
১। অত্র: অত্র অর্থ এখানে বা এ স্থানে। রাস্তাঘাটে আমরা অনেক সময় লেখা দেখি, “অত্র এলাকার কাজি অফিসের ঠিকানা ...”। এটি কিন্তু ভুল। অত্র শব্দটি নিজেই এই এলাকা বোঝাচ্ছে। এর পরে আবার এলাকা শব্দটি জুড়ে দিলে তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। সে হিসেবে সঠিক বাক্যটি হলো, “অত্র কাজি অফিসের ঠিকানা ...”।
২। কী এবং কি: আধুনিক বাংলায় 'কি' এবং 'কী' এর মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। সাধারণত যেকোনো স্থানে একটি ব্যবহার করলেই হয়। কিন্তু দু’টোর মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দিয়ে দেয়া যায় সে সকল বাক্যে যে ‘কি’ বসে সেটি হলো ‘কি’। যেমন- আপনি চা খাবেন কি? আর যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেয়া যায় না সে সকল বাক্যে হয় ‘কী’। যেমন- আপনি কী খাবেন? অর্থাৎ, ‘কি’ হলো এক ধরণের অব্যয়। আর ‘কী’ হলো এক ধরণের সর্বনাম। প্রথম উদাহরণের ‘কি’ বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়তা করছে। কোনো বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না। কিন্তু পরের উদাহরণের ‘কী’ একটি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। উত্তরের সময়ে ‘কী’ এর স্থানে বসছে কোনো খাবারের নাম।
ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে আমি একটি ভুল করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান বলার পর ‘স্যার’ শব্দটি বসিয়েছি। এটি বাহুল্য। কিন্তু স্যারের নামের পরে স্যার না বলে থাকতে পারি নি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসিয়েছি।
৩।ওপর এবং উপর: আমরা প্রায়শ ইচ্ছেমতো বাক্যে ‘উপরে’ কিংবা ‘ওপরে’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শব্দগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন ওপর হলো On আর উপর হলো Up. অর্থাৎ, “টেবিলের ওপর গ্লাসটি রাখা আছে”। কিন্তু “আমার মাথার উপর ফ্যানটি ঘুরছে”। ‘উপর’ এবং ‘ওপরে’র যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।
৪। লক্ষ্য এবং লক্ষ: আমরা সবাই জানি, লক্ষ্য হলো খেয়াল করা। আর লক্ষ হলো শূন্য ব্যতীত কোনো অংকের পর ৫ শূন্য থাকলে যা হয় তা অর্থাৎ লাখ। কিন্তু আমরা যদি ‘লক্ষ্য’ শব্দটির পর কোনো ক্রিয়া ব্যবহার করি তাহলে ‘লক্ষ্যে’র পর আর য-ফলা না দিলেও চলে। যেমন- লক্ষ করুন। তবে য-ফলা দিলেও ভুল হবে, তা নয়। যথারীতি শ্রদ্ধেয় আবদুস সোবহান স্যারের কাছ থেকেই শেখা।

৫। বাহুল্য দোষ: বাক্যে অনেক সময় আমাদের বাহুল্য দোষ হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লিখে ফেলি এরকম- “সভায় সব শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন”। ‘সব’ বলার পর ‘শিক্ষকগণ’ বলার প্রয়োজন ছিল না। অথবা ‘শিক্ষকগণ’ বললে আর ‘সব’ বলার প্রয়োজন ছিল না। এখানে দু’ বার বহুবচন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে যা বাহুল্য।
৬। সত্য এবং সত্যি: সত্য হলো বিশেষ্য আর সত্যি হলো বিশেষণ। আমরা একটিকে অপরটির সমার্থক হিসেবে বাক্যে ব্যবহার করে ফেলি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত ভুল হয় না। উদাহরণ দেই। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। এটা কী?” উত্তর হবে, “এটা চিরন্তন সত্য”। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে- “এটা কেমন কথা?” উত্তর হবে- “সত্যি কথা”। দেখা যাচ্ছে, বিশেষণের পর বসছে ‘সত্য’। আর বিশেষ্যের আগে বসছে ‘সত্যি’। ঠিক যেভাবে বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে এখানেও সেভাবেই বসছে।
(চলবে)
সুন্দর পোস্টির জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এরকম আরও পোস্ট চাই।
ReplyDelete