ব্লগ কী সেটাই জানতাম না। খুব বেশি দিন আগের কথা না কিন্তু। এই তো ২০০৬-০৭ সালের দিকের কথা। বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কানেকশন নেয়া হয়েছে মাত্র। স্পিড সেকেন্ডে কয়েক বিট। তাও ডায়াল আপের চেয়ে ভালো। বড় আপুদের সাথে আমার সব সময়েই সুসম্পর্ক। সেই বাল্যকাল থেকেই। এক বড় আপুর সাথে ইয়াহু চ্যাটে কথা হতো। যখনই জিজ্ঞেস করতাম ‘আপু কী করেন?’ আপুর একটাই উত্তর, ‘ব্লগ লিখি’। আমি হালা বুঝি না ব্লগ কী! আপু আবার আর্কিটেকচারের স্টুডেন্ট তখন। ভাবতাম, বোধহয় আর্কিটেকচারের কোনো বিশেষ কাজ-টাজ হবে। পার্ট নিয়ে খুব মাথা নাড়তাম অ্যাজ ইফ খুব বুঝতেসি ব্লগ।
দিন বদলাইলো। এক সময় বাসায় ১৯৬ কেবিপিএসের নেট কানেকশন লাগলো। ধুন্ধুমার স্পিড। বড়ভাই তখন সামহোয়ার ইনে চাকরিতে ঢুকেছে। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম ব্লগ কী জিনিস। আমি তো মেলা খুশি। আর আবজাব কথাবার্তা লিখলেই তো ব্লগ হয়া যায়। ইংরেজিতেও লেখা লাগে না, বাংলায় লিখলেই হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল তখন। আর্মির প্রতি মেলা ক্ষোভ জমা হয়েছে মনে। ক্ষোভ ঝাড়ার জায়গা নাই। ভাবলাম ব্লগে অ্যাকাউন্ট খুলে বসি। যেই কথা সেই কাজ। ২০০৮ এর জানুয়ারি মাসে খুব গালভরা একটা নিকনেইম নিয়ে অ্যাকাউন্ট খুললাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেনাবাহিনীর গুষ্টি উদ্ধার করে ব্লগে লেখা শুরু করলাম। দিনের পর দিন লিখি কিন্তু লেখা প্রথম পাতায় আসে না, সেই লেখা কেউ পড়েও না। মেজাজ খুব খারাপ। সকলের জ্ঞাতার্থে বলি। কমিনিটি ব্লগ যাকে অনেকে ফোরাম বলে থাকেন, সেখানে নতুন অ্যাকাউন্ট খুললেই প্রথম প্রথম তার লেখা সবাই পড়তে পারে না। তাকে কিছুদিন ওয়াচে রাখা হয়। এরপর সে ভয়ংকর বাজে কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী কথাবার্তা লিখে না সেইটা প্রমাণ হলেই তাকে প্রথম পাতায় একসেস দেয়া হয়। যা বলছিলাম, মেজাজ খারাপ। খবর নিয়ে জানতে পারলাম আমার নামে নাকি আরেকজন ব্লগার আছে যে উল্টা-পাল্টা লেখা লিখে কুখ্যাত। তার কারণে আমাকেও ওয়াচ থেকে সরানো হচ্ছে না। এতই মেজাজ গরম হলো যে দিলাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে। লিখবই না ব্লগে।
না লিখে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারি নি। ২০০৯ সালের শুরুতে আবার অ্যাকাউন্ট খুলে লেখা শুরু করলাম। ততদিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় চলে এসেছে এবং আর্মির প্রতি রাগ ট্রান্সফার হয়েছে রাজনৈতিক দলে। শুরু করলাম রাজনৈতিক দলের গুন্ডামী-মাস্তানী-দুর্নীতি নিয়ে লেখা। রাজনৈতিক লেখা লিখেই আরাম পাই। ভাবটা এমন যেন আমি লিখলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। লিখতে আবার খুব কষ্ট হয়। বাংলা টাইপ করতে পারি না। অভ্র দিয়ে ১০ টা শব্দ লিখতে দুই ঘন্টা লেগে যায়। তাও হাল ছাড়ি না। আরে, ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই লেখার স্বাধীনতা আর কে দিবে? সহব্লগারদের কমেন্ট পাওয়ার আশায় শুধু লিখি আর লিখি। শুধু রাজনৈতিক না, বাস্তব অভিজ্ঞতা, মুভি রিভিউ সব লিখি। শিক্ষাবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে শিক্ষা নিয়ে গালভরা লেখাও লিখেছি কিছু।
এভাবে সামহোয়ার ইন ব্লগে লিখতে লিখতে এক সময় আবিষ্কার করলাম বন্ধু প্রতীম অনেক ব্লগার ব্লগ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে পেশাগত জীবনের ব্যস্ততা, কেউ আবার ব্লগের পরিবেশ নিয়ে হতাশা থেকে ব্লগ ছাড়লেন। কমিউনিটি ব্লগে লিখে অন্য ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ রাখার মজাটা হারিয়ে ফেললাম। লেখালেখি বন্ধ হয়ে গেল। এর মধ্যে ফেসবুকে বসার হার গেল বেড়ে। ফেসবুকে আগে স্ট্যাটাস দেয়ার ক্ষেত্রে শব্দসীমা ছিল। খুব বড় স্ট্যাটাস লেখা যেত না। কিন্তু মাইক্রো ব্লগিংকে প্রোমোট করার জন্যই বোধহয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই শব্দসীমা এতটাই বৃদ্ধি করে যে সেখানে উপন্যাস লেখার অবস্থা তৈরি হয়। পরে ফেসবুকে সামহোয়ারের অনেক ব্লগারকেই খুঁজে পেলাম যারা ব্লগিং করছেন স্ট্যাটাস পোস্টের মাধ্যমে। ততদিনে এক-দুই বাক্যে স্ট্যাটাস দেয়ার দিন পার হয়ে যাচ্ছে। সবাই বড় বড় স্ট্যাটাস দিয়ে মাইক্রো ব্লগিং করে। আমিও সেই পথ অনুসরণ করলাম। ব্লগসাইটের পরিবর্তে ফেসবুকে এক ধরণের ব্লগিং শুরু করলাম। এভাবে ফেসবুক ব্লগসাইটগুলোর ভাত মারা শুরু করলো। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, কমিউনিটি ব্লগে লেখার পিওর টেস্ট ফেসবুকে পাওয়া যায় না। ফেসবুকে লেখলে যেটা হয় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে লেখা শেয়ার করা যায়, তাদের মতামত জানা যায়। কিন্তু, ব্লগে লেখার টান টান উত্তেজনা এখানে নেই। তাও লেখার একটা প্ল্যাটফর্ম পাওয়া বড় ব্যাপার। ফেসবুক যেভাবে আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছে, ওখানে না লিখে উপায়ও নেই।
আর ব্লগ লেখার সূত্রে ভাই-বেরাদারদের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। গাঁজাখুরি লিখি অনেক, কিন্তু তারা ভালোবেসে লেখা দিতে বলে। লিখে যাই। ভালো লাগে। মনের কথা সহজে বাংলা ভাষায় লিখে সবাইকে জানানোর যে আনন্দ সে আনন্দ আর কোথায় পাওয়া যায়, বলুন?
লেখ লেখ...লিখতে থাক !
ReplyDeleteGoogle...
ReplyDeleteJust beneath, are several absolutely not connected sites to ours, on the other hand, they may be surely worth going over....