
শীত নিয়ে উত্তেজনা কিন্তু সকল পর্যায়েই। শীঘ্রই বাজারে আসতে শুরু করবে শীতের পোশাক, প্রসাধনী। জমে উঠবে শীতের বাজার। ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে হরেক রকম সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার আর বাঁদুড়ে টুপির সমাহার শীতের আগমনীকে করবে আরো শোভামণ্ডিত। শীত কিন্তু সাইকেলপ্রেমীদের জন্যেও সুসংবাদ নিয়ে হাজির হচ্ছে। ঢাকা শহরের সচেতন সাইকেলপ্রেমীরা শীতে সাইক্লিং করা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছে। শীতে জ্যাকেট চাপিয়ে সকল গিয়ার সেট করে দ্বিচক্রযান ভ্রমণের মজা কি আর কড়া রোদে ঢাকার রাজপথে পাওয়া যায়? যায় না। শহরের কেন্দ্র থেকে সাইকেলে করে যাওয়া হবে মাওয়া ঘাট, জাহাঙ্গীরনগর, কুর্মিটোলা বিমানবন্দর কিংবা প্রাচীন শহর পানাম নগরে। সেই সাথে চলবে ফটোগ্রাফী। আর ক্রীড়াপ্রেমীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই মাঠে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনন্দে ক্রিকেট অনুশীলনটা পাড়া-মহল্লায় যেন একটু বেশিই হচ্ছে। আর ফুটবলপ্রেমীরা থেমে নেই। দৌড়োচ্ছে বল নিয়ে। সব মিলিয়ে শীত নিয়ে এসেছে উৎসবের আমেজ। শীতে নগর জীবনের সময়সূচী অনেকটাই পাল্টে যায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয় দেরিতে। অফিসের বাসটা আরেকটু দেরিতে নিতে আসে। একঘেয়ে জীবনে এ পরিবর্তন কিন্তু সকলে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। কাঁপতে কাঁপতে ঘুম থেকে উঠে কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে কাজে বের হয়ে যাওয়া। কাজ সেরে ফেরার পথে রাস্তার ধারে পিঠাপুলির দোকানে খাদ্যবিলাস। এই তো শহুরে বাঙালির শীত রুটিন।
যে দেশে যেই ঋতু ক্ষণস্থায়ী সে দেশে সেই ঋতু নিয়ে মাতামাতি। পশ্চিমারা ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্মে বড় দেখে ছুটি কাটায়। সমুদ্র সৈকতে রৌদ্রস্নান, মাছ ধরা, সামার ক্যাম্প কত কি! আমরাও কিন্তু আমাদের ক্ষণস্থায়ী অতিথি শীতকে উপভোগ করতে শিখে গিয়েছি। শীত মানেই বনভোজন, বিয়েশাদি, ভ্রমন আর পিঠাপুলির উৎসব। কিংবা শীত মানে স্রেফ পথের ধারে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ আগুন গরম চা ধীরে ধীরে উপভোগ। মনে পড়ে বাল্যকালে শীতের ছুটিতে লেপমুড়ি দিয়ে তিন গোয়েন্দা, শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুরে সিরিজ কিংবা টিনটিন পড়ার দিনগুলিকে। এখন হয়তো সন্ধ্যা রাতে লেপমুড়ি দিয়ে এক কাপ চা হাতে খুব জমবে টান টান উত্তেজনার কোনো থ্রিলার মুভি। রাতের ঘুমটাও হবে সেই রকম। আর সকালে আটা রুটির বদলে থাকবে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাপা পিঠা। বিকেলে মগভর্তি কফিও কিন্তু চলবে। সব মিলিয়ে জীবনটা খারাপ হবে না। হাঁড়ে কাঁপন ধরানো শীত কিন্তু কাজেকর্মে কিছুটা হলেও স্থবিরতা আনবে আর বাড়িয়ে দেবে অবসরের আনন্দ। শীত মানেই আনন্দ, ফুর্তি আর অলিখিত উৎসব। আর হ্যাঁ, শীতে উনুনের ধারে বসে ধোঁয়া ওঠা কাবাব খেতেও কিন্তু মন্দ লাগবে না। মোট কথা, গরম খাবারের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।
দেরি না করে শীতের প্রস্তুতি তাহলে নিয়ে নিই আমরা। আলমারির ভেতর থেকে বের হোক কম্বল আর সোয়েটার। রোদ পোহাক তারা। প্রস্তুত হোক আমাদের গায়ে চাপার জন্যে। ঠোঁট ফাটা রোধে চ্যাপস্টিকটা পকেটে ভরে ফেলি। সাইকেলটার চাকায় তেল দিই। লাইট আর হর্ন লাগিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমনের উপযোগী করি তাকে। কেডসের ধুলাও উড়ে যাক তবে। কানটুপিটাও আলোর মুখ দেখুক। খেঁজুড়ের গুড় আর চালের আটা চলে আসুক স্টকে। এবারের প্রস্তুতি শীত মোকাবিলার, প্রস্তুতি শীত উপভোগ করার। আসুন, জীবনটাকে উপভোগ করি, সুস্থভাবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা:ফটোনিউজ২৪
আহ ! নস্টালজিক হয়ে যাবার মত পোস্ট ! শুধু একটা কাঁটা শীত আসলেই খচখচ করে বুকে বিঁধতে থাকে ! অফিস থেকে ফেরার পথে রাতে যখন চোখের সামনে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে জড়াজড়ি করে রাস্তায়-ফুটপাথে শুয়ে থাকতে দেখি তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় ! কিছু করা যায় না এদের জন্য ?
ReplyDeleteগতবার আমরা আইফেরির পক্ষ থেকে শীতের কাপড় সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলাম দেশের একটা প্রত্যন্ত চরে, কিন্তু আমার ইচ্ছা এবার আমরা আরও একটু বড় কিছু করি। ঢাকায় যদি একটা ঘুমানোর জায়গা করে দেয়া যেত পথশিশুদের জন্য উত্তরা-ধানমন্ডি বা মিরপুরে ? ইকরাম আনাম, আপনারা তো তরুণ-তুর্কি, এরকম কোন উদ্যোগ যদি আপনারা নিতে পারেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আইফেরি.কম তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে আপনাদের পাশে থাকতে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ নাসির ভাই। শীতে আনন্দের দিকগুলোই শুধু তুলে ধরেছি কিন্তু বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষ এই শীতে মানবেতর জীবন-যাপন করে। তাদের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তরুণ প্রতিবারই কোনো না কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটেছে। আইফেরি ডট কম শীতার্তদের জন্যে অতীতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শুনে খুবই আনন্দিত হলাম। স্যালুট জানাই। এবার শীতবস্ত্র বিতরনের কাজে আমার এলাকায় আমি অংশ নিতে পারবো। আর সাধ্যমতো শীতের পোশাক কন্ট্রিবিউট করবো ইন-শা-আল্লাহ্। তবে শেলটারের জন্য যে উদ্যোগের কথা বলছেন এরকম উদ্যোগ গ্রহণের মতো সাংগাঠনিক ক্ষমতা আমার নেই। তবে এ বিষয়ে কাজ হলে আমি শ্রম দিতে রাজি আছি। আর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে আলোচনা করবো। শেলটারের জন্য যে স্পেস প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে পাওয়া সম্ভব?
ReplyDelete