Saturday, September 7, 2013

ঢাকা শহরে ভালো কিছু খেলার মাঠ

[caption id="attachment_381" align="aligncenter" width="507"]ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com[/caption]

ইট-পাথরে ঠাঁসা ঢাকা শহরে প্রতিদিন নতুন হাজারো মানুষের ভিড়ে যখন দম ফেলার জায়গাটুকু পাওয়া যায় না, তখন খেলাধুলার ভালো একটা মাঠ বলতে উচ্চাভিলাষ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। অফিস-আদালত কিবা আকাশ ছোঁয়া এপার্টমেন্ট পল্লীতে একটু মাথা গোঁজার চিন্তা, এসবের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সাধারন মানুষের নির্মল বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ। আবার সব মাঠ জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত নয়, সব মাঠে খেলাধুলার অবস্থাও নেই কিংবা সব মাঠ খেলার মাঠ নয় –অনেক পতিত জমিও আছে। তবুও এত কিছু সত্বেও এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত বেশ কিছু ভালো খেলাধুলার মাঠ।  ঢাকা শহরের তরুন প্রজন্ম, যারা মাঠ নেই বলে অল্প বয়সেই মোটা চশমা লাগিয়ে কম্পিউটার এর সামনে বসে রয়েছেন; অথবা যারা সন্তানের খেলাধুলা, শারিরীক ও মানসিক গঠন সহ সুস্থ সুন্দর জীবন-যাপন নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের জন্যে আমরা আজকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু খেলাধুলার ভালো মাঠ খুঁজে বের করবঃ

খিলগাঁওঃ

খিলগাঁও এলাকায় বেশ কিছু ভালো খেলার মাঠ আছে। খিলগাঁওগভঃস্কুলএরমাঠটাই সবচেয়ে ভালো। ভিটে বালি সম্বলিত এই মাঠ আনুমানিক ৭০×৫০ মিঃ। স্কুলের মালিকানাধীন মাঠটি জনসাধারনের জন্য উন্মুক্তও। খিলগাঁও গভঃ স্কুলের নিকটবর্তী আরেকটি ভালো মাঠ এলাকায় বালুর মাঠ নামে পরিচিত। আনুমানিক ৯০×৪০ মিঃ । পুরো মাঠটাই বালির বলে কাদা কম হয়। খিলগাঁও রেলগেট থেকে তালতলা যেতেই পড়বে জোড় পুকুর মাঠ যা আনুমানিক ৬০×৩০ মিঃ। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এ মাঠটিও বেশ ভালো।

 বাসাবোঃ

আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়ার আশরাফুলের শৈশবের মাঠ বাসাবো বালুর মাঠের আয়তন আনুমানিক ৮০×৫০ মিঃ। মাঠের একপাশে রয়েছে তরুণ সংঘ ক্লাবঘর। বাসাবো আহাম্মদবাগ এলাকায় রয়েছে একটি সুবিশাল খেলার মাঠ। এলাকায় সালাম ডেইরীর মাঠ নামে পরিচিত মাঠটি আনুমানিক ১০০×৭০ মিঃ আয়তন বিশিষ্ট। মাঠের কোন সীমানা চিহ্নিত নেই।

শাহজাহানপুরঃ

মতিঝিল গভঃ বয়েজ স্কুলের মাঠটি খেলাধুলার জন্য সত্যিই অসাধারন। শাহজাহানপুর মোড় এর সাথেই এই মাঠের আয়তন আনুমানিক ১০০×৫০ মিঃ। ফুটবল খেলার জন্যে এই মাঠটি বেশ চমৎকার হলেও এলাকাবাসী এটি ব্যবহার করে সব ধরণের খেলাধুলার জন্যই। শাহজাহানপুর বেনজীর বাগান এলাকায় রেলওয়ে স্কুলের মাঠ মাঝারি আকৃতির ঘাসের মাঠ। খিলগাঁও বাজার সংলগ্ন শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠটি লম্বাকৃতির, আয়তন আনুমানিক ৮০×৩০ মিঃ। শাহজাহানপুর এ.জি.বি. কলোনীতে ঈদগাহ্‌ মাঠটিও বেশ ভালো গোলাকৃতির মাঠ।

মগবাজারঃ

টিএন্ডটি অফিসের সামনে লালমাটি বিশিষ্ট টিএন্ডটি মাঠ আনুমানিক আয়তনে ৯০×৬০ মিঃ। নয়াটোলার পরে মধুবাগ মাঠটিও  মগবাজার এলাকার উল্ল্যেখযোগ্য একটি মাঠ।

আরামবাগ-মতিঝিল-কমলাপুরঃ

টিএন্ডটি কলোনী স্কুলের মাঠের আয়তন ৫০×৩০ মিঃ। তবে আরামবাগ ব্রাদার্স ক্লাবের মাঠটিই অত্র এলাকার সবচেয়ে ভালো খেলার মাঠ। মধুমিতা সিনেমা হলের পিছনে এ মাঠটি ক্লাবের মালিকানাধীন হলেও প্রায়শই এলাকাবাসী খেলাধুলার কাজে ব্যবহার করে। কমলাপুরে শেরে বাংলা স্কুলের মাঠটি অনেক ছোট, আনুমানিক ৪০×২০ মিঃ হলেও প্রতিদিন অনেকেই খেলতে এখানে জড়ো হয়।

[caption id="attachment_375" align="aligncenter" width="379"]আরামবাগ বালুর মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ daily-sun.com আরামবাগ বালুর মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ daily-sun.com[/caption]

রামপুরা-তেজগাঁওঃ

অত্র এলাকায় অনেক খোলা জায়গা থাকলেও খেলার মাঠ বলতে যা বুঝায় সেরকম মাঠ খুবই কম। বিভিন্ন আবাসিক প্রজেক্টের ফাঁকা জায়গায়ই মূলত খেলাধুলা হয়। তবে হাজীপাড়া মাঠটি খেলাধুলার জন্য বেশ উপযোগী, বেশ বড়। তেজগাঁওয়ে কিছু খেলার মাঠ থাকলেও তা জন-সাধারনের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে ত্রিভূজাকৃতির তেজকুনীপাড়া মাঠটি ছোট হলেও ( আনুমানিক ৫০×৩০ মিঃ) খেলার জন্য মন্দ নয়।

পুরান ঢাকাঃ

[caption id="attachment_376" align="aligncenter" width="435"]ধুপখোলা মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com ধুপখোলা মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com[/caption]

পুরান ঢাকায় খেলাধুলার মাঠের নিদারুণ অভাব এলাকাবাসীকে দারুণ ভাবায়। এর মধ্যেও কয়েকটি মাঠ উল্ল্যেখ করার মত। যেমনঃ ধুপখোলা মাঠ অনেকেরই খেলাধুলার

[caption id="attachment_377" align="alignright" width="261"]রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাব মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাব মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com[/caption]

অতি প্রিয় জায়গা। তিনটি মাঠ একসাথে মিলে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ + এলাকার মাঠ + ইস্ট এন্ড ক্লাবের মাঠ) ধুপখোলা মাঠ একটি সুবিশাল মাঠ। তবে বর্তমানে ফ্লাই

ওভারের মত বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের কারনে মাঠের হাল-হকিকত বিশেষ সুবিধার নয়। আগা সাদেক রোড এর পাকিস্তান মাঠ এর নামডাক অনেক শোনা যায়। তবে মাঠের আকারটিকে আপনি আয়তাকার-বর্গাকার জাতীয় আকারে ফেলতে পারবেন না। এছাড়াও কোম্পানীগঞ্জে সি.এম.বি. মোড়ের খোকা মাঠের কথাও বলতে হয়। আকারে একটু ছোট, বালির মাঠ। বাবুবাজারের পাশে রহমতগঞ্জে আছে রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাব মাঠ,  ঘাসহীন বালুর এ মাঠ রহমতগঞ্জ এলাকার তরুণদের প্রাণের মাঠ। ক্লাবের তত্বাবধানে এ দেশের বহু কৃতি ফুটবলারের জন্ম এ মাঠেই। লালবাগের কাছাকাছি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশেও জন-সাধারনের খেলার উপযুক্ত বেশ ভালো আরেকটি মাঠ আছে। মাঠের সাথেই শাহ সৈয়দ মিসকিন আশরাফ জামে মসজিদ। বকশীবাজার রোড এ চকবাজার মডেল থানার ঠিক পাশেই বকশীবাজার খেলার মাঠটিও বেশ বড়। অনেক আগের এ মাঠটিতে আলিয়া মাদ্রাসা এবং নবকুমার ইন্সটিটিউশনের ছাত্রদের পাশাপাশি এলাকার সব বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে।

[caption id="attachment_379" align="aligncenter" width="435"]বকশীবাজার মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com বকশীবাজার মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ kalerkontho.com[/caption]

আজিমপুরঃ

আজিমপুরের ২৭ নাম্বারের মাঠটি এলাকার সবচেয়ে ভালো মাঠ। আজিমপুর শাপরা মসজিদের পার্শ্ববর্তী এ মাঠে প্রতিদিন অনেকেই খেলতে আসে। তাছাড়াও আজিমপুরে চায়না বিল্ডিং এর সাথে রয়েছে আরেকটি মাঠ যার আয়তন আনুমানিক ৮০×৮০ মিঃ।

ধানমন্ডিঃ

[caption id="attachment_378" align="alignleft" width="192"]আবাহনী মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ banglanews24.com আবাহনী মাঠ, ফটো কার্টেসিঃ banglanews24.com[/caption]

আবাহনী ক্লাবের মাঠ ধানমন্ডি এলাকায় সবচেয়ে বড় মাঠ। আনুমানিক প্রায় ২০০×১৫০ মিঃ আয়তনের এই ঘাসের মাঠে অন্যান্য এলাকার অনেক মানুষও খেলতে আসে। এমনকি মাঠের উপযোগীতার কারনে অনেক আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগীতামূলক খেলাও এ মাঠে হয়। কলাবাগান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ  তেমনভাবে সবার জন্য উন্মুক্তও না হলেও প্রায়শই এলাকার বিভিন্ন বয়সের মানুষ্কে খেলতে দেখা যায়। প্রায় বর্গাকৃতির ঘাসের এ মাঠটিও খেলার উপযোগীতার দিক থেকে এক কথায় চমৎকার। ধানমন্ডি জিগাতলার পাশে হাজারিবাগে হাজারীবাগ পার্ক সংলগ্ন মাঠটি বহু আগের, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজরিত এ মাঠটিই হাজারীবাগ এলাকার একমাত্র মাঠ হলেও মাঠের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়।

 

 

মোহাম্মদপুরঃ

মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোড এ সোনালী সংঘ মাঠ খেলার সুন্দর জায়গা। মাঠের সার্বিক তত্বাবধানে আছে এলাকার সোনালী সংঘ। বালুর মাঠ, মাঠের চারপাশে বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা আছে। দু-তিনটা লাইটের সাহায্যে রাতের বেলা এ মাঠে শর্ট পিচ ক্রিকেট খেলাও বেশ জমে। সোনালী সংঘ মাঠের এক পাশে র‍্যাব-২ এর কার্যালয়। তবে শলিমুল্মাহ রোড এর কবরস্থান মাঠকেই বলা যেত মোহাম্মদপুরের সবচেয়ে ভালো খেলার মাঠ যেখানে এখন জনসাধারনকে খেলতে দেখা যায় না বা দেয়া হয় না।  মোয়াহাম্মদপুর টাউন হল মালিক সমিতির তত্বাবধানে শহীদ পার্ক খেলার মাঠও বেশ বড়। মাঠের মাঝখানে ক্রিকেট পিচটা ভালোই, আবার চারপাশে টাউন হল মার্কেট আর মসজিদের বিশাল দেয়ালের কারনে বলও মাঠের বাইরে সাধারনত যায় না। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে স্ট্রাইকার্স মাঠের কন্ডিশন বেশ ভালো। মাঠের পাশেই নতুন লন টেনিসের কোর্ট করা হয়েছে যাতে আজকাল দিনরাত লন টেনিস খেলা হচ্ছে। ইকবাল রোডের উদয় চল মাঠের অবস্থাও চমৎকার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভালো। তবে  উদয় চল সংঘের ক্রীড়ামোদীরাই কেবল ঐ মাঠে খেলতে পারে।

মিরপুরঃ

মিরপুরের মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ এলাকায় খেলাধুলার জন্য একটি নিয়মিত জায়গা। মাটি আর ঘাসের মিশ্রনে মাঠটির আয়তন আনুমানিক ১০০×৭০ মিঃ। তবে কলেজের বিভিন্ন প্রকার ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চাইলে অন্যান্য আরো অনেক মাঠ আছে মিরপুরে। মিরপুর সাড়ে এগারোতে সিটি ক্লাব মাঠটি অসাধারন। ঘাসের এই মাঠটিতে এমনকি বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক খেলাও নিয়মিত আয়োজন করা হয়। শাহ আলী থানার সামনে কাজীপুরি মাঠে কিংবা ন্যাশনাল স্কুলের মাঠেও অনেকেই খেলাধুলা করে। এছাড়া চিড়িয়াখানা রোডে আগোরা শপিং মলের সামনেই ঘাসবিহীন মাটির ঈদগাহ্‌ মাঠেও খেলা ভালোই জমে। মিরপুর এলাকার জন্য পাশের গাবতলীতে গোল্লার টেক মাঠের কথাও উল্ল্যেখ করতে হয়।

যতগুলো মাঠের আকার দেয়া হয়েছে সবগুলো আকারের আগেই লিখে দেয়া হয়েছে আনুমানিক, যা লেখকের চোখের অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব এলাকায় শুধু এই মাঠগুলোই নয়, বরং আরো অনেক মাঠ রয়েছে। তবে জনসাধারনের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে এই মাঠগুলোই সবচেয়ে উপযুক্ত। তার পাশাপাশি ঢাকা শহরে এখনো কিছু খোলা জায়গায় অনেকেই খেলাধুলায় মেতে উঠে। তাই ইট পাথরের কঠিন যান্ত্রিক মানুষটাকে ছুড়ে ফেলে আপনি ভেতরের প্রাণোচ্ছল মানুষটাকে নিয়ে খেলাধুলায় মেতে উঠতেই পারেন এখন।

1 comment: