Showing posts with label "SUST Science Arena-iFeri" Article Writing Contest. Show all posts
Showing posts with label "SUST Science Arena-iFeri" Article Writing Contest. Show all posts

Tuesday, December 31, 2013

SSA-iFeri Science based Article and Sci-Fi Writing Competition 2013

 

 

প্রতিযোগিতায় স্বাগত। আমাদের প্রাথমিক বাছাই পর্ব শেষ করে এখন আমরা ভোটিং পর্বে আছি, অন্যদিকে চলছে বিচারকদের বিচারকাজ। অনলাইন ভোটিং পর্বে দুই বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছে দশটি করে বিশটি লেখা। এ বিশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোট এবং বিচারকদের নাম্বারের সমন্বয়ে দেয়া হবে গ্র্যান্ড পুরস্কারঃ ট্যাব। ভোট দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইফেরি ব্লগে একাউন্ট খোলা লাগবে। আপনি ম্যানুয়ালি ফর্ম ফিল আপ করার মাধ্যমে যেমন একাজ করতে পারেন, তেমনি ব্লগের ফেবসবুক প্লাগ-ইন ব্যবহার করেও কাজটি করা সম্ভব।

 

ভোটিং এর জন্য নির্বাচিত বিশটি লেখা এবং ব্লগ লিংক নিম্নে দেয়া হলঃ

 

 

নির্বাচিত প্রবন্ধ-সমূহের তালিকাঃ

 

১. এস্ট্রো-ভাইরোলজি

২. কার্বন ন্যানোটিউব

৩. পিঁপড়ার গল্প

৪. প্রাণীদের সামাজিক আচরণ ও বুদ্ধিমত্তা

৫. ভূ-তাপসম্ভাবনাময় নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানি

৬. ফুগু–পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ

৭. ব্ল্যাক হোল

৮. ঈশ্বর কণা (দি গড পার্টিকল) কি পারবে সব অজানা প্রশ্নের উত্তর বের করতে?

৯. কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ: একটি সম্ভাবনাময় সমাধান

১০. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোকণা

 

 

নির্বাচিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর তালিকাঃ

 

১. রোবটের প্রতারণা!

২. দিগন্তে

৩. নিঃসঙ্গ নিহান

৪. আত্মমৃত্যু

৫. ভিজিট টু দ্যা ইনফিনিটি

৬. নীল মানব সবুজ মানবী

৭. ভালো থেকো নাবিলা

৮. পৃথিবীর বুকে প্রত্যাবর্তন

৯. ফোর্স কন্ট্রোলার

১০. রিমোভেবল ডি.এন.এ

 

 

সব পাঠককে ভোটিং এ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনার একটি ভোট আপনার প্রিয় লেখার লেখককে জিতিয়ে দিতে একটি ট্যাব... জলদি করুন।

ভোটিং এর শেষ তারিখঃ ১০ই জানুয়ারি, ২০১৪।

উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণের তারিখ ও স্থান পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। ধন্যবাদ।

 

যেকোন প্রয়োজনেঃ ইশতিয়াক (০১৭১০-৩১২৯১৫)।

Wednesday, December 11, 2013

টেসলাঃ বিস্মৃত এক প্রতিভা

আসিফ হালিম দীপন


আইপিই ২/২




২০০৭ সালে MIT-র গবেষকদের একটা দল বিদ্যুৎ উৎস থেকে সাত মিটার দূরে তারহীনভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চারণ করতে সক্ষম হয়। সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায় এ নিয়ে। কতো সম্ভাবনার কথা আসতে থাকে চারদিক থেকে, কতো অভিবাদন। অত্যাধুনিক এবং সূক্ষ্ম সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আর সুপারকম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে কতো বিশাল বিশাল হিসাবনিকাশ আর কষ্টের ফল ওই সফল পরীক্ষণ। অথচ, নিকোলা টেসলা নামের এক ‘পাগলা বিজ্ঞানী’ সেই আদ্দিকালে, ১৮৯৯ তে, ২৬ মাইল দূরের শক্তির উৎস থেকে ধূ ধূ মরুভূমির মাঝখানে রাখা ২০০ লাইট বাল্ব জ্বালিয়ে দেখিয়েছিলেন! তাও ভাঙাচোরা, পুরনো জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে!


আধুনিক বিজ্ঞানের বাঘা বাঘা সব বিজ্ঞানী, গবেষকদের নামের ভিড়ে ফ্লুরোসেন্ট লাইটিং, টেসলা কয়েল, ইনডাকশন মোটর, অল্টারনেটিং কারেন্ট ইলেক্ট্রিক্যাল সাপ্লাই সিস্টেমের (একটি মোটর, একটি ট্রান্সফরমার আর থ্রি-ফেইয ইলেক্ট্রিসিটির সাহায্যে) আবিষ্কর্তা টেসলার নামটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। যদিও বিজ্ঞানের ইতিহাসের দিকে তাকালে এরকম চরিত্র দ্বিতীয়টি চোখে পড়বে কিনা সন্দেহ।

 image001


নিকোলা টেসলা


ক্রোয়েশিয়ার খুব সাদামাটা একটা পরিবারে জন্ম টেসলার, ১৮৫৬ সালের ১০ই জুলাই। বাবা ছিলেন স্থানীয় গির্জার যাজক। পাঁচ ভাইবোনের মাঝে তিনি ছিলেন চতুর্থ। টেসলা অস্ট্রিয়ান পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন এবং শুরুতে বুদাপেস্টে একটা টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে কিছুদিন কাজ করেন। মূলত, ওই সময়টাতেই টেলিফোনির ওপর আগ্রহ আর অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। তারপর ১৮৮৪ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে থমাস আলভা এডিসনের ‘এডিসন মেশিন ওয়ার্কস’ এ কাজ করার সুযোগ পান। বছরখানেক বাদে জর্জ ওয়েস্টিংহাউস নামক এক ব্যবসায়ির বিনিয়োগে নিজেই কোম্পানি খুলে বসেন। পরবর্তীতে, অল্টারনেটিং কারেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করার সময়ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁর নিজের নামে প্যাটেন্টের লাইসেন্স নিয়ে টেসলাকে কাজ করার সুযোগ দেন। জে.পি. মর্গান নামক আরেক ব্যবসায়ি টেসলার ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার প্রজেক্টের সময় বেশ বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন, কিন্তু মার্কনির রেডিও ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি আবিষ্কারের পরে তিনি টেসলার সাথে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

পুরো কর্মজীবনে টেসলার রয়েছে ৭০০ টির বেশি সংখ্যাক প্যাটেন্ট। পদার্থবিদ্যা, রোবটিক্স, ষ্টীম টার্বাইন ইঞ্জিনিয়ারিং আর চৌম্বকবিদ্যা নিয়ে তাঁর অসংখ্য যুগান্তকারী কাজ রয়েছে। পরীক্ষণমূলক কাজগুলোর মধ্যে ছিলো - নিউইয়র্ক এবং কলোরাডো স্প্রিংসে উচ্চ-ভোল্টেজ এবং উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন পরীক্ষণ (যার মধ্যে রেডিও আবিষ্কারের তত্ত্বীয় কাজও ছিলো); রঞ্জন-রশ্মি নিয়ে পরীক্ষণ (একবার এক ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের এক হাত গলিয়ে ফেলেছিলেন অতিরিক্ত রঞ্জনরশ্মি প্রয়োগের ফলস্বরূপ!); নায়াগ্রা ফলসে বিশ্বের প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন; স্রেফ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মানবদেহের জীবাণু ধ্বংসকরণের চিন্তা; ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার প্রজেক্ট (বিদ্যুতশক্তির আন্তঃমহাদেশীয় তারহীন সঞ্চারণ); সবচেয়ে আলোচিত আর বিতর্কিত ‘টেলিফোর্স বীম’, মানবসৃষ্ট কৃত্রিম বজ্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম বজ্রটা ছিলো তাঁর সৃষ্টি, প্রায় ১৩০ ফুট।

image002


লঙ আইল্যান্ডে স্থাপিত ১৮৭ ফুট উঁচু ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার


একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে এবং প্রতিনিয়ত আশ্চর্য সব আবিষ্কারের ফল হিসেবে টেসলার খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্যাটেন্টগুলো থেকে একদিকে যেমন তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, অন্যদিকে বিভিন্ন আজব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেছনে খরচও করেছেন দু’হাতে। আমেরিকার জীবনের বেশ বড় একটা অংশ তিনি কাটিয়েছেন নিউইয়র্কের হাতে গোণা কয়েকটা হোটেলে। প্যাটেন্ট থেকে পাওয়া অর্থ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় তিনি হয়ে পড়েন দেউলিয়া। এতকিছুর পরেও টেসলা তাঁর জন্মদিনের পার্টিগুলোতে শহরের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাতেন এবং সেখানেই প্রতি বছর নিত্যনতুন আবিষ্কার আর চলমান কাজের (মাঝেসাঝে উদ্ভটও বটে) কথা ঘোষণা করতেন। উদ্ভট-আজব এসব কাজের সুবাদে সভ্যসমাজে “পাগলা বিজ্ঞানী” (“mad scientist”) নামে তিনি খ্যাত হয়ে গেলেন।

মজার এক চরিত্র ছিলেন এই টেসলা। জীবনটা তাঁর কেটেছে কখনও উদাসীনতায়, আবার কখনও চরম স্নায়ুযুদ্ধে।  গুগলিয়েমো মার্কনির রেডিও সিস্টেম আবিষ্কারের পর ওটিস পণ্ড নামের একজন সহকর্মী ইঞ্জিনিয়ার একবার টেসলাকে ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, ‘মার্কনি দেখি তোমার ওপর দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে গেলো হে!’ জবাবে টেসলা বলেছিলেন, ‘লোকটার উদ্দেশ্য তো খারাপ না। যা করছে করতে দাও। আমার সতেরোটা প্যাটেন্ট অন্তত ওর কাজে তো লাগছে!’

একসময়কার সহকর্মী থমাস এডিসনের সাথে জীবনের শেষ অংশটা কাটিয়েছেন জাত-শত্রুর মতো। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। এডিসন যেমন একদিকে প্রথম লাইট বাল্বের আবিষ্কর্তা, অপরদিকে টেসলাও কিন্তু কম যান না, তাঁর এসি পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেমেই ওই লাইট বাল্ব জ্বলে-নেভে। দু’জনের মধ্যে এই পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম নিয়ে যুদ্ধ চলতেই থাকলো। অতঃপর, অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা ঘটে গেলো; নোবেল কমিটি এদের দুজনকেই নোবেল পাওয়ার অযোগ্য ধরে নিলো।

বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যান্য চরম প্রতিভাবানদের মতো টেসলারও কিছু অনন্য খাপছাড়া চোখে পড়ার মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো, যেমন- নিয়মিত নার্ভাস ব্রেকডাউন, মধ্যরাতের স্বপ্নে উল্টোপাল্টা জিনিস দেখে সকালে বৈজ্ঞানিক থিওরি দেয়া, পাখিদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা এবং প্রায়ই মঙ্গল থেকে তড়িচ্চুম্বক তরঙ্গ ধরার কথা ঘোষণা। ব্যাক্তিগত জীবনে বেশ অন্তর্মুখী ছিলেন; পছন্দ করতেন গোলক বা গোলকাকৃতির যেকোনো বস্তু (যদিও শেষ বয়সে এসে গোলকাকৃতির প্রতি ভীতি সৃষ্টি হয় তাঁর)। মানুষের চুল, গয়নাগাটি, মানুষের সাথে হাত মেলানো আর তিন দিয়ে অবিভাজ্য কোনো কিছুই সহ্য করতে পারতেন না। দাবা, বিলিয়ার্ড আর তাস খেলতে ভালোবাসতেন। অদ্ভুত একটা দাবী করতেন, জীবনে নাকি কখনই দু’ঘণ্টার বেশি ঘুমাননি! টেসলা কথা বলতে পারতেন আটটি আলাদা ভাষায়, আইডেটিক বা ফটোগ্রাফিক মেমোরি বলা হতো তাঁর স্মৃতিশক্তিকে। মার্ক টোওয়াইনের খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন টেসলা। বিজ্ঞান সাধনার নামে শেষমেশ আইবুড়ো হিসেবেই কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা জীবন।

১৯২০ এর দিকে তিনি দুম করে একদিন একটা মারণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়ে ফেললেন। জিনিসটা একটা টাওয়ার, যেটা থেকে একটা নির্দিষ্ট দিকে প্রচণ্ড রকম উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ পার্থক্য প্রয়োগের মাধ্যমে আয়নিত পদার্থের একটা বিশাল আকারের রশ্মি ছুঁড়ে দেয়া যায়, যেটা কিনা ২০০ মাইল দূর থেকে একটা যুদ্ধবিমানকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে সক্ষম; জলজ্যান্ত একটা রাশিয়ান ট্যাঙ্ককে গলিয়ে ফেলতে আর চোখের পলকে শত্রুপক্ষের সৈন্যদলকে হাওয়ায় বাষ্পীভূত করে দিতে এর কোন জুড়ি নেই। ২০০ মাইলের পরেও এর কার্যক্ষমতা যে নষ্ট হয়ে যাবে তা কিন্তু না, ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্যেই কেবল এটা ২০০ মাইলের পরে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেনা।  পৃথিবীর সুপারপাওয়ারগুলো স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো, কোথায় কোথায় তারা এটা ব্যবহার করবে; সাধারণ মানুষ হয়ে পড়লো আতঙ্কিত। তবে খুশির ব্যাপার এই যে, এই জিনিস বানানোর আগেই টেসলা ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, আর এই প্রজেক্টের বেশিরভাগটাই ছিলো টেসলার উর্বর মস্তিষ্কের ভেতর লিপিবদ্ধ; একেবারে নগণ্য একটা অংশ কাগজপত্রে লেখাজোকা হিসেবে ছিলো। ‘পৃথিবীর মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে’ টেসলার মৃত্যুর পর FBI তাঁর সমস্ত ল্যাবনোটস, বিভিন্ন প্রজেক্টের কাগজপত্র, প্যাটেন্টের দলিল, এমনকি তাঁর ব্যাক্তিগত ডায়রিটাও সরকারি বলে জব্দ করে।

টেসলার মৃত্যুর পরপরই তাঁর কাজগুলো হুমকির মুখে পড়ে যেতে লাগলো, ঠিক মেন্ডেলের মতো। কোথাও তাঁর কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না, লেখালেখি হয় না; অসম্ভব রকম আধুনিক এবং দূরদর্শী হওয়ার পরও ইলেক্ট্রিসিটি ট্রান্সমিশন সিস্টেমে তাঁর অল্টারনেটিং কারেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছিলো না। অবশেষে ৯০ এর দশকের শুরু থেকে তাঁর কাজগুলোর ওপর বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের চোখ পড়ে; ফলস্বরূপ রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর আবিষ্কারগুলোর কথা। ১৯৬০ সালে টেসলাকে সম্মান দেখিয়ে General Conference on Weights and Measures এ এস. আই. পদ্ধতিতে চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তির পরিমাপের একক হিসেবে ‘টেসলা’ শব্দটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সত্যি বলতে কি, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা এবং কাজের মাধ্যমে পুরো দুনিয়াটাকে কাঁপিয়েছেন, আক্ষরিক এবং রুপক অর্থে, এমন মানুষ একজনই আছেন ছিলেন, নিকোলা টেসলা। এক হাতে দুনিয়াটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিলো এমন মানুষ একজনই ছিলেন, তিনি নিকোলা টেসলা। শুধু এটাই তাঁকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট।

পৃথিবীতে মহাপ্রলয় - আজ নাকি আগামীতে ?

 মোঃ তারেক বিন আবদুল্লাহ 


পিএমই ১/২


 

 

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা নাকচ করে দিয়েছেন অতি সম্প্রতি কোন মহাপ্রলয় হওয়ার আশঙ্কা তথা খুব দ্রুত পৃথিবীর পরিবেশের আকস্মিক অভাবনীয় পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কাকে । সম্প্রতি “Trends in Ecology and Evolution” নামক সাময়িকীতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন যে-“ পরিবেশগত ‘Tipping point’ অসম্ভাব্য এবং পৃথিবীর বিশাল অঞ্চলজুড়ে পরিবেশগত বড় পরিবর্তন হবে ক্রমান্বয়ে ও ধারাবাহিকভাবে”- যা “Planetary tipping point বা বৈশ্বিক প্রলয়” ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।

সম্প্রতি “Planetary tipping point” বলে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যা বিজ্ঞান এবং নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। “Planetary tipping point ” সম্পর্কে বলা হয়েছিল- এটি ঘটবে অধিক জনসংখ্যার চাপে জীব-বৈচিত্র্যের বা জমির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির ফলে যা সারাবিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারে।

সাময়িকীর প্রধান লেখক ও এডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্যারি ব্রুক বলেছেন “এটা খুবই ভালো সংবাদ যে, আমরা এই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়কে সম্ভবত এড়াতে পারব”

“বৈশ্বিক প্রলয়” এর ধারণা এবং এর দিকে মননিবেশ করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশগত রূপান্তর হতে দৃষ্টি সরে যেতে পারে, অন্যদিকে যা অহেতুক অদৃষ্টবাদের  (ভাগ্যের হাতে হাল ছেড়ে দেওয়ার মনোভাব্) সূচনা ঘটায়। “একটি অসম্ভাব্য ঘটনার দিকে অধিক মনোনিবেশ করা পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য সহায়ক নয়। আমাদের উচিত বিশ্বের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব কমাতে চেষ্টা করা।”

image001

“একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রাণীরা বিলুপ্ত হলে, কার্বন নিঃসরণ দ্রুত বেড়ে প্রাণীদের সহ্যক্ষমতাকে অতিক্রম করলে “Tipping Point” সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানীয় এবং আঞ্চলিক স্তরের বাস্তুতন্ত্রে (যেমন হ্রদ ও তৃণভূমি) এরকম ঘটেছে।

 দ্রুত প্রলয় ঘটার সম্ভাবনা নেই কেন?

তত্ত্ব বলে যে, পৃথিবীজুড়ে “বৈশ্বিক প্রলয়” ঘটতে পারে যদি পৃথিবীর সর্বত্র জনসংখ্যার চাপ সমান হয়, যাতে এর প্রভাব সারা বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াতে পারে। সুতরাং এর জন্য পৃথিবীর সব মহাদেশগুলোর বাস্তুসংস্থানকে একত্রিত হতে হবে। কিন্তু, বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। “প্রথমত, মহাদেশগুলোর বাস্তুসংস্থানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ শিথিল। দ্বিতীয়ত, জনসংখ্যার চাপের ফলে ভুমি বা আবহাওয়ার উপর সৃষ্ট প্রভাব একেক অঞ্চলে একেক ধরনের।

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন লিপিবদ্ধ করতে চার ধরনের পরীক্ষা করেন- আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভুমির পরিবর্তন, জিব-বৈচিত্রের ক্ষয়, বাসস্থানের ক্ষয়। পরীক্ষার ফলাফলে তারা Tipping Point ঘটার অসম্ভাব্যতা দেখেতে পান।

image002

সহস্রাব্দ মানুষের শাসনের পরও আমাদের বাস্তুতন্ত্রের জীবজগতের চার-পঞ্চমাংশ বাস্তুসংস্থান এখনও টিকে আছে।  স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচেষ্টাও দিন দিন বাড়ছে। যদিও,  বাস্তুসংস্থান ও বৈশ্বিক পরিবর্তন ঘটছে- তা শীঘ্রই একটি প্রলয় ঘটানোর মত দ্রুত ঘটছেনা।

কালোবাজরী না কি গণিতের সৌন্দর্য?

এস এম মনির


পরিসংখ্যান ৩/২


 

পত্র-পত্রিকার কল্যাণই হোক কিংবা ঈদে বাড়ি যাবার সময় বিড়ম্বনাতেই হোক আমরা টিকেট কালোবাজারীর সাথে একটু আধটু পরিচিত। তাপরেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। ঈদের সময় ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন ট্রেনে। অগ্রিম টিকেট পাননি, তাতে কি? আপনি টিকই যেতে পারবেন যদি আপনি আড়াইশ টাকা দামের টিকেট দ্বিগুন তিনগুন কিংবা আরো বেশী দামে ক্রয় করেন। প্রশ্ন হচ্ছে টিকেট কিভাবে পেলেন? পেলেন কিছু অসাধু লোকের কারসাহিত, যারা কিনা আগে থেকে ই বেশী টিকেট কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে, আপনার প্রয়োজনের সময় বেশী দামে বিক্রি করেছে।  কিন্তু আজ আমরা এর চেয়েও বেশী ক্ষতিকর কালোবাজরীর সম্পর্কে জানাব্ োএবং ছোট খাট গণিত করে সেই “অসাধু ব্যবসার সৌন্দর্য (?)” আবিস্কার করব। তাহলে চলুন শুরু করি।
ধরুন আপনি ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম যাবেন। বগি নম্বর চ। বগিতে সিট ১০০ টি। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই ১০৫ টি টিকেট বিক্রি করেছে। আর আপনিই সেই হতভাগা ০৫ জনের দরে যাদের টিকেট সিট নম্বর দেওয়া নেই। এদিকে বগিতে দাড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। কি করবেন তাহলে? আপনি চট্রগ্রাম যেতে পারবেন না নয়তো প্রার্থনা করতে হবে যে কোন সিট নম্বর যুক্ত টিকেট ধারী জ্যামের কারণে স্টেশনে পৌঁছতে না পারে।
একই উদাহরণ একাটা প্লেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধরুন বাংলাদেশ ছাগল মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী মন্ত্র ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন। ৩০০ সিটের প্লেন। এদিকেও কর্তৃপক্ষ ৩১৫ টি টিকেটে বিক্রি করেছে ইচ্ছে করে। ছাগল মন্ত্রীর পিত্র মন্ত্রীর জন্য টিকেট কেটেছে। কিন্তু পিত্র খেয়াল করেনি যে টিকেট সিট নম্বর দেয়া নেই। মন্ত্রী যথাসময়ে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখে বিমান কানায় কানায় পূর্ণ, তার বসার জায়গা নেই। হতভাগা মন্ত্রী “ছাগল উন্নয়ন মহাসম্মেলন চট্রগ্রামে” এ উপস্থিত হতে পারলেন না। যথাসময়ে সিটের অভাবে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের অন্যান্য মন্ত্রী মিনিস্টার যা করতেন তিনিও তাই করবেন। অতিরিক্ত টিকেট বিক্রির দায়ে মালিকের জেল জরিমান এমনকি ব্যবসার লাইসেন্স ই বাতিল করে দিবেন।
যদি ব্যাপরটা একজন সাংবাদিরে সাথে ঘটতো? ব্যাচারা সাংবাদিক রেগে মেগ তার পত্রিকায় সেই কোম্পানির নামে বিশাল কালোবাজারী অভিযোগ এনে নিউজ করেদিত আর এদিকে মালিকের ব্যবসার বারোটা বেজে যেত। কিন্তু আপনি যদি সেই এয়ার লাইন্স কোম্পানীর মালিক হয়ে থাকেন, আপনি কি চাইলে কোন মন্ত্রী বা বেরসিক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে আপনার ব্যবসার বারোটা বাজাতে?? অবশ্যই চাইবেন না। কিন্তু তাহলে কেন আপনি ৩০০ সিটের প্লেনের জন্য ৩১৫ টা টিকেট বিক্রি করলেন? সেই উত্তরটা একটু পরেই দিচ্ছি।

আগের উদাহরণটার কথাই চিন্তা করুন, কিন্তু এবার দেশটা বাংলাদেশ না মহাপরাক্রমাশালী বিশ্বের দাদা ‘যুক্তরাষ্ট্র’।

ডেল্টা এয়ারলাইন্স নিউইয়র্ক থেকে ওয়াসিংর্টনে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। মালিক হিসাব করে দেখলো, তার ৩০০ সিটের প্লেনে ড়গে ১৫ জন যাত্রী অনুপস্থিত থাকে। ডাক পড়ালো ম্যানাজারের।

মালিক : ম্যানেজার কি করা যায়?
ম্যানেজার : স্যারি, একজন পরিসংখ্যান বিদকে ডাকুন দেখুন কিছূ সমাধান দিতে পারেন কি না?
মালিক : ডাকো তাহলে একজনকে।
ম্যানেজার : জ্বি, স্যার।
তো এবার পরিসংখ্যানবিদ এসে দেখলো ঘটনা সত্য। গড়ে ১৫ জন অনপস্থিত। সে আরো হিসাব করে দেখলো পরিমিতি ব্যবধান ২ অনেকেই হয়তো পরিমিত ব্যবধান ব্যাপারটার সাথে পরিচিত না। তবে ব্যাপারটা কিভাবে আসলো সেটা ব্যাখ্যা না করে বরং পরিমিতি ব্যবধান দিয়ে কি কাজ করা হয় সেটার ব্যাখ্যাই সকলের জন্য সুবিধা জনক। একটু খেয়াল করুন।
গড় ক্ট এক পরিমিত ব্যবধান = ( ১৫-২;১৫+২)
(১৩;১৭) ৬৮% ক্ষেত্রে।
২. গড় ক্ট দুই পরিমিতি ব্যবধান = (১৫-২দ্ধ২;১৫+২দ্ধ২)
= (১;১৯) ৯৫% ক্ষেত্রে।
৩. গড় ক্ট তিন পরিমিত ব্যবধান = (১৫- ৩দ্ধ২; ১৫+৩দ্ধ২)
(০৯-২১) ৯৯% ক্ষেত্রে।
১ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১৩-১৭ অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৬৮ টিতে।
২ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১১-১৯ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৫ টিতে।
৩ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ০৯-২১ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৯ টিতে।

এবার সেই পরিসংখ্যানবিদ মালিককে সমাধান দিলো এভাবে, আপনি যদি প্রতি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ০৯ টি টিকেট অতিরিক্ত বিক্রি করেন তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১ টি ফ্লাইটে বসা নিয়ে সমস্য হতে পারে। আর যদি সর্বোচ্চ ১১ টি অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে ৫ টিতে সমস্যা হতে পারে। আর সর্বোচ্চ ১৩ টি বিক্রি করলে ১০০ টিতে (১০০-৬৮) =৩২ টিতে সমস্যা হবে। তাই আপনার ব্যবসার জন্য ১২ নম্বর সমাধানই সবচেয়ে ভাল হবে। এখন যদি মালিক দু নম্বর সমাধানকেই বেছে নেয় তাহলে সে প্রতি ফ্লাইটের ১১ টিতে টিকেট বেশী বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ১০০ টির ফ্লাইটে যে ০৫ টিতে সমস্যার ফলে কিছু যাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না তখন কি হবে।
‘যুক্তরাষ্ট্র পরিবহন কর্পোরেশন’ রীতিমত বিধি-বিধান করে সমধান দিয়েছে। হয় সেই সব যাত্রীদের দ্বিগুন ভাড়া ফেরত দিতে হবে, নয়তো পরবর্তি ফ্লাইটে বিনামুল্যে পৌঁছে দিতে হবে নয়তো উচ্চতর শ্রেণীতে ভ্রমনের সুযোগ করেদিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ব্যাপারটা যদি কারো বিশ্বাস নাহয়, সে যেন ইন্টারনেটে ‘ঙাবৎংবষষরহম’ লিখে ফলাফল গুলো পড়ে দেখে।

আমেরিকানরা যে শুধু ব্যাপারটা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই করে থাকে তা কিন্তু নয়। তারা সকল ধরনের পরিবহন, হোটেল বুকিং ইত্যাদিতে সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে আসছে। শুধু আমেরিকান কেন উন্নত সব দেশেই ব্যাপারটা ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে নিয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যেটা কালোবাজারী সেটা উন্নত দেশ গুলোতে রীতিমত আইনসিদ্ধ ব্যাপার। আর সেই অসাধ্য সাধন করেছে গণিত। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায় পরিসংখ্যান গণিতের একটি শাখা।
তাই আমাদের বিজ্ঞান জানতে বা বুঝতে হলে অবশ্যই গণিত জানতে হবে। কেননা গণিত হলো বিজ্ঞানের ভাষা।  আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আজ এতো উন্নত সেটা কিছু গণিত না থাকলে সম্ভব হতো না। তাই আমাদের গণিত মুখস্ত না করে গণিতের সৌন্দর্যটা আবিস্কার করতে হবে।

তথ্যসূত্র:
১.  wikipedia (overselling)
২. Statistics By James and Frank.
৩. একটু খানি বিজ্ঞান- মুহম্মদ জাফর ইকবাল

ফুগু – পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ

১৭৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। এদিন লেখা ক্যাপ্টেন কুকের লগবুক থেকে জানা যায়, আগের দিন রাতে জাহাজের নাবিকরা সমুদ্র থেকে কিছু মাছ ধরেন। মাছগুলো কাটার পর নাড়িভুঁড়িগুলো খেতে দেন জাহাজে রাখা শূকরগুলোকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর পরই নাবিকেদের শরীর অবশ হয়ে আসে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। সাথে প্রচন্ড পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা আর বমি। নাবিকরা বুঝতে পারেন, তারা ভুল করে বিষাক্ত মাছ খেয়ে ফেলেছেন। সারা রাত ছটফট করে সকালের দিকে তারা মোটামুটি সুস্থ্য অনুভব করেন। শূকরগুলোর অবস্থা দেখার জন্য তারা খোঁয়াড়ে যান, সেখানে সবগুলো শূকর মরে পড়ে আছে। নাবিকরা অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেছেন। যে অংশগুলো তারা ফেলে দিয়েছিলেন সেগুলোতেই সবচেয়ে বেশী বিষ ছিল। যে মাছ নিয়ে এই ঘটনা তার নাম ফুগু (Fugu) - পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ!

ফুগু জাপানি শব্দ, অর্থ ‘নদীর শূকর’। এর আরেক নাম পাফার ফিস (Puffer Fish). পাফার ফিস বা ফুগু হচ্ছে আমাদের দেশীয় পটকা মাছের একই বংশীয় আত্মীয়! ফুগুর ফুগুর শরীরে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ টেট্রোডোটক্সিন (C11H17N3O8). টেট্রোডোটক্সিন সংক্ষেপে TTX নামে পরিচিত। TTX পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষ, পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও এই বিষ এক হাজার গুণ বেশী বিষাক্ত। এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি। রান্না করলে বা আগুনে ঝলসালেও এই বিষের প্রভাব বিন্দু মাত্রও কমে না। শরীরে TTX থাকার কারণে ফুগু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ। শুধু তাই নয়, মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ফুগু দ্বিতীয় বিষাক্ততম প্রাণী। একটি ফুগু মাছে যে পরিমান বিষ আছে তা দিয়ে ত্রিশ জন সুস্থ-সবল মানুষকে সহজেই মেরে ফেলা সম্ভব! ফুগু মাছের বিষ মাত্র এক গ্রাম পরিমাণ সংগ্রহ করে তা দিয়ে পাঁচশ মানুষকে অনায়াসে মেরে ফেলা সম্ভব! মানুষকে মেরে ফেলার ভয়াবহ ক্ষমতার জন্য জাপানের কানসাই (Kansai) এলাকার মানুষজন ফুগুকে ডাকে ‘Teppo’ নামে। অর্থাৎ – ‘পিস্তল।’

TTX মানব দেহের কোষ পর্দার সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ করে দেয় ও স্নায়ুতন্ত্রে ব্লক সৃষ্টি করে। ফলে মস্তিষ্কের সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দেহ প্রথমে অবশ ও পরে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। ডায়াফ্রাম অসাড় হয়ে যাওয়ায় শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আক্রান্ত ব্যাক্তি দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

ফুগুর শরীরে বিষের পরিমাণ মাছের জাত, ভৌগলিক অবস্থান, ঋতু ও খাদ্যের উপর নির্ভর করে। ফুগুর শরীরে সবচেয়ে বেশী বিষ থাকে যকৃতে। তাছাড়া ডিম্বাশয়, হৃদপিন্ড, নাড়ীভূড়ি ও চোখেও প্রচুর বিষ থাকে। কিছু কিছু জাতের চামড়াতেও বিষ থাকে। জাপানের ‘ফুগু রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ - এর গবেষণা মতে, ফুগু খেয়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৫০% যকৃত, ৪৩% গর্ভাশয় আর ৭% চামড়া খেয়ে বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। প্রজনন ঋতুতে ফুগু মাছে বিষের পরিমাণ বেড়ে যায়। জাতের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী বিষাক্ত টোরাফুগু (Torafugu). টোরাফুগু অর্থ Tigerfugu বা বাঘাপটকা!

ফুগুর বিষে আক্রান্ত হলে তিন থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিবে। বিষ বেশী পেটে গেলে বিশ মিনিট থেকে আট ঘন্টার মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যু। মৃত্যু হবে কী হবে না বা খাওয়ার কতক্ষণ পর হবে - সেটা নির্ভর করে কী পরিমাণ বিষ পেটে গেছে তার উপর। বিষে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম উপসর্গ দেখা দেয় জিভ ও ঠোঁটে। প্রথমে জিহ্বা ও ঠোঁট শিরশির করে ও পরে অবশ হয়ে যায়, হাত-পা অবশ হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, প্রকট শ্বাস কষ্ট হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, আক্রান্ত ব্যাক্তি প্যারালিসিসে আক্রান্ত হয়। তার মস্তিষ্ক পুরো সচল থাকে। সে বুঝতে পারে সে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হচ্ছে, আশেপাশে কি হচ্ছে সবই সে বুঝতে পারে; কিন্তু, শরীরের কোন অংশই সে নাড়াতে পারে না বা কথা বলতে পারে না। এ অবস্থাকে বলা হয় কোমা। ফুগু বিষে আক্রান্ত হয়ে সাত দিন পর্যন্ত কোমায় থাকার রেকর্ড আছে। ফুগুর যেহেতু কোন প্রতিষধক নেই তাই পেট ওয়াশ করাই হচ্ছে এর প্রধান চিকিৎসা। আক্রান্ত ব্যক্তিকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষ ক্রিয়ার প্রভাব কাটে।

মজার ব্যাপার হল, জাপানিরা এই ভয়ঙ্কর বিষাক্ত ফুগু মাছের বিষ আলাদা করে খাওয়া শিখেছে। জাপানে সবচেয়ে দামী আর অভিজাত খাবার হচ্ছে ফুগু মাছের নানান পদ! প্রতি বছর জাপানিরা প্রায় ১০,০০০ টন ফুগু মাছ খায়। রেস্টুরেন্টে একজনের জন্য একটি ফুগু পদের দাম পড়বে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ ইয়ান, অর্থাৎ প্রায় ২০ থেকে ৫০ ডলার! জাপানে ফুগু আহরণ ও বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফুগু কাটাকুটি আর রান্না করার জন্য জাপানে লাইসেন্সধারী আলাদা বাবুর্চি রয়েছে। খোলা বাজারে আস্ত ফুগু বিক্রি নিষিদ্ধ। সরকারি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকর্তৃক প্রক্রিয়াজাত করা বিষমুক্ত ফুগুর মাংশ প্যাকেট করে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। ফুগু প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩০টি ধাপ মেনে চলতে হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে শুধুমাত্র ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিরাই ফুগু কাটাকুটি আর রেস্টুরেন্টগুলোতে রান্না করতে পারে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাদেরকে লিখিত ও ব্যবহারিক মিলিয়ে তিনটি কঠিন পরীক্ষা দিয়ে এই সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়।

রেস্টুরেন্ট আর ফুগু প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফুগুর বিষাক্ত অংশগুলো বিশেষ একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে লকারে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তারপর বেশ কিছু বিষাক্ত বর্জ্য জমা হলে সেগুলোকে একত্র করে পাঠানো হয় চুল্লিতে, সেখানে বর্জ্যগুলোকে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যের মত করে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

১৯৫০ সাল ছিলো জাপানের জন্য একটি ভয়াবহ বছর। শুধু এই এক বছরেই ফুগু খেয়ে জাপানে মারা যায় ৪০০জন, অসুস্থ হয় ৩১,০৫৬ জন। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় দুর্ঘটনা অনেক কমে যায়। তবু, ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জাপানে ফুগু বিষে আক্রান্ত হয় ৬৪৬ জন। এদের মধ্যে মারা যায় ১৭৯ জন। জাপানে এখনও প্রতি বছরই কমপক্ষে ২০ টি ফুগু বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়। আক্রান্তদের ৬০% মারা যায়। এসব মৃত্যুর প্রায় সবগুলোই ঘটে জেলেপল্লীতে জেলেরা নিজেরা নিজেরা ফুগু প্রস্তুত করতে গিয়ে ঠিক ভাবে প্রস্তুত করতে না পেরে, আর দুর্ঘটনা ঘটে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সার্টিফিকেটবিহীন বাবুর্চিকে দিয়ে ফুগু প্রস্তুত করতে গিয়ে।

সম্প্রতি, নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, Pseudomonas নামক ব্যাকটেরিয়াযুক্ত স্টারফিস, শেলফিস খাওয়ার কারণে ফুগুর দেহে TTX বিষ তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত খাবার খাইয়ে ৪,৮০০টি টোরাফুগু জাতের বিষমুক্ত ফুগু উৎপাদন করতে পেরেছেন। জাপানে এখন বিভিন্ন ফার্মে বিষমুক্ত ফুগু চাষ করার হিড়িক পড়ে গেছে!

যে ফুগু নিয়ে এত মাতামাতি তার স্বাদ আসলে কেমন? Noel Vietmeyer নামের একজন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে লেখেন, ‘আহামরি কিছু না! আঁশ নেই, আঠালো জেলির মত। স্বাদে হালকা। স্বাদটা অনেকটা মুরগীর বাচ্চার মত, সামুদ্রিক নোনতা স্বাদযুক্ত।’ কিন্তু, এই ফুগুর মাংশ খেয়েই তৃপ্তিতে জাপানিরা প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট পর্যন্ত ভুলে যেতে পারে। ফুগু নিয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটি লিখেছেন জাপানি কবি Yoso Buson (১৭১৬-১৭৮৩). কবিতাটি একটি তিন লাইনের হাইকু কবিতা-

I cannot see her tonight.
I have to give her up.
So, I will eat Fugu.

কবিকে বালিকা পাত্তা দেয় না! দেখা করার শত চেষ্টা করেও কবি এক রাতে বালিকার সাথে দেখা করতে পারলেন না। কবি সিদ্ধান্ত নিলেন, অহংকারী বালিকাকে মন থেকে মুছে ফেলবেন! আর, মুছে ফেলার কষ্ট ভোলার জন্য খাবেন সুস্বাদু ফুগু!

Tuesday, December 10, 2013

চিকিৎসাশাস্ত্রে তাপহারি ও তাপ উৎপাদি বিক্রিয়া



 

ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এর ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা প্রায় শেষের দিকে, স্কোর সমান সমানত্রিশ সেকেন্ড বাকিফারহান- যিনি দলের মিডফিল্ডার এবং ক্যাপ্টেন, এর পায়ের গোড়ালিতে মোচড় লেগেছে, ফ্রী-কিক নেয়ার ক্ষমতা তার নেইদলের ফিজিও দ্রুত তার ব্যাগ থেকে একটি সাদাপ্লাস্টিক ব্যাগ বের করে তাতে একটি ঘুষি মেরে ফারহানের গোড়ালিতে লাগিয়ে দিলেনমুহূর্তের মধ্যেই ব্যাগটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলকোচ তাকে নির্দেশনা দিয়ে খেলায় ফেরত পাঠালেনকোচ ফারহানের দিকে তাকালেন, সে মাথা নাড়ল এবং প্লাস্টিক ব্যাগটি ফেলে দিলতার ব্যথা কমে গেছে এবং সে ফ্রী-কিক নেয়ার জন্যে প্রস্তুতফ্রী-কিক নিল ফারহান, সেন্টার ফরওয়ার্ড ছুটে গেলো বলের দিকেতিনজন ডিফেন্ডার ছুটে গেলো তার পিছে পিছেসে লাফিয়ে উঠে হেড করল এবং বল গোলকিপার এর হাতের নাগালের বাইরে দিয়ে জালে জড়াল, এবং গোল! কয়েক সেকেন্ড পর সময় শেষ হয়ে গেলো, এটিই খেলার ফলাফল নির্ধারণী গোল

ফিজিও যেই প্লাস্টিক ব্যাগটি ব্যাবহার করেছিলেন ফারহানের গোড়ালি ঠিক করতে সেটি ছিল একটিInstant cold packএটি ঠাণ্ডা রাখার প্রয়োজন হয়না এবং মাসের পর মাস ফার্স্ট এইড কিট এর ভেতর রাখা যায়, তা সত্ত্বেও যখন প্রয়োজন হয় তখনই এটিকে ঠাণ্ডা করা যায়[1] Instant cold pack কিভাবে কাজ করে? প্যাকটিতে দুটি ভিন্ন প্রকোষ্ঠ আছে যার একটি আরেকটির ভিতরেবাইরের প্রকোষ্ঠ প্লাস্টিকের তৈরি এবং তুলনামুলকভাবে শক্তএর ভেতরে কিছু সাদা পাউডার এবং দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠটি আছেদ্বিতীয় প্রকোষ্ঠটি নরম প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এবং এটি পানি ধারন করেফিজিও যখন ব্যাগটিতে আঘাত করে ভেতরের ব্যাগটি ভেঙে দেয় তখন পানি ভেতরের প্রকোষ্ঠ থেকে বের হয়ে পাউডারের সাথে মিশেপাউডারটি, যা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এর তৈরি পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং দ্রবণটি ঠাণ্ডা হয়ে যায়বিক্রিয়াটি খুব সহজ, একটি পাউডার কেবল পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছেএই বিক্রিয়াটি তাপ শোষণ করে যে কারনে দ্রবণটি ঠাণ্ডা হয়ে যায়[3] পটাসিয়াম নাইট্রেট, পটাসিয়াম ক্লোরাইড এমনকি খাবারের লবণ ও পানিতে দ্রবীভূত হয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়[4] এছাড়া সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড এবং আরো কিছু লবণ উল্টো কাজ করে এবং দ্রবণটিকে গরম করে ফেলেযেসব বিক্রিয়া তাপ শোষণ করে তাকে তাপহারী এবং যা তাপ উৎপাদন করে তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে

আমাদের দৈনন্দিন জীবণের অধিকাংশ বিক্রিয়াই তাপোৎপাদীযেমন, একটি দেশলাই এর কাঠি জ্বালানকাঠিটি গরম হয়ে যায়, তাইনা? এই তাপ শক্তি কোথা থেকে আসে? দেশলাই জ্বালানোর আগেও কি এই তাপশক্তি দেশলাইয়েভিতরে ছিল?

আশ্চর্যজনকভাবে, উত্তরটি হ্যা-বোধকদেশলাইয়ে সত্যিকারার্থেই তাপশক্তি সঞ্চিত ছিলএকদম ঠিক করে বলতে গেলে দেশলাইয়ের উপাদানগুলোর মধ্যেদেশলাইটি যখন জ্বলছিল তখন এর ভেতরে আসলে অনেক গুলো তীব্র বিক্রিয়া সংঘঠিহচ্ছিলদহন বেশ কয়েকটি ধাপে ঘটেপ্রথমে তাপশোষিত হয়, যে বন্ধন শক্তি দ্বারা যৌগ তৈরী সে বন্ধন ভাঙার জন্যএরপর যখন নতুন বন্ধন তৈরী হয় তখন আবার তাপ উৎপন্ন হয়দেশলাই এর কাঠিটির ক্ষেত্রে শোষিত তাপের পরিমাণ উৎপন্ন তাপের চেয়ে কমযে কারণে সব মিলিয়ে তাপউৎপন্ন হয় এবং দেশলাই এর কাঠি এমনকি হাত পুড়িয়ে ফেলার মত গরম হয়ে উঠেতবে সব তাপোৎপাদী বিক্রিয়া কিন্তু দেশলাইয়ের কাঠি এর বিক্রিয়ার মত এত তীব্র না! যেমনInstant Hot Pack” যে বিক্রিয়া ব্যবহার করে সেটি আরও ধীরগতির এবং আরও কম তাপমাত্রায় সংঘটিত হয়অনেক খেলাধুলার সামগ্রীর দোকানে এইHeat Factory” brand এরhot pack” কিনতে পাওয়া যায়প্লাস্টিক ব্যাগের ভেতরে অনেক গুলো ছোট ছোট ছিদ্র করা কাগজের আরেকটি ব্যাগ নিয়ে এটি তৈরী[4] কাগজের ব্যাগটিতে পানিতে ভেজানো লোহারগুড়া, খাবার লবণ (সোডিয়ামক্লোরাইড), সক্রিয় কার্বন কাঠের গুড়া থাকেআপনি যদি বাইরের প্লাস্টিকের ব্যাগটির ভেতর থেকে কাগজের ব্যাগটি বের করে জোরে ঝাকাতাহলে দেখবেআস্তে আস্তে ব্যাগটি গরম হয়ে উঠছে! এখানে আসলে ঘটছে টা কি?

লোহার কোদাল বৃষ্টির দিনে বাইরে ফেলে রাখলে তাতে মরিচা পরে যেতে আমরা সবাই-দেখেছিকোদালের লোহা (Fe) বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে তৈরী করে ফেরাস অক্সাইড, যাকে আমরা মরিচা বলি

4Fe + 3O22Fe2O3 + Heat

এই বিক্রিয়ায় লোহা এবং অক্সিজেনের মধ্যে আয়নিক বন্ধনের সৃষ্টি হয় আর এর সাথে তাপশক্তিও উৎপাদিত হয়(প্রতি মোল ফেরিক অক্সাইডের জন্য ১৯৭ কিলোক্যালরি)লোহা পানির সংস্পর্শে থাকলে বিক্রিয়াটি বেশ তাড়াতাড়ি ঘটেপানিতে লবণ মিশ্রিত থাকলে লোহায় আরও তাড়াতাড়ি মরিচা পড়ে যায়বৃষ্টিতে রেখে দেওয়া কোদালে মরিচা পড়ার সময় ও তাপ উৎপাদিত হয় কিন্তু অনেক সময় ধরে বিক্রিয়াটি সংঘটিত হওয়ায় আমরা টের পাইনাকিন্তুHeat Factory” তে উপাদানগুলো একদম ঠিক অনুপাতে মিশ্রিত থাকেউপাদানগুলোর মধ্যে সংস্পর্শ বাড়ানোর জন্য খুব মিহি ভাবে সবকিছু গুড়ো করা থাকেএতে জারণ প্রক্রিয়া দ্রুত সংঘটিত হয়Heat Factory” ঝাকালে বাতাসের অক্সিজেন কাগজের ব্যাগের ছিদ্র গুলি দিয়ে প্রবাহিত হয়দ্রুত এই বাহের ফলস্বরুপ আমরা পাই তাপ!

তাহলে আমরা দুই ধরণের তাপীয়first-aid pack”পর্যবেক্ষণ করলামInstant Cold Pack” একটি তাপহারী দ্রবণ বিক্রিয়া (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পানি) ব্যবহার করে কাজ করে আরHeat Factory” ব্যবহার করে তাপোৎপাদী রাসায়নিক বিক্রিয়া (লোহা এবং অক্সিজেন এর বিক্রিয়ায় ফেরিক অক্সাইড)রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবসময় বন্ধন ভাঙে-গড়ে যার বাহ্যিক ফল আমরা পাই তাপের উদগীরন বা শোষণের মধ্য দিয়েতাপ পরিবর্তনের আপাত ভারসাম্যই নির্ধারন করে কোন বিক্রিয়ায় তাপশোষিত হবে আর কোন বিক্রিয়া তাপ উৎপাদন করবে

ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার একসপ্তাহ হয়ে গেছেজেতাটা উদযাপণ করতে ফারহান তার বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পিং গিয়েছেওরা মূলত হ্রদে মাছ ধরে, খেলা নিয়ে কথা-খুনশুটি-কৌতুক করে ছুটি কাটিয়ে দেবার পরিকল্পনা করেছেরাতে ঠান্ডা লাগলে যদি আগুন জালাতেনা পারে তাহলে কি হবে? যদিও তাদের কেউ পেশীতে টান পড়ায় কাঠ কাটতে না পারে তাহলেই বাকি হবে? কিন্ত ফারহান চিন্তিত নাখাবার-দাবার, তাঁবু আর স্লিপিং ব্যাগ এর সাথে সে কিছু hot pack আর cold pack নিয়ে এসেছে

References:

  1. Mortimer, Charles. Chemistry, 6th ed.; Wadsworth Publishing: Belmont, Calif.

  2. Shakhashiri, Bassam Z. Chemical Demonstrations: A Handbook for Teachers of Chemistry; University of Wisconsin Press: Madison, Wis., 1983, Vol. 1.

  3. Wikipedia, http://en.wikipedia.org/wiki/Ice_pack, 10-11-13.

  4. Wikipedia, http://en.wikipedia.org/wiki/Instant_cold_pack, 11-11-13.

  5. Wikipedia, http://en.wikipedia.org/wiki/Heating_pad, 10-11-13.

  6. Edexcel International, Edexcel AS Chemistry Student’s Book Pg-35.


 

Md. Hashimuddin Ratul

Department: IPE

Semester: 2/2

Roll No.:2011334034

Email: hashimuddin_ratul@live.com

Phone No.: 01911444722