এস এম মনির
পরিসংখ্যান ৩/২
পত্র-পত্রিকার কল্যাণই হোক কিংবা ঈদে বাড়ি যাবার সময় বিড়ম্বনাতেই হোক আমরা টিকেট কালোবাজারীর সাথে একটু আধটু পরিচিত। তাপরেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। ঈদের সময় ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন ট্রেনে। অগ্রিম টিকেট পাননি, তাতে কি? আপনি টিকই যেতে পারবেন যদি আপনি আড়াইশ টাকা দামের টিকেট দ্বিগুন তিনগুন কিংবা আরো বেশী দামে ক্রয় করেন। প্রশ্ন হচ্ছে টিকেট কিভাবে পেলেন? পেলেন কিছু অসাধু লোকের কারসাহিত, যারা কিনা আগে থেকে ই বেশী টিকেট কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে, আপনার প্রয়োজনের সময় বেশী দামে বিক্রি করেছে। কিন্তু আজ আমরা এর চেয়েও বেশী ক্ষতিকর কালোবাজরীর সম্পর্কে জানাব্ োএবং ছোট খাট গণিত করে সেই “অসাধু ব্যবসার সৌন্দর্য (?)” আবিস্কার করব। তাহলে চলুন শুরু করি।
ধরুন আপনি ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম যাবেন। বগি নম্বর চ। বগিতে সিট ১০০ টি। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই ১০৫ টি টিকেট বিক্রি করেছে। আর আপনিই সেই হতভাগা ০৫ জনের দরে যাদের টিকেট সিট নম্বর দেওয়া নেই। এদিকে বগিতে দাড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। কি করবেন তাহলে? আপনি চট্রগ্রাম যেতে পারবেন না নয়তো প্রার্থনা করতে হবে যে কোন সিট নম্বর যুক্ত টিকেট ধারী জ্যামের কারণে স্টেশনে পৌঁছতে না পারে।
একই উদাহরণ একাটা প্লেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধরুন বাংলাদেশ ছাগল মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী মন্ত্র ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন। ৩০০ সিটের প্লেন। এদিকেও কর্তৃপক্ষ ৩১৫ টি টিকেটে বিক্রি করেছে ইচ্ছে করে। ছাগল মন্ত্রীর পিত্র মন্ত্রীর জন্য টিকেট কেটেছে। কিন্তু পিত্র খেয়াল করেনি যে টিকেট সিট নম্বর দেয়া নেই। মন্ত্রী যথাসময়ে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখে বিমান কানায় কানায় পূর্ণ, তার বসার জায়গা নেই। হতভাগা মন্ত্রী “ছাগল উন্নয়ন মহাসম্মেলন চট্রগ্রামে” এ উপস্থিত হতে পারলেন না। যথাসময়ে সিটের অভাবে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের অন্যান্য মন্ত্রী মিনিস্টার যা করতেন তিনিও তাই করবেন। অতিরিক্ত টিকেট বিক্রির দায়ে মালিকের জেল জরিমান এমনকি ব্যবসার লাইসেন্স ই বাতিল করে দিবেন।
যদি ব্যাপরটা একজন সাংবাদিরে সাথে ঘটতো? ব্যাচারা সাংবাদিক রেগে মেগ তার পত্রিকায় সেই কোম্পানির নামে বিশাল কালোবাজারী অভিযোগ এনে নিউজ করেদিত আর এদিকে মালিকের ব্যবসার বারোটা বেজে যেত। কিন্তু আপনি যদি সেই এয়ার লাইন্স কোম্পানীর মালিক হয়ে থাকেন, আপনি কি চাইলে কোন মন্ত্রী বা বেরসিক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে আপনার ব্যবসার বারোটা বাজাতে?? অবশ্যই চাইবেন না। কিন্তু তাহলে কেন আপনি ৩০০ সিটের প্লেনের জন্য ৩১৫ টা টিকেট বিক্রি করলেন? সেই উত্তরটা একটু পরেই দিচ্ছি।
আগের উদাহরণটার কথাই চিন্তা করুন, কিন্তু এবার দেশটা বাংলাদেশ না মহাপরাক্রমাশালী বিশ্বের দাদা ‘যুক্তরাষ্ট্র’।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স নিউইয়র্ক থেকে ওয়াসিংর্টনে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। মালিক হিসাব করে দেখলো, তার ৩০০ সিটের প্লেনে ড়গে ১৫ জন যাত্রী অনুপস্থিত থাকে। ডাক পড়ালো ম্যানাজারের।
মালিক : ম্যানেজার কি করা যায়?
ম্যানেজার : স্যারি, একজন পরিসংখ্যান বিদকে ডাকুন দেখুন কিছূ সমাধান দিতে পারেন কি না?
মালিক : ডাকো তাহলে একজনকে।
ম্যানেজার : জ্বি, স্যার।
তো এবার পরিসংখ্যানবিদ এসে দেখলো ঘটনা সত্য। গড়ে ১৫ জন অনপস্থিত। সে আরো হিসাব করে দেখলো পরিমিতি ব্যবধান ২ অনেকেই হয়তো পরিমিত ব্যবধান ব্যাপারটার সাথে পরিচিত না। তবে ব্যাপারটা কিভাবে আসলো সেটা ব্যাখ্যা না করে বরং পরিমিতি ব্যবধান দিয়ে কি কাজ করা হয় সেটার ব্যাখ্যাই সকলের জন্য সুবিধা জনক। একটু খেয়াল করুন।
গড় ক্ট এক পরিমিত ব্যবধান = ( ১৫-২;১৫+২)
(১৩;১৭) ৬৮% ক্ষেত্রে।
২. গড় ক্ট দুই পরিমিতি ব্যবধান = (১৫-২দ্ধ২;১৫+২দ্ধ২)
= (১;১৯) ৯৫% ক্ষেত্রে।
৩. গড় ক্ট তিন পরিমিত ব্যবধান = (১৫- ৩দ্ধ২; ১৫+৩দ্ধ২)
(০৯-২১) ৯৯% ক্ষেত্রে।
১ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১৩-১৭ অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৬৮ টিতে।
২ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১১-১৯ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৫ টিতে।
৩ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ০৯-২১ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৯ টিতে।
এবার সেই পরিসংখ্যানবিদ মালিককে সমাধান দিলো এভাবে, আপনি যদি প্রতি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ০৯ টি টিকেট অতিরিক্ত বিক্রি করেন তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১ টি ফ্লাইটে বসা নিয়ে সমস্য হতে পারে। আর যদি সর্বোচ্চ ১১ টি অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে ৫ টিতে সমস্যা হতে পারে। আর সর্বোচ্চ ১৩ টি বিক্রি করলে ১০০ টিতে (১০০-৬৮) =৩২ টিতে সমস্যা হবে। তাই আপনার ব্যবসার জন্য ১২ নম্বর সমাধানই সবচেয়ে ভাল হবে। এখন যদি মালিক দু নম্বর সমাধানকেই বেছে নেয় তাহলে সে প্রতি ফ্লাইটের ১১ টিতে টিকেট বেশী বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ১০০ টির ফ্লাইটে যে ০৫ টিতে সমস্যার ফলে কিছু যাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না তখন কি হবে।
‘যুক্তরাষ্ট্র পরিবহন কর্পোরেশন’ রীতিমত বিধি-বিধান করে সমধান দিয়েছে। হয় সেই সব যাত্রীদের দ্বিগুন ভাড়া ফেরত দিতে হবে, নয়তো পরবর্তি ফ্লাইটে বিনামুল্যে পৌঁছে দিতে হবে নয়তো উচ্চতর শ্রেণীতে ভ্রমনের সুযোগ করেদিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ব্যাপারটা যদি কারো বিশ্বাস নাহয়, সে যেন ইন্টারনেটে ‘ঙাবৎংবষষরহম’ লিখে ফলাফল গুলো পড়ে দেখে।
আমেরিকানরা যে শুধু ব্যাপারটা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই করে থাকে তা কিন্তু নয়। তারা সকল ধরনের পরিবহন, হোটেল বুকিং ইত্যাদিতে সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে আসছে। শুধু আমেরিকান কেন উন্নত সব দেশেই ব্যাপারটা ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে নিয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যেটা কালোবাজারী সেটা উন্নত দেশ গুলোতে রীতিমত আইনসিদ্ধ ব্যাপার। আর সেই অসাধ্য সাধন করেছে গণিত। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায় পরিসংখ্যান গণিতের একটি শাখা।
তাই আমাদের বিজ্ঞান জানতে বা বুঝতে হলে অবশ্যই গণিত জানতে হবে। কেননা গণিত হলো বিজ্ঞানের ভাষা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আজ এতো উন্নত সেটা কিছু গণিত না থাকলে সম্ভব হতো না। তাই আমাদের গণিত মুখস্ত না করে গণিতের সৌন্দর্যটা আবিস্কার করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. wikipedia (overselling)
২. Statistics By James and Frank.
৩. একটু খানি বিজ্ঞান- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
No comments:
Post a Comment