না, এই লেখায় গণতন্ত্রের জটিল, কঠিন তত্ত্ব নিয়ে কোনো আলাপ হবে না। অ্যারিস্টটল, উড্রো উইলসনদের বাণী কোট করা হবে না। গুরুগম্ভীর বুদ্ধিজীবীয় আলোচনা না বরং গণতন্ত্র কাজীর কিতাবে কীভাবে আছে আর বাংলার রাজপথে কীভাবে চলছে তা নিয়ে সামান্য কথা বলাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ।
আমাদের দেশে পলিটিক্সই গণতন্ত্র। চায়ের দোকান থেকে নেত্রীর ড্রয়িং রুম, সবখানে পলিটিক্স কর্তৃক গণতন্ত্রের ধর্ষিত হবার পায়তারা চলে আসছে। গণতন্ত্র কী বলে আর আমরা কী করি, এই নিয়ে বাঘা বাঘা কলামিস্টদের অনেক লেখা আছে। সেদিকে না গিয়ে যদি সহজভাবে চিন্তা করি তাহলে গণতন্ত্র বলতে আমরা কী বুঝি? জনগণের শাসন। খুলে বললে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। শতকরা ৫১ ভাগ পাবলিক যা ভাববে তাই হবে, তাই তো? প্রত্যেক ভোটের মান সমান। যিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের নিরাপত্তা নিয়ে থাকেন আর যিনি গভীর রাতে ঢাকা শহরের অন্ধগলিতে ছিনতাইয়ের শিকার হন, উভয়ের ভোটের মান সমান। যিনি চা-নাস্তার ব্যবস্থা না করলে ফাইল ছাড়েন না আর যিনি সততার কারণে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে হিমসিম খান, দু'জনেরই ভোটের গুরুত্ব এক। তত্ত্বগতভাবে গণতন্ত্রের অনেক ফ্ল আছে। কিন্তু গণতন্ত্রই সেরা অপশন। রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সেনাশাসন এসবের থেকে গণতন্ত্র উত্তম। গভরমেন্ট বাই দ্য পিপলের চেয়ে সেরা আর কি হতে পারে? কাগজে-কলমে গণতন্ত্র তো তাই-ই, নাকি?
গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে দেশে দেশে নানা আইন-কানুন আছে। বাংলাদেশের সংবিধানও তার ব্যতিক্রম নয়। সংবিধান অনুসারে জনগণের নিরাপত্তা বিধানই প্রথম প্রায়োরিটি। কোনো নির্বাচিত সরকার চাইলেও সংবিধান সংশোধন করে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারবে না। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য। কেন বাধ্য? কারণ সংবিধানে আছে। আর সরকার তো নির্বাচনে জনগণের ইয়েস কার্ড পেয়েই এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জনগণের ইয়েস কার্ড পেয়ে দায়িত্ব পাওয়া (ক্ষমতা পাওয়া নয়) সরকার জনগণের সাথে নেমকহারামী করে। ড. আকবর আলী খানের 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' শীর্ষক একটি বই আছে। ঐ বইয়ে একটা অধ্যায় আছে “শুওরের বাচ্চার অর্থনীতি” নামে। ‘শুওরের বাচ্চা’ বলতে ওখানে বোঝানো হয়েছে তাদেরকে যারা ঘুষ খেয়েও কাজ করে না। আমি কাউকে শুওরের বাচ্চা বলতে রাজি না, সরকারকে তো নাই-ই। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার একটা সীমা আছে। সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় এসে গুন্ডাপান্ডা পালা কোনো ভালো কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুণ্ডা পালা, সেই গুণ্ডা কিছু করলে তাকে ছেড়ে দেয়া, গুণ্ডার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে পিটায় দেয়া, সবশেষে সরকারের বাজে কাজের সমালোচনা করলে বাসায় ডিবি-এসবি পাঠায় রিমান্ডে নেয়া তো নেমকহারামীর চূড়ান্ত। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে যে দল সরকারি দায়িত্ব নেয় সে কি করে জনগণের সমালোচনা, গাইল-মন্দ সহ্য করতে পারে না? আর জনগণই বা কেমন যে বাঁশ মারা দলরে বার বার বার ক্ষমতায় আনে?
তথাকথিতভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ছাত্র ও যুবক শ্রেণিকে টাকা দিয়ে পেলে-পুষে সাপ বানিয়ে নিজের পক্ষে স্লোগান শুনতে কি লজ্জা লাগে না রাজনৈতিক দলগুলোর? সংবিধানের অপরিবর্তনযোগ্য অনুচ্ছেদে উল্লেখিত জনগণের মৌলিক অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী কিংবা মধ্যাঙ্গুলী দেখিয়ে খর্ব করতে কি কোনো প্রকার বিবেকের দংশন কাজ করে না? শুধু রাজনৈতিক দলকে বলছি না, জনগণের টাকায় বেতন পাওয়া আমলাতন্ত্র, পুলিশতন্ত্র, আইনতন্ত্রকেও বলছি। মহানগরে কোনো সম্মেলন বা মিছিল যদি হানাহানি কিংবা জনগণের স্বাধীন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে তাহলে মহানগর পুলিশ সেই সম্মেলন বাতিল তো করতেই পারে এমনকি আগে থেকে সম্মেলনের অনুমতি নাও দিতে পারে। এই জ্ঞানের কথা আমার না, আইনের। তাহলে যেই দলের সরকারই ক্ষমতা আসুক না কেন সেই দলের গুন্ডাপান্ডারা কাউন্সিল করার জন্য, দলের নেতার জন্মবার্ষিকী, মৃত্যবার্ষিকী, বিবাহবার্ষিকী পালন করার জন্য জনগণের স্বাভাবিক চলাচল সারা দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়ে আনন্দ কিংবা শোক সম্মেলন চালায় কী করে? কোথায় থাকে তখন আইনের শাসন? কোথায় থাকে তখন সংবিধান অবমাননা? কোথায় থাকে তখন বিবেক মহোদয়?
No comments:
Post a Comment