Thursday, May 15, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ২য় পর্ব

সঙ্গীত চর্চা করতে করতে একেবারে কলাতলী পয়েন্টে চলে আসলাম আমরা। সেখান থেকে রিক্সা নেব না অটো নেব সে সিদ্ধান্থীনতায় কাটলো অনেকটা ক্ষণ। অতঃপর দু’টা রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের খাবারের সন্ধানে। কিছুটা দূরে বিধায় ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায় না গিয়ে হাঁটাপথে খাওয়ার হোটেল খুঁজতে লাগলাম। লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তি স্থানীয় জান্নাত হোটেলের কার্ড ধরিয়ে দিলেন। এতো ক্লান্ত বোধ করছিলাম যে ভালোমন্দ যাচাই না করে ঢুকে পড়লাম সেখানে। ওয়েটার বাবাজি অনেকক্ষণ পর হোটেলের বাইরে থেকে প্রবেশ করলেন। আমরা ছাড়া কোনো কাস্টমার নেই সেখানে। হিসাব-নিকাশ করে ডাল আর ভাতের সাথে অর্ডার করলাম ভর্তা-ভাজি। কক্সবাজার যখন এসেছি রূপচান্দা ফ্রাই যত দামই হোক, একটু চেখে দেখা দরকার সে আশায় অর্ডার করলাম। আকাশচুম্বী দাম। ৩০০ টাকা। ওয়েটার সাহেব বললেন রূপচান্দা আসতে দেরি হবে। কতক্ষণের জবাবে বললেন ১০ মিনিট। আমার চাটগাঁইয়া বন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, “১০ মিনিট মানে কি ১০ মিনিট?” এবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়েটার বললেন ইয়ে মানে ১৫ মিনিট। আমরা ভর্তা ভাজি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। টমেটো ভর্তাটা এখনও মুখে লেগে আছে। অন্যান্য আইটেম ততটা ভালো লাগে নি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর আসলো রূপচাঁদা। তিন জন মিলে সেটাকে নিমিষে সাবাড় করলাম। দাম মিটিয়ে হোটেলের পথে হাঁটা দিলাম।

cox-bazer-24

ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।

coxs-bazar-sunset-dhaka-city

আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।

বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।

(চলবে)

No comments:

Post a Comment