Wednesday, May 21, 2014

একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৩য় পর্ব

কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনটা ছিল খুব কার্যকর। আগের পর্ব শেষ করেছিলাম সকালের নাস্তায়। সেখান থেকেই আজকের গল্প শুরু করছি। আমাদের ধারণা ছিল নাস্তা সেরে বাসায় গিয়ে দেখবো আমাদের ঘুমন্ত বন্ধু জেগে গোসল করে রেডি হয়ে থাকবে। কিন্তু না! সে তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে পাঠালাম। নিজেরাও আঁটতে থাকলাম পরবর্তী পরিকল্পনা। ঠিক হলো দুপুরে পউষী রেঁস্তোরায় খাবো। এটা নাকি কক্সবাজারের সেরা বাংলা খাবার রেঁস্তোরা। তিন বন্ধু ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে রিক্সা ঠিক করলাম। এক রিক্সায় তিনজন এবং সে তিনজনের ভেতরে আমিও আছি। যেখানে আমি একাই দু’ জনের সমান সেখানে রিক্সাওয়ালা কতটা সাহসী হলে আমাদের তিনজনকে নিতে রাজি হয়? ২০ টাকার বিনিময়ে সে শুধু আমাকেই না, আমার দু’ বন্ধুকেও বহন করতে রাজি হলো। রিক্সা চলছে তো চলছেই, আর পৌঁছাই না আমরা। আমাদের ধারণা ছিল না যে পউষী শহরের ভেতরে। ভেবেছিলাম যথারীতি সব রেঁস্তোরাই সৈকতের সাথে সমান্তরালে। পৌঁছাচ্ছি না দেখে এক সময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রিক্সাওয়ালা আমাদের অন্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না তো?? বেশ একটা সাসপেন্স। আমার চাঁটগাইয়া ফাজিল বন্ধু এরপর চাপাবাজি শুরু করলো। রিক্সায়ালাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো “আমরা যে কক্সবাজারে আসছি ওসি সাহেবকে জানানো হইসে তো”? আমি বললাম “হ্যাঁ সে-ই তো সব ব্যবস্থা করলো”। এরপর তার প্রশ্ন “এসপি সাহেব”। আমি দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম “স্যার সব জানেন”। এবার তিনগুণ ভাব নিয়ে আমার বন্ধুর প্রশ্ন “ম্যাগজির আর রিভলবার কি একসাথেই আছে?” আমার ততক্ষণে ফিচলা হাসি বের হয়ে গিয়েছে। যা হোক, ওসি সাহেবের ভয়েই কিনা জানি না আমরা খুব দ্রুত পউষীর সামনে এসে পৌঁছালাম। ঠিক তখনই আবিষ্কার হলো আমাদের আরেক বন্ধুর এক পায়ের স্যান্ডেল গায়েব। তিনজন ওঠায় এক পায়ের স্যান্ডেল খুলে সে পা উপরে রেখেছিল। পথিমধ্যে স্যান্ডেলখানা পড়ে গিয়েছে। এবার সে রিক্সা ঘুড়িয়ে স্যান্ডেল উদ্ধারে রওনা হলো। ওসি সাহেবের বিশেষ অতিথিরা অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলেও স্যান্ডেল উদ্ধার করতে সক্ষম। কেননা আমার বন্ধু আধা ঘন্টা পর মহানন্দে দাঁত বের করে স্যান্ডেল নিয়ে হাজির হলো। তদন্ত করে আবিষ্কার করা হলো যাত্রাপথের এক স্পিড ব্রেকারের ঝাঁকুনিই স্যান্ডেল ভাইয়াকে গুম করে দিয়েছিলেন।

old-front-of-the-restaurant

simple-layout-but-busy

পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে

পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।

31100961

হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড

১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম

No comments:

Post a Comment