
মিষ্টির দোকানের সহকারীরা আর কম দামী সাফারি স্যুট টাইপের পোশাক পরেন না। তারা এখন শার্ট-প্যান্ট শু পরা ফর্মাল। যেন সব এমবিএ। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে “স্যার, সুইটস লাগবে?”। মিষ্টি এখন সুইটস। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে রিসিট হাতে চলে আসে তাদের। দোকানে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু তা বসে এক পিছ মিষ্টি খাওয়ার জন্য না। অনেক অর্ডার করলে বসে অপেক্ষা করার জন্য। দোকানের নাম আর যাদব ঘোষ, বিক্রমপুর, মুসলিম না, সব ইংরেজ নাম। প্রিমিয়াম, প্রিমিয়ার, প্রমিনেন্ট। ইংরেজি মানেই ইশট্যান্ডার্ড। কোথায় আমার সেই রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো বাকরখানি আর মিষ্টি আলা? কোথায় আমার সেই তেলের ক্যান? সব তো ফিল্টারের জার! সব কর্পোরেট। সবখানে ফর্মালিটিজ।

কয়েকদিন আগে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে বসেই একটু স্টেইনলেস স্টিলের ছোট্ট থালায় দই খাবো। এক পাতিল নিতে হবে। ভালো কথা। নিলাম। নিমকি দিয়ে কালোজাম আমার খুব পছন্দের। বাসায় কালোজাম ছিল। ভাবলাম ‘হাফ’ কেজি নিমকি নিয়ে যাই। এরপরই বাধলো গলদ। দোকানে ঠোঙ্গা নাই। এদিকে মিষ্টির প্যাকেটে নিমকি দিতেও তাদের খুব আপত্তি। ৫০ টাকার নিমকির জন্য একটা প্যাকেট চলে যাবে??? জান যাবে তো প্যাকেট যাবে না। প্যাকেটের দাম নাকি ৮ টাকা। সব কথা আমার সামনেই হলো। কোনো লাজ-লজ্জার বালাই-ই নেই। অতঃপর বুদ্ধিমান কর্মচারী একখানা তরিকা বের করতে সক্ষম হলেন। দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসে থাকা ফলের দোকানদারের থেকে একটা ঠোঙ্গা চেয়ে আনলেন। আমাকে সেই ঠোঙ্গায় নিমকি দেয়া হলো। মনে আছে, বাল্যকালে মিষ্টির দোকানে রস চুয়ায় যাতে না পড়ে সেজন্য ডবল প্যাকেটে মিষ্টি দিতেও আপত্তি করতো না দোকানীরা। যা হোক, এখন আধুনিক যুগ বলে কথা। এখন তরমুজ, পেঁপে, বাঙি সব গুঁড়ের মতো থুক্কু স্যাকারিনের মতো মিষ্টি।

‘সুইটস’ এর প্যাকেটের দামও বাড়তি, আআআআট টাকা। আগের মতো সাদা প্যাকেটের ওপর রং-বেরঙের ঢাকনা নাই। ঢাকনা আর তলা একসাথে। মিষ্টির চেয়ে প্যাকেট ভারী। মিষ্টি উঠায় রাখার পর প্যাকেটের ওজনও আড়াইশো গ্রামের মতো অনুভূত হয়। একবিংশ শতক বলে কথা। আচ্ছা, চিনির দাম বাড়লে মিষ্টির দাম বাড়ে কিন্তু চিনির দাম কমলে মিষ্টির দাম কমে না কেন?
No comments:
Post a Comment