Sunday, September 15, 2013

সুখী মানুষের দেশে - ভূটানের টানে

অপ্রয়োজনীয় ভুমিকা

“তোমার কোথায় ঘুরতে যেতে বেশি ভালো লাগে?” কেউ যখন আমাকে এই প্রশ্ন করে আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন কর্তার দিকে একটা অবাক প্রশ্নবোধক চাহনী দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গীতে হাতটা নাড়ি। ইশারার ট্রান্সলেশন হইতেছে, এইটা কি প্রশ্ন করলা ভাই? এই ব্যস্ত লাইফে ঘুরতে যাইতেইতো আনন্দ। কই যাইতেছি এইটা কোনো ঘটনা নাকি? এইটা আসলে ভাব। সত্যি কথাটা হইল, অনেকদিন পর পর যখন ঘুরতে যাই, তখন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে প্রবল ভাবে টানে। টানে মানে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। তাই খুব কৌশলে আমিও পাহাড় কিংবা সমুদ্রে যাওয়ার জন্য নানা কলা কৌশল করে প্ল্যান করি। আমার বন্ধুরা টের পায় না। নাচতে নাচতে আমার সাথে চলে যায়। ঠিক এই রকম একটা ট্যুর হইল কয়দিন আগে। সময়টা ঘোরাঘুরির জন্য নাকি একেবারেই ভালো না। জুন মাস, ভরা বর্ষা। ওরে পাগলা, ঘোরাঘুরির আবার মৌসুম আছে নাকি? আর ভরা বর্ষায় পাহাড়ে যে কি মধু, একবার ঘুরে না এলে তোকে বোঝায় সাধ্য কার?

image033

হেন তেন আজাইড়া কথন

পাহাড় আছে, কিন্তু রঙ তুলি দিয়ে আকা চিলতে সাদা মেঘ নেই। এই রকম বিচ্ছিরি ছবি আকছেন জীবনে? আমার কাছে পাহাড়ের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যটা ভরা বর্ষাতেই। তাই পাহাড়ের দেশ ভুটান যাবার জন্য জুন মাসটা বেছে নিতে ২ মিনিট ভাবতে হয়েছে শুধু। আমি আর আমার ৩ বন্ধু, এর মধ্যে একজন সম্পর্কে আমার কাজিন হয়, আর বাকি দুই বন্ধু আবার নিজেরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ। (প্ল্যানের সময় চার বন্ধু ছিল, কিন্ত দুঃখজনক ভাবে একজন মিসিং হয়ে যায় পরে)।

নিজেরা ম্যানেজ করে যাব? নাকি ট্যুর অপারেটর ম্যানেজ করে যাব? এই সিদ্ধান্ত নিতে শুধু মাত্র দুইটা বিষয় ভাবলাম।  প্রথমঃ আমরা ঐ দেশে আগে যাই নাই, আর ঘুরতে গিয়ে কোনো রকম ঝামেলা অথবা অনিশ্চয়তা চাই না,  দ্বিতীয়ঃ নিজেরা ম্যানেজ করে গেলেও ট্যুর অপারেটরের চেয়ে কম খরচে ঘুরে আসার তেমন একটা বেশি সুবিধা নাই। এয়ার টিকেট আপ ডাউন ২৩,০০০ টাকা। আর বাকি সব (৩ রাত থাকা, খাওয়া, ফুলটাইম একটা গাড়ি, একজন গাইড) মিলিয়ে সর্বমোট ৩৫,১০০ টাকা জন প্রতি।

ভুটানের ভিসা পোর্ট এন্ট্রি। তাই তেমন একটা ঝামেলা নাই। তবে ওদের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল পারো এয়ারপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে একটা। এয়ার পোর্টের রানওয়ের আসে পাসে দুই দিকেই পাহাড়। খুব অল্প স্পেইস। কে কে ভয় পাইছেন হাত তোলেন? গুড। আপনাদের কোথাও ঘুরতে যাওয়ার দরকার নাই। আপনারা বাসায় বসে থাকেন সবচেয়ে সেইফ থাকবেন। বাকিরা এখনি প্ল্যান করতে বসে যান। এর চেয়ে বেশি যেই সব তথ্য দরকার হবে কমেন্টে প্রশ্ন দিয়ে যান। সময় করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। আরে ভুটান নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম অথচ এতক্ষনেও আপনাদের ভুটানে নিয়ে যাইতে পারি নাই। এই হইল আমার সমস্যা। শুধু কথা আর কথা। তাও আজাইড়া সব কথা। আসেন অল্প কথায় ভুটানের গল্প শেষ করি।

অল্প একটু ভুটান

ভুটান, দেশটা সুন্দর, শান্ত, ছিম ছাম। মানুষ গুলো সরল, শান্তিপ্রিয়, হাসি খুশি। প্রকৃতির কোল ঘেষে বেড়ে ঊঠা শহরের মানুষগুলো ধর্মের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। উপরে বুদ্ধ, নিচে রাজা, ওদের সবচেয়ে সন্মানীয় ব্যক্তি। ওদের আর্কিটেকচার অনবদ্য। এই জ্ঞানটা ওদের ট্রেডিশনাল। তবে চোখ ধাঁধানো। পুরো দেশের যেই দিকেই তাকানো হোকনা কেন, শুধু ল্যান্ড স্কেপ আর ল্যান্ড স্কেপ। ওদের বিশেষ সব স্থাপনা করার সময় খুব সুচারূ ভাবে এই ল্যান্ডস্কেপের দিকে নজর দিয়েছে ওরা। দেশটার মানুষ গুলো ধর্মের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল এবং একি সাথে নিয়ম কানুনের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। অবিশ্বাস্য রকমের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা দেশ।

গাড়ি গুলো রাস্তায় চলে খুব সাবধানে ধীরে। তিনদিনে মাত্র তিনবার গাড়ির হর্ন শুনেছি। ধরেন আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন, হাত দেখালেন রাস্তা পার হবেন বলে, দেখবেন সব গাড়ি দাঁড়িয়ে গেছে। ভুটানে পাবলিক প্লেসে ধুমপান নিষিদ্ধ। ওরা এটা কঠিন ভাবে মেনে চলে। এই সময়টা ছিল সামার। অবাক হয়ে দেখি হোটেলে ফ্যান নেই, এসি নেই। রিসিপশনে গিয়ে বললাম গরম লাগলে কি করব। ওরা সুন্দর করে হেসে বললো, স্যার জানালা খুলে দেবেন, খুব সুন্দর বাতাস আসবে। ভোর বেলায় টের পেলাম, কেন ওরা কম্বল গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল।  কোন ফাজিল যাওয়ার আগে বলেছিল খাওয়া দাওয়া নিয়ে নাকি সমস্যা হয়। ওখানে গিয়ে খেতে বসে মনে হয়েছিল, আমার দেশেরই আগে কখনো খাওয়া হয় নাই এমন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছি। রুই মাছ সুন্দর করে টমেটো, ধনে পাতা, দিয়ে ভুনা করা, সব্জী, দারুন সুস্বাদু ডাল দিয়ে চিকন চালের সাদা ভাত। আহা!!।

চায়ে লিকারটা কম খায়। তবে একটা দেশ, যেখানে প্রচুর পর্যটক আসে, সেই হিসেবে অবিশ্বাস্য রকমের কম রেস্টুরেন্ট। ওদের নাম গুলা অনেক কঠিন মনে হইছে আমার। আমাদের গাইডের নামটা আমরা কিছুতেই মনে রাখতে পারতেছিলাম না। তাই শেষ পর্যন্ত তার নাম দিলাম “চারো” মানে বন্ধু। আমাদের জন্য বরাদ্দ গাড়িটা বেশ আরামদায়ক ছিল। ড্রাইভারটা নেপালে জন্ম নেয়া, তাই তার নামটা মনে রাখা যাচ্ছিল “সান্তোস”।

image003image005

কি কি যেন করলাম ভুটানে?

তিন রাতের প্রথম রাত আমরা ছিলাম থিম্পুতে। ভুটানের রাজধানী। পারো এয়ারপোর্ট থেকে এক থেকে দেড় ঘন্টার ড্রাইভ। শহরের একেবারে মাঝখানেই একটা থ্রীস্টার হোটেলে আমরা ছিলাম। থ্রী স্টার শুনে কার কার চোখ বড় হয়ে গেল? ভুটানে হোটেলের টাইপ দুইটা। থ্রী স্টার আর ফাইভ স্টার। ফাইভ স্টার হোটেল হলো আসলেই ফাইভ স্টার, বিশাল, ঝকমকা, চকচকা। আর ফাইভ স্টার বাদ দিয়ে বাকি সব হোটেলই থ্রী স্টার। J থিম্পু স্টেডিয়ামের ঠিক পেছনেই গালভরা থ্রী স্টার একটা হোটেলে আমরা ছিলাম।

পারো থেকে থিম্পু যাবার পথে এক জায়গায় গাড়ি দাড় করানো হলো। এখানে আমরা নাকি পাহাড়ী নদীর একটা সুন্দর অবয়ব দেখতে পাবো। হাটতে হাটতে ব্রীজের উপরে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে যা দেখা গেল সেটা শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই।

image007

থিম্পু পৌছাতে পৌছাতে লাঞ্চের সময় হয়ে গেল। হঠাৎ উচ্চতায় উঠে যাওয়া আর আকাবাকা পাহাড়ী রাস্তায় ড্রাইভের কারনে আমাদের মাথা কিছুটা টালমাতাল। একটা গোসল দিয়ে এক কাপ চা খেয়ে ফ্রেস হয়ে লাঞ্চ করে আমরা চলে গেলাম একটা ধর্মীয় উপসনালয়ে। ওদের উপসনার সিস্টেমটা দারুন। একটা প্রেয়ার হুইল আছে। সেই হুইলে নানা ধরনের ধর্মীয় কথা লেখা আছে। ওদের কাজ হচ্ছে হুইলটা ধরে ঘোরানো। হুইল ঘুরবে, আর প্রেয়ার হবে। কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি পানির স্রোতের মাধ্যমে হুইল ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে প্রেয়ার এক মুহুর্তের জন্যও না থামে।

image009

image011

image013

পাহাডের চুড়ায় বুদ্ধের একটা মুর্তি বানাচ্ছে ওরা। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে দেখা যায়। দেখতে চান?

image015

image017

এর পরে আমরা চিড়িয়াখানার মতন একটা জায়গায় গেলাম ওদের জাতীয় পশু “টাকিন” দেখতে। জিজ্ঞেস করেন টাকিন কি জিনিষ। টাকিন হইল, মাথাটা ছাগলের মতন আর শরীর গরুর মতন, মিক্সড একটা প্রাণী। এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই এটাকে এই চিড়িয়া খানায় সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। কি? শুনেই দেখতে ইচ্ছে করছেতো? এই জন্যই ছবি দিলাম না। গিয়ে দেখে আসেন। শুধু ফাও খেতে চান।

পরদিন আমরা গেলাম একটা অদ্ভুত স্কুলে। যেখানে আর্ট সেখানো হয় বাচ্চাদের। আর্ট মানে? আর্ট মানে আর্ট। ছবি আকা, কাঠের কারুকাজ, সেলাই, নকশা, মুর্তি বানানো, ইত্যাদি। স্কুলটাতে গেলেই এক ধরনের প্রশান্তি এসে যায় মনে। মনে হয় কিছুদিন থেকে যাই এই স্কুলে। স্কুল জুড়ে মহা আনন্দে সবাই আর্ট শিখছে। দেখেন এই ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে না কি সুখে আছে সে?

image019

এর পরে গেলাম সব্জী মার্কেট। এটাও দেখার জিনিষ। জ্বী আমাদের জন্য অবশ্যই দেখার জিনিষ।

image021

তারপর চলে গেলাম পারো। থিম্পুর পূর্বে ভুটানের রাজধানী। খুব শান্ত শহর। আমাদের দেশের সাথে কোনো তুলনা চলে না ভুটানের। তারপরেও যদি বলি শান্ত থিম্পু কিছুটা জমজমাট, পারো সেদিক থেকে শুনশান বলা যায়। কোনো কোলাহল নেই। অপূর্ব নৈসর্গিক শহর।

image041

এখানে বেশ কিছু স্থাপনা আছে, মাথা নষ্ট করে দেয়ার মতন। ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর পুরাতন ভার্সনটাই আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।

image025

আর একটা ধর্মীয় উপাশনালয়। এটার ভেতরে তোলা ছবি গুলা এই মুহুর্তে আমার হাতের কাছে নেই।

image027

হঠাৎ মনে জাগা দুই লাইন ভাবনা

ভুটানের কথা মোটামুটি শেষ। এখন দুই একটা কথা বলি, যেই কথা গুলি আসলে বলে বোঝানোর মতন শব্দ ব্যবহার আমার জানা নাই। ধরেন, খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা ছেড়ে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিই। আর অবাক ব্যাপার, কিছুতেই জানালার সামনে থেকে সরতে পারছিনা। হাত বাড়ানো দুরত্বে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। দল বেধে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে। রুমের চার ধার ঘেরা মুর্তিমান পাহাড়েরা। তাদের ঘিরে জড়িয়ে আছে মেঘেদের দল। জানালা খুলে দিলেই হিম হিম ঠান্ডা বাতাস। আবেগে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। বুক ভরে শ্বাস নিতে থাকি। দ্রুত ঘুমের পোষাকটা ছেড়ে বাসি মুখেই বেড়িয়ে পড়ি। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও পাতলা টি শার্ট পড়ে। দুই হাত বুকে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তায় নেমে আসি। এতক্ষন জানালা দিয়ে দেখা আমার পৃথিবীটা যেন চর্তুদিকে। হাতে গরম কফি, আমি হাটতে থাকি আপন মনে, ঠিক কতক্ষন কে জানে।

image029

image031

দিন এগোতে থাকে। এক দিকে মেঘ কালো হয়ে আসে আকাশ। অন্য দিকে রোদ ঝিল মিল। সব খেক শিয়ালের বোধহয় আজই বিয়ে নেমেছে। হুট করে রোদ মিলিয়ে যায়। এবার ঘন কালো মেঘে হারিয়ে যায় সূয্যি মামা। মেঘেদের ভিড় ঠেলে ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আবার উকি দেয়। মেঘেদের ভিড়ে ঝিল মিল আলোর রশ্মি আকাশ ফুঁড়ে বের হয়ে পাহাড়ি নদীতে। মন চায় দৌড়ে গিয়ে মুঠোয় নিয়ে কপ করে গিলে ফেলি।

image039

image0375

পাহাড়ী নদীর পাড় ধরে হাটতে থাকি বিকেলে আমরা। বাতাস আর পানির শব্দ আলাদা করার চেষ্টা করি। নদীর পাড় থেকে ঠিক কত দূর পর্যন্ত শব্দ শোনা যায় সেটা খুজে বের করার শিশুতোষ খেলাটা কেন এতটা মজার ছিল এখন কিছুতেই মনে করতে পারছি না। নদী এক পাশ থেকে অন্য পাশে বয়ে যায়। এই বিকেলে সূয্যি ডুবি ডুবি ভাব ধরে বসে আছে। সুয্যির দিকে মুখ করে নদীর দিকে তাকালে দেখা যায় দুই ধার পাহাড় ঘেরা নদীতে পড়ন্ত সূর্যালোক। আর উল্টো দিকে তাকালে অদ্ভুত সুন্দর আলোর খেলা। পাহাড়ে আলো ছায়ার মেলা। মন চায় একি সময় দুই দিকেই তাকিয়ে থাকি।

image023

আর রাত? শুনশান, নিরিবিলি প্রাকৃতিক, নৈসর্গিক। আমরা হাটতে থাকি। মনে ক্ষানিকটা পথ হারানোর ভয়, তবে জানি এই শহরে হারিয়ে যাওয়াটাই অনেক কঠিন হবে।

9

22

অনেকতো বুঝাইলাম, গেলে যান না গেলে নাই

সব মিলিয়ে, নিরিবিলি ছিমছাম একটা ছুটি কাটাতে গেলে, আমি বলবো ঘুরে আসেন ভুটান। যদি আপনি পাহাড় পছন্দ করেন, মেঘ পছন্দ করেন, বৃষ্টি পছন্দ করেন, পাহাড়ি নদীর ঝির ঝির শব্দ পছন্দ করেন, আকাবাকা পাহাড়ি রাস্তা পছন্দ করেন, বিশাল বড় বড় অদ্ভুত সুন্দর সব আর্কিটেকচার দেখতে চান, রাত নটায় শুনশান হয়ে যাওয়া শহর পছন্দ করেন, কোলাহোল মুক্ত নিজের মতন একটু সময় কাটাতে চান, ভুটান দারুন জায়গা।

সব গুলা ছবিই আমার তোলা। গ্রুপ ছবি গুলোর জন্য আমার ট্রাইপডকে একটা কঠিন ধন্যবাদ।

 

1 comment:

  1. excellent post bhaiya :)
    suggest koren.. 15 days er bhutan tour er cost+places to go.. that would be really helpful!
    thanks :)

    ReplyDelete