Friday, October 18, 2013

রক্ত দেন, জীবন বাঁচান

[caption id="attachment_602" align="alignleft" width="197"]Photo Courtesy: dailymail.co.uk Photo Courtesy: dailymail.co.uk[/caption]

কথাটা হয়ত অনেক জায়গায়েই পড়েছেন আর চিন্তা করেছেন রক্ত যাকে দিচ্ছেন তার জীবন বাঁচাবেন। আমি কিন্তু শিরোনামে ওই কথা বুঝাই নাই।

ভুল বুঝেন না, আমি সম্পূর্ণরূপে একমত যে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে আপনার রক্তের কোন বিকল্প নেই। যদিও ২০০৮ সালেই প্রথম লোহিত রক্তকণিকা পরীক্ষাগারে বানানো সম্ভব হয়েছে, এবং ২০১১ সালে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রক্ত মানুষের শরীরেও প্রবেশ করানো হয়েছে, সেই দিন আসতে এখনও অনেক দেরি যেদিন রক্ত দাতার পরিবর্তে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রক্ত মানুষকে দেয়া হবে। আর উন্নত বিশ্বে সেটা যেদিন শুরু হবে, তারও অনেক পরে তা আমাদের দেশে চালু হবে, তাও ভেজাল মেশানো রক্ত। তাতে অবশ্য আমাদের কিছু হবে না, ফরমালিন ও কার্বাইড যদি হজম করে ফেলি, ভেজাল যুক্ত রক্তও হজম করতে পারব, অতটুকু আত্মবিশ্বাস আছে।

যাই হোক, আমি মূলত শিরোনামে আপনার নিজের জীবনের কথা বলেছি। ব্যাপারটা মোটেও অদ্ভুত না, ডাক্তারি বিদ্যা তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। রক্তের ৮৩% থাকে পানি, ১৭% থাকে অন্যান্য উপাদান। অর্থাৎ রক্ত দিলে আপনার শরীর থেকে মূলত পানি-ই বের হয়। খুব ছোট করে দেইখেন না, এই “পানি” বের করা যে আপনার নিজের শরীরে কতটা ভাল প্রভাব ফেলে তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

রক্তদান আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়। American Medical Association এর গবেষণা অনুযায়ী, ৪৩-৬১ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা ৬ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিয়েছে তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক অনেক কমে গেছে। এমনকি ক্যান্সারের সম্ভবনাও নিয়মিত রক্ত দাতাদের মধ্যে কম। Medical Daily এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়মিত রক্ত দাতাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভবনা ৮৮% কমে যায়। অন্যান্য হৃদরোগের সম্ভবনা কমে যায় ৩৩%।

রক্তদান এই অলৌকিক কাজ কিভাবে করে? রক্তে Iron এর পরিমাণ কমিয়ে। প্রতিবার রক্তদানে আপনার শরীর থেকে ২২৫-২৫০ মিলিগ্রাম Iron বের হয়ে যায়। রক্ত কতটা ঘন ও আঠালো হবে তা অনেকটা Iron এর পরিমাণের উপর নির্ভর করে। Iron রক্তে Cholesterol এর Oxidation ও বাড়িয়ে দেয়। অধিক Iron যুক্ত রক্ত আপনার ধমনীতে প্রয়াহিত হলে অধিক ঘর্ষণ ও চাপের সৃষ্টি করে। বাংলা কথা, আপনার হৃদরোগের সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত রক্তদান আপনার রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, যা আপনার হৃদরোগ অনেকাংশেই প্রতিহত করে। হার্টের রোগীরা যে Aspirin খেয়ে থাকে তাও মূলত রক্তের ঘনত্ব কমানোর জন্যই।

এছাড়া আপনার ক্যালোরি পোড়াতে রক্তদান একটি ভাল পদ্ধতি। University of California, San Diego এর গবেষণা অনুযায়ী প্রতি Pint (৪৭৩.১৭৬৪৭৩ cc) রক্তদান ৬৫০ ক্যালোরি পোড়ায়। এর কারণ হল আপনার শরীর হারানো রক্তের সমপরিমাণ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উৎপাদন করে, তবে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি পূরণ করতে ৪-৮ সপ্তাহ লেগে যায়।

[caption id="attachment_601" align="aligncenter" width="371"]Photo Courtesy: 123coimbatore.com Photo Courtesy: 123coimbatore.com[/caption]

[caption id="attachment_603" align="alignright" width="305"]Photo Courtesy: medicaldaily.com Photo Courtesy: medicaldaily.com[/caption]

অধিকাংশ সুস্থ মানুষের শরীরেই দেয়ার মত রক্ত থাকে। প্রতি ৩-৬ মাস পর পর রক্ত দিলে রক্তদানের কারণে আপনার শরীরে রক্ত ঘাটতি পড়ার কোন সম্ভবনা নেই। যারা নিয়মিত দেন না তাদের জন্য বলছি, দিয়ে দেখেন না একটু, আমি লিখে দিচ্ছি, ভাল লাগবে (ভাল না লাগলে আমার নামে কেস করতে পারেন, আমি মাইন্ড করব না :p)। নিজের শরীর ভাল থাকবে ওটা পরে, আরেকটা জীবন আপনি বাঁচাচ্ছেন। আপনার শরীরে অতিরিক্ত আছে এমন একটি জিনিস, যার ৮৩% পানি, আরেকজনের জন্য যে কতটা মূল্যবান তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সামান্য একটা সুঁই এর ফুটার বিনিময়ে আপনি যে মানসিক শান্তি পাবেন তার অনুভূতি আপনি অন্য কিছুতে পাবেন না। শুধু একবার দিয়ে দেখেন, ভাল না লাগলে আর দিয়েন না।

এবার আরেক শ্রেণীর কথা বলি, যারা রক্তদানের নেশায় আক্রান্ত, overenthusiastic! পারে না তো প্রতি

[caption id="attachment_605" align="alignleft" width="200"]Photo Courtesy: ncpresby.pbworks.com Photo Courtesy: ncpresby.pbworks.com[/caption]

দেড়-দুই মাস অন্তর অন্তর রক্ত দেয়। ভাই, এই অভ্যাস ত্যাগ করেন। এভাবে চালিয়ে গেলে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবেন, ১ বছর আর দিতে পারবেন না। শরীর তো, রক্ত উৎপাদনের মেশিন তো আর না। বিশ্বাস করেন, ভালর চেয়ে মন্দই বেশি। আমার পরিচিত অনেকেরি এই সমস্যা আছে। ভাই, দুর্বল হয়ে গেলে পরে নিজেরি রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হবে। দরকার কি? যতক্ষণ সুস্থ আছেন দিয়ে যেতে পারবেন, মানুষের মঙ্গল হবে। সুস্থ থাকেন, এটা অনেক জরুরি।

এছাড়া অনেক জায়গাতেই রক্ত দান করলে ফ্রি কিছু টেস্ট করে দেয়। এই সুযোগ কেন ছাড়বেন? বিনা খরচে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জেনে নেন, কিছু রোগমুক্তির নিশ্চয়তা উপভোগ করেন :)

শেষ কথা, কখনো খালি পেটে রক্ত দিবেন না। কয়েক মিনিটের মধ্যে শরীর থেকে এত রক্ত ও পানি বের হয়ে যাওয়ায় ধকল শরীরকে সামলাতে হয়। রক্ত দেয়ার আগে বেশি করে পানি পান করেন, রক্ত দেয়া শেষ হলে আবার বেশি করে পানি পান করেন। যত পানি পান করতে পারেন তত ভাল। রক্তদান শেষ হলেই লাফ দিয়ে ফুটবল খেলতে দৌড়ায়েন না। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেন, শরীরকে অভ্যস্ত হতে সময় দেন।

3 comments:

  1. হা হা হা ! তোমার লেখার হাত আসলেই ভালো !

    ReplyDelete
  2. তবে একটা খটকা, 'রক্তদান আপনার হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়। American Medical Association এর গবেষণা অনুযায়ী, ৪৩-৬১ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা ৬ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিয়েছে তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক অনেক কমে গেছে।'- এই কথাটার রেফেরেন্স দিলে খুব ভালো হয়। ইন ফ্যাক্ট, এই ধরনের যেকোন লেখাতেই যেখানে সম্ভব রেফেরেন্স দিলে ভালো।

    ReplyDelete
  3. good point on the referencing.. i'll have to search for the actual journal. but the journal surely got noticeable attention, resulting in repetitive mention in a number of articles/blogs related to blood donation!
    and thanks a lot bhaiya :)

    ReplyDelete