আগুনে পুড়া গেল। এবার আসি ভাঙচুর প্রসঙ্গে। গাড়ি বা বাস চালায় যাচ্ছেন, হৈ হৈ করে এসে কিছু মহান ভাড়াটে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক কর্মী এসে গাড়ি-বাস থামিয়ে ভাঙা শুরু করবে। এর জন্য দরকার বুলেটপ্রুফ গ্লাস। অবরোধকারীরা কাঁচে বাড়ি দিবে কিন্তু কাঁচ ভাঙবে না। সবাই হাততালি দিবে। আর যদি বুলেটপ্রুফ গ্লাস সবাই অ্যাফোর্ড করতে না পারে তাহলে তো কাঁচ ভাঙা দেখতে হবে। গাড়ি চালক ও যাত্রীরা যেন কাঁচ এবং পিকেটারের মাইর থেকে রক্ষা পায় সেজন্য পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও গিয়ার আপনারা নিয়ে আসেন। আইফেরির ওয়েবে হরতাল-অবরোধ সেকশনে এগুলোর তালিকা ও ছবি দিয়ে দেন। সাপ্লাই না পেলে চায়নায় ভেন্ডর ঠিক করে অর্ডার দেন। বহুত ফায়দা হবে। মানুষ উপকৃত হবে। আর ভালো দেখে হেলমেট রাখতে কিন্তু ভুলবেন না।

আসল কথা বলা হয় নাই। সেটা হচ্ছে ককটেল। ককটেল যদি গায়ের ওপর বা আশেপাশে পড়ে তাহলে স্প্লিন্টার যেন কোনো সমস্যা করতে না পারে সেজন্য দরকার বোমাপ্রুফ জামা। ফুটবলের জার্সির কালেকশন আপনাদের ভালো। এবার মেহেরবানী করে একটু হরতালের বোমাপ্রুফ জার্সির বন্দোবস্ত করেন।
হরতাল-অবরোধে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হয়তো হয় না। অনেক সরকারি অফিসেও হয়তো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত হতে হয় না। কিন্তু যারা দিনমজুর, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হয় তাদেরকে জান হাতে করে নিয়েই বের হতে হয় ঘরের বাইরে। আর একেকদিন একেকজনের ভাগে পড়ে লাশ হওয়ার গল্প। মা সন্তানকে ঘর থেকে বিদায় দেন কিন্তু জানেন না তার সন্তান কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে কিনা কিংবা ফিরলেও জীবিত ফিরবে কিনা। সাধারণ মানুষের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো এসএসএফ, পিজিআর আর পুলিশের এসপিবিএন নাই। তাই পাবলিকের নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। এক পাবলিক আগুনে পুড়লে আরেক পাবলিকই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়। আমজনতা যাতে নিজের নিরাপত্তা নিজে নিতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা গিয়ার আইফেরিতে আনেন, মানুষ অর্ডার করুক, আপনারা বাসায় দিয়ে যান।
রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের কারণ হলো জনতার শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এমন অবস্থায় আমরা উপনীত হয়েছি যে শুধু গণতন্ত্র বললে গণতন্ত্র বোঝা যায় না, বুঝিয়ে বলতে হয় “ট্রু গণতন্ত্র”। অর্থাৎ, এখন বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র তা ‘ট্রু গণতন্ত্র’ না হলেও ‘গণতন্ত্র’। কি অদ্ভুত! ক’টা রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগীদের কাছে সব শাসন ক্ষমতা আর এর নাম নাকি “গণতন্ত্র”? আমরা ১৬ কোটি জনতা মানুষের কাবাব হওয়া রোধ করতে পারি না। ১৬ কোটি মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় নাকি হরতাল চায় সেটি কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। বিচার-বিবেচনা আটকে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেত্রীর কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে। ভীষণ লজ্জা হয়, ভীষন অপমানবোধ জাগে, ভীষণ অসহায় লাগে। আমরাই তো ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করা জাতি। আজ আমরাই এত অসহায়, এত নিরুপায়? দু’দলে যে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন তারা কি তবে আরো অসহায়? সত্যি, আজ বড় খারাপ সময়। আজ গণতন্ত্রের প্যান্ট খুলে গিয়েছে। নগ্ন গণতন্ত্র আজ লজ্জিত, বিব্রত, অপারগ। শেষ প্রশ্ন, গণতন্ত্রকে প্যান্ট পরাতে কত সময় লাগবে আমাদের?
ছবি কৃতজ্ঞতা: বাংলানিউজ২৪
No comments:
Post a Comment