করে এক বেলার নামাজ পড়তে পারেন নি এমন উদাহরন পাওয়া যাবে না একটাও। প্রকৃতির প্রতি টানটাও উনার একদম খাঁটি। সুযোগ পেলেই তার শিষ্যদের দিয়ে বৃক্ষ রোপনে নেমে পড়েন। আবার দারিদ্রের প্রতি দরদও কম না। এইতো এই শীতেও তিনি প্রায় শতাধিক মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করেন। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে মতিন সাহেব একজন বিজ্ঞানী। ইতোমধ্যে তাঁর নাম দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।


মতিন সাহেবের ছোট মেয়েটা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। ওকে খেয়াল রাখতে গিয়ে কুদ্দুস প্রায় কাহিল। কুদ্দুস আবার পিচ্চি পুলাপাইন একদন সহ্য করতে পারে না। কি থেকে কি, আজ কিনা এক পিচ্চিকে দেখে রাখার দায়িত্ব এসে পড়লো তাঁর কাঁদে। গুনিজনেরা সত্যিই বলেন "যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।" । মতিন সাহেব ল্যাব থেকে বের হয়ে মেয়েকে ডেকে বললেন, "মা, কুদ্দুস চাচ্চুকে টাটা বলো। আমরা এখন ফিরব।"


ল্যাব থেকে বের হয়ে মতিন সাহেব ভাবলেন, এবার বঊ আর মেয়েদের নিয়ে বাইরে কোথাও খাবেন। শত ব্যস্ততার মাঝেই দিন কখন কেটে যায় মাঝে মাঝে মতিন সাহেব টেরই পান না। মেয়ে আর বউকে নিয়ে বাকি দিনটা কাটিয়ে দিবেন ভাবছেন তাই। একটা সি এন জি রিজার্ভ করে সবাইকে নিয়ে উঠে বসলেন। মতিন সাহেবের পকেটে বেতনের পঞ্চাশ হাজার টাকা। এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত মতিন সাহেবের স্ত্রী নাদিরা । “মতিন আজকে চলো বাসায় যাই।“ নাদিরা বললো মতিন সাহেব কে।


“না” –অন্যমনস্ক ভাবে জাবাব দেন মতিন সাহেব।


“তোমার মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।“


“হু।“


“মিষ্টি কিনতে হবে।“


“বাসায় ফেরার পথে কিনে নিব।“


“মানুষ জনকে দিতে হবে না? জানাতে হবে ?”


“জানাব। সময়তোহ আর উড়ে চলে যাচ্ছে না।“


“মতিন, তোমার সাথে এতগুলো টাকা, যদি ছিনতাইকারি ধরে?”


“ধুর ভয় পেয়ো না। আমি আছি না ?” –এই বলে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এমন এক হাসি দিলেন, নাদিরা বুঝতে পারলেন, এই মানুষকে বুঝানো যাবে না। নাদিরা তাঁর সহজ সরল ভালো মানুষ জামাইকে নিয়ে মাঝে মাঝে বিপদেই পরে যায়। এইতো সেদিন ইয়া বড় এক বোয়াল মাছ কিনে নিয়ে এসে বলে, “দেখো নাদিরা বাজারের সব চেয়ে বড় মাছটা তুমার জন্য নিয়ে এসেছি।“ এত্তবড় মাছ দেখে নাদিরার মাথা খারাপ হওয়ার দশা। কাজের বুয়া নাই। এখন এই মাছ কাটতে তাঁর খবর আছে। অবশ্য নাদিরা তাঁর জামাইকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। বিজ্ঞানী মানুষ, দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু প্রতি বারি দেশে আসার সময় কিছু না কিছু নিয়ে আসেন নাদিরার জন্য। নাদিরা যখন তন্ময় হয়ে এসব ভাবছিলেন, হঠাৎ দেখলেন মতিন সাহেব ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। নাদিরা অবাক হলেন এত উত্তেজিত হয়ে কথা বলার কি আছে? কার ফোন? কান পেতে শুনার চেষ্টা করলেন তিনি জামাই আর অপর প্রান্তের কথপোকথন। যদিও অপর প্রান্তের কথা শুনা সম্ভব না, তিনি বুজার চেষ্টা করলেন কি নিয়ে কথা বার্তা চলছে।


মতিন সাহেব ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে একজন লোক হরহর করে একটানা কিছু কথা বলে গেলো,


“গুড আফটারনুন স্যার, আমি এয়ারটেল অফিস থেকে আসিফ বলছি। আপনি বর্ষসমাপনী লটারীতে ৬২ হাজার টাকা পুরষ্কার পেয়েছেন।“


“হ্যালো! আমি ঠিক বুঝলাম না।“


“স্যার আজ ৩০ ডিসেম্বর, আপনি এয়ারটেল লটারি জিতেছেন।“


“এয়ারটেল লটারি মানে ?”


“স্যার আমরা আমাদের গ্রাহকদের আমাদের সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তাই এই লটারির আয়োজন। প্রতি বছর আমরা আমাদের সম্মানীত গ্রাহকদের মাঝে ইলেক্ট্রনিক লটারির মাধ্যমে কিছু ভাগ্যবান গ্রাহক বাছাই করে পুরস্কৃত করে থাকি। এ বছর পাঁচ জন গ্রাহক এই লটারি জিতেছেন। আপনি তাঁর মাঝে একজন।“


“উহ” মতিন সাহেব ভিতরে ভিতরে এক ধরনের উত্তেজনা আর অস্থিরতা অনুভব করলেন। আসিফ নামক লোকটার কথা যদি সত্য হয় তবে তিনি ৬২ হাজার টাকা জিতেছেন। সবি কপাল, ভাবলেন তিনি। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই তিনি শুধু আজ ভালো সংবাদ পাচ্ছেন।


“৬২ হাজার টাকা ?” বললেন মতিন সাহেব।


“জি স্যার। “


“তো আমাকে এখন কি করতে হবে ?”


“স্যার আমিতোহ ঢাকা অফিস থেকে বলছি, আপনি এখন কোথায় ?”


“আমি সিলেটে।“


“স্যার আমি আপনাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি, এই নাম্বারে আপনি ১২ হাজার টাকা বিকাশ করে দিন। আমরা আপনার নাম্বারে ৬২ হাজার টাকা বিকাশ করে দিব।“


মতিন সাহেব মাথা চুলকে ভাবলেন, তারমানে পুরস্কার ৬২ হাজার টাকার পুরোটা পাচ্ছেন না তিনি। ৬২ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার বাদ দিলে থাকে ৫০ হাজার টাকা। বিষয়টা তাঁর কাছে কেমন জানি লাগলো। কোথায় যেন একটা খুঁত আছে। যাই হোক ৫০ হাজার টাকাই বা কম কিসের ? তাঁর এক মাসের বেতনের সমান।


“বিকাশ করতে হবে?” মতিন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন কিছুটা অন্যমনষ্কভাবেই।


“জি স্যার।“


“দেখুন আসিফ, আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে একটা জায়গায় যাচ্ছি, আমি আপনাকে পরে কল ব্যাক করি ?”


“স্যার আপনি না হয় পথে নেমেই কোথাও বিকাশ করে দেন, আমাকে অন্যদের সাথেও যোগাযোগ করতে হবে।“


মতিন সাহেব ভাবলেন তাইতো। “ঠিক আছে আসিফ আমি আমার ফ্যামিলিকে বাসায় রেখে আপনাকে বিকাশ করব।“


“ঠিক আছে স্যার, ততক্ষন আপনি লাইনেই থাকুন।“


“কেনো?”


“স্যার আমরা আপনাকে কিছু রুটিন প্রশ্ন করব।“


নাদিরা তাঁর জামাইয়ের কথপোকথন থেকে যা বুঝলেন তাতে টাকা বিষটা জরিত সেটাই শুধু ধরতে পারলেন। হটাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়াতে নাদিরা খানিকটা অবাকও হলেন। মতিন সাহেব সবার উদ্দেশ্যে বললেন, “আমরা আরেকদিন খেতে যাব। আজ জরুরি একটা কাজ পরে গেছে। “ মেয়েদের মাঝে কেমন একটা অসন্তোষের আওয়াজ পেলেন মতিন সাহেব। সবাইকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজ গলি ধরে হাটা শুরু করলেন তিনি। এখনও কানে মোবাইল ধরে আছেন। আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। সামনে মসজিদ দেখতে পেয়ে উনি অপর প্রান্তে থাকা আসিফ কে বললেন,


“আসিফ আমি আসরের নামাজ পড়ে নেই?”


“ঠিক আছে স্যার । কিন্তু লাইন কাটবেন না প্লিজ। আমরা এই প্রান্ত থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।“ মতিন সাহেব ভাবলেন এ কেমন ধরনের কথা ! মনে হচ্ছে এয়ারটেল কম্পানি আমাকে লটারির টাকা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ছে। আজব দুনিয়া! মতিন সাহেব নামাজ শেষে মোবাইল দুটি হাতে নিয়ে দেখলেন, এখনও কল চালু আছে আর স্ক্রীনে কল টাইম দেখাচ্ছে ১:০২:১২. তারমানে এক ঘন্টার উপর কথা বলেছেন তিনি।  অবশ্য এয়ারটেলের মত এত বড় কম্পানির জন্য ১ ঘন্টা তেমন বড় কোন বিষয়ই না। অন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলেন ২২ টা মিস কল। এর মাঝে ১৫ তা এসেছে তাঁর স্ত্রী নাদিরার কাছ থেকে। নাদিরাকে কল ব্যাক করে অল্প কথায় খুলে বললেন সব। সব শুনে নাদিরা বললো, “শোন মতিন, কাউকে টাকা পাঠানোর দরকার নাই। তুমি মিষ্টি কিনে বাসায় আসো। প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে।“


“একটু অপেক্ষা করো, আমি পুরস্কারের টাকা টা নিয়ে আসি।“ এই বলে লাইন কেটে দেন মতিন সাহেব। অপর প্রান্তে নাদিরা ক্ষেপে আগুন। আসল কথাটাই বলা হল না। আসিফ লোকটা ফ্রড। মিথ্যা বলে, মানুষকে লোভ দেখিয়ে এরা টাকা নিয়ে নেয়। কখনও পুরস্কার বা লটারির টাকা দেয় না। আবার কল করলেন নাদিরা, এবার দুইটা মোবাইল নাম্বারি ব্যস্ত পেলেন তিনি। কি করবেন নাদিরা ভেবে কিছু কুল কিনারা পাচ্ছেন না। মতিন নিজে যা বুঝে তাই করে। কখনও অন্যের কথার ধার ধারে না। একমাত্র মতিনের ছোট বোন ছাড়া। বয়সে ছোট হলে কি হবে ভাইকে বুঝানোর ক্ষমতা শুধু তারই আছে। আশার আলো দেখতে পেয়ে নাদিরা কল করলেন মতিনের ছোট বোন ফাহমিদাকে। মতিন সাহেবের পকেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা। উনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন একটা বিকাশ পয়েন্ট। একটা বিকাশ পয়েন্ট পেয়ে, উনি ১২ হাজার টাকা বিকাশ করতে চাইলে বললো, আজকে নাকি তাঁর পক্ষে বিকাশ করা সম্ভব না। এ কথা শুনে মতিন সাহেব খুবি বিরক্ত হলেন। বিকাশ সম্ভব না হলে বিকাশ পয়েন্ট বানালো কেন। যত্ত সব ঝামেলা। মতিন সাহেব রিক্সা নিলেন অন্য একটা বিকাশ পয়েন্টে যাবেন। এ সময় অন্য মোবাইলটা বেজে উঠতেই আরেক বার বিরক্ত হলেন। আজকে এত কল আসছে কেনো। মানুষজন কি আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে না নাকি। চরম বিরক্তি নিয়ে মতিন সাহেব চোখ রাখলেন মোবাইল স্ক্রীনে। ফাহমিদা নামটা দেখে তার সব ধরনের বিরক্তি গায়েব।


“হ্যালো, ফাহমিদা?” কথা শেষে মতিন সাহেব যা বুঝলেন তা হলো, আসিফ নামক লোক যা বলছে তাঁর সবই ভুয়া। মতিন সাহেব প্রথমে বিশ্বাস করতে চান নি। কিন্তু ফাহমিদা যখন বলল, তাদের এলাকার ইমাম সাহেবের নাকি এমন হয়েছে। তখন মতিন সাহেব বিশ্বাস করলেন। শুধু তাই না, ফাহমিদা তাঁর সহজ সরল দাদাটিকে একটা চমৎকার উপায়ও বাতলে দিলেন। মতিন সাহেব ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না যে কেউ তাকে ধোঁকা দিয়ে টাকা নিতে চাচ্ছে। এবার অন্য মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন এখনও আসিফের কল চালু আছে।


“হ্যালো আসিফ, আই এম র‍্যালি সো-সরি টু মেক ইউ ওয়েট।“


“ইটস ওকে স্যার।“


“আসিফ আপনি আমাকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন, আর আমার লটারির ১২ হাজার টাকা রেখে দেন।“


“কিন্তু স্যার আপনি আমাদের ১২ হাজার টাকা বিকাশ করার পরই আমরা আপনাকে আপনার পুরস্কারের টাকা পাঠাতে পারব।“


“আচ্ছা ঠিক আছে আসিফ, আপনি আমার সাথে দুই ঘন্টা ধরে মোবাইলে কল ধরে আছেন এত ধৈর্য্য ধরে, আরেকটু কষ্ট করুন প্লিজ। আপনি আপনার কাছ থেকে আমার হয়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে আমার লটারির প্রাইজ মানি তুলে ফেলুন।“


“ঠিক আছে স্যার আমরা আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি একটু অপেক্ষা করুন।“-অপর প্রান্তে ঠুক করে লাইনটি কেটে গেল। মতিন সাহেব তাঁর ছোট বোনের কথা মত আসিফের সাথে কথা বলার পরপরই আসিফ লাইন কেটে দিলো। মতিন সাহেবের হঠাৎ খুব রাগল। উনি ঠিক করলেন আসিফ নামক ব্যাক্তি বা গ্রুপের নামে পুলিশকে ইনফর্ম করবেন। তিনি সরাসরি র‍্যাবকেই জানাবেন ঠিক করলেন। নানা! এরকম চলতে দেয়া যায় না। এরা পেয়েছে কি? রাগে মতিন সাহেবের শরীর কাঁপতে শুরু করলো। এই কনকনে শীতেও মতিন সাহেবের চোয়ালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো। মতিন সাহেবের মোবাইলে র‍্যাবের নাম্বার সেভ করা ছিলো। তিনি সরাসরি ডায়াল করলেন,


“আমি র‍্যাব তথ্য কেন্দ্র থেকে বলছি ?”


“হ্যালো আমি মতিন চৌধুরী। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি এর হেড।“


“জী স্যার আপনাকে আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”


“আমি আজ এক জালিয়াত চক্রের ক্ষপ্পরে পড়ছিলাম। আমি কমপ্লেন করতে চাই।“ এরপর মতিন সাহেব সংক্ষেপে সব খুলে বললেন। সব শুনে র‍্যাব কর্মকর্তা বললেন,


“আপনি কি এই ধরনের লটারির কথা কোন বিজ্ঞাপনে দেখেছেন? মোবাইল কম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনের জ্বালায়তোহ টিভি দেখাই দায়। আপনি টিভি দেখেন না?”


মতিন সাহেব একটু ভেবে বললেন,


“না, আমি এরকম কোন বিজ্ঞাপন দেখি নাই।“


“একটা গরুও বুঝবে যে এটা কোন ফ্রডের কাজ, আপনি বুঝলেন না ?” মতিন সাহেব র‍্যাব কর্মকর্তার কথা শুনে কেমন জানি হকচকিয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন,


“মানে ?”


“দেখুন মতিন সাহেব আপনি শিক্ষিত মানুষ। অনেক বড় একটা পদে আছেন। আপনি যদি এই ধরনের ফালতু ফ্রড লোকের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে পরেন, তাহলে অন্যরা কি করবে ?”


“আমি আসলে......” মতিন সাহেব কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।


“শুনুন মতিন সাহেব আমরা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকি, আপনি ঐ লোকের ফোন নাম্বার দেন। আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখব।“


ফোন রাখার পর মতিন সাহেব পানির তৃষ্ণা অনুভব করলেন। আজ দিনটা মেয়ের রিজাল্ট পেয়ে ভালো শুরু হয়ে-ছিলো, এখন মনে হচ্ছে শেষটা তেমন ভালো হবে না। মতিন সাহেব রিক্সা ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। মাঝে মাঝে নাদিরা তাকে বোকা বলে, মতিন সাহেব সেটা পাত্তা দিতেন না। এখন মনে হচ্ছে নাদিরার কথা এভাবে আর উড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। ছোটবোন ফাহমিদা তাকে বলেছিল, “ভাইয়া লোভ করো না।“ তাহলে কি আমি সত্যি লোভী? লোভী যদি নাই হব, আমারতো এখন মেয়ে-বউওকে নিয়ে খুশিতে থাকার কথা ছিলো। লোভের কারনেই দুনিয়ায় যত সমস্যা। মতিন সাহেব নিজের সাথে পণ করলেন আর কক্ষনও লোভ করবেন না।

1 comment: