Tuesday, September 3, 2013

গণতন্ত্র: তত্ত্ব ও বাস্তবতা

না, এই লেখায় গণতন্ত্রের জটিল, কঠিন তত্ত্ব নিয়ে কোনো আলাপ হবে না। অ্যারিস্টটল, উড্রো উইলসনদের বাণী কোট করা হবে না। গুরুগম্ভীর বুদ্ধিজীবীয় আলোচনা না বরং গণতন্ত্র কাজীর কিতাবে কীভাবে আছে আর বাংলার রাজপথে কীভাবে চলছে তা নিয়ে সামান্য কথা বলাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ।

আমাদের দেশে পলিটিক্সই গণতন্ত্র। চায়ের দোকান থেকে নেত্রীর ড্রয়িং রুম, সবখানে পলিটিক্স কর্তৃক গণতন্ত্রের ধর্ষিত হবার পায়তারা চলে আসছে। গণতন্ত্র কী বলে আর আমরা কী করি, এই নিয়ে বাঘা বাঘা কলামিস্টদের অনেক লেখা আছে। সেদিকে না গিয়ে যদি সহজভাবে চিন্তা করি তাহলে গণতন্ত্র বলতে আমরা কী বুঝি? জনগণের শাসন। খুলে বললে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। শতকরা ৫১ ভাগ পাবলিক যা ভাববে তাই হবে, তাই তো? প্রত্যেক ভোটের মান সমান। যিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন আর যিনি গভীর রাতে ঢাকা শহরের অন্ধগলিতে ছিনতাইয়ের শিকার হন, উভয়ের ভোটের মান সমান। যিনি চা-নাস্তার ব্যবস্থা না করলে ফাইল ছাড়েন না আর যিনি সততার কারণে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে হিমসিম খান, দু'জনেরই ভোটের গুরুত্ব এক। তত্ত্বগতভাবে গণতন্ত্রের অনেক ফ্ল আছে। কিন্তু গণতন্ত্রই সেরা অপশন। রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সেনাশাসন এসবের থেকে গণতন্ত্র উত্তম। গভরমেন্ট বাই দ্য পিপলের চেয়ে সেরা আর কি হতে পারে? কাগজে-কলমে গণতন্ত্র তো তাই-ই, নাকি?

গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে দেশে দেশে নানা আইন-কানুন আছে। বাংলাদেশের সংবিধানও তার ব্যতিক্রম নয়। সংবিধান অনুসারে জনগণের নিরাপত্তা বিধানই প্রথম প্রায়োরিটি। কোনো নির্বাচিত সরকার চাইলেও সংবিধান সংশোধন করে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারবে না। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য। কেন বাধ্য? কারণ সংবিধানে আছে। আর সরকার তো নির্বাচনে জনগণের ইয়েস কার্ড পেয়েই এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জনগণের ইয়েস কার্ড পেয়ে দায়িত্ব পাওয়া (ক্ষমতা পাওয়া নয়) সরকার জনগণের সাথে নেমকহারামী করে। ড. আকবর আলী খানের 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' শীর্ষক একটি বই আছে। ঐ বইয়ে একটা অধ্যায় আছে “শুওরের বাচ্চার অর্থনীতি” নামে। ‘শুওরের বাচ্চা’ বলতে ওখানে বোঝানো হয়েছে তাদেরকে যারা ঘুষ খেয়েও কাজ করে না। আমি কাউকে শুওরের বাচ্চা বলতে রাজি না, সরকারকে তো নাই-ই। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার একটা সীমা আছে। সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় এসে গুন্ডাপান্ডা পালা কোনো ভালো কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুণ্ডা পালা, সেই গুণ্ডা কিছু করলে তাকে ছেড়ে দেয়া, গুণ্ডার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে পিটায় দেয়া, সবশেষে সরকারের বাজে কাজের সমালোচনা করলে বাসায় ডিবি-এসবি পাঠায় রিমান্ডে নেয়া তো নেমকহারামীর চূড়ান্ত। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে যে দল সরকারি দায়িত্ব নেয় সে কি করে জনগণের সমালোচনা, গাইল-মন্দ সহ্য করতে পারে না? আর জনগণই বা কেমন যে বাঁশ মারা দলরে বার বার বার ক্ষমতায় আনে?

তথাকথিতভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ছাত্র ও যুবক শ্রেণিকে টাকা দিয়ে পেলে-পুষে সাপ বানিয়ে নিজের পক্ষে স্লোগান শুনতে কি লজ্জা লাগে না রাজনৈতিক দলগুলোর? সংবিধানের অপরিবর্তনযোগ্য অনুচ্ছেদে উল্লেখিত জনগণের মৌলিক অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী কিংবা মধ্যাঙ্গুলী দেখিয়ে খর্ব করতে কি কোনো প্রকার বিবেকের দংশন কাজ করে না? শুধু রাজনৈতিক দলকে বলছি না, জনগণের টাকায় বেতন পাওয়া আমলাতন্ত্র, পুলিশতন্ত্র, আইনতন্ত্রকেও বলছি। মহানগরে কোনো সম্মেলন বা মিছিল যদি হানাহানি কিংবা জনগণের স্বাধীন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে তাহলে মহানগর পুলিশ সেই সম্মেলন বাতিল তো করতেই পারে এমনকি আগে থেকে সম্মেলনের অনুমতি নাও দিতে পারে। এই জ্ঞানের কথা আমার না, আইনের। তাহলে যেই দলের সরকারই ক্ষমতা আসুক না কেন সেই দলের গুন্ডাপান্ডারা কাউন্সিল করার জন্য, দলের নেতার জন্মবার্ষিকী, মৃত্যবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী পালন করার জন্য জনগণের স্বাভাবিক চলাচল সারা দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়ে আনন্দ কিংবা শোক সম্মেলন চালায় কী করে? কোথায় থাকে তখন আইনের শাসন? কোথায় থাকে তখন সংবিধান অবমাননা? কোথায় থাকে তখন বিবেক মহোদয়?

Saturday, August 31, 2013

ভারতের ভিসা-কিভাবে পাবেন

আমাদের সুবিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিভিন্ন কারণেই আপনাকে যেতে হতে পারে। চিকিৎসা, ব্যবসা, পড়াশোনা, চাকুরী ইত্যাদি অতীব প্রয়োজনীয় কারণের পাশাপাশি পর্যটনও একটা বড় কারণ, যে জন্যে আজকাল অনেক বাংলাদেশীর কাছেই ভারতগমন বা ভারতভ্রমণ একটি সাধারন বিষয়। কিন্তু এই অতি সাধারণ বিষয়ের মাঝে মূলত জানার অভাবের কারণে অনেকের কাছেই ভারতের ভিসা পাওয়া একটি ‘অ-সাধারন’ এবং জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু নানা জনের নানা মতামত, দালাল শ্রেণীর অত্যাচার অথবা শুধুমাত্র নিজের অজ্ঞতাও অনেক সময় ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টিকে চরম বিভ্রান্তিকর করে তোলে, আর সাধারণ মানুষ হয় বিড়ম্বনার শিকার। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে অতি সহজ উপায়ে আপনি নিজেই পারেন নিজের জন্য ভারতীয় ভিসা যোগাড় করতে।

ভিসার ধরণঃ

ভারতীয় দূতাবাস আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেসকল ধরণের ভিসা দেয় সেগুলো হলঃ

  • বিজনেস ভিসা

  • কনফারেন্স ভিসা

  • কূটনৈতিক ভিসা

  • চাকুরী ভিসা

  • এন্ট্রি ভিসা

  • চিকিৎসা ভিসা

  • জরুরী ভিসা

  • সাংবাদিক ভিসা

  • মিশনারিস ভিসা

  • ২ মাসের মধ্যে পুনরায় প্রবেশের অনুমতিজনিত ভিসা

  • স্টুডেন্ট ভিসা

  • গবেষণা ভিসা

  • পর্যটক ভিসা

  • ট্রাঞ্জিট ভিসা।


ভিসার ধরণ অনুযায়ী আপনাকে বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে হতে পারে। ভিসার মেয়াদও নির্ভর করে ভিসার ধরনের উপর। এর মধ্যে ট্রাঞ্জিট ভিসা হচ্ছে ভারতের মাটি দিয়ে অন্য কোন দেশে যেতে যে ভিসার লাগে। উদাহরণস্বরূপ, বাসে চড়ে বিকেলে নেপালে জলযোগ করতে চাইলে সকালে ভারতের মাটিতেই প্রাতঃরাশ সারতে হবে।

ভিসা প্রক্রিয়াঃ

প্রথম ধাপঃ অনলাইনে ভিসার এপ্লিকেশন

প্রথমেই অনলাইনে আপনাকে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।   indianvisaonline.gov.in/visa ওয়েব ঠিকানায় গিয়ে বামপাশে অনলাইন ভিসা এপ্লিকেশন অপশনে ক্লিক করলেই সেখানে পেয়ে যাবেন অনলাইন এপ্লিকেশন লিঙ্ক। অনলাইন এপ্লিকেশন ফর্মে আপনার কিছু সাধারণ তথ্য যেমনঃ জন্মতারিখ,  আপনার পাসপোর্টের তথ্য, পেশা, কোন ধরনের ভিসা চাচ্ছেন, কেন চাচ্ছেন, ভারতে আগে গিয়েছিলেন কিনা ইত্যাদি জানতে চাওয়া হবে। এই ধাপে মনে রাখতে হবেঃ

[caption id="attachment_200" align="alignleft" width="212"]Screenshot of the First Page of the Indian Visa Form Screenshot of the First Page of the Indian Visa Form[/caption]

  • চট্রগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের মানুষজন তাদের নিজ নিজ বিভাগের ভারতীয় মিশনে ভিসার জন্য আবেদন করবেন এবং অন্যান্য সকল বিভাগের মানুষজন ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশনে আবেদন করবে। সোজা কথা, পটুয়াখালীর একজন ভারত যেতে চাইলে আবেদন করতে হবে ঢাকার ভারতীয় মিশনে, নোয়াখালীর মানুষকে আবেদন করতে হবে চট্রগ্রামের ভারতীয় মিশনে।

  • টেম্পোরারি এপ্লিকেশন আইডি এবং ওয়েব রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নামের দুটো নাম্বার দেয়া হবে। এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণের সময় সেগুলো অবশ্যই সেভ করে রাখতে হবে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দরকার হবে।

  • ভুল তথ্য দেয়া হলে ভিসা নাও পেতে পারেন, যদিও “মানুষ মাত্রই ভুল-man is mortal”, তাও নির্ভুল থাকার চেষ্টা করুন।

  • তবে ভুল তথ্য একবার দেয়া হয়ে গেলে ঐ এপ্লিকেশন ফর্ম বাতিল ধরে পুণরায় এপ্লিকেশন ফর্ম পূরন করতে হবে।

  • ফর্মে জানতে চাওয়া হবে আপনি কিভাবে ভারতে যেতে চান, আকাশপথে গেলে এক হিসাব আর স্থলপথে গেলে অন্য হিসাব। স্থলপথে যেতে চাইলে জানতে চাওয়া হবে কোন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত প্রবেশ এবং ভারত থেকে আবার বাংলাদেশে ফেরত আসতে চান। মনে রাখতে হবে যে বন্দর দিয়ে আপনি ভারত প্রবেশ করলেন ঠিক একই বন্দর দিয়ে আপনাকে দেশে ফিরতে হবে।

  •  ফর্ম পূরণের সময়ই তারা আপনার কাছে জানতে চাইবে আপনি কবে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে এসে ভিসার জন্য দেখা করতে পারবেন। তাদের প্রস্তাবিত তারিখগুলো সাধারণত ফর্ম পূরণের ৭ থেকে ১০ দিনের মত সময়ের মধ্যে হয়। চেষ্টা করুন আপনার সুবিধামত যত আগে সম্ভব সেই তারিখটি বাছাই করতে, কারণ একবার চেষ্টা করে ভিসা না পেলে আবার আপনাকে পুরো প্রক্রিয়া প্রথম থেকে শুরু করতে হবে, যাতে আপনার ভিসা প্রাপ্তি অন্তত পক্ষে ১০-২০ দিন পিছিয়ে যেতে পারে।

  • কেউ যদি দেখা করার সম্ভাব্য তারিখ না পান তবে এপ্লিকেশন ফর্মে আবার গিয়ে  ডান কোণে রি-প্রিণ্ট অপশনে গিয়ে জন্ম তারিখ এবং ওয়েব রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে পুনরায় চেক করে নিন।

  • এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করা শেষে পূরণকৃত ফর্মটি প্রিন্ট করুন, প্রিন্ট করতে না পারলে রি-প্রিন্ট অপশনে গিয়ে প্রিন্ট করুন।


 

দ্বিতীয় ধাপঃ ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার ভ্রমণ

এবার এপ্লিকেশন ফর্মে উল্ল্যেখিত তারিখে ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার দর্শন। আপনাকে নির্দিষ্ট ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে ঢুঁ মেরে আসতে হবে। তবে শুধু মুখ প্রদর্শন করে আসলেই চলবে না, পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ প্রদর্শন এবং প্রদান, উভয়ই করতে হবে। ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের (Indian Visa Application centre, IVAC) বাইরে ভিড় দেখে দমে যাবেন না, কারণ আপনার কাজ জলবৎ তরলং ঃ

[caption id="attachment_202" align="alignleft" width="300"]Screenshot of www.ivacbd.com Screenshot of www.ivacbd.com[/caption]

  • রাজশাহী, সিলেট এবং চট্রগ্রাম বিভাগের মানুষজন তাদের নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে (IVAC Rajshahi, IVAC Sylhet অথবা IVAC Chittagong) যাবেন। বাদবাকি সকল বিভাগের মানুষজনকে ঢাকাস্থ গুলশান বা মতিঝিলের ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে (IVAC Gulshan অথবা IVAC Motijheel) উপস্থিত হতে হবে। www.ivacbd.com ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন সবগুলো IVAC এর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা।

  • IVAC এর ত্রিসীমানার আশেপাশে গিয়ে সর্ব প্রথম কাজ, দালালদের এড়িয়ে চলুন। বাপের বেটা হয়ে নিজের এই এতটুকুন কাজ নিজেই করুন।

  • পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্মটি এদিন জমা দিতে হবে। আপনার এক কপি ছবি লাগবে যা আপনি ফর্মটির সাথে আঠা দিয়ে এঁটে দিবেন। উল্লেখ্য, পাসপোর্ট বা অন্য কোন আকারের ছবি চলবে না। ছবিটির আকার একটু ভিন্ন; তা অবশ্যই ২” × ২” হতে হবে।

  • ফর্মের সাথে আরো লাগবেঃ আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট, মানি এন্ডোর্সমেন্ট এর কাগজ, আপনার স্থায়ী নিবাসের কাগজপত্র, বাসার Utility Bill এর কাগজ (এটা হতে পারে আপনার বাসার টেলিফোন বিল, ইলেকট্রিসিটি বিল, গ্যাস বিল অথবা পানির বিল, যেকোনটা), আপনি যেই পেশায় আছেন তার প্রমাণ ( যেমনঃ আপনি শিক্ষার্থী হলে আপনার Student ID card এর ফটোকপি ), আপনার ভোটার আইডি বা জন্ম সনদের ফটোকপি। এছাড়া ভিসার ধরণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমনঃ কনফারেন্স ভিসার জন্য কনফারেন্সে যোগদানের আমন্ত্রণ পত্র বা স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র ইত্যাদি প্রয়োজন।

  • ভিসা প্রসেসিং ফি বাবদ ৪০০ টাকা দিতে হবে।

  • তারা আপনাকে একটি স্টিকার দিবে এবং পুনরায় দেখা করার তারিখ জানিয়ে দিবে, যেদিন আপনি এসে আপনার পাসপোর্ট ফেরত নিতে যাবেন।


এটা দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারগুলোতে অত্যাধিক চাপ ও অন্যান্য কারণে বাংলাদেশীরা আশানুরূপ সেবা পায় না। কাজেই সেখানে গিয়ে তাদের সাহায্যের আশা না করে যাওয়ার আগেই গুছিয়ে ফেলুন সকল কাগজপত্র।  এক্ষেত্রে আরেকটি উল্ল্যেখ্য বিষয় হল, IVAC  কাগজপত্র জমা রাখা সহ আরো অনেক কাজ করলেও ভিসা দেয়ার মূল ব্যাপারটি ভারতীয় দূতাবাসের হাতে।

তৃতীয় ধাপঃ অপেক্ষা এবং ফলাফল

পাসপোর্ট IVAC এ জমা দানের পর তাদের জানানো পাসপোর্ট ফেরত নেয়ার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে আপনার ভিসা পাওয়ার কতদূর কি হল তা আপনি ঘরে বসেই জানতে পারবেন www.ivacbd.com এ গিয়ে বামপাশে Track Your Visa Application এ ক্লিক করে। তাদের প্রদত্ত স্টিকার নাম্বার আর ওয়েব রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করে আপনার ভিসার কাজের অগ্রগতি জেনে নিন। Processing দেখালে বুঝবেন কাজ চলছে, Not processed দেখালে বুঝবেন তারা আপনার ভিসার কাজ শুরু করেনি, Processed দেখলে বুঝবেন আপনার ভিসা নিয়ে তারা কাজ শেষ করেছে। আপানাকে পাসপোর্ট উঠিয়ে আনার একটি তারিখ দেয়া হলেও ভিসা এপ্লিকেশন Track করে যতদিন না দেখবেন Processed লেখা হয়েছে, ততদিন IVAC এ পুনরায় যাওয়া বোকামি। গেলে তারা আপনাকে একটি কথাই বলবেঃ “পরে আসেন, এখনো আপনার ভিসার কাজ শেষ হয়নি।” তবে খেয়াল রাখতে হবে, ৩ মাস এর মধ্যে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। নতুবা পাসপোর্টের দায়ভার IVAC  নিবে না। সবশেষে Processed লেখা দেখে আপনি IVAC এ গিয়ে আপনার পাসপোর্ট ফিরিয়ে আনবেন, পাসপোর্টের পাতা উল্টিয়ে দেখবেন কাঙ্খিত ভারতের ভিসা পাসপোর্টে লেগেছে কিনা।

[caption id="attachment_201" align="aligncenter" width="300"]Indian Visa, Photo Courtesy: www.embassy-dhaka.yogsutra.net Indian Visa, Photo Courtesy: www.embassy-dhaka.yogsutra.net[/caption]

না লাগলে কপাল খারাপ, শুরু থেকে আবার শুরু করুন।

আর ভিসা একবার লেগে গেলে বাড়ি গিয়ে লাগেজ গোছান। ভারতের কাঁটাতার আর কোন বাঁধাই না।

Wednesday, August 28, 2013

মার্টিন লুথার কিং এর স্বপ্নের ৫০ বছর

ভাবতে অবাক লাগে যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের পরাশক্তি সেখানে কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আজ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে পরিণত হলো? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কি তবে আলাদিনের চেরাগ আছে? একটা চেরাগ তো আছেই। সেটি হলো তাদের বর্ণবাদহীনতা। রেসিয়ালি ডাইভার্সড রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আজ মার্কিন মুল্লুকে বর্ণবাদ সবচাইতে কম। হ্যাঁ, বর্ণবাদ যে নেই তা না, কিন্তু তা মোটেই ভয়ানক নয়। এই মার্কিন সাম্রাজ্যই ছিল বর্ণবাদের তীর্থস্থান। অথচ আজ তারা সব বর্ণবাদ ভুলে গিয়ে “We the Americans” স্লোগানে বিশ্বাসী। কালো, ধলো, বাদামী, লাল- ত্বকের বর্ণ যাই হোক না কেন, সবাই আমেরিকান। আমেরিকানরা যেদিন থেকে এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে পেরেছে সেদিন থেকেই তারা বিশ্বের এক নম্বর শক্তিশালী হতে শুরু করেছে।

“গায়ের রঙের ভিত্তিতে কোনো নাগরিককে বৈষম্যের ফাঁদে ফেলা যাবে না”- এ আন্দোলন বহুদিনের। কিন্তু এই আন্দোলন পূর্ণতা পায় ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসির লিংকন স্কয়ারে সিভিল রাইট অ্যাক্টিভিস্ট মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আই হ্যাভ আ ড্রিম বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। এই বক্তৃতাটি ছিল আফ্রিকা-আমেরিকান নাগরিকদের “March on Washington for Job & Freedom” নামক সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লং মার্চ ও সমাবেশের একটি অংশ। আমেরিকার সামাজিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এটি সবচেয়ে বড় সমাবেশ। লাখ লাখ মানুষ সেদিন এ লং মার্চে যোগ দিয়ে সমর্থন যুগিয়েছিল। শুধু কালোরা নয়, লং মার্চে বর্ণবাদবিরোধী হাজার হাজার সাদা মানুষও ছিল সেদিন। মার্টিন লুথার কিং এর কালজয়ী এ বক্তৃতা শোনার জন্য বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ ও গাড়িতে করে লক্ষ লক্ষ মানুষ ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াশিংটন মনুমেন্ট থেকে লিংকন মেমোরিয়াল স্কয়ার চত্বর পর্যন্ত সমবেত হয়। ঐ দিনটি ছিল আব্রাহাম লিংকনের “Emancipation Proclamation” এ সই করার শতবর্ষ পূর্তির দিন। এই প্রোক্লেমেশনে সই করার মধ্য দিয়ে ১৮৬৩ সালে হাজার হাজার নিগ্রো দাস মুক্তি লাভ করে।

King_Jr_Martin_Luther_093.jpg

মার্টিন লুথার কিং তার বক্তব্যের শুরুতেই আব্রাহাম লিংকনের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান। লুথার কিং এর বক্তৃতার মূল বিষয় ছিল আমেরিকাতে বর্ণবাদের পতন। শতবর্ষ আগে বর্ণবাদ থেকে মুক্তির চুক্তি সাক্ষরিত হলেও আমেরিকার মাটিতে বর্ণবাদ বহাল তবিয়তেই বিরাজমান ছিল। কাগজে-কলমে ততদিনে সাদা-কালো বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক আইনই ছিল, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ছিল না। বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণের স্টেটগুলোতে কালোদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হতো। তাদেরকে সমাজে নিচু চোখে দেখা হতো। উত্তরের স্টেটগুলোতে বর্ণবৈষম্য অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক কম ছিল। লুথার কিং দক্ষিণের স্টেট জর্জিয়ার অধিবাসী ছিলেন। তাই বর্ণবাদের ভয়াল রূপ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন একদম কাছ থেকেই। ২৮ আগস্টের বক্তৃতায় তিনি এসব কথাই বলেন। তিনি তার স্বপ্নের কথা জানান যে একদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটি বর্ণবাদের কলঙ্কমুক্ত হবে। কালো ও অন্যান্য বর্ণের অধিকারী জনগোষ্ঠী সমাজে প্রাপ্য মর্যাদা পাবে। গায়ের রঙের ভিত্তিতে কাউকে যাচাই করা হবে না বরং সব নাগরিককে তার চরিত্রের ভিত্তিতে যাচাই করা হবে। মার্টিন লুথারের এই বক্তৃতা শুধুমাত্র কালোদের অধিকার আদায়ের ভাষণ ছিল না, বরং সকল বর্ণ, ধর্ম, গোত্রের মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তনের স্বপক্ষে ছিল তার অবস্থান। তিনি চেয়েছিলেন আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্য সাউথ ক্যারোলাইনা, অ্যালাবামা, লুজিয়ানা, জর্জিয়া, মিসিসিপিতে বর্ণ-সন্ত্রাস নিপাত যাক। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ঘন্টা বাজুক নিউ ইউর্কের পাহাড় থেকে, কলোরাডোর তুষারশুভ্র পর্বতচূড়া থেকে এমনকি জর্জিয়ার পাথরের পাহাড় হয়ে মুক্তির সেই ঘন্টাধ্বনি ছড়িয়ে পড়ুক মিসিসিপি ও টেনেসির পর্বতমালায়।

400martin_luther_king_jr

মার্টিন লিথার কিং জুনিয়র তার জীবদ্দশায় বর্ণ বৈষম্যের পতন দেখে যেতে পারেন নি। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল টেনেসিতে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন।  কিন্তু আজ তার স্বপ্নের আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত। ২০০৯ সালে তার আমেরিকার হোয়াইট হাউজে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কালো মানুষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রবেশ করেন। আজ বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো দেখে যেতে পারতেন তার ভাষণটি ১৯ শতকের সেরা ভাষন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গিয়েছে।

আজ ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের কালজয়ী I Have A Dream ভাষণটির অর্ধশত বার্ষিকী পূর্ণ হলো আজ। এই মহান বক্তৃতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ দেশে দেশে মার্টিন লুথার কিং এর স্মরণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা আয়োজন। লুথার কিং দেখিয়ে গিয়েছেন কীভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ থেকে বৈষম্যের জীবাণু দূর করা সম্ভব। তার সেই কালজয়ী ভাষনের কারণেই হয়তো আজ আমেরিকার কালো, হিস্প্যানিক কিংবা অন্য বর্ণের অধিকারিরা নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমাতে পারে। লুথার কিং এর আত্মার শান্তি হোক।

পাঠক, যারা আমেরিকার বর্ণ বৈষম্যের আন্দোলন নিয়ে আরো জানতে আগ্রহী তারা ১৯৮৮ সালে নির্মিত Mississippi Burning ছবিটি দেখতে পারেন। জেন হেকম্যান ও উইলিয়াম ড্যাফো অভিনীত এই ছবিতে দেখানো হয়েছে ৬০ এর দশকেও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে কী ধরণের বর্ণ বৈষম্য ছিল। আইনের ফাঁক গলে কীভাবে সাদারা কালোদের নির্যাতন করতো। দক্ষিণের রাজ্য মিসিসিপিতে বর্ণ-বৈষম্য ও বর্ণ-সন্ত্রাস দূর করতে ফেডারেল সরকারকে কতটা বেগ পেতে হয়েছিল তাও দেখানো হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।

পৃথিবীর সব দেশে বর্ণবাদ নিপাত যাক সে প্রত্যাশা রইলো।

মার্টিন লুথার কিং এর ১৭ মিনিটের সেই ভাষণটির লিংক নিচে দেয়া হলো।

I HAVE A DREAM

Monday, August 26, 2013

ফার্স্ট এইডের প্রথম পাঠ - ABC of First Aid

[caption id="attachment_174" align="alignleft" width="180"]Photo Courtesy: www.info.emilcott.com Photo Courtesy: www.info.emilcott.com[/caption]

প্রাথমিক প্রতিবিধান বা First Aid আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোর একটি। দুর্ঘটনা কখনই কাম্য নয়, কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। কখন কে কোন পরিস্থিতিতে পড়ে তার কোন মা বাপ নেই। আর এসকল পরিস্থিতিতে First Aid এর দক্ষতাই জীবন-মরণের নির্ধারক হয়। তাই জন মত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সকলের উচিত জরুরি অবস্থা কিভাবে সামলাতে হবে তা জানা। এটা যতটা দক্ষতা নির্ভর ঠিক ততটা মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার।

প্রথমেই পরিষ্কার করে দেই, First Aid কোন চিকিৎসা না, প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী ডাক্তার না। যেকোনো জরুরি অবস্থায় একজন মানুষের চিকিৎসা করা প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর কাজ না, বরং দুর্ঘটনা ঘটে গেলে মানুষটার অবস্থার যেন অবনতি না হয় সে ব্যবস্থা করে ডাক্তারের কাছে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছানো প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর প্রধান কাজ। অনেক সময়েই তাৎক্ষণাত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে - শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে, বিষ শরীরে ছড়াতে থাকে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বেশির ভাগ সময় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। এসকল পরিস্থিতিতে First Aid এর বিকল্প নেই।

 

একজন প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর প্রথমেই দ্রুত কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে হয় –

  • কি কারণে রোগীর এই অবস্থা হয়েছে তা নির্ণয় করা।

  • কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে তা নির্ধারণ করা।

  • ডাক্তারের সাহায্য নেয়ার দ্রুততম পদ্ধতি নির্ধারণ (রোগীকে স্থানান্তর করে নিকটতম হাসপাতালে নেয়া অথবা ডাক্তারকে রোগীর নিকট নিয়ে আসা)।


জরুরি অবস্থা সামলানোর কিছু মূলনীতি –

  • মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, মাথা দ্রুত চালাতে হবে। কোন অবস্থাতেই ঘাবড়ানো যাবে না, আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না। ঠাণ্ডা মাথায় দ্রুত “আগের কাজ আগে এবং পরের কাজ পরে” ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রতিবিধান দিতে হবে।

  • আশেপাশে লোক থাকলে কাউকে দ্রুত সাহায্য আনার ব্যবস্থায় লাগিয়ে দিতে হবে। সব নিজে করতে গেলে কোনটাই ঠিকমত হবে না।

  • যতটুকু না করলে নয় শুধু ততটুকু করতে হবে। অযথা রোগীকে নাড়াচাড়া করা যাবে না, তা রোগীর জন্য কোন দিক দিয়েই সুখকর নয়।

  • প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর প্রস্তুত থাকতে হবে, হাতের কাছে যা আছে তার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।


Dr. ABC কে খবর দিন

কে এই Dr. ABC?

  •  D (Danger) – বিপদের কারণ বুঝতে হবে। যে কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি রোগীতে পরিণত হয়েছে সে কারণ আপনাকেও রোগীতে পরিণত করতে পারে। প্রাথমিক প্রতিবিধান দিতে গিয়ে যদি আপনারই প্রাথমিক প্রতিবিধানের প্রয়োজন হয়, তবে আপনাকে যে প্রাথমিক প্রতিবিধান দিতে যাবে তারও প্রাথমিক প্রতিবিধানের প্রয়োজন হবে (ইহা একটি দুষ্ট চক্র :P)। সব শুরুর আগে ভালভাবে নিশ্চিত হন যে বিপদ কেটে গেছে।

  • R (Response) – রোগীর পরিস্থিতি বুঝা খুবই জরুরি, তার সাড়া বা Response তার অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। রোগীকে জিজ্ঞেস করেন ও কেমন আছে (ভুলেও মুন্নি সাহার মত অনুভূতি জানতে যাবেন না :P)। উত্তর পেলে বুঝবেন রোগী অচেতন হয়ে যায় নাই, শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক আছে, হৃদস্পন্দন ঠিক আছে। উত্তর না পেলে ABC তে চলে যান।


 

[caption id="attachment_205" align="aligncenter" width="300"]ABC of First Aid ABC of First Aid, Photo Courtesy: www.firstaid-supply.com[/caption]


    • A (Airway) - শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারলে রোগী কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচবে না। শ্বাসনালী কোন কারণে বন্ধ থাকলে তা খুলতে হবে। চিবুক ধরে মাথা পিছনের দিকে কাত করলে (যেন চিবুক উপরে থাকে) শ্বাসনালী মুক্ত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে।

    • B(Breathing) - পরিক্ষা করে দেখেন রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক কিনা। নাকের কাছে কান নিয়ে শুনেন বাতাস ভিতরে যাচ্ছে বা বের হচ্ছে কিনা, হাত দিয়ে দেখেন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক কিনা। শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক না থাকলে যে করেই হোক শ্বাস স্বাভাবিক করতে হবে, প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে (এই বিষয়ে পরবর্তী পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা হবে)।

    • C (Circulation) – রক্ত চলাচল স্বাভাবিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে তা বন্ধ করতে হবে, রক্ত কোথাও চলাচল না করলে তা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করতে হবে। রোগীর পাল্‌স পরীক্ষা করে দেখতে হবে স্বাভাবিক আছে কিনা। পাল্‌স না থাকলে CPR (পরবর্তী পোস্টে আলোচ্য) দিতে হবে।




  • স্নায়বিক আঘাত বা Shock প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্নায়বিক আঘাতে অনেক সময় রক্তচাপ কমে যায়, ফলে মস্তিষ্কে রক্তের পরিমাণে ঘাটতি দেখা যায়। দুর্ঘটনার সময় এই পরিস্থিতি রোগীর অবস্থার আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটাতে পারে। রোগীর চেতনা থাকলে বারবার আশ্বস্ত করতে হবে, রোগীর মানসিক শক্তি তার নিজের অবস্থা উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।


পুড়ে গেলে, বৈদ্যুতিক শক লাগলে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, হার্ট অ্যাটাক হলে, এজমা অ্যাটাক হলে, হাড় ভেঙ্গে গেলে - ফার্স্ট এইড একেক পরিস্থিতির জন্য একেকরকম। পরবর্তী পোস্টে দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলোর ফার্স্ট এইড নিয়ে আলোচনা হবে।

Sunday, August 25, 2013

দিক ঠিক করুন - কম্পাস ছাড়াই !

সত্য কথা বলতে আমরা ঢাকাবাসীরা দিক নিয়ে বেশি চিন্তা করি না, চিন্তার কোন প্রয়োজনও পড়ে না। কোন দিক পূর্ব বা পশ্চিম, তাতে আমার কি? রাস্তা চিনলেই ঢাকা শহরে চলা যায়, রাস্তা কোন দিক যায় তাতে কার কি আসে যায়? ডান বাম চিনলেই চলে। আমার নানা জাতীয় মুরুব্বি শ্রেণীর লোকেরা যখন বলে “রাস্তা ধরে গেলে পশ্চিম দিকের তৃতীয় বাসাটা”, তখন বড় কষ্ট হত চিনতে। আমার ধারণা ঢাকার অধিকাংশ তরুণ বয়সীদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোন প্রয়জনে না হলেও, শুধু মজার জন্য হলেও চেষ্টা করে দেখেন, একবার উত্তর দক্ষিণ এর মজা পেয়ে গেলে পৃথিবীর কোন জায়গায় চলতে সমস্যা হবে না। এমনকি মানচিত্র পড়াও অনেক সহজ হয়ে যাবে। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে শরীরের ভিতর একটা built in কম্পাস তৈরি হয়ে যাবে, যেদিকেই যাই না কেন, দিক ঠিক থাকবে। আর এই দক্ষতা সারা জীবন কঠিন সময়ে কাজে দিবে, বিশেষ করে যখন কোথাও ভ্রমণে যান, কিংবা “Man vs Wild” পরিস্থিতিতে পড়েন।

কম্পাস ব্যতিত দিক নির্ণয় ব্যাপারটা বেশি কঠিন না। কিছু মজার কৌশল আর কিছু common sense. আর এক দিক জানলে বাকি দিকগুলো এমনি বের হয়ে আসে। শুরুতেই কিছু চিরন্তন সত্য-

  1. সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে ও পশ্চিম দিকে অস্ত যায় (সারা জীবন আওড়ায়ে গেলাম, এখনও আওড়ায়ে যাব)।

  2. চন্দ্রও পূর্ব দিকে ওঠে ও পশ্চিম দিকে অস্ত যায় (যখন চন্দ্র থাকে আর কি)।

  3. ধ্রুব তারা উত্তর আকাশে থাকে (তাইতো ইংরেজিতে তাকে North Star বলে)।

  4. চুম্বক বা চৌম্বক জাতীয় পদার্থ মুক্ত ভাবে দুলতে দিলে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর স্থির হয়।


১। সূর্য দেখে – এটা খুব নিখুঁত না হলেও সবচেয়ে দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতি। সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়, শীতকালে খানিকটা দক্ষিণে এবং গ্রীষ্মকালে খানিকটা উত্তরে হেলে থাকে (বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী)। এবার common sense ব্যবহার করেন। দুপুর ১২ টায় সূর্যের দিকে তাকালে কোন দিকে হেলে আছে তা দেখলেই দিক বোঝা যায়। নতুবা সূর্যের পথ কিছুক্ষণ খেয়াল করলেই দিক অনুমান করা যায়।

২। দিনের বেলা ছায়া থেকে – এই পদ্ধতিটা আরেকটু নিখুঁত। একটা লাঠি খাড়া সোজা করে মাটিতে পুঁতবেন। ওটার ছায়ার মাথা বরাবর একটা তক্তা গাড়বেন। ছায়া বেশ কিছুটা সরে গেলে আবার ছায়ার মাথা বরাবর আরেকটা তক্তা গাড়বেন। দুইটা তক্তা বরাবর সোজা রেখা টানলে তা পূর্ব-পশ্চিম নির্দেশ করে। যে তক্তা প্রথম গাড়লেন তা সবসময়েই পশ্চিম, কারণ - চিরন্তন সত্য - ১।

৩। Analog ঘড়ি ব্যবহার করে – এটা একটা মজার পদ্ধতি। ১২ টা বাদে দিনের যেকোনো সময়ে Analog ঘড়ির ঘণ্টার কাটা সূর্যের দিকে তাক করেন। এরপর ঘণ্টার কাটা ও ঘড়ির “১২” লেখার মধ্যবর্তী সূক্ষ্মকোণকে দ্বিখণ্ডিত করে একটা রেখা টানলে তা সবসময়ে দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে।

[caption id="attachment_172" align="aligncenter" width="300"]Photo Courtesy: www.wikihow.com Photo Courtesy: www.wikihow.com[/caption]

1. Photo courtesy: www.wikihow.com


৪। চুম্বক বা চৌম্বক পদার্থের সাহায্যে – একটা চুম্বক থাকলে তো কোন কথাই নাই, Jackpot! সুন্দর করে সুতার সাহায্যে চুম্বকটা ঝুলিয়ে দেন। এটা উত্তর দক্ষিণ বরাবর স্থির হবে। নতুবা একটা খুব হালকা চৌম্বক পদার্থকে (সুঁই হতে পারে, কিন্তু দেখে নিতে হবে তাকে চুম্বক আকর্ষণ করে কিনা। অনেক সুঁই আজকাল শঙ্কর ধাতু দিয়ে বানানো হয়, যাকে চুম্বক আকর্ষণ করে না) হালকা ভাসমান পাটাতন (platform) এর উপর রেখে পানিতে ভাসায়ে দিলে (তা যদি মুক্তভাবে নড়তে পারে) সেটা উত্তর-দক্ষিন বরাবর স্থির হবে।

এই পদ্ধতি অত্যন্ত নিখুঁত, কিন্তু উত্তর-দক্ষিন চেনা গেলেও কোন দিক উত্তর বা দক্ষিন তা নির্ণয় করা যায় না। তার জন্য উল্লেখিত অন্য যেকোনো পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে।

৫। তারার সাহায্যে – সপ্তর্ষি মণ্ডল বলে উত্তর আকাশে সাতটি তারার সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা যায়, যাকে ইংরেজিতে big dipper বলা হয়। এর মাথার দুটি তারাকে যোগ একটি লাইন টানলে তা ধ্রুব তারায় গিয়ে পড়ে।

big_dipper


2. Photo courtesy: www.wikihow.com


৬। মসজিদ, মন্দির, গির্জার সাহায্যে – মসজিদ এর দরজা সবসময়ে পূর্ব দিকে হয়, সেজদার দিক হয় পশ্চিম (বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে)। সাধারণত মন্দির দখিন-দুয়ারি হয়, গির্জা পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হয়। গির্জার উপরের ক্রস চিহ্ন পশ্চিম দিকে হয়।

এছাড়া ভাই, ঢাকাবাসীদের জন্য বলছি, উত্তরা ঢাকার উত্তর মাথায়, সদরঘাট দক্ষিণে। কাকরাইল থেকে মগবাজার-মহাখালি-বনানি-এয়ারপোর্ট, পুরা রাস্তাটা কম বেশি উত্তর-দক্ষিন বরাবর। এর আনুমানিক সমান্তরাল রাস্তা শাহবাগ থেকে ফার্মগেট হয়ে ক্যনটনমেনট এর ভিতর দিয়ে চলে গেছে। এর বাম পাশে (পশ্চিমে) আজিমপুর, ধানমণ্ডি, মোহাম্মাদপুর, মিরপুর এলাকা; ডানে (পূর্বে) মতিঝিল, হাতিরঝিল, শান্তিনগর, রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা এলাকা। দুই রাস্তার মাঝখানে রমনা, তেজগাঁও, নাখালপাড়া এলাকা। দিক বুঝা কি খুব কঠিন?

Saturday, April 27, 2013

যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া

সাভার হত্যাকাণ্ডের ১০০ ঘণ্টা পার হতে চলল ! স্বাভাবিক নিয়মেই এবার বিস্মরণের পালা ! দুই দিন ধরে অনেক ভাবার চেষ্টা করসি কিভাবে কিছু করা যায় । কিন্তু সত্যি হল এখনও কোন way খুঁজে বের করতে পারলাম না। Scale, magnitude, ability নিয়ে যদি না ভাবতে চাই তাহলে এই মুহূর্তে করণীয় হল এগুলো:

১. আহতদের চিকিৎসা continue করা
২. আহতদের পুনর্বাসন করা
৩. মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, especially যারা বাবা-মা বা উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে এমন শিশুদের পাশে থাকা
৪. ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সাহায্য প্রদান করে সরবোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা

এখন কথা হচ্ছে আমরা কোনটার কতটা করতে পারবো, নাকি কিছুই করব না।

১, ২ আর ৩ নাম্বারের কথা যদি বলি, প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের খুঁজে বের করা। ধরা যাক আমরা এরকম ৫০০ মৃত/জীবিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সন্ধান পেলাম । প্রত্যেকের পেছনে ১০০০ টাকা করেও যদি ধরি আমাদের দরকার প্রাথমিক ভাবেই ন্যুনতম ৫ লক্ষ্ টাকা ! যদি মনে করি এভাবে এতজনকে টার্গেট করা সম্ভব নয় তাহলে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এমন ১০ জন অভিভাবকহারা বা সর্বস্ব হারানো মানুষকে যাদের কে এই ফান্ড থেকে কোন substantial amount donate করা সম্ভব হবে।

কিন্তু আমার কাছে ক্রমশই যেটা মনে হচ্ছে যদি আমরা ৪ নম্বর point টাতে জোর দেই এবং ইনশা আল্লাহ্‌ সফল হই তাহলে উপরের ৩ টা ইস্যুকেই আমাদের পক্ষে address করা সম্ভব হবে। ২০,০০০ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া দাফনের খরচ (আমার বাবা যখন মারা যান আমাদেরও এটা দেয়া হয়েছিল), এটা কিন্তু ক্ষতিপূরণ নয় ! আমাদের শ্রমআইনে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু কিংবা অঙ্গহানির নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ উল্লেখ আছে, কিন্তু সেটা সাধারণ অবস্থার উপর ভিত্তি করে। যদি এটা প্রমাণ করা সম্ভব হয় এই প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি আসলে সরাসরি দায়িত্বে অবহেলা বা খামখেয়ালি কারণেই হয়েছে তাহলে কি আমরা আরও বেশি ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবো না ? এই বিষয়টা নিয়ে আমি এখনই আমার আইনজ্ঞ বন্ধু এবং বড় ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই । আমরা যদি এই আইনি লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি তাহলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটা স্থায়ী সমাধানের পথে আমরা অনেকটাই এগিয়ে যাব । তাই আমার মনে হয়, এখন আমরা ফান্ড রেইজ করে সরাসরি এই আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি । আমার ব্যক্তিগত অভিমত কোন সংগঠন বা এনজিও'র উপর ভরসা না করে আমরা নিজেরাই আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে এই কাজটা শুরু করে দিতে পারি ।
দয়া করে এই ব্যাপারে আপনার ভাবনা গুলো আমাদের জানান। আল্লাহ্‌ আমাদের সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করুন । আমিন।

Tuesday, March 19, 2013

অফিসে ঢুকিয়া আমি মনে মনে বলি - In pursuit of Happiness at Work

(www.inc.com - এ প্রকাশিত একটা চমৎকার প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ, নিজের জন্য খুব দরকার মনে হল, আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে ভেবে শেয়ার করলাম)

না,  কর্মক্ষেত্রে সুখের সন্ধানে নতুন কিছু, রোমাঞ্চকর কিছু করার দরকার নেই বরং দেখুন পুরনো এই Attitude-গুলোকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন কিনা !

smile-frown-cupcakes_pan_20791

১. 'তোমার জন্যই এমনটা হল' - Stop blaming. ভুলটা হতে পারে আপনার অধীনস্থের, সহকর্মীর, সাপ্লায়ারের, এমনকি আপনারও ! দেখুন আপনার যা যা করার ছিল তা আপনি ঠিক মত করেছেন কিনা ।Get smarter, get happier.

২. 'আমি যথেষ্ট ইম্প্রেসিভ তো ?' - Do not try this at home, or out of your home! আপনার হালকা নীল রঙের শার্ট আর চোস্ত উচ্চারণের জন্য আপনাকে কেউ মূল্যায়ন করে না, করলেও সেটা মেকি আর ক্ষণস্থায়ী । 'নাইস গাই' হওয়ার চেষ্টা বাদ দিন । আপনি যা সেটা এমনিতেই বের হয়ে যাবে আর সেটার জন্যই মানুষ আপনাকে গ্রহণ বা বর্জন করবে, পিরিয়ড !

৩. 'এই ব্যাপারটা যেভাবেই হোক আমার হাতে রাখতে হবে' - অফিসে ইনসিকিওরড ফিল করে কোন কাজ বা know-how শুধু নিজের কাছে রেখে বসে আছেন ? কিন্তু এভাবে কি খুব স্বস্তি পাচ্ছেন ? নতুন চ্যালেঞ্জ নিন, নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যান । সফল হন বা না হন, এট লিস্ট, নিজের কাছে ক্লিয়ার থাকতে পারবেন যে you gave your best to win!

৪. 'আচ্ছা, আচ্ছা, তোমার সব কথাই বুঝলাম, কিন্তু...' - আপনি যখন এ কথাটা কাউকে বলেন তার মানে হচ্ছে আপনি আসলে তাকে বোঝার কোন চেষ্টা করছেন না, আপনি শুধু আপনি যা আগে থেকেই ভেবে এসেছেন সেটা তার উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন, ভুল বললাম ? একবার ভাবুন, আপনি কি সত্যি চান আপনার চারপাশের মানুষেরা আপনাকে ভালবাসুক, শ্রদ্ধা করুক ? তাহলে মন দিয়ে তাদের কথা শুনুন, ফোকাস করুন, প্রশ্ন করে তার কাছ থেকে আরও বিস্তারিত জেনে নিন ! They'll love you for it--and you'll love how that makes you feel.

৫. 'এতো সমস্যার মধ্যে কাজ করা যায় ? কপালটাই খারাপ ' - আপনার এই নেতিবাচক ভাবনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কিন্তু আপনার ওপরই, এবং সেটা কিন্তু ইতিবাচকভাবে নয় ! আপনার যদি মনেই হয় কোথাও ঝামেলা আছে তাহলে হাতা গোটান আর কাজে লেগে যান সেটাকে দূর করতে, অবশ্য যদি না আপনি অনন্তকাল সেটা নিয়েই ঘ্যানঘ্যান করতে চান !

একটা কাজ কেন হচ্ছে না সেটা নিয়ে গবেষণা বাদ দিয়ে দেখিয়ে দিন কিভাবে সেটা করা সম্ভব ! আর হ্যাঁ, আপনার চারপাশের মানুষগুলোকেও এই ছিঁচকাঁদুনে মানসিকতা থেকে বাঁচতে শেখান । সহানুভূতি জানাবার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল  আপনার বন্ধুদের শিখিয়ে দেয়া কিভাবে সে খারাপ সময়টাকে মোকাবেলা করতে পারবে তা জানা ।

৬. 'এখানে আমিই বস, সেই ১৯৫৩ সাল থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে যাচ্ছি' - কি এসে যায় তাতে ? সত্যিটা হচ্ছে নিজেকে ছাড়া আর খুব কম জিনিসকেই আপনি আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, সে আপনি যতই আপনার অধীনস্থদের ওপর Company Goal, Objective, Target, Culture ইত্যাদি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন না কেন ! অনবরত চাপ, ভয় বা কর্তৃত্ব ফলিয়ে হয়ত শর্টটার্মে আপনার কাজ হাসিল হবে, কিন্তু এই অবিরাম clash, conflict, stress কি আপনাকে শান্তি বা স্বস্তি দেবে ?

এর চেয়ে অনেক ভাল না এমন একদল সহযোদ্ধার সাথে কাজ করে যাওয়া আপনার পথ ও গন্তব্য দুটোই যারা নিজেদের করে নিয়েছে ? আপনার বোঝা, আপনার লক্ষ্য তখন শুধু আপনার একার থাকবে না বরং আপনার প্রতিটি সহকর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আপনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে । And, of course, with a smiling face!

৭. 'এটা কিছুই হয়নি, সরি, এই কাজ আমি করলে আরও অনেক ভাল করতে পারতাম' - হ্যাঁ, আপনি আরও অনেক এডুকেটেড, ইন্টেলিজেন্ট, স্মার্ট, আপনার অভিজ্ঞতাও বেশি, কিন্তু আপনি যদি আসলেই চান এ কাজটা অন্য কেউ আরও ভালভাবে করুক তাহলে তার কাজের পজিটিভ মূল্যায়ন করুন, মেনে নিন যে সে এটা তার মত করেই করবে আপনার মত করে নয় ! এমনও হতে পারে না, আপনার মনমত না হলেও কাজটা হয়ত সম্পূর্ণ নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে গোটা ছবিটায় ?

৮. 'এটা আমি আগেই জানতাম' - সফলতার একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে এটা মনের ভেতর একটা ধারণা তৈরি করে দেয় যে আমি তো সব জানিই, so I'm the Man to show you the way! আপনার এই 'ধর্মযাজক' সুলভ মনোভাব আপনার সাথে আপনার সহকর্মীদের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে, তারা আপনার কথা শুনতে বাধ্য হলেও মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করবে । If you want to be happy at work, be one of the workers, not the lonely lighthouse!

৯. 'ওই ভুলটা যদি না হত' - হাঁটিতে শেখে না কেহ না খেয়ে আছাড় ! অতীতের ভুল থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে ব্লা ব্লা ব্লা... বলা সহজ, তবে নিজেকে শুধরে নিয়ে ভুলটাকে ভুলে যাওয়া আসলেই কঠিন ! অতীতের ভুল থেকে আপনি কতটা শিখছেন তা নির্ভর করে আপনি কি দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটাকে দেখছেন তার ওপর। এভাবে ভাবুন না, আপনি যখন কোন ভুল করলেন সেটা হল আপনি জানতেন না এমন নতুন কিছু শেখার একটা সুযোগ ! ভুলটা যদি অন্য কারও হয় তাহলে ভাবুন না কেন এটা আসলে মানুষ হিসেবে আপনার উদারতা বা সহনশীলতার একটা পরীক্ষা !

মনে রাখুন, অতীত আপনাকে শেখায়, আপনাকে চেনায় না ! নিজের জাত চেনানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল বর্তমান আর ভবিষ্যতের পদক্ষেপগুলোকে ঠিক করে নেয়া, your past is just a training!

১০. 'যদি এটা কাজ না করে?' - আমরা সবাই ভয় পাই, ভয় পাই ব্যর্থতার অথবা ভয় পাই 'লোকে কি বলবে' এটা ভেবে ! আর এই ভীতি আমাদেরকে বাধ্য করে 'সঠিক' মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করতে, বোঝায় আরও ভেবেচিন্তে তারপর কাজটায় নামতে । সেই সঠিক সময় আর পরিকল্পনা আসতে আসতে কেটে যায় সপ্তাহ, মাস এমনকি বছর ! সেই সাথে পিছিয়ে যেতে থাকে আমাদের স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা ! ঝেড়ে ফেলুন এই অতিসাবধানী জড়তা !

নতুন ব্যবসা উদ্যোগে হাত দিতে চান, প্রথম পদক্ষেপটা নিন আজকেই; নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে চান, প্রথম পদক্ষেপটা নিন আজকেই; নতুন সার্ভিস লঞ্চ করতে চান, প্রথম পদক্ষেপটা নিন আজকেই !

ভয় কে বুড়ো আঙুল দেখান । মনে মনে যা ভাবছেন তা কালকের জন্য ফেলে রাখার মানেই হচ্ছে আপনি আসলে হারিয়ে ফেলছেন আজকের দিনটাকে । 'Today' is the most precious asset you own, এবং এটাকে অপচয়ের আশংকাই হওয়া উচিৎ আপনার আসল ভয় !

মূল প্রবন্ধঃ http://www.inc.com/jeff-haden/how-to-be-happier-work-10-things-stop-doing.html?comid=89533