ক্রিকেটের লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে আমরা কে না চিনি? বাংলাদেশে শচীনকে চেনেন না এমন মানুষের জুড়ি মেলা ভার। ক্রিকেট না বুঝলেও শচীনকে চিনতেই হবে। জন্মের পর থেকে দেখছি এই ভদ্রলোক ক্রিকেট খেলছেন এবং খেলেই যাচ্ছেন। বয়সও যেন বাড়ে না তার। কত ক্রিকেটার এলো-গেল, কিন্তু শচীন আছেন তো আছেনই। কারণটা সহজ। আমার জন্ম ’৮৯ এ। আর শচীনের আন্তর্জাতিক ময়দানে প্রবেশও সেই ’৮৯ তেই। আমার বয়স আর শচীনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বয়স সমান। অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাই কিন্তু তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বলে মনে করেন। অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্য এবং ভদ্র ব্যক্তিত্বের কারণে তার সুনামও জগতজুড়ে। একদিনের ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেক দিন হলো, গত পরশু শেষবারের মতো মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে জীবনের ২০০তম টেস্ট খেলতে নেমেছেন তিনি। শতবার শতরান পেরোনো এবং ৭ বার দু’শত পেরোনো এই খেলোয়াড়ের ক্রিকেট পরিসংখ্যান নিয়ে আজ আমরা বসবো না, আজ আমরা জানবো তার জীবনের কিছু জানা-অজানা দিক।
১. শচীনের পুরো নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, উচ্চারণ তেন্দুলকার। রমেশ টেন্ডুলকার তার বাবার নাম। মায়ের নাম রজনী দেবী।
২. সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মনের নামেই তার নাম শচীন রাখা হয়।
৩. শচীন ছিলেন সুনীল গাভাস্কারের ভক্ত। স্কুলে পড়ার সময় শচীনকে গাভাস্কার এক জোড়া প্যাড দিয়েছিলেন। শচীন ১৯৮৯ সালে তার জীবনের প্রথম টেস্টে ঐ প্যাডজোড়া পায়ে দিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামেন।
৪. শচীন কুসংস্কারের কারণে সব সময় বাম পায়ের প্যাড প্রথমে পরেন।
৫. ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি স্পিন বোলার হওয়া সত্ত্বেও শচীন লেখেন বাম হাত দিয়ে।
৬. শচীন বোলিং প্রশিক্ষণের জন্য এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ভর্তি হন। কিন্তু তার বোলিং এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান লিজেন্ড বোলার ডেনিস লিলি। তিনিই শচীনকে ব্যাটিং এ মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
৭. শচীন কখনো অনুর্ধ্ব উনিশে খেলেন নি। তিনি একবারে বড়দের প্রথম শ্রেণির খেলায় অংশ নেন।
৮. তিনি তার প্রথম একদিনের খেলায় শূণ্য রান করেন।
৯. ক্রিকেট জীবনের প্রথম দিকে তিনি তার কোচ রমাকান্ত আচরেকারের কাছ থেকে একটা করে কয়েন লাভ করতেন যদি একবারও বাদ না পড়ে নেট প্র্যাকটিস সেশন উতরে যেতে পারতেন। এভাবে মোট ১৩ টি কয়েন লাভ করেন তিনি।
১০. ছোটবেলায় টেন্ডুলকার তার গ্লাভস,প্যাড, হেলমেট নিয়ে ঘুমাতেন।
১১. টেন্ডুলকারই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি থার্ড আম্পায়ারের ডিসিশনে আউট ঘোষিত হয়েছেন। এ ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালে ডারবান টেস্টে।
১২. সাধারণ ব্যাটের চেয়ে অধিক ভারি ব্যাট ব্যবহার করেন শচীন। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনারই তার থেকে ভারি ব্যাট ব্যবহার করেন।
১৩. শান্ত-ভদ্র হিসেবে পরিচিত শচীন কিন্তু স্কুল জীবনে সহপাঠীদের আংলি দিতে ওস্তাদ ছিলেন।
১৪. ১৯৯৫ সালে শচীন রোজা মুভিটি দেখতে দাঁড়ি লাগিয়ে চশমা পরে ছদ্মবেশে সিনেমা হলে যান। কিন্তু তার চশমা খসে পড়ায় উপস্থিত ব্যক্তিরা তাকে চিনে ফেলেন।
১৫. শচীনের মাতৃভাষা মারাঠী। তার বাবা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মারাঠী পড়াতেন। আর মা ছিলেন একজন বীমা কর্মকর্তা। তার প্রিয় খাবার ভাডা-পাও (এক ধরণের মহারাষ্ট্রীয় খাবার)।
১৬. শচীনকে একবার মাইকেল শুমাখার একটি ফেরারি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। সেটি দেশে আনতে শচীনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। বিরাট অংকের শুল্কের পুরোটাই দিয়েছিল ফিয়াট অটো যদিও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তার শুল্ক মওকুফ করতে চেয়েছিলেন।
১৭. এই ফেরারি তিনি এতই ভালবাসতেন যে অ্যাক্সিডেন্টের ভয়ে তার স্ত্রী অঞ্জলীকেও চালাতে দিতেন না।
১৮. টেন্ডুলকার সৌরভ গাঙ্গুলীকে ‘বাবু মশাই’ বলে সম্বোধন করেন আর গাঙ্গুলী তাকে ডাকেন ‘ছোটা বাবু’ নামে।
১৯. ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম স্পিনার হরভজন সিং কিন্তু বোলিং করা শিখেন টেন্ডুলকারের কাছ থেকেই।
২০. বৃষ্টির মৌসুমে যখন খেলা বা প্র্যাকটিস বন্ধ থাকে তখন শচীন টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসেন।
২১. শচীনের শাশুড়ি অ্যানাবেল মেহতা একজন ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় শচীনের ছেলে ইচ্ছে করলে ইংল্যান্ডের কাউন্টি দলে স্বদেশি হিসেবে খেলতে পারে।
২২. ভারতের রাজ্যসভার একজন সদস্য তিনি। রাজ্যসভার ২৫০ টি আসনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির মনোনীত ১২ জন সদস্যের একজন হিসেবে সদস্যপদ লাভ করেন।
২৩. ভারতীয় বিমান বাহিনী তাকে সম্মানসূচক গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদা দান করেছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন ভারতের এই ক্রিকেট মহারাজ। কিন্তু তাকে হৃদয় থেকে বিদায় জানানো সম্ভব নয় কোনো ভক্তের পক্ষেই। ব্যাটিংকে যে শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন এই লিটল মাস্টার, সে জন্যেই তাকে হাজার বছর ধরে মনে রাখবে সবাই। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী স্পিনার শেন ওয়ার্ন একবার বলেছিলেন, “আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি যে শচীন টেন্ডুলকার আমার বলে ছক্কার পর ছক্কা মেরে যাচ্ছেন এবং ক্রিজে নাচানাচি করছেন" -এত বড় বোলার এরকম কথা তখনই বলতে পারেন যখন কথাটা হয় একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। অনেকেই বলে থাকেন শচীন নাকি ‘ম্যাচ উইনিং প্লেয়ার’ নন। শচীন শতরান করেছেন কিন্তু দল জেতে নি এমন হয়েছে অনেকবার। কিন্তু তাই বলে শচীনের তুলনা কিন্তু শচীনই। স্থিরচিত্তে বাঘা বাঘা বোলারদের চার-ছয় পিটিয়ে যেভাবে নাকাল করেছেন তিনি, তার সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাস। শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৪ রান করেছেন। আশা করি, দ্বিতীয় এবং জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ভক্তদের জন্য দারুন কিছু উপহার দিতে যাচ্ছেন তিনি।
তথ্য ও ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment