Sunday, October 6, 2013

যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ফযিলত

Labbaik


আরবি বছরের যিলহজ মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতময় একটি মাস, বিশেষ করে এর প্রথম দশদিন । এই মাসের প্রথম দশদিন আমাদের জন্য পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের এক সুবর্ণ সময় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘এমন কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭]

যিলহজের এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন (৯ যিলহজ) বা বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত।

কোরবানির দিনও যিলহজের এই দশদিনের অন্তর্ভুক্ত। কোন কোন আলেমের মতানুসারে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে কোরবানির দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]

এই দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল ছাড়াও এই মাসের প্রথম দশদিন আরও কয়েকটি সহজ কিন্তু ফযিলতময় কিছু আমলের কথা আমরা বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে জানতে পারি।

  • সিয়াম পালন করা : মুসলমানের জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন করা। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’ [মুসলিম : ১১৬৩]


যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে পারে। তিরমিযি শরিফে আছে এই মাসের প্রথম দশদিনের যেকোন দিনের সাওম পুরো বছরের সাওমের সমান এবং এই রাতগুলোর ইবাদত লায়লাতুল কদরের ইবাদতের সমান।

  • তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’[বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]


আরেকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তাকবির হলঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ ।  যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত (৯ তারিখ ফজর সালাতের পর থেকে ১৩ তারিখ আসর সালাতের পর পর্যন্ত) প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

  • আল্লাহর কাছে এই মাসের একটি পছন্দনীয় আমল (মুস্তাহাব) হচ্ছে যিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে যারা কুরবানির নিয়ত করেছেন তাদের নখ বা চুলজাতীয় কিছু কাটা থেকে বিরত থাকা। [ইবনে মাযাহ]


এই দশদিনের পুরো ফযিলত অর্জন করার জন্য উপরের এই আমলগুলোর পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত আমলগুলো যেমন, দোয়া, জিকর, সালাত সহ যাবতীয় ভালো কাজও আরও বেশি বেশি করা প্রয়োজন।

মহান আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, গ্রহণযোগ্য আমল  এবং উত্তম রিজিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ লেখক আলী হাসান তৈয়বের যিলহজের প্রথম দশক : ফযীলত ও আমল

No comments:

Post a Comment