শব্দটা বাংলার চেয়ে ইংরেজিতেই ভাল শোনায়। অনেকে জীবনপঞ্জিকা বা জীবনবৃত্তান্ত বললে এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে। থাক ভাই, Resume বা Curriculum Vitae (CV) ই বলি, তাই ভাল।
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে Resume এর ব্যবহার বিবিধ। যেকোন formal জায়গায় কারো কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্যই মূলত এই ছোট সাহিত্য সমৃদ্ধ কাগজটির ব্যবহার। যার দরুন চাকরির আবেদন থেকে শুরু করে পাত্র/পাত্রি খোঁজা পর্যন্ত এর বিকল্প নেই। অপরিচিত কারো কাছে এই কাগজের টুকরাই আপনার প্রতিনিধি, পছন্দ না হলে আপনি বাদ ! বলার বাকি রাখে না এর গুরুত্ব কতটুকু। আপনার Resume লেখার দক্ষতা অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করে। তাই যত যত্ন নিয়ে সুন্দর করে লিখবেন, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি।
মজার কথা হল Resume লেখার কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই, বাংলাদেশের সংবিধানে এই সংক্রান্ত কোন ধারা নেই, প্রচলিত নিয়ম মেনে না লিখলে কেউ গ্রেপ্তার করতে আসবে না। যতটা সৃজনশীল হতে পারেন তত ভাল, অপরিচিত ব্যক্তির কাছে এটা আপনার সৃজনশীলতার পরিচয় দিবে। তাও কিছু মূলনীতি অনুসরণ করা ভাল, যে পড়ছে তার স্বাচ্ছন্দ আর অভ্যাসের কথা মাথায় রাখতে হবে। সবাই তো আর নতুনকে এত সহজে বরণ করে না। প্রথমেই কিছু মুলনিতি -
- যতটা সম্ভব সহজ করে এবং গুছিয়ে লিখবেন। আপনার জীবন এতটাও কঠিন হয় নাই যে কঠিন ভাষা ছাড়া লেখা যাবে না।
- দেখতে যেন ভাল লাগে সেই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এর জন্য গুছিয়ে লেখাটা অত্যন্ত জরুরি, যেন কোন অংশে কি তথ্য দেয়া হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। আপনি যা জানাতে চান তা bold বা italic করে দেন, যেন আলাদা ভাবে চোখে পড়ে। একাধিক ফন্ট ব্যবহার না করাই ভাল, দেখতে অগোছালো মনে হয়।
- অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিবেন না। আপনি স্কুলে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলেন কিনা বা আপনার ওজন কত তা কেউ জানতে চাওয়ার সম্ভবনা লাখে একটাও হবে না।
- কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন বাদ না পড়ে যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ কিছুতে আপনার দক্ষতা, আপনার প্রাপ্তি ও অর্জন, আপনার ভাল গুণাগুণ, এগুলো আপনাকে বাকিদের থেকে আলাদা করবে। লেখাপড়ার বাইরের অভিজ্ঞতাকে ছোট করে দেখবেন না।
- বেশি বড় Resume না লেখাই ভাল। মোটা কাগজের স্তুপ দেখলে কেউই তা পড়তে চাইবে না। এছাড়া কেউই পাতার পর পাতা ব্যক্তিগত তথ্য পড়বে না (যদি না তা ঠেকার কাজ হয়)। short and simple. তবে তাই বলে ছোট করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিবেন না।
- স্থান কাল পাত্র বিবেচনা করে লিখবেন, মাথায় রাখতে হবে কে এটা পড়তে যাচ্ছে। শুধু প্রাসঙ্গিক তথ্য রাখবেন। একজন Business Graduate আর একজন Engineer এর Resume এক হবে না; ঠিক তেমনি একজনের ১০ বছরের চাকরি অভিজ্ঞতার কাগজের ভার আর একজন নব্য স্নাতকের জীবনের অভিজ্ঞতার লিপিবদ্ধকৃত নথি কখনো এক হতে পারে না।
- বানান নিয়ে সাবধান, ভুলেও বানান ভুল করবেন না।
- ভুল তথ্য লেখা থকে বিরত থাকেন।
- Reference এর জায়গায় এমন কারো নাম দিবেন যারা আসলেও আপনাকে চিনে। অনেকেই Reference এর সাথে যোগাযোগ করে আপনার সম্পর্কে জানতে চায়।
- ছবি যদি দিতে হয় তবে ১৯৪২ সালে তোলা ছবি দিয়েন না। চেষ্টা করেন আপনার সাথে বর্তমানে মিল আছে এমন ছবি দিতে।
এবার বিষয়বস্তু সংক্রান্ত কিছু জেনে নেয়া যাক –
আপনার Resume আপনার সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে বলবে। কি কি তথ্য দিবেন তা সম্পর্কে কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। চিন্তা করেন যেখানে Resume জমা দিবেন সেখানে আপনার সম্পর্কে কি কি জানতে চাইতে পারে।
- আপনার সম্পর্কে – আপনার নাম, ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, বয়স, যোগাযোগের জন্য ফোন বা ইমেইল ইত্যাদি।
- আপনার শিক্ষা সম্পর্কে – কোথা থেকে কি বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, কবে করেছেন, আপনার specialization, রেজাল্ট ইত্যাদি।
- আপনার অর্জন সম্পর্কে – আপনি জীবনে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করেছেন কিনা, কোন কাজে বিশেষ অর্জন বা সম্মাননা পেয়েছেন কিনা ইত্যাদি।
- আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে (চাকরির ক্ষেত্রে) – আপনি কোন চাকরি করছেন কিনা, করলে কত বছর থেকে করছেন, কি কি কাজ করেছেন, কি কি কাজের দক্ষতা অর্জন করেছেন ইত্যাদি।
Resume লিখতে অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কোন পদ্ধতি অনুসরণ না করে লিখলেও কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে চাকরির জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে ক্রমে তথ্য দেয়া হয় তা হল –
[caption id="attachment_566" align="aligncenter" width="275"] Photo Courtesy: bestcareerresumewebsite.blogspot.com[/caption]
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কাগজের এক কোণায় দিয়ে দেন, যেন যোগাযোগের প্রয়োজন হলে পাতা উল্টায়ে ফোন নাম্বার বা ইমেইল/ঠিকানা না খুঁজতে হয়।
- আপনার লেখাপড়ার ইতিহাস, সর্বশেষ থেকে শুরু করে সবার শুরুতে শেষ করেন, অর্থাৎ সর্বশেষ যে ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন তা সবার আগে উল্লেখ করেন (তারিখ, রেজাল্ট, প্রতিষ্ঠান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সহ), তারপর তার আগেরটা, তারপর তার আগেরটা। এতে আপনার বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝতে সুবিধা হয়। একইভাবে সর্বশেষ থেকে শুরু, শুরু সর্বশেষে।
- কোন চাকরি অভিজ্ঞতা, তা সর্বশেষ থেকে শুরু, শুরু সর্বশেষে।
- চাকরিতে কিংবা কাজকর্মে সহায়ক আপনার বিশেষ কিছু দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ।
- লেখাপড়ার বাইরে আপনার অন্যান্য অভিজ্ঞতা ও অর্জন।
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। খেয়াল রাখবেন, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েন না।
- References. এক্ষেত্রে অনেকের মতে, নির্দিষ্ট কারো নাম ও যোগাযোগের বিস্তারিত না দিয়ে শুধু উল্লেখ করে রাখা ভাল যে প্রয়োজনে reference দেয়া যাবে। অনেকে আবার ভিন্নমত পোষণ করেন।
ব্যপারটা খুব কঠিন না। সাহায্যের দরকার হলে ইন্টারনেট হাজার হাজার টেম্পলেট পাবেন। তবে পুরাপুরি টেম্পলেট অনুসরণ না করাই আমার মতে ভাল। সবাই তো টেম্পলেট "মারতে" পারে, আপনার স্বকীয়তার পরিচয় দিতে হবে না? শত হলেও ভিড় থেকে আলাদা আপনাকেই হতে হবে।
No comments:
Post a Comment