Monday, May 12, 2014

একটি চিরাচরিত 'ঘুরে এলাম অমুক জায়গা' টাইপ লেখা- ১ম পর্ব

পড়াশুনা শেষ। বেকার বন্ধুদের তালিকায় নাম লেখায় ফেললাম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। নো পরীক্ষা, নো ক্লাস, নো অ্যাসাইনমেন্ট। কই যাবো কই যাবো করতে করতে পান্থপথ এলাকার কোনো এক টং দোকানে চা (আসলে শরবত) খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কক্সবাজারেই যাবো। ইচ্ছা ছিল বান্দরবান বা সিলেট যাওয়ার। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার গাড়ি ভাড়া করে এখানে সেখানে যাওয়া সম্ভব না। অত টাকা মা-বাবার কাছ থেকে নেয়া সম্ভব না। বন্ধুর বাড়ি আবার চট্টগ্রাম। কক্সবাজার গেলে হোটেলে ট্যাকা দেয়া লাগবে না। “বন্ধুর মামার বন্ধুর” হোটেল। আর কী লাগে! বুধবার টিকেট কাইটা ফেললাম। বৃহস্পতিবার রাতে বাস।

বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে।  সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।

Coxs-bazar-the-worlds-Longest-Beach-22

Cox's Bazar, Beach

কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!

(চলবে)

2 comments:

  1. আহ, "ছুটিতে দুজন দুইদিক থেকে - আসব পৃথিবী দূরে ফেলে রেখে/ কথা বলব না মোটে - এরকম ছুটি আমার ভাগ্যে কোনোদিন যদি জোটে..."

    ReplyDelete
  2. আই আনামMay 15, 2014 at 1:44 AM

    নাসির ভাই, মাস্টার্স শেষ করে জব্বর একখানা ছুটি পেয়েছি। এ সুযোগ হাতছাড়া করি নি। কক্সবাজার ঘুরে এসেছি। আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাসার জন্য মন কাঁদায় পারি নি। মোটের ওপর আফসোস আরো আছে। দু'জন দু'দিক থেকে আসার মতো কিছু ঘটে নি :(

    ReplyDelete