Sunday, November 17, 2013

একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ যেভাবে তার স্মার্টফোনটিকে নিরাপদে রাখেন

স্মার্টফোনগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেকেই কিন্তু এই যন্ত্রটির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায়শ' ব্যর্থ হই।

অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়-বার্মিংহামের SECuRE & Trustworthy Computing Lab (SECRET Lab) এর পরিচালক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাগিব হাসান, পিএইচডি; নিজের ফোনটির নিরাপত্তার খাতিরে কিছু ধাপ অনুসরণ করে থাকেন।

hands_phone_NYCU_s

কম্পিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, বেশিরভার মানুষই নিজের স্মার্টফোনটির নিরাপত্তার জন্য সেরা পথটি অনুসরণ করেন না।

রাগিবের মতে, “আপনার স্মার্টফোনটি আর পাঁচটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের চাইতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। একটি পাসকোড দিয়েই অনেকটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে তেমন গা করেন না।”

যেহেতু খুব সহজেই ফোনের সেটিং অংশে গিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করা যায় সেহেতু যারা এখনও পাসওয়ার্ড বসান নি তাদেরকে দ্রুত এটি বসানোর পরামর্শ দেন তিনি। কেননা, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ব্যক্তির হাতে পড়লে এই ফোনটি থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল কিংবা ব্যক্তিগত ছবি সহজেই হাতিয়ে নেয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, “এমনকি ঐ দুর্বৃত্ত যদি আপনার ইমেইলে প্রবেশাধিকার পেয়ে যায় তাহলে সে অতি সহজে আপনার ডিজিটাল জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে”।

স্বীয় তথ্যের সুরক্ষার জন্য জনাব হাসান আরো ক’টি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো নিম্নরূপ:

- কখনোই পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করা বা ব্যাংকিংয়ের কাজ করা যাবে না। কারণ, এর মাধ্যমে আপনাকে টার্গেট করতে খুব সুবিধা হয় সাইবার অপরাধীদের। বাসায় নিজস্ব ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু তবুও ম্যালওয়্যারের ভয় থেকেই যায়। এই ম্যালওয়্যারগুলো আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ কোনো অ্যাপ বা মজার কোনো গেইমের মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনার অজান্তেই সব তথ্য সংরক্ষণ করে পাঠিয়ে দিতে পারে অপরাধীদের ডেরায়।

- স্পর্শকাতর বা ব্যক্তিগত গোপণীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে ল্যান্ডফোন ব্যবহার করাই শ্রেয়।

- ভয়েজ ফিশিং বা ভিশিং এর হাত থেকে সতর্ক থাকতে হবে। অপরাধীরা ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির কর্মকর্তা সেজে ফোন করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা সামাজিক নিরাপত্তা কার্ডের নাম্বার চেয়ে বসতে পারে। মানুষ এখন ফিশিং ইমেইলের সাথে যথেষ্ঠ পরিচিত। ইমেইলের স্প্যাম ফিল্টারও এসব ক্ষতিকর মেইলের অধিকাংশকে আটকে দিতে সক্ষম। ফোনের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই। হাসান সেলফোনে কখনোই এসব তথ্য শেয়ার না করতে পরামর্শ দেন। প্রয়োজন হলে কোম্পানির গ্রাহক সেবা বিভাগের মূল নম্বরে ফোন করুন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অপরাধীরা আপনাকে ফোন করতে পারে কিন্তু আপনার হবে যেন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই কল এসেছে।

- ব্যবহারের পর মনে করে ইমেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক বা টুইটার থেকে লগ আউট করুন কিংবা স্মার্টফোনের টাইম আউট অপশন চালু করে রাখুন। “কেউ যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে তাহলে সে আপনার পরিচয়ের আড়ালে থেকে ফেইক অ্যাকাউন্ট চালাতে পারে কিংবা আপনার বন্ধুতালিকার সকলের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুও পাঠিয়ে দিতে পারে। হাসান মনে করেন, “এই অপরাধীরা সত্যিকার অর্থেই অনেক ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম”।

- ফোন বিশেষ করে অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহারের সময় অস্বাভাবিক কোনো কার্যকলাপ চলছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন। অস্বাভাবিক কাজগুলো কিন্তু ম্যালওয়্যারের ফল। এ ম্যালওয়্যারগুলো  আরো সহজে পিসিতে প্রবেশ করতে পারে। জনাব হাসান আরো বলেন, “আপনার ফোনের চার্জ যদি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া শুরু করে তাহলে এমনও হতে পারে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাপ আপনার অজান্তেই ফোনে চলছে এবং আপনার তথ্য পাচার করে দিচ্ছে। এরকম হলে ফোন রিসেট করতে পারেন কিংবা ফোন কোম্পানির সহায়তা নিতে পারেন”।

- কোনো ব্যবসায়ে মোবাইল পেমেন্টের সুযোগ যদি থেকেও থাকে তবুও কোনো কর্মচারীকে আপনার ফোন নিয়ে চোখের আড়াল হতে দেবেন না।

- কখনোই ফোনের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেমন- ড্রাইভার লাইসেন্স বা পাসপোর্টের স্ক্যানড কপি রাখবেন না।

- ফোনে রিমোট ট্র্যাকিং এবং ওয়াইপিং টুল ইনস্টল করে রাখতে হবে যেন মোবাইল হারিয়ে গেলে ট্র্যাক করা যায় এবং প্রয়োজনে দূর থেকেই ভেতরে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট মুছে ফেলা যায়।

- কফিশপ বা বিমানবন্দরের মতো অরক্ষিত গণওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে যেন আপনার ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে না ফেলে সে ব্যবস্থা সর্বদা চালু রাখুন।

- মোবাইল ফোনের উপযোগী সাইটগুলো ব্রাউজ করার সময় সতর্ক থাকুন। মোবাইল ফোন থেকে ভিজিট করার সময় ভিজিটরদের সুবিধার্থে নামকরা প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটগুলো মূল সাইটের মতো দেখতে না হয়ে সাধারণত একটু ভিন্ন চেহারার হয়ে থাকে। আর মানুষও সেজন্য সাইটগুলো ভিন্ন চেহারার হলে সন্দেহ করে না। সেই সুযোগে অপরাধীরা আসল সাইটের মতো করে ভুয়া সাইট বানিয়ে রাখে। আর ফোনের ছোট স্ক্রিনে অনেক সময়েই আসল এবং নকলের সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরা যায় না।

সবশেষে রাগিব হাসান পরামর্শ দেন, “এ বিষয়গুলো অবশ্যই আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারে। এমনকি চৌকস ব্যক্তিরাও আজকাল এ ধরণের স্প্যাম বা স্ক্যামের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এর কারণ একটাই। অপরাধীরা দিন দিন আরো চৌকস হয়ে উঠছে”।

 

মূল রচনা: কেলি হিউয়েট টেইলর

ইংরেজি থেকে ভাষান্তর: আহ্‌মদ ইকরাম আনাম

লেখা ও ছবি ইউনিভার্সিটি অভ অ্যালাবামার নিউজ সাইট থেকে সংগৃহীত

No comments:

Post a Comment