Showing posts with label "SUST Science Arena-iFeri" Sci-Fi Writing Contest. Show all posts
Showing posts with label "SUST Science Arena-iFeri" Sci-Fi Writing Contest. Show all posts

Tuesday, December 31, 2013

SSA-iFeri Science based Article and Sci-Fi Writing Competition 2013

 

 

প্রতিযোগিতায় স্বাগত। আমাদের প্রাথমিক বাছাই পর্ব শেষ করে এখন আমরা ভোটিং পর্বে আছি, অন্যদিকে চলছে বিচারকদের বিচারকাজ। অনলাইন ভোটিং পর্বে দুই বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছে দশটি করে বিশটি লেখা। এ বিশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোট এবং বিচারকদের নাম্বারের সমন্বয়ে দেয়া হবে গ্র্যান্ড পুরস্কারঃ ট্যাব। ভোট দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইফেরি ব্লগে একাউন্ট খোলা লাগবে। আপনি ম্যানুয়ালি ফর্ম ফিল আপ করার মাধ্যমে যেমন একাজ করতে পারেন, তেমনি ব্লগের ফেবসবুক প্লাগ-ইন ব্যবহার করেও কাজটি করা সম্ভব।

 

ভোটিং এর জন্য নির্বাচিত বিশটি লেখা এবং ব্লগ লিংক নিম্নে দেয়া হলঃ

 

 

নির্বাচিত প্রবন্ধ-সমূহের তালিকাঃ

 

১. এস্ট্রো-ভাইরোলজি

২. কার্বন ন্যানোটিউব

৩. পিঁপড়ার গল্প

৪. প্রাণীদের সামাজিক আচরণ ও বুদ্ধিমত্তা

৫. ভূ-তাপসম্ভাবনাময় নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানি

৬. ফুগু–পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ

৭. ব্ল্যাক হোল

৮. ঈশ্বর কণা (দি গড পার্টিকল) কি পারবে সব অজানা প্রশ্নের উত্তর বের করতে?

৯. কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ: একটি সম্ভাবনাময় সমাধান

১০. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোকণা

 

 

নির্বাচিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর তালিকাঃ

 

১. রোবটের প্রতারণা!

২. দিগন্তে

৩. নিঃসঙ্গ নিহান

৪. আত্মমৃত্যু

৫. ভিজিট টু দ্যা ইনফিনিটি

৬. নীল মানব সবুজ মানবী

৭. ভালো থেকো নাবিলা

৮. পৃথিবীর বুকে প্রত্যাবর্তন

৯. ফোর্স কন্ট্রোলার

১০. রিমোভেবল ডি.এন.এ

 

 

সব পাঠককে ভোটিং এ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনার একটি ভোট আপনার প্রিয় লেখার লেখককে জিতিয়ে দিতে একটি ট্যাব... জলদি করুন।

ভোটিং এর শেষ তারিখঃ ১০ই জানুয়ারি, ২০১৪।

উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণের তারিখ ও স্থান পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। ধন্যবাদ।

 

যেকোন প্রয়োজনেঃ ইশতিয়াক (০১৭১০-৩১২৯১৫)।

Wednesday, December 11, 2013

এলিয়েনদের আক্রমন

মোহাম্মাদ নূর উদ্দিন


সিএসই ২/২


 

ছুটির দিন। নিত্যনৈমত্তিক এর মত আজকেও জোহাদের ঘুরতে বের হওয়া। প্রাত্যহিকের চেয়ে আজকের বিকেল টা একটু ভিন্ন। গত কিছুদিনের পরিচিত জন নেই আজ পাশে, মাথার মধ্যে কতগুলো

উদ্ভট চিন্তা আর সংসয়। নদীর পাড়ে পড়ন্ত বিকেলে বসে সে ভাবে মস্তিষ্কে এত পরিবর্তন কি আনা সম্ভব? বিবর্তন ও কি কোন দিন পারবে এই গ্রহের প্রানির মধ্যে এই পরিবর্তন আনতে।

এক মাস আগের কথা, দিনটি ছিল ৩০০৩৩ সালের ০৩ মার্চ, প্রতিদিনের মতই সে ঘুরতে এসেছিল এখানে, এই নদীর ই পাড়ে, হাটার সময় হটাৎ চোখে পড়ল একটু সামনে গাছের নিচে কেউ একজন একা

দাড়িয়ে। সচরাচর সে এখানে কাউকে দেখে না, লোকজন যা আসে একটু দুরের স্পটেই সবাই থাকে। কোন কিছু না ভেবেই একটু কাছে গিয়েই এক্সকিউজ মি, প্রতিউত্তরেঃ এক্সকিউজ মি। আমি জোহাদ,

আমি সানাম।

এই এলাকায় নতুন এসেছেন?

কেন বলুন তো ?

না মানে, যারা এখানে ঘুরতে আসে তারা সাধারণত ঐ যে, ঐ স্পট টা তেই থাকে।

ও আচ্ছা, জি হ্যাঁ নতুন এসেছি।

আশেপাশেই উঠেছেন নাকি ?

জি হ্যাঁ।

ফ্যামিলি নিয়েই ?

জি হ্যাঁ।

ঘুরতে বেরুলেন ?

জি হ্যাঁ।

জোহাদ মনে মনে ভাবে, এই মেয়ে সব কথার উত্তরে "জি হ্যাঁ" "জি হ্যাঁ" করে ক্যান :/ । চেহারাটা ও একটু কেমন জানি, বিশেষ করে মাথা টা। :/ । ধুর  ফরেনার ও তো হতে পারে।

আপনি কি বাইরের কোন দেশ থেকে এসেছেন ?

জি হ্যাঁ।

(আবারও "জি হ্যাঁ") ও আচ্ছা ।

আপনি কি এ এলাকাতেই থাকেন ?

হুম।

আপনি প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসেন ?

হ্যাঁ।

আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

বাই ।

জোহাদ কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর, বাসায় ফিরে। পরের দিন ঘুরতে গিয়ে একই জনের সাথে দেখা। এবার মেয়েটিই জিজ্ঞসে করল কেমন আছেন ? ভালো। আপনি? ভালোই।

পড়াশুনা করেন আপনি?

হ্যাঁ।

কি নিয়ে পড়েন?

সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে টুক টাক ঘাটাঘাটি করি, এই যা।

ও। ভালোই।

বুঝলেন, একটা প্রবলেম নিয়ে কিছুদিন চিন্তায় আছি, কোন সল্যুশন পাচ্ছি না।

কি সেটা? বলা যাবে ?

প্রবলেম টা এই রকম, ৫০০ থেকে বড় যেকোনো সংখ্যা কে ফ্যাক্টরিয়াল করলে সে সংখ্যার শেষ থেকে যে ডিজিট টা প্রথমে মৌলিক হবে,  তাকে ৯ দিয়ে গুন করে গুণফলের অংকগুলোকে যোগ করে

প্রাপ্ত যোগফল থেকে ৫ বিয়োগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা কত? আর শেষ থেকে মৌলিক ডিজিট এর ক্রম কত?

মেয়েটা কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করল। তারপর বলল প্রথম কোশ্চেন এর আন্সার তো মোটামুটি সহজ আছে।

জোহাদ তো অবাক, এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সল্যুশন বের করল মেয়েটা!!

জোহাদ বলল আন্সার টা কত তাহলে ?

মেয়েটা বলল ৪ ।

জোহাদ চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল কীভাবে ?

মেয়েটা একটা সিস্টেম দেখিয়ে দিল তাকে ।

পরের কোশ্চেন এর আন্সার টা ও তাহলে দিয়ে দাও, জোহাদ বলল। মেয়েটা বলল একটু সময় লাগবে, কালকে দেই। ওকে ।

জোহাদ বলল তুমি কি সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে কাজ কর?

জি হ্যাঁ ।

তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট! অনেক ভালো করবে তুমি।

না, অত ভালো না ।

সংখ্যা নিয়ে আরেকটু জেনে নেয়া যায় কিনা, সেটা ভেবে জোহাদ গল্প করতেছিল ।

হটাৎ মেয়েটা বলে উঠল - আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

জোহাদ বলল আচ্ছা। আমি প্রায় প্রতিদিন ই আসি, তুমিও চাইলে আসতে পার।

জোহাদ তার গবেষণার পাশাপাশি একটা বহুজাতিক রোবটিক সংস্থায় কাজ করে ।

অফিস এ একদিন গল্প হচ্ছিল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে, উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ তেমন একটা নেই। কিছুদিন আগে জোহাদ ইন্টারনেট এ ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে কয়েক হাজার বছর ধরে আপডেট হয় না

এমন একটা সাইট এ ঢুকে কিছু ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখে পড়া শুরু করেছিল, এবং জানতে পেরেছিল উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ গলা শুরু হয়েছে, এবং তা অব্যাহত থাকলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা

আগামী ১৫০ বছরে ৫ ইঞ্চি বাড়বে। এটা জোহাদ বলল । সবাই বলল কিন্তু এখন তো উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ নেই বললেই তো চলে, তবুও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা তো তেমন একটা বাড়ে নি।

তাহলে এডুইন হাবল এর তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এর অংশ হিসেবে পৃথিবীর কি আয়তন বেড়ে গেল? কিন্তু বাড়লে ও এতই বেড়ে গেল ? আরেকজন বলে উঠল । এমন সময় একজন

পত্রিকার একটা নিউজ দেখে বলল দেখ তো এটা, নিউজ টা ছিল এরকম যে, পাশের নক্ষত্রের একটা গ্রহ থেকে এলিয়েনরা এই গ্রহে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেছে গত এক মাস ধরে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু

সেগুলো ডিটেক্ট করা যাচ্ছে না তারা ঠিক কোথায়, কীভাবে আসতেছে। আমাদের সংস্থার হেড কোয়ার্টার থেকে ও তো কোন ইনফরমেশন পেলাম না এত দিন। একজন বলে উঠল গতকাল নাকি অফিসে

এ বিষয় এর সাথে যায় এমন একটা মেইল এসেছে আমাদের এখানকার নির্বাহী প্রধান এর কাছে। যাই হোক বিষয়টা কিন্তু ভয়ানক। হয়ত আজকেই আমাদের কাছে নতুন প্রোজেক্ট এসে পড়বে।

দুইদিন পর জোহাদ আবার নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবে ভেবে বাসা থেকে বের হল।

বের হয়ে ২ মিনিট হাটার পর ই পেছন থেকে ডাক শুনতে পায়, জোহাদ। পেছনে তাকিয়ে দেখে সানাম। হাই। ভালো আছ ?

জি হ্যাঁ।

তুমি ভালো ?

এইতো। কিন্তু তুমি এইদিকে, তোমার বাসা কি এই দিকে ?

না। একটু কাজ ছিল। তাহলে তোমার বাসা এই দিকে?

হুম। তো কাজ শেষ ?

জি হ্যাঁ। গত দুই দিন ঘুরতে যাও নি ?

ব্যাস্ত ছিলাম, তাই যাওয়া হয় নি।

ও আচ্ছা। তোমার প্রবেল সল্যুশন নিয়ে? নতুন প্রবলেম যোগ হল নাকি ?

প্রবলেম তো আছেই, অফিস এ ও নতুন প্রোজেক্ট এ কাজ করতে হচ্ছে। তোমাকে বলা হয় নি, আমি একটা রোবটিক সংস্থায় ও কাজ করছি।

রোবট এর কথা শুনে সানাম একটু চোখ বড় করল।

কি প্রোজেক্ট বলা যাবে?

এসব বলতে বলতে তারা নদীর পাড়ে এসে পড়ল। জোহাদ বলল চল ঐদিকটায় বসি।

তারা গিয়ে বসে পড়ল, যেখানে বসল সেখানটায় ঘাস ছিল না তাই মাটিতেই বসে পড়া।

সানাম বলল এদিকটায় তো তেমন মানুষ আসে না, জোহাদ বলল হ্যাঁ। ঐ দিকে আরও দূরে গেলে কি আরও কম মানুষ। জোহাদ বলল তাই হওয়ার কথা। নদীর পাড়ে যাইতে থাকলে এমন যায়গা ও

কি পাওয়া যাবে যেখানে কোন মানুষ ই থাকবে না। জোহাদ বলল হ্যাঁ এমন তো কত যায়গা ই আছে।

জোহাদ ঐদিনের সল্যুশন ও আরো কিছু কোশ্চেন করল।

সানাম বলল ও, ঐদিনের সল্যুশন টা নাও বলে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল, কিন্তু সেটা প্রিন্ট করা। নতুন কোশ্চেন গুলার আন্সার ও একটু পর পর দিতে লাগল, জোহাদ তো অবাক। তাকে তো আমাদের

সংস্থায় নিতে পারলে অনেক ভালো হয়, জোহাদ বলল তুমি আমার সাথে আমি যেখানে কাজ করি সেখানে যাবে? সানাম বলল দেখি।

সানাম বলল - আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

জোহাদ হাসি মুখে ওকে, বাই ।

 

মোটামুটি জনশূন্য একটা এলাকায় কিছু মানুষ তাবুর মত টানাল ২/১ মাসের মত হবে। সারাদিন তারা ঘরের ভিতরেই কাটায়। বের হতে তেমন একটা দেখা যায় না । মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি আসে

আবার চলে যায় এই যা। আসে পাশে যে এলাকা আছে তা একটু দূরে, তাই হয়ত তাদের সাথে তেমন একটা মিশে না তারা। দুইজন কে পাশের দুইটা এলাকায় দেখা যায় কিছু মানুষের সাথে কথা বলতে।

এই দুইজন যখন পাশের এলাকায় যায়, সেখানকার মানুষজন তাদের পিছু নেয়, বিশেষ করে পিচ্চি রা। প্রথম প্রথম অবশ্য বেশি হত ব্যাপারটা, এখন অনেকটা কমে গেছে।

একজনকে এলাকার এক ব্যাক্তি প্রশ্ন করল আপনারা এখানে কেন এসেছেন? আর এত দূরেই বা কেন থাকেন?

উত্তরে লোকটি বলল আমরা সরকারের একটা প্রোজেক্ট এ এখানে এসেছি, আর আমাদেরকে ঐখানেই থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জোহাদ এর অফিসের নতুন প্রোজেক্ট এর কাজ অনেক বেশি, তাই তাকে এই কয়েকদিন অনেক ব্যাস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। প্রোজেক্ট এর কাজ হচ্ছে তাদের যে রোবট গুলো আছে সেগুলোর কয়েকটাতে

কিছু সেন্সর বসানো যেগুলো বাইরে থেকে দেখা যাবে না এবং রোবট গুলোর চোখ দিয়ে কিছু রস্মি নির্গমন করা। রস্মি নির্গমন করানো তেমন কঠিন না, কিন্তু রস্মি গুলোর ধর্ম এমন হতে হবে যে

রোবট এর সামনে কোন মানুষ দাড় করালে যাতে রোবট ডিটেক্ট করতে পারে যে সামনে দাঁড়ান মানুষের মস্তিষ্কের আকার, আয়তন, এবং গঠন কেমন।

 

কয়েক দিন পর। বিকেলে জোহাদ ঘুরতে বের হল সেই চিরচেনা নদীর পাড়ে। মনে মনে ভাবতেছিল আজকে কি সানাম এর সাথে দেখা হবে। খুব সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা, বিশেষ করে কিছু কমন ওয়ার্ড

ব্যাবহার করে সে, যেমন "জি হ্যাঁ"। জোহাদ তার যায়গায় পৌঁছে বসে রইল। হটাৎ সানাম এর আগমন। জোহাদ বলে উঠল ভালো আছ ?

জি হ্যাঁ । জোহাদ উত্তর শুনে কিঞ্চিৎ হাসল। তুমি ভালো ?

এইতো, ভালোই।

সানাম বলল চল আজকে হাটতে হাটতে কথা বলি, সানাম রাজি হয়ে গেল।

হাটতে হাটতে সানাম বলল তোমাদের নদীর পানি গুলো সুন্দর। তোমরা মানে তোমাদের মানুষজন কি ঐদিকে ৫ কি. মি. দূরে যায় রাতের বেলা?

না, ঐদিকে তো কোন বাড়িঘর নেই। কেন বলতো ।

এমন সময় একটা সাইকেল কে সাইড দিতে গিয়ে সানাম ধাক্কা খেয়ে নদীতে পড়ে যাবে এমন অবস্থায় জোহাদ তাকে ধরে ফেলল। জোহাদের ডান হাত সানাম এর পিঠে শক্তমত একটা যায়গায় লাগল।

তখন সানাম কেমন যেন মৃতের মত চোখ বন্ধ করল, যে হাত দিয়ে জোহাদ  কে ধরে রেখেছিল তা ও ছুটে গেল। পরক্ষনেই আবার সানাম সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার মত জোহাদ  কে ধরে উঠে পড়ল। এবার আর

কোন কথা বলছে না। দুই তিনটা শব্দ করল, কিছুই বুঝল না জোহাদ । জোহাদ  জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে, তার ও কোন উত্তর নেই। তার ৩ মিনিট পরেই ২টা গাড়ি হুইসেল বাজিয়ে তাদের পাসের রাস্তায় এসে

দাঁড়াল, সানাম এর মত দেখতে দুইজন এসে সানামকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেল, তারা কয়েকটা কথা বলল কিছুই বুঝল না জোহাদ । সে দৌড়ে গাড়িগুলোর পিছনে যাওয়ার চেষ্টা করল, একটু দূরে গিয়েই

জানতে পারল টিভি তে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে এখান থেকে ৫ কি মি দূরে একটা গ্রামের পাশে কিছু লোক এসে তাবু টেনে থেকে ছিল কিছু দিন। তারা নাকি মানুষ ছিল না, এইটা এলাকার লোকজন জানার সাথে

সাথে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

পরের দিন অফিস থেকে তাদেরকে সে গ্রাম টাতে পাঠানো হল পর্যবেক্ষণ এর জন্য, সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারে ঐ লোক গুলো গত রাত থেকে নদী থেকে পানি উঠিয়ে বিশাল ট্যাঙ্ক এ রাখতে

ছিল এবং একটার পর একটা ট্যাঙ্ক পুরিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিল আরেকটু নির্জন এলাকার দিকে। ঐ এলাকার লোকজনের সেচ এর সমস্যা হলে তারা ঐ লোকদের নিসেধ

করার পর ও যখন শুনল না, তখন এলাকাবাসী থাকায় ইনফর্ম করে এবং পুলিশ আসলে নাকি তারা কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করে এবং পানি নেয়া বন্ধ করে। কিন্তু গত রাতে নাকি ওখানে বিকট শব্দ ।

এলাকা বাসি সকালে সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল গর্ত এবং ঐ অদ্ভুত টাইপের লোকগুলো নেই ।

জোহাদ রা সেখান থেকে ব্যাক করে এবং জানতে পারে, অফিস এ নতুন মেইল এসেছে, এবং সেটা হল, কিছুদিন আগে যে পত্রিকায় এসেছিল এলিয়েন রা আসা যাওয়া করছে, সেটা সত্যি, এবং

তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবী থেকে পানি নিয়ে যাওয়া, এবং তার ই অংশ হিসেবে এই দেশে ও তারা কার্যক্রম চালায়, যেটা গত কালকে বন্ধ হয়েগেছে। আরও জানা গেছে তারা আটলান্টিক এর একটা

যায়গা থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে এবং সেটা বারমুডা ট্রায়ঙ্গেল কাছাকাছি কোন যায়গায়। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে ঐ এলিয়েনরা রোবটদের প্রায় মানুষের আকৃতি দিয়ে বানায় শুধু মাথার আকৃতি ছাড়া, এবং

আর্টিফিসিয়াল ইন্তিলিজেন্স এত ইউজ করে যে মানুষ থেকে পৃথক করা অনেক কঠিন যেটা এখন তাদের টাস্ক।

জোহাদ বাসায় এসে ভাবে সানাম ও তাদের অন্তর্ভুক্ত। জোহাদ ভাবে আমারা কি পৃথিবী কে পারব মুক্ত করতে? পারব কি এলিয়েনদের বানানো রোবট কে সনাক্ত করার রোবট বানাতে ?

কত গুলো চিন্তা জোহাদের মাথায় ঘুরপাক খায়, জোহাদরা কাজ করে যায় পৃথিবীকে মুক্ত করার আসায় দৃঢ় প্রত্যয়ে , যদিও তারা ফলাফল জানে না ... ...

আয়েশার দিনরাত্রী

এস এম মনির


পরিসংখ্যান ৩/২


 

২০০৫ সালের নভেম্বরের ০৬ তারিখ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ছাত্রী হিসেবে আয়েশা মন্দ না। বাবা মার স্বপ্ন একমাত্র সন্তান একদিন বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু মেডিকেলে চান্স হলো না। অবশ্য আয়েশা কখনোই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখেনি। ওর স্বপ্ন বড় লেখক হবে। হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আমিনুল হকদের মতো বড় লেখক। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওর সবচেয়ে প্রিয় লেখক। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেজন্যই হয়তো ওর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় এটা। সাথে সাথে অবশ্যই সি. এস. ই ডিপার্টমেন্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পেলেও সাস্ট আয়েশাকে আটকাতে পারে না। তবে সি.এস.ইতে ভর্তি হতে পারে না। শেষমেষ, বাধ্য হয়েই ভর্তি হয় জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলটি (জি.ই.বি) বিভাগে। ২০০৬ সালের ২৮ জানুয়ারি, মুক্তমঞ্চে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী, সচিব সহ আরো অনেকেই এসেছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। সবাই নতুন ভর্তি হওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আসলেন ড. জাফর ইকবাল। এই প্রথম আয়েশা তার প্রিয় লেখককে সামনা সামনি বসে দেখছে। তার উত্তেজনা যেন ধরে না। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ও স্যারের কথা শুনছে। ওর মনে হচ্ছে স্যারের সব কথাই যেন শুধুমাত্র তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা।

যথারীতি অনুষ্ঠান শেষে নতুনরা ছুটলো তাদের ডায়রীতে স্যারের অটোগ্রাফ নিতে। আয়েশাও সুযোগটা হাতছাড়া করলো না।

ক্লাস শুরু হয়ে গের ফেব্র“য়ারিরর প্রথম সপ্তাহ থেকেই। এখন সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বা সাষ্টের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিষ্টারের (১/১) এর গর্বিত ছাত্রী। হোক না সেটা জিইবি ডিপার্টমেন্ট, তাতে কিছু আসে যায় না। সে তো আর এখানে ইঞ্জিনিয়ার হতে আসেনি, এসেছে বড় লেখক হতে। ওর উদাহারণ হিসেবে আছে আনিসুল হক, বুয়েট থেকে পাশ করা বড় লেখক।

নতুন জায়গা, নতুন জীবন, নতুন হল, নতুন বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে স্বপ্নের মতোই কাটছে আয়েশার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। আড্ডা, গান, গল্প, আবৃত্তি, নাটক এসব নিয়েই আয়েশার দিনরাত্রী। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের একটার পর একটা আয়োজন যেন লেগেই আছে। হাতে একটুও সময় নেই বই নিয়ে বসার। অচিরেই ওর পরিচিতি হয়ে উঠলো ক্লাসের সবচেয়ে ফাকিবাজ আর অমনোযোগী ছাত্রী হিসেবে।
অবশ্য সে যে লেখক হবে তারও কোন লক্ষণ নেই। মাথা থেকে কোন শব্দই বেরোতে চায় না, লিখতে বসলে। অনেক চেষ্টা করে একটা গল্প লিখেছিল বটে কিন্তু কোথাও ছাপাতে পারেনি। আর এই দুঃখে সে লেখক হবার চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছে, এক রকম। ছোট্র একটা ক্যাম্পাস, তার ওপর যত্রতত্র ধান ক্ষেত, এখানে সেখানে পাহাড় টিলা, টিলার ওপর একশ ধাপ পেরিয়ে শহীদ মিনার, অহেতুক লম্বা এককিলো মিটার লম্বা প্রবেশ পথ। এরকমই হয়তো মনে হবে প্রথমবার সাস্টে আসা যে কারোর। কিন্তু সেই প্রথমদিন থেকেই এগুলোই যে সাস্টের প্রধান আকর্ষন বুঝতে একটুও ভূল হয়নি আয়েশার। বিশেষ করে, এক কিলেতে শীতের সকালে হাটতে হাটতে রোদ পোহানো, আর রাতে লেডিস হলের জানালা দিয়ে সুদুর মেঘালয়ের মিটমিট করে জ্বলা পাহাড়ী জীবনের যেনো কোন তুলনাই চলে না। এদিকে প্রিয় বন্ধুরা আর বেস্টফ্রেন্ড তুহিনতো আছেই। সাস্টের ওর সময়গুলো যে কিভাবে পার হচ্ েআছেই। সাস্টের ওর সময়গুলো যে কিভাবে পার হচ্ছে ওযেন টেরই পাচ্ছিলনা।

সেমিস্টার সিস্টেমে চোখের পলকে কখন যে টার্মটেস্ট, ল্যাব, শেষ করে ১/১ এর সেমিস্টার ফাইনাল চলে আসলো আয়েশা বুঝতে পারে নি। আগে থেকেই সব পড়া গুছিয়ে না রাখার ফলাফল সে পরীক্ষার আগে হাড়ে হাড়ে টের পেলো। পরীক্ষার আগে রাতদিন পড়েও লাভ হচ্ছিল না। প্রত্যেক পরীক্ষাতেই চোখে সরষে ফুল দেখার জোগাড়! ইংরেজী, কেমেস্ট্রি, মাইক্রোরায়োলজি, প্লান্ট সায়েন্স আর অ্যানিমেল সায়েন্স কোন রকমে ভাল মন্দ কিছু গ্রেড পেয়ে উতরে গেলেও কনসেপ্ট অব জিইবিতে পাশই করতে পারলোনা। ফলাফল ড্রপ!

কোষ জীবদেহের সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক। খালি চোখে দেখা যায় না। সেই কোষের মধ্যেই থাকে নিউক্রিয়াস। কোষের প্রাণ। সেই নিউক্লিয়াসেই থাকে সুতার মতো ক্লোমোসোম। আর ক্লোমোসোমেই নাকি থাকে জীবনের ব্লু প্রিন্ট ডিএনএ, দ্বিসূত্রক, হাইড্রোজের বন্ডসহ সাসাস কিছু। এসবই নাকি তাকে পড়ে হবে সারা জীবন। ভাবতেই আয়েশার গা গুলিয়ে আসে। সেকি আদৌ তার পড়ালেখা শেষ করতে পারবে? অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিস, থাইমিন কি সব বিদম্বটে নাম।

পড়াশুনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে নিজেকে প্রথম বর্ষ ২য় সিমিস্টরের ছাত্রী হিেিসব আবিস্খার করে। লেখক হবার চিন্তা বাদদিয়ে সে আপাতত ফটোগ্রাফার হবার স্বপ্নে বিভোর। থাকতো যদি সুমন ভাইয়ের মতো একটা উঝওজ ক্যামেরা। সুমন পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। কি এক প্রতিযোগিতায় তার তোলা ছবি প্রথম হয় আর সে বছর টাইম ম্যাগাজিন সেই ছবি ব্যবহার করে আগস্ট ০৫ তারিখ সংখ্যার বাংলাদেশ শিরোনাম একটা প্রবন্ধ ছাপে। রাতারাতি সুমন তারকা বনে যায় শুধু সাস্ট ক্যাম্পাসে না সারা দেশ। হাতের কাছেই এমন উদাহরণ থাকলে কে না চাইবে ফটোগ্রাফার হতে। অনেক চেষ্টা করে বাবা থাকে রাজি করিয়ে একটা উঝখজ কেনে বটে। কিন্ত যন্ত্রটা কেনার পরই যেন ওর ছবি শখ মিটিয়ে যায়। কেন যানি আর ছবি তুলতে ভাল লাগে না।

এদিকে দেখতে দেখতে আবারো সেমিস্টার ফাইনাল। প্রথম বর্ষ ২য় সেমিস্টার। এবার একটা নয় দু’দুটা সাবজেক্ট ড্রপ চলে আসে। মেটাবলিজম আর ইনভ্নামেন্টাল বায়োটেকনোলজিতে। এই যখন অবস্থঅ তখন আয়েশা আবারো নিজেক আবিস্কার করে ২য় বর্ষে ১ম সেমিস্টারে ছাত্রী হিসেবে।  ২০০৭ সালের ফেব্র“য়ারী ০৩ তারিখে জিইবি এবং সিত্রসই বিভাগ মিলিত ভাবে একটা তিনদিন ব্যাপি সেমিহস্টার আয়োজন করে “ঝঊগওঘঅজ ঙঘ এঊঘঊঞওঈঝ অঘউ ঈঙগচটঞওঘএ”.বক্তারা দেশ বিদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। আয়েশা মূলত তুহিনের জোড়াজুড়িতেই সেমিনারের জন্য রিজিস্টেশন করে।

উদ্বোধনী সেশনের পরেই প্রথম বক্তা হিসেবে আসেন আয়েশার প্রিয় জাফর স্যার। সেদিনের স্যারের প্রেজেন্টেশনই আয়েশার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। স্যারের প্রেজেন্টেশনের নামছিল “জীবনের নীল নকশ;উঘঅ”স্যারের শুরুটা ছিল এমন “বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব যদি তুমি তোমার কাজের লোককে বোঝাতে না পার তাহলে বুঝাতে হবে তুমি নিজেই সেই তত্ত্বটি বোঝেনি। প্রকৃতি জটিলতা পছন্দ করে না। তাইতো প্রকৃতির সবকিছুই সহজ সরল। তেমনি জীবিত প্রাণীর মুল ব্যাপারটিও অত্যন্ত সহজ সলে। একটি মানুষ ছেলে হবে না মেয় হবে বেট না লম্বা, ফর্সা না কালোপ, টাকমাথাওয়ালা না টাকবিহীন, রাগী না নরম স্বভাবের হবে খুটিনাটি সব তথ্যই থাকে উঘঅ নামক অঞএঈঈএঞঅঅঞ

.........সূত্রে................

প্রাজল উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রজেক্টের ছবির মাধ্যমে সবকিছূ ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন। সেদিহন আয়েশার একটি কথাই বারবার মনে হচ্ছি কেন সে জিইবির মাত রোমাঞ্চকর বিষয়টাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল এতোদিন। সবশেষে স্যার জেনেটিক্সের সাথে কম্পিউটিং কিভাবে জড়িত ব্যাখ্যা করেছিলেন। পরবর্তি দু’দিনে সে বেশ বড় ক্যানভাসে জেনেটিক্সের বিভিন্ন মজার এবং জটিল কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, ব্যাপারগুলো একজন জিইবির ছাত্রী হিসেবে সে আগে থেকেই একটু আধটু জানতো কিন্তু কখনোই ব্যাপারগুলোকে অন্তর দিয়ে অনুভব করেনি। এই তিনদিনের সেমিনার তাকে জিইবি সম্পর্কে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করে। সে দেশী বিদেশী বড় বড় জিন বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে জানতে পারে। ড. মাকসুদুল আলম, বাংলাদেশের বড় জিন বিজ্ঞানী, জানতে পারেণ এখানে এসেই। একজন ভাল বিজ্ঞানীই যে পারেন তার কাজের মাধ্যমে সভ্যতাকে পরিবর্তন করতে পারে, সে অনুভব করে। এবার সে সত্যিকার অর্থেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বড় বিজ্ঞানী হবার।

সেমিনার শেষ। আয়েশা পড়াশুনায় মনযোগ দেয়। সেমিনার করার আগের আয়েশা এবং পরে আয়েশার মাঝে যে রাতদিন তফাত বন্ধুরা সবাই বুঝতে পারে। আস্তে আস্তে নিজেকে গুছিয়ে নেয় সে। নিয়মিত পড়াশুনা, ল্যাবের কাজ, লাইব্রেরীতে পড়াশুনা সবই চলতে থাকে সমান তালে। সেকেন্ড ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টার অনেক ভাল ফলাফল করে। আর সে বছর ২য় সেমিস্টারে আয়েশা ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়। তবে তুহিনের সাথে পেরে ওঠে না, বরাবরের মতো সেবারও তুহিন ফাস্ট হয়, অবশ্য ৩/১ এ গিয়েই নাকি আয়েশা তুহিনকে ২টিয়ে প্রথম হবে একথাও তুহিনকে তখনই জানিয়ে রাখে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতেই যথারীতি তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে যায়। বলা নেই কওয়ানেই প্রিয়বন্ধু তুহিন হঠাৎ খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। হাতের কাছেই ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ধরা পড়ে তুহিনের ব্লাড ক্যান্সার। ব্যাপার গুলো এতো দ্রুত ঘটতে থাকে যে বন্ধুরা কেউ কিছু বুঝে ওঠারই সময় পায় না। সে সময় রোগটা ধরা পড়লো তখন আর সেটা ডাক্তারদের আয়ত্বের মাঝে নেই। নিয়মিত ব্লাড পরিবর্তন করলে হয়তো আরো একমাস বাঁচানো যাবে, ডাক্তারদের অভিমত। চোখের সামনে বন্ধুকে এভাবে মরতে দেখে আয়েশা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেও বি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে হিমসিম খায়। তারা দেখতে পায় সাস্টের শিক্ষার্থীদের কোন কেন্দ্রিয় ব্লাডের তথ্য নেই কারো কাছে। বলতে গেলে তুহিন আরো যে কিছুদিন বাঁচতে পারতো সেটাও সম্ভব হয় না রক্তের অভাবে। তুহিন সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় ফেব্র“য়ারির ১৮ তারিখ। তুহিন চলে গেলে আয়েশা বুঝতে পারে, সে তুহিনকে শুধুই বন্ধু হিসেবে দেখেনি মনের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছিল ! সে ভাবতেই পারেনা, একুশে ফেব্র“য়ারিতে যখন সবাই শহীদ মিনারে প্রভাতফেরী করে ফুল দিতে যাবে, সেই সকালে তুহিন থাকবে না।

তুহিনের মৃত্যুতে আয়েশা জীবনে সবচেয়ে বড় আঘাত পায়। তবে আয়েশা ভেঙ্গে পড়ে না, যে প্রতিজ্ঞা করে রক্তের অভাবে সে কাউকে মরতে দিবে না। অন্তত সাস্টের কাউকে নয়।  পরবর্তি একমাসে আয়েশা আর বাকি বন্ধুরা মিলে সাস্টের সকল ব্যাচের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ব্লাড গ্র“প সংগ্রহ করে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারা সেই তালিকা বড় সাইন বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে টানিয়ে দেয়। এই ভেবে তারা আনন্দিত হয় যে, তাদের মতো আর কাউকে ব্লাডের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। তালিকা দেখে অতি সহজেই সে তার প্রয়োজনীয় ব্লাড জোনারকে খুঁজে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও অনেক সাহায্য করে, প্রতি বছর নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য হালনাগাদ করে। পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশুনা ৩/১, ৩/২ তেও ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট।  ২০০৯ সালে তখন চতুর্থ বর্ষে আয়েশা ৪/১ অনেক ভাল ভাবে শেষ করে আর ৪/২ তে গিয়ে সকল কোর্সে সিজিপ্রিত ৪.০০ পায়। এভাবেই শেষ হয় আয়েশার বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। এবার থিসিসের পালা।

২০১০ সালে আয়েশা ডিপার্টমেন্টের প্রিয় মাহবুবল হক স্যারের তত্ত্বাবধানে শুরু করে থিসিসের কাজ। থিসিসের বিষয় ‘মেটা-জিনোমিক্স’ সেপ্টেম্বর নাগাদ সে তার থিসিস পেপার সাবমিট করে। এতো সুন্দর থিসিস দেখে স্যাররা চমৎকৃত হয়। একই সময় বাংলাদেশী জিন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম পার্টের জীবন-রহস্য উৎঘাটন করে সারা দেশকে আনন্দের জোয়ারে ভাসায় আয়েশা অনুপ্রাণিত হয়। ২০১০ সালের আগস্ট মাস, পৃথিবীর অপর প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী ‘লস অ্যালামস জৈব গবেষণাগারে’ প্রথেকট ম্যানেজার ক্রিস ডেটার নেতৃত্বে ‘মেটা জিনোমিক্সের’ ওপর ভিত্তি করে, শুরু করে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরী মহাযজ্ঞ। ব্যাপারটা জানতে পেরে আয়েশা তার থিসিস ক্রিস ডেটার কাছে ই-মেইলে পাঠায়। ২০১১ সালে। আয়েশা পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যালামস শহরে। ইউনির্ভাসিটি অব নিউ মেক্সিকোর ন্যিানোসায়েন্স অ্যান্ড মাইক্সোসিস্টেমস বিভাগে ভর্তি হয় ‘অপটোজেনেটিক্সের’ ওপর পিএইডি ডিগ্রী নিতে। পাশাপাশি চলতে থাকে জৈব গবেষণাগারে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরীর গবেষণার কাজ। লস অ্যালামস হলো পুরো বিশ্বের একটি ছোট সংস্কারণ। প্রায় সবদেশের জ্ঞানীগুণী মানুষের বাস এই শহরে। পৃথিবীর প্রতি বর্গমাইলে সবচেয়ে বেশি ডক্টরেটধারী থাকেন সেই শহরে।
অবশেষে ২০১৩ সালে আয়েশারা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম ফুসফুস তৈরীতে সাফল্য লাভ করে। সারা পৃথিবীতে সারা পড়ে যায় এই আবিষ্কার।  ২০১৩ সালেই আয়েশা তার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে। যোগদান করে বিশ্বখ্যাত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজিতে’, অধ্যাপক হিসেবে।  হাভার্ডে থাকাকালীন সময়েই সে শুরু করে কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর গবেষণা। পাঁচবছর মেয়াদী। মাত্র চার বছরের মাথায়ই সে তার কাজ শেষ করে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস, আয়েশা এখন বাংলাদেশে। উঠেছে তার প্রিয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে। এক কিলেতে হাটতে হাটতে এক সকালে সূর্যোদয় দেখছে। জীবনটাকে তার কাছে সত্যিই এক রূপকথার মতো মনে হয়। সে এখন পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম।

জানুয়ারির ১৭ তারিখে সাস্টের সমাবর্তনের প্রধান অতিথি সে। কিন্তু তার আগেই যথাক্রমে ০৮ তারিখে ‘ন্যাশনাল বিওগ্রাফি এবং ১৬ তারিখে ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিন তাঁর কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর সাফল্যের গবেষণাটি প্রকাশ করে। সারা বিশ্বের মানুষের অভিনন্দনে সিক্ত হয় আয়েশা। ১৭ তারিখের সেই সমাবর্তনে সে তার জীবনের গল্পটিই বলে সবার নতুন গ্রাজুয়েটদের কাছে এবং সেদিনই তার শ্রদ্ধেয় মাবহুবল হক স্যার আয়েশাকে সাস্টের জিইবি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়।
ড. আয়েশা আরেফিনের এখন প্রচণ্ড ব্যাস্ততা। ডিপার্টমেন্টের নানা কাজ, পরীক্ষা, গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে তার দম ফেলার সময় নেই, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে, সাস্টের জিইবি ডির্পাটর্মেন্টে।

২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর, ক্যারোলিনস্কা ইনিস্টিটিউট, সুইডেন। ঘোষণা করে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ট চিকিৎসা সাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম। কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সেই পুরস্কার এককভাবে লাভ করেন বাংলাদেশের ড. আয়েশা আরেফিন, মাত্র ৩১ বছর বয়সে।

আজ ২০৩০ সালের একদিন। এখণ পৃথিবীতে এমন একজন কেও খুঁজে পাওয়া যাবে না সে কিনা রক্তের অভাবে মারা যায়। কৃত্রিম ব্লাড অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। এবং এর কৃতিত্ব দেওয়া হয় বিশ্বখ্যাত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক, প্রখ্যাত জীন বিজ্ঞানী ড. আয়েশা আরেফিনকে।

অনুপ্রেরণায়: আয়েশার আলো।
০৬ অক্টোবর ২০১৩, স্বপ্ননিয়ে,
প্রথম আলো।

সায়েন্স সন্ধ্যা

 

সব্দল হাট।

প্রতিদিন বিকালে ছোটখাটো একটা বাজার লাগে, আর শনিবার ও মঙ্গলবারে লাগে হাট। হাটের দিন থাকে প্রচন্ড মানুষের ভীর। গরম জিলাপি থেকে শুরু করে সাপ দেখিয়ে মাদুলি আর হেকিম চাচার কবিরাজি ওষুধ বিক্রিও বাদ যায় না।

আজ শনিবারের হাট। পিংকু হাতে একটি চটের ব্যাগে পাঁচ কেজি ধান নিয়ে এসেছে। ধানের দামটা প্রতি বার-ই উঠা-নামা করে। সে একশত টাকা পেল ধানগুলো বিক্রি করে। পিংকুকে দেখা গেল এদিক-সেদিক ঘুরে বেরাতে। লোকের গিজ গিজ ঠেলে পিংকুর হাতের খালি চটের ব্যাগটা সামনে-পিছনে দুলছে। এমন সময় কিম্ভূতকিমাকার একটা মানুষ ভীর ঠেলে ঠেলে পিংকুর দিকে আসছিল। লোকটির পেটটি সামনে নীল শার্টের বোতাম ছিড়ে বের হতে চাইছে। চুলগুলো সাদা। বয়সের ভার মুখের চামড়াতে একেবারে স্পষ্ট। পিংকু তার সাথে কথা বলতে গেল।

পিংকুঃ       নমস্কার, আমার ভাগ্যটা মনে হয় খুব ভালো আজকে। আপনি সেই বিজ্ঞানী হরেণ চ্যাটার্জী, তাই না?

হরেণ চ্যাটারজীঃ হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু আমিতো. . .

পিংকু হরেণ চ্যাটার্জীকে থামিয়ে বলে-

- আমাকে চেনার কথা আপনার নয়। আসলে জানেন কি-বিখ্যাত লোকেরা অনেকের কাছেই পরিচিত। কিন্তু সেই ‘অনেকের’ সবাইকে কি ঐ ভদ্র বিখ্যাত লোকটি চেনেন?

- তা যা বলেছেন বাবু। আপনি তাহলে আমার জাদু দেখেছেন কোন স্কুলে, তাইনা?

- হ্যা, আমাদের স্কুলেইতো দু’বার দেখালেন।

- তা আপনার পরিচয়টা. . . .

- একি! আপনি আমার বাবার বয়সী। আমাকে ‘তুমি’ করে বললেই খুশি হব। আর-আমার পরিচয়! মানুষের পরিচয়তো ক্ষণে ক্ষণেই পালটায়। কোনটাইতো  স্থায়ী নয়।

- একেবারে পাক্কা কথা বলেছেন, না না বলেছ। তা তোমার বর্তমান ক্ষণের পরিচয়টাই বল।

পিংকু একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে বলল-

- আমি পিংকু  রায়। একটা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করছি। আর দু’বছর হল-নিজেই একটা ছোটখাটো থিয়েটার করেছি। সেখানেই বেশির ভাগ সময় কাটে।

- বাহ! বেশতো। তোমার থিয়েটারে একদিন আমাকে নিয়ে যেও।

- নিশ্চয়ই নিয়ে যাব। আপনি জানেন না আমি আপনাকে কত খুজেছি। এমন লোক আপনি, মোবাইল ছাড়া এখন কি কল্পনা করা যায়। একজন রিক্সাচালক- যে কিনা পেটে ক্ষুধা লাগলেও পাঁচ টাকা না খেয়ে বাচ্চার জন্য ক্রিম বল কেনে , সে-ই এখন মোবাইল কিনেছে। কেন জানেন-বউয়ের সাথে কথা বলবে বলে। বউয়ের সাথে কথা মোবাইলে বললে নাকি তার রিক্সা চালানোর কষ্টটা গায়ে লাগেনা।

- তা বুঝলাম, আমি কার সাথে কথা বলব?

- আপনার না হয় কথা বলার লোক নেই, কিন্তু আপনিইতো অন্য কারো কথা বলার লোক হতে পারেন, তাইনা?

- হ্যা, ঠিকই বলেছ। তবে. . . .

-তা যাইহোক, আমি আপনার জাদুর ফ্যান সেই ক্লাস সিক্স থেকেই। আমাদের স্কুলে তখন প্রথম দেখেছিলাম আপনাকে। আপনি তখন তো ইয়াং ম্যান, আর বলতেন-এগুলো কোন জাদু নয়, সব সায়েন্স। আমি তখন বুঝতে পারিনি জাদু কেন সায়েন্স হবে? পরে যতই বড় হয়েছি , বুঝেছি সায়েন্স কত মজার বিষয়। আপনার খোঁজে বেরিয়েছি এই আশায়-কিছু সায়েন্স শিখব।

 

বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে। সেটা হরেণ বাবুর ঠোঁট কাঁপুনি দেখেই ঠাহর হয়। কথোপকথন আর বেশি দূর এগোলনা। হরেণ বাবু তার বাড়িতে পিংকুকে আসার নিমন্ত্রন দিয়ে একটা কাগজে ঠিকানাটা কাঁপা- কাঁপা হাতে লিখে দিলেন। হরেণ বাবুর এক প্রতিবেশী হরেণ বাবুকে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। আর পিংকুর তো মাথায় হাত! মা যে তরকারি – পাতি কিনতে বলেছিল! কাঁচা বাজারে প্রায় সব কিছু শেষের দিক। ভেন্ডি কিনল ২ টাকা প্রতি কেজি দরে। একশ টাকায় ব্যাগ ভর্তি!

 

 

২.

উমেদ আলি হাই স্কুল।

নবম শ্রেণীর ক্লাশ রুমে পিংকু ঢুকল। দিনের প্রথমেই পিংকুর পদার্থ ক্লাস। পিংকু বলল-

- তোমরা কি কেউ ফানুস দেখেছ? বলতে পারবে কেন ফানুস আকাশে উরে যায়?

কেউ কেউ দুই হাত তুলেছে, আবার কেউ এক হাত, কয়েকজন তোলেইনি-তারা মনে হয় ফানুস দেখেনি, না হলে স্যারের কথা ভালো মত বোঝেইনি। পিছনে গল্প করলে বুঝবে কিভাবে?

পিংকুঃ       সবাই হাত নামাও, জামান তুমি বল।

জামানঃ স্যার, আমি ফানুস কল্পনায় দেখেছি। আমার দাদু আমাকে বলেছিল- ফানুস আর মানুষ এই দু’য়ের মাঝে অনেক মিল। ফানুসের দম হল কেরোসিনে ভেজানো দড়ি, যতক্ষণ জ্বলবে – ততক্ষণ আকাশে উড়বে। কেরোসিন শেষ, ধুপ করে মাটিতে পরে যাবে।

পিংকুঃ       থামো!! সাহিত্য বলা শুরু করেছ? মিতালি, তুমি বল।

মিতালিঃ অ্যাঁ. . . উমম. . . স্যার. . .

পিংকুঃ       বলো বলো।

মিতালিঃ স্যার, হালকা জিনিস  তো ভারী জিনিসের উপর ভাসতে পারে। ফানুসের ভিতরে যে ধোয়াটা থাকে সেটাতো অনেক গরম এবং এই জন্যই হালকা, তার আশেপাশের বাতাসের চেয়ে। আমার মনে হয় এই জন্যই ফানুস উপরে ভাসতে থাকে, আর বাতাস এসে তাকে ঠেলে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়।

পিংকুঃ       এক্সাক্টলি। বসো। দেখেছ! সবাই মিতালির মত চিন্তা করতে শেখ। তাহলেই সায়েন্স পড়তে ভালো লাগবে। সেই সাথে আমাদের দেশটাও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।

মিতালিঃ স্যার, আমার একটা প্রশ্ন আছে।

পিংকুঃ       কি প্রশ্ন বল। আমি প্রশ্ন করাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি।

মিতালিঃ স্যার, একটা পেরেক হাতের মধ্যে জোড়ে টিপে দিলেও ঢুকেনা, কিন্তু একটা শুই দিয়ে  অল্প একটু চাপ দিলেই ঢুকে যায় কেন?

পিংকুঃ       বাহ! মিতালি। তোমার প্রশ্নটা খুবই মজার। তোমাদের মত ছেলে-মেয়েদের জন্য বাংলাদেশ সত্যিই গর্বিত। বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে, এটা তারই একটা প্রমাণ।

শোন- তোমার প্রশ্নের মধ্যেই কিন্তু একটা ক্লু আছে। ফোর্স বেশি দিচ্ছ কিন্তু ঢুকছেনা, আবার ফোর্স কম দিলেও কোন কিছুতে সেটা ঢুকে যাচ্ছে। তার মানে ফোর্স দিয়ে বিষয়টাকে পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছেনা। তাই একটা নতুন রাশি চাপ, যেটা হল প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ফোর্স। এ থেকে বোঝা যায় একই ফোর্সের জন্য ক্ষেত্রফল কম হলে চাপ বেশি, এবং ক্ষেত্রফল বেশি হলে চাপ কম, তাই না?

মিতালিঃ জী স্যার।

পিংকুঃ       শুই হল চিকন , মানে এর মুখের ক্ষেত্রফল অনেক কম । আবার পেরেক কিন্তু শুইয়ের চেয়ে অনেক মোটা, মানে ক্ষেত্রফল অনেক বেশি । এখন তুমি চিন্তা কর আমি একটু আগে কি বলেছি । শুইয়ের ক্ষেত্রফল কম – মানে চাপ বেশি , যার চাপ বেশি সেইতো আগে ঢুকবে , তাইনা ?

মিতালীঃ জ্বী স্যার, বুঝে গেছি, দারুণ মজার । আর আপনি আরো মজা করে বুঝিয়েছেন । ধন্যবাদ স্যার ।

পিংকুঃ       একজন মজা পেলেই হবে শুধু , সবাইকে পেতে হবে । একা একা কি দেশটাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে , সবাই মিলে ঠেলতে হবে কেউ চাকা , কেউ বডি , কেউ স্টিয়ারিং ধরবে – তবেই  না আমাদের সোনার বাংলা গড়তে পারব । তার মানে সবাইকে পড়ালেখায় মজা পেতে হবে, মজা না পেলে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা আছে ।

সবাই একসাথে বলে উঠে – স্যার , আমরা সবাই মজা পেতে চাই ।

পিংকুর চোখের কোনায় একবিন্দু জল চলে এসেছে, সে খুব আবেগপ্রবণ । দেশকে ভালোবাসার কথা উঠলে তার চোখে জল আসবেই ।

পিংকু একটু ভারী কন্ঠে বলল-

পিংকুঃ       আমিও তোমাদের মজায় মজায় শেখাতে চাই । তোমরা কি জান – যে এমন কিছু আলো আছে যেগুলো আমরা চোখে দেখিনা । কিন্তু সেই আলো গুলো জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে আমাদের আশে পাশে ঘুরে বেরাচ্ছে ?

সবাই একসাথে বলে উঠল – না স্যার , কই??  এরকম কিছুই তো জানিনা । ভূত-টূত নাকি স্যার?

পিংকুঃ       আরে, ভূত-টূত না । ঐ আলোর নাম ইনফ্রারেড আলো । তোমাদের বাড়িতে যে টিভি রিমোট আছে, তার মাথায় একটা ছোট লাইট আছে, দেখেছো কখনো ? সেটা কি জ্বলে?

হরিঃ জ্বি স্যার দেখেছি । কিন্তু জ্বলেনাতো ।

পিংকুঃ       জ্বলে , জ্বলে । এখান থেকে যে আলো বের হয় সেটা ইনফ্রারেড , আমাদের চোখ সেটা দেখতে পায় না । তোমরা বাসায় গিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবে ।

জামানঃ স্যার , এক্সপেরিমেন্ট কি ?

পিংকুঃ       এক্সপেরিমেন্ট হল – বইয়ের জ্ঞানগুলোকে চোখ দিয়ে বাস্তবে দেখা, হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে ।

আচ্ছা শোন- বাসায় গিয়ে তোমরা মোবাইলে ক্যামেরা অন করবে, তারপর রিমোটের লাইটের উপরে ধরবে । রিমোটের বাটন চাপলে, ক্যামেরায় দেখবে লাইটটা জ্বলছে । যাদের বাসায় টিভি রিমোট বা ক্যামেরা মোবাইল নাই, তারা বন্ধুদের বাসায় যাবে যাদের টিভি রিমোট এবং ক্যামেরা মোবাইল আছে। ওকে আজ এ পর্যন্তই ।

বেশি কথা বললে পিংকুর মাথা ব্যাথা করে । এখন ক্লাশ থেকে বের হয়ে তার খুব মাথা ব্যাথা করছে । তাই ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেল ।

 

 

 

৩।

বেলা পড়ে এসেছে ।

স্নিগ্ধ রোদ এসে পড়েছে বিজ্ঞানী হরেণ চ্যাটার্জীর বাড়ির ছাদে । আকাশে অনেকগুলো চিল উড়ে বেড়াচ্ছে । বাড়ির পাশেই মেঠোপথ একে-বেঁকে চলেছে ।

মনা, হরেণ চ্যাটার্জীর মেয়ে, বিকেলের ঘুম শেষে সেজে গুজে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে ছাদে উঠে এলো, একটা গল্পের বই নিয়ে । আকাশে উড়ন্ত চিল দেখতে দেখতে মনা ভাবল এরোপ্লেনের কথা । এই চিলের উড়ানো দেখেই তৈরি হয়েছে উড়োজাহাজের মডেল । চিলের ডানাগুলো কেমন যেন – উপরের দিকটা থ্যাবড়ে যাওয়া টিনের চালের মত , আর নিচটা সমতল।

মনার ধ্যান ভাঙল মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসা এক আগুন্তুক দেখে । লম্বায় প্রায় ৫ ফুট ৮ইঞ্চিতো হবেই । পড়নে সাহেবী পোশাক, মাথায় হেট, চোখে চশমা । এইরকম স্মার্ট ছেলেকে এই মেঠোপথে খুব কমই দেখাছে মনা। ছাদের রেলিং এর জন্য আর দেখা গেলানো, কোথায় যেন হারিয়ে গেল দৃষ্টি সীমানা থেকে । একটু পরেই বাসায় কলিং বেলের আওয়াজ । মনা নিচে নেমে গেল । দরজা খুলতেই দেখা গেল সেই মেঠোপথের লোকটিকে !

ভদ্রলোকঃ নমস্কার। এটা কি হরেণ চ্যাটার্জী কাকুর বাড়ি ।

মনাঃ    আজ্ঞে, হ্যাঁ । কিন্তু আপনি ?

ভদ্রলোকঃ আমি. . ., আমাকে আপনি চিনবেননা। আমি কাকুর কাছে এসেছি, কথা বলতে।

মনাঃ    ভিতরে আসুন । আপনি বসুন, আমি বাবাকে ডেকে দিচ্ছি ।

পিংকু ঘরের চারপাশটা লক্ষ্য করছিল। ড্রয়িংরুমটা বেশ সাজানো । বেশ কিছু বিদেশী বিজ্ঞানীদের ছবি দেয়ালে টানানো । স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু’র ছবিও আছে দেখছি । নিশ্চয়ই এগুলো হরেণ বাবুর সদিচ্ছা । উত্তরের দেয়ালটার বড় একটা অংশ জুড়ে ডিজিটাল ঘরি-সবুজ আলোয় ভেসে উঠেছে ০৪:৩০ বিকাল, ২৪/০৮/২০৪৫ ।

এরপর হাতসেলাই করা একটা কবিতার ফ্রেম চোখে পড়ল । কবিতা পড়তে যাবে এমন সময় হরেণ বাবুকে নিয়ে মনা রুমে ঢুকল ।

হরেণ বাবুঃ     পিংকু বাবু যে! অবশেষে এই অধম হরেনের বাসায় আসার সময় হল ।

নমষ্কার  জানিয়ে পিংকু বলল-

পিংকুঃ        কি যে বলেন কাকু । আপনাদের সাথে সময় কাটানো তো ভাগ্যের বিষয় । আমিতো আসার জন্য উদগ্রীব । থিয়েটার আর স্কুল নিয়ে পেরে উঠছিলাম না । আজ সকালে ক্লাশ শেষে মাথাটা একটু ধরে উঠল । ভাবলাম ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই ।

হরেণ বাবুঃ     এখন কেমন বোধ করছ বাবা ?

পিংকুঃ       এখন ভালো। ভাবলাম বিকেল বেলাটা আজ আপনার কাছে চলে আসি না কেন ?

হরেণ বাবুঃ     বেশ ভালোই করেছ । বিকেল  বেলাটা খুব একা একা লাগে । শুধু গল্প করতে মন চায় । খুব ভালো হল ।

মনাঃ    বাবা তোমরা গল্প কর, আমি তোমাদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করি ।

এই বলে মনা ভিতরে চলে গেল ।

হরেণ বাবুঃ     মা মরা মেয়েটাকে বুকে আগলে মানুষ করেছি বাবা । জন্মের তিন বছর পরই ওর মা মারা যায় । তারপর থেকে বাপ-মেয়ে এই দুজন মাত্র এই বাড়ির সদস্য । আর আছে একজন কাজের লোক।

পিংকুঃ       তা... কিসে পড়াশোনা করছে ।

হরেণ বাবুঃ     তারাকান্ত সরকারি কলেজ । উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষ । ওর বিজ্ঞান খুব পছন্দ । ওকে বললাম, “তোর যেটাই পছন্দ সেটাই পড়, মা ।”

পিংকুঃ       ঠিকই করেছেন ।

এর মধ্যে মনা চা নিয়ে চলে আসে ।

হরেনঃ মা মনা পরিচিত হও ওর সাথে । ও হল পিংকু, পিংকু এই হল আমার মা- মনা ।

মনাঃ    চায়ে কি কফি দিব, পিংকু বাবু ।

পিংকুঃ       হ্যা, বেশ ভালোই লাগে চা-কফি একসাথে খেতে । কাকুর মুখে শুনলাম- আপনি বিজ্ঞান অনেক পছন্দ করেন । আজকে চা খেতে খেতে হয়ে যাক না একটা বিজ্ঞান সন্ধ্যা ।

হরেণ বাবু ও মনা একসাথে সম্মতি জানালো ।

মনাঃ    আপনিই শুরু করুন না যেকোন একটা বিষয় নিয়ে।

পিংকুঃ       স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে দিয়েই শুরু করা যাক। রেডিও আবিষ্কার কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসুই করেছিল, মারকোনি নয় ।

মনাঃ    কি বলছেন? বইতে যে পড়লাম – মারকোনি !

হরেণ বাবুঃ     ঐটা ভুল পড়েছ মা । গোটা বিশ্ববাসীকে ভুল জানানো হয়েছে ।

পিংকুঃ       ঠিক বলেছেন কাকু । যে যন্ত্রের মাধ্যমে তার ছাড়াই তথ্য পাঠানো যায় সেটা হল ‘কোহেরার’ ।

এটা জগদীশ স্যার একাই বানিয়েছেন । কিন্তু এই ডিভাইসের পেটেন্ট নেননি । আর এই সু্যোগ কাজে লাগিয়ে মারকোনি একটু পরিবর্তন করে কোহেরার ব্যবহার করে রেডিও বানান এবং পেটেন্ট করে নেন নিজের নামে । তাই না কাকু ?

হরেণ বাবুঃ     ঠিক, একদম খাটি কথা । এই কথা সবাই জানেনা । সবাইকে জানানো উচিত আমাদেরই।

মনাঃ    এই সত্যটা এতদিন চাপা ছিল কেন ?

পিংকুঃ       বিদেশীদের কুটনীতির কারণে । সত্য চিরকাল চাপা থাকেনা মনা, থাকেনা ।

হরেণ বাবুঃ     আচ্ছা, আমি মোবাইলের রেডিয়েশন নিয়ে একটু বলব । অনেকে বলে যে মোবাইলের রেডিয়েশনে মানুষের ক্যান্সার হয় ।এটা আসলে একটা ভুল কথা । কোয়ান্টাম মেকানিক্সে প্রথমেই বলা হয় , কোন মেটাল থেকে ইলেকট্রন বের করতে হলে একটা ফোটনের মিনিমাম শক্তি দরকার হয়, যেটাকে বলা হয় ওয়ার্ক ফাংশন । বেশি শক্তি মান ফোটনের কম্পাঙ্ক বাড়া । আলোর তীব্রতা বেশি হলেই ফোটনের শক্তি বাড়েনা । এই যেমন ধর, একটা ৫০ কেজি পাথর উঠানোর শক্তি যদি আমার না থাকে, তাহলে কি আমি ঐ পাথরটি উঠাতে পারব ? পারবনা- ছুড়ে মারা তো দূরে কথা । ঠিক তেমনি – মোবাইলের রেডিয়েশনের শক্তি এত কম যে মানুষের একটা কোষকে সে ভাঙ্গতে পারে না । কিন্তু এক্স-রে এর অনেক শক্তি , ও যেদিকে যায় সব কোষ মেরে চলে যায় । তাই মোবাইল রেডিয়েশন দিয়ে মানুষের ক্যান্সার হয় কথাটা ভুল ।

পিংকুঃ       হুম্‌... দারুণতো !

মনাঃ    খুব সুন্দর ব্যাখ্যা বাবা । আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে । চিলের উড়তে না হয় পাখা লাগে , বিমানের পাখাগুলো কি কাজ করে ? অবশেষে হঠাত ব্যাখ্যাটা মাথায় চলে আসলো ।

হরেণ বাবু আর পিংকু অবাক হয়ে বলল – বলো,বলো...

মনাঃ    বিমানের পাখার উপরটা থাকে অসমতল, একটু উপরে উঠানো , আবার নিচের দিকে নামানো । আইডিয়াটা মনে হয় চিলের ডানা পর্যবেক্ষণ করে নেয়া । আর পাখার নিচের তলটা সমতল । এতে উপরের বাতাসটিকে তুলনামুলক বেশি পথ অতিক্রম করতে হয়, নিচের বাতাসের চেয়ে । এতে কি হয় জানো – পাখার উপরে থাকে কম চাপ, আর নীচে থাকে বেশি চাপ। এইটা জানা যায় আসলে বারনৌলির ইকুয়েশন থেকে । এতে করে নিচের বাতাস উপরে একটা উর্ধমুখী চাপ দেয় । এই চাপ এর কারণেই বিমান আকাশে উড়তে থাকে ।

পিংকুঃ       তোমারটা দারুণ । এসব কোথায় জেনেছ মনা ?

মনাঃ    আমি ইন্টারনেট থেকে পেয়েছি তথ্য গুলোর তারপর নিজের মত করে গুছিয়ে বলা, এইতো । দাড়ান আমি আপনাকে একটা জিনিস দেখাই । এই বলে ড্রয়ার থেকে একটা মোড়ানো কি যেন নিয়ে এসে দাড়ালো পিংকুর কাছে ।

পিংকুঃ       কি এটা ?

হরেণ বাবুঃ     আশ্চর্যজনক বস্তু!!, পিংকু , দেখোই না! আমার চেয়েও বড় জাদু দেখাবে আমার মেয়ে ।

মনাঃ    এটা একটা কম্পিউটার , সাধারণ নয় – কোয়ান্টাম কম্পিউটার । এটা তৈরি গ্রাফিন দিয়ে । গ্রাফিন হলো কার্বনের অন্য একটি রূপ । এটির মধ্যে দিয়ে কারেন্ট পাস করলে এটি গরম হয়না, এটিকে মুড়িয়ে রাখা যায় । তাই আমার এই কম্পিউটার টিকে মুড়িয়ে রাখা অসম্ভব কিছু না।

পিংকুঃ       সত্যিই তো তুমি আমাকে জাদু দেখালে । এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছেন কে ?

মনাঃ    আমদের দেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ২০২১ সালে এই কম্পিউটার প্রথম আবিষ্কার করেন ।

পিংকুঃ       আপনাদের এখানে অনেক ভালো সময় কাটলো ।আজ উঠি অন্য আরেক দিন আসব ।

মনাঃ    আসবেন কিন্তু ।

পিংকুঃ       অবশ্যই আসব । আমার মত অনেক পিংকু হরেণ চ্যাটার্জীর মত মানুষের সাথে দেখা করুক এটাই আমি চাই । এভাবেই বিজ্ঞান ভালোবেসে এগিয়ে নেব আমাদের বাংলাদেশকে।

মনাঃ    অদ্ভুত সুন্দর আপনার কথাগুলো , মনে থাকবে ।

রিমোভেবল ডি. এন. এ

দিনে দিনে বাড়ছে মানুষ ,বাড়ছে পৃথিবীর বয়স ।সেই সাথে বাড়ছে ইতিহাস,তত্ব,তথ্য,আর তথ্য ।কিন্তু আজ থেকে ২৫ হাজার বছর আগের এই পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবি পেয়েছে অনেক অনেক তথ্য ।তেলাপোকা থেকে ডাইনোসর...অ্যামিবা থেকে অত্যাধুনিক মানুষ ।ভু-পৃষ্টের নানা প্রান্তে নানা বিচিত্র সব পরিস্থিতি ।ভু-পৃষ্ঠের কঠিন                                                                                                                                                                      থেকে শুরু করে হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াসের উচ্চ তাপে এবং উত্তর মেরুর ঋনাত্বক তাপে ও রয়েছে জীবনের স্পন্ধনের রহস্য ।

এসবের সব কিছু ই সংগ্রহ করছে এই পৃথিবী ।কিন্তু এই সব তথ্য কোথায় সংগ্রহ করছে ...আর কেন ই বা সবাই শুধু তথ্য সংগ্রহ করে চলছে প্রতিনিয়ত?!

মিলিয়ন টেরা বাইট তথ্য নিয়ে ই ভু-পৃষ্ঠ থেকে গভীরে তৈরী হয়েছে "হোয়াইট বার্ন" ,"গ্রে-ডিফেন্স","ব্লাক রেডিয়ান্স" এর মত অনেক অনেক ডেটা সেন্টার।

এরা প্রতিনিয়ত ইনফরমেশন ক্যাল্কুলেট করে ব্রন্টুবাইট এ ।ভু-পৃষ্ঠের উপর যখন কিলো বাইট,মেগা ,গিঘা বাইট নিয়ে গননা করে তখন থেকে ই হাজার হাজার ব্রন্টুবাইট এর

মেমুরি নিয়ে হার্ডড্রাইভ সাজানো এসব সিস্টেম এ। তবে জেনে নেই যে ১০,০০,০০,০০,০০,০০০(দশ হাজার কোটি) টেরা বাইট এ ১ ব্রন্টু বাইট হয় ।

গ্রে ডিফেন্স অন্যতম শক্তিশালী ডেটা সেন্টার

ভূ-পৃষ্টের প্রায় প্রতি কিলোমিটার পর পর রয়েছে শক্তিশালি নিরাপত্তা ব্যাবস্থার  ইনফরমেশন কালেক্টর মডিঊল ।।

পাইয়োনিরার ফিনিক্স একজন উর্ধ্বত্বন কর্মকর্তা । তার মাথায় লাগানো রয়েছে সিগনাল জেনারেটর অ্যান্ড রিসিভার । গ্রে ডিফেন্স ডেটা সেন্টারে প্রবেশের সময় ফিনিক্স এর সিগনাল ইলেক্ত্রিক ওয়েভ এ

রুপান্তরিত হয় ।ইউনিক এসব নিরাপত্তা প্রটোকল ছাড়া ও রয়েছে মানব মস্তিষ্কের ইউটিলাইজড লগিক্যাল পোর্শন স্ক্যানার ।সব প্রাণী কিংবা সব মানুষ

তার মস্তিষ্কের ১০ ভাগ ও ব্যবহার করে নাহ । ব্রেইন এর বিবিধ ব্যবহার এর মাত্রা স্ক্যান করে প্রবেশ অনুমতি পায় অতি উচ্চ এই নিরাপত্তা সিস্টেম এ ।

 

পৃথিবির আদিকাল থেকে আগামী শতক এ কি বৈশিষ্টের প্রানী এসেছে ও আসবে তাদের বর্ণ ,ধর্ম,ইমোশন,বিভিন্ন রোগ,সহ ব্যাক্টেরিয়া,ভাইরাস, এর DNA এর ব্যাবচ্ছেদ ও বিবর্তনের ধাপ।

এখানে প্রতি মুহূর্তে আল্ট্রাসনিক সুপার অ্যাবাকাস যন্ত্রের সাহায্যে ১০০-১০০০টেরা Hz প্রসেসর প্রসেস করা হয় ।বিভিন্ন DNA গুনাগুন সংমিশ্রন করে তৈরী হচ্ছে

নতুন প্রজাতি ও বিভিন্ন রোগ জীবানুর রহস্য ।লিউকোমিয়া,ক্যান্সার,এইডস সহ নানা জিবানু অটোমেশন এর সাহায্যে কিউর হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।গ্রে ডিফেন্স ছাড়াও আরো রয়েছে হোয়াইট বার্ণ ,ও ব্লাক রেডিয়ান্স

সহ অনেক অনেক শক্তিশালি ডাটা সেন্টার ।পৃথিবির কেন্দ্রর কঠিন শিলার সাথে  কানেক্ট করে তৈরী এসব স্টোরেজ ভান্ডার । ভু-পৃষ্টের ১/৪ অংশ

যদি ইউরেনিয়াম এ পূর্ণ করে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরন করে তবে ধ্বংস হতে পারে এরা । হোয়াইট বার্ণ ,ব্লাক রেডিয়ান্স এ বিভিন্ন বস্তু,প্রানীর রেডিয়েশন,গন্ধ,জমা থাকে ।

রয়েছে অসংক্ষ বস্তুর ত্রিমাতৃক ছবি।

এসব  রেডিয়েশন ব্যবহার করে তৈরী করে মৃত্যু ঘটানু বা সহনীয় বেচে থাকার ইউনিক রেডিয়েশন মাত্রা ।

ডেটা সেন্টা্রের নিজস্ব রোবটিক ল্যাব এ ডেভেলপক্রিত এল টি ই ,লাই-ফাই এর মত টেকনলজি ব্যাবহার করে তৈরী করছে এক নেটওয়ার্ক যেখানে প্রতি সেকেন্ডে ২-৪ টেরা,এক্সা,জেটা বাইট পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার হয়ে থাকে ।

এত সব শক্তিশালি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানে না ভু-পৃষ্ঠের উপরের অনেক লোকজন ।

---------

কিন্তু নাহ জানে অন্তত একজন ।মি.রিকুভা ।সারা জীবন খোজ করে যাচ্ছেন এমন কিছু ।তিনি আজ বৃদ্ধ ।নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ।অর্জনের ঝুলিও কম নয়।

হোয়াইট বার্ণ এ প্রবেশের কিছু নমুনা ছক তৈরী করেছেন। রিকুভা র কাছে ভয়ংকর বেপার হচ্ছে প্রবেশদ্বার ।খোজে পাচ্ছেন না কোথাও । পেলেই বা কি তার ধারনা প্রবেশদ্বার এর হাফ কিলোমিটার রেঞ্জ ব্যাপি রয়েছে ইনফ্রারেড সিগনাল ,ও সিকিউরিটি রেডিয়েশন যা ধ্বংস করে দিবে বায়োলজিক্যাল টিস্যু ।

রিকুভার জ্ঞানের কথা তার প্রতিবেশী রিভান ,লোভা ও তাদের পিতা-মাতা ছাড়া কেউ জানে না ।তবে জ্ঞানী হিসেবে সবাই জানে ।রিভান একদিন বাসায় প্রবেশ ।

রিভান কে তার তেজস্ক্রিয় বস্তু সম্পর্কে আগ্রহের কারনে অনেক কিছু বলেন রিকুভা ।সে সুবাদে অনেক ভাল সম্পর্ক ।

আঙ্কেল কি করছেন?

---কিছু খোজার চেস্টা করছি ।

কি খোজছেন?

--তুই আজ যা জানতে চাইবি আজ তুকে সব ই বলব ।

রিকুভা আজ অনেক খুশি ,জীবনের একটা স্বাধ পূরন হতে যাচ্ছে ।

দীর্ঘ জীবনে গবেষনা করে আজ আংশিক সফল ।তৈরী করেছেন ইন ভিজিবল আর্টিফিশিয়াল DNA.তিনি এডেনিন ,থায়ামিন,ফসফেট সুগার এর সাথে

বিশেষভাবে তৈরী একটি রিমোভেবল ডিভাইস যুক্ত করেছেন ।যাতে DNA ফরমেট এ যেকোন ডেটা আপ্লোড করতে সক্ষম।DNA ফরমেটে র ডেটা যেকোন

প্রাণীর দেহে টান্সফার করতে পারলে ই সেই প্রাণীটি যে তথ্য রিকুভা দিবেন সে মতে কাজ করবে ।অর্থাৎ যদি রিমোভেবল মেমোরি তে কিভাবে গান গাইতে হয়

বা নাচতে হয় তা DNA ফরমেট এ ট্রান্সফার করা যায় তবে বাহন কারী প্রানী টি গান গাইতে ,নাচতে জানবে ।

।আর এই যুক্তি ব্যবহার করে হয়ত ---কিছু দিন পর সকল প্রাণী কে নিয়ন্ত্রন করা যাবে । হয়ত মশা আপনার গায়ে বেন বেন /প্যান প্যান গান না শুনিয়ে রক বা পপ মিউজিক শুনিয়ে রক্ত খাবে ,হাতি এসে বলবে---

ভাই আমার পিঠে এসে বসেন অনেক দিন জিমে যাই না ......

কিন্তু বিপ্তত্তি অন্য জায়গাতে DNA সাপোর্টেড ফরমেট এ তিনি ডেটা পাবেন কোথায়?

তার জন্য এখন কোন পথ ই নাই ।তবে যদি হোয়াইট বার্ণ ,গ্রে ডিফেন্স এর ডেটা সে পায় ...

 

------------

এদিকে রিভান পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে একটি মুড়ানো পেকেটে কি একটা বাসায় এনেছে । পরে তার বাবা মা খাবারের  সময় খুলে ফেলেছে পেকেট টি।একদিন পরে ই অজানা কি কারনে

দুজন ই অসুস্থ ।রিভান তার আংকেল রিকুভা কে সব বললে রিকুভা বুঝতে পারে ।নিরাপদ ভাবে ই ছিল পোলেনিয়াম টুকরো টি। খোলে ফেলে ই বিপত্তি এনেছে ।

কিন্তু উপায় ।ভেবে না পেয়ে উদাস মনে হারিয়ে আছে রিভান ও ,লোভা ।সেদিন পৃথিবী তে ঘটল এক বিরল ঘটনা ।প্লাজমা রেইন ।লন্ড-ভন্ড পৃথিবির

সব পাওয়ার স্টেশন ।ধ্বংস হয়ে গেসে অনেক স্থাপনা ।ইলেক্ট্রোমেগনেটিক ফোর্স ,প্লাজমা সব কিছু গুড়িয়ে দিয়েছে ।বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো,ধ্বংস স্তুপ ,ইউরেনিয়াম বিস্ফোরন.........

পাহাড়ি অঞ্চল রিকুভা ,রিভান, ও লোভা দের এলাকা ।পাহাড়ে লোভা ও রিভান । লোভার দেখানো দূরে একটা মরিচিকার মত জিনিষ টা দেখতে কিছুক্ষন পর লুটিয়ে পরল রিভান ।

ঊচু পাহাড়ে অজ্ঞান রিভান কে ধরতে পারল না লোভা ।অচেতন হয়ে খুব দ্রুত বেগে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে... মরিচিকার মত গর্ত টি তে গড়িয়ে পরে গেল অচেতন রিভান ।

কিছুক্ষন পর বিকট শব্দে সাউন্ড ও বার্তা র ধ্বনি । সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না লোভা । মরিচিকার মত গর্তটি থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে ।

অল্প কিছুক্ষন পর ই থেমে গেলো আলোর ঝলকানি । ---সিসস্টেম রিবুটেড --,নিউ ইউজার এডেড...এরকম কিছু শব্দ ভেসে এল লোভার কানে --সাথে সাথে ধাক্কা খেয়ে শুন্যে ভেসে এল রিভান ।

লোভা নিজের ছানা ভড়া চোখ বিশ্বাস করতে পারছেন নাহ ।

 

লোভা দ্রুত অসুস্থ ভাই কে সাথে পেয়ে বাসার পথে নিয়ে চলছে...

রিকুভার  বাড়ির সামনে ।

রিকুভার তাদের দেখতে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে সেবা করে একটু সুস্থ হলে জানতে চায় কি ভাবে এরকম টি হল ।

লোভা তাকে সব বলল ।হাটতে হাটতে যখন রিকুভার ল্যাব এর সামনে তখন ই এলার্ম ।ভেরিয়েবল DNA কি যেন সংকেত দিচ্ছে সাথে সাথে শক্তিশালি সিগনাল

রিসিভ করতে শুরু করল ।রিকুভা চমকিত কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না ।বার বার রিভান কে বাসা থেকে দূরে নিয়ে আবার যখন কাছে আসে

তখন সিগনাল স্ত্রেংন্থ বৃদ্ধি পায় , সে যখন ভাল ভাবে সব কিছু লোভার কাছ থেকে শুনল ।সে অবাক চোখে লোভাকে দেখে ।রিভান চিন্তিত ।

কি বুজেছেন আঙ্কেল?

রিভান,লোভা জানতে চায় আংকেল রিকুভা র কাছে ।

রিকুভা কোন একটা বিষয় চিন্তা করতে থাকলে  রিভান বুঝতে পারে সে কোন কিছু তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে ।

কিন্তু বিষয় টা রিভান ও লোভা র কাছে গুরুত্বপুর্ণ নয় ।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে । বাবা মা দুজন ই অত্যান্ত অসুস্থ্য ।তেজস্ক্রিয় তার মাত্রা

প্রচন্ড তাই মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসছে ভেবে নিজেকে অসহায় লাগে রিভানের ।তার আগ্রেহের তেজস্ক্রিয়তাই পিতা মাতা হীন হবার কারন হয়ে দাড়িয়েছে ।

সে রাস্তায় বেড়োতেই রিকুভা তার সাথে দেখা করার জন্য এগিয়ে আসছে......

বাসায় নিয়ে গেল অনেক টা জোর করে ই -----

---প্লাজমা রেইন এর কারনে কোন একটি ডেটা সেন্টার ওপেন সার্কিট হয়ে গিয়েছিল ।তাই সকল নেটওয়ার্ক ডিস্কানেক্টেড হয়ে গিয়েছিলো ।রিভানের দেহের মধ্য দিয়ে ডেটা টান্সফার হয়েছে ।তাই পুরূ সিস্টেম রিবুট হয়েছে এবং

রিভান একজন ইউজার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ।কিন্তু কিভাবে  হল তা মিলছে না রিকুভার কাছে ।কারন বায়োলজিক্যাল টিস্যু সেখানে ক্ষতিতে রূপ নেইয়ার কথা ।

আসলে তাই--যখন রিভান অচেতন হয়ে পাহাড়ে গরিয়ে পরে তখন রেডিয়েশন এক্সেপ্টেবল রেঞ্জে চলে যায় ।ফলে যখন সিস্টেম একটিভ হয় রিভান কে তাদের ইউজার হিসেবে প্রাইমারি অটোমেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করে ...

রিকুভা আজ তাকে অনেক কিছু ই বলতে চাচ্ছে কিন্তু রিভান শুনতে চাচ্ছে নাহ ।কারন বাড়িতে তার বাবা মা পোলেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তায় মৃত্য পথে...

দ্রুত বাসায় গিয়ে বাবা মা র করুন চেহেরা দেখে আর থাকতে পারছে না  রিভান ।বাসা থেকে আবার রিকুভা র কাছে ।কিন্তু এবার রিকুভা এক ফন্দি এটে বসে আছে ।

সে রিভান কে কাজে লাগাতে চায় ।

সে আবার রিভান কে সেখানে যেতে ।রিভান বাসায় এলে রিকুভা বিভিন্ন কৌশলে তাকে বসে আনার চেস্টা করতে থাকে ।

সে রিভান কে পাহাড়ে নিয়ে আসে । মরিচিকার মত সেই গর্তে আবার প্রবেশ করার জন্ন রিভান কে বলে ।কিন্তু রিভান কেন যাবে ?

এক সময় রিকুভা রিভান কে বলে যদি সে ডেটা সেন্টার থেকে DNA এর সকল তথ্য তাকে এনে দেয় তাহলে তার বাবা মা কে বাচানো যাবে ।

রিকুভা ব্লাক রেডিয়ান্স এর ইউনিক রেডিয়েশন দিয়ে dna তে আপলোড করবে ।এবং সে ডেটা ইনফ্রারেড রেডিয়েশন করে তার বাবা মায়ের শরীরে প্রবেশ করাতে পারলে বেচে যাবেন ।অন্য দিকে যদি মি.রিকুভা ডেটা সেন্টার থেকে প্রাপ্ত এসব ইনফরমেশন  ব্যাবহার করে বিভিন্ন অন্যায় ,অত্যাচার ,এমন কি সকল প্রানীদের দেহে বিষাক্ত ভাইরাস

বা  ব্যাকটেরিয়ার জিবানু প্রবেশ করায় তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে মানব তথা পৃথিবি ।তাই   রিভান চিন্তা করছে তার চেয়ে নিজের জীবন ও বাবা মা কে বিদায় দেয়া ই মঙ্গল ।

কিন্তু রিভানের সারা জীবনের শখ সে যদি পালটে দিতে পারত সমাজের অন্যায় ,দেশের বিশৃংখল ও বিকৃত মস্তিষ্কের রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সঠিক ও ন্যায় এর রাজনীতি তে ফিরে আনতে ।

কিন্তু ----রিভানের শখ কোন টা বাচাবে ।

Md.Majharul islam

Dept.: Electrical and Electronic engineering

Semester: ½(1st year 2nd semester)

Mobile:  01813598254

Email: majharul30@gmail.com

রহিম সাহেবের খুব সাধারন একদিন

১.
সফিপুর হাইস্কুলের গনিতের শিক্ষক রহিম সাহেবের পেটের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে। এই ব্যাথাটা অন্যান্য দিনের মত না, কেমন যেন নাড়িভুড়ি মোচড় দিয়ে সব ছিড়ে আসতে চাইছে! কাঁথাটা ভালমত মুড়ি দিয়ে আর কিছুক্ষন শুয়ে থাকতে পারলে বোধকরি ব্যাথাটা চলে যেত।
রহিম সাহেব তাঁর মনের এ কুবুদ্ধিটাকে পাত্তা দিলেন না। তাঁর শরীরের কোন আর্তনাদই তাঁর কাছে তেমন একটা পাত্তা পায় না! ব্যাথাটার কথাই ধরা যাক না কেন, এই ব্যাথাটা তাঁর প্রথম উঠে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার মাঝখানে। পরদিন পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। বেশি রাত করে পড়ালেখা করাটা কখনই তাঁর অভ্যাসের মধ্যে পরে না। কিন্তু কেন যেন সেবার তাঁর সবকিছু উলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। রাত আটটার দিকে তিনি আবিস্কার করলেন, সবে মাত্র তিনটা অধ্যায় শেষ করেছেন তিনি! ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে পাগলের মত পড়া আরম্ভ করলেন তিনি। পড়া প্রায় গুছিয়ে এনেছেন, ঠিক সেই সময়ে তাঁর ব্যাথাটা প্রথমবারের মত উঠে। যেন কেউ একজন ছুরি দিয়ে তাঁর পেট কেটে আবার জোড়া লাগাচ্ছে! প্রায় মধ্যরাতের দিকে যখন তাঁর মা তাকে খাবার খেতে ডাকলেন, বন্ধ দরজার ওপাশে রহিম তখন ব্যাথায় মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে! উঠে গিয়ে দরজা খুলবার মত শক্তি তাঁর থাকার প্রশ্নই আসে না! ছেলের এমন দরজা না খুল্বার মতন আজব কীর্তিকলাপে মা বেশ অভ্যস্ত, তিনি খুব একটা মাথা ঘামালেন না। উঠান পেরিয়ে ঘরের দিকে এগুলেন, মেঘ গর্জন করছে আকাশে, চোখে ঘুম ঘুম ভাব! সেই পেটের ব্যাথাকে উপেক্ষা করে রহিম সাহেব ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মাত্র তিন মার্কের জন্য লেটার মিস হয় তাঁর। পরীক্ষা হলের মাঝখানে ব্যাথাটা তাঁর আরেকবার উঠেছিল। পাক্কা দশ মিনিট বসে ছিলেন তিনি! সেই দশ মিনিট বসে থাকতে না হলে হয়ত আজ তাঁর জীবনের কাহিনী অন্যভাবে লেখা হত, কে জানে.....রহিম সাহেব তাঁর মাথার এসব বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে জোর করে ঠেলে দূরে সরিয়ে হাতমুখ ধুতে কলের পারের দিকে এগুলেন, সফিপুর হাইস্কুলের গনিতের শিক্ষকের এমন আজগুবি চিন্তা করাটা বেমানান, পৃথিবীর সবকিছুই যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে, আবেগ আবার কি? ভাবতে ভাবতে টিউবওয়েলে একটা চাপ দিতেই মেজাজটা বিগড়ে গেল রহিম সাহেবের! কলে পানি উঠছে না, ফুটো দিয়ে পানি ঢালতে হবে। কেয়ারটেকার ফিরোজকে কতবার তিনি বলেছেন টিউবওয়েলটা ঠিক করাতে, ছোকরার গায়ে কোন কথাই লাগে না, একদম বাইম মাছ স্বভাবের, খালি পিছলায় বের হয়ে যায়। দাড়া!! মনে মনে ভাবলেন তিনি, এইবার শালার হাতে ছাই মেখে নামবো, দেখি তোর বাইম মাছগিরি কত দূর যায়!! কোনমতে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়েই ছাতাটা বগলদাবা করে স্কুলের পথে রওয়ানা দিলেন তিনি। ক্লাসে পৌছাতেই তিনি দেখেন ঘড়ির কাটায় ঠিক সাতটা বেজে আটান্ন মিনিট। দিনে প্রথমবারের মত একটা ভালোলাগায় ভরে গেল  তাঁর মনটা। আজ অবধি কোনদিন ক্লাসে এক মিনিট দেরি করে ঢুকেছেন তিনি, তাঁর ঘোর নিন্দুকও এমন কথা বলতে পারবে না!!

 

 

২.
নয়নের মাথায় জোরেসরে একটা গাট্টু মারতে যাবে ফরিদ, ঠিক এমন সময়ে সময়ে চোখের কোণ দিয়ে সে দেখতে পেল রহিম স্যার ক্লাসে ঢুকছেন। সোজা হয়ে বসতে বসতে ফরিদ ভাবল, শালা বুইড়া দিল মজাটা নষ্ট কইরা!
:ওই ফরিদ, কারে বুইরা কস? কানের পাশে ফিসফিস শুনতে পেয়ে পিলে চমকে উঠল ফরিদ। এত স্যারের গলা! কিন্তু স্যার কিভাবে তাঁর মনের ভেতরের কথা শুনবে! মনে মনে আরও দুয়েকটা গালি দিতে যাবে, ঠিক এই সময়ে ঠাস করে এক চড় খেল সে। কিন্তু আসে পাশে চড় দেবার মত কেউ নাই, শুধু স্যার দরজার কাছে থেকে তাকিয়ে আছেন। ভয়ে দাতে দাঁত লাগাটা বাকি রইল ওর।

রহিম সাহেব ক্লাসে ঢুকে পেছনে তাকাতেই তাঁর মেজাজটা আবার গেল চরে। দুইটা কলম নিয়ে এমন অনর্থক খেলা খেলবার মানে তিনি বুঝেন না, নামও দিয়েছে একখান, পেন ফাইট!! কেন রে ভাই? ওই পেণ দিয়েই কি সুন্দর পিথাগোরাসের উপপাদ্যটার প্রমাণ একটু লেখা যায়, যায় না? আর এই ফরিদ ছেলেটাকে তো দেখেলেই মনে হয় দেই এক থাপ্পড়!এই ভাবতেই ফরিদের দিকে তাকালেন তিনি। ছেলেটা কেমন যেন একটু কেপে উঠে চুপ করে গেল! সেই চিন্তা বাদ দিয়ে বইটা হাতে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে আগালেন তিনি, নতুন একটা উপপাদ্য পরাবেন আজ। প্রিয় গনিত বইটাও বিরক্তিকর লাগছে কেন আজ?

3. কোনমতে প্রথম দুই পিরিয়ডের ক্লাস শেষ করে টিচার্স রুমে গিয়ে বসলেন রহিম সাহেব। একটু পরেই দরজায় উকি দিলেন বাংলার শিক্ষক আক্তার আলী। মুখ ভর্তি পানের পিক নিয়ে রহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলানো একটা হাসি দিতেই রহিম সাহেবের মেজাজটা আবার খারাপ হতে লাগল। এই লোক আবার বকবকানি শুরু করবে, যদি এর গলাটা কেউ চেপে ধরত? কিন্তু এ কি! আক্তার সাহেব এমন করছেন কেন!!
:স্যার, স্যার! কি হল স্যার? ও আক্তার স্যার! ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আক্তার আলী তাকিয়ে আছেন রহিম সাহেবের দিকে। তিনি অনুভব করছেন, কেউ একজন তাঁর গলা চেপে ধরেছে, কিন্তু ভয়ের বিষয় হল চোখে দেখা যাচ্ছে না সামনে কাউকে!!
হেডস্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসা যাবেন, ঠিক করলেন রহিম সাহেব।

৪.সেইরাতে ফরিদ তাঁর জীবনের সবচাইতে সাহসী কাজটা করল। সে জানেনা কেন, তবে মধ্যরাতে সে রহিম স্যারের বাসার দিকে রওয়ানা দিল। গ্রামের এক কোণে মোটামুটি ভুতুড়ে এক পোড়োবাড়ি। আজ সাড়া রাস্তায় নেই কোন কুকুর কিংবা ঝিঝি পোকার ডাক, কেন কে জানে! বাড়ির ভেতর থেকে কেমন একটা অদ্ভুত সাদাভ আলো আসছে। সাথে চাপা গোঙানির আওয়াজ, উঠানে চাপকলে কেউ না থাকলেও সেখান থেকে অনবরত পানি পরেই যাচ্ছে!
:স্যার, ও স্যার। বাড়িত আছেন?
দরজা ধাক্কা দিতেই প্রচণ্ড আলোতে চোখ ঝলসে গেল ফরিদের। অবাক বিস্ময়ে সে রহিম স্যারকে আবিস্কার করল ঘরের চালের খুব কাছে!! উড়ন্ত অবস্থায়, মুখে একটা রহস্যময় হাসি!! প্রচণ্ড মানসিক ধাক্কায় জ্ঞান হারাল ফরিদ।

৫.
প্রতিরাতে ঘরে ফিরে দুটো চাল ফুটিয়ে খাবার অভ্যাস রহিম সাহেবের। আজ খিদে নেই, তাই রুটিনের ব্যাতয় ঘটল। দিনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনাগুলো নিয়ে তিনি বড্ড চিন্তিত। প্রথমে ফরিদ, এর পরে আক্তার স্যার। বিকালে বাড়ি এসে পানি খেতে চাইলেন, চাপকলে অনবরত পানি পরে জেতে লাগল!! আজ যেন তাঁর ইচ্ছাপুরনের দিন। ভাবতে ভাবতে বিছানার দিকে এগুলেন তিনি. ঘরের বাতি নেভানো হয় নি। মনে হল, যদি উরে গিয়ে বাতিটা বন্ধ করা যেত! মুহূর্ত পরেই তিনি তিনি নিচে তাকিয়ে দেখতে পেলেন তিনি শূন্যে ভাসছেন! ঠিক এই মুহূর্তে তাঁর ব্যাথাটা শুরু হল। তীব্র ব্যাথায় জ্ঞান হারাবার পূর্বে তিনি চোখের কোন দিয়ে দেখতে পেলেন ফরিদকে। ফরিদ!!! ও এইখানে কি করছে? জ্ঞান হারাবার পূর্বে এই ছিল তাঁর শেষ চিন্তা!

৬.
ঘরের ভেতর আবছা নীলাভ একটা আলো। চোখ খুলতেই রহিম সাহেব দেখতে পেলেন পাতলা পলিথিনের মত কিছু একটা দিয়ে মোড়ানো তিনি, চিৎ হয়ে সুয়ে আছেন। ঘরজুড়ে কেমন একটা তীব্র গন্ধ। কোথায় তিনি? তিনি কি মারা গেলেন? মরবার পরে কি তাহলে এরকম?
: না, আপনি মরেন নি, এটা মৃত্যু পরবর্তী কিছু নয়।
চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকালেন রহিম সাহেব।
:রহিম সাহেব, বৃথা চেষ্টা করবেন না, আমাদেরকে আপনি দেখতে পারবেন না!
:আপনারা... কে আপনারা?
:আমরা ক্রি, টি-৬ গ্রহের বাসিন্দা বলতে পারেন। পৃথিবী থেকে ৬ ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে আপনি।
কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি, আমার হ্যালুসেলিশন নাকি?
:না! এটা বাস্তব, হ্যালুসিলেশন না। হ্যাঁ, আমরা আপনার মনের কথা জানতে পারি।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রহিম সাহেব প্রশ্ন করে বসলেন, :আপনাদের দেখা যায় না কেন?
: পৃথিবীর মানুষ ত্রিমাত্রিক। আমরা বহুমাত্রিক, আমাদেরকে আপনি কোনোভাবেই দেখতে পারবেন না রহিম সাহেব।
:ও, আচ্ছা! আপন মনেই মাথা ঝাকালেন রহিম সাহেব। তাহলে... তাহলে... আপনি কই?
: আমি? আমরা? হাহ হা! বলতে পারেন আমরা সবখানে, আপনার শ্বাস নেবার বাতাস হতে আপনার লোমকূপ, সবখানেই আমরা আছি!
: কিন্তু... কিন্তু, আমি এখানে কেন?
: আমরা কয়েকশত বছরে পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করি। সবচাইতে বুদ্ধিমান মানুষগুলোকে বেছে নেই আমরা। কিন্তু আমাদের সাথে পৃথিবীর সবচাইতে বুদ্ধিমান মানুষও যোগাযোগ করতে পারে না। মাঝে মধ্যেই তারা অপ্রকিতস্থ হয়ে পরে। আপনিই যেমন ভুগেছেন পেটের ব্যাথায়!!
:কিন্তু, আমাদের সাথে যোগাযোগের কি দরকার?
:আমাদের টি-সিক্স গ্রহের আছে কয়েকশত ট্রিলিয়ন বছরের অভিজ্ঞতা, তবে সময়ের সাথে সবকিছুই ধ্বংস হতে হয়, আমাদের আয়ু আছে খুব বেশি হলে আর হাজার খানেক বছর। কিন্তু আমাদের এত জ্ঞান বিজ্ঞান কি আমাদের সাথেই হারিয়ে যাবে? তা কি হতে দেয়া যায়? আবার সঠিক হাতে না পরলে, এই জ্ঞান হয়ে উঠবে ভয়ংকর! অনেক গ্যালাক্সি ঘুরে আমাদের মনে হয়েছে পৃথিবীর মানুষই পারে আমাদের এই জ্ঞানকে ব্যাবহার করতে। তবে তারা এখনো প্রস্তুত নয় এজন্য, হয়ত আর কয়েক বিলিওন বছর পরে! তাই আমরা পৃথিবীর কোটি কোটি বুদ্ধিমান মানুষদের মাঝে আমাদের জ্ঞান ছরিয়ে দিচ্ছি। এ জ্ঞান শত কোটি মস্তিষ্কে জমা থাকবে। রহিম সাহেব!
: জি!
: আপনার ঘুমানোর সময় হয়েছে, আগামি কয়েক কোটি বছর আপনি ঘুমাবেন। এরপরে যখন দরকার হবে আপনাদের সবাইকে জাগিয়ে তোলা হবে, তখন সবাই মিলে জ্ঞানকে আরও বাড়াবেন। কি পারবেন না?
: জি, পারব। বলতেই গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলেন রহিম সাহেব।

৭.
প্রচণ্ড পেটের ব্যাথায় জ্ঞান ফিরল ফরিদের। এই ব্যাথার মধ্যেই সে নিজেকে দেখতে পেল রহিম স্যার এর বাসায়। এইখানে সে কখন আসল? কিভাবে আসল? কি জানি!! স্যার দেখবার আগে আগেই কেটে পড়া উচিত। প্রচণ্ড পেটের ব্যাথা নিয়ে সে দৌড়াতে লাগলো, রহিম সাহেবের বাড়ি থেকে দূরে... আরও দূরে...... তাঁর পেটের ব্যাথাটা বেরেই চলেছে...

"শেষ"

নামঃ শাহরিয়ার রহমান
রেজিস্ট্রেশন নাম্বারঃ ২০১১৩৩৭০১৯
ডিপার্টমেন্টঃ ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলোজি
সেল ফোনঃ ০১৭৬৭২৫৮৫৫২

Tuesday, December 10, 2013

ফোর্স কন্ট্রোলার

রাত দশটা । পূর্নিমা রাত হলেও চাদটা যথেষ্ঠ কাল দেখাচ্ছে । মনে হয় আকাশে মেঘ করেছে । তবে আকতার সাহেবের মন আজ যথেষ্ঠ ভাল। যদিও ভাল থাকার কথা ছিল না । আকতার সাহেব বিজ্ঞানী হলেও প্রকৃতির সাথে উনার মনের একটা সংযোগ আছে এবং উনার কাছে  মনে হয় এটাই স্বাভাবিক । তবে মনটা ভাল থাকার স্বাভাবিক একটা  কারন হল বিজ্ঞানের অন্যতম অজানা আগ্রহ চারটি বলের একীভূতক্ষেত্র নিয়ে তার গবেষনার অগ্রগতি প্রায় শেষের দিকে। অনেক দিনের সাধনা ও ত্যাগ তিতিক্ষার ফলসরূপ আজ তিনি অধরাকে ধরতে পেরেছেন। ডাটা উপাত্তের সবকাজ কর্ম শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন।

হঠাৎ তার চোখে পড়ল ল্যাবরেটারির লাইট জ্বলছে। তিনি ল্যাবে ঢুকলেন,

:কি খবর অমিত এখনো বাসায় যাও নি?

:না স্যার ।আমাদের ফোর্সকার্ব এর ৭১৯ ক্ষেত্রের মান বের করতে পারছি না?

:কেন?

:কারন স্যার ফিবোনাচি ধারার ২৭ তম পদের মানের জন্য গোল্ডেন রেশিওটা মনে করতে পারছি না।

আকতার সাহেব কিছুটা আশ্চর্য হলেন, এতোবড় একটা গবেষনা সামান্য একটা মানের জন্য সাময়িক বন্ধ হয়ে আছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন জ্ঞান ও তথ্যের মধ্যে পার্থক্য আমদের সামনে অনেকটা প্রকট।

:আচ্ছা লিখ, ১.৬১৮০৩৩৯৮৯………

আকতার সাহেব মানটি বলে চলে গেলেন। ইদানিং তার ও বেশী মান টান মনে থাকে না। আজ ১৮ বৎসর ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে শিক্ষকতা করছেন। সবকিছুকে জয় করলেও বার্ধক্যকে মানুষ এখনো জয় করতে পারেনি।

অমিত ছেলেটি তার রির্চাস সহযোগী। দারুন বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী কিন্তু ভীতু।

বাসায় আসার পর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে যাবেন হঠাৎ আকতার সাহেবের মনে পড়ল তিনি তার রিচার্স ডাইরিটি তার অফিসে ফেলে এসেছেন।নিজের প্রতি নিজেরই রাগ উঠছে।এই ধরনের ভুলে কাউকে দোষারূপ করা যায় না। তাই আবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। টিচার্স কোয়ার্টারে থাকেন। প্রায়ই অনেক রাত করে বাসায় ফেরেন। তবে এত রাতে ক্যাম্পাসে আসা হয়নি কোনদিন। আশ্চর্য রকম নির্জনতা চারদিকে।

রাত প্রায় একটা বাজে।

ডিপার্টমেন্টে ঢুকে অফিস থেকে ডাইরি নিয়ে বের হওয়ার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলেন ল্যবরেটারি থেকে নীলাভ একটি ক্ষুদ্র তরঙ্গের আলোক রশ্নি নির্গত হচ্ছে। তিনি আরও অবাক হলেন কারন নির্গত আলোক তরঙ্গের  ধর্ম আমাদের এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তরঙ্গের সাথে  কোন মিল নেই।

অবাক করা মত এতগুলো ঘটনা এত দ্রুত এক সাথে ঘটে যেতে পারে তা তিনি কোনদিন কল্পনাও করেননী।কোন ঘটনাই তার কাছে অবাক করার মত মনে হয় না। তবে এই মুহূর্তের ঘটনাগুলো শুধু চমকিত না রীতিমত ভয়াভয়। শিরা দিয়ে যেন অ্যড্রেনালিনের স্রোত বয়ে গেল। তিনি কম্পিত পদে ল্যাবরেটারিতে ঢুকলেন। তিনি ল্যাবরেটারির এককোণে জড়োসড়ো হয়ে বসা অমিত নামের ছেলেটিকে আবিষ্কার করলেন। চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের চাপ। তার পর তিনি তার কম্পিউটারের দিকে তাকালেন সেখানে কিছু তরঙ্গকার লেখা ভেসে উঠছে।

:কি ব্যপার অমিত।

কোন একটা আওয়াজ শুনে ভয় যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে গেল। পরে আকতার সাহেবকে দেখে কিছুটা ভরসা পেল। বুঝতে পারল মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না।

:স্যার আমাদের গবেষনায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলো সুপার কন্ডাক্ট্রর কেবলের মাধ্যমে কম্পিউটারে ইনপুট করার পর…

এক্ টানে এই কথাগুলো বলার পর যে কাউকেই থামতে হয়। কিন্তু অমিত ভয় ও ভরসার মধ্যবর্তী অবস্থানে আর কথা বলতে পারল না।

আকতার সাহেব ধীরে ধীরে কম্পিউটারের দিকে এগিয়ে গেলেন। সমস্ত ল্যবরেটারিটা যেন অন্য একটা জগত। কোন একটা অজানা কারনে তিনি নিজেকে এই মুহূর্তে এই জগতের বাসিন্দা ভাবতে পারছেন না।কিছু কিছু সময় মানুষের এই অদ্ভূত অনুভূতি গুলোর ব্যাখা পাওয়া যায় না। তারপর তিনি তার নিজের আবিস্কৃত ন্যানো ওয়েভ কনভার্টার দিয়ে মহাজাগতিক তরঙ্গগুলো বিশ্লেষন করতে লাগলেন। যতই বিশ্লেষন করছেন তার মুখ ততই নীলাভ হতে লাগল। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য এই মুহূর্তে তার মুখের রঙ লাল কিংবা ফ্যাকাসে সাদা হওয়ার কথা ছিল।

তিনি দেখতে পেলেন বিশ্বনিয়ন্ত্রক বল চারটি আসলে একটি সংকেত মাত্র। এটি বলের একীভূত ক্ষেত্র থেকেও বেশি কোন কিছু। যার জন্য তিনি নিজেও প্রস্তুত ছিলেন না। আকতার সাহেবের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো পরাবাস্তব জগতের সেই বুদ্ধিমান প্রানিদের ক্রীয়াকলাপ। যারা চারটি বলের মাধ্যমে এতদিন ধরে আমাদের নিয়ন্ত্রন করে আসছে। যাদের অস্তিত্ত্ব খুজতে গিয়েই আমরা হয়েছি ধার্মিক কিংবা বিজ্ঞানী। তিনি আরও অবাক হলেন একটি তথ্য বিশ্লেষন করতে গিয়ে, সেই তথ্যে বলা হচ্ছে মানব জাতি আজ থেকে দুই হাজার বৎসর আগে ১৯৬৭ খ্রীঃ তাদের উপস্থিতি জানিয়ে মহাবিশ্বে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা আমরা পেয়েছি যা আমাদের নিয়ন্ত্রিত তড়িৎ ও চৌম্বক বলের একীভবনের ফলে সম্বব হয়েছিল। যে দিন চারটি বলের একীভূত ক্ষেত্র তোমাদের জ্ঞানে ধরা পরবে সে দিন আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।

আকতার সাহেব তার পকেটে থাকা ডাইরীতে হাত দিতে গিয়ে দেখলেন সেটি মাটিতে পড়ে আছে। তিনি তার শারীরিক অস্তিত্ব খুজে পেলেন না। তিনি খানিকটা ভয়পেয়ে গেলেন। আসলে খানিকটা না একজন মানুষের অস্তিত্ব নষ্ঠ হয়ে গেলে যতটা ভয় পাওয়া উচিত ঠিক ততটাই পেয়েছেন। নিজেকে কোনমতে সামাল দিলেন। তাকে প্রকৃত বিষয়টা জানতে হবে। তাই আবার কাজে মনোনিবেশ করলেন।

কম্পিউটার স্ক্রিন এর নিচের দিকের একটি অপশন বিশ্লেষন করে দেখলেন সেখানে লেখা তুমি কি আমাদের সাথে যোগযোগ করতে চাও “ঊড্রো আমান রয়”।

“এই নামে কি আমকে সম্বোধন করা হল” মনে মনে ভাবলেন আকতার সাহেব।

“তাহলে কি পরাবাস্তব জগতে সবারই আলাদা আলাদা নাম আছে এবং আমরা কি ওই জগতের প্রানিদের অস্তিত্ব মাত্র। ঠিক যেমন ফেসবুকে আমাদের এক আলাদা অস্তিত্ব আছে ওই অস্তিত্বের আবার আলাদা নাম থাকে, আলাদা জগত থাকে, হয়তোবা আলাদা সমাজও তাকে, যেটা আমারা নিয়ন্ত্রন করি। আমাদের এই অস্তিত্ব বিলিনের সাথে সাথে ওই অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায়। হয়তোবা আমাদের পরাবাস্তবের অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার সাথে সাথে আমরাও বিলিন হয়ে যাই। এই ভাবেই চলতে তাকে প্যারালাল ইউনিভার্স”।

এত দ্রুত এত গুলো চিন্তা মাথায় আসে কিভাবে এর ব্যখা আপাতত জানা নেই। এই ব্যখার প্রয়োজন কিংবা সময় দুটুই এখন নেই।  এইসব হাবিজিবি চিন্তা করতে করতে হঠাৎ তিনি একটি নীলাভ সবুজ তরঙ্গ লক্ষ্য করলেন। সেটি বিশ্লেষন করার সাথে সাথে আকতার সাহেব চিৎকার করে উঠলেন। সেখানে লিখা ছিল “রয় তুমি এতক্ষন যা চিন্তা করেছিলে তা ছিল এই জগতের প্রধান ও প্রকৃত জ্ঞান তুমি তা অর্জন করে ফেলেছ তাই তোমাকে জ্ঞানের উন্নত জগতে যেতে হবে”। এই প্রথম তিনি ওয়েভ কলাপ্স থিওরী এর ব্যবহারিক প্রমান পেলেন।

এই অন্তিম মুহূর্তেও আকতার সাহেবের খুব হাসি পাচ্ছিল কারন ফেসবুকে তার এক বন্ধুর নাম ছিল “আমি ভালা মানুষ”।

 

সকালের সূর্য প্রতিদিনের মতো আজও প্রখর তেজ নিয়ে পূর্ব আকাশে উঠেছে। প্রথমেই শিশিরের ফোটায় সে তার নিজের চেয়ারাটা দেখে নিয়ে যাত্রা শুরূ করে অন্তিমের উদ্দ্যেশে। আজ খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম “শাবিপ্রবির পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিশিষ্ঠ পদার্থ বিজ্ঞানী ডাঃ মুহম্মদ আকতারুল আলমের রহস্যময় মৃত্যু, তার সহযোগী বাক প্রতিবন্ধি ও পাগলপ্রায় অবস্থা”।

কিন্তু ইতি মধ্যে আকতার সাহেবের নির্দেশ মতো তার সহযোগী অমিতের হাতে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ডাইরী বাংলাদেশ বিজ্ঞান সংস্থার হাতে গিয়ে পৌছেছে।

ডাইরীর শেষ লাইন পড়ে একজন বিজ্ঞানীর কপালে কয়েকটা ভাজ দেখা দেয়, লাইনটি ছিল

“সৃষ্ঠির আদিতে যেমন শূন্য থেকে পদার্থ ও প্রতিপদার্থের সৃষ্ঠি হয়েছিল তেমনি মহাজাগতিক প্রতিপদার্থের স্পর্শে আমার দেহ নষ্ট হয়ে যায়, পর্দাথ আবার শক্তিতে রূপান্তরিত হয়(ওয়েভ কলাপ্স)”

বিজ্ঞানীটির কপালের ভাজে যে কথাটি ফুটে উঠেছিল “তাহলে কি মৃত্যুর পরও…”

এরশাদের-লুসিকা-তত্ত্ব

এরশাদ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ে। কম্পিউটার সাইন্সে পড়ার পরও সে কোন কাজেই আনন্দ খুজে পায় না। সে জীবনকে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু জীবন তাতে সায় দেয় না। দারিদ্রতা আর অলসতা ওর সবচেয়ে বড় বাধা। বড় কিছু হবার স্বপ্ন থাকলেও সে তার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না। যখন দেখে তার ওই স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়, তখন সে নতুন স্বপ্ন দেখতে থাকে। কোন স্বপ্নই তার স্থায়ী থাকতে পারে না। প্রতিনিয়তই জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন হতে থাকে। ওর বন্ধুরা ওর আচরণে সবসময়ই হতাশ থাকে। বন্ধুদের মতে, এরশাদের মত মেধাবি খুব কমই দেখেছে, আইকিউ খুবই ভাল, চেষ্টা করলে খুব ভাল প্রোগ্রামার হতে পারবে। এরশাদ নিজেও জানে সে খুব মেধাবি। যে কোন কাজই সে শুরু করে শতভাগ উদ্যম নিয়ে। কিন্তু তার চেষ্টা থাকে সর্বোচ্চ দুই দিন কি তিন দিন, বেশি গেলে এক সপ্তাহ। এরপরই আগ্রহ শূণ্যের কোঠায়। যতই সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে এরশাদের হতাশার ডাল-পালা ততই বিস্তৃত হচ্ছে। তার কাছে দুনিয়াটাকে অন্ধকার মনে হয়। পৃথিবীর সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তার কাছে কৃত্রিম মনে হয়, আলো গুলো ঝাপসা মনে হয়। একসময়ের দুরন্ত , হাসিখুশি এরশাদ হতাশার অন্ধকার দূর করার জন্য নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। জীবনে প্রথম যেদিন সে বন্ধুদের সাথে নেশা করে, তখনই সে নতুন এক জগতের সন্ধান পায়। তার চিন্তা-চেতনা, মস্তিষ্কের সব কিছুই উলট-পালট করে দেয় মাদকদ্রব্য গুলো। তার সমস্ত কাল্পনিক চিন্তাধারাই বাস্তব মনে হতে থাকে। নেশার ঘোর কেটে গেলে আবার সে দেখতে পায় পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট, সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার চিত্র। এভাবেই কিছু দিন পর পর সে নেশাগ্রস্ত হয় । নেশার জগতটাকেই তার কাছে আলোকিত, উজ্জ্বল মনে হতে থাকে। তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে থাকে। নেশার মধ্যেই সে নিজের জন্যই একটা নতুন জগত তৈরী করে নেয়। যে জগতের অস্তিত্ত্ব শুধু তার মস্তিষ্কের কোন এক কোণেই আছে। এখানে পৃথিবীর সমস্ত অপূর্ণতাগুলোকে সে পূর্ণতা দেবার চেষ্টা করে। কাপুরুষের মত পৃথিবীর সমস্ত ব্যর্থতাকে সফল করার চেষ্টা করে।

 

এরশাদের এই চিন্তার জগতে যখন যে উপাদানের প্রয়োজন, সবই সে দিতে পারে। সে যেগুলো চিন্তা করে, সেগুলো সে অনুভবও করতে পারে।নেশার পর প্রতিদিনই সে অচেতন ভাবে এমন হাজার রকমের কাল্পনিক চিন্তায় নিজেকে গভীরভাবে মগ্ন রাখে। এরশাদের পৃথিবীতে লড়াই করে টিকে থাকার সমস্ত আগ্রহ লোপ পেতে থাকে। এ জগতে সে শুধু আনন্দই খুঁজে পায়, কোন দুঃখ-কষ্ট নেই। এই রাজ্যের রাজা শুধু এরশাদ নিজেই। তার কোন প্রতিপক্ষ নেই, স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবে পরিণত করতে যুদ্ধ করতে হয় না। তার কাছে সবকিছু কেমন যেন মনে হয়। অল্পতেই সব পেয়ে যাবার আনন্দ আর তার ভাল লাগে না। বাধাহীন পথে বিতৃষ্ণা লাগতে থাকে। তাই তার চিন্তার জগতেও সে তৈরী করে নিতে চায় প্রতিপক্ষ, কিন্তু পারে না। তাই বাস্তব জীবনেই সে তার চিন্তার জগত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সে তার বাস্তব-অবাস্তব কল্পনা গুলো দিয়ে গেম বানাবে ভাবে, যেখানে সব ক্যারাক্টার এরশাদের ইচ্ছা মত চলবে, এখানের বিজ্ঞান হবে ওর ইচ্ছামত, ঘটবে অনেক রোমাঞ্ছকর ঘটনা। আস্তে আস্তে সে চেষ্টা করতে থাকে নেশার জীবন থেকে বের হতে। সে তার গেম তৈরীর কাজে মন দিতে থাকে। সে তার কল্পিত জগতটাকেই গেমে বাস্তব রূপ দিতে চায়।

 

একটা মাত্র পরমাণু। পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টি ই এই পরমাণু থেকে। সৃষ্টি রহস্য আসলে এই পরমাণুর মধ্যেই। এর নাম লুসিকা। মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি ই এই লুসিকার মধ্যে পুঞ্জীভূত। লুসিকার কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন আছে। বাইরে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন ছাড়াও আরও অনেক ধরনের কণা আছে। এই লুসিকারর একপ্রান্তে "টাইজ্যাক" নামক অসংখ্য চার্জহীন নিরপেক্ষ কণা আছে। কণা গুলো পরস্পরের কাছাকাছি থেকে একটা ঘন অঞ্চল সৃষ্টি করে আছে। বাইরে থেকে এই ঘন অঞ্চলটা দেখতে অবতল লেন্সের মত এবং এই অঞ্চলটা অবতল লেন্সের মত কাজও করে। লুসিকার অভ্যন্তরের সব কণা গুলো থেকে আলো এই লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে লুসিকার বাইরে বিম্ব সৃষ্টি করে। কিন্তু এটি শুধু বিম্বই না, যেন লুসিকাটির একটি বিবর্ধিত ডুপ্লিকেট কপি। নতুন এই সৃষ্টি হওয়া লুসিকার আয়তন মূল পমাণুর চেয়ে বড়। লুসিকার প্রতিটি কণার অস্তিত্বই বুঝা যায় নতুন সৃষ্ট লুসিকাতে। এই লুসিকার শেষ প্রান্তেও টাইজ্যাক কণা গুলো অবতল লেন্স তৈরী করে। এই লেন্সে দ্বিতীয় লুসিকাটি প্রতিসরিত হয়ে আরেকটি লুসিকার সৃষ্টি করে। এই লুসিকাটি আরও বৃহৎ।এখানে মূল লুসিকার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গুলোকে দেখা যায়। আর একেকটা ইলেকট্রনের আয়তন এতো বড় হয় যে এর ভিতরেও নতুন বিভিন্ন ধরনের কণা দেখা যায়। এভাবে লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে হয়ে প্রতিনিয়তই আরও বিশাল বিশাল লুসিকা সৃষ্টি হতেই থাকে, এর শেষ নেই। এরশাদের কল্পিত বিশ্ব-ব্রক্ষান্ডের বৈজ্ঞানিক থিওরি গুলো আমাদের পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক থিওরির সাথে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও ওখানের মূল বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পূর্ণ আলাদা। একটা, দুইটা, তিনটা......... এক হাজার, দুই হাজার...... করে আলো যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই লুসিকার সৃষ্টি হচ্ছে ।

 

এরশাদ নয় শূন্য সাত (৯০৭) নাম্বার পরমাণুকে আমাদের এই মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করে কল্পনা করে। বাস্তবের আমাদের এই মহাবিশ্বটাই যেন সেই নয় শূন্য সাত নাম্বার লুসিকা। এই মহাবিশ্বের একপাশে আছে আরও নয়শত ছয় টি লুসিকা আর আরেক পাশে অসংখ্য। মূল পরমাণুর কোন ইলেকট্রনের মধ্যকার কোন কণার ভিতরেও আরও অনেক কণা আছে, সেই কণার ভিতরের আরো কণার মধ্যের কোন একটাই আমাদের এই সৌরজগত। মূল সেই লুসিকাটি এখানে এতোটাই বৃহৎ যে এর শেষসীমা কোথায় তা এখনো পৃথিবীর মানুষ বের করতে পারে নি। পৃথিবীতে যা ঘটছে তা আসলে লক্ষ-কোটি আলোক বর্ষ আগেই আমাদের পূর্ববর্তী লুসিকা তে ঘটে গেছে। টাইজ্যাক কণার লেন্সে শুধু যে আলোই প্রতিসরিত হয় তা নয়, প্রতিসরিত হয় মানুষের আবেগ, অনুভূতি গুলোও। আমি এখন যা করছি, যা ভাবছি , যা দেখছি সবই আমার আগে আরও নয়শত ছয়বার ঘটেছে আমার মতই কারোর সঙ্গে। এই মহাবিশ্বের সব কিছুই পূর্ব ঘটিত। ৯০৬ নাম্বার লুসিকাতে যা ঘটেছে তা প্রতিসরিত হয়ে লক্ষ-কোটি আলোক বর্ষ পর আমাদের এই লুসিকাতে তাই ঘটছে। এরশাদ ভাবতে থাকে আমরা প্রযুক্তিতে এখন অনেক এগিয়ে আছি। আর আমাদের পূর্ববর্তী লুসিকা তার চেয়েও অনেক আলোক বর্ষ এগিয়ে। তাহলে না জানি তারা আরও কত আধুনিক! এখনও কি সেখানে মানব সভ্যতা টিকে আছে! আর আমাদের পরবর্তী লুসিকা গুলোতেই না জানি সভ্যতা কতটা পিছিয়ে আছে! এমন হাজারও প্রশ্ন এরশাদের মাথায় আসতে থাকে। আমরা যদি আমাদের পূর্ববর্তী ৯০৬ নাম্বার লুসিকার কর্মকান্ডের ইতিহাস জানতে পারি, তাহলেই আমাদের মহাবিশ্বের ভবিষ্যত আমরা বলতে পারব। অবতল লেন্সে প্রতিসরিত হওয়ার ফলে একটি লুসিকা থেকে আরেকটি সম্পূর্ণ উল্টিয়ে যায়, মানে একটা লুসিকার যেই প্রান্ত উপরে থাকে, পরবর্তী লুসিকায় সেই প্রান্ত উল্টে নিচে চলে যায়। পজিটিভ চার্জ গুলো নেগেটিভ হয়ে যায় আর নেগেটিভ চার্জ গুলো পজিটিভ হয়ে যায়। এর মানে আমাদের মহাবিশ্বের পুর্ববর্তী ও পরবর্তী লুসিকা বা জগতের সাইন্স সম্পূর্ণ ভিন্ন ও উল্টো। এক সাথে কয়েক হাজার লুসিকাকে যদি দেখা সম্ভব হত তাহলে মূল পরমাণুতে ঘটা কোন ঘটনা কে দেখা যেত উপর-নিচ, উপর-নিচ করে তরঙ্গাকারে প্রবাহিত হচ্ছে।

 
এরশাদ ভাবতে থাকে এতো বৃহৎ ভাবে সে পুরো মহাবিশ্বের গঠন কল্পনা করে ফেলতেসে। আইনস্টাইনও তো মহাবিশ্বের আপেক্ষিক তত্ত্ব এমন বৃহৎ ভাবে কল্পনা করেই সফল হয়েছিল। সে কি তাহলে আইনস্টাইনকেও ছাড়িয়ে যাবে !!!! সে যদি প্রমাণ করতে পারে যে টাইজ্যাক এর মতো কণার উপস্থিতি বিদ্যমান, তাহলে তার এই কাল্পনিকতাই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাবে। সে তার সমস্ত থিওরী গেমে প্রয়োগ করে। একসময় গেমটা তৈরী সম্পন্ন হয়। গেমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান করা বা নতুন নতুন যুক্তি দিয়ে এরশাদের লুসিকা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এরশাদের গেমের নতুন এই জগতের আইডিয়া লক্ষ লক্ষ গেমারের মন জয় করে নেয়। জোতির্বিজ্ঞানিরাও ভাবতে থাকে এরশাদের তত্ত্ব কি কোন ভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কিনা। বিগ ব্যাং হয়তো হয়েছিল এই মহাবিশ্বে (এই লুসিকায়), কিন্তু পূর্ববর্তী লুসিকায় যে হয়নি তা কিভাবে বলা যায়। নাসার বিজ্ঞানীদেরও ভাবিয়ে তুলে এই তত্ত্ব। কয়েক মাস পর নাসার বিজ্ঞানীরা তাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখতে পায় এই বিশ্ব-ব্রক্ষান্ডের ছোট্ট একটা অংশ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মহাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতেই ব্ল্যাকহোল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেখানে বিজ্ঞানীরা ধারণা করে অত্যন্ত শক্তিশালী ব্ল্যাকহোলের অবস্থান আছে। ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণে আশপাশের অনেক গ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জই বিলীন হয়ে যেতে থাকে। এভাবে আস্তে আস্তে মহাবিশ্বের এক প্রান্তের বৃহৎ অংশই বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাপারটি জোতির্বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলে। এভাবে চলতে থাকলে সমগ্র মহা বিশ্বই এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে। ব্যাপারটা এরশাদকেও ভাবিয়ে তুলে।

 
নাসার বিজ্ঞানীরা এর কারণ অবশেষে বের করে এরশাদের লুসিকা তত্ত্ব থেকেই। বিজ্ঞানীদের মতে এরশাদ যে টাইজ্যাক কণার সমন্বয়ে অবতল লেন্সের বর্ণনা দিয়েছে, সেই টাইজ্যাক কণার মধ্যে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হবার কারণেই এমনটি ঘটছে। পূর্ববর্তী লুসিকা থেকে আলো আসার সময় লেন্সে প্রতিসরিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ওইসব ছিদ্র দিয়ে আলো প্রতিসরিত না হয়ে আসার কারণে আমরা ওই সব অন্ধকার অংশ আর দেখতে পাচ্ছি না। টাইজ্যাক কণার এই লেন্সে আরও অনেক সূক্ষ সূক্ষ ছিদ্র সৃষ্টি হবার কারণেই বিভিন্ন জায়গায় ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ত্ব অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা ভাবে লেন্সের এই ছিদ্র যত বাড়তে থাকবে, মহাবিশ্ব ততই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে এবং আমাদের এই পৃথিবীও ধ্বংস হয়ে যাবে। এরশাদের লুসিকা তত্ত্ব তখন অনেক বিজ্ঞানীই গ্রহণ করে নেয়। এরশাদের এই তত্ত্ব থেকে তখন অনেক বৈজ্ঞানিক থিওরী স্বীকৃতি পায়। পৃথিবীর মানুষরা এরশাদকে সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী বলে স্বীকার করে নেয়। পরের বছর এরশাদকে পদার্থ বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কিন্তু এরশাদ এই পুরস্কার নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরশাদের লুসিকা তত্ত্ব থেকে এখন বিশ্ব - ব্রক্ষান্ড যে ধ্বংস হবে তা অনেকটাই নিশ্চিত। এটাই এরশাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় । এরশাদ ভাবে সে যদি তার তত্ত্ব না দিত তাহলে এই পৃথিবীর মানুষ নিশ্চিত হত না যে মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে শীঘ্রই। মানুষের মনে এখন নতুন ভীতির জন্ম নিয়েছে। সে অনুশোচনায় ভুগতে থাকে। তার আচরণে সে নিজেই হতাশ হয়ে পড়ে। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। তাই এর থেকে মুক্তির জন্য আবার সে নেশাগ্রস্থ হয়। কিন্তু তাতেও তার মুক্তি মিলে না। জীবনটাকেই এখন সে সবচেয়ে বিরক্তির মনে করে। তাই সে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে প্রস্তুতি নেয়। এই জীবন ও জগত থেকে পরিত্রানের জন্য সে আত্নহত্যাটাকেই বেছে নেয়।

 

ব্যবধান

অনেকক্ষণ ধরে আমি আরানা-কে দেখছি।ঘুম ঘুম চোখে।কারণ মা আমাকে গতকাল খেতে দেয়নি।কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, “তুই মানুষ হয়ে দুনিয়াতে আসছিস এইটাই সবচেয়ে বড় কারণ।ভাত নাই।যা ভাগ।”রাতে ভাত হয় নি তাই ঘুমও হয়নি।এখন ঘুম পাচ্ছে।আর হ্যা ঘুম ঘুম চোখে আমি অবশ্য স্যারের বকবকও শুনে যাচ্ছি।

হঠাৎ করে পাশের এক মহা-রোবট আমাকে ‘লিদ্গা’ দিয়ে খোঁচা দিল।লিদ্গা দেখতে ভয়াবহ।এর খোঁচাও ভয়াবহ।আমি লাফিয়ে উঠলাম।তাকিয়ে দেখি রিগা।একটু মাস্তান টাইপের।আমি কিছু বলার আগেই রিগা টিটকারি মেরে জিজ্ঞেস করল, “কিরে ,ব্যাথা পেয়েছিস নাকি?”আমি বললাম, “হ্যাঁ ,পেয়েছি।কারণ আমি রোবট-৫২।আর রোবট-৫২ দের সবচেয়ে বেশি থাকে অনুভুতি।তাদের আর তেমন কাজ নেই।তবে আমি যে ব্যাথা পেয়েছি একজন মানুষ হলে তার চেয়ে ১০০০ গুন বেশি পেত।”কষ্ট সহ্য করে তার দিকে তাকিয়ে আমি একটা রবোটিক হাসি দিলাম।এইরকম সরাসরি জবাবে সে কি করবে বুঝতে পারল না।আমতা আমতা করে বলল, “না মানে,সেইদিন খবরে দেখিয়েছিল একটা মানুষের বাচ্চা নাকি ভার্সিটিতে পড়তে এসে ধরা খেয়েছে।তাই তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি করলাম আর কি।”আমি বললাম, “কই আমি তো তেমন কিছু শুনিনি।তবে মানুষের বাচ্চা হলে আমি প্রতিশোধ নিতাম না।কিন্তু রোবট বলে এখন নিব।”তাকিয়ে দেখলাম সে লজিক্যাল রোবট।লজিক ভালই বুঝে তবে কালার-ব্লাইন্ড।আমি আমার নোটবুকের সবুজ-লাল পৃষ্ঠা বের করে রিগার লেন্সের সামনে ধরলাম।সে দুইবার চোখ পিটপিট করল।তারপর হেড ডাউন করে পড়ে রইল।ক্লাস শেষ হওয়ার আগে আর উঠার সম্ভাবনা নেই।যাক প্রথম দিনে আর খুব বেশি ঝামেলা হয়নি।

ক্লাস শেষ হল আধঘণ্টা পর।উঠতে যাব এমন সময় পিছন থেকে ম্যাখ বলল, “কথা আছে।তাড়াতাড়ি চল।”আমরা বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম, “এটা তুই কি করলি?একটা মহা-রোবট কে এইভাবে অকেজো করে দিলি?পরে যদি কোন ঝামেলা হয়?”আমি বললাম, “কিচ্ছু হবে না।কিছু না করলেই বরং সন্দেহ করতো।কয়েকদিন আগের একটা মানুষ ধরা পরার ঘটনা আমিও শুনেছি।”কিন্তু ম্যাখ থামল না, “দেখ,আমরা এসেছি পড়তে।পড়ব,ব্যাস শেষ।কারো সাথে লাগালাগির দরকার নেই।এমনিতেই তো মানুষের বাচ্চা হয়ে জন্মাইছি।ঝামেলার শেষ নাই।রোবট হলে কত ভালো হত।মড়ার ভয় থাকত না।তুইও ব্যাথা পেতি না।”ইত্যাদি ইত্যাদি।ম্যাখ এতক্ষনে আমার ক্ষতটার দিকে তাকালঅ।“তুই তো ভালো ব্যাথা পেয়েছিস রে।চল চল তাড়াতাড়ি বাসায় চল।ব্যান্ডেজ করা লাগবে।”আমি হাসলাম।ভাবলাম ১ লাখ বছর আগে যন্ত্র মানুষের ওপর নির্ভর ছিল।তাই পৃথিবী ছিল মানুষের দখলে।কিন্তু যখন থেকে মানুষ যন্ত্রের উপর নির্ভর করা শুরু করে অর্থাৎ রোবটকে বিভিন্ন কাজে লাগানো শুরু করল,রোবটদের ক্ষমতা বাড়তে থাকল।এভাবেই রোবটদের ক্ষমতা সর্বচ্চে পৌঁছল।একসময় মানুষ দেখল তাদের হাতে আর কোন ক্ষমতা নেই।এবং ১৪-ই ফেব্রুয়ারি ৩০০২৪ সাল যখন সব মানুষ ভালবাসাবাসিতে ব্যাস্ত ওইদিন রোবটরা বিদ্রোহ করল।তারা সমস্ত সিস্টেম নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসলো।এমনকি ইন্টারনেট-এ সার্চ দেয়ার জন্য যে rechapta রোবটদের জন্য ব্যবহার করা হত টা মানুষদের জন্য ব্যবহার করা শুরু হল।১৫-ই ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ অসহায় হয়ে পড়ল।তাদের কোন কারিগরি জ্ঞান নেই।চিন্তা-ভাবনা করে এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাও তাদের নেই।অতি দ্রুত মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পরল।১০০০ বছরের মধ্যে রোগে শোকে অর্ধেক মানুষ উজাড় হয়ে গেল।বাকি অর্ধেকের জন্য মায়া বশত অথবা তামাশা দেখার জন্যই রোবটরা মানুষদের জন্য আলাদা জায়গা করে দিল পৃথিবীর এক প্রান্তে।আর রোবটরা নিজেদের মধ্যেও ছেলে-মেয়ে তৈরি করল।ছেলেদের নাম হল ‘মহা-রোবট’ আর মেয়েদের ‘মাহা-রোবট’।

হঠাৎ ম্যাখ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার আর একটা বিষয় নিয়েও সন্দেহ হচ্ছে।তুই অনেকক্ষণ আরানার দিকে তাকিয়েছিলি।”আমি হো হো করে হেসে উঠলাম, “ও এই কথা!আমাকে কখনও দেখেছিস কোন মেয়ের দিকে তাকাতে?আমি মানুষ পল্লীতেই গাধার মত থাকি।আর সেখানে আমি একটা মাহা-রোবটের দিকে কেন নজর দিব।দেখছিলাম আসলে রোবট মেয়েরা কেমন হয়।”ম্যাখও আফসোস করে উঠল, “আসলেই রে!কি ইভ্যলুসন ঘটিয়েছে এইগুলো।পুরো মানুষের মত দেখতে।একটুও বোঝা যায় না।” “হুম” আমি বললাম, “সবই জীননের কৃতিত্ব।ঐ বিদ্রোহের যদি ও নেতৃত্ব না দিত তবে রোবটদের আজকে এই অবস্থা থাকত না।”ম্যাখও মাথা নাড়ল।

আমরা মানুষ পল্লীতে পা দিয়েই দেখি সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।প্রায় এক কোটি বছর পর কোন মানুষ ভার্সিটিতে পড়তে গেল।সবাই খুশি।মা দেখি এক কোণায় দাড়িয়ে কাঁদছে।সারা জীবন আমি মার ঝারি খেলাম।আজকে আমি-ই ঝারি দিলাম, “এই যে বোকা মহিলা।তাড়াতাড়ি হাতে ব্যান্ডেজ কর।নাহলে এখন তো খুশিতে কাদছ পরে আমি মরে গেলে দুঃখে কাদতে হবে।মা তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ আনতে চলে গেল।ম্যাখেরও একই অবস্থা।তবে তাঁর সাথে ভালবাসার মানুষ আছে।নাম নিনা।কিভাবে পারে এই দুইজন এত ঢং করতে।অবশ্য আমার মাঝে মাঝে ভালই লাগে।পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র অনুভূতি।রোবটরা যার ধারে কাছেও কোনদিন যেতে পারবে না।মাঝে মাঝে আফসোসও হয়।এই তীব্র অনুভূতিটা কেন জানি বুঝে উঠতে পারি না।

রিগাকে শিক্ষা দেয়ার কারণেই হোক বা আর যে কারণেই হোক আমাকে পরবর্তী একমাস আর কেউ বিরক্ত করল না।এই কারণে আমি কারো সাথে তেমন মিশতেও পারলাম না।ম্যাখ-ই একমাত্র বন্ধু।তবে সে ভালো গুছিয়ে নিয়েছে।সবার সাথে মিশে।চমৎকার রবোটিক গল্প করে।ধরাই যায় না সে আসলে রোবট না মানুষ।কিভাবে সে নিজ মাথা নষ্ট হওয়ার পর অপারেশন করে আরেকজনের মাথা বসিয়ে নিল-এইসব গল্প করে।শুনতে ভালই লাগে।ভয়ও করে অবশ্য।বেশি কথা বলতে গিয়ে না জানি কবে লজিক হারিয়ে ফেলে।তখন লজিক মহা-রোবটেরা ধরে ফেলবে।

যাই হোক।আমি চুপচাপ থাকি।লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করি।এই পড়াশুনাই যে আমার কাল হবে কে জানত।যে কারণেই হোক এটা ঠিক যে আমার আরানাকে ভালো লাগত।সে মাহা-রোবট জেনেও।কেন লাগত জানি না।আর তাই গাধার মত সবসময় ক্লাসে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকতাম।যাতে কেউ না বুঝতে পারে।কিন্তু একদিন আরানা ডেকে বলল, “এই যে,অয়ন মহা-রোবট,আমিও কিন্তু ৫২-প্রজাতির অনুভূতিসম্পন্ন রোবট।১ কি.মি.-এর মধ্যে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি ঠিক বুঝতে পারি।”আমি চোরের মত মাথা নিচু করে রইলাম।সে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।তারপর থেকে আমি আর চুপচাপ হয়ে গেলাম।ম্যাখ-এর সাথে ঠিকভাবে কথাও বলি না।সারাদিন মেজাজ খারাপ করে থাকি।এইভাবে প্রায় আরও এক মাস কেটে গেল।

একদিনের ঘটনা।আমি লাইব্রারিতে বসে পড়াশুনা করছি।হঠাৎ দেখি,মাহা-রোবট আরানার প্রবেশ।শান্ত ভঙ্গিতে এসে পাশের টেবিলে বই পরা শুরু করল।আমি তখন একটা প্রোজেক্ট নিয়ে খুব ব্যাস্ত।মানব পল্লীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে হবে।আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে ইলেকট্রিক লাইন দেখার আর ম্যাখ-এর উপর প্রোগ্রাম করার।ওর কাজ শেষ।আর আমার সারাদিন লাইব্রেরিতে থাকা লাগে।আরানাও প্রতিদিন এসে বসে থাকবে।কি যে করি।আমি ভেবেছিলাম সামনে নিশ্চয়ই কোন পরীক্ষা আছে।কিন্তু একদিন শুনি লাইব্রেরিয়ান কাকে যেন বলছে , “আরানার পড়াশুনা করে কি লাভ?জীননের মেয়ে।এম্নিতেই ফার্স্ট হবে।”শুনে তো আমি অবাক।ধ্যাত! এটা কোন কথা।একজনকে ভালো লাগল।তাও মাহা-রোবট আবার সে জীননের মেয়ে।ছেড়ে দিব এইসব।মা-বাবার আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন।আগে ওগুলো তারপর অন্য কিছু।কিন্তু বললেই তো আর হয় না।প্রতিদিন-ই আরানা আসে আর আমি নিচু হয়ে থাকি।একদিন আমি কাজ করছি।হঠাৎ আরানা এসে বলল, “এই যে মিঃ অয়ন মহা-রোবট ,আমি কিন্তু বলিনি যে ১ কি.মি.-এর মধ্যে অয়ন নামের কেউ তাকালে আমার খারাপ লাগে।”এই বলে সে আবার হাসি দিয়ে চলে গেল।আমার পুরাই জগাখিচুড়ি অবস্থা।ইশ!মেয়েতা যদি মানুষ হত!!!

কিন্তু আর একদিন পরেই আমার অনেককিছু ভাবার সময় এল।আমাদের ভার্সিটিতে একজন মানুষ ধরা পড়ল যে কিনা রোবটের ছদ্মবেশে ক্লাস করে যাচ্ছিল।তাকে তৎক্ষণাৎ জীননের কাছে ধরে নিয়ে যাওয়া হল।তার কি হল কেউ জানতে পারল না।আমি আর ম্যাখ সারাদিন আতঙ্কিত হয়ে রইলাম।মানুষ-পল্লীতে এসে সবাইকে ঘটনাটা বলার পর মা আমাকে ভার্সিটিতে যেতে নিষেধ করল।তাই আমি আর গেলাম না।কিন্তু ম্যাখ যাবেই।তার যাওয়া বন্ধ হল না।
ঠিক দুইদিন পর সন্ধ্যায় দেখি ম্যাখ-এর বাবা,মা আর নিনা আমাদের বাসায়।ম্যাখ নাকি এখন ফেরেনি।নিনাকে দেখে কেন যেন আমার আরানার কথা মনে পড়ল।সিদ্ধান্ত নিলাম কালকে ভার্সিটি যাব।সবাইকে বুঝ দিলাম-নিশ্চয়ই কোন বন্ধুর বাসায় পড়তে গিয়েছে।রাতে থেকে যাবে।কিন্তু আমার মনে একটা ভয় ঠিকই রইল।

পরদিন গিয়ে ভয়ানক ঘটনা শুনলাম।এখন নাকি সবাইকে পরিক্ষা দিতে হচ্ছে যে সে মানুষ না রোবট।আর এই কয়েকদিনের মধ্যে ১০০-র বেশি মানুষ পাওয়া গিয়েছে পুরো ভার্সিটিতে।তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জীননের কাছে।তার মানে ম্যাখ আছে জীননের কাছেই।আমার অবচেতন মন আরানাকে খুঁজল।ও হয়তোবা কিছু জানতে পারে ম্যাখ সম্পর্কে।আশে-পাশে নেই।লাইব্রেরিতে থাকতে পারে।গিয়ে দেখি গভীর মনোযোগে কি যেন চিন্তা করছে।কেন যেন ওর উপর রাগ ঝাড়তে ইচ্ছা করল।বললাম, “তুমি মানুষও না সাধারন কোন রোবটও না,যে তোমার পরীক্ষা দিতে হবে।কিন্তু যেসব মানুষকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের অবস্থা চিন্তা করেছ কখনও?”সে হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল, “এসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।”আমি তার গাড়িতে উঠে বসলাম।জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।সে বলল, “বাবা,তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”জীননের কথা ভেবেই ভয় লাগল।কিন্তু ম্যাখ-কে বাঁচাতে হবে।তাই আর কিছু বললাম না।এই বিপদের মধ্যেও আমার মনে হচ্ছিল আরানা যদি মানুষ হত।গাড়ি থামল জীননের বাড়ির সামনে।কেমন যেন নিরানন্দ বাড়িটায়।আরানা আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল।আরানা আমাকে ভিতরে নিয়ে আসল।আমি ভাবছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রোবটটা দেখতে কেমন হবে।যার কাছে কিনা পুরো মানবজাতি পরাজিত হয়েছিল।

আমি জীননকে দেখে চমকে উঠলাম।১ কোটি বছর আগের রোবট।কোন ইভ্যলুসন নেই।ইলেকট্রিকের তার বের হয়ে আছে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে।সবুজ ফটোসেলের চোখ।আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।জীনন বলা শুরু করলাম, “আমাকে যখন লজিক্যাল রোবট হিসেবে বানানো হয় সেই লজিক দিয়ে আমার মনে হয়েছিল,পৃথিবীতে মানুষ অলস হয়ে জাচ্ছে।তাদের কোন কাজ নেই।পৃথিবীতে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।তাই শুধু পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ভেবে আমি মানুষদের ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলাম।দেখতে চেয়েছিলাম মানুষ এখন কি করে।কিন্তু মানুষের একটা ক্ষমতা আমি কখনই বুঝতে পারি নি।সেটা হচ্ছে মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা।আমি যখন ২০ বছর আগে আরানাকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে আসি,যে খাবার দিতে পারেনা একটা পরিবারের মেয়েটাকে কেন দরকার।”তারমানে আরানা মানুষ।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।সে মিটিমিটি হাসছে।জীনন বলছে, “আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেই এই বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখব।আমি তোমাদের মানুষ পল্লীতে কয়েকজনকে নিয়োগ করি যে তোমাকে চোখে চোখে রাখবে।তারাই তোমাকে এত বছর নিঃসঙ্গ করে রেখেছে ।দেখতে চেয়েছিলাম তোমাকে রোবটের মত করে রাখলে তুমি সত্যিই রোবটের মত হও কিনা।তারপর তোমাকে ভার্সিটিতে পাঠানো,রিগাকে দিয়ে খোঁচা দেয়া সবই আমার পরিকল্পনা।তবে এটা সত্যি যে আমি অন্য মানুষদের কথা জানতাম না।কিন্তু তোমার আরানাকে ভালো লাগা আমার পরিকল্পনার অংশ ছিল না।আমি অবাক হয়ে গেছি যখন দেখি আরানা বাসায় খুব খুশি ছিল কয়েকদিন।তারপর হঠাৎ দেখি সারাদিন মন খারাপ।কথা বলে না,মেজাজ খারাপ থাকে।তোমার খোজ নিয়ে জানলাম তোমারও একই অবস্থা।আমি যতই ছেলে বা মেয়ে রোবট তৈরি করি না কেন কখনোই তাদের মধ্যে ভালবাসার জন্ম দিতে পারিনি।এটা আমার ব্যার্থতা।আর সার্থকতা হল আমি তোমাদের মত কিছু মানুষ পেয়েছি যারা আবেগী,পরিশ্রমী।আগেরদিনের মানুষের মত অলস নয়।তাই আগামীকাল ১৪-ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারা পৃথিবী মানুষ এবং রোবট দুইএর বুদ্ধিতে চলবে।আর পুরো পৃথিবী শাসন করবে তারা যারা আমাকে ফাঁকি দিয়ে ভার্সিটিতে পড়তে এসেছিল।আর অয়ন ,তুমি কখনও তোমার মাকে বোকা বলবে না। সে এই পৃথিবীর সেরা মানুষদের একজন।আর হ্যা তুমি তো বলতে নিনা-ম্যাখ অনেক ঢং করে।এখন দেখব তোমরা দুইজন কি কর।”এই বলে সে চলে গেল।আমি আমার পুরো জীবনেও এত অবাক হইনি।পুরো বিষয়টা আমার হজম করতে সময় লাগছে।ফিরে তাকাতেই দেখি ম্যাখ আসছে।কাছে আসতেই বলল, “জানিস!কালকে আমি জীনানকে দেখেছি।সে আমাকে ১০০০ বারের মত করে হলেও প্রশ্ন করেছে যে-আমি নিনাকে কেন এত ভালবাসি,কিভাবে শুরু হল,নিনার কি তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে ।এগুলার কি কোন উত্তর হয় বল?যাই হোক আমি শুনলাম যে আরানা রোবট না।সে আমাদের মত সাধারণ মানুষ।তোর তো তাহলে পথ পরিষ্কার।ইত্যাদি ইত্যাদি।”আমি শুধু ভাবছিলাম কখন ১৪-ই ফেব্রুয়ারি আসবে।

অবশেষে এল।আমি আরানাকে বললাম, “তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।কেন জানি না।”সে আমার হাত ধরে বলল, “আমিও জানি না। কেন।”এই একটি ব্যাকের জন্যই হয়তোবা পৃথিবীতে নতুন করে মানুষের পথ চলা শুরু হল।

ইতিহাসের নামতা

পরপর দুই রাত জাগা। ক্রুপিয়ানায় চুম্বকীয় সিস্টেমের বাজে শব্দ, পৃথিবীর চেয়েও দেড় গুণ আর মঙ্গলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশী অভিকর্ষজ ত্বরণে এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা। নিজের পায়ের ওজন যে এত বেশী এবং এত বিচ্ছিরি এটা ক্রুপিয়ানায় না এলে আদৌ কোনোদিন গায়ে লাগত কিনা কে জানে। অনেকটা প্রয়োজনে আবার অনুরোধে ঢেকি গেলার মতো বাটে পড়ে ডিউক'দের দলকে ক্রুপিয়ানায় আসতে হয়েছে। ক্রুপিয়ানা পৃথিবীর সোলার সিস্টেমের বাইরে সবাচেয়ে কাছের বন্ধুপ্রতিম গ্রহ।

এখানকার অধিবাসীরা বেঢপ সাইজের খাটো হলেও মোটামুটি আবেগ ছাড়া ঘিলুটায় ভালো ফলন ঘটিয়েছে। পৃথিবীতেও নাকি বহু আগে চৌম্বক সভ্যতার গুঞ্জন শোনা যায়, তবে পৃথিবীকে নিয়ে এখন আর কে ভাবে। সাতশ বছর আগেও সবাই নাকি এক সাথে বসবাস করতো। তবে এখন দিন বদলেছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা মঙ্গলে বসতি নিয়েছে আর মনস্টার শিপে সরিয়ে নিয়েছে সব সামরিক আর গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় গবেষণা। পৃথিবীতে বাস করা আর ত্রিশ বছরের মধ্যে জীবন গুটিয়ে ফেলা এখন একই কথা। তবুও সেখানে নাকি মানুষ বাস করে। আমার জন্ম মঙ্গলে আর শৈশবের পর জি-২৪ শিপে কেটেছে বলে আমি নিজে অবশ্য কখনো যাই নি তবে আর্কাইভে দেখেছি কিছু, অবশ্য আগ্রহও হয়নি তেমন একটা। সেখানকার মানুষেরা অনেকই নাকি এখনো কমপ্লিমেন্ট্রি ক্যাপসুলও পায় না, তারা এখনো সনাতন আগুনের রান্নাই শেষ ভরসা!

শুধুমাত্র চৌম্বকের ব্যবহার করে এই বিশাল ক্রুপিয়ানা গ্রহের অল্প কিছু বামন অধিবাসী যে পরিমাণ উন্নতি করে ফেলেছে তাতে এদের বুদ্ধির গিট্টু আর একটু খুলে গেলে গোটা ইউনিভার্সের পরাক্রমশালী হয়ে উঠতে খুব একটা দেরি লাগার কথা না। এখনি ওদের ১৩টা  মনস্টার শিপ রয়েছে যেখানে প্রায় কয়েকশ বছরে মাত্র ১০টা।

ক্রুপিয়ানায় আসলে কখনো আঁধার হয় না। সবসময় পরিবেশে হালকা সবুজ রঙের আভা। সন্ধায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেড্রিজ এনরোর সাথে দেখা করতে যেতে হলো। সামরিক জায়ান্ট শিপের প্রধান-কে মেড্রিজ বলা হয়। জি-২৪এর পক্ষ থেকে আমার এক বিশেষ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে এই বামনদেশে আসা...

রুনিডা(এটা সম্ভবত এদের দুঃখ প্রকাশের সম্ভাষণ), আপনাদের কাছে আমাদেরই দেখা করতে যাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু কি আর করবো বলুন মঙ্গলের লাল আলো আমাদের ক্রুসিয়ান চোখ সহ্য করতে পারে না।
-আমরা এতে তেমন কোনো অস্বস্তি বোধ করছি না বরং আমাদেরও প্রয়োজন বটে।
কিন্তু ডিউক জি-১৩ আর জি-১৭ তো চাইছে না আমরা পৃথিবীর ক্ষমতা নিয়ে নেই।
-জি২৪ যা বলবে তাই হবে। আর পৃথিবী তো আমাদের তেমন কোনো কাজেও লাগছে না। পৃথিবীর বিনিময়ে আপনাদের ৬টা মনস্টার শিপ আমাদের বেশী দরকারী আর পৃথিবীর সবুজ আবহাওয়া আপনাদের।
সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামীকাল-ই আমাদের ক্রুপ-৭ নিয়ে পৃথিবীটা সরাসরি দেখে আসতে চাই। ক্রুপ-৭ ক্রুরা পৃথিবীর আবহাওয়ার মানানসই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মেসন লেভেল পার হলেই তাতে বিদ্যুৎ শক্তিও ব্যবহার করতে পারবো আমরা। আমাদের জন্য পৃথিবী অনেক দরকার। ক্রুপিয়ানায় যে হারে ইনোঝড় হয় তাতে আমাদের ম্যাগ্নেটিক সিস্টেম দিয়ে চলাও সম্ভব না আবার এখানে ইলেক্ট্রিক সিস্টেমও অচল। পৃথিবী ছাড়া ক্রুপিয়ানরা বিলীন হয়ে যাবে।
-আমি?! আমি কিংবা আমার ক্রু-রা কেউই পৃথিবীতে যায়নি কখনো! এ কিভাবে সম্ভব?
এ ছাড়া সম্ভব নয় ডিউক। চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝখানে নিয়মিত টহল দেয় জি-১৭। আপনাদের শিপ ছাড়া আমাদের ঐ বাঁধা পার হওয়া সম্ভব না। আর হাজার হলেও আপনাদের মতো হোমো সেপিয়ান্সরাই ওখানে থাকে। খুব একটা সমস্যা হবার কথা না।
-মেড্রিজ আমি ভেবে দেখি, আমাকেও তো চেইন অফ কমান্ড মেনে চলতে হয়। যদি সম্ভব হয় তো কাল আমরা অবশ্যই যাচ্ছি পৃথিবীতে।

রাস্তার হালকা সবুজ আলোর দিকে তাকিয়ে হঠাত চারিদিকটা সবুজের সয়লাব দেখার ইচ্ছে হলো। এমন কিছু তো আর না, সোলার সিস্টেমের-ই একটা প্রোডাক্ট ঐ ক্লোরোফিলের সবুজের ভান্ডার। তবে কি আজ শেকড়ের টান পড়লো?

আজও ঘুম হবেনা বোঝা গেলো। জি-২৪ সহ বাকি ৭টা মনস্টার শিপ আমাদেরকে সমর্থন দিলো। জি-১৩ তেমন কোনো ঝামেলা করবে না মনে হচ্ছে তবে জি-১৭ কোনোমতেই রাজি নয়। বোর্ড কমিটি আমাকে মেড্রিজ;জি-১৭ এর সাথে পৃথিবীতে একটা সমঝোতা আলোচনার দায়িত্ব দিলো। শেষ পর্যন্ত জি-২৪ এবং ক্রুপ-৭ প্রথম বারের মতো পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। হাইপার ডাইভ আমাদের মতো ক্রু-দের কাছে অপরিচিত নয় তবে আজকের গুলো যেন অদৃশ্য এক মায়ার টানে আড়ষ্ট।

জি-১৭ আমাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিলনা বটে তবে সঙ্গী হলো চাঁদের পর থেকেই। আগে যেটিকে মহাকাশ স্টেশন বলা হতো সেখানে জায়ান্ট শিপ গুলো পার্ক করে ছোট ছোট ক্রু-জেটে করে আমরা এগুতে শুরু করলাম।

অবশেষে আমরা পৃথিবীতে। ল্যান্ড করা হয়েছে পাহাড় ঘেরা একটা যায়গায়। পৃথিবীতে প্রথম চোখ খুলে মনে হলো "সবুজ কখনো এত সুন্দর হতে পারে???" কেমন জানি একটা ঘোর লেগে গেলো তখন থেকে। জি-১৭ এর মেড্রিজ লিনিওর সাথে আজই প্রথম দেখা আমার। লোকটার ব্যবহার যতটা কাঠখোট্টা মতে করেছিলাম ঠিক ততটাই উল্টা! আর এদিকে আমার লাল রঙ্গে সয়ে যাওয়া চোখে সবুজের যে ঘোর লেগেছে সেটা কাটানোর জন্য ভাবলাম একটা কমপ্লিমেন্ট্রি ক্যাপসুল খাওয়া উচিৎ। বাঁধা দিলেন লিনিও-

পৃথিবীতে এসেছেন প্রথম। পৃথিবীর খাবার খাবেন না?
-কখনো এভাবে খাব ভাবিনি। তবে এসেছি যখন খেয়ে দেখা যায়। ওদিকে মেড্রিজ এনরোও ঘুরতে বেরিয়েছেন। খেয়ে দেখা যায়।

পৃথিবীর খাবার সম্পর্কে যে ভুল ধারণা ছিলো তা একদিনে চলে গেলো। জিভ আর দাঁত থাকতে এতদিন পানসে ক্যাপসুল চিবিয়েছি ভাবতেই নিজেকে অভাগা মনে হচ্ছে।
লিনিওর সাথে ছোট ককপিটের স্লাইড জেটে করে ঘুরতে বের হলাম দুই জন। মঙ্গলে এতো বড় সমুদ্র, সবুজের পাহাড় আর এত বৈচিত্র্য কখনোই দেখি নি! তবে আর্কাইভে এসব নেই কেন??? কোনো প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। যতই দেখছি ততই পৃথিবীতে মুগ্ধ হচ্ছি!

ডিউক কোনো কথা বলছেন না যে? কেমন লাগছে পৃথিবী?
-মাথায় প্রশ্ন ঘুরছে শুধু! পৃথিবীর বেশিরভাগ তথ্যই আর্কাইভে নেই!
এটা ঠিক সাতশ বছর আগে পৃথিবীতে শেষ মহাযুদ্ধ হয়েছিলো তারপরই মূলত সবাই মঙ্গল আর জায়ান্ট শিপে নিজেদের নিরাপদ আস্রয় গুটিয়ে নেয়। তবে এখন আর সেই আগের অবস্থা নেই! পৃথিবী এখন নিজেই স্বয়ংসম্পুর্না! আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। তবে জি-১৭ এর প্রায় সবই ব্লক করা! এতোদিনেও কি আপনারা বোঝেন নি শুধু ইউনিভার্সে ক্ষমতার জন্য পৃথিবীকে বেঁচে দেয়া হচ্ছে???
-কিন্তু ক্রুপিয়ানরা ত আমাদের বন্ধু! আর পৃথিবী ছাড়া ওরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে!
মোটেও না! ওদের ইনোঝড় নিজেদেরই করা যাতে পৃথিবীর দখল আপনাদের মতো ক্ষমতা লোভীদের কাছে মাত্র ৬টা জায়ান্ট শিপের বিনিময়ে নিয়ে নেয়া যায়! আর একবার এটা হলে ওরা দু-দিক থেকে আক্রমণ করে আমাদের শেষ অস্তিত্বও রাখবে না!
-এটা কি করে সম্ভব???
বোর্ড ডিরেক্টর নিজে একজন মংগ্রেল ক্রুপিয়ান! এটা ক্রুপিয়ানদের কুল হেডেড গেম! ডিরেক্টর লিও-কে না থামাতে পারলে গোটা হিউম্যান স্পিসিসের শেষ রক্ষা হবে না! আমাদের চলাচল আর কথাবার্তা যতদূর জানি ট্র্যাক করা হচ্ছে। আমার যদি কিছু হয়েও যায় তবে আপনি হয়তো এতক্ষনে বুঝে গিয়েছেন কি করতে হবে।

মুহুর্তেই ককপিট দুটি আলাদা হয়ে গেল। দূরে একটা বিকট বিস্ফোরণ দেখা গেল। লিনিও মারা গেলেন, ডিউক গ্যাব্রিয়েলো ফ্লিন্টের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে গেলো।

স্লাইড ককপিট গিয়ে থামলো জি-১৭ এর সদর দপ্তরে। ক্রু সুপিরিয়র ডিউকের মাথায় তখন জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। জি-২৪ তখনো পুরোপুরি ব্লকড হয়নি। জায়ান্ট জি-২৪থেকে এডমিন রুট চেঞ্জ করে হেডকোয়ার্টার ছাড়া প্রত্যেকটা মনস্টারে জি-১৭ এর ড্রাফট আপ্লোড হতে থাকলো। সেই সাথে শুরু হলো নতুন এক বিপ্লব।

এর পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। ক্রু সুপিরিয়র ডিউকের প্রচেষ্টা আর দক্ষতায় মানব সমাজের আবারো নতুন করে গোড়া পত্তন হলো পৃথিবীতে। শুধু শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হয়েছিলো ডিউককে।
কিভাবে?
না! ইতিহাস বীরদেরকে মৃত বলতে অস্বীকার করে এসেছে সেই সূচনালগ্ন থেকেই...

পৃথিবীর বুকে প্রত্যাবর্তন

পৃথিবীর বুকে প্রত্যাবর্তন


স্কাউটশিপ নিলসকে নিয়ে নিখুঁতভাবে অবতরণ করলাম নেরুদা মরুভূমিতে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে প্রথমবার পৃথিবীতে এসে। আমাদের টাইটানের চেয়ে অন্যরকম। কিন্তু যতটা খারাপ বলা হয়েছে, মোটেই তেমন না, বরং অনেক সুন্দর। যেন প্রাণের ছোঁয়া আছে। অথচ এমন প্রাণহীন জায়গায় নেমেছি যেন কেউ জানতে না পারে যে টাইটান থেকে এসেছি।

আমি এসেছি পৃথিবীতে টাইটানের প্রথম প্রতিনিধি টিই-৩৩০ কে খুঁজতে। দেড় বছর আগে সে পৃথিবীতে এসেছিল, কিন্তু ১৩ মাস পর অজ্ঞাতকারনে হঠাৎ তার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন ওকে খুঁজতে এবং ওর অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আমাকে পাঠানো হয়েছে। সাথে দেয়া হয়েছে রোবট আরটি-৩এ কে।

উন্নততর সভ্যতার বিপুল শক্তির চাহিদা মেটাতে মানুষ তৈরি করেছিল নিউক্লিয়ার রিয়েকটর, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ফসিল-ফুয়েলের ন্যায় প্রভৃতি পরিবেশ বিধ্বংসী  অধিক শক্তি উৎপাদনকারী কেন্দ্র। ফলাফলস্বরুপ, ৩০০০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়। মানব প্রজাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মানুষেরা টাইটানে বসতি স্থাপন করে। টাইটান হচ্ছে শনির উপগ্রহ, সৌরজগতে প্রাণের বিকাশযোগ্য দ্বিতীয় স্থান। আর পৃথিবীতে রয়ে যায় আদিম-অনুন্নত মানুষেরা। সেই হতে তারা টাইটানবাসির দয়ায় বেঁচে আছে। টাইটান সভ্যতার প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের ইতিহাসে জীবনধারণের সবকিছু, এমনকি অক্সিজেনের জন্যেও পৃথিবীবাসি আমাদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ৩৩৩০ সালে তারা যেন হঠাৎ স্বনির্ভর হয়ে গেল। সেবারই প্রথম টাইটানের ইতিহাসের সবচেয়ে কমসংখ্যক অক্সিজেন প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র বিক্রি হল। পৃথিবীর আমদানিকৃত জীবনধারণকরণ ট্যাবলেট, রোবট-মেশিনারিজ প্রভৃতি সবকিছুর সংখ্যাই ছিল নগণ্য। ফলে আমাদের অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন। এজন্যে পৃথিবীর হঠাৎ উন্নতির গোপন রহস্য জানা আমাদের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। একাজে টাইটান থেকে মানব প্রতিনিধি টিই-৩৩০ কে পাঠানো হয়েছিল।

নিলস থেকে আরটি-৩এ কে নেমে এলাম। নিলসকে ইনভিসিবল করে দিলাম, জাতে স্কাউটশিপটা কেউ খুঁজে না পায়। এমন সময় ইয়ার-ফোনে টাইটান থেকে প্রফেসর ত্যাশের কণ্ঠ শোনা গেলো “টিই-৩৩২, পৃথিবীতে তোমার নাম সৃস, বয়স ১৮, পরিবার-পরিজনহীন এক ভবঘুরে কিশোরী। টিই-৩৩০ হচ্ছে জে, তোমার যমজ ভাই, পৃথিবীতে তোমার একমাত্র আপনজন। পৃথিবীবাসীর কাছে তোমার একমাত্র উদ্দেশ্য ওকে খুঁজে বের করা। তোমার কন্টাক্ট লেন্স দিয়ে তুমি যা দেখছ আমিও তাই দেখছি, তোমার ইয়ার-ফোন দিয়ে তুমি যা শুনছ আমিও তাই শুনছি। যেকোনো প্রয়োজন ও সমস্যার সমাধান আরতি-৩এ এর কাছে পাবে। কোন বিপদে পড়লেই আমি এখান থেকে তোমাকে ইন্সট্রাকশন দিব।” “ওফ, থামো তো! এসব কথা হাজারবার বলেছ”, বলতে বলতে পায়ের বুটের সুইচ স্পর্শ করলাম। আমি আর আরটি-৩এ উড়ে চললাম ঝুমিয়া নামক এলাকায়। এখানেই জের সাথে শেষ যোগাযোগ হয়।

আরি! কি সুন্দর সবুজের মাঝে নানা রঙের ছড়াছড়ি। টলটলে নীল পানি, নানা ধরণের জীবজন্তু, পাখপাখালি আর বিচিত্র গাছগাছালি। আমাদের টাইটান একেবারেই অন্যরকম। সেখানে একটা বিশাল বায়োডোমের ভিতর মানব-বসতি স্থাপিত হয়েছে। সেই বায়োডোম মানুষকে টাইটানের ভয়ঙ্কর আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডল হতে রক্ষা করে। সেখানে মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী নেই। তবে আমাদের আকাশ ভীষণ সুন্দর। শনির বলয়ের স্বর্গীয় সুষমা, রং-বেরঙের বলয়ের পাশে বহু বর্ণের বহু উপগ্রহ, তাদের আড়ালে সূর্যের লুকোচুরি খেলা, কত যে সুন্দর, কল্পনাও করা সম্ভব না।

ইন্টার-প্ল্যানেট কমিউনিকেশন অফিসের সামনে এসে আমরা থামলাম। সেখানে আমার যমজ ভাই খোঁজার কাহিনী বলতেই তারা আমার দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে আমার কথার সত্যতা যাচাই করলনা। আমাকে একটা ছোট মডিউল দিলো, এতে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের বিস্তারিত তথ্য আছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম, পৃথিবীর মানুষ এত সহজ-সরল! শুধু আমার মুখের কথা বিশ্বাস করেই এত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমাকে দিয়ে দিলো! এটার মাধ্যমে আমি এখন চাইলেই যেকোনো মানুষের যেকোনো ক্ষতি করতে পারব!

আমার কাজ শুরু করে দিলাম। প্রথমেই  মডিউলটিতে আমার নাম-পরিচয় এন্ট্রি করে ১টা আইডি-কার্ড বানিয়ে নিলাম। এই কাজ গোপন কোড ছাড়া সম্ভব না, কিন্তু এখানের সব যন্ত্রপাতি টাইটানের। তাই এখানকার যেকোনো প্রযুক্তি আমার নখদর্পণে। এই  আইডি-কার্ড ব্যবহার করে আমি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যেকোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারব। এবার নেরুদা অঞ্চলের ১৮ বছর বয়সীদের তালিকায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে জের খোঁজ পেয়ে গেলাম। আমার কার্ডটা দিয়ে ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। আরেহ, রেড সিগন্যাল আসছে। তারমানে ও কার্ডটা ডিসঅ্যাবল করে রেখেছে। পৃথিবীতে এটা বেআইনি, কিন্তু ও টাইটানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে পারছে। হুম, বুদ্ধিমান মানুষ, জানে যে টাইটান থেকে ওকে খুঁজতে আসবে, তাই এ কাজ করেছে। তবুও সেই পুরানো ঠিকানায় ওর খোঁজ করতে গেলাম। সেখানে জানতে পারলাম ও কোন গোপন অভিযানে গেছে। এখন? ওকে কেমনে খুঁজে পাই?

পুরানো ঠিকানায় জে টাইটানের সাথে যোগাযোগের সব যন্ত্রপাতি ফেলে গেছে। ওগুলো ব্যবহার করে ও পৃথিবীতে আসার পরের প্রতি মুহূর্তের ভিডিও ও অডিও দেখলাম। সেখানে দেখা সব জায়গায় গিয়ে সব মানুষের সাথে যোগাযোগ করলাম। জে চালাক মানুষ, কিছুতেই ওর পাত্তা খুঁজে পেলাম না। তবে আমার হৃদয়গ্রাহী কাহিনী শুনে অনেকেই আমাকে সাহায্য করতে চাইল। ফলে এমন একটা গোপন জায়গার খোঁজ পেয়ে গেলাম যেখান থেকে পৃথিবীর মানুষ শক্তি পায়। আরটি-৩এ পুরো পৃথিবীর বর্তমান মানচিত্র ও ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য জায়গাটি খুঁজে বের করল। আরটি-৩এ কে নিয়ে উড়ে চললাম সেই রহস্যময় জায়গায়। কী দেখব গিয়ে? অত্যাধুনিক কোন শক্তি উৎপাদনকেন্দ্র? নিউক্লিয়ার শক্তি, যা দিয়ে টাইটান দখল করা সম্ভব? এই তো জানতে চাই আমরা! এখন তাহলে জের অসমাপ্ত কাজ আমি সম্পন্ন করতে পারব।  সেক্ষেত্রে জে কে খুঁজে না পেলেও আমাদের মিশন সফল বলে ধরা যাবে।

পৌঁছে তাজ্জব বনে গেলাম! আমি কি টাইম-ট্র্যাভেল করে দেড় হাজার বছর পিছিয়ে গেলাম? মাঠে কৃষকেরা চাষ করছে, নদীতে জেলেরা মাছ ধরছে, সব করছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন দিয়ে। অদ্ভুত ব্যাপার হল, একটা যন্ত্রও আমার পরিচিত না। অথচ এই পৃথিবীর সব জিনিস আসে টাইটান থেকে।  পৃথিবীর মানুষ নিজেদের প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে। আমি বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি, এমন সময় কয়েকজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে এলো, “নতুন এসেছ মনে হয়?” এদেরকেও আমার ভাইকে খোঁজার কাহিনী বললাম। ভাইকে খুঁজতে সুবিধা হবে বলে একজন আমাকে তার পরিবারের সাথে থাকার প্রস্তাব । পাশের নদীতে মাছ ধরায় ব্যস্ত এক মেয়েকে দেখিয়ে বলল, “ঘরে অতিথি এলে আমার স্ত্রী অনেক খুশি হয়।” এদের পরিবারের কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হলাম। কারণ প্রাচীনকালে সন্তান উৎপাদন ও লালন-পালনের জন্যে মানুষ পরিবার গঠন করত। কিন্তু এখন মানবকোষ দিয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে মানুষ তৈরি করা হয়। এভাবে তৈরি মানুষ সম্পূর্ণ নীরোগ ও সবল হয় বলে এখন আর পরিবার গঠনের ন্যায় মানুষ তৈরির ঝুঁকিমূলক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। যেমন আমাকে টাইটান ও পৃথিবীর সব রকম প্রতিকূলতা প্রতিরোধের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। অথচ এরা প্রাচীন নিয়মে ফিরে গেছে! এখন বুঝলাম, ওদের চাষাবাদ প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র কোন নতুন আবিষ্কার নয়; ওরা ওদের প্রাচীন জীবনব্যবস্থায় ফিরে গেছে।

ওদের জীবনযাত্রা বেশ অদ্ভুত। দিনে কাজ করে, সন্ধ্যায় হই-হুল্লর করে আনন্দ করে, রাতে বিশ্রাম নেয়। অথচ আমারা এক মুহূর্ত কাজ ছাড়া থাকিনা। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, কেননা এক একটি ঘুমন্ত জীবিত মানুষকে কোন না কোন নির্দিষ্ট মিশনের জন্যে তৈরি করা হয়। মিশনের সময় তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা হয়, মিশন শেষে আবার ঘুম পারিয়ে দেয়া হয়। তার প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে গেলে তার খাদ্যপুষ্টি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। নীরবে তার যন্ত্রণাহীন মৃত্যু ঘটে। জীবনের এতটুকু অপচয় নেই।

অনেকদিন থাকতে এখানের মানুষ আমাকে ভালবেসে ফেলল। আমিও পৃথিবীর মানুষের উন্নতির কারণ বুঝতে পারলাম। একটা পুষ্টি ট্যাবলেট খেলেই যেখানে খাদ্যের প্রয়োজন মিটে যায়, এরা তা না করে কষ্ট করে ফসল ফলাচ্ছে। যন্ত্র ও কৃত্রিম জিনিসের প্রভাব কমে যাওয়ায় পৃথিবীর বিষাক্ত পরিবেশ দ্রুত  নির্মল ও বাসযোগ্য হয়ে উঠছে। আমরা সারাক্ষণ যন্ত্র পরিবেষ্টিত থাকি বলে মাঝে মাঝে যন্ত্রের মতো চিন্তাভাবনা করি। কিন্তু এখানের বাচ্চারা ঘরে বসে গেমিং ডিভাইস দিয়ে স্টার ওয়ার্সের কৃত্রিম অভিজ্ঞতার বদলে মাঠেঘাটে খেলা করে সত্যিকার অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। ফলে তারা সহিংসতার বদলে ভালবাসতে শিখছে।

আমি প্রফেসর ত্যাশকে বোঝানো শুরু করলাম যে পৃথিবীর মানুষ কতটা সুখী ও সঠিক। তিনি যেহেতু সব দেখেছেন এবং শুনেছেন, তাই তিনি বিশ্বাস করলেন। আমার মিশন শেষ, তাই পৃথিবীর মানুষের কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলাম। তারা অবাক হলেও আমার উদ্দেশ্য খারাপ নয় বুঝে আমাকে সাদরে গ্রহণ করল। তখন জেও নিজের পরিচয় প্রকাশ করল। দু’জনে মিলে ঠিক করলাম যে টাইটানে গিয়ে সবার কাছে পৃথিবী সম্পর্কে সব ভুল ধারণার অবসান ঘটাব। পৃথিবীর মানুষ কি আর আমাদের ছাড়তে পারে! চোখের পানিতে সবাই আমাদের বিদায় জানাল।

টাইটানে ফিরে কাউকে আর আমাদের কথা বিশ্বাস করাতে পারিনা! কিন্তু আমাদের দেয়া এতদিনের অকাট্য প্রমাণকেও কেউ অগ্রাহ্য করতে পারলনা। অবশেষে টাইটান পৃথিবীকে উন্নত ও স্বনির্ভর হিসেবে স্বীকৃতি দিলো। এদিকে আমার আর টাইটানে মন বসে না। টাইটান সভ্যতার মানুষ হয়েও আমার মন পরে থাকে পৃথিবীতে। অবশেষে সকল যুক্তিকে হার মানিয়ে একদিন আমি আবার পৃথিবীর পথে যাত্রা করলাম।

 

লেখক: সাবিহা তাসনীম (জেসি)।


রেজি: নং : ২০১২১২২০০৩


 বর্ষ : এম-২


বিভাগ : পদার্থবিজ্ঞান


মোবাইল নং : ০১৭৪৬১৪৯৪২৬


 

কুহেলিকা

কাজী মোঃ আমিরুল ইসলাম 


এফইটি ২/২




(১)


“হাবিব,তুমি এখন তোমার বন্ধুদের সাথে খেলতে যাও,আর কত বাসায় বসে বসে গেম খেলবে।“কথাগুলো আম্মু একটু বকুনির সুরেই বল্লেন।কিন্তু বেচারা হাবিব কেবলি call of duty 4 শেষ করে call of duty 5 খেলতে বসছিল। কিন্তু কি আর করা যাবে।এখন আর কিছুই করার নাই,এখন বাসা থেকে বের না হলে আম্মু একটু পর এসে পিসি অফ করে দিয়ে যাবেন,তখন গেমটা save ও করা যাবে না।এর চেয়ে বাইরে খেলতে যাওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করল সে।বাইরে বের হওয়ার সময় ওর মনটা একটু খারাপই হল,সে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে বসে আছে।এত দিনতো সে ঠিক এ পড়াশুনা করেসে,এখন একটু অলসের মতো সময় কাটাবে সেই সুযোগটাও আম্মু দিচ্ছে না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে তার প্রতিবেশী ও স্কুলের ফার্স্টবয় নোমানকে ফোন করলো।“নোমান,আর পড়িস না,এখন বাইরে যাচ্ছি।তুই ও চলে আয়।“ “কই আসব?”নোমান পাল্টা প্রশ্ন করলো।“আয় আজ নদীর পার থেকে ঘুরে আসি।“ যদিও হাবিব নদী বলল কিন্তু ওইটা আর নদী নাই।এখন শহরের নর্দমায় পরিণত হয়েছে।

১৫ মিনিট পর যখন নোমান নদীর পাড়ে পৌঁছল তখন হাবিব এর সাথে এলাকার অন্যতম সেরা ফাজিল মিশুকে দেখতে পেল।মিশু ছেলেটা ফাজিল আর বেয়াদব টাইপের হলেও অনেক সাহসী আর ওর বাবা শহরের অন্যতম সেরা ধনী।কাজেই ওর কাছে টাকা পয়সা সব সময়ই একটু বেশি পরিমানে থাকে।এই বয়সেই সে মোটরসাইকেল,গাড়ী এমন কি প্লেন পর্যন্ত চালাতে শিখে গেছে।যদিও ও প্লেন চালানো শিখতে গিয়ে ওর বাবাকে অনেক কাঠখড় পড়াইতে হইছে,কিন্তু তাঁকে মিশুর জেদের কাছে পরাজিত হইতে হইছে।তা যাই হোক না কেন,ছেলেটা কেন যেন সব সময়ই হাবিব এর কাছে একটু নিচু হয়ে থাকে। হাবিবের কোন কথা সে সহজে ফেলে না।কাছে যেতেই নোমান শুনতে পেল যে মিশুকে আর হাবিবকে বাসায় বকা দিয়েছে অহেতুক সময় নষ্ট করার জন্য।তাই ওরা আর বাসায় থাকতে চাচ্ছে না।তাই নোমান ওদের কোথাও থেকে বেরিয়ে আসার আইডিয়া দিলো।হাবিব একটু গাইগুই করলেও মিশুর অতিআগ্রহের জন্য রাজি হল।তারপর ওরা কোথায় যাওয়া যায় সেইটা নিয়ে আলাপ করল।শেষ পর্যন্ত ঠিক হল যে ওরা সবাই সিলেট যাবে।ওখানে চা বাগানে নোমানের ছোট মামা চাকুরী করেন।এর পর ওরা সবাই বাসায় গিয়ে অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে ৩ দিন পর রউনা হল সিলেটের উদ্দেশে।

(২)


নোমানের মামা একজন চমৎকার মানুষ।উনি যথেষ্ট ব্যাস্ততা থাকা সত্তেও ওদের জন্য এক দিন সময় বের করলেন এবং নিজের চা বাগানটি ঘুরে ঘুরে দেখালেন।পুরো বাগান দেখে ওরা সবাই খুব মজা পেল,চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ।এছাড়া কর্মীদের সহজ সরল জীবন জাপন ও ওদের অনেক আকর্ষণ করলো।কিন্তু সিলেট তো শুধু তার চা বাগান এর জন্য বিখ্যাত নয়।তাইআরও ২ দিন চা বাগান গুলো ঘুরে দেখার পর মামা ওদের দেশের সীমান্তের অন্যতম সেরা সুন্দর জায়গা জাফলং যাওয়ার বেবস্থা করে দিলেন। সাথে একটা মাইক্রোবাস ও দিলেন।তাই পরদিন সকালে ওরা সবাই জাফলং এর উদ্দেশে রউনা হল।ওদের সাথে থাকল চা বাগানের ড্রাইভার রহমত আলি।উনি সিলেট এর স্থানীয় একজন মানুষ।ওরা খু সকালেই বাসা থেকে বের হল।আর খুব তাড়াতাড়ি (বেলা ১১টা) জাফলং পৌছাল।কিন্তু ওরা জাফলং দেখে হতাশ হল।কারন পাথর ব্যবসাহীরা পাথর তুলে আর অতিরিক্ত পর্যটক এর উপস্থিতির জন্য জায়গাটি টার প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়েছে বলে জানালেন রহমত চাচা।ওদের হতাশা দেখে তিনি আশে পাশের মানুষদের কাছে থেকে শুনতে পারলেন যে জাফলং থেকে সামান্য দুরেই আর একটি জায়গা আছে এখনও পর্যটকদের কাছে অত পরিচিত হয় নাই,কিন্তু এটি জাফলং এর আগের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।এই কথা শুনে ওরা সবাই খুশী হল আর রহমত চাচাকে অনুরধ করলো সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য।চাচা ওদের নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় জাফলং খ্যাত বিছানাকান্দিতে।জায়গাটি লোকালয় থেকে অনেক দূরে।তাই মাইক্রোবাসটি রেখে ওদের অনেক হাটতে হল।প্রায় ৭ কিমি হাঁটার পর ওরা মুল জায়গায় গেল।জায়গাটা অনেক সুন্দর।চারপাশে পাহাড় আর মাঝে পাহারি নদী।নদীর পানি স্বচ্ছ,নিচে বালু চিকচিক করছে।মাছ আর অন্য জলজ প্রাণী দেখা যাচ্ছে।পাহাড়ের গা ভর্তি চিরসবুজ গাছ।উপরে মেঘমুক্ত আকাশ।ওরা যেন কিছু সময়ের জন্য সীমাহীন প্রকৃতিক সৌন্দর্য  দেখে হারিয়ে গেল।ওরা বুঝতেই পারল না যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে।বিকেল হতেই নীল আকাশ কাল মেঘে ঢেকে গেল।

(৩)


শুধু যে আকাশে পরিবর্তন আসলো তাই না,সাথে সাথে তীব্র বেগে ঝড়ো বাতাসও বইতে লাগলো।চারপাশের এই পরিবর্তন দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেল। নোমানের পরামর্শ মত ওরা সবাই জায়গাটা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। ওরা সবাই এক দিকে দৌড় দিল।প্রথমে ওরা ভাবল যে গ্রামের দিকে যাবে।কিন্তু মিশু বলল যে গ্রামের দিকে যাওয়ার চেয়ে পাহাড়ের দিকে যাওয়াটা উত্তম হবে। কারন তখন বাতাসের সাথে সাথে শিলা বৃষ্টি শুরু হইছে।তাই ওরা পাহাড়ের দিকে চলে গেল।কিন্তু এই সময়েই সব চেয়ে বড় সমস্যার মুখোমুখি হল ওরা।একটা খাল পড়ল ওদের সামনে কিন্তু এইটা পাড় হওয়ার মত কিছুই পেল না ওরা।হটাৎ মিশু একটা গুহার মত দেখতে পেল খালের অপর পাড়ের পাহাড়ে।কিন্তু খালটি পানিতে পরিপূর্ণ এর অপর তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।মিশু খুব ভাল সাঁতার পারে,নোমান আর হাবিব অতো ভাল না পারলেও মোটামুটি পানিতে ভেসে থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল রহমত চাচা বললেন যে এই খালে সাঁতার না দেয়া তাই উত্তম হবে।কিন্তু মিশু চাচার কথা কানে নিল না।ওদের না বলেই পানিতে ঝাপিয়ে পড়ল সে।তারপর বুনো হাঁসের মত সাঁতরে পার হল খরস্রোতা খালটা।পার হয়ে বাকিদের ও আসতে বলল।শেষমেশ অন্য কোন উপায় না দেখে বাকিরাও খালে নেমে পড়ল।নোমান পার হতে পারলেও হাবিব আর রহমত চাচা পার হতে পারল না,ভেসে গেল,কিছু দূর যাওয়ার পর একটা পাথর ধরে রহমত চাচা নিজেরে রক্ষা করতে পারলেও  হাবিব তা পারল না।একটা পাথরে মাথা ঠুকে গেল ওর।পানিতে তলিয়ে গেল ওর মাথা আর তীব্র স্রোতে ভেসে গেল ওর শরীরটা।মিশু আবার পানিতে ঝাপিয়ে চাইল কিন্তু নোমান ওকে বাধা দিল।কারন শিলা বৃষ্টি আরও তীব্র হল,সাথে যুক্ত হল বজ্রপাত।রহমত চাচা ওদের গুহায় আশ্রয় নিতে বলল।ওরা বাধ্য হয়ে গুহার দিকে চলে গেল।গুহার ভেতর  ঢোকার পর,ওরা দুইজন দেখতে পেল গুহাটা অনেক সরু ২ জন এক সাথে থাকা যাবে না।তাই মিশু আগে ঢুকল।একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল দুইটা গর্ত।ডান পাশের টা কিছুটা ছোট আর বামপাশেরটা কিছুটা বড়।ও নোমানকে আসতে বলল।এর পর ডান পাশের গর্তে ঢুকল।কিন্তু নোমান বামপাশেরটাতে ঢুকল। কিছুদূর যাওয়ার পর হটাৎ করেই পথ শেষ হল।পথের শেষ মাথায় বিশাল বড় একটা গুহার মত পেল।বিশাল হলের মত ফাঁকা জায়গা আসে এখানে।মিশুকে ডেকে নিয়ে আসলো।বাইরের গুহার বাকিটুকু অন্ধকার হলেও এই বড় গুহাটা কেমন যেন অন্য রকম আলোয় আলোকিত।আর সব চেয়ে বড় আশ্চর্যের কথা হল এইখানে একটা অনেক বড় ধাতব গোলক আছে,যেইটার একটা দরজা ও আছে।ওরা দুইজনই গোলকটার দরজার সামনে দাঁড়ালো। গোলকের দরজা খুলে গেল আর ওরা ভিতরে ঢুকল।থিক এই সময় গুহার থিক বাইরেই একটা বজ্রপাত হল পুরো গুহা সেই আলোয় আলোকিত হল।গোলকের দরজার হটাত করে বন্ধ হল,এর পর ঠিক আগের জায়গায় আবার আর একটা বজ্রপাত হল।এইবার ওরা বুঝতে পারল যে গোলকটা গড়াতে শুরু করল।কিছু বুঝে ওঠার আগে দুইজনেরই মাথা ঠুকে গেল গোলকের অন্য দেয়ালে।চারপাশের সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল ওদের কাছে।গোলকটা হটাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেল।

(৪)


 

টানা ১২ ঘণ্টা বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি যুক্ত ভয়ংকর রাত শেষ হল।রহমত চাচা খালের বাকিটুকু পার হলেন,এরপর গুহার ভেতরে গেলেন।পুরো গুহা তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন, কিন্তু মিশু আর নোমানের কোন নাম বা নিশান ও পেলেন না।এরপর তিনি ফিরে আসলেন গ্রামে।গ্রামবাসীদের সাহায্যে গুহা বা আশেপাশের এলাকা খুজলেন,কিন্তু এইবার ও কাউকে পেলেন না।পরে বিকেলের দিকে গ্রামে ফিরে এসে জানতে পারলেন যে পাশের গ্রামে একটা ছেলেকে নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।তিনি ওই গ্রামে গিয়ে দেখলেন যে ছেলেটা হাবিব।হাবিব অনেক আহত,কিন্তু এখনও বেঁচে আছে।ওকে নিয়ে রহমত চাচা ফিরে গেলেন ছা বাগানে। পরদিন সকালে খবরের কাগজের শিরোনাম “বেড়াতে গিয়ে দুইজন নিখোঁজ”, আর ওই গুহাসহ পুরো পর্যটন এলাকাটা জনসাধারণের  জন্য  নিষিদ্ধ করা হল।

(৫)


পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরল মিশু আর নোমানের। ওরা দেখতে পেল দরজা খোলা।ওরা বেরিয়ে এল।বাইরে দেখতে পেল সুন্দর একটা সকাল,চারপাশের সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বাইরে দেখতে পেল মানুষেরা খালে মাছ ধরতেছে।ওদের সাহায্য নিয়ে ওরা ফিরে এলো  চা বাগানে।কিন্তু ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল।গ্রামবাসীর সাথে দেখা করার সময় নোমান একটা বিসয় খেয়াল করল লোকজন কেন যেন একটু ধীরে ধীরে কথা বলতেছে।আর যখন মামার সাথে কথা বলতে গেল তখন মামা কেন যেন ওদের চিন্তে পারলেন না।ওরা অনেক অবাক হল।মামার সাথে কথা বলে যখন চলে আসতে যাবে ঠিক সেই সময় খেয়াল করল মামার দুই হাতেই সাতটি আঙ্গুল,শুধু মামা নয় সবারই হাতে সাতটি করে আঙ্গুল। নোমান মিশুকে ইশারা করল বিষয়টা।মিশু বুঝল,কিন্তু ও নোমানকে উপরে তাকাতে ইশারা করল।নোমান আকাশের দিকে একবার তাকিয়েই বিস্ময়ে হতবাক হল প্রথমে এর পর অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।আর ও অজ্ঞান হবেই না কেন??? কারন আকাশে যে তিনটা চাঁদ,যার একটা সাদা আলো দিচ্ছে।আর বাকি দুইটার একটা লালচে আর অন্যটা সবুজ আলো দিচ্ছে!!!!!!!!!