Friday, November 1, 2013

আমরা কি ভালো?

অনেকদিন আগে একবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, "আসলে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আমাদের সমস্যা না। আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরাই। আমরাই তো তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি। তারা যদি খারাপ হয় তাহলে তাদেরকে আমরা কেন ভোট দেই?" আরো তো রাজনৈতিক দল আছে যারা কখনোই ক্ষমতায় আসে নি। তাদেরকে কি আমরা কখনো ভোট দিয়ে দেখেছি যে তারা দেশ কীভাবে চালায়? না দেইনি। তাহলে দিনের পর দিন ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল হিসেবে যে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ক্ষতি করে আসছে তাদেরকে বার বার কেন জনগণই ক্ষমতায় আনে? সমস্যা কিন্তু জনগণের মানসিকতার মধ্যেই নিমজ্জিত। জাতিগত ভাবে আমরা অসৎ, অভদ্র এবং দুর্নীতিবাজ হয়ে পড়েছি। আমরা সবাই সীমিত পরিসরে নিজেদের সীমিত ক্ষমতার অপব্যবহার করি। উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। আমরা কি Law abiding citizen? নাহ। আমরা সুযোগ পেলেই আইন ভঙ্গ করি। ট্রাফিক আইনের কথাই ধরি। সিগন্যাল মানতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। দু'মিনিটে সিগন্যালে দাঁড়ানোর ধৈর্য্য আমাদের হয় না কিন্তু ২ ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়ে বসে থাকার ধৈর্য্য কিন্তু আমাদের খুবই আছে। সুযোগ পেলেই মোটর সাইকেল ফুটপাতে তুলে দিয়ে আমরা পথচারিদের জীবন বিপন্ন করি। রং সাইড দিয়ে আমরা বীরদর্পে চলাচল করি। বুড়া চাচা, রাস্তার মাস্তান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত মেধাবী ছাত্ররা প্রতিদিনই রং সাইড দিয়ে গাড়ি, বাস কিংবা মোটর সাইকেল চালায়। কারো বলার কিছু নেই। এটিই অলিখিত নিয়ম যে অন্যায় করলে কেউ কিছু বলবে না।

 

আমরা কোনো সরকারি, আধা-সরকারি অফিসে গেলে যথা সম্ভব আমাদের হেনস্তা করা হয়। কেউ বাটে পড়লে তার আর রেহাই নেই। টেবিলের ঐ প্রান্তে বসা কেরাণি বা বড় কর্তা যখনই টের পান যে আমরা তার কাছে ঠেকে গিয়েছি তখনই তিনি ধানাই পানাই শুরু করেন। অভদ্র আচরণ করেন, ঘুষ ছাড়া কাজ করতে চান না কিংবা টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরান। এটা আমাদের মজ্জাগত। খুব অল্প মানুষই এখন দেশে আছেন যারা এই কাজগুলো করেন না। আমরা লাইন মেনে কোথাও দাঁড়াতে পারি না, লাইন ভেঙে ঢুকতে চাই, ঠেলাঠেলি করে পরিবেশ নষ্ট করি। পাশের জনের পায়ে পাড়া দিয়ে ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করতে আমাদের খুব আরাম হয়। আমরা কাজ শুরু করার আগেই দুই নম্বর পথে হাঁটা দিতে চাই। আমরা শান্তি মতো কখনো বাজার করতে পারি না। আমাদের কে খুব সতর্ক হয়ে দাম জেনে, খোঁজ নিয়ে বাজার করতে হয়। কারণ, দোকানদার যার থেকে যা পারে তাই নেয়। ওজনে কম দেয়, পঁচা, ভেজাল পণ্য গছিয়ে দিতে চায়। আমাদের দেশে বিক্রিত মাল কখনো ফেরত নেয়া হয় না। ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে আস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। সবার মনে সন্দেহ, সবাই সবাইকে ঠকিয়ে জিততে চায়। আমাদের সমাজে সর্বদা মানুষে মানুষে যুদ্ধ। আমরা বেশি টাকা খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাই না।  পশ রেস্টুরেন্টে বেশি দাম দিয়েও আমরা কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার, খাবার বা সেবা কোনোটাই পাই না। প্রায়ই উচ্চ দামে নিম্নমানের পণ্য বা খাবার গছিয়ে দেয় সুটেড-বুটেড স্টাফওয়ালা নামজাদা প্রতিষ্ঠান। আমাদেরকে যে যা গছিয়ে দিতে চায় আমরা তাই নিতে বাধ্য হই। প্রতিবাদের মানসিকতা আমাদের মাঝ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের ডাক্তাররা আমাদের ভুয়া টেস্ট দেয়, আমাদের পুলিশ আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়, আমাদের শিক্ষকরা ক্লাসে পড়াতে চান না, আমাদের আমলারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে, আমাদের পাবলিক তাদের গালমন্দ করে এবং সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ দুর্নীতি করে।

 

এতক্ষণ যা বললাম একটিও কিন্তু রাজনৈতিক দল করে না। এখানে রাজনৈতিক দলের হাতও নেই। স্বেচ্ছায় আমরা এ অন্যায়গুলো প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। অন্যায়-অনাচার আমাদের গা সহা হয়ে গিয়েছে। মালিক শ্রমিককে ঈদ বোনাস না দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ঘুষ দিবে এটাই স্বাভাবিক। পঁচে গিয়েছি আমরা। যে জাতি যেমন সে জাতি তেমন নেতৃত্বকেই ক্ষমতায় আনে। এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যারা সন্ত্রাস করে জাতি তাদেরই বার বার ক্ষমতায় আনে। কারণ সচেতনভাবে যখন কেউ অন্যায় করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন সে অন্যায়কারির পিঠ চাপড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের রাজনৈতিক দল নয়, আমাদের পুলিশ-উকিল নয়, আমাদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়, আমাদের ব্যবসায়ী-সাংবাদিক নয়, আমরাই খারাপ।

No comments:

Post a Comment