ঢাকা থেকে সিলেট, সিলেট থেকে তামাবিল। তারপর ডাওকি হয়ে শিলং। পথের বর্ণনায় কালি আর বিশেষণ দুইই ফুরিয়ে যাবে।
মানুষ কিন্ত কম বিচিত্র না। আমাদের তিনটা ট্যাক্সি’র চালকের মাঝে একজন সিনেমার “গুণ্ডা” চরিত্রে অভিনয় করেন। তাই বোধহয় কখনো মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে, কখনো খেয়ালখুশিতে গাড়ি চালাছিলেন। তবে নিরাপদে পৌছে দিয়েছিলেন অবশেষে শিলং শহর।
পুলিশ বাজার, হোটেল “Blue Mount”। চারদিনের আস্তানা।
“মেঘ পাহাড়ের ছোট্ট দেশে
থাকত যে এক দাদীবুড়ী
মেঘের সাথে কইত কথা
মেঘের ভিতর বসতবাড়ী”।
একবার পুলিশ বাজারে পৌছাতে পারলে হোটেল খুজে পাওয়া কঠিন হবে না। কাছেই “Delhi Mistanno bhandar”, সকালের খাওয়াটা হয়ে যাবে এখানে। দুপুর যখন যেখানে তেমন হবে। ডলার ভাঙ্গাতে হলে “HDFC” bank পাশেই আছে। সন্ধ্যাটা নাহয় কাটতে পারে নতুন কোন সিনেমা দেখে অথবা ধোসা পরখ করে।
শিলং এ প্রকৃতি যেন অভীমানিনী কিশোরী। এই মেঘ, এই বৃষ্টি।
আমাদের ছোট্ট পদ্ম’র কবিতার বই এর মেঘের দেশ। “শিলং পিকে” এসে দাড়ালে দেখা যায় পুরো শহর। মেঘ এসে ঢেকে দি্যেছিল চারপাশ। পদ্ম আর বুলান, সাথে আমরাও চোখে, মুখে মেখে নিই সাদা মেঘ। বলে, “আমি মেঘ খাই মা”। খাসিয়াদের পোশাকে সেজে নিল জোতি, জুরা, তানিয়া আর পদ্ম। শহর থাকে অদেখা। থাক। তবু শিলং পিকে’র আর এক আকর্ষণ কিন্ত সেখানকার “চা”।
যদিও তুমুল তোড়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে ইংরেজদের দেয়া নাম নিয়ে “Elephant Fall”, তবু তাকে কেমন পোষ মানা মনে হল; বৃষ্টি মাথায়, ছাতা আর মেয়ের হাত ধরে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে কাছে যেতে যেতে।
আমাদের সাথে ছিল চার শিশু। দুজন নয় মাস আর চার মাস। আর দুজন সাড়ে ছয়। “Lady Hydriat park” এ ছোটাছুটি তাই ওরা দুজন বেশ আনন্দে করল বিকেল বেলা। যদিও সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। তাই মায়েদের বকাও দিল তারা, “আগে কেন আনলে না এখানে?”। বিকেলে পাচটা, সাড়ে পাচটার ভিতর আসলে সব বন্ধ হয়ে যায় এখানে ।
"ধরা যাক আজ রোববার
কোন তাড়া নেই”
নেই তাড়া নেই। তাই “উমিয়াম লেকে”র পাড়ে কাটিয়ে দিলাম সারাবেলা।
কখন কি এমন হয় না যখন গন্তব্যের চেয়ে পথটাই একটু বেশি ভাল লেগে যায়? কথা ছিল প্রাকৃতিক গুহা দেখতে যাব। সর্বকনিষ্ঠ দুজনের ঠান্ডা।তারা তাদের বাবা মার সাথে থাকবে। বুলান ও। তাই এবার, আমরা পাচজন বেরিয়ে পড়ি। পদ্ম ও আছে তার মাঝে। আর পথের ধারে নাম না জানা জলপ্রপাত অথবা দুই পাহাড়ের অতল থেকে উঠে আসা মেঘ ভালবেসে ফেলি।
“খুজব সবুজ বুনো ফুলে
খুজে না পাই যাহারে, আহারে…”
এমনি করে পথে পথে সেই ফুলটিকে খুজতে খুজতে পৌছে গেলাম “Nohkalikai Fall”। আকাশে মেলে দেই দু হাত, সবুজ প্রান্তরে বিছিয়ে দেই শরীর। নগর জীবনের সমস্ত ক্লান্তি যেন শুষে নিল প্রকৃতি।
সোনাই তার মাকে দেখিয়ে বলছিল, “আম্মি, দেখিয়ে উও বাংলাদেশ, ম্যাপমে ইতনা ছোটা হ্যায়”। সোনাই’র মত, এই নামেই তাকে ডাকছিল তার মা, আমরা ও তাকিয়ে দেখি, “প্রিয় জন্মভুমি”। “Eco Park”। দেখি রংধনু। ছোট্ট পদ্ম মেতে থাকে খেলায়।
“Ka Khoh Ramhah” এমনি অদ্ভুত নাম নিয়ে থাকা এক অদ্ভুত দর্শন পাহাড় দেখতে গেলাম এরপর। অদ্ভুত সুন্দর বটে।
এবার বিশ্রাম। “Sai I Mika” resort। পাকোড়া আর চা খেয়ে কটেজের বারান্দায় বসে থাকলাম নীরব নীথর অন্ধকারে। I-phone টায় বাজছিল
“ফাগুনের ও মোহনায়
মন মাতানো মহুয়ায়
রঙ্গিন এই বিহুর নেশায় ...মন হারিয়ে যায় গো………”।
রাতভর বৃষ্টি যেন সঙ্গত করছিল তার সাথে।
পরিমল হাসতে হাসতে বলল, “দিদি, নামতে আধা ঘন্টা আর উঠতে লাগবে আরো এক ঘন্টা”। যেটা পরিমল বলেনি, সব কিছু ম্লান হয়ে যাবে প্রকৃতির অপুর্ব বিস্ময়ের কাছে। “Living root”, ঠিক যেন সমুদ্ররের তলদেশ থেকে উঠে আসা Pirates of the Caribbean’র জাহাজ।
এবার ফেরার পালা। “Mawalang Village” দেখে ডাওকি হয়ে ফের তামাবিল, সিলেট তারপর ঢাকা।
সবশেষে বাজেটঃ
Date | Origin _ Destination | Transport | Cost | Food | Lodging | Note |
15.08.13 | Dhaka-Sylhet-Tamabil Border | Train, Microbus | ||||
Dawki border - Shilong | Taxi (4 persons) | 2200 Rs | 150 | 1800 Rs | ||
16.08.13 | Shilong Peak Elephant Fall Lady Hydriat Park | Jeep (11 persons) | 350 Rs | 1800 Rs | ||
17.08.13 | Umium Lake | 350 Rs | 1800 Rs | |||
18.08.13 | Mawasanmi Cave Hot spring | Jeep (11 persons) | 350 Rs | 1800 Rs | ||
19.08.13 | Cherrapunji View points Nohkalkai Fall Eco Park Ka Khoh Ramhah Sai I Mika | Jeep (11 persons) | 350 Rs | 2600 Rs (cottage) | ||
20.08.13 | Living Root Mawalang village Dawki border | 350 Rs | ||||
Tamabil to Sylhet Sylhet - Dhaka | Microbus Train |
Photo Credit: Taniya, kamrul, Jura, Joyti, Lipu, Sadia, Dyuti, Farzana
আহ শিলং !
ReplyDelete