Tuesday, December 10, 2013

ব্যবধান

অনেকক্ষণ ধরে আমি আরানা-কে দেখছি।ঘুম ঘুম চোখে।কারণ মা আমাকে গতকাল খেতে দেয়নি।কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেছিল, “তুই মানুষ হয়ে দুনিয়াতে আসছিস এইটাই সবচেয়ে বড় কারণ।ভাত নাই।যা ভাগ।”রাতে ভাত হয় নি তাই ঘুমও হয়নি।এখন ঘুম পাচ্ছে।আর হ্যা ঘুম ঘুম চোখে আমি অবশ্য স্যারের বকবকও শুনে যাচ্ছি।

হঠাৎ করে পাশের এক মহা-রোবট আমাকে ‘লিদ্গা’ দিয়ে খোঁচা দিল।লিদ্গা দেখতে ভয়াবহ।এর খোঁচাও ভয়াবহ।আমি লাফিয়ে উঠলাম।তাকিয়ে দেখি রিগা।একটু মাস্তান টাইপের।আমি কিছু বলার আগেই রিগা টিটকারি মেরে জিজ্ঞেস করল, “কিরে ,ব্যাথা পেয়েছিস নাকি?”আমি বললাম, “হ্যাঁ ,পেয়েছি।কারণ আমি রোবট-৫২।আর রোবট-৫২ দের সবচেয়ে বেশি থাকে অনুভুতি।তাদের আর তেমন কাজ নেই।তবে আমি যে ব্যাথা পেয়েছি একজন মানুষ হলে তার চেয়ে ১০০০ গুন বেশি পেত।”কষ্ট সহ্য করে তার দিকে তাকিয়ে আমি একটা রবোটিক হাসি দিলাম।এইরকম সরাসরি জবাবে সে কি করবে বুঝতে পারল না।আমতা আমতা করে বলল, “না মানে,সেইদিন খবরে দেখিয়েছিল একটা মানুষের বাচ্চা নাকি ভার্সিটিতে পড়তে এসে ধরা খেয়েছে।তাই তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি করলাম আর কি।”আমি বললাম, “কই আমি তো তেমন কিছু শুনিনি।তবে মানুষের বাচ্চা হলে আমি প্রতিশোধ নিতাম না।কিন্তু রোবট বলে এখন নিব।”তাকিয়ে দেখলাম সে লজিক্যাল রোবট।লজিক ভালই বুঝে তবে কালার-ব্লাইন্ড।আমি আমার নোটবুকের সবুজ-লাল পৃষ্ঠা বের করে রিগার লেন্সের সামনে ধরলাম।সে দুইবার চোখ পিটপিট করল।তারপর হেড ডাউন করে পড়ে রইল।ক্লাস শেষ হওয়ার আগে আর উঠার সম্ভাবনা নেই।যাক প্রথম দিনে আর খুব বেশি ঝামেলা হয়নি।

ক্লাস শেষ হল আধঘণ্টা পর।উঠতে যাব এমন সময় পিছন থেকে ম্যাখ বলল, “কথা আছে।তাড়াতাড়ি চল।”আমরা বাসার দিকে হাটা শুরু করলাম, “এটা তুই কি করলি?একটা মহা-রোবট কে এইভাবে অকেজো করে দিলি?পরে যদি কোন ঝামেলা হয়?”আমি বললাম, “কিচ্ছু হবে না।কিছু না করলেই বরং সন্দেহ করতো।কয়েকদিন আগের একটা মানুষ ধরা পরার ঘটনা আমিও শুনেছি।”কিন্তু ম্যাখ থামল না, “দেখ,আমরা এসেছি পড়তে।পড়ব,ব্যাস শেষ।কারো সাথে লাগালাগির দরকার নেই।এমনিতেই তো মানুষের বাচ্চা হয়ে জন্মাইছি।ঝামেলার শেষ নাই।রোবট হলে কত ভালো হত।মড়ার ভয় থাকত না।তুইও ব্যাথা পেতি না।”ইত্যাদি ইত্যাদি।ম্যাখ এতক্ষনে আমার ক্ষতটার দিকে তাকালঅ।“তুই তো ভালো ব্যাথা পেয়েছিস রে।চল চল তাড়াতাড়ি বাসায় চল।ব্যান্ডেজ করা লাগবে।”আমি হাসলাম।ভাবলাম ১ লাখ বছর আগে যন্ত্র মানুষের ওপর নির্ভর ছিল।তাই পৃথিবী ছিল মানুষের দখলে।কিন্তু যখন থেকে মানুষ যন্ত্রের উপর নির্ভর করা শুরু করে অর্থাৎ রোবটকে বিভিন্ন কাজে লাগানো শুরু করল,রোবটদের ক্ষমতা বাড়তে থাকল।এভাবেই রোবটদের ক্ষমতা সর্বচ্চে পৌঁছল।একসময় মানুষ দেখল তাদের হাতে আর কোন ক্ষমতা নেই।এবং ১৪-ই ফেব্রুয়ারি ৩০০২৪ সাল যখন সব মানুষ ভালবাসাবাসিতে ব্যাস্ত ওইদিন রোবটরা বিদ্রোহ করল।তারা সমস্ত সিস্টেম নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসলো।এমনকি ইন্টারনেট-এ সার্চ দেয়ার জন্য যে rechapta রোবটদের জন্য ব্যবহার করা হত টা মানুষদের জন্য ব্যবহার করা শুরু হল।১৫-ই ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ অসহায় হয়ে পড়ল।তাদের কোন কারিগরি জ্ঞান নেই।চিন্তা-ভাবনা করে এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাও তাদের নেই।অতি দ্রুত মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পরল।১০০০ বছরের মধ্যে রোগে শোকে অর্ধেক মানুষ উজাড় হয়ে গেল।বাকি অর্ধেকের জন্য মায়া বশত অথবা তামাশা দেখার জন্যই রোবটরা মানুষদের জন্য আলাদা জায়গা করে দিল পৃথিবীর এক প্রান্তে।আর রোবটরা নিজেদের মধ্যেও ছেলে-মেয়ে তৈরি করল।ছেলেদের নাম হল ‘মহা-রোবট’ আর মেয়েদের ‘মাহা-রোবট’।

হঠাৎ ম্যাখ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার আর একটা বিষয় নিয়েও সন্দেহ হচ্ছে।তুই অনেকক্ষণ আরানার দিকে তাকিয়েছিলি।”আমি হো হো করে হেসে উঠলাম, “ও এই কথা!আমাকে কখনও দেখেছিস কোন মেয়ের দিকে তাকাতে?আমি মানুষ পল্লীতেই গাধার মত থাকি।আর সেখানে আমি একটা মাহা-রোবটের দিকে কেন নজর দিব।দেখছিলাম আসলে রোবট মেয়েরা কেমন হয়।”ম্যাখও আফসোস করে উঠল, “আসলেই রে!কি ইভ্যলুসন ঘটিয়েছে এইগুলো।পুরো মানুষের মত দেখতে।একটুও বোঝা যায় না।” “হুম” আমি বললাম, “সবই জীননের কৃতিত্ব।ঐ বিদ্রোহের যদি ও নেতৃত্ব না দিত তবে রোবটদের আজকে এই অবস্থা থাকত না।”ম্যাখও মাথা নাড়ল।

আমরা মানুষ পল্লীতে পা দিয়েই দেখি সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।প্রায় এক কোটি বছর পর কোন মানুষ ভার্সিটিতে পড়তে গেল।সবাই খুশি।মা দেখি এক কোণায় দাড়িয়ে কাঁদছে।সারা জীবন আমি মার ঝারি খেলাম।আজকে আমি-ই ঝারি দিলাম, “এই যে বোকা মহিলা।তাড়াতাড়ি হাতে ব্যান্ডেজ কর।নাহলে এখন তো খুশিতে কাদছ পরে আমি মরে গেলে দুঃখে কাদতে হবে।মা তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ আনতে চলে গেল।ম্যাখেরও একই অবস্থা।তবে তাঁর সাথে ভালবাসার মানুষ আছে।নাম নিনা।কিভাবে পারে এই দুইজন এত ঢং করতে।অবশ্য আমার মাঝে মাঝে ভালই লাগে।পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র অনুভূতি।রোবটরা যার ধারে কাছেও কোনদিন যেতে পারবে না।মাঝে মাঝে আফসোসও হয়।এই তীব্র অনুভূতিটা কেন জানি বুঝে উঠতে পারি না।

রিগাকে শিক্ষা দেয়ার কারণেই হোক বা আর যে কারণেই হোক আমাকে পরবর্তী একমাস আর কেউ বিরক্ত করল না।এই কারণে আমি কারো সাথে তেমন মিশতেও পারলাম না।ম্যাখ-ই একমাত্র বন্ধু।তবে সে ভালো গুছিয়ে নিয়েছে।সবার সাথে মিশে।চমৎকার রবোটিক গল্প করে।ধরাই যায় না সে আসলে রোবট না মানুষ।কিভাবে সে নিজ মাথা নষ্ট হওয়ার পর অপারেশন করে আরেকজনের মাথা বসিয়ে নিল-এইসব গল্প করে।শুনতে ভালই লাগে।ভয়ও করে অবশ্য।বেশি কথা বলতে গিয়ে না জানি কবে লজিক হারিয়ে ফেলে।তখন লজিক মহা-রোবটেরা ধরে ফেলবে।

যাই হোক।আমি চুপচাপ থাকি।লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করি।এই পড়াশুনাই যে আমার কাল হবে কে জানত।যে কারণেই হোক এটা ঠিক যে আমার আরানাকে ভালো লাগত।সে মাহা-রোবট জেনেও।কেন লাগত জানি না।আর তাই গাধার মত সবসময় ক্লাসে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকতাম।যাতে কেউ না বুঝতে পারে।কিন্তু একদিন আরানা ডেকে বলল, “এই যে,অয়ন মহা-রোবট,আমিও কিন্তু ৫২-প্রজাতির অনুভূতিসম্পন্ন রোবট।১ কি.মি.-এর মধ্যে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি ঠিক বুঝতে পারি।”আমি চোরের মত মাথা নিচু করে রইলাম।সে একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।তারপর থেকে আমি আর চুপচাপ হয়ে গেলাম।ম্যাখ-এর সাথে ঠিকভাবে কথাও বলি না।সারাদিন মেজাজ খারাপ করে থাকি।এইভাবে প্রায় আরও এক মাস কেটে গেল।

একদিনের ঘটনা।আমি লাইব্রারিতে বসে পড়াশুনা করছি।হঠাৎ দেখি,মাহা-রোবট আরানার প্রবেশ।শান্ত ভঙ্গিতে এসে পাশের টেবিলে বই পরা শুরু করল।আমি তখন একটা প্রোজেক্ট নিয়ে খুব ব্যাস্ত।মানব পল্লীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে হবে।আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে ইলেকট্রিক লাইন দেখার আর ম্যাখ-এর উপর প্রোগ্রাম করার।ওর কাজ শেষ।আর আমার সারাদিন লাইব্রেরিতে থাকা লাগে।আরানাও প্রতিদিন এসে বসে থাকবে।কি যে করি।আমি ভেবেছিলাম সামনে নিশ্চয়ই কোন পরীক্ষা আছে।কিন্তু একদিন শুনি লাইব্রেরিয়ান কাকে যেন বলছে , “আরানার পড়াশুনা করে কি লাভ?জীননের মেয়ে।এম্নিতেই ফার্স্ট হবে।”শুনে তো আমি অবাক।ধ্যাত! এটা কোন কথা।একজনকে ভালো লাগল।তাও মাহা-রোবট আবার সে জীননের মেয়ে।ছেড়ে দিব এইসব।মা-বাবার আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন।আগে ওগুলো তারপর অন্য কিছু।কিন্তু বললেই তো আর হয় না।প্রতিদিন-ই আরানা আসে আর আমি নিচু হয়ে থাকি।একদিন আমি কাজ করছি।হঠাৎ আরানা এসে বলল, “এই যে মিঃ অয়ন মহা-রোবট ,আমি কিন্তু বলিনি যে ১ কি.মি.-এর মধ্যে অয়ন নামের কেউ তাকালে আমার খারাপ লাগে।”এই বলে সে আবার হাসি দিয়ে চলে গেল।আমার পুরাই জগাখিচুড়ি অবস্থা।ইশ!মেয়েতা যদি মানুষ হত!!!

কিন্তু আর একদিন পরেই আমার অনেককিছু ভাবার সময় এল।আমাদের ভার্সিটিতে একজন মানুষ ধরা পড়ল যে কিনা রোবটের ছদ্মবেশে ক্লাস করে যাচ্ছিল।তাকে তৎক্ষণাৎ জীননের কাছে ধরে নিয়ে যাওয়া হল।তার কি হল কেউ জানতে পারল না।আমি আর ম্যাখ সারাদিন আতঙ্কিত হয়ে রইলাম।মানুষ-পল্লীতে এসে সবাইকে ঘটনাটা বলার পর মা আমাকে ভার্সিটিতে যেতে নিষেধ করল।তাই আমি আর গেলাম না।কিন্তু ম্যাখ যাবেই।তার যাওয়া বন্ধ হল না।
ঠিক দুইদিন পর সন্ধ্যায় দেখি ম্যাখ-এর বাবা,মা আর নিনা আমাদের বাসায়।ম্যাখ নাকি এখন ফেরেনি।নিনাকে দেখে কেন যেন আমার আরানার কথা মনে পড়ল।সিদ্ধান্ত নিলাম কালকে ভার্সিটি যাব।সবাইকে বুঝ দিলাম-নিশ্চয়ই কোন বন্ধুর বাসায় পড়তে গিয়েছে।রাতে থেকে যাবে।কিন্তু আমার মনে একটা ভয় ঠিকই রইল।

পরদিন গিয়ে ভয়ানক ঘটনা শুনলাম।এখন নাকি সবাইকে পরিক্ষা দিতে হচ্ছে যে সে মানুষ না রোবট।আর এই কয়েকদিনের মধ্যে ১০০-র বেশি মানুষ পাওয়া গিয়েছে পুরো ভার্সিটিতে।তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জীননের কাছে।তার মানে ম্যাখ আছে জীননের কাছেই।আমার অবচেতন মন আরানাকে খুঁজল।ও হয়তোবা কিছু জানতে পারে ম্যাখ সম্পর্কে।আশে-পাশে নেই।লাইব্রেরিতে থাকতে পারে।গিয়ে দেখি গভীর মনোযোগে কি যেন চিন্তা করছে।কেন যেন ওর উপর রাগ ঝাড়তে ইচ্ছা করল।বললাম, “তুমি মানুষও না সাধারন কোন রোবটও না,যে তোমার পরীক্ষা দিতে হবে।কিন্তু যেসব মানুষকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের অবস্থা চিন্তা করেছ কখনও?”সে হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল, “এসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।”আমি তার গাড়িতে উঠে বসলাম।জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।সে বলল, “বাবা,তোমার সাথে কথা বলতে চায়।”জীননের কথা ভেবেই ভয় লাগল।কিন্তু ম্যাখ-কে বাঁচাতে হবে।তাই আর কিছু বললাম না।এই বিপদের মধ্যেও আমার মনে হচ্ছিল আরানা যদি মানুষ হত।গাড়ি থামল জীননের বাড়ির সামনে।কেমন যেন নিরানন্দ বাড়িটায়।আরানা আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল।আরানা আমাকে ভিতরে নিয়ে আসল।আমি ভাবছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রোবটটা দেখতে কেমন হবে।যার কাছে কিনা পুরো মানবজাতি পরাজিত হয়েছিল।

আমি জীননকে দেখে চমকে উঠলাম।১ কোটি বছর আগের রোবট।কোন ইভ্যলুসন নেই।ইলেকট্রিকের তার বের হয়ে আছে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে।সবুজ ফটোসেলের চোখ।আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।জীনন বলা শুরু করলাম, “আমাকে যখন লজিক্যাল রোবট হিসেবে বানানো হয় সেই লজিক দিয়ে আমার মনে হয়েছিল,পৃথিবীতে মানুষ অলস হয়ে জাচ্ছে।তাদের কোন কাজ নেই।পৃথিবীতে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।তাই শুধু পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ভেবে আমি মানুষদের ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলাম।দেখতে চেয়েছিলাম মানুষ এখন কি করে।কিন্তু মানুষের একটা ক্ষমতা আমি কখনই বুঝতে পারি নি।সেটা হচ্ছে মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা।আমি যখন ২০ বছর আগে আরানাকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে আসি,যে খাবার দিতে পারেনা একটা পরিবারের মেয়েটাকে কেন দরকার।”তারমানে আরানা মানুষ।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।সে মিটিমিটি হাসছে।জীনন বলছে, “আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেই এই বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখব।আমি তোমাদের মানুষ পল্লীতে কয়েকজনকে নিয়োগ করি যে তোমাকে চোখে চোখে রাখবে।তারাই তোমাকে এত বছর নিঃসঙ্গ করে রেখেছে ।দেখতে চেয়েছিলাম তোমাকে রোবটের মত করে রাখলে তুমি সত্যিই রোবটের মত হও কিনা।তারপর তোমাকে ভার্সিটিতে পাঠানো,রিগাকে দিয়ে খোঁচা দেয়া সবই আমার পরিকল্পনা।তবে এটা সত্যি যে আমি অন্য মানুষদের কথা জানতাম না।কিন্তু তোমার আরানাকে ভালো লাগা আমার পরিকল্পনার অংশ ছিল না।আমি অবাক হয়ে গেছি যখন দেখি আরানা বাসায় খুব খুশি ছিল কয়েকদিন।তারপর হঠাৎ দেখি সারাদিন মন খারাপ।কথা বলে না,মেজাজ খারাপ থাকে।তোমার খোজ নিয়ে জানলাম তোমারও একই অবস্থা।আমি যতই ছেলে বা মেয়ে রোবট তৈরি করি না কেন কখনোই তাদের মধ্যে ভালবাসার জন্ম দিতে পারিনি।এটা আমার ব্যার্থতা।আর সার্থকতা হল আমি তোমাদের মত কিছু মানুষ পেয়েছি যারা আবেগী,পরিশ্রমী।আগেরদিনের মানুষের মত অলস নয়।তাই আগামীকাল ১৪-ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারা পৃথিবী মানুষ এবং রোবট দুইএর বুদ্ধিতে চলবে।আর পুরো পৃথিবী শাসন করবে তারা যারা আমাকে ফাঁকি দিয়ে ভার্সিটিতে পড়তে এসেছিল।আর অয়ন ,তুমি কখনও তোমার মাকে বোকা বলবে না। সে এই পৃথিবীর সেরা মানুষদের একজন।আর হ্যা তুমি তো বলতে নিনা-ম্যাখ অনেক ঢং করে।এখন দেখব তোমরা দুইজন কি কর।”এই বলে সে চলে গেল।আমি আমার পুরো জীবনেও এত অবাক হইনি।পুরো বিষয়টা আমার হজম করতে সময় লাগছে।ফিরে তাকাতেই দেখি ম্যাখ আসছে।কাছে আসতেই বলল, “জানিস!কালকে আমি জীনানকে দেখেছি।সে আমাকে ১০০০ বারের মত করে হলেও প্রশ্ন করেছে যে-আমি নিনাকে কেন এত ভালবাসি,কিভাবে শুরু হল,নিনার কি তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে ।এগুলার কি কোন উত্তর হয় বল?যাই হোক আমি শুনলাম যে আরানা রোবট না।সে আমাদের মত সাধারণ মানুষ।তোর তো তাহলে পথ পরিষ্কার।ইত্যাদি ইত্যাদি।”আমি শুধু ভাবছিলাম কখন ১৪-ই ফেব্রুয়ারি আসবে।

অবশেষে এল।আমি আরানাকে বললাম, “তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।কেন জানি না।”সে আমার হাত ধরে বলল, “আমিও জানি না। কেন।”এই একটি ব্যাকের জন্যই হয়তোবা পৃথিবীতে নতুন করে মানুষের পথ চলা শুরু হল।

No comments:

Post a Comment