Tuesday, December 10, 2013

কুহেলিকা

কাজী মোঃ আমিরুল ইসলাম 


এফইটি ২/২




(১)


“হাবিব,তুমি এখন তোমার বন্ধুদের সাথে খেলতে যাও,আর কত বাসায় বসে বসে গেম খেলবে।“কথাগুলো আম্মু একটু বকুনির সুরেই বল্লেন।কিন্তু বেচারা হাবিব কেবলি call of duty 4 শেষ করে call of duty 5 খেলতে বসছিল। কিন্তু কি আর করা যাবে।এখন আর কিছুই করার নাই,এখন বাসা থেকে বের না হলে আম্মু একটু পর এসে পিসি অফ করে দিয়ে যাবেন,তখন গেমটা save ও করা যাবে না।এর চেয়ে বাইরে খেলতে যাওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করল সে।বাইরে বের হওয়ার সময় ওর মনটা একটু খারাপই হল,সে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে বসে আছে।এত দিনতো সে ঠিক এ পড়াশুনা করেসে,এখন একটু অলসের মতো সময় কাটাবে সেই সুযোগটাও আম্মু দিচ্ছে না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে তার প্রতিবেশী ও স্কুলের ফার্স্টবয় নোমানকে ফোন করলো।“নোমান,আর পড়িস না,এখন বাইরে যাচ্ছি।তুই ও চলে আয়।“ “কই আসব?”নোমান পাল্টা প্রশ্ন করলো।“আয় আজ নদীর পার থেকে ঘুরে আসি।“ যদিও হাবিব নদী বলল কিন্তু ওইটা আর নদী নাই।এখন শহরের নর্দমায় পরিণত হয়েছে।

১৫ মিনিট পর যখন নোমান নদীর পাড়ে পৌঁছল তখন হাবিব এর সাথে এলাকার অন্যতম সেরা ফাজিল মিশুকে দেখতে পেল।মিশু ছেলেটা ফাজিল আর বেয়াদব টাইপের হলেও অনেক সাহসী আর ওর বাবা শহরের অন্যতম সেরা ধনী।কাজেই ওর কাছে টাকা পয়সা সব সময়ই একটু বেশি পরিমানে থাকে।এই বয়সেই সে মোটরসাইকেল,গাড়ী এমন কি প্লেন পর্যন্ত চালাতে শিখে গেছে।যদিও ও প্লেন চালানো শিখতে গিয়ে ওর বাবাকে অনেক কাঠখড় পড়াইতে হইছে,কিন্তু তাঁকে মিশুর জেদের কাছে পরাজিত হইতে হইছে।তা যাই হোক না কেন,ছেলেটা কেন যেন সব সময়ই হাবিব এর কাছে একটু নিচু হয়ে থাকে। হাবিবের কোন কথা সে সহজে ফেলে না।কাছে যেতেই নোমান শুনতে পেল যে মিশুকে আর হাবিবকে বাসায় বকা দিয়েছে অহেতুক সময় নষ্ট করার জন্য।তাই ওরা আর বাসায় থাকতে চাচ্ছে না।তাই নোমান ওদের কোথাও থেকে বেরিয়ে আসার আইডিয়া দিলো।হাবিব একটু গাইগুই করলেও মিশুর অতিআগ্রহের জন্য রাজি হল।তারপর ওরা কোথায় যাওয়া যায় সেইটা নিয়ে আলাপ করল।শেষ পর্যন্ত ঠিক হল যে ওরা সবাই সিলেট যাবে।ওখানে চা বাগানে নোমানের ছোট মামা চাকুরী করেন।এর পর ওরা সবাই বাসায় গিয়ে অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে ৩ দিন পর রউনা হল সিলেটের উদ্দেশে।

(২)


নোমানের মামা একজন চমৎকার মানুষ।উনি যথেষ্ট ব্যাস্ততা থাকা সত্তেও ওদের জন্য এক দিন সময় বের করলেন এবং নিজের চা বাগানটি ঘুরে ঘুরে দেখালেন।পুরো বাগান দেখে ওরা সবাই খুব মজা পেল,চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ।এছাড়া কর্মীদের সহজ সরল জীবন জাপন ও ওদের অনেক আকর্ষণ করলো।কিন্তু সিলেট তো শুধু তার চা বাগান এর জন্য বিখ্যাত নয়।তাইআরও ২ দিন চা বাগান গুলো ঘুরে দেখার পর মামা ওদের দেশের সীমান্তের অন্যতম সেরা সুন্দর জায়গা জাফলং যাওয়ার বেবস্থা করে দিলেন। সাথে একটা মাইক্রোবাস ও দিলেন।তাই পরদিন সকালে ওরা সবাই জাফলং এর উদ্দেশে রউনা হল।ওদের সাথে থাকল চা বাগানের ড্রাইভার রহমত আলি।উনি সিলেট এর স্থানীয় একজন মানুষ।ওরা খু সকালেই বাসা থেকে বের হল।আর খুব তাড়াতাড়ি (বেলা ১১টা) জাফলং পৌছাল।কিন্তু ওরা জাফলং দেখে হতাশ হল।কারন পাথর ব্যবসাহীরা পাথর তুলে আর অতিরিক্ত পর্যটক এর উপস্থিতির জন্য জায়গাটি টার প্রকৃত সৌন্দর্য হারিয়েছে বলে জানালেন রহমত চাচা।ওদের হতাশা দেখে তিনি আশে পাশের মানুষদের কাছে থেকে শুনতে পারলেন যে জাফলং থেকে সামান্য দুরেই আর একটি জায়গা আছে এখনও পর্যটকদের কাছে অত পরিচিত হয় নাই,কিন্তু এটি জাফলং এর আগের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।এই কথা শুনে ওরা সবাই খুশী হল আর রহমত চাচাকে অনুরধ করলো সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য।চাচা ওদের নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় জাফলং খ্যাত বিছানাকান্দিতে।জায়গাটি লোকালয় থেকে অনেক দূরে।তাই মাইক্রোবাসটি রেখে ওদের অনেক হাটতে হল।প্রায় ৭ কিমি হাঁটার পর ওরা মুল জায়গায় গেল।জায়গাটা অনেক সুন্দর।চারপাশে পাহাড় আর মাঝে পাহারি নদী।নদীর পানি স্বচ্ছ,নিচে বালু চিকচিক করছে।মাছ আর অন্য জলজ প্রাণী দেখা যাচ্ছে।পাহাড়ের গা ভর্তি চিরসবুজ গাছ।উপরে মেঘমুক্ত আকাশ।ওরা যেন কিছু সময়ের জন্য সীমাহীন প্রকৃতিক সৌন্দর্য  দেখে হারিয়ে গেল।ওরা বুঝতেই পারল না যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে।বিকেল হতেই নীল আকাশ কাল মেঘে ঢেকে গেল।

(৩)


শুধু যে আকাশে পরিবর্তন আসলো তাই না,সাথে সাথে তীব্র বেগে ঝড়ো বাতাসও বইতে লাগলো।চারপাশের এই পরিবর্তন দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেল। নোমানের পরামর্শ মত ওরা সবাই জায়গাটা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। ওরা সবাই এক দিকে দৌড় দিল।প্রথমে ওরা ভাবল যে গ্রামের দিকে যাবে।কিন্তু মিশু বলল যে গ্রামের দিকে যাওয়ার চেয়ে পাহাড়ের দিকে যাওয়াটা উত্তম হবে। কারন তখন বাতাসের সাথে সাথে শিলা বৃষ্টি শুরু হইছে।তাই ওরা পাহাড়ের দিকে চলে গেল।কিন্তু এই সময়েই সব চেয়ে বড় সমস্যার মুখোমুখি হল ওরা।একটা খাল পড়ল ওদের সামনে কিন্তু এইটা পাড় হওয়ার মত কিছুই পেল না ওরা।হটাৎ মিশু একটা গুহার মত দেখতে পেল খালের অপর পাড়ের পাহাড়ে।কিন্তু খালটি পানিতে পরিপূর্ণ এর অপর তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।মিশু খুব ভাল সাঁতার পারে,নোমান আর হাবিব অতো ভাল না পারলেও মোটামুটি পানিতে ভেসে থাকতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল রহমত চাচা বললেন যে এই খালে সাঁতার না দেয়া তাই উত্তম হবে।কিন্তু মিশু চাচার কথা কানে নিল না।ওদের না বলেই পানিতে ঝাপিয়ে পড়ল সে।তারপর বুনো হাঁসের মত সাঁতরে পার হল খরস্রোতা খালটা।পার হয়ে বাকিদের ও আসতে বলল।শেষমেশ অন্য কোন উপায় না দেখে বাকিরাও খালে নেমে পড়ল।নোমান পার হতে পারলেও হাবিব আর রহমত চাচা পার হতে পারল না,ভেসে গেল,কিছু দূর যাওয়ার পর একটা পাথর ধরে রহমত চাচা নিজেরে রক্ষা করতে পারলেও  হাবিব তা পারল না।একটা পাথরে মাথা ঠুকে গেল ওর।পানিতে তলিয়ে গেল ওর মাথা আর তীব্র স্রোতে ভেসে গেল ওর শরীরটা।মিশু আবার পানিতে ঝাপিয়ে চাইল কিন্তু নোমান ওকে বাধা দিল।কারন শিলা বৃষ্টি আরও তীব্র হল,সাথে যুক্ত হল বজ্রপাত।রহমত চাচা ওদের গুহায় আশ্রয় নিতে বলল।ওরা বাধ্য হয়ে গুহার দিকে চলে গেল।গুহার ভেতর  ঢোকার পর,ওরা দুইজন দেখতে পেল গুহাটা অনেক সরু ২ জন এক সাথে থাকা যাবে না।তাই মিশু আগে ঢুকল।একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল দুইটা গর্ত।ডান পাশের টা কিছুটা ছোট আর বামপাশেরটা কিছুটা বড়।ও নোমানকে আসতে বলল।এর পর ডান পাশের গর্তে ঢুকল।কিন্তু নোমান বামপাশেরটাতে ঢুকল। কিছুদূর যাওয়ার পর হটাৎ করেই পথ শেষ হল।পথের শেষ মাথায় বিশাল বড় একটা গুহার মত পেল।বিশাল হলের মত ফাঁকা জায়গা আসে এখানে।মিশুকে ডেকে নিয়ে আসলো।বাইরের গুহার বাকিটুকু অন্ধকার হলেও এই বড় গুহাটা কেমন যেন অন্য রকম আলোয় আলোকিত।আর সব চেয়ে বড় আশ্চর্যের কথা হল এইখানে একটা অনেক বড় ধাতব গোলক আছে,যেইটার একটা দরজা ও আছে।ওরা দুইজনই গোলকটার দরজার সামনে দাঁড়ালো। গোলকের দরজা খুলে গেল আর ওরা ভিতরে ঢুকল।থিক এই সময় গুহার থিক বাইরেই একটা বজ্রপাত হল পুরো গুহা সেই আলোয় আলোকিত হল।গোলকের দরজার হটাত করে বন্ধ হল,এর পর ঠিক আগের জায়গায় আবার আর একটা বজ্রপাত হল।এইবার ওরা বুঝতে পারল যে গোলকটা গড়াতে শুরু করল।কিছু বুঝে ওঠার আগে দুইজনেরই মাথা ঠুকে গেল গোলকের অন্য দেয়ালে।চারপাশের সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল ওদের কাছে।গোলকটা হটাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেল।

(৪)


 

টানা ১২ ঘণ্টা বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি যুক্ত ভয়ংকর রাত শেষ হল।রহমত চাচা খালের বাকিটুকু পার হলেন,এরপর গুহার ভেতরে গেলেন।পুরো গুহা তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন, কিন্তু মিশু আর নোমানের কোন নাম বা নিশান ও পেলেন না।এরপর তিনি ফিরে আসলেন গ্রামে।গ্রামবাসীদের সাহায্যে গুহা বা আশেপাশের এলাকা খুজলেন,কিন্তু এইবার ও কাউকে পেলেন না।পরে বিকেলের দিকে গ্রামে ফিরে এসে জানতে পারলেন যে পাশের গ্রামে একটা ছেলেকে নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।তিনি ওই গ্রামে গিয়ে দেখলেন যে ছেলেটা হাবিব।হাবিব অনেক আহত,কিন্তু এখনও বেঁচে আছে।ওকে নিয়ে রহমত চাচা ফিরে গেলেন ছা বাগানে। পরদিন সকালে খবরের কাগজের শিরোনাম “বেড়াতে গিয়ে দুইজন নিখোঁজ”, আর ওই গুহাসহ পুরো পর্যটন এলাকাটা জনসাধারণের  জন্য  নিষিদ্ধ করা হল।

(৫)


পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরল মিশু আর নোমানের। ওরা দেখতে পেল দরজা খোলা।ওরা বেরিয়ে এল।বাইরে দেখতে পেল সুন্দর একটা সকাল,চারপাশের সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বাইরে দেখতে পেল মানুষেরা খালে মাছ ধরতেছে।ওদের সাহায্য নিয়ে ওরা ফিরে এলো  চা বাগানে।কিন্তু ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল।গ্রামবাসীর সাথে দেখা করার সময় নোমান একটা বিসয় খেয়াল করল লোকজন কেন যেন একটু ধীরে ধীরে কথা বলতেছে।আর যখন মামার সাথে কথা বলতে গেল তখন মামা কেন যেন ওদের চিন্তে পারলেন না।ওরা অনেক অবাক হল।মামার সাথে কথা বলে যখন চলে আসতে যাবে ঠিক সেই সময় খেয়াল করল মামার দুই হাতেই সাতটি আঙ্গুল,শুধু মামা নয় সবারই হাতে সাতটি করে আঙ্গুল। নোমান মিশুকে ইশারা করল বিষয়টা।মিশু বুঝল,কিন্তু ও নোমানকে উপরে তাকাতে ইশারা করল।নোমান আকাশের দিকে একবার তাকিয়েই বিস্ময়ে হতবাক হল প্রথমে এর পর অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।আর ও অজ্ঞান হবেই না কেন??? কারন আকাশে যে তিনটা চাঁদ,যার একটা সাদা আলো দিচ্ছে।আর বাকি দুইটার একটা লালচে আর অন্যটা সবুজ আলো দিচ্ছে!!!!!!!!!

No comments:

Post a Comment