Saturday, September 21, 2013

টংবাজদের আড্ডা ও “জল ও জঙ্গলের কাব্য”

উপক্রমণিকা:

একদা টংবাজ নামে একটা গ্রুপ 'ছিল" যাদের কাজ ছিল প্রতি বৃহস্পতিবার অফিসের পরে মহাখালী ডিওএইচএস এ ঢোকার মুখে চায়ের টং এ বসে সন্ধ্যা ৬-৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আড্ডা দেয়া।  এহেন কোন বিষয় নাই যে বিষয়ে কথা হতো না । একদম অপরিচিত মেয়ের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হওয়া সাজ্জাদের হয়ে ওই মেয়েকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে কথা বলার সিস্টেম করা, লুমন-লুমিত জুটির কার্যক্রম, শামসের খেলাধুলা (:P), তারেকের পাগলামি, দেশ (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) ও দশের সমস্যা সব কিছু। সদস্য সংখ্যারও কমতি ছিলোনা। দশের অধিক চায়ের অর্ডার ছিল নরমাল বিষয়। লেখার শুরুতে সেই 'ছিল" কারন আজ কালে ভদ্রে কারো সাথে দেখা হয় মাস কয় পেরুলে, কেউবা অন্য মহাদেশে। আবার কবে দেখা হবে, আদৌ হবে কিনা খোদা তায়ালাই জানে!

কফি হাউজের মত টংবাজদের আড্ডাটাও আজ নেই । Rumonঅস্ট্রেলিয়া, Rabby কানাডা, Shams বেচারা প্রেম করার ফাঁকেফাঁকে অফিস করেই ক্লান্ত। Shamseer টাই আজ সেতো সবচেয়ে সুখে আছে (সে লাখপতি না বা গাড়ি-বাড়িও নাই তবে সে সুশীল :-P), Tauhidul ওরফে টারজান (টারজান নামকরনের কাহিনী নিয়ে আরেকটা লিখা লেখা যাবে) অফিস আর শ্বশুরবাড়ি নিয়েই আছে, Shafiul কোড এর কবিতা লিখায় ব্যস্ত, Khayer মোল্লা এখন নতুন বিবাহিত, Amit বরাবরই বেঈমানী করে আর খালি এক্সকিউজ (নতুন বিবাহিত), Sazzad বেচারা ঢাকা শহরে ৬ তালা বাড়ির মালিক (তাই তার নাকি অনেক পেইন), Rossi ভাই সবাইকে ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত, আজরাইল আসলেও Himel বলবে একটু বিজি আছি, পরে আসেন, Saikat কেমনে কি বুঝিনা, Rakib কাদের সাথে ঘুরে সেটা আর না বলি।।  সবকিছুর পরেও সবার শত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় করে প্রিয় মানুষগুলির সাথে সময় কাটানোর সুযোগটা আমি কখনই মিস করতে চাইনা তাই আবারো একসাথে। আর ভ্যেনু পূবাইলের "জল ও জঙ্গলের কাব্য"। 

ভ্রমনঃ

নাম শুনে বোধকরি যে কারোরই অনুমেয় হবে যে এখানে 'জল' ও 'জঙ্গল' কাব্য করে। আদতেও তাই! নেই কোন ইট পাথরের জঞ্জাল, নেই কোন শব্দ দূষণ । পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ কেমন, কোন পাখি কিভাবে ডাকে, জলে বৃষ্টির শব্দ কি আসলেই রিনিঝিনি, টিনের চালেই বা বৃষ্টি কেমন খেলা করে এই ব্যাপারগুলি খুব কাছ বুঝতে পারবেন এখানে এলে। লাগোয়া বিলে মন জুড়ানো বিভিন্ন রঙের কলমি, শাপলা, শালুক । ইচ্ছে হলেই নিজের মত করে নৌকা বেয়ে চলে যাওয়া যায় বিলের উপর বাঁশের বাঁধানো মাচায়, মাছ ধরার ইচ্ছা থাকলে বসে যেতে পারেন পুকুর বা বিলে। গান গাইতে চান? বসে যেতে পারেন সেখানে থাকা বাউল দলের সাথে।

 


 






[caption id="" align="aligncenter" width="512"] অতীত সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি![/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] হাসন-লালনের গান[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] সুখস্মৃতি[/caption]

পৌছলাম বিকেলে। যাওয়ার সাথে সাথেই যা পাবেন তা হলো মন জুড়ানো এক গ্লাস লেবুর শরবত। এরপর তালের পিঠা, আলুর চপ আর গুড়া মাছ ভাজা চিবুতে চিবুতেই দেখলাম সূর্যি মামা বাড়ি ফিরে গেছে। গল্পে গল্পে নৌকা ভাসিয়ে দিলাম বিলে। মাঝ নদীতে শুনশান নিরবতায় আকাশের পানে তাকিয়ে আসলেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এত তারা আকাশে!!! শেষ করে এত তারা দেখেছি মনে নেই। প্রিয় কারো জন্যে না হয় গাইলেনই দুটো লাইন

আজ ফিরে না গেলেই কি নয়
সন্ধ্যা নামুক না জোনাকি জ্বলুক না
নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময়।।

পেটে টান পরায় ফিরে এলাম ডাঙ্গায় :) যথারীতি রাতের ভুড়িভোজ। স্পেশাল আইটেম ইয়া বড় ২টা রুই-কাতল মাছের বারবিকিউ।

আড্ডা, তাস, চা'য়েই রাত ৪টা বাজিয়ে ফেললাম। ঝুম বৃষ্টির ছটায় ভোরের ঘুম জড়ানো চোখ যখন খুলি তখন ভোর ৫.৩০টা ।  শুয়ে থাকার কি আর মানে হয়? বেরিয়ে পরলাম সবাই 'বৃষ্টিস্নানে' নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে গলা ছেড়ে গান গাইতে! বইয়ের পড়া, অফিসের কাজ সব কিছু দিব্বি মনে করতে পারলেও শেষ কবে এমন বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই মনে করতে পারলাম না !! এটাই কি জীবন ভুলে অসীমের পানে ছুটে চলার ফল?

এখন শরত কাল এটা বুঝাতেই মনেহয় ঝুম একটা বৃষ্টির পরে পুব আকাশ ঝলমল করে গতকালের বিদায় নেয়া সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। লাল আভা মাখানো ধরনী তখন আসলেই অপার্থিব। আর আকাশ জুড়ে  শ্বেতশুভ্র, পেজো তুলার অসীম রকম নীলের সাথে অন্তরঙ্গ মাখামাখি। লিলুয়া বাতাসে আপনি গাইতেই পারেন "লিলুয়া বাতাসে প্রান না জুড়ায়... না জুড়ায় রে..."

ঢেঁকির শব্দ জানান দিলো নাস্তা তৈরির পথে :) চালের রুটি, বুটের ডাল, সবজী, মুরগির কারি, লুচি ভাজা... আহ!! (ক্ষুদা পেয়ে যাচ্ছে) নাস্তার শেষে চিতই পিঠা-সরিষা বাঁটা দিয়ে মুখটা ঝাঁঝিয়ে নিতে পারেন। সকাল দুপুর বিকাল রাত যখন ইচ্ছে তখন চা পাবেন ইচ্ছে মত। নাস্তার পরে অলস সময়ে পেয়ে যাবেন জাম্বুরা ভর্তা, কাঁচা পেঁপে বা আমড়া বা কামরাঙ্গা ভর্তা। বা কাসুন্দি মাখানো কাচা-পাকা আম। জল এসে যাচ্ছে জিভে? না আসলে ডাক্তারের কাছে যান।  দুপুরের খাবারের মেন্যুটা না বলাই থাক। কখনো গেলে জেনে নিয়েন।

 

[caption id="" align="aligncenter" width="512"] প্রিয় মুখ[/caption]

[caption id="" align="aligncenter" width="336"] সেদিন দুজনে। ছবির মডেলঃ ভাই, ভাবী[/caption]

যে বিষয়গুলি না উল্লেখ করলেই নয়ঃ

আথিতেয়তা । কেউ কখনও আমাদের দেখেও নি বা চিনেও না । কিন্তু বিদায় বেলায় সবাই মিলে সামনের সড়কে এসে বিদায় জানাচ্ছে - ব্যাপারটা আমাকে অভিভূত করেছে। একবার দুইবার না; চার- চার বার!

খাবার-দাবার। বিশদ বলতে গেলেই জিভে জল এসে যাচ্ছে সো নো ডিটেইলস।

ছিমছাম সরলতা - গেলেই বুঝতে পারবেন

সজীব-স্নিগ্ধতা।

ভূতের রাজা ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ কারন উনি না থাকলে এই জায়গার সন্ধান পাওয়া ও যাওয়া-আসা  আসলেই সম্ভব হত না কখনও।

3 comments:

  1. খুবই ভালো লাগলো । তবে আমি বলব এটা 'Traveling' category না হয়ে 'বন্ধুতা' অথবা 'তোমাদের জন্য ভালোবাসা' categoryও হতে পারত ।

    ReplyDelete
  2. kno barbar mon kharap kore des........................ajkal bujhina jiboner mane...ki chai knoiba chai....pilei ba ki hobe..........din gulo sudhu chole jai.

    ReplyDelete
  3. দিনগুলো শুধু চলে যায়...হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণীয়াসু পড়েছিস? ওখানে একটা জায়গায় আছে বিদেশী এক বৃদ্ধা একটা গান গাইছেন যার অর্থ - আমাদের বসন্ত শেষ, ভালবাসা-বাসি দিয়ে কিছুতেই আটকে রাখা গেল না !

    ReplyDelete