Wednesday, September 4, 2013

জল ও জঙ্গলের 'ছবিতা'

হারিয়ে যাবার আগেই যারা আরো কিছুদিন ছুঁয়ে দেখতে চান অনাবিল সবুজ, মাছের দেখা নাই তবু বড়শি হাতে বসে থাকতে চান নিস্তরঙ্গ দুপুরে তাদের জন্য অপেক্ষায় আছে 'জল ও জঙ্গলের কাব্য' ।এক নিভৃতচারী মানুষের স্বপ্নসাধ বলা যায় এই আয়োজন, ঢাকার অদূরে পূবাইলে ৯০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে একটুকরো গ্রাম। বাঁশ আর পাটখড়ির বেড়া ,উপরে ছনের ছাউনি, সামনে দিগন্ত বিস্তৃত জলের নাচন।

সূর্য ডুবুডুবু এমন সময় সেখানে পৌঁছে হাতে পেয়ে যায় পেঁয়াজু -বেগুনী সাথে পুটি মাছ ভাজা । ঝাপিয়ে পড়ে নিমিষেই নাই হয়ে গেল সব। আঁধারের তারা জ্বলা রাতে সবাই  মিলে বেড়িয়ে পড়লাম নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে, হেরে গলায় গান সাথে শাপলা শলুকের উঁকিঝুকি । ফিরে আসতে না আসতে দেখি বারবিকিউ হচ্ছে মাছ আর মুরগীর । ঠিক গ্রামের সাথে না গেলেও শহুরে মানুষের হালজমানার ফ্যাশন এই বারবিকিউ জিনিসটা খারাপনা, আগুনে মাছ মাংস ঝলসে যাচ্ছে আর একদল মানুষ অপেক্ষায় যেন কতদিন তারা না খেয়ে আছে B-)  !!! মাঝ রাতে শুনশান নিরবতায় শুধু দুজনে নৌকায় বসে থাকা, আলো আঁধারির মাঝে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়ানো রোমান্টিক না হয়ে উপায় কি !!!

কার্ড খেলতে বসে কখন যে ভোরের আগমনী ধ্বনি এসে হাজির হল কেউ খেয়ালই করলোনা, একটু পিঠ লাগিয়ে নেয়া যাক  বৈকি !!! চেস্টা করেছিলাম , কিন্তু এক বন্ধুর বেঘোরে নাক ঢাকা শুনতে শুনতে ঘুম দেবতা পালাল, ঘুমদেবতার পলায়নের ফল যে এত সুন্দর হবে সেটা কল্পনাতেও ছিলনা, বন্ধুকে ক্ষমা করে দিলাম নিমিষেই । মায়াবী নীল ভোর ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সুবহে সাদিকের লাল আভায়, সূর্যি মামা একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে মেঘের কোল ঘেষে, একদল শালিক উড়ে এল ( ভাগ্য ভাল একদল, একটি আসলে মনে হত কপালে দুঃখ আছে, দুটি আসলে মনে হত না জানি কি ভাল হবে কে জানে !!) , ভাগ্য নিয়ে তাই আর চিন্তা করতে হলনা । এমন ভোর ক্যামেরার কি সাধ্য তাকে বন্দি করে রাখে, একে দেখতে হয়, ধরে রাখা যায়না ।

হঠাত অবাক করে দিয়ে কাজল কালো মেঘে ঢেকে গেল পুরো পৃথিবী !! বলতে না বলতেই হিমেল হাওয়ায় কাঁপন জড়ানো বৃষ্টি, উফ কতদিন এমন বৃষ্টি দেখিনি । এমন বৃষ্টির মাঝে নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে- শৈশবে, হউকনা দাদা বাড়ি, এমনটা করার পারমিশন কেউ দিত বলে মনে হয়না , আজ তাই নেই মানা । এমন ঝুমবৃষ্টিতে শেষ কবে ভিজেছি মনে করতে পারছিনা ।

শরতের আকাশ, হঠাত করেই আবার নীল হয়ে উঠল, ঢেঁকি ছাটা চালের রুটি, চিতই পিঠা, লুচি (লিখতে লিখতে এখন আবার ক্ষিধে লেগে যাচ্ছে ) , সাথে লাইভ বাউল গান , ঘুরে আসতে পারেন যদি হারাতে চান , তবে বৃষ্টি না থাকলে আসলে পুরোপুরি উসুল হবেনা টিকেটের টাকা ;)

বিলের পানিতে দাপাদাপি শেষে আরেক দফা দাপাদাপি করার জন্য আছে বিশাল দীঘি, সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেটটা সাথে নিতে ভুলবেননা কিন্তু । মধ্য দুপুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার না দেখলেও শহুরে তরুনির লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পানিতে ভেসে থাকার কসরত- দেখার জন্য মন্দ নয় B-)

অলস সময়ে পেয়ে যাবেন কাঁচা পেঁপের ভর্তা, আমড়া ভর্তা........চা কফি চালাতে পারেন আনলিমিটেড । কাঁঠালের বিচির ভর্তা, লতির সাথে কাঁঠালের বিচি, নানা রকম শাক, ভর্তা , ছোট মাছ, রুই মাছের ভাজা, চালতার টক ডাল,ইলিশের পাতুড়ি  ভাল না লাগলে ঝোল করে রাঁধা মুরগীতো আছেই । শুয়ে বসে কাটানোর জন্য অপেক্ষায় থাকা টংঘর গুলো তখন ডেকে নিবে ভাত ঘুমের জন্য..........

ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরম, ফিরে আসার সময় তালের পিঠা যদি নাই খেলেন  গ্রামে ঘুরতে যাওয়া যে অপূর্ণই থেকে যাবে.............

রিসোর্টঃ জল জঙ্গলের কাব্য (পুবাইল)
যোগাযোগঃ 01919782245[gallery ids="314,315,316,317,318,319,320,321,322,323,324,325,326,327,328,329,330,331,332,333,334,335,336,337,338,339,340,341,342,343,344,345,346,347"]

No comments:

Post a Comment